আড়ালে ভালোবাসি পর্ব-০৭

0
1699

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_৭
#নন্দিনি_চৌধুরী

“সালটা তখন ২০০১ আমার তখন মাত্র ৬বছর বয়স।আমাদের ফ্যামিলি ছিলো যৌথ ফ্যামিলি।আমার চার কাকারা এক সাথে থাকতো।আমার বড় কাকার ঘরে এক মেয়ে। মেঝ কাকার ঘরে এক ছেলে আর আমাদের ঘরে আমি আর আমার এক বছরের ভাই আকাশ,আমার ছোট চাচির ঘরে কোনো বাবু ছিলোনা। কিন্তু একদিন শুনি আমার ছোট কাকি আর বড় কাকির ঘরে বাবু আসবে।একদিন অনেক রাতে আমার বাবা,বড় কাকা,আর ছোট কাকা ছোট কাকিকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন।পরের দিন সকালে বড় কাকাকে দেখলাম একটা ছোট পুতুল কে তোয়ালে জরিয়ে বাসায় ডুকতে।বাসায় ডুকে আমি সবার আগে পুতুলের মুখটা দেখেছিলা।একদম পুতুলের মত লাগছিলো বাবুটাকে লাল বর্ন হয়েছিলো চেহারাটা।কিন্তু পুতুলটাতো ঘুমিয়ে ছিলো তাই হয়ত দেখেনাই যে আমি ওকে দেখছি।এরপর ওকে একে একে সবাই কোলে নিলো আদর দিলো।ওর নাম রাখলো স্নেহা।স্নেহাকে সবসময় বড় কাকাইদের সাথে থাকতে দেখে আমি ভাবতাম যে ছোট কাকাইরা কোথায়।তাই একদিন মাকে জিজ্ঞেশ করি,

আরাফ:আচ্ছা মা আমারা সবাই আমাদের আম্মু আব্বুর সাথে ঘুমাই। তাহলে ওই পিচ্চি বাবু কেন বড় কাকাইদের সাথে ঘুমায়। ছোট কাকা আর কাকি কোথায়?

মা তখন আমাকে কোলে নিয়ে বলে,

মা:ছোট কাকাই ওই দূর দেশে গেছে। আর ছোট কাকি অই তারাদের দেশে চলে গেছে। সে আর আসতে পারবেনা। কিন্তু তোমার কাকাই একদিন ঠিক আসবে বাবুর কাছে। তাই ততদিন বাবু বড় কাকার কাছেই থাকবে।তুমি কিন্তু বাবুকে একদম জালাবানা ঠিক আছে।তোমার বোন হয়না বাবু তুমি বোনের সাথে খেলবে ঠিক আছে।

আমিও সেদিন মায়ের কথা মাথা ঝাকালাম।
তারপর থেকে আমি প্রায় পিচ্চিটার কাছেই থাকতাম ওকে দোলনায় ঘুম পারিয়ে রাখিলে আমি দোলনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখতাম।এভাবেই বড় হতে লাগলাম আমরা।আমি যখন ক্লাস ২ এ উঠলাম তখন পিচ্চিটা মাত্র পুরাপুরি হাটা আর কথা বলতে শিখলো।আমাদের সবার সাথে পিচ্চিটা খেলতো।আসতে আসতে ও স্কুলে ভর্তি হলো।আমরা সব ভাই বোন একই স্কুলে পড়তাম।তাই একসাথেই যাওয়া আসা করতাম।

এভাই দিন যেতে লাগলো।আমি ক্লাস ফাইভে যখন তখন পিচ্চিটা ক্লাস ২এ। আমার আর পিচ্চিটার মাঝেই প্রায় প্রায় ঝগরা হতো।পিচ্চিটা যখন ঝগরায় না পারতো তখন গাল দুটো ফুলিয়ে বলতো,

“আরাত ভাইয়া তুমি অনেক পচা আমার সাথে সব সময় ঝগরা করো”

পিচ্চিটা সব সময় আমার নাম উলটা উচ্চারণ করতো বাকিদের নাম ঠিক বলতো কিন্তু আমারটাই উল্টা বলতো।

দেখতে দেখতে আমরা সব ভাই বোন যখন স্কুলের গন্ডি পার হলাম তখন অই পিচ্চু আর আমাদের আরে পিচ্চু বোন তখন ক্লাস ৯এ।

