Monday, October 6, 2025







আড়ালে তুমি পর্ব – ১১

#আড়ালে তুমি
পর্ব ১১
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আংকেল সিলেটে সিফট করবেন জেনে একটু খারাপ লাগলো কারণ নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন উনি আমাকে। তারপরও কি করার উনাকে তো আমি আর আটকাতে পারিনা। তবে যাবার আগে আগে আমাকে যা বললেন তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। কারণ তিনি বললেন

আংকেলঃ শিলা মা দেখ তোকে একটা দায়িত্ব দিয়ে যেতে চাই।

আমিঃ কি দায়িত্ব?

আংকেলঃ আমি চাই এই অফিসের দায়িত্ব তুই নিজের কাঁধে তুলে নে।

আমিঃ কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? সিফাত সাহেব তো আছেন। অনেক ভালো মানুষ উনি। উনাকেই ূায়িত্ব দিতে পারেন।

আংকেলঃ আমি চাই তোকে বসের দায়িত্ব দিতে। এখন তুই এই দায়িত্ব নিতে না চাইলে আমার সাথে সিলেট চল।

আমিঃ না। তার চেয়ে ভালো আমি বসের দায়িত্বই নিব।

আংকেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে। কালকে গিয়ে সবাইকে বলে তোর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আসবো।

আমিঃ আচ্ছা।

আংকেলঃ আচ্ছা তুই তাহলে এই বাড়িতে থেকে যা।

আমিঃ এটা হয়না আংকেল। আমি এখানে থাকতে পারবোনা৷ তার চেয়ে ভালো একটা বাসা ভাড়া করে নিব।

আংকেলঃ আমি জানতাম তুই থাকবিনা তাই আগেই তোর জন্য একটা বাড়ি দেখে এসেছি। সাথে তোর জন্য ওটা কিনে রেখেছি। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র দিয়ে বাড়ি সাজানোও হয়ে গেছে। আমরা চলে যাবার পর তুই গিয়ে সেখানে উঠিস।

আমিঃ কিন্তু এত কিছু করার কি দরকার? এমনিতেই আমি আপনার কাছে ঋণি হয়ে আছি। তারওপর আপনি যা করছেন তার জন্য আজীবন ঋণি হয়ে থাকবো।

আংকেলঃ দেখ শিলা আমি তোকে মেয়ের থেকে কোনো অংশে কম ভাবিনি৷ তুই এসব বলে আমাকে ছোট করছিস।

আমিঃ সরি সরি৷ আর বলব না।

আংকেলঃ আচ্ছা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

আমি গিয়ে ঘুমাতে গেলাম। তবে ঘুমানোর আগে তোমার ছবিতে একটা চুমু দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে ঘুমাতাম। এই ১ বছরে কোনো দিনও বাবার খোজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। প্রথমত উনি আমাকে তাজ্য করেছেন তার জন্য উনি সব অধিকার হারিয়েছেন আমার উপর আর তার চেয়ে বড় কথা আমার সুখের সংসার ভেঙে দিয়ে তিনি লোভে পড়ে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। নতুন নম্বর থেকে মায়ের নম্বরে কল দিতাম। তবে বন্ধ বলতো। জানতাম এটা বাবার কাজ। বাবার প্রতি আমার সব সম্মান ঘৃনায় পরিণত হয়েছিলো।

পরের দিন আমাকে অফিসের বস ঘোষনা করা হয়। সবাই আমাকে মেনেও নেয় আমার ব্যবহারের জন্য। সিফাত ভাই মানে আমাদের ম্যানেজার তিনি অত্যন্ত অমায়িক মানুষ ছিলেন। তিনি অসৎ হলে আমি কিছুই সামলাতে পারতাম না৷ অনেক বেশি সাহায্য করেছেন তিনি৷ বলতে গেলে নাম মাত্র আমি বস ছিলাম৷ তাই তাকে মূল বেতনের ২০% বাড়তি বেতন দিতাম। যদিও তিনি নিতে চাননি।

অফিসের বস হবার পর আমি নতুন বাড়িতে শিফট করি৷ আংকেল আমার যাতায়াতের জন্য গাড়িও দিয়ে যান। তারপর থেকে আমার একলা পথ চলা শুরু। আমি অফিসে সে মানুষকেই চাকরি দিতাম যাদের ব্যবহার ভালো। তাইতো অফিসের পরিবেশ অনেক বেশি ভালো হয়। খুব বড় মাপের বিজনেসম্যান আংকেল না হলেও খুব বড় মনের মানুষ ছিলেন।

