Sunday, October 5, 2025







আড়ালে তুমি পর্ব – ১৩

#আড়ালে তুমি
পর্ব ১৩
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় শিলা এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর ও কিছু বলার আগেই ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম। ও চড় খেয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আমি বলতে শুরু করলাম

আমিঃ কি মনেকরো তুমি নিজেকে? সব ত্যাগ শুধু তুমিই করবে? এতসব করে কেনো তুমি আমাকে বার বার ঋণি করে দাও?

শিলাঃ মানে?

আমিঃ তুমি নিজেকে আড়ালে রেখেছিলে কেনো?

শিলাঃ আমি তো তোমাকে সব বলেছি। ( আমতা আমতা করে)

আমিঃ না শিলা না। তুমি আমাকে সবটা বলনি।

শিলাঃ চুপ

আমিঃ কি হলো? চুপ হয়ে গেলে কেনো?

শিলাঃ তাহলে তুমি সবটা জেনে গেছো?

আমিঃ হুম। কেনো তুমি আমার জন্য সব সময় নিজেকে কষ্ট দাও? আমি তো তোমার জন্য কোনোদিন কিছুই করতে পারিনি অথচ তুমি আমার জন্য সব করলে। আমাকে না জানিয়ে নিজে নিজেই এত বড় অসুখের মোকাবিলা করলে। কেনো আমাকে একবার জানানো যেতোনা? কষ্ট পেলে পেতাম তবে তোমার হাতটা ধরে রাখতে পারতাম। আমার খারাপ সময়ে সব সময় তুমি আমার পাশে ছিলে তবে তোমার খারাপ সময়ে তোমার পাশে থাকার সুযোগ আমাকে দাওনি। সারাজীবন কেনো তুমিই একা কষ্ট সহ্য করবে? কষ্ট গুলোর ভাগ দিতে শিখো। যতই বিপদ আসুক দুজনে হাতে হাত রেখে মোকাবিলা করব। জানো তুমি যখন আমাকে তোমার যোগাযোগ করার কারণ গুলো বলো তখন আমি সন্দেহ করেছিলাম। আমি জানি এই সমান্যটুকু কারণের জন্য তুমি আমাকে কখনও দূরে সরাতে পারোনা। সেদিন যদি আমি তোমার ফাইলগুলো না সরাতে যেতাম তাহলে আমি জানতেই পারতাম না। কেনো শিলা কেনো? আমাকে সব খুলে বলতে।

শিলাঃ তোমাকে জানানোর সাহস আমার হয়নি৷ তোমার চোখের সামনে আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি ঠিক থাকতে পারতেনা৷ আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। তোমার কষ্ট হলে যে আমি মরেও শান্তি পেতাম না। এত বড় রোগ হয়েছিল এটা জানলে তুমি আরও ভেঙে পড়তে। আমি এটা হতে দিতে পারতাম না। প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি এখন থেকে নিজের সব কথাই তোমার সাথে শেয়ার করব। কোনোদিন কোনোকিছু লুকাবনা। প্লিজ ক্ষমা করে দাও। ( কান্না করে)

আমি ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই ওকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে আমিও কাঁদতে লাগলাম৷ ওকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বললাম

আমিঃ ক্ষমা চাইছো কেনো? তোমার মতো কাউকে আমি আমার জীবনে পেয়ে ধন্য মনে করি নিজেকে। জানিনা আমি জীবনে কোনো ভালো কাজ করেছি কিনা কিন্তু আল্লাহ আমাকে সেরা জিনিসটা উপহার দিয়েছে।

শিলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিলো। আমিও ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। তারপর ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম

আমিঃ সরি জান তোমাকে চড় মারার জন্য। লেগেছে বুঝি?

শিলাঃ থাপ্পড় মেরে আসছে সরি বলতে৷ চড় মারলে খুব আনন্দ হয় তাইনা?

আমিঃ সরি দরকার হলে তুমি আমাকে মেরে শোধ করে নাও তবে রাগ করে থেকোনা।

শিলাঃ পাগল একটা৷ তোমার উপর আমি রাগ করে থাকতে পারি? উল্টো আমার সব রাগ তোমাকে একবার দেখলেই হারিয়ে যায়।

আমিঃ আচ্ছা কাল কি যেনো বলছিলে না?

শিলাঃ কি বলছিলাম?

আমিঃ ওই যে রিফাতের জন্য একটা বোন আনার কথা।

শিলাঃ যাহ ফাজিল ( লজ্জা পেয়ে)

আমিঃ আমার তো একটা মেয়ে লাগবেই।

শিলাঃ তো আমি কি করব?

আমিঃ তুমি আবার কি করবে? কষ্ট তো আমাকে করতে হবে।

শিলাঃ তাই বুঝি? তো এভাবে অলসের মতো বসে না থেকে একটু কষ্ট করলেই পারো।

কি আর করার ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলাম। তারপর আর কি? Everything is history.

২ দিন পর রফিক ভাই আসলো। ওনাকে দেখে অনেক খুশি হলাম। আমি শাশুড়ীকে জানাইনি। ওনাদের দেখে আমার শাশুড়ী জিজ্ঞেস করলেন

শাশুড়ীঃ ওনারা কে বাবা?

আমিঃ আসলে মা আপনাকে না জানিয়েই আমি আর শিলা একটা কাজ করেছি।

শাশুড়ীঃ কি কাজ বাবা?

আমিঃ আসলে মা হয়েছে কি….. ( ওদের ব্যাপারে বললাম)

শিলাঃ মা তুমি কি কিছু মনে করেছ?

শাশুড়ীঃ পাগলি মেয়ে আর পাগল জামাই আমার। তোরা জানিস আমি কতটা খুশি হয়েছি? এত বড় বাড়িতে মাত্র এই কয়জন থাকতে ভালো লাগে? এখন থেকে আমরা সবাই একটা পরিবার৷

শিলাঃ সত্যি বলছো মা?

শাশুড়ীঃ হ্যাঁরে পাগলি। যাক বুড়ো বয়সে একটা বোন পেলাম আমি। সাথে ছেলে বৌমা সব পেলাম৷

আন্টিঃ আমারও আজকে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। দুইজন বুড়ি আজ থেকে অনেক গল্প করব।

রফিক ভাই আর বর্না আপু তো অনেক খুশি। রাতে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসলাম। খাওয়া শেষে ছাদে গেলাম। শাশুড়ী আর আন্টি গল্প করছে আর শিলা বর্না আপুকে সব সাজাতে সাহায্য করছে। ছাদে দাঁড়িয়ে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি তখনি পিছন থেকে আমার কাঁধে একজন হাত রাখলো। দেখি এটা রফিক ভাই

আমিঃ ভাইয়া তুমি এখানে? রাত হয়েছে শুয়ে যাও। এমনিতেও অনেক জার্নি করে এসেছো।

রফিক ভাইঃ আজ আমি ধন্য তোর মতো একটা ভাই পেয়ে। জানিস বর্তমানে নিজের ভাই তার অন্য ভাইকে মেরে ফেলতেও দুইবার ভাবেনা আর তোকে এবার ভাই বলেছি তাতেই তুই আমাকে এতো কিছু দিলি?

আমিঃ আমি আবার কি দিলাম? আর তাছাড়া ছোট ভাই যখন মেনেছো তখন আমার বড় ভাইয়ের প্রতি তো আমার একটা দায়িত্ব আছে তাইনা। তুমি যেমন তোমার পরিবারের ভাগ আমাকে দিয়েছিলে তেমনি আমি দুই পরিবারকেই এক করে দিলাম।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা আর ইমোশনাল করিসনা৷ আচ্ছা অফিস নিয়ে কি ভাবছিস?

আমিঃ আমার তো আর ভাবার কিছু নাই। আগের যে ম্যানেজার ছিলো ওনার বয়স হয়েছে। ওনি খুব সৎ একজন মানুষ তাই বয়স হবার পরও ৬ বছর কোম্পানিটা দেখে রেখেছেন। আমি চাই ওনাকে ভালোভাবে বিদায় দিতে। তারপর আমি আর তুমি আমাদের কাজ সামলাবো আর শিলা, বর্না আপু এরা সংসার সামলাবে৷

রফিক ভাইঃ কথাটা ভুল বলিসনি। তাছাড়া বর্না আর আমি কাজ করে যথেষ্ট জমিয়েছি। তাতেই জীবন চলে যাবে। তাই আমিও ভাবছিলাম বর্নাকে আর কাজ করতে দিবনা।

আমিঃ আচ্ছা দুইদিন রেষ্ট নাও তারপর কাজ সামলাবো।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা। আমি বর্নাকে সব বলে দেখি

আমিঃ আচ্ছা।

তারপর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বাড়িতে সুখ এসেছে। আমার শাশুড়ী আর আন্টির গলায় গলায় ভাব। রফিক ভাই বর্না আপুকে সব বলার পর বর্না আপুও খুশি হয় কারণ তারও ইচ্ছা হয় সংসার করার।

৭ দিন পর আজকে আগের ম্যানেজারকে বিদায় দিলাম। লোকটা সত্যি খুব বেশি ভালো মানুষ৷ শশুর হয়তো এই একটা ভালো কাজ করে গেছেন যে এরকম একটা মানুষকে ম্যানেজার বনিয়েছেন। বয়স হবার পরও ৬ বছর সামলিয়েছেন। আমরা না আসলে যে কি হতো আল্লাহই জানে। ম্যানেজার সাহেব আমাদের সব কাজ বুঝিয়ে দিলেন। যাবার সময় অফিসটার দিকে তাকিয়ে কেঁদেছেন অনেক। ১৫ বছর থেকে কাজ করছে। কোম্পানির শুরু থেকে সাথে ছিলেন তাই আবেগ থাকাটা স্বাভাবিক। ওনার ছেলে মেয়েরা এসেছিলো। আমি ওনার ছেলে এখন ছোট তবে ওনাকে কথা দিয়েছি পড়াশোনা শেষ হলেই ওকে চাকরি দিব।

পরেরদিন শাশুড়ী আর শিলা এসে সবার সামনে আমাকে কোম্পানির বস ঘোষনা করে গেলো। শিলা আর আমার শাশুড়ী চাইছিলো আমার নামে কোম্পানিটা করে দিতে তবে আমি নেইনি। এটা শিলার অধিকার আর শিলারই থাকবে।

আমরা অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক মন দিয়ে কাজ শুরু করলাম। সকল স্টাফদের বেতন বাড়িয়ে দিয়ে একটু কাজ বেশি দিলাম৷ অফিসে কাজের চাপ কমানোর জন্য আরও দুইটা শাখা চালু করার উদ্যোগ নিলাম। তবে এটার জন্য বিল্ডিং কিনে রাখলেও সব শুরু করতে ১ বছরের মতো লেগে যাবে। আগের অফিসের সেই রকম নাম ডাক না থাকলেও তাদের কাজ গুছানো ছিলো অথচ এই অফিসের নাম ডাক মোটামুটি ভালো থাকলেও একটাই অফিস বিধায় কাজ করতে সময় লাগে। তাই এই উদ্যোগ নেওয়া।

বিভিন্ন ব্যস্ততার মাঝে থাকার কারণে শিলা রিফাতকে সেরকম সময় দিতে পারেনি৷ তবে এখন মা ছেলে মিলে অনেক দুষ্টুমি করে। ওর যখহ ইচ্ছা হয় আমাদের সাথে আবার ইচ্ছা হলে ওর নানির কাছে থাকে। আজকে অফিস থেকে ফিরে দেখি রিফাতর আর শিলা দুজন মিলে দুষ্টুমি করছে। আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম। আজকে রিফাত আমাদের সাথে আছে। শিলা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। মায়ের আদর আসলেই মা ছাড়া কেউ দিতে পারেনা। এই কয়দিনেই মায়ের আদর পেয়ে রিফাতের মধ্যে চঞ্চলতা এসেছে। এর মধ্যে ওকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। শিলা নিয়ে যায় আর আসার ড্রাইভার নিয়ে আসে। শিলা রিফাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। হয়তো আমার মা থাকলে আমাকেউ হয়তো এভাবে আদর করতেন। এর মাঝে রিফাত বলে উঠলো

রিফাতঃ বাবা জানো আমাদের স্কুলে অনেকের ছোট বোন আছে। আমার বোন কোথায়?

আমিঃ আমার বাবার বোন লাগবে?

রিফাতঃ হ্যাঁ বাবা আমার একটা বোন লাগবে৷

আমিঃ আচ্ছা বাবা এনে দিবো।

রিফাতঃ কবে?

আমিঃ খুব তাড়াতাড়ি

তারপর ওকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। রিফাত আর শিলা সারাদিন দুষ্টুমিতে মেতে থাকে। ৬ বছরের আদরের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে না পারলেও আগের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিবে। এখন প্রতিদিন ওদের জন্য চকলেট, আইসক্রিম নিয়ে আসতে হয়। যাই হোক মা ছেলের দুষ্টুমি দেখে আমার অনেক ভালো লাগে।

৩ মাস চলে গেলো। ইদানিং দেখছি শিলার মধ্যে কেমন জানি বিষন্নতা এসেছে। খাওয়া দাওয়া কম করে। আর আজকে তো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় আমি অনেক বেশি ভয় পেয়ে যায়। আমি জানি ওর সমস্যার কথা তাই অনেক ভয় পেয়েছিলাম। তাড়াহুড়ো করে আমি আবার সেই ডাক্তারের কাছেই শিলাকে ভর্তি করি। শিলাকে দেখে উনি অনেক খুশি হয়েছিলেন তবে ওর অবস্থার কথা শুনে একটু ঘাবরে গেলেন। কিছু টেস্ট করতে দেওয়া হলো। ৩ ঘন্টা পর রিপোর্ট আসলো। আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেলাম

আমিঃ ডাক্তার শিলার কি হয়েছে?

ডাক্তারঃ চুপ

আমিঃ এভাবে চুপ করে থাকবেন না প্লিজ বলুন ওর কি হয়েছে?

ডাক্তারঃ আবার বেড়ে উঠছে।

আমি কথাটা শুনে নিজের চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলাম না৷ অচেনা ভয় আমাকে ঘিরে ধরলো। ডাক্তার আমার অবস্থা দেখে হাসতে লাগলেন৷

আমিঃ আপনি এই অবস্থাতে হাসছেন?

ডাক্তারঃ আপনার পাগলামি দেখে হাসি আটকে রাখতে পারলাম না।

আমিঃ তাই বলে হাসবেন? জানেন আমার এখন কি অবস্থা হয়েছে?

ডাক্তারঃ আরে বাবা আপনি পুরো কথাটাতো শুনবেন নাকি?

আমিঃ জ্বী বলুন।

ডাক্তারঃ বেড়ে উঠছে মানে আপনার স্ত্রীর গর্ভে আপনাদের সন্তান বেড়ে উঠছে।

কথাটা শুনে সব ভয় ভীতি দূরে হয়ে মনে আনন্দের ফোয়ারা বইতে লাগলো। ডাক্তার মহিলা না হয়ে পুরুষ হলে জড়িয়ে ধরতাম খুশিতে। আমি চোখের পানি মুছে হাসি মুখে বললাম

আমিঃ আপনার কি আজকে আর কোনো অপারেশন আছে?

ডাক্তারঃ না আমি ইমার্জেন্সি ছাড়া এখন দিনে ২ টার বেশি অপারেশন করিনা। আমার পরিবারকে তো সময় দিতে হয়।

আমিঃ আচ্ছা আপনি বসুন আমি আসছি।

আমি কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে বাইরে চলে গেলাম। রফিক ভাই অফিসে ছিলেন। আমাকে দৌড়ে যেতে দেখে বর্না আপুও আমার পিছনে আসতে লাগলো। তবে তার আগেই আমি চোখের আড়াল হয়ে গিয়েছি। আমাকে না পেয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো। তারপর ডাক্তার সবকিছু বললেন৷ সবাই কথাটা জানতে পেরে বাড়িতে খুশির জোয়ার চলে এলো। খুশির মাঝেও বর্ণা আপুর চোখ থেকে পানি পড়ে গেলো একটা সন্তানের জন্য।

আমি মিষ্টি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে আমি ডাক্তারকে ৫ কেজি মতো মিষ্টি দিলাম। ডাক্তার ম্যাম বললেন

ডাক্তারঃ এতো মিষ্টি কিসের জন্য?

আমিঃ আপনার মনে আছে যখন আপনি প্রেগন্যান্ট ছিলেন তখন শিলাকে মিষ্টি দিয়েছিলেন? আজ আমার আর শিলার তরফ থেকে মিষ্টিগুলো আপনার জন্য। দুলাভাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন।

ডাক্তারঃ আচ্ছা ঠিক আছে। ( হাসি দিয়ে)

শিলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। সবটা জানার পর ও তো অনেক খুশি। ওর চোখে সেই খুশি দেখতে পেলাম যেই খুশি ৬ বছর আগে রিফাত হবার সময় দেখেছিলাম। বাড়ি আসতেই দেখি রিফাতও স্কুল থেকে ফিরেছে। আমাদের হাসিখুশি দেখে রিফাত প্রশ্ন করলো

রিফাতঃ তোমরা সবাই এতো খুশি কেনো?

আমিঃ কারণ আমার বাবার আপু আসবে তোমার সাথে খেলতে।

রিফাতঃ সত্যি বলছো বাবা? আমার আপু আসবে?

আমিঃ হ্যাঁ বাবা।

রিফাতঃ কবে আসবে? আমি কখন খেলব আপু সাথে?

আমিঃ একটু অপেক্ষা করো।

রিফাতঃ বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারবোনা।

সবাই রিফাতের কথা শুনে হাসলো। বাসায় আবার আনন্দ বিরাজ করছে। তবে আমার নিজের খারাপ লাগছে রফিক ভাইয়ের জন্য। একটা বাচ্চা নিয়ে বাবা মায়ের কতো স্বপ্ন থাকে আর আল্লাহ তাদের সেই সুখটা না দিয়ে পরীক্ষা করছেন।

দেখতে দেখতে ৬ মাস চলে গেলো। অফিসের কাজ অনেক ভালো চলছে। অগ্রগতিও হয়েছে ভালো। সকল স্টাফ আমাদের ব্যবহারে খুব খুশি। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে সবাই যেনো আমাকে ভাই বলে ডাকে। সব স্টাফ অনেক ভালেভাবে কাজ করে।

আজ শিলার আল্ট্রাসোনো করার জন্য হাসপাতে এসেছি। আল্ট্রাসোনো শেষে পেলাম আরেকটা বিরাট খুশি খবর। আমার ঘরে এবার একটা না দুইটা সন্তান আসতে চলেছে। মানে ডাবল খুশি তবে আমি একটা কথা ভাবলাম মনে মনে। রাতে শিলাকে বলব। শিলাও অনেক খুশি।

রাতে শিলার পাশে শুয়ে আছি তখন শিলা বললো

শিলাঃ নীল আমার একটা কথা বলার ছিলো যদি তুমি কিছু মনে না করো তাহলে বলব।

আমিঃ আমারও একটা কথা বলার ছিলো। কিভাবে যে বলি।

শিলাঃ কি কথা বলো।

আমিঃ না আগে তুমি বলো।

শিলাঃ আমিই আগে বলবো? আচ্ছা বলছি তবে ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিও।

আমিঃ আচ্ছা।

শিলাঃ আচ্ছা আমি ভাবছিলাম কি আমাদের তো টুইন বেবি হবে।

আমিঃ হুম তো?

শিলাঃ রফিক ভাইয়েরাও তো এই বাড়িতেই থাকবেন৷

আমিঃ হুম।

শিলাঃ আমি বলছিলাম কি আমাদের একটা বেবি যদি আমি ওনাদের দিয়ে দেই? জানি বাবা হিসেবে এটা তোমার পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তবে একবার ভেবে দেখো আল্লাহ আমাদের তিনটা সন্তান দিয়েছেন আর ওনাদের তো একটাও দেননি। আমরা যদি আমাদের একটা বেবি ওনাদের দিয়ে দেই তবে কেমন হয়? তাছাড়া আমাদের সাথেই তো থাকবে, সব সময় আমাদের চোখের সামনেই থাকবে৷ হয়তো আমাদের চোখের সামনে আমাদের সন্তান অন্য কাউকে বাবা মা বললে এটা হয়তো সহ্য করার মতো হবেনা তবে তাদের সুখের জন্য কি আমরা এটা করতে পারিনা? তাদের যেহেতু কোনো সন্তান নেই তাই তারা কোনোদিনও সন্তানের ভালোবাসায় কমতি রাখবেনা।

আমিঃ সত্যি শিলা তোমার চিন্তা ভাবনা অনেক উচ্চ মাপের। কোনো বাবা মা কখনই চাইবেনা তাদের সন্তান অন্য কাউকে দিতে৷ তবে তুমি জানো কি আমিও তোমাকে এই কথাগুলোই বলতাম। তার আগেই তুমি আমার মনের কথাগুলো বলে দিলে। এখন ওদের কিছু বলবনা৷ তবে বেবি হবার পরে ওদের উপহার দিবো।

শিলাঃ আচ্ছা তোমার ভাবনার সাথে আমার ভাবনা মিলে গেলো কেনো?

আমিঃ কারণ আমাদের ভালোবাসা অনেক গভীর তাই। ( বলার পর ওর কপালে চুমু দিলাম)

ওকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রিফাত ওর নানির কাছে থাকে। বর্না আপু এখন শিলার অনেক খেয়াল রাখে। আমার শাশুড়ীকে সেরকম কিছুই করতে দেইনা।

অফিসে গিয়ে কেবিনে বসে আছি তখন একজন মধ্য বয়স্ক লোক আসলো আমার কেবিনে৷ আমি তাকে বসতে বললাম। তার জন্য চা আনতে দিয়ে চা খেতে খেতে তার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম

আমিঃ জ্বী তা আপনাকে তো চিনলাম না?

লোকটাঃ আমাকে চিনবেনা তুমি তবে তোমার কাজ দেখে আজকে আমি তোমার কোম্পানির সাথে একটা ডিল করে এসেছি।

আমিঃ কিসের ডিল আংকেল?

লোকটাঃ আমি HK Group of industries এর মালিক হাবিবুর খান । এত বছর বিদেশে ছিলাম তাই দেশের মানুষ আমাকে চিনেনা। এবার হয়তো আমাকে চিনতে পেরেছো।

তার পরিচয় শুনে আমি অবাক৷ কারণ HK group of industries বাংলাদেশের মধ্যে ৫ম স্থানে আছে। আমি বেশ অবাক হলাম যে তিনি নিজে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন৷

আমিঃ আংকেল আপনি আমাদের সাথে আবার কি ডিল করবেন?

হাবিবুর খানঃ তোমাদের কাজ আমার পচ্ছন্দ হয়েছে। আর তোমাদের অগ্রগতিও অনেক দ্রুত হচ্ছে আর সব চাইতে বড় কথা তোমাদের ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি তোমরা সৎভাবে কাজ করো। তাই আমি তোমাদের সাথে একটা ডিল করতে এসেছি।

আমিঃ এটা আমাদের কোম্পানির জন্য বিশাল সৌভাগ্য হবে স্যার।

হাবিবুর রহমানঃ আংকেল ঠিক ছিলো। স্যার বললে বুড়ো বুড়ো লাগে৷

আমিঃ তাহলে আংকেল বলবো।

হাবিবুর রহমানঃ আচ্ছা। আজকে আমি শুধুমাত্র তোমাকে দেখার জন্য আসলাম আর সাথে প্রস্তাব দিতে৷ কালকে আবার আসব আমার অফিসের ম্যানেজারকে নিয়ে তারপর সব ডিল সাইন করে কনফার্ম করে নিব।

আমিঃ আচ্ছা আংকেল।

সবকিছু যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে। কালকে ডিলটা ফাইনাল হলে সকলের জন্য একটা বোনাস থাকবে। পার্টি করে হুদাই টাকা নষ্ট না করে সকলকে বোনাস দিলে তারা বেশি খুশি হবেন।

পরেরদিন বিকালে আংকেল তার ম্যানেজারকে নিয়ে অফিসে আসলেন৷ ডিলটাও কনফার্ম হয়ে গেলো। এই বার আমাদের কোম্পানি অনেক এগিয়ে যাবে যদি আমরা ঠিক মতো কাজ করতে পারি৷ তবে এতো ভালো কোম্পানি যখন আমাদের উপর ভরসা করেছে তখন আমরাও সবটা দিয়ে কাজ করব।

বাড়ি এসে সবাইকে বলতে সবাই অনেক খুশি হয়েছে। এখন ভালোভাবে কাজ করার পালা। শিলার ৭ মাস চলছে। এখন ব্যস্ততা একটু বেশি থাকায় ওর দেখাশোনার জন্য একটা কাজের মেয়ে ঠিক করেছি।

হাবিবুর আংকেলের কোম্পানিতে এবার লাভ হওয়াতে তাদের বাসাস একটা পার্টি রেখেছেন। আমাকে আর রফিক ভাইকে আসতে বলেছেন। ফ্যামিলি সহ আসতে বলাতে রফিক ভাই বর্না আপুকে সাথে নিয়েছেন। সন্ধ্যার দিকে কাজের মেয়েকে শিলার পাশে রেখে আমরা পার্টিতে গেলাম। বিশাল আয়োজন। আংকেল আমাদের দেখে অনেক্ষন কথা বললেন আমাদের সাথে। কথার মাঝে শিলা একবার ফোন দিয়েছিলো। কল কেটে আমি একটু সাইডে গেলাম কথা বলতে।

আমিঃ কিছু বলবে?

শিলাঃ আমার না আইসক্রিম খাবার মন হচ্ছে।

আমিঃ এই সময়ে আইসক্রিম?

শিলাঃ হুম। নিয়ে আসবে?

আমিঃ রিফাত জেগে আছে?

শিলাঃ না। মায়ের কাছে গিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

আমিঃ কিন্তু ঠান্ডা লাগলে তো সমস্যা হবে।

শিলাঃ কিছু হবেনা।

আমিঃ রিফাতরে জন্যও নিয়ে আসছি সকালে দিয়ে দিও।

শিলাঃ ঠিক আছে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।

আমিঃ আচ্ছা জানু।

তারপর ফোন কেটে পিছনে ফিরলাম৷ দেখি একটা শাড়ি পরা মেয়ে আমার দিকেই আসছে। আমি পাশ কাটিয়ে আসতে যাবো তখন মেয়েটা বললো

মেয়েটাঃ আরে আরে আপনার সাথে কথা বলতে আসলাম আর আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

আমিঃ আমি পার্টিতে যাচ্ছি।

মেয়েটাঃ একটু কথা বলা যাবে?

আমিঃ জ্বী বলুন

মেয়েটাঃ আপনি তো নীল তাইনা?

আমিঃ জ্বী। কিন্তু আমাকে চিনলেন কিভাবে?

মেয়েটাঃ আমি হাবিবুর খানের মেয়ে রিনা খান।

আমিঃ আচ্ছা আপনি তাহলে আংকেলের মেয়ে?

রিনাঃ জ্বী। আপনার ব্যাপারে বাবা অনেক কথা বলে। আজ আপনি আসবেন শুনে আপনার সাথে দেখা করার মন হলো। আপনাকে বাবার সাথে কথা বলতে দেখে আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বাবা বলে আপনি নাকি নীল।

আমিঃ ও আচ্ছা।

রিনাঃ তা পার্টিতে এসে এদিকে একা একা কার সাথে কথা বলছিলেন? গার্লফ্রেন্ড নাকি?

আমিঃ আরে না না গার্লফ্রেন্ড হতে যাবে কেনো? আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই৷

রিনাঃ বাহ বেশ ভালো তো।

আমিঃ আপনি মনেহয় বাইরে থেকে পড়াশোনা করে দেশে এসেছেন তাই না?

রিনাঃ আপনি বুঝলেন কিভাবে?

আমিঃ আপনার কথা বার্তার ধরন, আপনার ড্রেসিং সেন্স, চুলের স্টাইল দেখে বুঝা যাচ্ছে।

রিনাঃ বাহ খুব ভালো ধরেছেন দেখছি। তা চলুন পার্টিতে গিয়ে কথা বলি।

পার্টিতে রিনার সাথে অনেক্ষন কথা হয়েছে। তবে বাইরের কালচারে বড় হয়েছে তাই গায়ে পড়ার অভ্যাস আছে যেটা আমার পচ্ছন্দ হলোনা। পার্টি শেষ হলো রাত ১০ টায়। বাসায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন আমার হাবিবুর আংকেল দাড়াতে বললেন। তার কথা মতো একটু দাঁড়ালাম তারপর আমাদের সাথে কথা বলতে এলেন

হাবিবুর খানঃ আসলে নীল তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডাকলাম।

আমিঃ জ্বী আংকেল বলুন।

হাবিবুর খানঃ মা এদিকে আই তো। ( রিনাকে ডাকলো) এটা আমার মেয়ে রিনা। ২ মাস হলো কানাডা থেকে এসেছে।

আমিঃ জ্বী আংকেল ওনার সাথে কথা হয়েছে।

হাবিবুর খানঃ তাহলে তো ভালোই হলো। আসলে আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

আমিঃ জ্বী বিনা দ্বিধায় বলে ফেলুন।

আংকেলঃ আসলে আমি রিনার সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাই।

কথাটা শুনে আমি একবার রফিক ভাই আর আপুর দিকে তাকালাম। তারা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমিও একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম। তারপর আবারও আংকেল বলতে শুরু করলেন

হাবিবুব স্যারঃ বাইরে বড় হয়েছে তাই হয়তো সংকোচ হচ্ছে। তবে বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর রিনারও নাকি তোমাকে খুব পচ্ছন্দ হয়েছে তাই আমি বলছিলান ব্যাপারটা ভেবে দেখো।

আমিঃ আসলে আংকেল এটা তো সম্ভব না।

হাবিবুর স্যারঃ কেনো?

আমিঃ আংকেল আমি বিবাহিত। ৭-৮ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। ৬.৫ বছরের একটা ছেলে আছে আর আমার স্ত্রী মা হতে চলেছে।

আংকেলঃ কি তুমি বিবাহিত? আগে তো কখনও বলনি।

আমিঃ আসলে আংকেল আমি মনে করেছি আপনি আমার সম্পর্কে জানেন তাই বলিনি।

আংকেলঃ আসলে আমারি ভুল হয়েছে। আজ তোমার সাথে কেউ আসেনি দেখে আমি ভেবেছি তোমার হয়তো বিয়ে হয়নি।

রিনাঃ আপনি যে বললেন আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই?

আমিঃ বউ থাকতে আবার কিসের গার্লফ্রেন্ড?

আংকেলঃ আচ্ছা বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি বুঝতে পারিনি।

আমিঃ আরে না আংকেল। আমি সরি আমারও বলে দেওয়া উচিৎ ছিলো। রিনা সরি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

রিনাঃ সরি বলছেন কেনো? সরি বলার মতো কিছুই হয়নি।

হাবিবুর খানঃ আচ্ছা সব বাদ। তোমরা বাসায় যাও। আর মিষ্টিও খাইয়ে দিয়ো।

আমিঃ মিষ্টি না একদিন সপরিবারে আমাদের বাসায় আসবেন। অনেক ভালো লাগবে।

হাবিবুর স্যারঃ আচ্ছা আসবো।

বেচারি রিনা আগেই ছ্যাকা খেয়ে নিলো। আমরা আর দেরি না করে বাসায় ফিরলাম। আসার পথে শিলার জন্য আইসক্রিম নিয়েছি। বাসায় পৌছে রুমে গিয়ে দেখি গিয়ে দেখি শিলা পেটে হাত দিয়ে বসে আছে৷ আমাকে দেখে একটু লজ্জা পেলো।

আমিঃ কি ব্যাপার মিস? ওদরে সাথে কথা বলছিলেন বুঝি?

শিলাঃ হুম। তোমার নামে বিচার দিচ্ছিলাম৷

আমিঃ তা কি বিচার দিলেন শুনি?

শিলাঃ বললাম ওদের বাবা অনেক পঁচা। এতো রাজ পর্যন্ত জাগিয়ে রেখেছে আমাকে।

আমিঃ তা কি বললো?

শিলাঃ বললো তোমার সাথে কথা বলবেনা।

আমিঃ তাহলে আইসক্রিম গুলো আমিই খাই।

শিলাঃ এই না না৷ আমি কিছু বলিনি। বাবুদের বাবা অনেক ভালো। এত্তোগুলো ভালোবাসে আমাকে।

আমিঃ সত্যি তো?

শিলাঃ হুম।

ওকে আইসক্রিম দিলাম আর আমিও একটা নিলাম। দুজনে ব্যালকনিতে বসে একসাথে আইসক্রিম খাচ্ছি। কেউ কোনো কথা বলছিনা। আইসক্রিম শেষ করে ওকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরেরদিন অফিসে একটু কাজ বেশি থাকায় ফিরতে রাত হলো। আর আজকে চকলেট আনতেও ভুলে গিয়েছি। শরীরটাও খারাপ লাগছে। বাড়ি পৌছে রিফাত দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ওকে একটু আদর করার পর চকলেট চাইলো। আমি তো আনতে ভুলে গেছি। তাই রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে আমার বের হবো তখন শিলা আটকালো।

শিলাঃ দেরি করে এসে আবার কোথাই যাও?

আমিঃ রিফাতের জন্য চকলেট আনতে ভু্লে গেছি। ও রাগ করে আছে। তাই চকলেট নিয়ে আসি।

শিলাঃ একে তো ক্লান্ত হয়ে ফিরলে আর এখন আবার যাবে?

আমিঃ ও রাগ করে থাকলে কি আমার ভালো লাগবে?