যখন থেকে ভালোবাসা কি বুঝলাম। তখন থেকে বুজতাম আমি স্নেহাকে ভালোবাসি।কিন্তু কখই ওর সামনে এটা প্রকাশ করিনি।ইদানিং আমি খেয়াল করতে লাগলাম পিচ্চিটা আর আকাশ একে অন্যের সাথে খুব বেশিই মিশামিশি করে। আমার এটা দেখে অনেক রাগ লাগতো। কিন্তু নিজের ভাই দেখে কিছু বলতাম না।স্নেহা যখন ক্লাস টেনে উঠলো তখন আমি ঠিক করলাম ওর ১৫তম জন্মদিনে আমি ওকে আমার মনের কথা বলবো।কিন্তু সেদিন রাতে আমি যখন ছাদে যাই আমি গিয়ে দেখি আমার ভাই স্নেহাকে প্রপজ করছে আর স্নেহাও তাকে এক্সেপ্ট করে নিলো।সেদিন জানিনা আমার ভিতরে কি হচ্চিলো।আমি ঠিক করে নিলাম এইখানে আর থাকবনা যদি এখানে থাকি তবে আমার স্মেহা পাখিকে পাওয়ার লোভ হবে তাই পারি জমালাম কানাডাতে।আমি নাহয় আমার স্নেহাকে #আড়ালে_ভালোবাসি তার নাহয় জানতে হবেনা।কানাডায় গিয়ে দেশে যে আমার স্মেহা ছাড়া আমার মা বাবা আছে সেদিক ভুলেই যাচ্ছিলাম মা প্রায় ফোন দিয়ে কান্না করত বলতো তুই আয় তাই ঠিক করলাম আমি তখনই বাড়ি যাবো যেই সময় স্নেহা বাড়িতে থাকেনা।আমি ঠিক ওর এক্সাম এর সময় যেতাম জানতাম,কচিং,প্রাইভেট করে সেই বাসায় এসে নিজের রুমে এসে ঘুমাবে তাই আমার সাথে দেখা হবার চান্স নেই।এভাবেই যেতে থাকে সময়।স্নেহাকে কানাডা গিয়েও বুলতে পারলাম না।এর মাঝে শুনলাম আকাশ আর স্নেহার এংগেজমেন্ট সেদিন চোখ দিয়ে পানি পরেগেছিলো হারিয়ে ফেললাম স্নেহাকে একেবারের মতো হারিয়ে ফেললাম।যেদিন স্নেহার এংগেজমেন্ট ছিলো সেদিন রাতে আমাকে কল করে বড় কাকাই।তারপর জানান সেদিন কি কি হলো।আমি সেদিন রাতেই ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসার জন্য বের হই।যখন আমি বাড়িতে পৌছাই গিয়ে দেখি স্নেহা অচেতন অবস্থায় পরে আছে চোখ মুখ ফুলে আছে বুঝা যাচ্ছিলো ও কান্না করছে। আমি ওকে ট্রিটমেন্ট দেই।এরপর শুনি আকাশ মিতুকে বিয়ে করেছে স্নেহার প্রতি রাগ জেদে সেদিন আমার আকাশের প্রতি করুনা হচ্ছিলো হ কারন আকাশ রুপো ভেবে কাচকে নিজের কাছে নিলো।সেদিন থেকে ঠিক করলাম আগে স্নেহাকে নির্দোষ প্রমান করবো তারপর ওকে নিজের করে নেবো।”

বর্তমানে,,,,,,,

স্নেহা এত্তখন চুপ করে সবটা শুনছিলো।তার চোখের কোণে পানি জমে এসেছে।কেউ তাকে আড়ালে এতটা ভালোবেসেছে কিন্তু সে বুজতেই পারেনি।স্নেহা যাকে ভালোবেসে কাছে নিলো সে তাকে দূরে করে দিলো।আর যে স্নেহাকে ভালোবাসতো তার কথা স্নেহা জানতইনা।

আরাফ স্নেহার চোখে পানি দেখে ওর দুই গালে হাত রেখে বল্লো,

আরাফ:এই স্নেহা পাখি কান্না করছিস কেন তুই?

স্নেহা এভার শান্ত থাকতে পারলোনা কেঁদে দিয়ে বল্লো,

স্নেহা:আই এম সরি ভাইয়া।আমি জানতামই না তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো।

আরাফ:দূর পাগলি এখানে সরির কি আছে।আর এখন তো তুই আমারই।আর কাউকে তোকে নিতে দেবোনা।

আরাফ স্নেহার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে আস্তে করে বলতে লাগ্লো,

“ভালোবাসি স্নেহা পাখি অনেক ভালোবাসি”

স্নেহার ভিতরে এক আলাদা শিতল হাওয়া বয়েগেলো আরাফের ভালোবাসি কথাটা শুনে।স্নেহাও তো ভালোবেসে ফেলেছে আরাফকে।তার মনে আরাফ তার নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।স্নেহাও আসতে করে বলে উঠে,

স্নেহা:ভালোবাসি আরাফ ভাইয়া আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

আরাফ যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা অবষেশে সে তার স্নেহা পাখির মুখ থেকে ভালোবাসি শুনলো।সে সার্থক।

স্নেহা লজ্জায় একদম লাল হয়ে যাচ্ছে তাই সে আর একটুও অখানে থাকলো এক দৌড়ে রুমে চলে আসলো।আজ সে বলে দিয়েছে তার মনের কথা আরাফকে।আজ আর কোনো সংকোচ নেই তার মনে।

