Monday, October 6, 2025







আড়ালে তুমি পর্ব – ৫

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৫
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

সেই অচেনা কন্ঠের ডাকে সমানে মাথা তুলে তাকায়। তাকিয়ে সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপরূপ সুন্দরী। তার চেয়ে বড় কথা সে আমাদের কলেজ টপার। আমার সাথে কথা বলার তার কেনো কারণ দেখিনা৷ ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ আমাকে বলছেন?

মেয়েটিঃ আপনি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?

আমিঃ কাউকে তো দেখছিনা।

মেয়েটিঃ তাহলে আপনাকেই ডাকছি।

আমিঃ ওহ। কিছু বলবেন?

মেয়েটিঃ আপনি সব সময় এভাবে একা থাকেন কেনো?

আমিঃ আমি তো একাই। যার জীবনে কেউ নেই সে তার তো একাই থাকা ভালো।

মেয়েটিঃ কেনো বন্ধু তো বানাতে পারেন।

আমিঃ বন্ধু বানিয়ে সময় নষ্ট করার মতো সুযোগ আমার নেই

মেয়েটিঃ সব সময় তো দেখি ফ্রী টাইমে নোট করেন তাহলে রেজাল্ট তো টপ হবার কথা?

আমিঃ আচ্ছা আপনি কয়টা প্রাইভেট পড়েন?

মেয়েটিঃ মোট ৬ টা মতো

আমিঃ আমার একটা পড়ারও সামর্থ্য নেই৷ আমি এভাবে যতটুকু পারি নিজে থেকেই করি।

মেয়েটিঃ কেনো পড়তে তো পারেন। পড়লে আরও ভালো করতে পারবেন।

আমিঃ পুরো ক্লাস জানে আমি একটা এতিম। বাবা মায়ের পরিচয় নেই। আপনিও হয়তো জানেন সেটা। তাহলে ভেবে দেখুন আমাকে এতো খরচ কে দিবে?

মেয়েটিঃ তাহলে নিজে চলেন কিভাবে?

আমিঃ টুকটাক কাজ করি।

মেয়েটিঃ আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?

আমিঃ এটা হয়না। আপনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনি বড়লোক ঘরের মেয়ে। আমার মতো পরিচয়হীনের সাথে বন্ধুত্ব করলে সবাই আপনাকে কথা শুনাবে।

মেয়েটিঃ আমার ২ জন বান্ধবী ছাড়া আমি কারও সাথে কথা বলিনা। আর ওরাও সবার মতো না। আমারা সম সময় চেষ্টা করি সকলকে সম্মান করার। আর আমি বড়লোক হয়েছি বলে বন্ধুত্ব করা যাবেনা?

আমিঃ না।

মেয়েটিঃ কেনো?

আমিঃ আপনার সাথে আমার যাইনা।

মেয়েটিঃ দেখেন হয়তো ভাবতে পারেন আমি ধনী গরিবে কোনো পার্থক্য দেখিনা৷ আমি মনে করি সবাই মানুষ।

আমিঃ ভালো তবুও এটা সম্ভব না। আচ্ছা আমি চলি। মেসে যেতে হবে।

তারপর দিন আবারও মেয়েটা হাজির। আজকে ওর সাথে আরও ২ জন আছে। সেদিনের মতো আজকেও আমার কাছে এসে বললো

মেয়েটাঃ কালকে ওভাবে চলে গেলেন কেনো?

আমিঃ কাজ ছিলো।

মেয়েটাঃ আচ্ছা আমার সাথে বন্ধুত্ব করলে সমস্যা কোথায়?

মেয়ে ১ঃ শুধু এই না আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিন।

মেয়ে ২ঃ হ্যাঁ। বন্ধু হয়ে যান।

আমি কি বলব বুঝছিনা৷ জোর করে বন্ধুত্ব করতে চাইছে৷ আমি ভাবলাম দেখি বন্ধু্ত্ব করে। অন্য কোনো মতলব থাকলে নাহয় দেখা যাবে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আবারও ভেবে নিন। পরে সমস্যা হলে আমার দোষ দিবেন না।

মেয়েটিঃ কোনো সমস্যা হবেনা। যাই হোক আমি সানজিদা পারভিন শিলা।

মেয়ে১ঃ আমি তৃপ্তি বিশ্বাস

মেয়ে ২ঃ আদিবা রহমান।

আমিঃআমি শাহরিয়ার কবির নীল

সবাই একসাথেঃ তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ডস?

আমিঃ আচ্ছা।

শিলাঃ তাহলে আজ থেকে আমাদের সবাইকে তুমি করে বলতে হবে।

আমিঃ আচ্ছা বলবো।

তৃপ্তিঃ আচ্ছা তুমি কিসের জন্য সবার থেকে দূরে থাকো?

আমিঃ জানেন তো আমি এতিম। আমি জানিনা আমার বাবা মায়ের পরিচয়। তারা ছোট থাকতেই আমাকে ফেলে গিয়েছিলো। আমার মতো পরিচয়হীন ছেলে ভালো কলেজে পড়লে তো কথা শুনতে হবেই।

আদিবাঃ তাই বলে তুমি সবাই খোটা মারা কথা মুখ বুজে সহ্য করবে?

আমিঃ তা ছাড়া তো আর উপায় দেখছিনা। সহ্য না করতে পারলে তো টিকে থাকতে পারবোনা।

শিলাঃ যে যা বলার বলুক। কারও কথায় কান দিবেনা৷

আমিঃ কান দেইনা বলেই টিকে আছি।

শিলাঃ আচ্ছা তুমি চাইলে আমাদের সাথে প্রাইভেট পড়তে পারো।

আমিঃ সরি আমার কাছে টাকা নেই। আর সব প্রাইভেটে কোর্স ফি দিতে গেলে প্রায় ৬০ হাজার লাগবে। কোথায় পাবো আমি এতো টাকা?

শিলাঃ তাহলে তাদের রেকর্ডড ক্লাস গুলো তো আমাদের থেকে নিতে পারো। কারণ তারা আমাদের যা পড়ায় তা ভিডিও করে গ্রুপে পোস্ট করে যারা অনলাইন ব্যাচে ভর্তি আছে তার জন্য। আর আমাদের জন্য উন্মুক্ত।

আদিবাঃ হ্যাঁ। বুঝতে অনেক সুবিধা হবে তোমার।

আমিঃ কিন্তু তার জন্য ভালো মোবাইল লাগবে৷ সেটাও তো কিনতে অনেক টাকা লাগবে। আমার কথ বলার মতো একটা ফোন আছে। ওটা দিয়েই চলে।

শিলাঃ আচ্ছা তুমি কি কাজ করো?

আমিঃ আউটসোর্সিং করি।

তৃপ্তিঃ তাহলে তো ভালো ইনকাম করার কথা।

আমিঃ সেজন্য অনেক সময় দিতে হবে। সেদিকে সময় বেশি দিলে আমি পড়বো কখন?

শিলাঃ তোমার জমা করনা?

আমিঃ করি। ৩০ হাজার মতো আছে।

শিলাঃ ১০ হাজার দিয়ে ভালো একটা ফোন কিনে নাও। আর একটা মেমোরি কিনে নাও৷ আমি, আদিবা আর তৃপ্তি তোমাকে ক্লাস গুলো দিয়ে দিবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তো আর কলেজ করার দরকার হবেনা।

শিলাঃ সপ্তাহে ২ দিন করবা।

আমিঃ আচ্ছা।

শিলাঃ তাহলে কালকে আমরা মার্কেট যাবো। তুমি মোবাইল নিও।

আমিঃ আচ্ছা।

তারপর চলে এলাম৷ যদিও কোনো ইচ্ছা ছিলোনা তবে ভালো রেজাল্ট করার জন্য এতটুকু করতেই পারি। যদিও ওদের সবাই মতোই মনে করেছিলাম তবে তাদের কথাতে বুঝতে পেরেছি ওরা সবার মতো না।

ওহ আগে ওদের সম্পর্কে কিছু বলে দেই। তৃপ্তি আর আদিবা দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। শিলা বাবা একজন ব্যবসিক। সেরাদের মধ্যে না পড়লেও মোটামুটি বড়ই বলা চলে। ভালোই অর্থ সম্পদ আছে। এসব ঘরের ছেলে মেয়েদের অনেক অহংকার থাকে। মানুষকে মানুষ মনে করেনা। তবে শিলা তাদের বিপরীত। কলেজের মধ্যে সবচেয়ে বড়লোক হলেও কোনো অহংকার নেই। চলাফেরা অনেক সাধারণ। হয়তো এই সাধারণ চলাফেরার জন্যই কেউ তার সম্পর্কে জানেনা। নাহলে যদি জানতো তাহলে কুকুড়ের মতো ছেলেরা ওর পিছনে পড়ে থাকতো।

যাইহোক পরেরদিন কলেজ গেলাম৷ ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো।

তৃপ্তিঃ এতো দেরি হলো কেনো?

আমিঃ সকাল সকাল উঠে একটু পড়ছিলাম। কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারিনি। তাই একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।

শিলাঃ আচ্ছা বাদ দাও। আদিবা, তৃপ্তি তাড়াতাড়ি চল।

ওরা নিজেদের তুই করে বলে। আমাকে তুমি করে বলে আর আমিও তুমি করে বলি। ক্লাস শেষ করে আমাকে নিয়ে ওরা একটা মোবাইল মার্কেট নিয়ে গেলো। তারপর সবচেয়ে বড় দোকানটাই আমাকে নিয়ে গিলো। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। আগে এতো বড় মোবাইল শপ দেখিনি। এর মাঝেই দেখলাম দোকানদার একটা ফোন আনবক্স করছে। তারপর সব সেটিং করে দিলো। দোকানে আসার পর আমি একটা কথাও বলিনি। সব ওরাই করে যাচ্ছে। একটু পর দোকানদার আমার হাতে ফোন দিলো

দোকানদারঃ সব চেক করে নিন।

আমিঃ কি চেক করবো?

দোকানদারঃ যা যা দরকার।

আমিঃ আমিতো সেরকম কিছু জানিনা ফোনের ব্যপারে।

দোকানদারঃ আচ্ছা সমস্যা নেই৷ আমি সব করে দিয়েছি। তবে গিয়ে ৬ ঘন্টা চার্জ দিবেন।

আমি তখনও হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি। শিলা ব্যপারটা বুঝতে পারলো।

শিলাঃ আরে সমস্যা নাই। আমি তোমার প্রয়োজনীয় সব করে দিবো।

তারপর দাম জানতে চাইলে দোকানদার বললো ৯৯৯৯ টাকা। আমার ফোনের ব্যাপারে সেরকম ধারনা না থাকলেও কেমন জানি দামটা শুনে বিশ্বাস হলোনা। তারপরও আমি টাকা দিয়ে চলে আসছিলাম তখন আবার দোকানদার ডাক দেয়। আমি তার কাছে গেলে তিনি বলেন

দোকানদারঃ আসলে ফোনের সাথে একটা ১২৮ জিবি মেমোরি ফ্রী আছে। ওটা নিয়ে যান।

আমার ফোন সম্পর্কে ধারনা কম থাকলেও মেমরি সম্পর্কে ভালো জানি। দোকানদার আমাকে মেমোরি দিলো। এরপর ওরা তিনজন মিলে কি জানি করলো ২ ঘন্টা ধরে। আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না। ২ ঘন্টা পর আমাকে ফোন দিলো আর কিভাবে ক্লাস গুলো দেখা যাবে আর তার সাথে দরকারী সব জিনিসগুলো শিখিয়ে দিলো।

এরপর আমি মেসে এসে ফোন চার্জে লাগিয়ে দেই৷ এভাবেই দিন ভালোই যাচ্ছিলো। সপ্তাহে ২ দিন ক্লাস করতাম। অনলাইনে ক্লাস গুলো অনেক বেশি গুছানো ছিলো ক্লাস গুলো ভালো লাগতো। দিনে ৪ ঘন্টায় ৪ টা বিষয়ের ক্লাস দেখতাম। শিলা অধ্যায় আর বিষয় অনুযায়ি ফোল্ডার করে রেখেছিলো তাই সমস্যা হয়নি। আর হ্যাঁ এর মাঝে আমাকে ফেসবুক আইডিও খুলে দিয়েছি। আমি ব্যবহার একেবারেই করিনা।শুধু মেসেজ দেওয়া হয়। সবাই মিলে একটা গ্রুপ করা আছে। অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করতাম।

