আড়ালে ভালোবাসি পর্ব-১০

0
1674

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_১০
#নন্দিনি_চৌধুরী

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূর আকাশ দেখে যাচ্ছে মিতু।আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালোনা মনে হয় কিছুক্ষনের মাঝেই বৃষ্টি নামবে।আজ মনে হয় আকাশের ও মন খারাপ মিতুর মতো।আজ মিতু তার জীবনের এমন একটা সত্য জেনেছে যা তাকে আকাশের থেকে আড়ও দূর করে দিলো।আল্লাহ হয়ত তাকে তার পাপের শাস্তি এভাবেই দিলো।সে তো কম অন্যায় করেনি স্নেহার সাথে।মানছে যা করেছে তা আকাশকে পাওয়ার জন্য তবুও করেছেতো সএ অন্যায়।মিতুর চোখ থেকে পানি জেনো আজ থামছেই না আর হয়ত কখোনো থামবেও না।আচ্ছা তাকে কি সত্যি চলে যেতে হবে আকাশের জীবন থেকে।পেয়েও কি হারিয়ে ফেল্লো সে আকাশকে।এত বড় শাস্তি আল্লাহ তাকে দিলো।তার স্নেহার কাছে মাফ চাওয়া উচিত।সে যে ভুল করেছে তাএ শাস্তি সে পেয়ে গেছে।

বেশ কয়েকঘন্টা আগে,,,

সোফায় বসে আকাশের ছবি গুলো দেখছিলো মিতু।আজকাল মিতু খুব বেশি চোখে হারায় আকাশকে।মিতু চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি কিন্তু সে আকাশের মনে তার জায়গা তৈরি করতে পারেনি।তাতে কি আছে তো সে তার পাশে তাক্র দুচোখ ভোরে দেখতে তো পারে এইভা কম কিসে।এসব ভাবনার মাঝেই মিতুর ফোনে তার ডাক্তারের কল আসলো।মিতু ফোনটা রিসিভ করলো।

ডাক্তার:মিস মিতু।
মিতু:জি ডাক্তার রিপোর্ট কি এসেগেছে?
ডাক্তার:জি হ্যা রিপোর্ট আমার হাতে।
মিতু:ডাক্তার রিপোর্টে সব ঠিক আছে তো ডাক্তার কোনো সম্যসা নেই তো?
ডাক্তার:মিস মিতু আপনি নিজেকে স্ট্রোং করে নিন। কারন এখন আমি আপনাকে আপনার জীবনের সব থেকে কঠিম সত্যিটা জানাতে চলেছি।
মিতু:জি বলুন আমি শুনার জন্য তৈরি।
ডাক্তার:মিস মিতু আসলে আপনার অই পেট ব্যাথাটা কোনো সাধারন পেট ব্যাথা নয় আপনার জরায়ুতে একটা বড় সম্যাসা আছে। যার কারনে আপনি কোনোদিন মা হতে পারবেনা না। এছাড়া আপনার জরায়ুতে একটা ছোট টিউমার আছে।It is very sad to say this but sorry Miss Mitu you can never be a mother.

ডাক্তারের কথা শুনে মিতু একদম পাথর হয়েগেছিলো। হাত থেকে ফোনটা মাটিতে পরে গেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।একটা মেয়ের জন্য এর থেকে দুঃখের কথা কি হতে পারে যে সে কোনোদিন মা হতে পারবেনা।চাইলেই সে তার সন্তান এর থেকে মা ডাক শুনতে পারবেনা।আজ সমাজের চোখে সেও বাজা হয়ে গেলো বন্ধ্যা নাড়ির পরিচয় হবে তার সমাজে।আর আকাশ!আকাশ তো তাকে এমনিতেই সয্য করতে পারেনা এটা জানার পর সত্যি তাকে তার জীবন থেকে বের করে দিবে।

বর্তমানে,,,,
আগের কথা গুলো ভাবতেই চোখ আবার ঝাপসা হয়ে গেলো নিজের চোখের পানি মুছতেই নিজের চুল কারো হাত মুষ্টিবদ্ধ হবার টের পেলো মিতু।

আকাশ মিতুর চুলেরমুঠি ধরে ঘুরিয়েই পর পর ৪টা থাপ্পর মারলো।থাপ্পর গুলা খেয়ে মিতু ছিটকে গিয়ে বারি খায় বারান্দার রেলিং এর সাথে। তার মাথার পাশে কিছুটা কেটে গেছে।থাপ্পর খেয়ে মিথুর মাথা ঝংঝং করছে।আকাশ মিতুকে তুলে আবার তাত চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগলো,

আকাশ:কেন করলি এমন? কেন করলি এর বড় প্রতারণা।তুই জানতিনা স্নেহা আমার জান স্নেহাকে আমি কত ভালোবাসি।তোর সাহস কিভাবে হয় ওর নামে মিথ্যা বলার বল।এই নষ্টা মেয়ে মানুষ তোর শরীলের এয় খায়েস ছিলো যে তুই নুয়াজকে দিয়ে আমাকে নেশা করিয়ে নিজের কাছেনিছিস।আর আমি এই ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি তোর সাথে ছিহ্ তোর মতো দুই টাকার মেয়ের এত বড় সাহস আকাশ হাসানের সাথে গেম খেলিস। তোকে আমি আজকে মেরেই ফেলবো বলে আবার দুইটা থাপ্পর মারলো মিতুকে।

মিতু এভার মুখ থুবরে পরে গেলো।তবুও খুব কষ্টে উঠে বসে আকাশের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলে,

মিতু:আমি যা করেছি তোমাকে পাবার জন্য করেছি আকাশ।ভালোবাসি তোমাকে।তোমার ভালোবাসা পাবার লোভেই আমি স্নেহাকে তোমার কাছে ছোট করেছি।আমি চেয়েছিলাম তুমি স্নেহাকে ভুলে আমাকে ভালোবাসো।কিন্তু না এই ছয়মাসেও আমি পারিনি তোমার মনে জায়গা করে নিতে।শুধু অবহেলা আর মার খেয়েই গেছি।কিন্তু আকাশ দোষী কি শুধুই আমি তুমি কি দোষী নৌ?আকাশ তুমি কিন্তু আমাকে সেদিন বিয়ে করেছিলে আমি তোমাকে জোর করিনি।সেদিন তুমি স্নেহার প্রতি রেগে প্রতিশোধ নেবার জন্য আমাকে বিয়ে করলে।তুমিতো পারতে সেদিন আমাকে বিয়ে না করে স্নেহার কাছে এসে সত্য জানতে।কিন্তু না তুমি তা করোনি।কেমন ভালোবাসা তোমার স্নেহার প্রতি যেখানে স্নেহার প্রতি বিশ্বাসটাই নেই।জানো আকাশ আজ আমি বুজতে পারছি সব কিছু জোর করে পাওয়া গেলেও ভালোবাসা জোর করে হয়না।আকাশ তুমি স্নেহাকে পেয়েও হারিয়েছো শুধু বিশ্বাসের অভাবে।

আকাশ এভার মিতুকে উঠিয়ে সোজা দাড় করিয়ে বল্লো,

আকাশ:আমি স্নেহাকে হারাইনি।আমি আবার আমার স্নেহাকে নিজের করে নেবো।স্নেহা ঠিক আমায় মাফ করে দেবে আমি জানি।এটা আমার বিশ্বাস।কিন্তু তোকে আমি আর এক মূহূর্ত এখানে দেখতে চাইনা তোকে আমি আজকেই ডিভোর্স দিয়ে দেবো।

আকাশ মিতুকে ছেড়ে ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে সেখানে সাইন করে মিতুর মুখে ছুড়ে মারলো আর বল্লো,

আকাশ:এই নে ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়েছি আমি এখন সাইন কর।

মিতু:মরে গেলেও আমি এটাতে সাইন করবোনা।আল্লাহর কালাম পড়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। তুমি মা মানলেও আমি তোমাকে নিজের স্বামী মানি।আমি ভালোবাসি তোমাকে।

আকাশ:ঠিক আছে তুই এভাবে মানবিনা।

আকাশ ডিভোর্সের ফাইলসহ মিতুকে টেনেহিচরে বাড়ির বাহিরে ছুড়ে ফেলে দিলো।বাহিরে এতক্ষনে বৃষ্টি নেমে গেছে।প্রচুর পরিমান ঝর হচ্চে।আকাশ মিতুকে বাহিরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগ্লো,

১তালাক
২তালাক
৩তালাক

তোকে আজকে থেকে নিজের স্ত্রী বলে আমি মানিনা।কোনো সম্পর্ক আজ থেকে তোর সাথে আমার নেই।আমি যে ভুল করেছিলাম আজ তা শুধ্রে নিলাম আর এই মে কাবিনের ২লক্ষ্য টাকা। আর বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে তোর মুখ আমি দেখতে চাইনা।বলেই আকাশ বাড়ির ভিতরে চলে গেলো মিতুকে বাইরে ফেলে দিয়ে।মিতু অনেকবার দরজা ধাক্কালো আকাশের নাম নিয়ে চিৎকার করলো কিন্তু কোনো লাভ হলোনা।মিতু চিৎকার দিয়ে কাঁদছে আর বলছে,

“আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি আজ আমি পেয়েগেলাম।সব পেয়ে আমি সব হারিয়ে ফেললাম।যেই কষ্ট আমি স্নেহাকে দিয়েছিলাম তার থেকে বেশি কষ্ট আজ আমার হচ্ছে।আমি তো বাচঁবোনা আকাশকে ছাড়া।আল্লাহ কেন হলো এমন আমার সাথে।”

মিতু আসতে করে উঠে দাঁড়ালো এখন এক মাত্র তার নিজের বাসায় গিয়েই সে আশ্রয় পাবে।এই আশা নিয়ে মিতু বের হলো রাস্তায়।

পিনপিন নিরভতা চলছে ড্রইং রুমে সবার মাঝে।স্নেহা এখনো একটা সোকে আছে।নুয়াজকে কিছুক্ষন আগে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গেছে।যাবার আগে নুয়াজ স্নেহার কাছে এসে বলেছিলো,

নুয়াজ:ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ বা কাজ কোনোটাই আমি করিনি।নিজ প্রতিশোধের নেশায় আমি তোর সম্মান নিয়ে খেলেছি।তুই যেদিন প্রথম আমাকে ভাইয়া বলে ডেকেছিলি সেদিন আমি নেহাকে অনুভব করেছিলাম তোর ভিতর।কিন্তু নিজের প্রতিশোধে আমি এতোটাই মগ্ন হয়ে গেছিলাম যা আমাকে এত বড় অমানুষ বানিয়ে দিয়েছে।এভার যেদিন পবিত্র হয়ে ফিরবো।সেদিন আবার আমায় ভাইয়া বলে ডাকবিতো বনু?নাকি সেদিন রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিবি।

নুয়াজের এমন কথায় স্নেহা কেঁদে বল্লো,

স্নেহা:একভার ফিরে আসো তুমি ভাইয়া।আমি তোমাকে আর কোথাও যেতে দেবোনা।আমি জানি ভাইয়া তুমি যা করেছো তা তোমার বোনের প্রতি ভালোবাসায় করেছো।খুব তাড়াতাড়ি তুমি ফিরে আসবে ভাইয়া দেখো।

নুয়াজ আরাফের কাছে এসে এভার বল্লো,

নুয়াজ:আমার বাবা মায়ের আমি ছাড়া কেউ নেই।তাদের প্লিজ এসব জানাবেন না।

আরাফ:চিন্তা করোনা।তুমি না ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের সব দায়িত্ব আমার।ইভেন তুমি ফিরে আসো তোমার উজ্জ্বল ফিউচারের দায়িত্যও আমার।

নুয়াজ মুচকি হেসে বলে:আমার বোনটাকে ভালো রাখবেন।খুব ভালোবাসে আপনাকে।

আরাফ:হ্যা অবশ্যই।

পুলিশ নুয়াজ আর রাহাত করে নিয়ে চলে গেলো।নুয়াজের কর্মের শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে সে জানে।

জাফর:এত দিন পর আজ মনে হচ্ছে বড় একটা চিন্তা মাথা থেকে নামলো।

ইকবাল:ঠিক বলেছো ভাইজান।

ইমরান:তবে নুয়াজের জন্য খারাপ লাগছে। ছেলেটা নিজের জায়গাতে ঠিক আছে।বোনের মৃত্যুর প্রতিধোধ আজ ওকে এত দূর নিয়ে গেছে।

জাফর:হ্যা তা ঠিক।তবে আমার মনে হয় এভার নুয়াক ভালো হয়েই ফিরবে।আমি ওর চোখে অনুশুচনা দেখেছি।

মোতালেব:তাই যেনো হয়।

জাফর:এভার চলো বাড়ি ফিরে মিতুকেও তো একটু দেখা দরকার তাইনা আকাশ তখন দেখলাম রেগে বেরিয়েছে।অতিরিক্ত কোনো কিছু করেনা ফেলে আবার।

সবাই:হ্যা চলো

আকাশ নিজের রুমে বসে ড্রিং করে যাচ্ছে সে জীবনের সব থেকে বড় ভুলটা করে ফেলেছে।সে স্নেহাকে অবিশ্বাস করে।কি করে এতো বড় ভুলটা করে ফেল্লো সে।আচ্ছা স্নেহা কি তাকে ক্ষমা করবে।ইদানিং সে আরাফের সাথে স্মেহার অনেক ভাব।যদি স্নেহা তাকে ক্ষমা না করে।না এটা হতে পারেনা।সে মানাবে স্নেহাকে।তাকে মানাতেই হবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে