#উজান_ঘাটের_মাঝি
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
#পর্ব_১০
তিতির সিদ্ধান্ত নেয় যে আরফানের কথা সবাইকে বলে দেবে।চুপ থেকে প্রিয়মানুষকে হারানোর কোনো মানে হয় না।শেষবারের মতো সে আরফানের নাম্বারে ফোন দেয়,এবার ফোন রিসিভ হয়,উপাশ থেকে আদুরে কন্ঠ ভেসে আসে।
“সরি,সোনা।আমি ক্লাসে ছিলাম।তুমি কতোগুলো ফোন দিয়েছো,আমাকে কি খুব মিস করছে আমার তিতির’টা?”
আরফানের আদুরে কথায় তিতিরের কান্নারা দলবেঁধে ছুটে যায়।কেঁদে কেঁদে বললো,
“আমাকে তো বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।”
আরফান হেসে বললো,
“বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করবে কে?”
আরফানের দুষ্টুমি তিতিরের বিরক্ত লাগলো।সে কান্না কান্না গলায় রে,গে বললো,
“সত্যি।আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না?”
আরফান এবার চিন্তিত্ব হয়।তিতিরের কান্নাভেজা গলার স্বর কানে লেগেছে।কপালের চামড়া কুঁচকে আসে।
“কি হয়েছে তিতির?কাঁদছো কেনো?”
“দাদী আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ”
আরফানের শ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসে।বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে মানে কি?
“কার সাথে?”
“আরশ ভাইয়ার সাথে।”
আরফান রা,গে কিড়মিড় করে উঠে। প্রথমদিন থেকেই আরশের দৃষ্টি অন্যরকম ছিলো।একটা ছেলে আরেকটা ছেলের চোখের দৃষ্টি বুঝার ক্ষমতা আছে,আরফানও আরশের চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছে কিন্তু ভাবেনি ব্যাপারটা এতোদূর এগোবে।তার ইচ্ছে করছে আরশের গালে ঠাডিয়ে একটা থা,প্পড় দিতে।বেয়া,দব লোক।আরফানকে চুপ করে থাকতে দেখে তিতির বললো,
“আপনি কিছু বলুন,আমি কি করবো?আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।”
আরফান ভরা গলায় তিতিরকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
“আর কাউকে বিয়ে করবে কেনো তুমি তো আমাকে বিয়ে করবে।আমার বউ হবে।”
তিতির ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বললো,
“কেউ মানবে না।”
তারপর আরফানকে বাড়ির পুরো ঘটনা বিস্তারিত জানায়।সব শুনে আরফান বললো,
“আমি সব ঠিক করে নেবো। তুমি এতো ঘাবড়ে যেও না।”
“আমার ভ,য় হয়,আপনাকে না হারিয়ে ফেলি।”
“দূর পাগল।আমি তোমার আছি তোমারই থাকবো।একটুও হারা,বো না।”
তিতর আহ্লাদী গলায় বললো,
“ভিষণ ভালোবাসি।”
আরফান তার তিতিরের আহ্লাদী কথায় আশকারা দেয়।নরম গলায় বললো,
“আমিতো জানি আমার তিতিরসোনা আমাকে কতো ভালোবাসে।আমিও তিতিরকে ভিষণ ভালোবাসি,সে কি জানে?”
আরফানের উপর তিতিরের ভিষণ বিশ্বাস।সে জানে আরফান থাকতে কোনো বি,পদ তাকে ছুঁতে পারবেনা।আরফানের এই কথাগুলো তাকে অনেক সুখ দেয়।সে সুখী গলায় বললো,
“জানে,খুব ভালো করেই জানে।”
“জানলে বিশ্বাস রেখো,তুমি আমার এই কথাটা মনে রেখো।”
তিতির ভিষণ লক্ষী মেয়ের মতো বললো,
“আচ্ছা।”
আরফান ফোন রেখে ছোট একটা ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ির উদেশ্যে বেরিয়ে যায়।তার দাদী জয়তুন বেগমকে সে হাড়ে হাড়ে চেনে।একবার যেহেতু সবাইকে রাজী করিয়ে ছেড়েছে সুতরাং বিয়ে না করানো পর্যন্ত শান্ত হবেনা।
শাহাবুদ্দিন খান চুপচাপ বসে আছেন।চোখের দৃষ্টি বেশ গম্ভীর,যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে যে উনি গভীর কোনো চিন্তায় মগ্ন।সালমা রাতের কাজকর্ম সেরে রুমে এসেছে অনেকক্ষন কিন্তু স্বামীর কোনো সারাশব্দ পাচ্ছে না,তার সাথে এই পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি।সালমা এগিয়ে যায়।কাধে হাত রেখে বললো,
“কি ভাবেন?”
শাহাবুদ্দিন খান বললো,
“আম্মা হঠাৎ তিতিরকে কেনো আরশের বউ বানাতে চাচ্ছে?”
সালমা বেগম এই ব্যাপারটা নিয়ে নিজেও ভেবেছেন কিন্তু শাশুড়ীর উপর কথা বলার সাহস কারো নেই।তার শশুড় ইহলোক ত্যাগ করার পরে সবাই তাদের আম্মাকে প্রাণ ভরে মানে।মায়ের উপর কথা বলে না,উনি যা বলে সে কথাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে গন্য করা হয়।শাহাবুদ্দিন বললো,
“তিতিরের কান্নার শব্দ শুনেছো?মেয়েটা বোধহয় এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেনা।”
সালমা মাথার চুল বেনি করতে করতে বললো,
“হ্যাঁ,সারাদিন কান্নাকাটি করেছে।দেয়ালে মাথা ঠুকে কপাল ফুলিয়ে ফেলেছে।মহিবুল্লার তো মা,রলোও।”
“আরশ তো দেখতে শুনতে ভালোই কিন্তু তিতির এমন পাগলামি করছে কেনো?ওর কি কোনো পছন্দ আছে নাকি?”
সালমা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“বাচ্চা মেয়ে ওর কি পছন্দ থাকবে?তাছাড়া এমন কোনো ভাব-ভঙ্গিমা তো দেখিনি।”
“আমাদের মারিয়াও কিন্তু বাচ্চাই ছিলো,শান্ত ছিলো,কোনো ভাব-ভঙ্গিমা ছাড়াই মাহমুদকে ভালোবেসেছে। আমরা কি তা টের পেয়েছি?”
সালমা কথাটা ভাবলেন কথা সত্যি।মেয়েদের উপর দেখে কখনো তাকে যাচাই করতে নেই।
মুহিবুল্লাহ বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছে।তানিয়া পাশে বসে বললো,
“শুনেন,বিয়েটা কি হওয়াই লাগবে?”
মহিবুল্লাহ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“হ্যাঁ।”
“তিতির রাজী না।”
“ওর রাজী অ-রাজীতে কিছু আসে যায় না। ”
“আজকাল মেয়েদের সিদ্ধান্ত ছাড়া বিয়ে দেয়া তো ভালো না,পরে সংসারে অশান্তি হয়।”
“শোনো;আম্মা যেহেতু বলেছে তাহলে তিতিরের জন্য আরশ’ই ঠিক।আমার মায়ের কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে না।”
“আপনার কোনো কথা নেই?”
“না।আমিও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি।”
তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে থাকে।তিতির এই বিয়েতে রাজী না উনিও আরশকে একমাত্র মেয়ের জামাই করতে চান না কিন্তু না চাইতেও করতে হবে,উনি যে নিরুপায়।
রাত দুইটার দিকে তিতিরের মনে হলো তার রুমে কেউ আছে।ড্রীম লাইটের আলোয় সে দেখতে পায় এক মানব একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এত রাতে তার রুমে কে আসতে পারে তা ভেবেই তিতিরের গলা শুকিয়ে যায়।মনে মনে ভাবে এটা বুঝি আরশ,আরশকে ভেবেই তিতির চিৎকার করার প্রস্তুতি নেয়।মানুষটা বুঝি তিতিরের মনের কথা স্পষ্ট শুনতে পেলো তাইতো তখনি আলতো করে তিতিরের গাল ছুঁয়ে দেয়।তিতির চমকে উঠে,অসময়ে প্রিয় স্পর্শ পেয়ে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে,চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাব ছুটে পরিচিত প্রিয় পারফিউমের গন্ধে।বাড়ানো হাতটা আঁকড়ে ধরে নিজেকে বুঝাতে চায় এটা স্বপ্ন না;এটা বাস্তব।আবছা অন্ধকারে আরফানের পশমভরা পুরুষালি পেশীবহুল হাতে তিতির পাগলের মতো চুমু দেয়,হাতটা টেনে গালে মিশিয়ে নেয়,তিতিরের কাজে আরফান বললো,
“পাগল মেয়ে।”
তিতির সত্যিই পাগলের মতো কেঁদে ফেলে।হঠাৎ তিতিরের কান্নায় আরফান বিচলিত হয়,উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেয়।তিতির আসাম করে বসে কাঁদছে।লাইটের আলোয় আরফান দেখতে পায় ফর্সা গায়ের তিতিরের কপাল কালচে দা,গ,র,ক্ত আসার কা,টা দা,গ স্পষ্ট,গোলগাল গালে আঙ্গুলের ছাপ ফুলে উঠেছে ।প্রিয়তমার চেহারায় এমন দা,গ দেখে তার বুকটা মুচড়ে উঠে,দ্রুত তিতিরের কাছে এগিয়ে যায়।নরম স্পর্শে তিতিরের কপাল ছুঁয়ে দেয়। গালের ফোলা অংশে হাত বুলিয়ে বললো,
“এসব কি?”
তিতির কান্না থামায়।কপালে হাত রেখে বললো,
“বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে,তাই রা,গে দেয়ালে আঘাত করেছি। ”
আরফান একটু রে,গে গেলো। রা,গ দেখিয়ে বললো,
“তাই বলে নিজেকে আ,ঘাত করতে হবে?আমি আছিনা?”
আরফান ভিষণ যত্ন নিয়ে তিতিরের আ,ঘাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে।তিতির কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“ভুল হয়েছে।”
“জীবনে যেমন পরিস্থিতিই আসুক না কেনো কখনো নিজেকে আ,ঘাত করার কথা ভাববে না।মনে থাকবে?”
“হুম।”
“আর গালের আ,ঘাতটা?”
“আব্বা!বিয়ে করবোনা বলাতে মে,রেছে।”
আরফান যত্ন আদর দিয়ে তিতিরের গাল ছুঁয়ে দেয়।তারপর লাইট নিভিয়ে আস্তে করে দুজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।তিতির বারবার জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি কিন্তু আরফান চুপ থাকতে বলে।
“এতো রাতে আসতে গেলেন কেনো?”
“আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমি ঢাকায় বসে থাকবো?”
তিতির আরফানকে যাচাই করার জন্য বললো,
“হোক বিয়ে তাতে কি?”
আরফান হাটা থামিয়ে দেয়।তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমাকে মে,রে ফেলতে চাস নাকি?যদি মে,রে ফেলতে চাস তাহলে বিয়ে করে নে।”
তিতির হেসে আরফানের হাত আঁকড়ে ধরে।আরফান আবার বললো,
“তুমি পারবে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে?”
তিতির মাথা নেড়ে না করে।
“আমিও ম,রে যাবো, ইশ একদম আমার আত্মা তুমি।”
তিতিরের কথা শুনে আরফান হাসে।নদীর তীরে এসে থামার পরে তিতির মুগ্ধ চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে।ভরা জ্যোৎস্নায় নদীর পানির টলমল দৃশ্যমান।আকাশের বিশাল থালার মতো চাঁদ।মাঝে মাঝে ঝিঝি পোকার লুকোচুরি চোখে পরছে।তিতির হাসে, বিরবির করে বললো,
“এতো সুন্দর!”
“বাড়িতে যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য দেখে ভাবলাম আমার তিতিরকে এই সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করা ঠিক হবেনা তাইতো তোমাকে নিয়ে আসলাম।মন ভালো লাগছে?”
“খুব। ”
দুজনে ঘাটে বাধা একটা নৌকায় উঠে বসে।তিতির বললো,
“নৌকা চালাবে কে?”
আরফান হাতে বৈঠা তুলে বললো,
“আমিই চালাবো।আমিই তোমার মাঝি।উজান গাঙ্গে বৈঠা বাইয়া লইয়া যামু শশুড় বাড়ি,যদি কন্যা থাকো তুমি রাজী।”
তিতির সারাদিনের কান্না,টেনশন সব ভুলে আরফানের ছন্দ শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে।ভিষণ আহ্লাদী গলায় বললো,
“মাঝি!আমারে তোমার মন মাঝারে নিয়ে যাও,যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না। ”
আরফান সমানতালে নৌকায় বৈঠা বেয়ে বললো,
“আরেকটু অপেক্ষা করো সুন্দরী,এই মাঝি তোমাকে সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠাবে।সাতার জানো তো?”
তিতর এক দৃষ্টিতে আরফানের দিকে তাকিয়ে আছে।
“সাতার জানি না,তবে মাঝি সাথে থাকতে চিন্তাও করি না,মাঝি শিখাবে।”
আরফান দুষ্ট চোখে তাকিয়ে হেসে বললো,
“হ্যাঁ খুব ভালো করে শিখাবো।”
তিতির নৌকার পাটাতনে মাথা রেখে শুয়ে পরে।আরফানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সারাজীবনের জন্য তুমি আমার মাঝি হয়েই থেকো❝ আমার উজান ঘাটের মাঝি।❞
আরফান নেশাভরা চোখে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“থাকবো।”
তিতির চিৎকার করে বললো,
“শুনছো চাঁদ, এই মাঝি আমার,শুধু আমার।তুমি সাক্ষী থাকলে কিন্তু ।”
তিতির তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়।এতো সুন্দর রাতের আকাশ সে আগে কখনো দেখেনি কিংবা কখনো এর রূপু উপভোগ করার চেষ্টাও করেনি।আজকে এমন মধুর রাত উপভোগ করানোর জন্য সে আরফানের উপর কৃতজ্ঞ।
মাঝ নদীতে যাওয়ার পরে আরফান নৌকার বৈঠা তুলে নেয়।ধীর পায়ে এগিয়ে তিতিরের কাছে যায় । আরফানের উপস্থিতিতে তিতির চোখ খুলে তাকায়।মিষ্টি করে হাসে।আরফান দাঁড়িয়ে থাকে।আরফানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিতির’ও দাঁড়ায়।দুজন দাঁড়ানোর জন্য নৌকা দুলে উঠে,ভয় পেয়ে তিতির আরফানের হাত আঁকড়ে ধরে।আরফান হেসে তিতিরকে কাছে টেনে নেয়।সহাস্য গলায় কৌতুক করে বললো,
“মাঝিকে সারাজীবনের জন্য চাও আবার নৌকার সামান্য দোলায় ভ,য় পাও!এমন হলে তো হবেনা আ
সুন্দরী।”
তিতির হেসে বললো,
“হবে হবে।এই সুন্দরীর জন্য সব হবে।”
রাতের জুড়ালো হাওয়ায় নৌকা আপনা আপনিই চলছে।তিতির সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“টাইটানিক ছবিটা দেখেছো?”
আরফান বালিকার মনের ইচ্ছা নিমিষেই বুঝে যায়।
“হুম।অনেকবার।কতোবার দেখেছি তার হিসাব নেই।”
তিতির আবদারের সুরে বললো,
“জাহাজে রোজ আর জ্যাক যেমন পাখি হয়েছিলো ; চলোনা তেমন পাখি হই।”
নিঝুম রাত!ঝি ঝি পোকার ঝি ঝি ডাক ব্যতীত আর কোনো শব্দ নেই,চারপাশ স্তব্ধ, হয়ে আছে।আকাশের চাঁদ-তারা মিটিমিটি হেসে যেনো তাদের ভালোবাসা দেখছে।এমন মধুর পরিবেশে যদি প্রিয়তমা পাশে থাকে তাহলে আরফান ঠিক থাকে কি করে?কোনো নে,শাদ্রব্য সেবন না করেই তিতিরের নে,শায় আচ্ছন্ন হয়,নিজেকে হারাতে ইচ্ছে করে ছোট তিতিরের মাঝে,বেশামাল ইচ্ছেরা আশকারা দেয়।তার এমন দিশেহারা অবস্থায় তিতির যখন আবদার করে সে রোজ আর জ্যাকের মতো পাখি হতে চায় তখন আরফানের ইচ্ছে করে জ্যাকের মতো রোজকে আদর করতে,একটু ছন্নছাড়া হতে।আরফান নিজেকে শান্ত করতে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে।তিতির আরফানের শান্ত অথচ চঞ্চল চোখের দিকে তাকায়,তার বুকের খাঁচায় হৃদপিণ্ডটা বেশামালভাবে লাফাচ্ছে।আরফানকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে,পা,গলের মতো আরফানের বুকে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করছে,তিতির খুব ভালো করে জানে এই ভাবনাগুলো ভাবাও অন্যায় কিন্তু তার অবাধ্য,পাগলাটে মন এগুলো ভাবছে,নিঝুম রাতে প্রিয় পুরুষের আঙ্গুলের মৃদু ছোঁয়া তার বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে,আরফানের এমন শান্ত চোখের দৃষ্টি তাকে আরো পাগল করে দিচ্ছে,আরফানের গায়ের ভিষণ পরিচিত ঘ্রাণটা এতো ভালো লাগছে!সে আদুরে কণ্ঠে বললো,
“কি!”
আরফান হাসে।হাত দিয়ে তিতিরের দুইহাত আঁকড়ে ধরে পাখির মতো ডানা মেলে।দুজন চোখ বন্ধ করে রাখে,খোলা নদীর উত্তাল বাতাস এই কপোত-কপোতীকে নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে যায়।আরফান তিতিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“ভালো লাগছে?”
“ভিষণ।”
আরফান তিতিরের দিকে তাকিয়ে থাকে,তিতির আরফানের বুকে পিঠ লাগিয়ে সামনে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো কিন্তু হঠাৎ অনুভব করে গলায় ঠোঁটের স্পর্শ,তিতিরের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে,অবস হয়ে আসতে চায় হাত-পা।সে চোখ খুলে তাকায়।মাথা ঘুরিয়ে আরফানের দিকে তাকায়। আরফানকে তখন অন্যরকম লাগছিলো,নে,শায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলো।দুজনের চোখে চোখে কথা হয়।আরফান টুপ করে তিতিরের ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,
“ভালোবাসি।”
তিতির এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তিতিরের চোখের ভাষায় কিছু ছিলো ;যা আরফানের বুঁক কাঁপিয়ে দিলো।মাঝ নদীতে এক গভীর চুম্বনের সূচনা হলো,উন্মাদ হয়ে গেলো দুজন।কিছুক্ষণ পরে আরফান শক্ত করে তিতিরকে আঁকড়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
“আমি সবাইকে মানিয়ে জলদি বিয়ে করে নেবো প্রমিস। ”
তিতির হেসে উঠে।তারপর বললো,
“তুমি খুব দুষ্টু,আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।”
“কাকে করবে?আরশ’কে?”
“না,তোমাকে!”
নৌকার পাটাতনে দু’জন শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।চাঁদটা কেমন জ্বলমল করছে।তিতিরের মনে হলো একটু আগে তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়েই চাঁদ হাসছে।সে লজ্জা পায়,আরফানকে জড়িয়ে ধরে।আরফান বললো,
“কি হলো?”
“চাঁদ সব দেখে নিয়েছে।”
তিতিরের কথায় আরফান হো হো করে হেসে উঠে।এই মেয়েটা কাছে থাকলে দুনিয়া এতো সুখী লাগে।সে তিতিরের কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়।
“চাঁদকে সাক্ষী রেখে মাঝিকে পার্মানেন্ট করেছো,চাঁদকে সাক্ষী রেখেই মাঝির আদরে আদুরী হলে।”
তিতির আরফানের বুকে মাথা রেখে বুকের স্পন্দন শুনে ফিসফিস করে বললো,
“তুমি আমার মাঝি।”
আরফান তিতিরের মাথার চুলে হাত গলিয়ে দেয়।
“আজকে আমার তিতির আমাকে তুমি করে বলছে। ”
তিতির লজ্জা পায়।
“মাঝি তো খুব দুষ্টু।”
আরফান হাত বাড়িয়ে নদী থেকে পানি এনে তিতিরের গায়ে দেয় আর বলে,
“মাঝিরা দুষ্টু’ই হয় গো সুন্দরী।”
চলবে……