আড়ালে ভালোবাসি পর্ব-১+২

0
3008

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নন্দিনি_চৌধুরি
#পর্ব_১-২

নিজের চোখের সামনের নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে সদ্য বিয়ে করা অবস্থায় দেখছি। হ্যা, আকাশ তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রি মিতু কে নিয়ে আমার সামনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে ওকে দেখছি। আমি যেনো কিছুর বলার কথাই ভুলে গেছি। আমি শুধু আমার সামনের দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখছি যে গতকাল ও আমায় জরিয়ে ধরে বলেছিলো, “দুনিয়ার কেউ পারবেনা আকাশকে তার স্নেহার থেকে আলাদা করতে,এই আকাশ শুধু তার স্নেহার আর কারো নয়”। আজ সেই মানুষটাই এক রাতের ব্যাবোধানে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই আমার বড় চাচা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

বড় চাচা:এসব কি আকাশ। তুমি এসব কি শুরু করেছো? আজ তোমার এংগেজমেন্ট স্নেহার সাথে, আর আজ তুমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে এসেছো। এসব কি নাটক শুরু করেছো তুমি?

আকাশ এবার মাথা তুলে বড় চাচার দিকে তাকিয়ে খুব নরম সরে বললো,

আকাশ:আমি কোনো নাটক করছিনা বড় বাবা। আমি মিতুকে ভালোবাসি। তাই মিতুকে বিয়ে করেছি। আমি স্মেহাকে ভালোবাসিনা তাই ওকে বিয়ে করতে পারবনা, বলেই আমি আমার ভালোবাসা আমার মিতুকে বিয়ে করেছি।

আকাশের কথা শুনে সবাই অবাক। আর তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি আমি, এটা শুনে যে আকাশ আমাকে ভালোবাসেনা। সে মিতুকে ভালোবাসে। তাহলে এই চার বছর সব কি ছিলো নাটক। সব মিথ্যা অভিনয় ছিলো?

আকাশের মা আকাশের দিকে তেড়ে গিয়ে ওর গালে পর পর দুইটা থাপ্পর মারলো,আর নানা অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকলেন। এক পর্যায় আকাশ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

আকাশ:মা তুমি আমাকে কোন মেয়ের জন্য মারছো। যেই মেয়ে জন্মের পর নিজের মাকে খেয়েছে। যেই মেয়েকে তার নিজের বাপ পরিচয় পর্যন্ত দেয়না। এমন একটা মেয়ের জন্য তুমি আমাকে মারছো। হেহ! মা তুমি জানোনা যে এই মেয়ে কতটা চরিত্রহীন। এই মেয়ে ছেলেদের সাথে শুধু ঢোলাঢোলি করে। জানিনা কত ছেলের সাথে ওর সাথে সম্পর্ক আছে। ছিহ্।

আকাশের কথা গুলা শুনে এবার আমার ধর্য্যর বাদ ভেংগে যায়। আমি এবার আকাশের একদম সামনে দাঁড়িয়ে, ওর জামার কলার ধরে অর গালে কষে এক থাপ্পর মারলাম। আর চিৎকার দিয়ে বললাম,

স্মেহা:এনাফ ইজ এনাফ। অনেকখন ধরে সয্য করেছি। কিন্তু আর না। তুমি কোন সাহসই কোন ভিত্তিতে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছ। তুমি আমাকে বলছো চরিত্রহীন। তাহলে তুমি নিজেকি? কাল পর্যন্ত তুমি আমাকে বলতে তুমি আমাকে ভালোবাসা। আর আজ? আজকে তুমি বলছো তুমি মিতুকে ভালোবাসো। তাহলে এতদিন সব কি ছিলো, অভিনয়,নাটক ছিলো সব উত্তর দেও?