দেখতে দেখতে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা চলে আসে। শিলা আর ওর বান্ধবীদের সাহায্যে আমার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আমি ২০ থেকে ১৩ তে এসেছি। শিলা ক্লাস টপার, তৃপ্তি ৯ আর আদিবা ২৫। যাইহোক সব মিলিয়ে আমার ভালোই চলছিলো। ওরা সব সময় আমার পাশে থেকেছে আমাকে সাহায্য করেছে।

তবে ভালো দিনগুলো মনেহয় বেশিদিন স্থায়ী হয়না। কেবল ১০ দিন হলো ২য় বর্ষে উঠেছি। এর মাঝে ঘটে এক বিশাল ঘটনা। আমি সেদিন কলেজ আসছিলাম। আমি কলেজ গেলে বড় ফোন রুমে রেখে ছোট ফোন নিয়ে আসি। সেদিন যখন কলেজ আসছিলাম তখন কাজের গেটের সামনে ওদের দেখতে পাই৷ সেইদিন রিকশায় আসছিলাম। হঠাৎ রিকশা ওয়ালার ভুলের কারণে একটা মাইক্রোবাস সজোরে ধাকা মারে। গাড়িটা স্পিডে ছিলো। ধাক্কা লাগার পর আমি ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পাই। শুধু মাথায় না হাতে পাঁয়েও ভালো আঘাত লাগে। রক্ত বেয়ে পড়ছিলো। ২ মিনিট হুস ছিলো। চারপাশে মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।

যখন চোখ খুলি তখন আমি একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। মাথা আর পায়ে অনেক ব্যাথা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি শিলা আর তৃপ্তি শুয়ে আছে। আমি নড়ে ওঠায় শিলা জেগে যায়।

শিলাঃ নীল, এই নীল তুমি ঠিক আছো তো?

আমিঃ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। কিন্তু তোমরা এখানে কি করছো?

শিলাঃ আজ ২ দিন পর তোমার জ্ঞান আসলো।

আমিঃ কি? আমি দুই দিন সেন্সলেস ছিলাম?( অবাক হয়ে)

শিলাঃ হুম সেদিন কলেজে আসার পথে তোমার এক্সিডেন্ট হয়। মাথায় বেশ ভালো আঘাত পেয়েছিল। তারপর আমি তোমাকে এখানে নিয়ে আসি। গত ২ দিন তুমি অজ্ঞান ছিলা।

আমিঃ তুমি এতো কিছু কেনো করলো আমার জন্য?

শিলাঃ বারে বন্ধুর জন্য এতটুকু না করতে পারলে আমরা আবার কিসের বন্ধু?

আমিঃ আপনারা এখানে আছেন বাড়িতে জানে?

শিলাঃ সেটা তোমাকে ভাবতে হবেনা। এখন তুমি রেস্ট নাও। তোমার রেস্টের প্রয়োজন।

একটু পর আবার আদিবা আসলো। আমাকে কথা বলতে দেখে বললো

আদিবাঃ থ্যাংক গড নীল তোমার কিছু হয়নি। নাহলে একজন পাগল হয়ে যেতো।

আমিঃ মানে?

আদিবাঃ না মানে কিছুনা। আমি খাবার নিয়ে এসেছি তোদের জন্য। শিলা তুই তৃপ্তিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোল। আর সবাই মিলে খেয়ে নে।

জানিনা কোনো সেদিন আমার চোখে চলে এসেছিলো। আমার জন্য তারা এতটা কেনো করছে? বন্ধুর জন্য এতো কিছু কেউ করতে পারে? তারওপর শিলা আর তৃপ্তির চোখ দেখে মনেহয় ভালো মতো ঘুমাইনি। বিশেষ করে শিলা। কেনো আমার এতো কেয়ার করছে? অনেক খুশি হয়েছিলাম ওদের এই ব্যবহার দেখে। ভেবেছিলাম ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন ওদের প্রয়োজনে জীবন দিতে হয় তবুও দুইবার ভাববোনা।

হাসপাতালে আরও ৭ দিন থাকা লাগে। সাতদিন পর আমি মোটামুটি সুস্থ হই৷ শিলা, তৃপ্তি আর আদিবা এরা তিনজনে আমার অনেক খেয়াল রেখেছে। শিলা তো বাড়ি যেতে চাইতোনা। ওরা জোর করে পাঠাতো। হাসপাতালে সব খরচ শিলাই দিয়েছিলো। জানিনা শিলা কিসের জন্য এতোকিছু করলো তবে এসবের জন্য ওর প্রতি একটা শ্রদ্ধা তৈরি হয়। আসলেই সে বড় মনের মানুষ। আমি তাকে টাকার কথা জানতে চাইলে এড়িয়ে যেতো। আমাকে সুযোগ দেইনি এসব নিয়ে কথা বলার। পরে জানতে পারি শিলা আমাকে রক্তও দিয়েছিলো।

আজ আমি আবার মেসে উঠলাম। এই কয়দিন তো কাজ করা হয়নি৷ তাই টাকাও কম পাবো। সাথে পড়াশোনাও করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও ১৫ দিন লাগলো। তারপর আবার সব শুরু করলাম।

এর মাঝে একদিন জানতে পারি যার কাপড়ের দোকানে কাজ করতাম তিনি মারা গেছেন। মূলত পুরো মার্কেটে আগুন লাগার ফলে অনেক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার মাঝে ওনার দোকান ছিলো। এই আকস্মিক ঘটনা সহ্য করতে না পেরে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ওনাকে মাটি দিয়ে গিয়ে দেখেছিলাম ওনার পরিবারের আর্তনাদ।

আজকে আদিবা আমাদের সবাইকে ডেকেছে আর্জেন্টলি। আমরা সবাই সেদিন কলেজ যাই৷ গিয়ে দেখি আদিবা আগে থেকেই বসে আছে।

শিলাঃ কিরে তুই আজকে আগেই চলে আসলি আর আর্জেন্ট ডাকলি হয়েছে কি?

আদিবাঃ বস তুই আমি বলছি।

তৃপ্তিঃ তাড়াতাড়ি বল।

আদিবাঃ আহা বলছি। নীল বসো।

আমিঃ কি হয়েছে বলবা তো নাকি? মানে ভয় বাড়ছে।

আদিবাঃ আসলে তোদের বিয়ের দাওয়াত দিতে আসলাম।

শিলাঃ বিয়ের দাওয়ার মানে কার বিয়ে?

আদিবাঃ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

শিলাঃ ওয়াট? এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেনো?

আদিবাঃ আসলে ছেলে ডাক্তার আর তাদের পরিবারও অনেক ভালো। তাই বাবা মা বিয়ে দিতে চান। আর ছেলেও আমার পচ্ছন্দ হয়েছে। তাই আমি না করিনি। আমার অপচ্ছন্দ হলে বাবা বিয়ে দিতো না।

শিলাঃ তার মানে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবি তাই না?

আদিবাঃ আরে পুরো কথাটা শোন। ছেল এই রাজশাহী মেডিকেল থেকে পড়ে এখন এখানেই ডাক্তারি করছে। আর আমাকে পড়াশোনাও করাবে যতদূর পর্যন্ত আমি করতে চাই।

তৃপ্তিঃ সত্যি??? তাহলে তো ভালোই হলো। ইসস কতদিন থেকে বিয়ে খাইনি। জমিয়ে খাবো তোর বিয়েতে।

শিলাঃ যাক তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলে অনেক খারাপ লাগতো।

আদিবাঃ হ্যাঁ। কি ব্যাপার নীল তুমি এতো চুপচাপ কেনো?

আমিঃ তোমরা মহিলা মন্ডল কথা বলছ আমি কি আর সেখানে টাইম পাবো?

তৃপ্তিঃ কথাটা তুমি ভুল বলোনি।

শিলাঃ চল আজকের ক্লাসটা করেই যাই।

তারপর আমরা সব ক্লাস করে চলে গেলাম। সমানে আমাদের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা আর তারপর আদিবার বিয়ে। পরীক্ষার জন্য পুরো দমে পড়া শুরু করে দিলাম।

দেখতে দেখতে পরীক্ষাটাও শেষ হয়ে যাই৷ আর ৩ দিব পর আদিবার বিয়ে। বড় করে অনুষ্টান করা হচ্ছে। মানুষও মোটামুটি ভালোই আসবে।

বিয়ে রাতে হবে৷ তবে আমরা সকালেই সেখানে চলে গিয়েছিলা। আমাদের ৪ জন আর আদিবার কাজিনরা সবাই মিলে ভালোই মজা করি। রাতে আমরা বিয়ের অনুষ্টানে যাচ্ছি। তবে শিলা এখনও আসছিলো না। ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু পর ও আসলো। তবে ওকে দেখে পুরোই টাস্কি খেয়েছিলাম। একদম একটা ডানা কাটা পরীর মতো লাগছিলো। তবে এসব ভেবে আমার কি?

বিয়েটা শেষ হয়ে গেলো আর সবাই নিজের নিজের বাড়ি ফিরে গেলো৷ বিয়ের ১৫ দিন পর আবার আদিবা কলেজ আসা শুরু করে। আমি শিলার কাছ থেকে ক্লাস গুলো নিয়ে সব করছিলাম।

চোখের পলকেই সময় কেটে গিয়ে এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। আমার প্রিপারেশন ভালোই ছিলো। তাই পরীক্ষাগুলোও ভালো দিয়েছিলাম। তবে আসল ধাপ এবার শুরু তা হলো ভর্তি পরীক্ষা।

শিলা, তৃপ্তি, আদিবা এরা বিভিন্ন প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে গেলো। তবে আমি পারছিলাম না। যেহেতু একাডেমিক আমার ভালো করে পড়াছিলো তাই সেগুলোই বার বার ঝালাই করে নেওয়ার চিন্তা করলাম। শিলা ক্লাস দিতো সেগুলো করতাম কারণ এডমিশনে প্রচুর টেকনিকাল হওয়া লাগে।

তৃপ্তি আর আদিবা মেডিকেলের প্রস্তুতি নিতে থাকে আর শিলা বিশ্ব বিদ্যালয়ের। আমার টার্গেট ছিলো বিশ্ব বিদ্যালয়। মেডিকেল আমার পচ্ছন্দ ছিলোনা আর ইন্জিনিয়ারিংয়ের ইচ্ছা ছিলোনা৷ তাই ভার্সিটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

৪ মাস পর আমাদের এডমিশন শুরু হয়। তৃপ্তি আর আদিবার পরীক্ষা আগেই হয়৷ আর পরদিনই তাদের রেজাল্ট হয়৷ তারা দুই জনই মেডিকেলে চান্স পাই। আদিবা পাই রাজশাহী মেডিকেলে আর তৃপ্তি পায় রংপুর মেডিকেলে। তারমানে তৃপ্তি এখন আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে।

২ মাস পর তৃপ্তি চলে যায় কারণ তাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাই৷ আর ২ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়। রেজাল্ট ১ মাস পর। আর তারপর হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়।

১ মাস পর রেজাল্ট বের হয় ঢাকার। তবে আমি চান্স পাইনি। তবে শিলা পেয়েছে। আমি তারপর রাজশাহীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ১৫ দিন পর রেজাল্ট বের হলো। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো শিলা এখানেও চান্স পেয়েছে।

আমার ভালোই হলো৷ রাজশাহীতেই সেটেল হয়ে গেলাম। শিলা মনেহয় ঢাকা চলে যাবে। আবার একা হয়ে গেলাম। তবে আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত করে শিলা একদিন আমাকে ফোন দেয়।

শিলাঃ কি করো?

আমিঃ এমনিই শুয়ে আছি। তুমি কি করো?

শিলাঃ আমিও শুয়ে আছি। আচ্ছা তুমি কোন সাবজেক্ট পেয়েছো?

আমিঃ আমি গণিত পেয়েছি। তা তুমি ঢাকা যাবে কখন?

শিলাঃ ঢাকা কিসের জন্য যাবো?

আমিঃ কেনো ভর্তি হবেনা?

শিলাঃ ভর্তি তো হয়েই গিয়েছি।

আমিঃ কোথায়?

শিলাঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমিঃ কিহহ? তুমি রাজশাহীতে ভর্তি হয়ে গিয়েছো? কোন সাবজেক্ট পেয়েছ তুমি?

শিলাঃ আমি পদার্থ বিজ্ঞান পেয়েছি।

আমিঃ তুমি ঢাকা ছেড়ে রাজশাহীতে ভর্তি হলে কেনো?

শিলাঃ ঢাকায় একাই গিয়ে কি করবো? তাছাড়া মাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।

আমিঃ একদিক দিয়ে ভালো হলো পরিচিত কাউকে পেলাম।

শিলাঃ হুম। আচ্ছা ক্লাস শুরু হতে তো ১ মাস বাকি। এই কয়দিন কি করবা?

আমিঃ আমি তো এই কয়দিন বড় বড় কাজগুলো করবো। কিছু টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। তুমি কি করবে?

শিলাঃ আমি বাসাতেই থাকবো। Marvel এর মুভি নাকি অনেক ভালো হয় তাই ওগুলা দেখে সময় পার করবো।

আমিঃ আচ্ছা। পরে কথা হবে তাহলে।

ফোন রেখে দিলাম। জানিনা কেনো অনেক ভালো লাগছে। সত্যি বলতে গেলে আমি শিলাকে ভালোবেসে ফেলেছি৷ তার কেয়ারিং গুলো অনেক ভালোবাসি। তবে এটা বামন হয়ে চাঁদ ধরার মতো কথা। আমার মতো মানুষকে বন্ধু বানিয়ে এতো কিছু করেছে এটাই আমার জন্য অনেক। তবে আমার এতো কিছু কিসের জন্য করেছে তাই আমি বুঝতে পারিনা।

দেখতে দেখতে ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। একমাসে বেশি বেশি কাজ করে সেই মাসে ২৫ হাজার ইনকাম হয়েছে। যাইহোক আমরা প্রতিদিন ক্লাস করি। অনেকেই আমাদের বন্ধু হতে চাই তবে সবাই খালি হাতে ফিরে যাই। এভাবে ভালোই চলছিলো আমাদের সময়। ভার্সিটি এসে কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে দিতোনা। আর ও নিজেও কোনো ছেলের সাথে কথা বলতোনা।

ভার্সিটি লাইফের ৭ মাস কেটে যায়। অনেক ভালো সময় কাটে শিলার সাথে। তবে ঘটনা ঘটে কিছুদিন পর যেটা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেদিন আমাকে শিলা ফোন করে

শিলাঃ নীল কোথায় তুমি?

আমিঃ আমি তো মেসে।

শিলাঃ ভার্সিটি ক্যাম্পাসে আসো।

আমিঃ এখনি?

শিলাঃ হুম।

আমি বের হয়ে ভার্সিটির চলে গেলাম। গিয়ে দেখি শিলা একাই বসে আছে। ও কখনও আমার আগে আসেনা। আমরা একসাথেই আসি। আজকে হঠাৎ এসবের কারণ আমি বুঝতে পারছিনা। আমি ওর কাছে গেলাম।

আমিঃ শিলা কি হয়েছে তুমি ডাকলে যে?

শিলাঃ ও তুমি এসেছো?

আমিঃ হ্যাঁ।

শিলাঃ আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। জানিনা তুমি কথাটা কিভাবে নিবে তবে তবুও আমি বলতে চাই।

আমিঃ কি বলতে চাও বলো

এরপর শিলা যেটা করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা। আমি পুরোই হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার পুরো শরীর অবশের মতো হয়ে গেছে। কারণ শিলা যা বললো………………

চলবে……………

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