#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_১২
#নন্দিনি_চৌধুরী
মাথা নিচু করে ড্রইং রুমে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ।তার সামনে দাঁড়ানো তার বাবা রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।তিনি চিৎকার করে বলছেন,
মোতালেভ:তোমাকে আমরা কি শিক্ষার অভাব রেখেছিলাম বলোতো। যেটার অভাবে তুমি এর খারাপ হয়েগেছো।আমাদের মানসম্মান সব এভাবে ধুলায় মিশাচ্ছো।যখন যা ইচ্ছা তখন সেটাই করবে ভেবেছো।যখন যাকে ইচ্ছা বিয়ে করে নিয়ে আসলাম আবার তাকে ছেড়ে দিলাম।তুমি একদিন আমাদের এসে বললে তুমি স্নেহাকে বিয়ে করতে চাও ওকে ভালোবাসো।তাই আমরা তোমাদের এংগেজমেন্ট করাতে চাইলাম।এংগেজমেন্টের দিন তুমি স্নেহার ব্যাপারে কি সব জানলে বেস ওর সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিলে।ওকে যাতা বলে অপমান করলে।তখন আবার মিতুকে নিয়া আসলে বিয়ে করে তখন বললে তুমি মিতুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছো।আর এখন আবার ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে কারন তুমি এখন জানলে যে মিতু প্রতারণা করেছে ঠকিয়েছে। বেস শেষ মিতুর সাথে তোমার সংসার।পেয়েছোটা কি তুমি নিজের জীবনটাকে।আর বিয়েটাকে কি পেয়েছো ছেলেখেলা।যখন যা ইচ্ছা সেটা করে চলেছো।একটা সময় এমন আসবে দেখো তোমার পাশে তুমি কাউকে পাবেনা।
আকাশ এভার মাথা উঠিয়ে বল্লো,
আকাশ:আমি সরি বাবা কিন্তু আমি মিতুকে বিয়ে করেছিলাম জেদের বসে। কিন্তু আমি জানতাম না, যেটার উপর ভিত্তি করে আমি জেদ করলাম তা সাজানো নাটক।আমি মিতুকে ভালোবাসিনা আর না কোনোদিন বাসবো।আমি স্নেহাকেই ভালোবাসি বাবা।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আর মিতুকে আমি বিয়ের সময় বলেই দিয়েছিলাম যে বিয়ের ছয়মাস পর আমি ওকে ছেড়ে দেবো।আমি বিয়ের কথাটাও তোমাদের জানিয়ে করিনি তাই এটাও তোমাদের জানাইনি।
আকাশের কথা শুনে ইমরান আর জাফর বলে উঠে,
“তোমার কাছে স্নেহাকে আমরা কোনোদিন দেবোনা।”
ইমরান:যে আমার মেয়েকে বিশ্বাস না করে অন্যকে বিশ্বাস করে অপমান করে তার কাছে আমি আমার মেয়েকে বেঁচে থাকতে দেবোনা
জাফর:খুব কষ্ট পেয়েছে আমার মেয়েটা এই কয়েকমাসে।আবার সেই কষ্টে ওকে ফেলবোনা।
মোতালেভ:ভাইজান আমি নিজেই তো এই শয়তানের কাছে স্নেহা মাকে দেবোনা।
আকাশ সবার কথা শুনে যেই আশা টুকু রেখেছিলো তার ষেষ হয়েগেলো।
কিছুক্ষন আগে,
জাফর সাহেবের হাত ডিভোর্স পেপার এসেছে।যেখানে আকাশ আর মিতুর সাইন করা।হাতে একটা লেটার ও এসেছে।তখোনি জাফর সবাইকে নিচে ডেকেছে।জাফর মোতালেভের হাতে পেপরটা দেন মোতালেভ সেটা দেখে আকাশের কাছে গিয়ে ওকে থাপ্পর মারে(এরপর কি হলো দেখলেন)
আজকে আরাফ আর স্নেহা এসেছে। ঘুরতে অবশ্য স্নেহাই আরাফকে অনেক বায়না করে ঘুরতে বের করেছে।আরাফ আর স্নেহা এসেছে একটা নদীর পারে।হাল্কা বাতাস,সবুজ ঘাস।নদীর পানির ঢেউ সব মিলিয়ে জায়গাটা অনেক সুন্দর।স্নেহা আর আরাফ পাশাপাশি বসে আছে।
আরাফ:আজকে বাসায় সবাইকে একটা কথা জানাবো।
স্নেহা:কি কথা?
আরাফ:তোকে কমু কেন ছেমড়ি😏।
স্নেহা:হুহ যাও বলা লাগবেনা।চলো এখন ফুস্কা খামু।
আরাফ:ইইইইই ধুলাবালি ছিহ।
স্নেহা:অই ছমড়া চুপ চলো।
স্নেহা আরাফকে টেনে নিয়ে গেলো ফুস্কার দোকানে।
আকাশ নিজের রুমে বসে আছে সামনে পরে আছে ডিভোর্স পেপার আর চিঠিটা।যেটা সে একবার ও খুলে দেখেনি।তার এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।তার এখন একটাই মাথা ব্যাথা সেটা হলো স্নেহা।
বিকালের আরাফ স্নেহা বাসায় আসে।আরাফ রুমে যাওয়ার আগে ওর মাকে বলে গেছে সবাইকে আজকে খাবার টেবিলে থাকতে।
রাতে সবাই খাবার টেবিলে উপস্থিত শুধু আকাশ বাদে।খেতে খেতে আরাফ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আরার:আমার একটা কথা বলার ছিলো তোমাদেরকে।
জাফর:হ্যা আরাফ বল কি বলবি।
আরাফ:বড় কাকা,মেঝ কাকা,বাবা,ছোট কাকা আসলে আমি স্নেহাকে বিয়ে করতে চাই।
আরাফের কথায় সবাই অবাক হয়।তারা ভাবেনি আরাফ নিজে এই কথাটা বলবে।তারা চেয়েছিলো আরাফকে এই কথাটা বলতে।তবে আরাফ নিজেজে বলবে ভাবেনি।
জাফর:আমরাও চেয়েছিলাম এই কথাটা তোমাকে বলতে।স্নেহাকে তোমার সাথে এর ভালো দেখে তোমাকে এই প্রস্তাব দিতে।তবে তুমি নিজে দেওয়াতে আমার খুব ভালো লাগ্লো।
ইমরান:আরাফ তুমি কি স্নেহাকে ভালোবেসে বিয়েটা করতে চাচ্ছো নাকি অন্য কোনো কারনে।খারাপ ভাবে নিওনা তুমি বুজতে পারছো কথাটা আমি কেন বললাম।
আরাফ:বুজতে পেরেছি কাকা।আমি স্নেহাকে ভালোবেসেই বিয়ে করতে চাই।আকাশের করা ভুলের কারনে ওকে করুনা করে নয়।আমি সত্যি স্নেহাকে অনেক ভালোবাসি।
জাফর:বেস তো কবে বিয়ে করতে চাচ্ছো?
আরাফ:আগামি সপ্তাহেই করতে চাই।আসলে এর পর আমাকে কানাডা যেতে হবে আমি স্নেহাকে সাথে করেই নিয়ে যেতে চাচ্ছি।
জাফর:ঠিক আছে তাহলে সব জোগারজন্ত শুরু করে দেও। আর আমি নাজমাদের জানাচ্ছি। ইকবাল তুই জবাকে ওর নানু বাড়ি থেকে নিয়ে আয় আর জুমায়েদের জানা ওরাতো ঢাকার বাহিরে এক মাস হলো কাজের জন্য।আর মোতালেভ তুই কি কিছু বলবি?
মোতালেভ:না ভাইজান আমার কিছু বলার নেই আমি খুব খুশি আরাফের ডিসিশোনে।আরাফের মা তুমি কিছু বলবে?
আরাফের আম্মু:না আমিও খুব খুশি অবশেষে স্নেহা আমার আরাফের বউ হবে।
জাফর:স্নেহা তুমি কি খুশি?
স্নেহা এত্তক্ষন মাথা নিচু করে চুপ করে ছিলো জাফর সাহেবের কথা শুনে মাথা তুলে বল্লো,
স্নেহা:জি আব্বু আমি এই বিয়েতে খুশি।
জাফর:তাহলে আগামি সপ্তাহেই তোমাদের বিয়ে।
উপর থেকে নিচে নামার সমায় সব কথা শুনে থমকে যায় আকাশ।তবে সে চিরতোরে হারাতে চলেছে স্নেহাকে।না তার স্নেহার সাথে কথা বলতে হবে যেভাবেই হোক।
স্মেহা আর আরাফ বেশ কিছুক্ষন ফোনে কথা বলে যাচ্ছে।
স্নেহা:শয়তান তখন বললেই তো হতো যে বিয়ের কথা বলবা হু।
আরাফ:বলে দিলে তো মজা থাকতোনা।
স্মেহা:হুহ বান্দর।
আরাফ:জামাইকে বান্দর বলতেছে বান্দরের বান্দরনি কিন্তু তুমি হাহাহা।
স্মেহা:যা শয়তান।
এভাবে আরো ও কিছু কথা বলে কল রেখে দিলো স্নেহা।পানির পিপাসা পাচ্ছে তার রুমের জোগে দেখে পানি নাই তাই জোগ নিয়ে নিচে গেলো পানি আনতে।স্নেহা পানি নিয়ে নিজের রুমে যাবে কেউ তাকে টেনে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেলো।
স্নেহা চিৎকার দিতে পারছেনা তার মুখে লোকটাত হাত দেখে স্নেহাকে মুচরামুচরি করতে দেখে আকাশ বলে,
আকাশ:হুস বাবুই আমি।
স্নেহা বুজতে পারে এটা আকাশ।আকাশ স্নেহার মুখ থেকে হাত সরালে স্নেহা সরে এসে বলে,
স্নেহা:কি অবস্থা আকাশ এভাবে এখানে নিয়ে আসার মানে কি?
আকাশ:আমিও সেটা জানতে চাচ্ছি তুমি ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে কিন্তু কেন?
স্নেহা:কেন মানে আমি আরাফকে ভালোবাসি তাই রাজি হয়েছি।
আকাশ:স্নেহা!তুমি এটা কিভাবে করতে পারো। তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি তাও এটা কিভাবে করতে পারছো।
স্নেহা:দেখো আকাশ আমি তোমাকে আগে ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন আমি আরাফকে ভালোবাসি।আর তুমি আমাকে বলছো আমি এটা কি করে করছি। আকাশ আমি তো অন্ততপক্ষে তোমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করছিনা। তুমি যেমন করেছো।দেখো আকাশ আমি আরাফের সাথে ভালো আছি আর থাকবো। প্লিজ আমাকে আর বিরক্ত করবেনা।
আকাশ:তার মানে তুমি সত্যি আর ফিরবেনা আমার কাছে?
স্মেহা:না কোনোদিন না।যদি আরাফ আমার জীবনে না আসতো। তবুও আমি তোমার কাছে ফিরতাম না।
আকাশ:আমি ভাবিনি স্নেহা তুমি এভাবে হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে।আমার দোষেই আমি হারালাম তোমায়।আচ্ছা ভালো থেকো সুখে থেকো।
কথা গুলো বলে আকাশ স্নেহাকে ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। আর স্নেহা আকাশের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
#চলবে
।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।