বাসায় আমাকে একা থাকতে হতো। তাই একজন কাজের মেয়ে ঠিক করি। দিনে সে কাজ করে নিজের বাড়ি থেকে ঘুরে আসতো আর রাতে আমার সাথে থাকতো। তাকে এমন এমন জিনিস দিতাম যে মানুষ বুঝতেই পারবেনা যে সে কাজের মেয়ে।

এভাবেই দিন, মাস কাটে, বছর কাটে৷ সারাদিন কাজের চাপে তোমার কথা কিছুটা ভুলে থাকলেও রাতের বেলা আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারতাম না৷ রিফাতের জন্য, তোমার জন্য মনটা ছটফট করতো। আজ নিজের বাবার জন্য আমি সর্ব হারা। তাজ্যপুত্রী করেও তিনি আমার জীবনটা শেষ করে দিচ্ছিলেন।

এর মাঝে একবার সেই ছেলেটা যে আমাকে বিয়ের জন্য বলেছিলো সে আবারও বলতে থাকে৷ সে আমাদের এখানে জব ছেড়ে পাশেই একটা কোম্পানিতে চাকরি করতো। একদিন সে তার মাকে নিয়ে সরাসরি আমার বাসায় চলে আসে। এই ঘটনায় আমার প্রচুর রাগ হয়। মন চাচ্ছিলো গার্ডদের বলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই। তবে মায়ের বয়সি মানুষ বলে সম্মান দেখিয়েছিলাম৷ তারপর তিনি আমাকে বললেন

ছেলেটার মাঃ দেখো মা তুমি তো বলেছিলে তুমি বিবাহিত আর তোমার ছেলেও আছে৷ কিন্তু আমার ছেলে আজ ১ বছর তোমাকে ফলো করেও সেরকম কিছুই দেখেনি৷ তাই আজ আমি তোমার কাছে এসেছি আমার ছেলের জন্য ভিক্ষা চাইতে৷ আমাকে ফিরিয়ে দিয়োনা৷

খুব বিরক্ত লাগছিলো৷ ছেলেটাও মাথা নিচু করে বসে ছিলো। হয়তো মায়ের বয়সি মানুষ করে সহ্য করছিলাম তবে এসব কথা তো আর সহ্য করার মতো না। তারপরও নিজেকে শান্ত রেখে বললাম

আমিঃ আমি কাউকে কোনো মিথ্যা বলিনি৷ আর আপনি আজব এক ধরনের মা। নিজের ছেলে নির্লজ্জের মতো একটা মেয়েকে ফলো করে তাকে কোথায় শাসন করবেন কিনা চলে আসছেন প্রস্তাব নিয়ে৷ আমি সত্যি বলছি আমার স্বামী সন্তান আছে

ছেলেটার মাঃ দেখো মা আমার ছেলেটা তোমাকে খুব সুখে রাখবে। একবার ভেবে দেখো।

আমিঃ আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন না আমি কি বলছি। আমি তো বললাম আমার স্বামী সন্তান আছে। হয়তো কারও বদ নজরের জন্য আর আমি একা থাকি তবে আমার ভালোবাসা একজনের জন্যই সীমাবদ্ধ। আর কেউ যদি আমার সামনে নিজের জীবনও দিয়ে দেয় তারপরও আমার মন গলাতে পারবেনা।

ছেলেটির মাঃ কি হয়েছে খুলে বলবে? কথা দিচ্ছি আর কোনো রকম ডিস্টার্ব করবেনা আমার ছেলে।

আমার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা এসব মানুষদের সামনে নিজের কাহিনী বলার। তবুও এদের থেকে ছাড়া পাবার জন্য বলতে রাজি হলাম।

আমিঃ তাহলে শুনুন………….. ( সব খুলে বললাম)

ছেলেটিব মাঃ এতো কিছু হয়েছে তোমার সাথে?

আমিঃ জ্বী। আর তাই আমি আমার স্বামী বাদে অন্য কোনো পুরুষের কথা ভাবতেও পারিনা৷ এখন দয়া করে চলে যান আর কখনও আসবেন না। আর এবার থেকে আমাকে বিরক্ত করলে আমি কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো৷

ছেলেটা আর ওর মা মাথা নিচু করে চলে গেলো। এরপর থেকে আর কোনোদিন বিরক্ত করেনি। আবার এভাবে দিন কাটতে লাগলো।

এভাবে চলতে চলতে মোট ৫ বছর কাটলো। আমি পারতাম তোমার সাথে যোগাযোগ করতে। অন্য নম্বর থেকেও কল করতে পারতাম। তবে বাবা তোমার কল ট্র্যাক করতে পারে ভেবে তোমার সুরক্ষার জন্য আমি কোনো রিস্ক নেইনি। সাথে আমার কোনো বান্ধবীর সাথেও আমি যোগাযোগ করিনি।

এভাবে চলতে চলতে একদিন টিভিতে দেখে পায় আমার বাবা নাকি মারা গেছেন। খবরটা শুনে ওনার প্রতি একটু দয়া আসে। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো। তাই পুরাতন নম্বর চালু করতেই দেখি তোমার ৫০০০+ মিস কল আর লাস্ট ফোন করেছিলা ২ দিন আগে৷ তারপর আমি ফোন দিলে তোমার নম্বর বন্ধ পাই৷ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রাজশাহী থেকে ঘুরে আসবো। তবে আমাকে অবাক করে তারপরদিনই আমি তোমাকে আমার অফিসে আমার ছেলের সাথে দেখতে পাই। আমার চোখ আটকে যায়। অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম। তবে আর একটু সময় নিয়ে সব ঠিক করতে চাইছিলাম কারণ হঠাৎ করে সামনে আসলে সমস্যা হতে পারে ভেবে৷ আর তোমার অবস্থা দেখে বুঝেছিলাম তুমি ভালো ছিলেনা। তাই কিছু না জেনেই চাকরি, ১০ হাজার এডভান্স সাথে ফ্ল্যাট দেই৷ তোমাকে ভালো রাখার জন্য আমি সব করেছিলাম। তারপর কয়দিন আগে তোমাকে প্রমোশন দিলাম। আমি কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে তোমার সামনে আনতে চাইছিলাম। তাই তোমাকে মেসেজ করি৷ ভাবছিলাম আস্তে আস্তে সব ঘটনা তোমার সামনে নিয়ে এসে সব ঠিক করবো৷ তবে আমি জানতাম না যে তুমি আমাকে প্রথম দিনই চিনে ফেলেছিলে। তারপর আজ তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমার সব উলটপলট হয়ে যায়। আমি সব ঠিক করেই নিয়েছিলাম তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। তবে আমি না তুমিই যে সব কিছু করছো এটা আজকে বুঝতে পারলাম।

★বর্তমান★

শিলার বলা শেষ হলো। শিলা কাঁদছে তবে আমার এখানেই সব শেষ মনে হচ্ছেনা। শিলা চাইলেই আমাকে না ফোন করলেও তৃপ্তি অথবা আদিবাকে ফোম করতেই পারতো। নতুন নম্বর থেকে ফোন দিলে তো সমস্যা হতো না। হতে পারে ওর বাবা আমার বা ওর ফোন নম্বর ট্র্যাক করছে তবে আদিবা বা তৃপ্তির ফোন নম্বর ট্র্যাক করছেনা। ওদের সাথে যোগাযোগ করে তো সবটা বলা যেতো। তাহলে কি এর মাঝে আরও কিছু গোপন আছে? কারণ ও যদি সত্যি এই কারণে বাড়ি ছেড়ে থাকে তবে ও আমার আর মায়ের খোজ না নিয়ে এভাবে এতোটা সময় পার করতো পারতোনা। আমার মনেহয় আরও কিছু লুকাচ্ছে। যাউ হোক এখন আপনাতত একটু ঘুমের দরকার। তাই সবাইকে বললাম

আমিঃ আচ্ছা অনেক রাত হলো। শিলা তোমাকে এখন বাসাতে রেখে আসাও সম্ভব না। আপু শিলা তোমরা বরং এক রুমে শুয়ে পড়ো। আর ভাইয়া আর আমি এক রুমে শুয়ে পরছি।

বর্ণা আপুঃ কেনো তোরা একসাথে থাকলে সমস্যা কি? তাছাড়া ও তো সব খুলে বললো।

আমিঃ আপু সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি মেনে নেওয়া যায় না। একটু সময় তো অবশ্যই লাগবে৷

বর্না আপুঃ আচ্ছা। ম্যাম চলুন আপনি

শিলাঃ আপু আমি আপনার ছোট। প্লিজ আমাকে এখন থেকে নাম ধরে আর তুমি করে ডাকবেন।

বর্না আপুঃ আচ্ছা চলো। আর জেগে থাকতে হবেনা।

বর্না আপু আর শিলা চলে গেলো এক রুমে আর আমি, ভাইয়া আরেক রুমে। শোবার পর ভাইয়া আমাকে বললো

রফিক ভাইঃ নীল এবার মনেহয় সব ঠিক করে নেওয়া দরকার। তাছাড়া ও তো নিজেও কম কষ্ট পাইনি। তোদরে ছেড়ে ও নিজেও ভালো ছিলোনা। তোর প্রতি ভালোবাসা ওর মনে অনেক বেশি। আর কষ্ট দিসনা ভাই।

আমিঃ দেখো ভাইয়া আমি মেনে নিবো। তবে আমাকে সময় দিতে হবে। আর ধীরে ধীরে আমি এসব কিছু মানিয়ে নি তারপর সব কিছু মেনে নিবো।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা। ঘুমিয়ে পড়।