শিলাঃ ফ্রীজে আইসক্রিম আছে ওটাই দিয়ে আজকে ভুলিয়ে দাও। এখন যেতে হবেনা।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে রিফাতকে দিলাম৷ যাক রাগ ছাড়ানো গেলো। রাতে শুয়ে আছি তখন আবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। রিফাত আর শিলা জেগে গেলো। শিলা তো এমনিতেই দুর্বল তারপরও রিফাতকে জাগতে দেখে ওকে একটা বাটিতে করে পানি আনতে বললো। রিফাত পানি নিয়ে আসলে শিলা আমার মাথায় জলপট্টি দিলো। মা ছেলে মিলে আমার সেবা করছে। এটা দেখে আনন্দের বুকটা ভরে গেলো। রিফতা তার ছোট হাতে মাঝে মাঝে আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। একটু পর শিলাকে বললো

রিফাতঃ মা তোমার পেটে আমার আপু আছে?

শিলাঃ হ্যাঁ বাবা। তোমার আপু এখানে বড় হচ্ছে।

রিফাতঃ কবে বাইরে আসবে আপু? আর এত ছোট জায়গাতে কেনো রেখেছো আপুকে?

শিলাঃ বাবুরা এখানেই থাকে। তুমিও ছিলে একসময়।

রিফাতঃ আমিও ছিলাম? আমি তো বড় হয়ে গেছি।

শিলাঃ তোমার আপুও বড় হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।

শিলা আমাকে ঔষধ খায়িয়ে দিলো। একটু পর জ্বর কমলো। শিলা রিফাতকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো। সকালে উঠে জ্বর না থাকলেও শরীরটা দুর্বল ছিলো। অফিস যেতে পারিনি। বিকালে আবার জ্বর আসলো। শিলা কষ্ট করে যতটুকু ওর দ্বারা সম্ভব আমার সেবা করেছে। পরেরদিন থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলাম।

শিলার এখন ৯ মাস ২৪ দিন চলছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছি যাতে কোনো বিপদ না হয়। তারওপর জমজ বাচ্চা তাই সমস্যা হতে পারে। ওর জন্য রক্তের ব্যবস্থাও করে রেখেছি। আমি নিজেও এখন অফিস যাইনা। রফিক ভাই আর এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কাজ সামলাচ্ছে। এই সময়ে আমি শিলার হাত ছাড়তে পারবনা। গোসল করতে শুধু বাড়ি যাই৷ বর্না আপু রান্না করে নিয়ে আসে৷ আমার শাশুড়ী আর আন্টি দিনে একবার করে আসে।

২ দিন পর শিলার ডেলিভারি পেইন উঠলো। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন সিজার করানোর। কারণ জমজ বাচ্চা নরমালে হওয়াটা রিস্কের ব্যাপার তাই আমিও আর দ্বিমত করলাম না৷ ১০ মিনিট পর অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। এর মাঝে রফিক ভাই চলে এসেছে।

একটু পর বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে মনটা উৎফুল্ল হয়েগেলো৷ জোড়া কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে তার মানে দুজনেই সুস্থ আছে৷ একটু পর নার্স বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে আসলেন

নার্সঃ অভিনন্দন আপনাদের ঘরে ছেলে মেয়ে দুটোই এসেছে।

আমিঃ আমার স্ত্রী কেমন আছে?

নার্সঃ ওনি ভালো আছেন৷ রক্ত দিয়েছি এখন সেন্সলেস হয়ে আছে একটু পর কেবিনে শিফট করা হবে।

আমি আমার মেয়েকে নিলাম আর আমার ছেলেকে বর্না আপু কোলে নিলো। ওনার চোখ মায়ের মমতা খুজে পেলাম৷ একে একে সবাই ওদের কোলে নিলো।
৩০ মিনিট পর শিলাকে অন্য কেবিনে পাঠানো হলো। আমরা ওর পাশে বসে আছি আর ওরা দুইজন কান্না করছে। কিছুক্ষন পর শিলার জ্ঞান ফিরলে ওর দুই পাশে দুইজনকে রাখলাম৷ পরম যত্নে ওদের কপালে চুমু দিলো। রিফাত তো খুশিতে লাফাচ্ছে। ভাই বোন পেয়ে ও মহাখুশি।
৪ দিন পর শিলাকে বাসায় নিয়ে আসলাম। ১ মাস পর মোটামুটি সুস্থই আছে।

আজকে সবাই মিলে এক সাথে বসে আছি। রিফাত বোনকে নিয়ে আছে আর আমার কাছে আমার ছেলে আছে৷ বর্না আপু বারবার মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আমি এবার ভাবলাম ওদের সারপ্রাইজ দেওয়ার সময় চলে এসেছে। আমি রফিক ভাইকে আমার কাছে ডাকলাম। ওনি আমার কাছে আসা মাত্রই আমি আমার ছেলেকে ওনার কোলে তুলে দিলাম৷ রফিক ভাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে…………..

চলবে……………

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