আমি আকাশের কোলার ধরে ঝাকাচ্ছি আর কথা গুলো বলছি। এ পর্যায় আকাশ আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। আর এত জোরেই ধাক্কা দিলো যে আমি ছিটকে মাটিতে পরে যাই। আকাশ এবার আমার মুখের উপর কতগুলো ছবি ছুড়ে মারলো। আর বলতে লাগলো,

আকাশ:তোর সাহস হয় কি করে আমার গালে থাপ্পর মারার। তুই যে চরিত্রহীনা তার যথেস্ট প্রমাণ আছে বলেই তোকে চরিত্রহীনা বলেছি।আমার আগেই বুজা উচিত ছিলো যার নিজের বাপ তাকে পরিচয় দেয়না সেই মেয়ে কতটা ভালো হবে। হাহ্ আর তোমরা যেই মেয়ের জন্য আমার সাথে চিল্লাছো, এই ছবি গুলা দেখে নেও তাহলে বুজবে কার জন্য আমার সাথে চিল্লাছো।

আমি আকাশ এর কথা শুনে ছবি গুলা হাতে নিলাম। ছবি গুলা হাতে নিয়ে আমার মাথা পুরা ঘুরে গেলো। আমার সাথে একটা ছেলের খুব বাজে কিছু ছবি। কিন্তু এই ছেলেকে আমি জানিনা। আর এই সব ছবিও আমি কোনোদিন তুলিনি। আর না এই ছেলের সাথে আমার ভুলেও দেখা হয়েছে।

মেঝ কাকি আমার হাত থেকে ছবি গুলা নিয়ে দেখে বলতে লাগলো,

মেঝ কাকি:ছিহ্ ছিহ্ দেখছো তোমরা। তোমরা শুধু শুধু আকাশকে বকা দিচ্ছো। এই মেয়েই তো ভালোনা। কিভাবে একটা ছেলের সাথে ছিহ্। দেখেন ভাইজান দেখেন যেই মেয়েকে আপনারা সব ভাই মাথায় তুলে রাখতেন। আজ সেই মেয়ে আপনাদের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।

কাকির কথা শুনে সবাই ছবি গুলা হাতে নিয়ে দেখে অবাক। বড় বাবা ঠাস করে সোফায় বসে পড়লেন। বড় মা তাকে গিয়ে সামলালেন। মেঝ কাকাও হতাশ চোখে তাকালেন আমার দিকে। সেঝো কাকা ঠায় হয়ে আছেন। আর আমি একদম চুপ করে বসে আছি। হঠাৎ গালে একটা থাপ্পর পরলো আমি তাকিয়ে দেখি আকাশ হাটু ভোর করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার দুই গাল জোরে চিপে ধরে বল্লো,

আকাশ:আমাকে থাপ্পর দিয়েছিলি না। নে ফেরত দিয়ে গেলাম তোর থাপ্পর তোকেই। আর কোনোদিন যেন তোকে আমার সামনে না দেখি।

আমি পাল্টা কোনো আর জবাব দেবো তার আগেই দেখলাম আমার চোখের সামনে সব ঝাপসা। এরপর আর কিচ্ছু মনে নেই।

আমি রুবাইদা ইসলাম স্নেহা।এ.সে.সি শেষ করে সদ্য কলেজে উঠেছি।আমার নিজের বলতে আমার চাচারা আর ফুপিরা ছাড়া কেউ নেই।আমার মা আমার জন্মের সময় মারা যান।শুনেছি অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারনে মায়ের মৃত্যু হয়।আমার বাবা আমার মাকে খুব ভালোবাসতেন।প্রেমের বিয়ে ছিলো তাদের।মা যখন কন্সিভ করে তখন থেকেই অনেক কমপ্লিকেশন দেখে দিয়েছিলো মায়ের প্রেগ্নেন্সিতে।বাবা বলেছিলো তার এখন বেবির দরকার নেই কিন্তু মায়ের আমাকে চাই তাই মা বাবার কথা শুনেনি।যখম ডেলিভারির পর বাবা জানতে পারলো মা মারা গেছে সেদিন আমার মুখ একটা বার দেখার বদলেই আমাকে অপয়া বলে দূরে করে দিলেন আমার সব দায়িত্ব তিনি ফেলে তিনি চলে গেলেন সিডনিতে।তখন আমি দুধের শিশু কে আমায় দেখবে এইসব চিন্তা করে আমার বড় চাচা আমায় তার মেয়ে করে নিলেন।নিজের মেয়ের পরিচয় দিলেন আমায়।আমার বাবারা চার ভাই এক বোন।আমার বাবা সবার ছোট,বড় চাচা জাফর হাসান,মেঝ চাচা,ইমরান হাসান,সেঝ চাচা,মোতালেভ হাসান,আর আমার বাবা ইকবাল হাসান।আর তাদের আদরের ছোট বোন নাজমা হাসান।আমার বড় চাচার ঘরে দুই মেয়ে,মেঝ চাচার ঘরে এক মেয়ে এক ছেলে,সেঝ চাচার ঘরে দুই ছেলে,আর আমার বাবার ঘরে আমি।যেহিতু বাবা আমাকে নিতে নারাজ তাই বড় চাচাই আমাকে আপন করে নিলেন।তিনি আর চাচি আমায় বড় করলেন।আমিও তাদের বড় বাবা বড় মা ডাকি তাছারা আমার অন্য ভাই বোনরাও তাদের এটাই ডাকে।এত কিছুর পরেও আমি কোনোদিন বাবার আদর পাইনি।বাবাকে একবার সামনাসামনি দেখিনি। দেখবো কি করে বাবা তো আসেইনি আর বাংলাদেশে।

এভাবেই আমি বড় হতে থাকলাম।আমার বড় বাবার দুই মেয়ে রিতু,নিতু আমাকে খুব ভালোবাসে কোনোদিন মনেই করেনি আমি তাদের এক মায়ের পেটের বোন নই।আমি আর নিতু পিঠাপিঠি,রিতু আপু আমাদের বড় এভার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।আমার মেঝ কাকার মেয়ে জুঁই আর ছেলে জুনায়েদ তারা আমার বড়,সেঝ কাকার দুই ছেলে আকাশ আর আরাফ ভাইয়া।

আকাশ এভার ভার্সিটিতে উঠেছে।আমার সাথে আকাশের রিলেশন পুরাপুরি হয় আমি যখন ক্লাস টেনে উঠি।এর আগে আকাশ আমার মাঝে অতটাও মেলামেশা হতনা।আরাফ ভাইয়া দেশের বাহিরে কানাডাতে থাকেন।বছরে একবার দেশে আসেন।কানাডাতে তিনি তার স্টাডি শেষ করেছেন তিনি একজন প্রফেসনাল ডাক্তার।

আমার আর আকাশের কথা আকাশ নিজেই বাড়িতে জানায়।বাড়ির সবাইও তাতে সায় দেয়।তারাও চায়নি বাড়ির মেয়ে বাহিরে যাক।তাই বড় বাবা রাজি হয়ে যান।সেঝ বাবাও রাজি থাকেন।আকাশের ইচ্ছেতেই আজ আমাদের এংগেজমেন্ট রাখা হয়েছিলো।আজ সকাল পর্যন্ত সব ভালো ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে গেলো।আকাশ যাকে বিয়ে করেছে মিতু সে আমার ক্লাসেই পড়ে।খুব বেশি একটা পছন্দ করতোনা মিতু আমায়।কেন তা আমার জানাছিলোনা,কিন্তু আজ এই মিতুই আমার ভালোবাসার মানুষটার স্ত্রি ভাবতেই অবাক লাগছে।

মাথায় কারো শীতল স্পর্শে ক্লান্ত চোখ দুটো মেলে তাকালাম,দেখলাম বড় বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমিও আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম।বাবা মায়ের স্পর্শে এক আলাদা ভালোলাগা আছে যা সন্তানের হাজার মন খারাপের ঔষুধ হতে পারে।আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম,

“বাবাই রাগ করে আছো আমার উপর?সবার মতো তুমিও কি মেনে নিলে অই ছবি গুলা সত্যি?”

কথাটা বলতে গিয়ে চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পরে গেলো।বাবাই খুব যত্নে পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বল্লো,

বাবাই:আমি জানি আমার মেয়ে কোনোদিন কোনো খারাপ কাজ করতেই পারেনা। আমার মাটাতো একদম লক্ষি মেয়ে।আর কোনো ছেলেকি পারে তার মায়ের উপর রাগ করে থাকতে।

বাবাইয়ের কথা গুলো শুনে কান্নার মাঝেও মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এই দুনিয়ায় বাবাই মাই আছে আমাকে এত ভালোবাসে।আমি বাবাইয়ের হাত ধরে কেদেঁ দিয়ে বললাম,

বাবাই: বিশ্বাস করো বাবাই আমি এমন কিছু করিনি। আমি অই ছবির ছেলেটাকে চিনিওনা পর্যন্ত। তাহলে তার সাথে আমি কিভাবে ওসব।

বলেই আবার কান্নায় ভেংগে পড়লাম।

বাবাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আমাকে শান্ত করছে।

বাবাই:শান্ত হ মা এভাবে কাদিস না।বাবাই মা আছি তো তোর পাশে আমরা ঠিক সত্যটা বের করে আনবো।এখন তুই উঠে কিছু একটু খেয়ে নে মা সেই বিকালে জ্ঞান হারিয়েছিস এখন জ্ঞান ফিরলো তোর আমিত ভয়েই পেয়ে গিয়েছিলাম।নে মা ওঠ।

বাবাইয়ের কথায় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত নয়টা বাজে।এতক্ষন জ্ঞান হারিয়েছিলাম আমি।এভার নিজের দিকে তাকালাম বিকালের সেই জামাটাই গায়ে।আমি বাবাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“না বাবাই আমি এখন খাবোনা আগে আমি ফ্রেশ হবো তুমি মাম্মাকে বলো খাবার পরে দিতে”

বাবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।আমি আস্তে করে উঠে বস্লাম।

রুমে একবার চোখ বুলালাম।কাল রাতেও এই রুমে বসে আকাশের সাথে কলে কত সপ্ন বুনছিলাম। আজ সেই আকাশ অন্য কারো বুকে শুয়ে অন্য কারো সাথে সপ্ন বুনছে।

আমি আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে আলমারির কাছে গেলাম। সেখান থেকে একটা সুতির জামা নিয়ে ওয়াসরুমে গেলাম।ঝর্নার পানির সাথে চোখের পানিও বাধ মানছেনা। বার বার শুধু আজকের ঘটনা গুলো মনে পরছে। আমি দেয়াল ঘেষে বসে পরলাম। শরীলের ভার আবার যেনো ছেড়ে গেলো। আমি আবার ও তলিয়ে যাচ্ছি হয়ত আবার আমি জ্ঞান হারাচ্ছি,,,।

#চলবে

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নন্দিনি_চৌধুরি
#পর্ব_২

রাত ১২টা,,

আকাশ নিজের রুমের বেলকোনির ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। এই নিয়া এক পেকেট সিগারেট শেষ করলো সে। তার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। এক মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে আজকের ঘটনা গুলো মনে করে যাচ্চে। সে যত যাই হোক সে তো ভালোবেসেছিলো, কিন্তু স্নেহা তাকে এভাবে ঠকালো। সে এটা কল্পনাই করতে পারছেনা। সে রাগ জেদের বসে যতই নিচে বিকেলে বলেছে সে মিতুকে ভালোবাসে। কিন্তু আসলে তো সে স্নেহার উপর রেগে মিতুকে বিয়ে করেছে। সে কোনোদিন স্নেহার জায়গা মিতুকে দিতে পারবেনা। আর মিতুকে নিজের স্ত্রি হিসেবেও মানতে পারবেনা। হয়ত শুধুই দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

আজ সকালেও আকাশ অনেক খুসি ছিলো। নিজের ভালোবাসা, নিজের স্নেহাকে নিজের করে পাবে সেই খুসিতে। আকাশ অনেক খুসি ছিলো। সে তার রুমে বসে স্নেহার ছবি দেখছিলো। এমন সময় ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে ম্যাসেজে লিখা থাকে,

“যাকে ভালোবেসে নিজের জীবনসজ্ঞি করছেন, তার ব্যাপারে আগে পুরো জেনেনিন। নাহলে পরে জেনে হয়ত কস্ট পাবেন।”

আকাশ ম্যাসেজটা দেখে খুব অবাক হলো। আকাশ কোনো রিপ্লে দেবে তার আগেই আরো একটা ম্যাসেজ আস্লো,

“আমি জানি আপনি অবাক হচ্ছেন। অবাক হবেননা। আপনাদের বাড়ির পাসের পার্কে আজ বিকেলে আসবেন। ওখানে একটা ছেলে আপনাকে একটা পার্সেল দেবে। সেই পার্সেল খুলে নিজেই নাহলে দেখে নিবেন। যে আমি কি বলতে চাচ্ছি। আপনার আমাকে বিশ্বাস না হলে আপনি এসেই দেখে নিবেন।”

আকাশ ম্যাসেজর লোকটার কথা মানবে কিনা ভাবছে। পর্ক্ষনে ভাবে তার স্নেহা এমন কিছু করবেনা যাতে সে কস্ট পায়। সেটা আকাশ জানে। তাই আকাশ দেখতে চায় কে এই লোক যে আকাশ আর স্নেহার মাঝে দন্দ লাগাতে চায়। তাই আকাশ বিকেলে ম্যাসজের দেওয়া ঠিকানায় গেলো।কিছুখন পরেই একটা ছেলে এসে আকাশের হাতে একটা পার্সেল দিয়ে চলে গেলো। আকাশ পার্সেল্টা খুলে দেখে একটা খাম। খামটা খুলে দেখে তার ভিতর কিছু ছবি। ছবি গুলো হাতে নিয়ে অবাক হয়ে যায় আকাশ। স্নেহার সাথে একটা ছেলে তার দুজন একে অপরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে কিস করছে। তাদের গায়ে কাপড়টাও নেই। আকাশ এসব দেখে থমকে যায়। এর মাঝেই আকাশের ফোনে একটা কল আসলো,

আকাশ ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা unknown নাম্বার থেকে কল এসেছে। আকাশ কল রিসিভ করলে অপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠে কেউ বলে উঠে,

অপরিচিত:দেখলেন তো তাহলে যাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন সে কিভাবে আপনাকে ঠকালো। আমি জানি আপনি হয়ত এই ছবি গুলো বিশ্বাস করবেন না। তাই একটা ভিডিও দিচ্ছি, সেটা দেখলে বিশ্বাস করবেন।

আকাশ কল কেটে দেখে তার what’sapp এ একটা ভিডিও এসেছে। সেই নাম্বারটা থেকে। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে আর একটা ছেলের আপত্তিকর মেলামেশা। যদিও মেয়েটার মুখ স্পস্ট না, কিন্তু ছেলেটার মুখ অই ছবির মুখটা সেম। তাই আকাশ মেনে নিলো যে মেয়েটাও হয়তো স্নেহাই। আকাশ রাগে ফোন্টা একটা আছাড় মারলো। আর বেরিয়ে পরলো পার্ক থেকে উদ্দ্যেশ স্নেহার কাছে যাওয়ার,আর জবাব চাওয়া কেন সে এমন করলো। পথে মধ্য আকাশের সাথে দেখা হয় মিতুর।মিতু মেয়েটা স্নেহার ক্লাসমেট। তাছাড়া মিতুর বাড়িও আকাশদের বাড়ির এড়িয়াতেই। তাই প্রায় মিতুকে সে দেখে। স্নেহার ক্লাসমেট দেখে মাঝে মাঝে সে কথা বলতো। তবে সেটাও মিতু বললে সে বলত। মিতুদের বাসা আকাশদের বাসার পাশাপাশি হওয়ায় মিতু রোজ আকাশকে দেখতো। দেখতে দেখতেই আকাশকে মিতুর ভালোলেগে যায় যা একদম ভালোবাসার পরিনত হয়। কিন্তু মিতু তার মনের কথা আকাশকে বলার আগে একদিন কলেজে আকাশ আর স্নেহাকে একসাথে দেখে। পরে সে জানতে পারে আকাশ স্নেহাকে ভালোবাসে। এর পর থেকেই মিতুর স্নেহার প্রতি এক চাপা রাপ থাকে। সে স্নেহাকে সয্য করতে পারতোনা।

মিতু আকাশকে এভাবে রাস্তায় দেখে অবাক হয়ে যায়। মিতু যতদূর জানে আজ আকাশ আর স্নেহার এংগেজমেন্ট। তাহলে আকাশ রাস্তায় কি করছে। এরপর মিতুর চোখ যায় আকাশের হাতের ছবি গুলার দিকে। আকাশের থেকে ছবি গুলা নিয়ে সে অবাক। আকাশ এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো মিতুকে দেখে। কারন মিতু একদম আকাশের সামনে একটা দেয়ালের মতো দাঁড়ানো। তাকে পার করে সে যেতে পারছেন। আকাশ যেতেই নেবে এর মধ্য মিতু ছবি গুলা ওর হাত থেকে নিয়ে নেয়। এভার আকাশের রাগ উঠে যায় আকাশ কিছু বলবে তার আগেই মিতু বলে,

মিতু:আকাশ ভাইয়া এটা স্নেহা আর এই ছেলেটাতো। সেই ছেলে যাকে প্রায় ওর সাথে দেখি আপনার অবর্রতমানে।

আকাশ মিতুর কথা শুনে আরেকদফা অবাক হলো।

আকাশ:মানে?

মিতু এবার একটু জোর গলায় বল্লো,

মিতু:এই ছেলের সাথেও মনে হয় স্নেহার সম্পর্ক ছিলো আপনি থাকা অবস্থায়। তাইত এত মেলামেশা করতো। আমিত ভাবতাম হয়ত ওর বন্ধু। কিন্তু এই ছবি গুলো দেখে তো আমার সন্দেহ একদম সত্য দেখছি।

মিতু ইচ্ছা করেই এই মিথ্যা কথা গুলা বলছে। আসলে তো সে জানেইনা এই ছেলেকে বা এর সাথে স্নেহার কি রিলেশন। সে শুধু ছবি গুলা দেখেই একটা ফন্দি আটলো আকাশকে স্নেহার থেকে, দূর করার আর তার নিজের করে নেওয়ার।

আকাশের রাগে গা থরথর করে কাপছে। আকাশ নিজেক কোনোভাবে কন্ট্রল করে মিতুর হাত ধরে নিয়ে গেলো কাজি অফিসে। সেখানেই তারা বিয়ে করে নিলো। মিতু যেনো কোনো সপ্ন দেখছে। আজ সে তার ভালোবাসাকে নিজের করে পেয়েছে। কিন্তু সে যে মিথ্যা বলেছে, তা যদি আকাশ কোনোদিন জানে তবে সেদিন কি হতে পারে তা তার জানানেই।

এভাবেই মিতুর বিয়ে হয় আকাশের সাথে। তারপর আকাশ মিতুকে নিয়ে চলে যায় ওদের বাড়ি।

আকাশ এগুলা বেলকোনিতে বসে ভাবছিলো। হঠাৎ ওর কাধে কারো হাতের স্পর্শ পায়। আকাশ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে দেখে মিতু দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ঝাজালো কন্ঠে বলে,

আকাশ:কি চাই? কিসের জন্য এখানে এসেছো?

মিতু ভয়ে ভয়ে বলে:আপনি ঘরে আসছিলেন না দেখে দেখতে এলাম আপ্নাকে।

আকাশের মিতুর এসব আদিক্ষ্যেতা সয্য হচ্ছিলনা। তাই আকাশ মিতুর হাত নিজের কাধ থেকে শরিয়ে শান্ত গলায় বল্লো,

আকাশ:দেখো মিতু আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি। ইভেন কোনোদিন বাসতেও পারবোনা। আমি বিয়েটা শুধু স্নেহার প্রতি রাগ ক্ষোভে করেছি। স্নেহা যাই করেছে আমিত স্নেহাকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু ও আমায় ঠকালো। সুতারং নিজেকে আমার স্ত্রি ভাবা বন্ধ করো। আমরা স্বামী স্ত্রি শুধুই এই বাড়ির লোক আর সমাজের লোকের চোখে। তাদের সামনে আমরা হ্যাপি কাপল এর অভিনয় করবো। কিন্তু এই চার দেওয়ালের মাঝে তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমার কাছে কোনো অধিকার আশা করোনা। তোমার সব দায়িত্য আমি পালন করবো। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দেবো। তারপর আমি চলে যাবো ইতালি।

আকাশ কথা গুলো বলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। যাওয়ার আগে যদি দেখতো একজোরা অস্রু ভেজা চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। মিতু মাটিতে বসে কেঁদে যাচ্ছে আর ভাবছে সেকি আকাশের ভালোবাসা কোনোদিন পাবেনা। তাকে পাওয়ার জন্য কত বড় মিথ্যা সে স্নেহার বিরুদ্ধে বল্লো। আর সেই আকাশ তাকে আজ ও প্রত্যাক্ষান করছে।

__________

ভোরের দিকে হাল্কা হাল্কা করে চোখ মেলে তাকালো। স্নেহা চোখ খুলেই দেখে তার মাথার কাছেই তার মামনি বসে বসে ঘুমাচ্ছে। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে বাবাই নামাজ পড়ছে। স্নেহা নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখে মাথায় জল পট্টি দেওয়া। স্নেহা বুজতে পারছেনা সে তো ওয়াশরুমে ছিলো তাহলে এখানে আস্লো কেমন করে। স্নেহাকে লড়তে দেখে ওর মায়ের ঘুম ভেংগে গেলো। সে জলদি করে উঠে স্নেহার মাথায় হাত দিয়ে দেখলেন জর কমেগেছে। তিনি জলদি তার স্বামীকে ডাক্লেন,,,

মা:স্নেহার বাবা দেখেন স্নেহার জ্বর কমেছে। স্নেহা চোখ খুলেছে।

নামাজে মোনাজাত করা অবস্থায় কথাটা শুনেই মোনাজাত শেষ করেই স্নেহার পাশে বস্লেন তিনি।অভিমান কন্ঠে বললেন,

বাবা:মামনি কেন এভাবে নিজেকে এভাবে কস্ট দিতে চাও বলোতো। তুমি জানো কাল সারারাত তুমি জ্বরে অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার মা আমি কতটা অস্থির হয়েছিলাম। শাওয়ারে গিয়ে কেউ এভাবে বসে থাকে পানির নিচে। আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তোমার তাহলে আমরা কিভাবে থাকতাম বলোতো?

বাবার কথা শুনে স্নেহা বুজতে পারলো সে কাল রাতে শাওয়ারের নিচেই অজ্ঞান হয়েগেছিলো। স্নেহা খুব আস্তে করে বল্লো,

স্নেহা:সরি বাবাই সরি মা এমন আর হবেনা প্রমিস।

স্নেহার মা মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলেন,

মা:এখন ভালো লাগছে মা তোর শরিলটা? কাল থেকে না খাওয়া তুই এখন কিছু খেয়ে নে। তারপর ঔষুধ খেতে হবে।

স্নেহার মা স্নেহার জন্য খাবার আনতে চলে যান। একটু পর খাবার এনে স্নেহাকে দুজনে ধরে বসিয়ে। খাবার অল্প করে খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। স্নেহার শরীল ক্লান্ত থাকায় ও আবার ঘুমিয়ে যায়।

সকাল ৯টা

স্নেহার ঘুম ভাংগে রোদের আলো ওর চোখে পড়ায়। স্নেহা আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে। আস্তে করে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। চারিপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ চোখ যায় গার্ডেনে একজনের দিকে। তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় স্নেহা। মুখ থেকে আপ্না আপ্নি বেরিয়ে আসে “আরাফ ভাইয়া”।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে