#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_১৩
#নন্দিনি_চৌধুরি
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো।স্নেহা আরাফের বিয়ের দিন চলে এলো।আগামিকাল স্নেহা আর আরাফের বিয়ে।আজকে ওদেএ গায়ে হলুদ।ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে বিয়ে।স্নেহা এই এক সপ্তাহে একবার ও আকাশকে দেখেনি।সেদিনের পর আকাশ আর আসেনি তার সামনে।স্নেহাত এতে ভালো লেগেছে।আকাশ তাকে ভুলে গেলেই ভালো।সেদিনের পর থেকে আকাশ একদম বদলে গেলো।নেশায় একদম ডুবে গেছে সে।সকালে বাড়ি থেকে বের হয় আর অনেক রাতে বাড়ি ফেরে নেশা করে।কোনোদিন ফেরেও না।ছেলের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না মোতালেভ ও তার স্ত্রী।আকাশের মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে মাঝে মাঝে কাদে।এ ছাড়া আর কি করবেন তিনি।আকাশ তো তার করা ভুলের শাস্তি পাচ্ছে।
সন্ধ্যায় স্নেহাকে সাজাতে বিজি রিতু,নিতু,জবা।তিনজন মিলে স্নেহাকে সাজাচ্ছে।স্নেহাকে একটা হলুদ শাড়ি সাথে কাচা ফুলের গহনা পরিয়েছে সাথে হাল্কা সাজ।বেস এতেই স্নেহাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
রিতু:আজ স্নেহাকে যা লাগছে না। আরাফ ভাইয়া তো পাগল হয়ে আজকেই তোকে বিয়ে করতে চাইবে মনে হয়।
রিতু কথা শুনে জবা হেসে বল্লো,
জবা:যা বলেছো রিতুপু। আজকের থেকেও কালকে স্মেহাপুকে আর ও সুন্দর লাগবে।
নিতু:আর সেই সুন্দর্য নষ্ট করবে আরাফ ভাইয়া বাসর রাতে তাইনা আপুনি।
স্নেহা সবার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে বল্লো,
স্নেহা:যাহ তোমরাও না দূর।
তিনজনে হেসে দিলো স্নেহার অবস্থা দেখে।
আকাশ নিজের রুমে বসে বসে মদ খাচ্ছে।আজ তার স্নেহা হলুদ পরী সেজেছে।কাল সাজবে লাল টুকটুকে বউ।কিন্তু সেটা তার জন্যনা তার ভাইয়ের জন্য।কোনো প্রেমিক হয়ত এটা মেনেনিতে পারবেনা তার ভালোবাসার মানুষটাকে তার নিজের ভাইয়ের বউ রুপে।ঠিক আকাশ ও মানতে পারছেনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।সে আজ রুম থেকে সকাল থেকেবের হয়নি।এই রুমেই ছিলো এখন নেশায় মত্ত্য হয়ে গেছে।
সোফায় পাশাপাশি বসে আছে স্নেহা আরাফ।সবাই তাদের হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে।ইমরান সাহেব মেয়েক হলুদ লাগানোর সময় কেঁদে দিয়েছিলেন।কত ভালোনা হতো আজ যদি মেয়েটার মাও থাকতো।হলুদে সবাই আকাশকে খুজেছিলো কিন্তু পায়নি।তারা বুজতে পেরেছিলো কেন আকাশ এখানে নেই।কিন্তু তাদের কিছু করার নেই।
রাত ১২টায় হলুদ ষেষ হলো।যে যার রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।
মোতালেভ সাহেব খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন তার স্ত্রী তার কাছে এসে কাধে হাত রেখে বললেন,
আকাশের মা:কি হইছে তোমার?
মোতালেভ:কিছু ভাল্লাগছেনা।
আকাশের মা:বুজতে পারছি খারাপ আমার ও লাগছে।আচ্ছা আরাফের বাবা আকাশকে যদি আবার একটা বিয়ে দেই তাহলে হয়না?
মোতালেভ:এই মূহূর্তে এসব মাথাও এনোনা।আকাশের মাত্র ডিভোর্স হয়েছে মিতুর সাথে।তার ওপর ওর চোখের সামনে স্নেহার বিয়ে হচ্ছে আরাফের সাথে।ওকে এখন এসব বললে হেতে বিপরীত কিছু হয়ে যেতে পারে।আর তাছারাও মিতুকে এখনো খুজে পাওয়া যায়নি।কিছু একটা ভালো মন্দ হয়ে গেলে কি হবে ভেবেছো।সব দোষ পরবে আকাশেএ ঘারে।কারন আকাশ মিতুর হাজবেন্ড ছিলো।যেমনেই হোক হয়েছিলো ওদের বিয়ে।এখম ডিভোর্স হয়েগেছে।কিন্তু মিতু নিখোজ।এখন এই দোয়া করো অই মেয়ে যেনো ভালোয় ভালোয় নিজের বাপের বাড়ি ফেরে।
আকাশের মা:দেখো গিয়ে ওই মেয়ে নিশ্চই অন্য কারো সাথে পালিয়েছে।আমার আকাশের সাথে বেইমানি করলো।যার জন্যই আজ আকাশ সব হারালো।
মোতালেভ:দোষ কি শুধু মিতুর তোমার ছেলের নেই?কলেজের নেহার ব্যাপার থেকে শুরু করে মিতুর ব্যাপার অব্দি তোমার ছেলের অনেক ভুল আছে।যাক সেসব কথা এখন শুয়ে পরো কাল আবার বিয়ের কাজ বাকি আছে সেগুলো দেখা লাগবে।
আকাশের মা:হুম আচ্ছা।
আকাশ মা বাবার রুমে বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলো। আসলে সে নিচে এসেছিলো বরফ নিতে। মা বাবার রুমের পাশ থেকে যাবার সময় সব কথা শুনলো সে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে কি করবে।
পরেরদিন
আজ স্নেহা আরাফের বিয়ে। কাংক্ষিত দিনটি চলেই এলো।সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত।স্নেহা,রিতু,নিতু,জবা স্নেহার রুমে আছে।তিনবন মিলে হুরাহুরি করছে আর নিতু বসে বসে দেখছে।নিতু প্রেগন্যান্ট তাই সে বেশি দৌড়ঝাপ করতে পারবেনা।তাই বসে বসে দেখছে আর হাসছে।
বিকেলের দিকে পার্লারের মেয়েরা এসে স্নেহাকে সাজাতে লাগ্লো।সাজ কম্পলিট হলো ৬টায়।স্নেহাকে একটা লাল আর গোল্ডেন কালার মিক্স শাড়ি পরানো হয়েছে।সাথে মেচিং জুয়েলারি।অপূর্ব লাগছে স্নেহাকে।স্নেহাকে রুম বসিয়ে রেখে গেছে সবাই।স্নেহা একা আয়নার সামনে বসে আছে আর লজ্জা পাচ্ছে।আজ তার ভালোবাসার সাথে তার বিয়ে।এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলো সে।আজকে সে চিরদিনের মতো আরাফের হয়ে যাবে।ভাবতেই কি খুশি লাগছে।
স্মেহা এসব ভাবছিলো তখন আয়নায় দেখলো আকাশ দাঁড়ানো দরজায়।আকাশকে দেখে অবাক হলো স্নেহা চেহারার কি অবস্থা করেছে।কত রাত জেগে ছিলো আকাশ।আকাশ ধির পায়ে এগিয়ে এলো স্মেহার কাছে।স্নেহার থেকে একটু দুড়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে স্নেহাকে।খুব সুন্দর লাগছে স্নেহাকে।এরকম ভাবেই তো স্নেহাকে চেয়েছিলো সে জীবনে।কিন্তু হায়!আজ সব সপ্ন সপ্ন রয়ে গেলো একটা ভুলের জন্য।
আকাশ ধির কন্ঠে বল্লো,
আকাশ:মাসাল্লাহ সুন্দর লাগছে অনেক তোমাকে আজকে স্মেহা।
স্নেহা:ধন্যবাদ আকাশ।
আকাশ:এই নেও এই গিফট আমার তরফ থেকে।
স্নেহা ভাবছে নেবে নাকি নেবে না।আকাশ স্নেহার হাত ধরে গিফট দিয়ে বল্লো,
আকাশ:ভয় নেই বন্ধু হিসেবে দিলাম।আসি ভালো থেকো নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।
কথাগুলো বলেই চলে গেলো আকাশ।আকাশের চোখে পানি স্পষ্ট।স্নেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।একটু পর জবা এসে ওকে নিচে নিয়ে গেলো কাজী এসে গেছে বিয়ে পড়ানো শুরু হবে এখন তাই।
বিয়ে পরানো শুরু হলো। কাজী যখন স্নেহাকে কবুল বলতে বল্লো স্নেহা খুব নার্ভাস হয়ে গেছিলো। কবুল মুখ থেকে বের হচ্চিলোনা। কিছুক্ষন চুপ থেকে আস্তে করে বলে দিলো,
“কবুল,কবুল,কবুল”
এরপর আরাফকে বলতে বল্লো আরাফ বলে দিলো।তারপর রেজিস্টারি পেপারে সাইন করে দিলো।
অবষেষে আজকে স্নেহা আরাফ এক হয়ে গেলো।ভালোবাসে এক অপরকে আজ তারা পেয়ে গেলো।
দূর থেকে আকাশ শেষ দেখা দেখে নিলো স্নেহাকে।আজ থেকে তার ভালোবাসা অন্য কারো স্ত্রী।আজ থেকে আর কোনো অধিকার নেই স্নেহার উপর তার।আকাশ নিঃসব্দে নিজের লাকেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।চলে যাচ্ছে সে আজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে সে।
আরাফের রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে স্নেহাকে।স্নেহার খুব নার্ভাস লাগছে।ইসসস কেন জানি আজ খুব লজ্জা লাগছে।
কিছুক্ষন পর আরাফ রুমে আসলো।রুমে ডুকে স্নেহাকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার।
আরাফ ধীর পায়ে গিয়ে খাটে স্নেহার সামনে বসলো।স্নেহা তখন মাথা নিচু করে বসে আছে।আরাফ স্মেহার থুথনিটা উঠালো।স্নেহাতো লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে।আরাফ তা দেখে বলে, মাসাল্লাহ আমার লজ্জাবতীটা”
স্নেহা আরাফের কথা শুনে চোখ মেলে তাকায়।আরাফ আবার হেসে বলে,
আরাফ:যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।এগুলা চ্যাঞ্জ করে নেও।
স্নেহা:হুম
স্নেহা উঠে ওর লাগেজ থেকে একটা সুতির শাড়ি নিলো।স্নেহার সব কিছু গুছিয়ে আরাফের রুমে দেওয়া হয়েছে। যেহুতু দুইদিন পর ওরা চলে যাবে কানাডা। তাই স্নেহার মা সব একদম লাকেজে প্যাক করে দিয়েছে।
স্নেহা একটা সবুজ কালার শাড়ি পরে বেরোলো ওয়াশ্রুম থেকে।শাড়িটা পাতলা হওয়ায় পেট কিছুটা দেখা যাচ্ছে।আরাফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।স্নেহা আস্তে করে বারান্দায় গিয়ে আরাফের পাশে দাঁড়ায়।
আরাফ স্নেহাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে মুখটা রেখে বলে,
আরাফ:আজ আমি অনেক খুশি আজ আমি আমার স্নেহা পাখিকে পেয়েগেছি।জানো এই দিনটার জন্য আমি অনেক অপেক্ষা করেছি।
স্নেহা কিছু বলছেনা আরাফের নিঃশ্বাস ওর ঘারে পরায় বার বার কেপে উঠছে ও।
আরাফ স্মেহাকে নিজের দিকে ফিরালো।স্নেহা তখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ স্নেহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
আরাফ:ভালোবাসি বউ।
আরাফের মুখে বউ কথাটা শুনে একটা হিমশতল বাতাস বয়ে গেলো তার ভিতরে।
আরাফ স্নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
আরাফ:স্নেহা আজকে কি আমি……
স্নেহা বুজতে পারছে আরাফ কি বলতে চাইছে শে আজ কোনো বাধা দেবেনা আরাফকে নিজেও আজ হারাবে আরাফের মাঝে।তাই সে আরাফের গলা জরিয়ে ধরলো।আরাফ বুজতে পারলো স্নেহা রাজি আরাফ পরম আদরে জরিয়ে ধরলো স্নেহাকে স্নেহার ঠোঁটে বসিয়ে দিলো তার ঠোঁট।স্নেহাও তাল মিলাচ্ছে আরাফের সাথে।এরপর কলে তুলে নিলো স্মেহাকে খাটে নিয়ে শুয়ে দিলো।
তারপর কি হইলো বলা যাবেনা শরম লাগেতো আমার😶🙈।
#চলবে
।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন🙏।