আড়ালে ভালোবাসি পর্ব-৩+৪

0
1809

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_৩-৪
#নন্দিনি_চৌধুরি

নিজের শরীল কি সবাই কে দেখিয়ে বেরাতে ভালো লাগে নাকি তোর?

হঠ্যাৎ পিছন থেকে কারো কর্কশ গলায় এমন কথা শুনে, অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাফ ভাইয়া দুইহাত ভাজ করে ব্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি আরাফ ভাইয়ার এমন কথা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যাই। আমি প্লাজু আর গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই নিচে নেমে এসেছি। একটা ওড়নাও নেইনি সাথে করে। লজ্জার আমার জান বের হয়ে যায়। আমি আর কোনো কথা না বলে সোজা এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে হাপাচ্ছি বুকে হাত দিয়ে। ইসসস কি লজ্জা কি লজ্জা। আমি এভাবে নিচে আরাফ ভাইয়ার সামনে ছিহ্। আরাফ ভাইয়া না জানি আমাকে কি ভাবলেন।উফফফ সত্যি আমার মাথা পুরাই গেছে দূর!

আসলে তখন স্নেহা আরাফকে গার্ডেনে দেখে অবাক হয়ে যায়।আরাফ দেশে আসবে সেটা সে জানতোনা। কারন আরাফ প্রতি বছর এক বারই দেশে আসে তাও তখন যখন স্নেহার এক্সাম থাকে। সে বাড়িতে বেশি থাকতে পারেনা। কচিং, এক্সট্রা ক্লাস সব করে একদম রাত হয় বাড়ি আসতে।আরাফের এই ব্যাপারটা স্নেহা একদম বুজেনা কেন সে অন্য সময় আসেনা।আরাফ গত দুইবছর হলো একজন প্রফেশনাল ডাক্তার হয়েছে।এই দুইবছর সে এক বার ও আসেনি দেশে সেঝ চাচি অনেক মন খারাপ করতো তার জন্য।কিন্তু এখন হঠ্যাৎ কি করে এলো আরাফ সেটাই ভাবছে স্নেহ।স্নেহা আর ও ভালো করে দেখার জন্য দৌড়ে গার্ডেনে যায় কিন্তু গিয়ে দেখে সেখানে আরাফ নেই।

স্মেহা:এমা!এইত এখনি এখানে ছিলো এর মধ্য গেলো কই?

স্নেহা চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।এর মধ্যই পিছন থেকে আরাফ ওই কথাটা বলে উঠলো।

উফফ এখন আমি আরাফ ভাইয়ের সামনে যেতেই পারবোনা লজ্জায়।স্নেহা এরকম আকাশ পাতাল ভাবছে এর মধ্য স্নেহার মা তার জন্য খাবার নিয়ে রুমে আস্লো।তিনি স্নেহাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বলেন,

মা:কিরে কি ভাবছিস এভাবে?

স্নেহা মায়ের কথায় ধ্যান ভাংগে।

স্নেহা:না মা কিছুনা।আচ্ছা মা শুনো অই আরাফ ভাইয়াকে দেখলাম উনি কখন আসলেন?

মা:অহ আরাফ অতো কাল রাতে এসে বাংলাদেশে পৌছেচে। তোর মেঝ কাকা আর সেজ কাকা গেছিলো ওকে আনতে। ওই তো এসে তোর ট্রিটমেন্ট করলো। নাহলে ওতো রাতে কই পেতাম ডাক্তার। আল্লাহর রহমত আল্লাহ ওকে পাঠিয়েছিলো।

স্নেহা:অহ আচ্ছা।

মা:আচ্ছা এইনে তোর খাবার। খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নে। আমার আবার ও দিকে অনেক কাজ পরে আছে। আকাশের বউয়ের বাড়ির লোকেরা আসছে। আকাশের আক্কেল্টা কি বিয়ে করেছে যেই মেয়েকে তার বাড়িতে এখনো জানাইনি। মেয়েটার বাড়ির লোকেরা যে চিন্তা করে সেটা কি ও বুজেনাই।

মায়ের কথা শুনে গতকালকের সব ঘটনা মনে পরে গেলো। নিমিষেই মনের আকাশে আবার মেঘ জমাট বাধতে লাগলো।

স্নেহা:মিতুর বাড়ির লোকেরা কখন আসবে?

মা:এইত কিছুখনের ভিতরেই আসবে। আর শোন তুই নিচে যাস না কেমন এসব সয্য করতে পারবিনা তুই।

স্নেহা:আমি এসব সয্য করতে পারবোনা নাকি আমাকে নিচে কেউ সয্য করতে পারবেনা কোনটা মা?

আমার কথা শুনে মা চুপ হয়ে গেলো। তারপর আসতে করে রুম থেকে চলে গেলো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে বেলকনিতে গেলাম।এই বেলকোনিতে বসেই অনেক হাজার শত মান অভিমান ভালোবাসার ঘর বেধেছিলাম আকাশের সাথে আর আজ সেই আকাশ….।

নাহ আমি কাঁদবোনা আকাশের জন্য। কেন কাঁদবো ওই বেইমানের জন্য। যে আমাকে সবার সামনে চরিত্রহীনা বলে। যে আমাকে বিশ্বাস না করে অই ছবি গুলোকে বিশ্বাস করেছে। যে আমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে অন্য কাউকে নিজের আপন করে নিয়েছে।তার জন্য আমি কাঁদবোনা।আমি ঠিক নিজেকে নির্দোষ প্রমান করবই।সেদিন আকাশ বুজবে ও কি হারিয়েছে।না অভিশাপ না আমি চাই ও ভালো থাক কিন্তু ওর জানা দরকার কারো মনে আঘাত করে কেউ ভালো থাকতে পারেনা।

মিতু সেই সকাল থেকে রুমে বসে আছে আর আকাশ এক মনে ল্যাপ্টোপে কি জানি করছে মিতু বারবার আড়চোখে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে মিতু জানেনা এই ছেলেটার মাঝে কি যাদু আছে যা তাকে ওর দিকেই টানে।তবে মিতু এটুকু জানে সে ভালোবাসে তার সামনে থাকা এই মানুষটাকেই সে ভালোবাসে আর যেকোনো কিছুর বিমিময়ে সে তার কাছেই থাকবে আর তার মন জয় করবেই।মিতু কাল রাতেই ভেবে নিয়েছে একবার যখন আল্লাহর কালাম পরে তার স্ত্রি হয়েছে সে মরন ছাড়া আর কোনোদিন তার থেকে সে আলাদা হবেনা।সে আকাশের মনে তাত জন্য জায়গা তৈরি করবেই।

মিতু খুব টেনশোনে আছে কিছুখন পর তার মা বাবা আর বড় ভাই আসবে। সে কিভাবে তাদের মুখামুখি হবে। কাল হুট করে সে বিয়ে করে নিলো। তাদের জানালো না। কাল সারারাত হয়ত তার ওর জন্য চিন্তা করেছে।মিতুর বড় ভাই বেশ রাগি যদি রাগের বসে কিছু করে বসে তাহলে মিতু এই নিয়ে খুব চিন্তিত।

আকাশ অনেক্ষন যাবত মিতুকে এভাবে চিন্তিত দেখে ল্যাপ্টোপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বল্লো,

আকাশ:এত চিন্তার কিছু নেই। তোমার ফ্যামিলিকে আমি সামলে নেবো। তুমি শুধু ঠিক ভাবে ওদের সামনে থেকো।

মিতু মাথা নিচু করে বল্লো আচ্ছা।
এর মধ্য জঁবা আকাশের রুমে আসলো

জঁবা:আকাশ ভাইয়া মিতু ভাবিকে নিয়ে সেঝ মা তোমায় নিচে আসতে বলেছে। ভাবির বাবা মা আর ভাই এসেছে।

জঁবার কথা শুনে আকাশ মিতুর দিকে তাকিয়ে বল্লো,

আকাশ:আচ্ছা তুই যা আমরা আসছি।

জবা চলে যাওয়ার পর আকাশ সোফা থেকে উঠে মিতুর কাছে এসে বল্লো,

“চলো। আর হ্যা যা বলতে বলেছি তাই বলবে মনে থাকে যেনো।”

মিতু:জি।

ডাইনিং রুমে সোফায় বসে আছে মিতুর বাবা মা আর বড় ভাই মারুফ।

তাদের সামনে বসা সেঝ চাচা আর বড় চাচা।

মিতুর বাবা:আমি বুজতে পারছিনা কাল পর্যন্ত যেই ছেলের অন্য একজনের সাথে এংগেজমেন্ট ছিলো। সে এভাবে হুট করে আমার মেয়েকে বিয়ে করলো কেনো?

মারুফ:আপনাদের বাড়ির ছেলের সাহস কত সে মাঝ রাস্তা থেকে আমার বোনকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। আপ্নারা জানেন আমরা মিতুর বিয়ে অন্য এক জায়গায় ঠিক করেছিলাম। সব কথা ফাইনাল হয়ে গেছিলো। শুধু আপনাদের ছেলের জন্য উলটাপালটা হয়ে গেলো। আমাদের পুরা পরিবারকে অপমানিত হতে হয়েছে।

কথা বলার মাঝেই আকাশ আর মিতু নিচে নেমো এলো,,,

মিতুকে দেখে ওর মা ওর কাছে এসে জরিয়ে ধরলো। মিতুও মাকে পেয়ে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আকাশ এসব দেখে মিতুকে ছেড়ে ওর বাবা ভাইয়ের কাছে গেলো।

আকাশ:আসসালামু আলাইকুম।ভালো আছেন আপনারা?

মারুফ:ওলাইকুমুস সালাম।ভালো কি তুমি আমাদের রেখেছো?কোন সাহসে তুমি আমার বোনকে জোর করে বিয়ে করে এবাড়িতে নিয়ে এলে?

আকাশ:ভালোবাসার অধিকারে। আমি মিতুকে ভালোবাসি মিতু আমাকে ভালোবাসে। তাই বিয়ে করে নিয়েছি।

মারুফ:কিন্তু কাল তোমার একটা মেয়ের সাথে এংগেজমেন্ট ছিলো। আর আমার জানা মতে তার সাথে তোমার সম্পর্ক ছিলো। তাহলে তাকে ছেড়ে একদিনে কিভাবে আজকে আমার বোনকে ভালোবাসো বলছো?

আকাশ:দেখুন আমার ফ্যামিলি আমার সাথে আমার চাচাতো বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছে। আমরা দুইজনেই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কারন আমি মিতুকে ভালোবাসি।আর স্নেহা অন্য একজনকে।আর রইল সম্পর্ক স্নেহার সাথে আমার শুধু ভাই বোনের সম্পর্ক। এর বাহিরে কিছুই নেই।

মারুফ এভার মিতুর কাছে এগিয়ে এসে বল্লো,

মারুফ:তুই কি সত্যি ওকে ভালোবাসিস?

মিতু এভার মায়ের থেকে সরে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো,

মিতু:হ্যা ভাইয়া আমি আকাশকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে স্বামি হিসাবে মানতে পারবোনা।তোমরা আমার বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দিচ্ছিলে। আর আমিও ভয়ে তোমাদের কিছু বলতে পারছিলাম না। তাই কাল আমরা বিয়ে করে ফেলেছি। যাই হোক আমি আকাশকে অন্য কারো হতে দিতে পারতাম না। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস প্লিজ ভাইয়া।

মারুফ আর কিছুই বল্লোনা সে বুজতে পারছে তার বোন সত্যি আকশকে ভালোবাসে।

এরপর মিতুর পরিবার আর আকাশদের পরিবার মিলে আলোচনা করে ঠিক করলেন তারা ওদের আবার বিয়ে দেবে। এটা শুনে আকাশ অনেক ভরকে যায়। যত যাই হোক সে সারাজীবন মিতুকে নিজের স্ত্রি করে রাখবেনা। একসময় তাকে মুক্ত করে দেবেই সে। তাই আকাশ এখন নানার অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে আটকে দিলো। তবে সবাই বলে দিয়েছে আকাশ নিজের পায়ে দাড়ালেই ওদের ধুমধাম করে বিয়ে দেবে।

এত্তক্ষন উপরে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে আকাশের কথা গুলো শুনছিলাম। কতটা নিখুত ভাবে মিথ্যা বলতে পারে আকাশ। তাই দেখছি। এত গুলা দিনের সম্পর্ক এক নিমিসে মিথ্যা বানিয়ে দিলো। হাহ্! আর এই লোকটাকেই নাকি আমি ভালোবেসেছিলাম। নিজের প্রতি নিজের করুনা হচ্ছে।

আমি আর ওখানে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসলাম।গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে আবার দাঁড়ালাম। এখম এইটাই আমার একমাত্র জায়গা যেখানে বসে কাঁদলেও কেউ দেখবেনা।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরেই যাচ্ছে। যত চাই আকাশকে ভুলতে আর ও বেশি মনে পরে যায় ওকে।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,,,,

“কি কস্ট হচ্ছে খুব?”।

#চলবে

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_৪
#নন্দিনি_চৌধুরী

“কি খুব কস্ট হচ্ছে?”

পিছন থেকে হঠ্যাৎ এমন একটা কথা শুনে চমকে উঠলাম। সাথেসাথে পিছনে ফিরে দেখি আকাশ দারিয়ে আছে। তার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। আমি আকাশকে দেখে ওর আড়ালে চোখের পানি মুছে, মুখে শুকনো হাসি রেখে বল্লাল,

স্নেহা:না কস্ট হচ্ছেনা বরং আফসোস হচ্ছে।আফসোস এই ভেবে হচ্ছে যে এতদিন আমি একটা ভুল লোককে ভালোবেসেছি. যে কিনা এক নিমিষেই আমার ভালোবাসাকে পিসে দিয়ে অন্য কাউকে বরণ করে নিয়েছে নিজের জীবনে। আর সবার সামনে আমার ভালোবাসাকে মিথ্যা বলে দিলো। কেন আকাশ কেন এমন করলে। একটা বার তোমার মনে হলোনা এরকম করাতে আমি কতটা কস্ট পাবো?

আকাশ এত্তক্ষন স্নেহার কথা গুলো শুনছিলো এভার আকাশ স্নেহার একদম কাছে এসে বলে,

আকাশ:প্রতিশধ নিলাম। তুমি যেমন আমার ভালোবাসাকে অসস্মান করে অন্য একটা ছেলের সাথে…. ছিহ আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে তোর মত একটা মেয়েকে আমি ভালোবেসেছিলাম। যে কিনা এত নোংরা।তুই যেমন আমাকে রেখে অন্য কাউকে নিয়ে ছিলি এখন আমিও মিতুকে নিয়ে সেভাবে সুখে থাকবো,আর শুনে রাখ তুই যতই নিজেকে সতি দাবি করিস। এই বাড়ির প্রত্যেকেই এখন জানে তুই একটা নস্টা মেয়ে। তোর মতো চরিত্রহীনা এই বাড়িতে পরে আছে শুধুই বড় বাবার কারনে নাহলে তোকে কালই এই বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।

আকাশের কথা গুলো শুনে স্নেহার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। স্নেহা আর সয্য করতে না পেরে আকাশকে জোরে একটা থাপ্পর মারলো। আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,

স্নেহা:খবরদার আমার চরিত্র সম্পর্কে কোনো কথা বলবেনা। আমি জানি আমার আল্লাহ জানে আমি কতটা পবিত্র। আমি তুমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে মিশাতো দূর কথাও তেমন বলতাম না তুমি জানো তো সেটা। তাও তুমি ওই ছবিগুলো দেখে মেনে নিলে যে আমি অই ছেলের সাথে। ছিহ্, কেমন ভালোবাসা তোমার যে এইটুকুও বিশ্বাস নেই নিজের ভালোবাসার মানুষটার প্রতি। তুমি আমার কাছে আসলেই আমি তোমাকে বুঝাতে পারতাম। তা না করে তুমি মিতুকে বিয়ে করে নিলে। হাহ্! শুনে রাখো আকাশ আজ থেকে এই মূহূর্ত থেকে এই স্নেহার মনে তোমার জন্য শুধুই ঘৃনা থাকবে। সকল ভালোবাসাই মরে গেছে তোমার জন্য। একদিন না একদিম সত্য সামনে আসবেই। সেদিন তুমি বুজবে যে আমি কি।

আকাশ স্নেহার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো আর স্নেহা সেখানে বসেই কাঁদতে লাগলো।

আরাফ আজ অনেকদিন পর তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। বন্ধুদের সাথে দেখা করে বাসায় এসে। নিজের রুমে যাওয়ার সময় শুনতে পেলো স্নেহার রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। আরাফ দেখার জন্য উকি দিয়ে দেখে স্নেহা মেঝেতে বসে কাঁদছে। অনেক বেশি কাদাঁর কারনে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আরাফ ওর কাছে যেতে নিয়েও গেলোনা। দরজাটা লাগিয়ে তার সাথে হেলান দিয়ে দুইহাত ভাজ করে দাঁড়ালো আর বলতে লাগ্লো,

আরাফ:আর একটু অপেক্ষা কর স্নেহা পাখি। যারা তোমাকে এভাবে কস্ট দিয়েছে তাদের প্রত্যেকেই পাইটুপাই হিসাব দিতে হবে। যে আজ তোমাকে এত কস্ট দিলো। তার আফসোস এর সময় খুব তাড়াতাড়িই আসবে। শুধু আর কিছু সময় এর অপেক্ষা। একবার আমি তোমাকে হারিয়েছি। এভার আর হারাতে দিবোনা এটা আমার প্রমিস।

আরাফ কথা গুলো বলেই আবার নিচে চলে গেলো।

দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসেছে। শুধু নেই স্নেহা আর আকাশ।
স্নেহাকে তার মা ঘরেই খাবার দিয়ে এসেছে। আসলে সে চায়না স্নেহা এখানে আসুক আর কেউ তাকে কিছু বলুক। সবাই স্নেহার উপর রেগে আছে সেতা জানে।

আরাফ খাওয়ার এক পর্যায় মিতুর দিকে তাকিয়ে বল্লো,

আরাফ:মিতু আকাশ ক?ই আকাশকে যে দেখছিনা?আমি আসার পর একবারের জন্য আমার কাছে আসেনি।

মিতু:আসলে ভাইয়া কাল আপনি অনেক রাত করে এসেছিলেন। আকাশ আর আপনার সাথে দেখা করেনি। সকালে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অই আম্মু আব্বু আসার পর তাদের সাথে কথা বলেই আকাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। তার কি একটা দরকারি কাজ আছে তাই।

আরাফ:ওহ আচ্ছা। আকাশ ফিরলে আমার কাছে আসতে বলো।

মিতু:জি আচ্ছা ভাইয়া।

আরাফ এভার বড় চাচির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে,

আরাফ:বড় কাকিয়া আমি তো জানি তোমার মেয়ে তিনটা। কিন্তু এখানেতো শুধু দুইজনকেই দেখছি। আরেকজন কই তাকে কি ঘর বন্ধি করে রেখে দিয়েছো?

আরাফের কথায় সবাই খাওয়া রেখে চুপ হয়ে যায়। আরাফ এভার সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

আরাফ:ছোট থেকে দেখতাম স্নেহাকে তোমরা অনেক আদর করো। কারন ছোট কাকা ওকে রেখে চলে গেছে বলে। বড় কাকা আর কাকিয়া ওকে নিজের মেয়ে করে নিয়েছে। তোমরা সবাইও ওকে কত ভালোবেসেছো। আর আজ ওর একটা কি ছবি তোমরা হাতে পেলে ব্যাস তোমাদের ভালোবাসা শেষ। স্নেহার প্রতি সব বিশ্বাস শেষ। তোমরা জানো তোমাদের বাড়ির মেয়ে কেমন জানোতো। তাহলে কেন তাকে না বিশ্বাস করে অই ছবি গুলোকে সত্যি ভাবছো। যদি এমন হয় ওগুলা মিথ্যা। তখন কি করবে পারবে তোমরা স্নেহার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে? স্নেহা কিন্তু তোমাদের দুড়ে করে দেবেনা। ঠিকি কাছে টেনে নেবে। কিন্তু তোমরা তোমরা কি করবে?

আরাফের কথা শুনে সবাই চুপ। আরাফ ভুল কিছুই বলেনি। সত্যিত বলেছে। হতেই পারে ছবি গুলো ভুল মিথ্যা। তাদের স্নেহা তো এমন নয় তারাতো তা জানে। তবে কেন শুধু শুধু তারা মেয়েটাকে কস্ট দিচ্ছে। তাদের বাড়ির মেয়েটা ছোট থেকে বাবাকে কাছে পায়নি। তাদের আকড়ে ধরেই তো সে আছে। আজ তারাও তাকে কস্ট দিচ্ছে। সবার ভেতরেই চাপা কস্ট দিচ্ছে।

আরাফের কথা শুনে এভার ওর বাবা বল্লো,

আরাফ:মানছি যে আমরা ঠিক করছিনা। কিন্তু ছবি গুলা যে মিথ্যা তার কোনো প্রমান তো নেই। আকাশ নিজেই আমাদের ছবি গুলো দেখিয়েছে।

বাবার কথা শুনে আরাফ মুচকি হেসে বলে,

আরাফ:বাবা এখন আধুনিক কম্পিউটারের যুগ। এই যুগে কোনো কিছুই অসম্ভব না। সব কিছু সম্ভব। তবে তুমি চিন্তা করোনা বড় কাকা আর আমি এই বিষয়টা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। খুব জলদি সব জানা যাবে। তবে এখন তোমরা স্নেহাকে এখন আগলে নেও। এখন ওর তোমাদের খুব প্রয়জন।

আরাফের কথা শুনে সবাই সহমত দিলো। আসলেই এখন স্নেহার পাশে তাদের থাকা দরকার। সবাই নিতুকে বল্লো কাল সকাল থেকে যেন স্নেহাকে নিয়ে সে নিচে খেতে আসে। কাল থেকে তারা আবার কলেজে যাবে। আর নিতু যেন এখম স্নেহার সাথেই থাকে।

_______________________________________

ক্লাবে বসে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে আকাশ। তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে নুয়াজ।নুয়াজ আকাশের ছোট বেলার বন্ধু দুই বন্ধু এক সাথেই স্কুল, কলেজ,ভার্সিটিতে পড়েছে।নুয়াজ আকাশ আর স্নেহার ব্যাপারে সব জানতো।নুয়াজ স্নেহাকে নিজের ছোট বোনের মত আদর করতো আর স্নেহাও নুহাজকে ভাইয়া বলে ডাকত।নুয়াজ গত দিনের সব ঘটনা শুনে আকাশের প্রতি অনেক রেগে আছে কিন্তু আকাশ এত ড্রিংক করেই যাচ্ছে নুয়াজ সেটা দেখতে পারচ্ছেনা,

নুয়াজ:আকাশ থাম এবার আর কত খাবি?কার উপর রেগে ড্রিংক করছিস স্নেহা নাকি মিতুর উপর?

আকাশ এবার মদের গ্লাস্টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে আর মাতাল কন্ঠে বলছে,

আকাশ:আমি স্নেহাকে অনেক ভালোবেসেছি রে অনেক। তবুও ও আমাকে ঠকালো। আমার ভালোবাসায় কোনো কমতিতো ছিলনা। তবে কেন নুয়াজ কেন ও আমার ঠকালো।

নুয়াজ: তুর ভালোবাসায় বিশ্বাসের কমতি আছে। তুই স্নেহাকে না বিশ্বাস না করে ছবি গুলোকে বিশ্বাস করলি। আর মিতুকে বিয়ে করে নিলি। এখন আবার মিতুকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি বলছিস। কি করতে চাইছিস কি তুই?

আকাশ এবার মাথা টেবিলে দিয়ে বলে,

আকাশ:আমি শুধু ছবি গুলোকে বিশ্বাস করিনি। একটা ভিডিও দেখেছি তারপর মিতুও বলছে। এগুলা তো আর মিথ্যা না। আর মিতুকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করিনি। স্নেহার প্রতি রাগ জেদের বসেই করেছি।আমি মিতুকে ছয় মাস পর ডিভোর্স দেওয়া যাবে। ছয় মাস আমাদের এক সাথে থাকতে হবে তারপরেই ডিভোর্স দিতে পারবো। এরপর চলে যাবো দেশের বাহিরে এখানে আর থাকবোনা।

নুয়াজ আকাশের কথার পর আর কিছু বলেনি। নুয়াজ জানে আকাশ কত বড় ভুল করেছে এর দায় তো ওকে দিতেই হবে।

আকাশ মাত্রারিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছে যে ড্রাইভ করাত মত অবস্থায় নেই। তাই নুয়াজ ওকে বাসায় পৌছে দিতে নিয়ে গেলো।

নুয়াজ আকাশকে বাসায় এনে দরজায় বেল দিতেই আরাফ দরজা খুলে দিলো নুয়াজ আরাফকে দেখে সালাম দিলো।

নুয়াজ:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন?

আরাফ: ওলাইকুমুস সালাম।হ্যা আলহামদুলিল্লাহ।তুমি?আর আকাশের এই হাল কেন?

নুয়াজ:জি আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ।আসলে ভাইয়া আকাশ আজকে অনেক বেশি ড্রিংক করে ফেলেছে। তাই ড্রাইভ করাত মতো অবস্থায় নেই। তাই আমি ওকে নিয়ে এলাম।

আরাফ:আচ্ছা ওকে আমার রুমে নিয়ে যাও। সিড়ি দিয়ে উপরে গিয়ে ডানে যে রুম আছে ওটা আমার।

নুয়াজ:জি আচ্ছা।

নুয়াজ আকাশকে রুমে দিয়ে আরাফকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।

আরাফ রুমে এসে সোফায় বসে পরলো।আকাশকে ড্রাংক অবস্থায় মিতুর কাছে যেতে দেয়নি যদি নেশার ঘোরে কিছু করে ফেলে। আরাফ জানে যে ওদের ভিতর সব স্বাভাবিক না। আর এম্নিতেও আকাশের সাথে আরাফের কিছু কথাও আছে। তাই তাকে এই রুমেই রাখা।

#চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন🙏।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে