#উইল ইউ ম্যারি মি?
পর্ব–৬
® Fareen Ahmed
মেয়ের কথা শুনে প্রমথ সাহেব খুব জোরে হেসে উঠলেন। সময় নিয়ে তিনি হাসতেই থাকলেন। প্রীতি ভ্রু কুচকে বলল,” কি হয়েছে আব্বু? হাসির মতো কি বললাম?”
হাসতে হাসতে প্রমথের চোখে পানি এসে পড়েছিল৷ তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন,” জীবন এতো সহজ না মা। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। বিয়ে মেয়েদের জীবনের একটি অনিবার্য সত্য। এই সত্য তোকে মানতেই হবে।”
” উফ আব্বু, তুমি বুঝতে পারোনি৷ আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না এই কথা কিন্তু বলিনি৷ আমি বলেছি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না। ”
” আশরাফুলকে কেন বিয়ে করতে পারবি না? আমাকে ছেড়ে দূরে থাকতে হবে বলে?”
” এটাও একটা কারণ। কিন্তু এর চেয়েও বড় আরেকটা কারণ আছে।”
” কি?”
প্রীতি কারণটা বলতে নিয়েও থেমে গেল। এতো কথা বাবাকে জানিয়ে কাজ নেই।
” তাকে আমার পছন্দ না।”
” পছন্দ না!”
প্রমথ সাহেব ভীষণ অবাক হলেন। প্রীতি নিশ্চুপ আছে। প্রমথ একটু পর হেসে বললেন,” মিথ্যে কেন বলছিস মা?”
” মিথ্যে কখন বললাম? সত্যি আব্বু, তাকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। আমার মনে হয় সে আমার জন্য ঠিক না।”
” কেন তোর এটা মনে হলো? সত্যি করে বল, আশরাফুলকে তোর পছন্দ হয়নি এই কথা আমি বিশ্বাস করবো না৷ কারণ আমি আমার মেয়ের মন বুঝি।”
প্রীতির কিঞ্চিৎ কষ্ট হলো। সে যে আশরাফকে ভালোবেসে ফেলেছিল এটা কি বাবা বুঝে গেছেন? জেরিন তো বুঝেনি। অন্যকেউ বুঝেনি। তাহলে বাবা কি করে বুঝলেন? প্রীতি ক্ষীণ স্বরে বলল,” যদি তুমি আমার ভালো চাও তাহলে প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দাও আব্বু।”
” তুই কি সিরিয়াস? আরেকটু ভেবে সিদ্ধান্ত নে।”
” ভাবার কিছু নেই। এই বিয়ে সম্ভব না ব্যাস!”
” আশ্চর্য! এমনি বললে হয় নাকি? একটা উপযুক্ত কারণ তো আমাকে বলতে হবে।”
” ছেলে আমার পছন্দ হয়নি। এটা কি তোমার কাছে উপযুক্ত কারণ মনে হচ্ছে না?”
” মারে, বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তোর খুশি আমি দেখেছি। এই বিয়েতে তোর দ্বিধা থাকার কথা না৷ তাহলে এখন হঠাৎ কি এমন হলো যে তুই বিয়ে করতেই চাইছিস না? আশরাফের মধ্যে কি খারাপ কিছু দেখেছিস?”
প্রীতির মনে পড়ল, আশরাফ সেদিন রেস্টরন্টে বলেছিল বিয়ে ভাঙার বাহানা শিখিয়ে দিয়েছিল। বলতে হবে আশরাফ তার সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছে। প্রীতি সঙ্গে সঙ্গে বলল,” লোকটার স্বভাব আমার ভালো লাগেনি বাবা। তিনি আমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করেছেন।”
” কিরকম বাজে ব্যবহার?”
প্রমথ সাহেবের চোখ-মুখ কুচকে গেল। কণ্ঠ ভারী হয়ে এলো। প্রীতি খানিক ভয় পেল। বাবা যদি এখন রেগে যান! পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল,
” তেমন কিছু না। শুধু আমার মনে হয়েছে এমন একটা ছেলের সঙ্গে আমি সারাজীবন কাটাতে পারবো না। মাইন্ড ম্যাচিং হচ্ছে না। বুঝতে পেরেছো?”
প্রমথ সাহেব হা করে তাকিয়ে রইলেন। তেমন কিছু বুঝতে পারেননি। তবে এইটুকু বুঝলেন যে ঘটনা গুরুতর। নাহলে প্রীতি এমনি এমনি বিয়েতে ‘না’ করবে না। প্রীতি এতো অবুঝ না। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে যা মেয়েটা বলতে চাইছে না। প্রমথ সাহেব কথা বের করার জন্য উচ্চ গলায় প্রশ্ন করলেন,
” আশরাফুল কি করেছে তুই খালি বল।”
বাবার কণ্ঠ শুনে প্রীতি ভয়ে কাবু। সে ভয় পাচ্ছে আশরাফকে নিয়ে। বাবা তো তাকে কিছু বলবে না। কিন্তু আশরাফকে ছাড়বে না। অথচ বেচারার কোনো দোষই নেই। পাশের ঘর থেকে বাপ-মেয়ের তর্ক-বিতর্ক শুনে নাফিসা উঠে এলেন।
” রাত-বিরেতে বাপ-মেয়ের ঝগড়া শুরু হলো নাকি? কি ব্যাপার?”
ফুপুকে দেখে কথা বলতে নিয়েও চুপ হয়ে গেল প্রীতি। কিন্তু প্রমথ সাহেব থামলেন না। নাফিসাকে উদ্দেশ্য করে তেজস্বী কণ্ঠে বললেন,” কি ছেলে দেখেছিস তুই? ছেলে নাকি নম্র-ভদ্র? অথচ প্রীতির সাথে সে এমন ব্যবহার করেছে যে প্রীতি এখন বিয়েই করতে চাইছে না।”
নাফিসার মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। বজ্রের মতো শব্দ করে বললেন,” বিয়ে করতে চাইছে না মানে? মগের মূল্লুক নাকি? এই মেয়ে, তোর কি হয়েছে? বিয়ে কেন ভাঙবি?”
প্রীতি মাথা নিচু করে জেদী কণ্ঠে বলল,” ছেলে পছন্দ হয়নি৷ তাই বিয়ে করবো না। আমাকে কেউ জোর করতে পারবে না। কথা এখানেই শেষ। ”
” আরে অদ্ভুত! পছন্দ না হলে তুই এতোদূর আসলি কেন? তোকে তো ছবি পাঠানো হয়েছিল। তখনি নিষেধ করে দিতি।”
প্রমথ সাহেব মুখ খুললেন,” শুধু ছবি দেখেই কি মানুষ চেনা যায়? ছবি দেখে তো মনে হয়েছিল ছেলে খুব নিষ্পাপ। পৃথিবীর দশজন ভালো মানুষের মধ্যে একজন। কিন্তু এইখানে আসার পর, ছেলের সঙ্গে মেশার পর প্রীতি বুঝতে পেরেছে ছেলের আচরণ ভালো নয়। সেজন্যই তো বিয়ে ভাঙতে চাইছে। আমার মেয়ে এমনি এমনি কোনো কাজ করে না। এখন তোর কাছে আমি জানতে চাই ছেলের আচরণ কেন খারাপ? তুই তো ওদের ফ্যামিলি সম্পর্কে ভালো করে জানিস।”
নাফিসা রেগে বললেন,” আচরণ খারাপ কেন হবে? কি করেছে সে তোর নবাবজাদীর সাথে? এতো ভালো ছেলের আচরণ তোর মেয়ের খারাপ মনে হবে কেন? তাছাড়া পৃথিবীতে নিঁখুত বলে কোনো মানুষ নেই। সবারই ভুল-ত্রুটি থাকে। সেজন্য বিয়ে ভাঙতে হবে নাকি? এডজাস্ট তো করা উচিৎ। ”
প্রমথ সাহেব বললেন,
” তার জন্য জানতে হবে ভুলটা কি? তারপর আমিই সিদ্ধান্ত নিবো এডজাস্ট করা যায় কি যায় না। যদি মনে হয় ক্ষমার অযোগ্য দোষ তাহলে বিয়ে হবে না। আর যদি মেনে নেওয়ার মতো দোষ হয় তাহলে আমার মেয়েকে আমি বোঝাবো।”
” তোরা বাপ-মেয়ে এমন ড্রামা করছিস যেন তুই জন স্পেন্সার আর তোর মেয়ে প্রিন্সেস ডায়না! আরে এমন প্রস্তাব যে তোর মেয়ের জন্য এসেছে সেটা তো তোদের সাত কপালের ভাগ্য! শুকরিয়া আদায় না করে ছেলের দোষ-গুণ খুঁজে বেড়াচ্ছিস? দোষ-গুণ মিলিয়েই তো মানুষ। আর তোর মেয়ে কি খুব নিষ্পাপ? তার কি দোষ নেই? ”
প্রমথ এক বাক্যে বললেন,” আমার মেজাজ খারাপ হওয়ার আগে তুই এখান থেকে চলে যা নাফিসা।”
” তোর মেজাজ খারাপ হবে মানে? মেজাজ তো আমার খারাপ হওয়া উচিৎ। যেই কথা শুনছি!আচ্ছা তোদের কি বলার মতো কোনো পরিচয় আছে? কোথায় আশরাফ আর কোথায় প্রীতি। বামুন হয়ে চাঁদ ছোঁয়ার মতো ঘটনা। সারাজীবন সাধনা করলেও তোর মেয়ে আশরাফের নখের যোগ্য হতে পারতো না৷ সেখান থেকে ওরা নিজে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা তোদের ভালো লাগছে না? অদ্ভুত! কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না বলে একটা বাগধারা শুনেছিলাম। এখন দেখছি সত্যি।”
প্রীতি আর চুপ থাকতে পারল না। হিংস্র বাঘিনীর মতো চিৎকার করল,”তোমার এই বিষয় কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র আমার বাবার আছে। আর কারো নেই।”
প্রীতির চিৎকার শুনে এক কানে হেডফোন আর হাতে মোবাইল নিয়ে জেরিন ছুটে এলো। অবাক হয়ে পরিস্থিতি অবলোকন করল। নাফিসা চেঁচিয়ে বললেন,” ভাষণ বন্ধ কর মেয়ে। শুধু চোপা ছাড়া আর কি পারিস তুই? বিয়ে নিয়ে আমি চিন্তা করবো না কেন? এই বিয়ের সাথে আমার সম্মান জড়িত। আরোহী আপাকে আমি কথা দিয়েছি। এখন সেই কথার বরখেলাপ করবো?”
” তুমি আমার ব্যাপারে কথা দেওয়ার কে?”
” আমি তোর ফুপু হই।”
” তোমার মতো ফুপু থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। ”
নাফিসা বড় বড় চোখে প্রমথের দিকে চাইলেন।
” শুনলি তোর মেয়ে কি বলল? কিছু বলবি না ওকে?”
প্রমথ সাহেব টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে নির্বিকার গলায় বললেন,” কেন বলবো? আমিও তাই মনে করি। তোর মতো ফুপু ওর না থাকলেও চলতো।”
” তাহলে পড়ে আছিস কেন আমার বাড়িতে? খাচ্ছিস কেন আমার অন্ন? আজকেই বের হয়ে যা!”
” এখনি বের হয়ে যাচ্ছি।”
জেরিনের মুখ শুকিয়ে গেল পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। প্রীতি কিছু বলার জন্য গজগজ করছে। পেছন থেকে ইশারায় প্রীতিকে চুপ করতে বলল জেরিন। প্রীতি চুপ থাকল না। তার রাগ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
” তোমার নিজের মেয়ের জন্যেও তো প্রস্তাব এসেছিল। এতোই যখন পছন্দ তাহলে বিয়েটা দিলে না কেন?”
নাফিসা জবাবে বললেন,
” জেরিন অন্যকাউকে চায়। মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তাকে জোর করে বিয়ে দিবো নাকি?”
” তাহলে আমাকে জোর করছো কোন হিসেবে?”
নাফিসা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
” তুই আর জেরিন কি এক? আমার মেয়ে চাইলে ওর জন্য আমি রাজপুত্র হাজির করতে পারবো। ওর বিয়ে দেওয়ার জন্য ওর ফ্যামিলি স্ট্যান্ডার্ডই যথেষ্ট। আর তোর কি আছে শুধু সুন্দর চেহারা ছাড়া? তোর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড শুনলে তো পাত্র হাত ধুঁয়ে পালাবে। সেখানে আশরাফের মতো ছেলে তোকে বিয়ে করতে চায়। নিজেকে ধন্য মনে কর।”
প্রীতি বিক্ষিপ্ত মেজাজে বলল,” বিশ্বাস করো, তোমার মতো জঘন্য মানুষ আমি আর দেখিনি। ”
নাফিসা ধাপ করে প্রীতির গালে চড় মারলেন। জেরিন ভয়ে মুখে হাত দিয়ে ফেলল। কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে! প্রমথ সাহেব সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লেন। গম্ভীর গলায় বললেন,” প্রীতি চল। এখানে আর এক মুহূর্ত নয়।”
নাফিসা হৈহৈ করে উঠলেন,” যা, যা। তোদের বাড়িতে জায়গা দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে। মান-সম্মান আর কিছু অবশিষ্ট থাকল না।”
প্রমথ কাপড়টাও বদলাননি। হাত ধুঁয়ে লাগেজ ব্যাগ গুছিয়ে নিলেন। তারপর গায়ে ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়েই মেয়ের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলেন। প্রীতিও কোনো কথা বলল না। তার গায়ে ছিল একটা সুতির কামিজ। সে শুধু ওরনা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিল। যাওয়ার আগে জেরিন কান্নাকাটি শুরু করেছিল।
” মামা প্লিজ যেও না। তুমি কি তোমার ভাগ্নির কথাও শুনবে না?”
প্রমথ সাহেব শুনলেন না। জেরিনকে তিনি ভাগ্নী না, নিজের মেয়ে মনে করেন। মেয়ের মতো স্নেহ করেন। কিন্তু সেই স্নেহের প্রমাণ দেওয়ার জন্য বাড়িতে থেকে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যে বাড়িতে তার মেয়েকে অপমান করা হয় সেই বাড়িতে তিনি থাকবেন না। কখনোই না!
প্রীতি ব্যস্ত সড়কে বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করল,” আমরা এখন কোথায় যাবো আব্বু?”
” তোর বিয়ে দেওয়ার জন্য যে টাকা এনেছিলাম সেই টাকা দিয়ে এখন বাংলাদেশ যাওয়ার এয়ার টিকিট কাটবো।”
প্রীতির চোখে খুশির অশ্রু চলে এলো। প্রমথ সাহেবের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
” আই লভ ইউ আব্বু।”
” কিন্তু মা, এর আগে আমাদের অন্য একটা জায়গায় যেতে হবে।”
” কোথায়?”
” আশরাফুলের বাড়িতে।”
” সেখানে কেন?”
প্রমথ কোমল হাসি দিয়ে বললেন,” ছেলের বাবা-মা খুব ভালো মানুষ। তাদের না জানিয়ে চলে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমার নিজের বোন আমাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। কিন্তু তাদের বাড়ি গিয়ে যে সম্মান আমি পেয়েছিলাম তা ভুলে যাই কি করে? আমার মতো সাধারণ মানুষকে যারা এতো সম্মান করতে পারে আমি কিভাবে তাদের অসম্মান করি বল?”
” তুমি ঠিক বলেছো আব্বু। চলো আমরা তাহলে এখনি যাই।”
এতো রাতের বেলা বাবা আর মেয়েকে দেখে কিছুটা বিস্মিত হলেন সরফরাজ সাহেব। তাদের সাথে লাগেজ দেখে আরোহীর ভয়ে বুক কাঁপতে লাগল। যেটা আশঙ্কা করেছিলেন সেটাই কি তবে হয়েছে? আরোহীর আশঙ্কাকে সত্যি করেই প্রমথ সাহেব বিয়ে ভাঙার কথা বললেন। সরফরাজ কারণ জানতে চাইলে প্রমথ সাহেব কিছু বললেন না। শুধু ক্ষমা চাইলেন আর জানালেন সমস্যা আছে। সরফরাজ রীতিমতো অনুরোধ করতে লাগলেন। পারলে তিনি প্রমথের পায়ে ধরে ফেলেন। এতো অনুনয়-বিনয় দেখে প্রমথ সাহেব লজ্জিত হয়ে গেলেন।
আরোহী প্রীতিকে নিয়ে অন্যঘরে এলেন। প্রীতি প্রথমে আসতে চাইল না। আরোহী বললেন,” আবার কবে না কবে দেখা হয়। অন্তত আমার শেষ অনুরোধটুকু রাখো মা। প্লিজ?”
প্রীতি বাবার দিকে তাকাল। প্রমথ সাহেব যাওয়ার অনুমতি দিলেন৷ তারপর প্রীতি আরোহীর সঙ্গে এলো। আরোহী দরজা বন্ধ করতে করতে বললেন,” আমি জানি তুমি কেন বিয়েটা ভাঙতে চাইছো।”
প্রীতি মাথা নিচু করে রাখল। আরোহী আন্টির প্রতি তার রাগ আছে। সব জেনেও তিনি বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পরে লেগেছেন। এতে যে প্রীতির জীবন নষ্ট হতে পারে সেই কথা একবারও ভাবলেন না! শুধু নিজের দিকটাই দেখলেন। আরোহী কাছে এসে বললেন,” আশরাফ কি তোমাকে ফ্লোরার কথা বলেছে?”
প্রীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তর দিল,” জ্বী বলেছে।”
আরোহী মুচকি হাসলেন। হাসিতে দুঃখ মেশানো। হতাশ কণ্ঠে বললেন,” জানতাম। কি কি বলেছে?”
” অনেক কিছুই। উনি সারাক্ষণ আমার সাথে ফ্লোরার গল্পই করেন।”
” শুধু তোমার সাথে না, ও সবার সাথেই ফ্লোরার গল্প করে। যারা জানে না তারা এই গল্পগুলো সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু যারা আসল সত্যি জানে তারাই কেবল বোঝে ব্যাপারটা কত ভয়ংকর কষ্টের।”
” আন্টি, আমি আপনার কাছে অনুরোধ করবো ওদের সম্পর্কটা মেনে নিন। আশরাফ ফ্লোরাকে খুব ভালোবাসে। ওদের আলাদা করা ঠিক হবে না।”
” আমি ওদের আলাদা করার কে? যখন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই ওদের আলাদা করে দিয়েছেন!”
” মানে? ঠিক বুঝলাম না।”
” আশরাফ তোমাকে ফ্লোরার ব্যাপারে অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু একবারও কি এই কথা বলেছে যে ফ্লোরা দুইবছর আগে সুইসাইড করেছিল?”
প্রীতি থমকে গেল। আচমকা ভয়ের একটি শীতল স্রোত তার শরীরে প্রবাহিত হলো।
চলবে