#ইমপারফেক্ট_কাপল
#পর্ব_০৩
#লেখা_রিমি_ইসলাম
নিশ্চয়ই ভাব্বে অর্ক তার সাথে দুষ্টু ফাজলামো কিংবা অপমান হেতু এমনটা করেছে। এটাই হওয়া উচিত ওই খচ্চর ব্যাটার সাথে।
দুটো দিন ভালোই ভালো কেটে গেল। সদ্য সকালে উঠে চায়ের পেয়ালা হাতে বসেছি। আয়েশ করে চা খেতে খেতে নুক্তার সাথে গল্প জুড়েছি। নুক্তা উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
— বইটা দেওয়া পর লোকটা কিছুই বলেনি? অবাক করা ব্যাপারটা।
আমি মুখ বেঁকে বলি,
— অবাকের কি আছে? ও বুঝলেতো আমাকে বলবে। বইটা এত পারফেক্টলি র্যাপ করে মুড়ে দিয়েছিলাম যে, ব্যাটা বুঝতেই পারেনি।
নুক্তা হাসে সাথে আমিও। এমন সময় কলিংবেল বাজতে বিরক্তি নিয়ে নুক্তা খুলতে গেল। সে ফিরলো হাতে একটা সুন্দর প্যাকেট নিয়ে। আমি ইশারায় প্রশ্ন করতে বললো,
— তোর পার্সেল এটা। কে দিলো রে আপি?
— আমি কি জানি! দেখি দে তো।
পার্সেলের প্যাকেট খুলে ভেতরে একটা র্যাপ করা বই আবিষ্কার করলাম৷ আমি আর নুক্তা হা হয়ে একে অপরকে দেখছি। কে দিতে পারে?
আমি এবার ঝটপট খুলে যা দেখি তাতে চোখ দুটো আমার বিস্ফারিত। কি ভয়াবহ কান্ড! সেই বইটা যেটা আমি অর্ককে দিয়েছিলাম। ভেতরে পৃষ্ঠা উল্টে দেখি কফির দাগটা ঠিক রয়েছে।
নুক্তা ঢোক গিলে বললো,
— বুঝেছিস আপি?
— হুম।
— ওই লোক বাসার ঠিকানা পর্যন্ত বের করেছে মানে ধরে নে যে কোনো দিন চলে আসতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। ভেরি ডেঞ্জারাস!
— খুব ভয় করছে যে নুকু।
— আরে ধূর রেখে দাও। যা হবার হবেই।
নুক্তার কথায় আমার ভয় কমলো না। সেদিন পার হয়েও যখন অর্ক এলো না তখন খুশি হয়েও আবার হতে পারিনি। আজ আসেনি বলে যে কখনোই আসবে না তা বলা মুস্কিল। সে আমাকে জব্দ করতে কি না করবে ভেবেই আমার রাতের ঘুম উবে গেল।
সকালে ঘুম ভেঙে সব ভুলে গেলাম। ব্রেন বেশি চাপ নিতে পারেনি বলে একা একাই ডিলিট মেরে দিয়েছে। নিত্যদিনের কাজ সেরে তিথিকে বলি জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির সামনে আসতে। ওখান থেকে ওকে নিয়ে ভার্সিটিতে যেয়ে মাঠে বসলাম। এখন ক্লাস অফ। তাই ফুল আড্ডা টাইম।
বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে তিথি বললো,
— অর্ক দ্য স্টারের সাথে দেখা হয়েছিল গত পরশু।
আমি পানির বোতল থেকে সবে পানি খেতে লেগেছি। এমন সময় একথা শুনে হেঁচকি উঠলো ভীষণ। তিথি তড়িঘড়ি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
— ঠিক লাগছে?
ওর কথার জবাব দেওয়ার অবস্থায় নেই।
আমি পাল্টা প্রশ্ন করি,
— কোথায়, কিভাবে দেখা?
তিথি ন্যাকা হেসে বললো,
— তুই যেদিন থেকে বললি নীলক্ষেত ওর সাথে বই কিনতে যেয়ে দেখা, সেদিন থেকে মনে মনে প্ল্যান করি আমিও যাবো। তাই সেখানে গিয়ে দেখি ছেলে হাজির। আমিতো বিস্মিত। একটা মানুষ প্রত্যেকটা দিন বইয়ের দোকানে কি করে? পরে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আমি শুরুতেই তোর পরিচয় দিয়ে বলি, আমি অদ্রিজার ফ্রেন্ড।
প্রথমে চিনতে পারলো না।
পরে যখন বললাম ওই যে যার সাথে বই নিয়ে
টানাটানি ওই মেয়েটার ফ্রেন্ড।
তারপর চিনতে পারলো। অর্ক বললো ও নাকি তোর নাম অদ্রিজা সেটা জানেই না।
আমি কাঁপা গলায় বললাম,
— তুই কি আমার বাসার ঠিকানা ওকে দিয়েছিলি?
— আরে হ্যাঁ, ঠিকানার কথা শুনে মনে হলো। ও আমার কাছে তোর ঠিকানা আর ফোন নাম্বার চেয়েছিলো। তোকে থ্যাঙ্কস বলতে। তুই না-কি ফার্স্ট দিন ওকে অনেক হেল্প করেছিলি লেডিস টয়লেটে ঢুকে পড়েছিল যেদিন।
— মরেছি, আমার মরার টিকেট কনফার্ম করে এসেছিস তুই তিথি।
তিথির সাথে কথা শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হই। একটা রিক্সার দেখা পেলাম না। কটকটে রোদের তাপে ঝলসে উঠছে পুরো শরীর।
তখনই পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে বললো,
— হাই মিস অদ্রিজা! হাউ ওয়াজ দ্য ডে?
কটকটে করে তাকিয়ে ঝাড়ি দিতে যাচ্ছি তখন
দেখি ওই ছেলে এখানেও হাজির।
— অর্ক আপনি?
— গিফট কেমন লেগেছে?
আমি ঢোক গিলে বললাম,
— কার গিফট? কেনই বা গিফট?
অর্ক সেসবের তোয়াক্কা করলো না। একটা রিক্সা ডেকে বললো,
— উঠুন।
আমি নাবালিকার মতো সব কথায় হ্যাঁ মিলিয়ে উঠে পড়তেই পাশে অর্কও উঠে বসে। আমি থ। এই ছেলে বাসা পর্যন্ত সাথে যাবে না তো? তাহলে আমার বারোটা বেজে যাবে।
অর্ক আমার নজর লক্ষ্য করে বললো,
— আপনাকে নিয়ে একটু ঘুরবো। সামনে কোথাও ফুচকার দোকান দেখলে রিক্সা থামিয়ে খাবো। খাবো বলতে আপনি খাওয়াবেন আমাকে। একটা ট্রিট পাওনা আপনার থেকে।
— ট্রিট?
— জি। আপনি আমার বই অক্ষত রাখতে পারেননি। ট্রিট তো পাওনাই।
আমি পড়ি ভীষণ বিপাকে। জানি না এ জল কতদূর গড়াবে। মনে হচ্ছে আমার জীবন তছনছ করেই ছাড়বে। অর্ক কি ফন্দি আঁটছে তা জানা না থাকলেও এটা বুঝি ঘোর বিপদ ডেকে
আনবে ছেলেটা।
চলবে….