আমরা ঘুমিয়ে গেলাম। তবে ঘুমানোর আগে শুধু আমার মাথায় একটা কথায় ঘুরছিলো যে শিলা সবটা সত্যি বলছেনা। কিছু তো লুকাচ্ছে ও। এটাও আমাকে খুঁটিয়ে দেখতেই হবে। তার জন্য ওর সাথে একটু দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে তাহলেই সব কিছু জানতে পারবো।

সকাল বেলা শিলা চলে গেলো। আর রিফাতকেও নিয়ে আসলাম। আমাকে দেখে যেনো আকাশের চাঁদ পেয়েছে এরকম অবস্থা। অনেক বেশি খুশি হয়ে গেলো। ওকে কিছুক্ষন কোলে নিয়ে একটু আদর করে আমি অফিসে গেলাম৷

অফিসে বসে কাজ করছিলাম তখন পিয়ন বললো শিলা নাকি ডাকছে। আমি গেলাম গিয়ে ও আমাকে বসতে বললো। তারপর ও নিজের চেয়ার থেকে উঠে আমার পাঁয়ে পড়ে গেলো

শিলাঃ নীল আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কোনোদিন তোমার কথার খেলাফ করে কোথাও যাবোনা। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবনা। ৬ বছর কেটে গেলো তোমাকে ছাড়া এবার তো আমাকে আপন করে নাও। আমি মানছি আমি এই ১ বছর আমি অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলেছি। আর কোনোদিন এরকম করবোনা৷ তুমি বললে আমি চাকরি ছেড়ে দিবো। তবে আমার থেকে দূরে থেকোনা প্লিজ। ( কান্না করে)

আমিঃ দেখুন ম্যাম আমাকে একটু সময় দিতে হবে৷ এসব কিছু আমি সহজে মেনে নিতে পারছিনা৷ অনেক বেশি মানসিক চাপ পড়ছে আমার উপর। প্লিজ একটু সময় দেন আমাকে।

শিলাঃ আচ্ছা তুমি নিজেকে সময় দাও। আর আমাকে আপনি করে বলছ কেনো?

আমিঃ দেখুন এটা অফিস আর আপনি আমার বস। সুতরাং তুমি করে বললে খারাপ দেখায়।

শিলাঃ কেনো এতোদিন তো তুমি করেই বলতে।

আমিঃ এখন আপনি করে বলব। আর এই নিয়ে কোনো কথা বলবেন না।

তারপর শিলার রুম থেকে আসলাম। আমার মনটাও ছটফট করছে ওর জন্য। তবে এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু মেনে নেওয়া যাবেনা৷ ২ মাস পর ওর জন্মদিন আসছে। সেই দিনই ওকে আবার মেনে নিব। তবে ও কি লুকাচ্ছে এটাও আমাকে দেখতে হবে। আমি তৃপ্তি আদিবা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। তবে এখন ওর সাথে যোগাযোগ করতে বারণ করেছি। কিছুদিন পর ওর জন্মদিনে ওকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিব।

দেখতে দেখতে ২ মাস চলে গেলো। শিলা ২ দিন পর পর খালি একটাই কথা বলে যে কখন আমি ওকে কাছে টেনে নিবো৷ তবে আমি সময় চাইতাম।

আজকে ওর জন্মদিন। আমি আজকে শরীর খারাপের বাহানায় ছুটি নিয়েছি। সাথে আদিবা, নাহিদ ভাই, তৃপ্তি, আকাশ সবাইকে সাথে নিয়ে ওর বাড়িতেই সব কিছুর আয়েজন করেছি। ওর বাড়ির দারোয়ানের কাছে একটা চাবি থাকে। দারোয়ান কে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে চাবিটা ম্যানেজ করি। তারপর সব কিছুর আয়োজন করি। এদিকে আমি রফিক ভাই আর আপুকে সময়ের আগে ছুটি নিয়ে চলে আসতে বলেছি। সাথে যেনো রিফাতকেও নেয়।

সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিট। আমরা লুকিয়ে শিলার জন্য অপেক্ষা করছি৷ গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম। বুঝলাম শিলা এসেছে। আমরা সবাই আরও সাবধান হয়ে গেলাম। একটু পর ও বাড়িতে প্রবেশ করলো। সাথে সাথে বাড়ির লাইট জ্বালিয়ে সবাই মিলে একসাথে উইশ করলাম। শিলা ঘটনার আকস্মিকতায় অনেক জোরে এটা চিৎকার দিলো। তারপর আমাদের সবাইকে ওর সামনে দেখে ও বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। একটু পর ও দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। উপস্থিত সবাই এটা দেখে লজ্জা পেলো। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আমিও আর ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম।

আমিঃ এই পাগলি কান্না করছ কোনো?

শিলাঃ তুমি সবটা মেনে নিয়েছো তো?

আমিঃ হুম।

শিলাঃ আজ থেকে আমাকে আর দূরে সরিয়ে রাখবেনা প্লিজ।

এর মাঝে আবার রিফাত এসে বললো

রিফাতঃ এই আন্টি তুমি আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরেছো কেনো? ছাড় বলছি।।

শিলা এবার আমাকে ছেড়ে রিফাতকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

রিফাতঃ আন্টি তুমি কান্না করছো কেনো?

আমিঃ বাবা একটা তোমার আন্টি না। এটা তোমার মা।

রিফাতঃ সত্যি বলছ বাবা? ইনি আমার মা?

আমিঃ হ্যাঁ বাবা।

রিফাতঃ আম্মু তুমি অনেক পঁচা। তোমার সাথে কথা বলব না।

শিলাঃ কি হয়েছে আমার বাবার? রাগ করেছো?

রিফাতঃ তুমি এতোদিন আমার সাথে ছিলেনা কেনো? এতোদিন তো আমার সাথে দেখা করতে তাহলে বলনি কেনো তুমি আমার মা?

শিলাঃ বাবা এটা অনেক বড় একটা গল্প তোমাকে পরে বলবো। এবার আমাকে একটা পাপ্পি দাও?

রিফাত শিলার গালে একটা চুমু দিলো। শিলাও ওর গালে কাপালে চুমু দিলো। তারপর শিলা তৃপ্তি আর আদিবার সামনে গেলো।

শিলাঃ কেমন আছিস তোরা?

তৃপ্তিঃ আমরা কেমন আছি এটা জেনে কি করবি?

আদিবাঃ হুম। আমরা তোর কে হই যে আমাদের এসব জিজ্ঞেস করছিস?

শিলা এবার ওদের পাঁ ধরতে গেলো। তখন তৃপ্তি আদিবা ওকে ধরে ফেললো

আদিবাঃ এই পাগলি কি করতে যাচ্ছিলি এসব? একটু মজা করলাম তাতেও তোর সহ্য হলোনা। এই ৬ বছর তোকে কত মিস করেছি জানিস?

শিলাঃ মাফ করে দে তোরা। আমার কাছে কোনো রাস্তা ছিলোনা দোস্ত।

তৃপ্তিঃ আমরা সবটা জানি। কিন্তু তবুও একবার আমাদের সাথে কথা বললে কি হতো?

শিলাঃ মাফ করে দে। আর কোনোদিন এরকম হবেনা৷

এরপর ওরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। যাক ৬ বছর পর আজ খুশির একটা সময় আসলো। তারপর শিলা কেক কাটলো। রাতে আমি আর শিলা পাশাপাশি বসে আছি। শিলা আমার কাঁধে মাথা রেখে আছে। একটু পর ও জিজ্ঞেস করলো

শিলাঃ নীল তুমি সত্যি আমাকে ক্ষমা করে সবটা মেনে নিয়েছো?

আমিঃ হ্যারে পাগলি। আমি আগেই মেনে নিতাম। তবে আজকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করলাম।

শিলাঃ আজকে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে দিবে?

আমিঃ আজকে না। তুমি কালকেই অফিসের ফ্ল্যাটে শিফট করবে।

শিলাঃ কেনো এখানেই থেকে যায় আমরা?

আমি; না শিলা। আমরা শুরু করেছিলাম একটা ছোট বাড়ি দিয়ে আর বাকিটা সময়ও ছোট করেই সংসার করে যাবো। এতো বড় বাড়িতে আমি থাকতে পারবোনা।

শিলাঃ আচ্ছা তুমি যা বলছো তাই হবে। আমি কালকেই ফ্ল্যাটে শিফট করব। আবার সেই আগের দিনগুলোর মতোই নিজের মতো করে সাজিয়ে নিবো।

আমিঃ হুম। আচ্ছা অনেক রাত হলো আমি ফ্ল্যাটে যাবো। তুমি রিফাতকে নিয়ে থাকো আজকে।

শিলাঃ না তুমিও থাকো না প্লিজ। আজকের পর তো এখানে আর থাকা হবেনা। অনেকদিন থেকে এখানে আছি তো তাই একটা মায়া আছে এই বাড়ির প্রতি।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

রাতটা সেখানেই পার করে দিলাম। সকাল হবার পর নাস্তা করে দরকারি সব আসবাবপত্র ফ্ল্যাটে শিফট করা হলো।

শিলা রান্নার কাজ করছে। এর মাঝে ও আমাকে বললো ওর রুমে ড্রেসিং এর ড্রয়ারে অফিসের কিছু ফাইল আছে যেনো সেগুলো ব্যাগে ভরে রাখি। আমিও সব ফাইল গুছিয়ে ভরতে লাগলাম। দুটো ড্রয়ারে ফাইল ছিল। তবে ২য় ড্রয়ারের ফাইল গুলো ব্যাগে ভরার পর একটা মেডিকেল রিপোর্টের ফাইল পেলাম। আমি ভাবলাম যখন ও এক্সিডেন্ট করেছিলো তখনকার রিপোর্ট হয়তো। কিন্তু তখন তো ও বসের বাড়িতে থাকতো। এখানে এসেছে তার ১ বছর পর। তাহলে কি এটা অন্য কিছুর রিপোর্ট হতে পারে?

কৌতুহল বশত রিপোর্টটা দেখতে গিয়ে আরেকটা বড় ধরনের শক পেলাম। তাহলে আমি যেটা ধারণা করছিলাম সেটাই সত্যি? কারণ রিপোর্টটা দেখতে গিয়ে একটা জায়গাতে চোখ আটকে। রিপোর্টের এক জায়গায় “Brain tumour” লিখা ছিলো।
রিপোর্ট তো দেখি শিলারই। নাম ওর আর সব ডিটেইলস ও ওর। আর রিপোর্ট টাও ৪.৫ চার বছর আগের।

এখন ব্যাপারটা আরও ক্লিয়ার হলো যে এটাই তাহলে আসল কারণ। ব্রেইন টিউমার ঠিক হয় তবে কোনো গ্যারেন্টি থাকেনা যে একেবারেই ঠিক হয়ে যাবে৷ এটা যেকোনো সময় আবার জাগ্রত হতে পারে।

[ উদাহরণ সরূপ মোশাররফ হোসেন রুবেল ভাইকেই দেখতে পারেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন ]

তাহলে কি এটাই আসল কারণ যে শিলা কারও সাথে যোগাযোগ করেনি? যদিও প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ ধরা পড়লে অনেকটাি নিরাময় করা সম্ভব তবে দেরি করে এটা ক্যান্সারে রুপ নিলে বাঁচার সম্ভাবনা কমে আসে। শিলা এই জিনিসটাও আমার থেকে লুকিয়েছে। এবার বুঝলাম ও আমাদের ছেড়ে নিজেও কতটা কষ্টে ছিলো। আমাকে না জানানোর জন্য যেখানে আমার রাগ হবার কথা সেখানে ওর জন্য অনেক খারাপ লাগছে৷

ও হয়তো তার অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলো। নাহলে আমাদের সাথে নিশ্চয় যোগাযোগের চেষ্টা করতো। যে ডাক্তার তার চিকিৎসা করেছিলো আমি তার নম্বরের একটা ছবি তুলে নিলাম। শিলার ছবি তো আমার কাছে আছেই৷ এখন আমাকে এই ব্যাপারেও জানতে হবে। তার অবস্থা সম্পর্কে আমার জানতে হবে।

যাই হোক আমি আপাতত ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইনা। এখন মনেহয় শিলা সুস্থ আছে। তবে মনে অনেক ভয় হলো। কারণ টেনসন থেকে এই হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই ওকে যতটা সম্ভব টেনশন মুক্ত রাখতে হবে৷ বিকাল হতে হতেই সব কিছু শিফট করা হয়ে গেছে।

রাতে শিলা নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খাওয়াল। ওর হাতের স্বাদ এখনও ঠিক আগের মতোই আছে। আমার জন্য রান্না শিখেছিলো সে।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আমি রিফাতকে রফিক ভাইয়ের কাছে রেখে এলাম। কারণ অবশ্যই বুঝতে পারছেন😅

রাতে শিলা আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে৷ আমার আত্মাটা যেনো ঠান্ডা হয়ে গেলো। অনেক ভালো লাগছে। তবে কিছু বলছিনা। সময়টা উপভোগ করতে চাইছি। নিরবতা ভেঙে শিলা বলে উঠলো

শিলাঃ নীল।

আমিঃ বল।

শিলাঃ আচ্ছা এতোদিন পর কাছে পেয়ে কি আমাকে একটুও আদর করতে মন চাইছেনা?

আমিঃ কেনো মহারানীর আদর পেতে খুব ইচ্ছে করছে তাইনা?

শিলাঃ কতোদিন থেকে তোমার আদর পাইনি। ( লজ্জা পেয়ে)

আমিঃ ম্যাম দেখছি লজ্জাও পায়। আসেন ম্যাম আজ আবারও আপনার লজ্জা ভেঙে দেই।

বলেই শিলার একটা চরম মূহুর্তে চলে গেলাম। অনেকদিন পর দুজন দুজনকে কাছে পেয়ে ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছি। অনেক বছর পর ভালোবাসার মানুষটার সাথে একটা ভালোবাসাময় রাত পার করলাম। পরেরদিন থেকে গাড়ি রেখে আমরা হেঁটেই অফিস যাওয়া শুরু করলাম৷ হেঁটে যাওয়া আসা আমাদের প্রথম ভালোবাসার সময়গুলো মনে করিয়ে দেয়।

আমি কিন্তু সেই ডাক্তারের কথা ভুলিনি। আজ ১৪ দিন পর সেই ডাক্তারকে ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই কয়দিন ভালোবাসার মধ্য দিয়ে পার করেছি। আজ ছুটির দিন তাই সময় করে সেই ডাক্তারকে ফোন দিলাম। ৩ বার দেওয়ার পর ধরলোনা। তারপর ১০ মিনিট পর আবার কল দিলাম। এবার ধরলো।

ডাক্তারঃ আসসালামু আলাইকুম।

আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনি কি ডাক্তার আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন?

ডাক্তারঃ জ্বী বলছি। আপনি কে?

আমিঃ আমাকে চিনবেন না। আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।

ডাক্তারঃ জ্বী বলুন।

আমিঃ না মানে সরাসরি আপনার চেম্বারে বসে কথা বলতে চাই।

ডাক্তারঃ তাহলে সময় করে চলে আসুন।

আমিঃ আপনি থাকেন কোথায়?

ডাক্তারঃ আমি কিছুদিন আগে আমার স্বামীর চাকরির জন্য রাজশাহী সিফট করেছি। আমাকে পপুলার, ইসলামিক হাসপাতে পাবেন।

আমিঃ ও আচ্ছা। আপনার কি ফ্রী টাইম থাকে? মানে আমার কথাগুলো বলা অনেক জরুরি।

ডাক্তারঃ শুক্রবারে সকালে ফ্রি থাকি। বিকালে ব্যস্ত।

আমিঃ আচ্ছা আমি তো ঢাকাতে থাকি। আমি কয়েক দিনের মধ্যে আসবো রাজশাহী এসে আপনার সাথে কথা বলব।

ডাক্তারঃ আচ্ছা।

তাহলে এবার রাজশাহী যেতে হবে৷ তখনই শাশুড়ীর কথা মনে পড়লো। শিলার বাবাতো মারা গেছে। জানিনা শাশুড়ী একা একা কি করছে৷ তার খোজ নিতে হবে৷ আর তাকে একা রাখবোনা৷ এবার নিজেদের সাথে নিয়ে আসব। তাছাড়া শিলার বাবা কিভাবে মারা গেলো আর শিলা চলে আসার পর পরবর্তীতে কি হলো এটাও তো জানতে হবে। আজ রাতেই শিলার সাথে কথা বলব।

রাতে শুয়ে আছি। তখন শিলাকে এই ব্যাপারে জানানোর কথা ভাবলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। শিলাকে আমি বললাম

আমিঃ আচ্ছা শিলা তোমার বাবাতো মারা গেছেন তুমি কি তোমার মায়ের খোজ নিয়েছিলে?

শিলাঃ তাইতো মায়ের খোজ তো নেওয়া হয়নি। জানিনা মা কি অবস্থায় আছে। তোমাকে ফিরে পাওয়ার খুশিতে মায়ের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?

আমিঃ কি কাজ?

শিলাঃ চলোনা একবার রাজশাহী থেকে ঘুরে আসি? মায়ের জন্য এখন মনটা কেমন করছে। জানিনা মা কি অবস্থায় আছে। বাবার মারা যাওয়া ১ বছর কাছিয়ে এলো। মাকে দেখার খুব ইচ্ছা করছে।

আমিঃ আমিও এটাই ভাবছিলাম। আচ্ছা চলো অফিস থেকে ৭ দিনের ছুটি নিয়ে সেই শহরটা থেকে ঘুরে আসি। আর তোমার মাকে নিয়ে চলে আসবো। আমার সংসারটা আবার আগের মতো করেই সাজিয়ে নিবো।

শিলাঃ হুম। আচ্ছা আদিবার কাছ থেকে মায়ের খবর পাওয়া যাবেনা?

আমিঃ আদিবারা তো ২ বছর আগে পাবনা শিফট করেছে। তারা হয়তো বলতে পারবেনা। আর জানার দরকার নেই। আমরা পরশু দিনই ঘুরে আসি কেমন?

শিলাঃ হুম। আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো। কালকে আমি সিফাত ভাইকে সব দায়িত্ব দিয়ে ৭ দিনের ব্রেক নিব।

আমিঃ আচ্ছা

আমার রাস্তাটা আরও সহজ হলো। এবার আমি সবটা জানতে পারব। জানা খুব বেশি দরকারি না হলেও শিলা তার জীবনে কি কি সহ্য করেছে এটা আমাকে জানতেই হবে৷

পরেরদিন অফিসের দায়িত্ব সিফাত ভাইকে বুঝিয়ে দিলো শিলা। তারপর আমি সেই রাতেরই বাসের টিকিট কেটে নিয়ে এলাম। অফিস থেকে ফিরে রফিক ভাইকে সবটা বলে রিফাতকে নিয়ে রওনা দিলাম। রাতেই যাচ্ছি কারণ সকাল হতে হতে রাজশাহী পৌছে যাবো।

সকালে চোখ খুলতে দেখি আমরা এখন ইশ্বরদিতে আছি। তার মানে রাজশাহী পৌছাতে আর ৩০-৪৫ মিনিট লাগবে।

অবশেষে ৬ বছর পর রাজশাহীতে পাঁ দিলো শিলা। আমার ১ বছর মতো হবে। আমাদের ভদ্রা বাস কাউন্টারে নামিয়ে দিলো। ওখান থেকে রিকশা নিয়ে শিলাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। পৌছাতে আরও ২০ মিনিট লাগলো।

সেখানে পৌছে মেইন গেটের সামনে দাঁড়ালাম। দারোয়ান আটকালেও যখন শিলা তার পরিচয় দিলো তখন যেতে দিলো।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বেল বাজাতে গিয়ে শিলার হাঁত কাঁপছে। তবুও কাঁপা কাঁপা হাতে শিলা বেল বাজালো। একটু পর তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিলো। শিলাকে দেখেই কাজের মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো

মেয়েটাঃ আপা মনি আপনে? এতোদিন পর আমাগো কথা মনে পড়লো?

শিলাঃ কি করবো বলো? আমার তো আর কোনো রাস্তা ছিলোনা। আচ্ছা মা কোথায়?

মেয়েটাঃ আপনে বসেন আমি খালাজানরে ডাইকা আনতাছি।

কাজের মেয়েটা দৌড়ে উপরে চলে গেলো। শিলা রিফাতকে কোলে নিয়ে আছে আর হাতে হাত ঘসছে৷ একটু পর কাজের মেয়েটা আসলো। তবে একা না আমার শাশুড়ীকে নিয়ে আসলো তাও আবার চোখ ধরে।

একটু পর মেয়েটা তার চোখ ছেড়ে দিলো। তবে তাকে দেখার পর আঁতকে উঠলাম। শিলাতো দেখেই কান্না করে দিয়েছে। আর আমার শাশুড়ী উনি পাথরের মতো হয়ে গেছে। শিলা দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনেই চিৎকার করে কান্না করছে। আমার শাশুড়ীর অবস্থা দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো।
প্রানবন্ত হাসিখুশি একটা মানুষ। তবে এখন দেখি চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। চোখ দুটোও যেনো ভিতরে ঢুকে গেছে। শরীর স্বাস্থ্য একেবারে খারাপ হয়ে গেছে। দুজনে কান্না থামালো। তারপর শাশুড়ী রিফাতকে বুকে জড়িয়ে নিলো। একটু পর শিলা জিজ্ঞেস করলো

শিলাঃ মা এই কি অবস্থা করেছো নিজের? একটুও যত্ন নাওনি।

শাশুড়ীঃ মারে কার জন্য যত্ন নিবো বল? তুই চলে যাবার পর সব কিছু উলট পালট হয়ে গিয়েছিলো৷ প্রত্যেকটা দিন হাজার কষ্টে পার করেছি। আর যেই মানুষটা তার স্বার্থের জন্য তোর সুখ কেড়ে নিয়েছিলো সে নিজেও সুখি হতে পারেনি রে মা।

শিলাঃ মা এখন বাদ দাও। পরে সব খুলে বলবে। এখন চলো তোমার কোলে মাথা রেখে তোমার সাথে অনেক কথা বলব।

এরপর থেকে বাড়িতে যেনো একটু সুখ আসলো। এভাবে ২ দিন পার হলো। আজকে রাতে খাওয়ার পর রিফাতকে ঘুম পাড়িয়ে শিলা আমাকে নিয়ে শাশুড়ীর কাছে গেলো। তারপর সব ঘটনা জানতে চাইলো। শাশুড়ীও এক এক করে সব বলতে লাগলো।

তবে তাদের করুন পরিণতির কথা শুনে ভিতরটা কেঁপে উঠলো। সত্যি যে কারও সুখ কেড়ে নিলে এতোটা কষ্ট পেতে হয় তা না বললে জানতে পারতাম না। আমার শাশুড়ী যা বললেন……………….

চলবে……………..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