,,,,,,,বর্তমানে

আয়নার সামনে বসে গতকালকের কথা গুলো ভাবছে আর তৈরি হচ্ছে স্নেহা।আজ সে অনেক খুশি।তার জীবন থেকে সে আকাশ নামক কালো অধ্যায় কে ভুলতে পেরেছে। এভার শুধু নিজেকে নির্দোষ প্রমান করলেই সে সব দায় থেকে মুক্ত।

স্নেহা একটা মিষ্টি কালারের লেহেংগা পরেছে।এটা অবশ্য আরাফই তাকে দিয়েছে।সাথে মেচিং একটা দুল আর চুড়ি,সাথে হালকা সাজ।বেশ স্নেহা একদম রেডি।

স্নেহা নিচে এসে দেখে আরাফ একটা কালো শার্ট পরেছে, চুল গুলো স্ট্রাইক করা। বেশ লাগছে আরাফকেও দেখতে।

দেখতে দেখতে রিতু,রাতুল,নিতু আর জুনায়েদের বিয়ে হয়ে গেলো।আজ তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে নিজেদের করে পেলো।

মিতু এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি এমন ক্ষতি হয় আকাশ তাকে মেনে নেয়।তবে তাদের ও তো এরকম ভাবে আবার বিয়ে হবে কেন মেনে নেয়না আকাশ তাকে।মিতু আজকে সকালে গিয়ে হাসপাতালে টেস্ট করিয়ে এসেছে তার পেটে ব্যাথাটা কমছেই না।

আকাশ এক সাইডে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছে কারন তার একটু সামনেই আরাফ আর স্নেহা হাসাহাসি করছে।আকাশের রাগে গা জলছে।

“কি এত হাসাহাসি ভাইয়ার সাথে হু। লজ্জা সরম নাই এত কিছু করেও এভাবে হেসে যাচ্ছে”।

রিতুকে বিদায় দেওয়ার সময় জাফর সাহেব আর স্ত্রি, নিতু, স্নেহার সেকি কান্না রিতু ও তো কেঁদে একদম অস্থির। মেয়েকে বিদায় দেওয়াটা যে কত কস্টের তা হয়ত পৃথিবীর কোনো বাবা মা বলে বুঝাতে পারবেনা।

রাতের দিকে স্নেহা বসে আছে ছাদে। আরাফ একটা কাজে বাহিরে গেছে। স্নেহা বসে বসে আকাশ দেখছিলো। তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,

“বেশ ভালোই খেলা শুরু করেছো।”

পিছন থেকে এমন একটা কথা শুনে স্নেহা পিছনে তাকিয়ে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

স্নেহা:মানে?

আকাশ:মানে তুমি কত বড় খেলোয়ার স্নেহা। প্রথমে আমি, তারপর অই ছেলেটা আর এখন আমার নিজের ভাই। বাহ্ আর কত জনকে নিজের এই রুপের জালে ফাসাব্র শুনি।তোমার মতো থার্ডক্লাশ মেয়েরা এমনি হয়। প্রথম একজনের সাথে তারপর আরেকজনের সাথে বেড পর্যন্ত চলে যাও আর তারপর আরেকজনকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নেও।আমি তো ভাবতে পারিনি তোমার নিরিহ চেহারার পিছনে কত বিস্রি একটা রুপ আছে ছিহ্।

আকাশের কথা গুল শুনে স্নেহা আকাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে,

স্নেহা:আগে তোমার কথা শুনে আগে আমার অনেক কষ্ট হতো জানো আকাশ কেন! কারণ তখন আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। আর ভালোবাসার মানুষের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা কেউ দেখতে চায়না।কিন্তু এখন, এখন আর আমি তোমাকে ভালোবাসিনা। হ্যা মুছে গেছো তুমি আমার মন থেকে। সেদিনই মুছে গেছো যেদিন তুমি মিতুকে নিজের করে নিয়েছো।এখন আমার তোমার প্রতি জাস্ট ঘৃণা আসে।আর কি বললে আমি আমার রূপের জালে ফাসাচ্ছি হুহ শুনো আকাশ যেদিন তুমি সত্যিটা জানবে সেদিন আফসোস করবে সেদিন হাজাএ চাইলেও আমি তোমাকে গ্রহন করবোনা। কারন আমার এই মনে এখন আরাফের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।সে তোমার মতো কু রুচিবান মানুষনা।

স্নেহা কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে এলো।আর আকাশ স্নেহার কথা গুলো শুনে অবাক হলো কিসের সত্যি?কি সত্যির কথা বলে গেলো স্মেহা।তবে কি সত্যি স্নেহা নির্দোষ!

সকালে,,,

স্নেহাকে কলেজে পৌছে দিয়েগেছে আরাফ।কালকে স্নেহার জন্মদিন তাই সে একটা বিশেষ সারপ্রাইজ প্ল্যানিং করেছে সে।এই জন্মদিনেই স্নেহাকে একটা বিশেষ উপহার দিবে সে।

আরাফ একজনকে কোল দিলো গাড়িতে বসে।

আরাফ:সব কিছু রেডি?

…………………..

আরাফ:ওকে কালকে তাহলে যেখানে বলবো সেখানে চলে এসো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে