ইমপারফেক্ট কাপল পর্ব-০৪

0
2917

#ইমপারফেক্ট_কাপল
#পর্ব_০৪
#লেখা_রিমি_ইসলাম

আরিয়ান জাহিদ অর্কের হাতে চারটা ফিল্ম সংয়ের কাজ। এর মাঝে দুইটা অলরেডি কমপ্লিট করেছে। তবে বাকি রয়েছে আরো দুইটা। এ নিয়ে স্টুডিও থেকে বারবার কল আসছে। ও ধরতে পারছে না কারণ এই মুহূর্তে সে ওই উজবুক মেয়েটার সাথে আছে। মেয়েটার জন্য তার ক্যারিয়ার না লাটে উঠে যায়!
সদ্য নাম কামিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকবার চান্স পেয়েছে। ফিল্মি গান চারটা হিট হলেই আর তাকে ধরে কে!
অর্ক রিকশায় নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে দেখে আমি দেবে বসতে সে আরো কাছ ঘেঁষে বসলো।
আমি সরে এলাম কিনারায়। এরপর আর সরলে সোজা নিচে পিচের রাস্তায় পড়ে হাত-পা ভাঙতে হবে।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ভাইয়া একটু চেপে বসেন প্লিজ। নিচে পড়ে গেলে আপনার ফুচকা খাওয়া বাদে আমাকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়তে হবে।

অর্ক আমার দিকে তাকিয়ে কেমন কেমন করে হাসছে দেখে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে এলো। ছেলেটা হঠাৎ ট্রিট চাইলো ব্যাপারটা কিছুতেই ভালো ঠেকছে না। আমি তার সাধের বইয়ের বারোটা বাজালাম আর সে কি না শুধু ট্রিট নিয়েই আমায় মাফ করে দিবে? ঘোর সন্দেহ মনে মনে।
ব্যাটার মাথায় কি চলছে কে জানে!
অর্ক কিছু বললো না। একটু পর রিক্সাওয়ালাকে থামতে বললো। সামনে তাকিয়ে দেখি সারি বেঁধে তিন, চারটা ফুচকার ফ্যান। সে ভাড়া মিটিয়ে নিচে নামলো, সাথে আমিও।
ভাড়া দিলো দেখে ইতস্তত করে বললাম,

— ভাড়া দিলেন কেন? ট্রিট তো আমি দিচ্ছি তবে ভাড়াও আমার পাল্লায় পড়ে। টাকা ব্যাক নেন।

— ইটস ওকে। তোমার কাছে জাস্ট ফুচকা খাবো। বাদ বাকি খরচ আমার। হাজার হলেও তুমি আমার ফ্যান লিস্টে পড়ো। আর ফ্যানদের জন্যই আজকের অর্ক তৈরি হয়েছে। সামান্য এইটুকু করা তো মাস্ট।

বাহ! ছেলের কথা থেকে মধু খসে পড়ছে দেখে এবার ততটা খারাপ লাগছে না। তার জন্য আমার মনে আগের সেই ফিলিংস ফেরত আসছে।
অর্ক বললো,
— মামা বেস্ট দুই প্লেট ফুচকা বানান। ঝাল একটু বেশি দেবেন।

আমি অবাক হয়ে তাকালাম। ছেলেরা সাধারণ ঝাল একদম সহ্য করতে পারে না। এই ছেলে সম্পূর্ণ ব্যতীক্রম। দুই প্লেট বেশি ঝালওয়ালা ফুচকা খেয়ে কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হবে।
ফুচকা বানিয়ে দোকানী হাতে দিলে একটা আমাকে দিয়ে অপরটা অর্ক নিলো।
আমি বললাম,

— আমি খাবো না। তার উপর এত ঝাল খেতে পারব না। আপনি শেষ করেন।

অর্ক একটা মুখে পুরে বললো,

— ইয়াম্মি। খাও-খাও যা টেস্ট। ঝাল নেই তুমিও খেতে পারবা।

আমি ওর মুখের তৃপ্তিময় খাওয়ার ভঙ্গি দেখে সাহস করে প্লেট থেকে একটা ফুচকা মুখে নিতেই মরে যায় অবস্থা। বাপরে, ঝাল নেই নাকি ঝালের পুরো বংশ এখানে উপস্থিত। অর্কর কাছে এই জিনিস কিভাবে টেস্টি হয়? একটা ফুচকার বিনিময়ে তিন গ্লাস পানি শেষ করে কুকুরের মতো মুখ হা করে ঝাল কমানোর চেষ্টা করছি দেখে অর্ক প্লেট হাতে হেসে খুন।
মেজাজ একেই ঝালে তুঙ্গে উঠে আছে তার উপর বিশ্রি হাসিতে গা রি রি করে জ্বলে উঠলো।

— এত ঝাল অথচ আপনি বললেন ঝাল নেই। মিথ্যা বলেছেন হ্যাঁ?

অর্ক জবাব দিলো না। ফুচকা খেয়ে টাকা দিয়ে বললো,

— একটু শপিং এ যাবো। আই নিড সামওয়ানস হেল্প। ক্যান ইউ হেল্প মি?

আমি যাবো শপিংমলে তাও ওর সাথে? দুনিয়ায় লোকের অভাব পড়ছে। আমিই কেন! মুখে কিন্তু না বলতে পারিনি। কারণ ওইযে অনুতপ্তবোধ। তার গিফটের বইটা হাজার হলেও আমার থেকেই নষ্ট হয়েছে। তাই রাজি হয়ে গেলাম সাথে যেতে।
শপিং মলে ঢুকতেই অর্কের কিছু পাগলা ফ্যান এসে হুড়হুড় করে জুটে যেতে আমি ছিঁটকে পড়লাম। কোথাও সে আর কোথায় আমি। অর্ককে ঘিরে ছবি আর লোকের ঢল নামায় আমাকে ধাক্কা মেরে চলে যেতে লাগলো পাবলিক। ফলে এত অত্যাচার শেষে ধপ করে নিচে পড়ে গেলাম। অর্কর সাথে এসে কোথায় ফেঁসে গেলাম! কোনোরকম উঠে দাঁড়াতেই অর্ক ভিড় ঠেলে আমার হাত ধরে দিলো ভৌ দৌড়।
লোকজন পেছন থেকে চেঁচিয়েই যাচ্ছে।

অর্ক….. অর্ক… প্লিজ একটু কথা বলবেন। ওয়ান লাস্ট সেল্ফি….

কিন্তু কে শোনে কার কথা। অর্ক আমার হাত ধরে দোতলায় উঠে দ্রুত একটা দোকানে ঢুকে পড়লো। তারপর হাফ ছেড়ে বললো,

— বাব্বাহ, এই ভয়েই কোথাও বেরোই না। সেলিব্রিটি হলে এই এক ঝামেলা। পাবলিক আমাদের মানুষ না ভেবে এলিয়েন ভাবতে শুরু করে। যত্তসব!! তারপরও বিরক্ত হলে তো আর চলে না। তখন আমার গান কেউ না শুনলে অর্ক দ্য স্টার হতে অর্ক দ্য রসগোল্লা হয়ে যাবো ভেবেই মুখ বুজে হাসি হাসি মুখে সেল্ফি তুলি। লে বেটা সেল্ফি লে।

একটার পর একটা শার্ট, প্যান্ট আর হ্যাট সিলেক্ট করে সব আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। কারণ হিসেবে বললো, ওর কব্জিতে না-কি গতরাতে লেগেছে। সোজা রগে টান লেগে ব্যথায় নাকি কিছুই হাতে নিতে পারছে না। আমার তো মনে হয় ব্যাটা মিথ্যা বলছে। দিব্যি ফুচকার দোকানে প্লেট ধরে ফুচকা গিললো, তখন তো হাতে কোনো ব্যথা ছিলো না! হঠাৎ কোথ থেকে ব্যথার আমদানি আল্লাহ মালুম।
সর্বদিন অর্কর পেছনে শপিংমল ঘুরে দুপুর গড়িয়ে পড়লো। খিদেয় পেট মোচড় দিচ্ছে অথচ একবার বলছেও না,, চলো খেয়ে নেই। এত উপকার খালি পেটে দিয়েই চলেছি। কিপ্টা ব্যাটা।
কেনাকাটা শেষে ফাইনালি একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে কিছু খাবার অর্ডার করলো। বুভুক্ষু আমি কথা না বলে খাওয়া শুরু করি। খেতে খেতে অর্ক বললো,

— শোনো, তোমাকে তুমি করে বলছি কিছু মনে নিও না।

আমি সরল হেসে বুঝালাম,, কিছু মনে করছি না। অর্ক আবার বলতে লাগলো।

— তোমার ফ্রেন্ড কি যেনো নাম মনে পড়ছে না, ওকে বলো কাল একটু আমার সাথে দেখা করতে। নাহলে ওর নাম্বার আমাকে দাও। কথা বলে নিবো।

এত ক্ষুধার্থ যে খাওয়ার মাঝে ওর বেশি কথা ঘাটালাম না। সোজা তিথির নাম্বার দিয়ে দিলাম।
খাওয়া শেষে অর্ক আমাকে রিকশা ঠিক করে দিলো। আমি সৌজন্যমূলক বললাম,

— আপনি যাবেন কিসে?

— আমার গাড়ি আসছে। ড্রাইভার অন দি ওয়ে। বাই।

রিকশা ছেড়ে খেয়াল হলো অর্কর গাড়িটা আগে আসতে বললে কষ্ট করে একই রিকশায় গা ঘেঁষাঘেষি করে তার সাথে যেতে হতো না। আচ্ছা খচ্চর ছেলে!! শুধু শুধু মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে ফেলে।

বাড়ি পৌঁছে দেখি তিথি হাসিমুখে দরজা খুলছে। ওকে দেখে আমার আর বুঝতে বাকি নেই আজ তার মনে লাড্ডু ফুটছে। যখনই কোনো খুশির ব্যাপার তার লাইফে ঘটে তখনই সে আমার বারি হাজির হয়। সারারাত প্যানপ্যান করে নিজেও ঘুমায় না আমাকেও দেয় না।

— বেস্ট একটা খবর আছে রে। তুই জলদি ফ্রেস হয়ে আই।

তিথির কথায় মাথা ব্যথা নেই আমার। ফ্রেস হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। উঠলাম সন্ধ্যায়। পাশে দেখি তিথি আর নুক্তা হা হয়ে বসে আছে। আমায় জাগতে দেখে নুক্তা বললো,
— তিথি আপু তুই যতক্ষণ থেকে ঘুমাচ্ছিস ততক্ষণে ধরেই বসে আছে। কি না কি জরুরী খবর দিতে তার প্রাণ হাঁসফাস করছে।

তিথি ন্যাকা কেঁদে বললো,
— এত নির্দয় তুই যে আমি কতবার বললাম কথা আছে তাও তুমি ঘুমায় গেলি।

— ড্রামা করিস না। ভীষণ টায়ার্ড ছিলাম বলে ঘুমাই পড়ছি। এখন যা বলবি বল।

তিথি ঠোঁটে হাসি ফুটলো। বললো,
— অর্ক আমাকে জব দিয়েছে। তার পার্সোনাল পিএস। প্রাইভেট সেক্রেটারি। কেন ইউ বিলিভ? অর্ক আমাকে জব অফার করছে। আমি তো শুনেই একবার জ্ঞান হারিয়েছি। তারপর উঠেই সোজা তোর কাছে দৌড়। এখন বল নিউজটা গ্রেট কি না?

আমার মাথা টনটন করতে লাগে। অর্ক তাকে কখন এই অফার করেছে? কেবল তো রেস্টুরেন্টে আজকেই তিথির নাম্বার নিলো। তাহলে আমাকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়েই কি তিথির সাথে কথা হয়েছে? ছেলের এত কিসের তাড়া? বুঝছি না ব্যাপারটা। তাছাড়া সারা জাহানে এত মানুষ থাকতে তিথিকে কেন? যার সাথে অর্কর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কথা হয়েছে।

আমাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে তিথি বললো,
— জেলাস! হা! বেশি করে জ্বল। তোর প্রিয় সিঙ্গার এখন চব্বিশ ঘন্টা আমার চোখের সামনে থাকবে। মাঝে মাঝে আমাদের আই টু আই কনটাক্ট হবে। ইশ! ভাবতেই শিহরিত আমি। বাই দা ওয়ে, কাল তোকেও সাথে নিতে বলেছে। তোর অনেক ফেইভার তার উপর বলেই জীবনের অনেক মোক্ষম মুহূর্তে তোকে পাশে রাখবে। কাল সকালে আমরা একসাথে যাবো। কত্ত মজা হবে!

আমার পুরো ঘুমের রেশ উবে গেছে। আমি ১০০% নিশ্চিত অর্ক আমাকে জব্দ করতে এক কদম পিছপা হবে না। আজ যে রাম খাটুনি খেটেছি। না জানি আগামীতে আর কত খাটতে হয়! ফেভারিট সিঙ্গার এখন আমার জীবনে অভিশপ্ত সিঙ্গার।

চলবে……….( কি মনে হয়? অর্ক কি করতে পারে?)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে