#আস্থা
পর্ব ২
Farzana Akter Mithila
এই বলেই আইরা রুম থেকে বেড়িয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল
আইরা নিচে এলো
নিলাঃ এইতো তুমি চলে এসেছো আমি যাচ্ছিলাম তোমাকে ডাকতে
আইরাঃ কেন ভাবিপু
নিলাঃ আম্মু তোমাদের জন্য রান্না করছে গরম গরম খাওয়ার জন্য ডাকতে বলল
আইরাঃ এই গরমের মধ্যে আম্মুর কিচেন এ যাওয়ার কি দরকার ছিল
নিলাঃ আমাদের এইখানে তো সব সময় এমন গরম থাকে
আইরাঃ হুম,নুহাস কোথায় ওকে তো দেখলাম
না
নিলাঃ ও ঘুমিয়ে পড়ছে একটু অসুস্থ
আইরাঃ ওহ।রাইদার খিদে পেয়েছে ওর জন্য একটু খাবার এনে দিবা
নিলাঃ হুম আনছি তুমি বস
নিলা উঠতে গেলেই মিতু এসে বলে ভাবি রাইদা কে আমার কাছে দিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি
আইরাঃ ও কিন্তু খুব দুষ্ট খেতে চায়না জোর করে খাওয়াতে হয় পারবে তো
মিতুঃ পারব ভাবি দাও
মিতু রাইদা কে নিয়ে তার রুমে গেল খাওয়াতে
নিলা মিতুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল মেয়েটা এত বাচ্চা ভালোবাসে কিন্তু আল্লাহ ওকে একটা বাচ্চা দেইনা
আইরাঃ প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেইনা,যে যা করে তার ফল সে পাই কিন্তু আমরা হয়তো বুজতে পারিনা,ও আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিল আল্লাহ ওর থেকে কেড়ে নিয়েছে
আইরা আনমনে বলল
আম্মুঃ মারে জানি সব কিছু আগের মতো করা সম্ভব না কিন্তু আমার তো ইচ্ছা হয় তোদের নিয়ে থাকতে
আইরাঃ তোমার জন্য তো এসেছি আম্মু
আম্মুঃ আর যাবিনা তো
আইরাঃ ফিরে তো যেতেই হবে
আম্মুঃ কেন যেতে হবে?? একবারে কি চলে আসা যায়না
আইরাঃ না আম্মু কিভাবে আসব বল? তোমার ছেলের জব ওখানে আমিও জব করি ওখানে
আম্মুঃ তোর আব্বুর কম আছে? তোরা সারাজীবন বসে খেতে পারবি
আইরাঃ এটা হয়না
(তুমি কেন বোঝনা আম্মু আমি কি করে থাকব?? ১০ বছর পর ও ওকে দেখে ক্ষতটা জেগে উঠেছে সহ্য করতে পারছিলাম না বলেই তো বিদেশ এ পাড়ি দিয়েছিলাম তবুও পারিনি তাকে ভুলতে)
আম্মুঃ যা খুশি কর
জানি আম্মু তুমি কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু আমার যে কিছু করার নেই আমি চাইলেও পারবনা তোমাদের সাথে থাকতে আমার অতীত আজও আমার পিছু ছাড়েনি
মনে মনে বলল আইরা
আম্মুঃ নিলা সবাইকে ডাক দাও রাতের খাবার খাওয়ার জন্য
নিলাঃ আচ্ছা
আম্মুঃ রহিমা আমার সাথে কিচেনে আয় খাবার গুলো নিয়ে আসবি টেবিলে
রহিমাঃ আপা আপনি যান আমি আইতাসি
আম্মুঃআচ্ছা তারাতারি আই
রহিমাঃ আইচ্ছা
রহিমাঃ আপনারে আমি কি কইয়া ডাকমু??মেডাম??
আইরাঃ কেন ভাবিপু,মিতু কে কি বল
রহিমাঃ বড় আম্মা আর ছোট আম্মা কই
আইরাঃ তাহলে আমারে মেজো আম্মা বলবা
রহিমাঃ আপনি কিছু মনে করবেন না তো
আইরাঃ না
রহিমাঃ আইচ্চা মেজো আপা আমি এহন যায়
আইরাঃ হুম যাও
আইরাঃ রায়েদ এখনো নিচে এলে না
রায়েদঃ খুব টায়ার্ড লাগছে
আইরাঃ কফি বানায় দিবো?
রায়েদঃ না তুমিও তো জার্নি করে এসেছো তোমার ও খারাপ লাগছে
আইরাঃ না আমার খারাপ লাগছে না আব্বু আম্মুকে দেখে সব খারাপ লাগা চলে গেছে
রায়েদঃ হুম
আইরাঃ নিচে চল আম্মু রান্না করছে নিজ হাতে
রায়েদঃ যাক ১০ বছর পর মন ভরে খেতে পারব
আইরাঃ এতদিন কি মন ভরতো না??
রায়েদঃ তোমার হাতের রান্না খেয়ে মন ভরে??
আইরাঃ খাইতে কেন নিজে রান্না করে খেতে
রায়েদঃ নিজে রান্না করলে তো খেতাম মন ভরে সময় পেতাম না তাই
আইরাঃ তাই নাকি
রায়েদঃ হুহ তাই চল নিচে যাই
আইরাঃ চল
রায়েদ আর আইরা নিচে গিয়ে দেখে সবাই টেবিলে বসে আছে
আব্বুঃ তারাতাড়ি আয়, খুব খিদে পেয়েছে
আইরাঃ আব্বু তুমি খেয়ে নিতে
আব্বুঃ তোর আম্মু এখনো কাউকে খেতে দেইনি
আইরাঃ কেন আম্মু
আম্মুঃ তোরা টেবিলে ছিলিনা বলে এখন এসেছিস এখন দিচ্ছি
আইরাঃ দাও আমি সবাইকে সার্ভ করি
আম্মুঃ না না তুই বস আমি দিচ্ছি
আইরাঃ না আম্মু তুমি বস আমি দিচ্ছি
আইরা আর কিছু বলতে না দিয়ে খাবার সার্ভ করা শুরু করল
আজিজ আহমেদ (আইরার শশুর) আর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল
কত কষ্ট লুকিয়ে মেয়েটা হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছে
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল
আব্বুঃ এই অসময়ে কে এলো
রিয়াদঃ আমি দেখছি আব্বু
আব্বুঃ আচ্ছা যা।তোমরা খাওয়া শুরু কর
আম্মুঃ আইরা বস এখানে আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি
রায়েদঃ এখন আর আমার কোন মূল্য নাই তাই না সব আদর ও পাবে
আম্মুঃ হ্যা ও পাবে
বলে আইরার মুখে খাবার দিলো
আইরা পরম যত্নে খাবার খাচ্ছে আর তার নিজের মায়ের কথা ভাবছে
১১ বছর আগে তার মামনি এইভাবে খাইয়ে দিত
আব্বুঃ রিয়াদ কে এসেছে
রিয়াদ কিছু বলল না চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল
আম্নুঃ হুট করে চলে গেল কেন ও
আব্বু পিছনে তাকাতেই দেখে মিতুর আব্বু আম্মু এসেছে তার হাসি মুখে রাগ ভেসে উঠল
আইরা ওদের কে দেখতেই ছুটে উপরে চলে গেল
আব্বুঃ তোমরা এখন কেন এসেছো
মিতুর আব্বু ঃ মেয়ের বাসায় এসেছি মেয়েকে দেখতে
আব্বুঃ মিতুউউ
মিতুঃ আব্বু আ আ আসলে আসলে
আম্মুঃ কি আসলে ওরা কেন এসেছে??
মিতুঃ আসলে ওরা যখন জানতে পারে রায়েদ ভাইয়ারা এসেছি তখন থেকে আসতে চেয়েছি তাই আসতে বলছিলাম
আব্বুঃ তোমাদের জন্য মেয়েটা কিছু না খেয়েই চলে গেল
রায়েদঃ মিতু আর কত কষ্ট দিতে চাও আইরাকে?? মেয়েটাকে কত কষ্ট করে বুজিয়ে এনেছিলাম বাংলাদেশ কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা।
এই বলে রায়েদ উপরে চলে গেল
রায়ান রাগে কটমট করতে করতে নিজের রুমে চলে যায়
আম্মুঃ মিতু এবার খুশি তো তুই??
আব্বুঃ কেন এসেছো তোমরা আর কি চাও,??
মিতুর আব্বু ঃ আপা আমি বুঝতে পারিনি আমরা আসলে এমন হবে
আম্মুঃ নিলা আমি উপরে যাচ্ছি তোমাদের খাওয়া হলে সব গুছিয়ে রাখতে বল রহিমাকে
নিলাঃ আমার খিদে নেই আম্মু খাবনা
মিসেস আহমেদ কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলেন
নিলা বসে আছে
আব্বুঃ আমার ও খিদে নেই বড় বউমা তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়
নিলাঃ আচ্ছা আব্বু
অন্য দিকে আইরা রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে রায়েদ রুমে এসে দেখে ফ্লোরে বসে হাটুর মধ্যে মাথা গুজে কান্না করছে আইরা
রায়েদ আইরার পাশে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখতেই আইরা রায়েদ কে জড়িয়ে ধরে
রায়েদঃ আইরা শান্ত হও
আইরা কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে
রাইদাঃ পাপা মাম্মা কাদতে তেন দাদান তি মাম্মালে বতা দেতে
রায়েদঃ না মা মাম্মাকে ভুত ভয় দিয়েছে তাই
রাইদাঃ মাম্মা তুমি আমাল কাতে আত ভুত কে আমি তালিয়ে দেব
রায়েদঃ আইরা কান্না কর না রাইদা আছে
আইরা কান্না থামাতে চায় কিন্তু হেচকি থামছেনা
রায়েদ রুম লক করে আইরার কাছে এসে দেখে আইরা একদম চুপ হয়ে গেছে
রায়েদঃ আইরা উপরে গিয়ে শুয়ে পড়
আইরাঃ রায়েদ তুমি তো বলেছিলে ওরা আসবেনা তবে কেন এসেছে
রায়েদঃ আমি জানিনা
আইরাঃ আমার জন্য টিকিট এর ব্যবস্থা কর আমি চলে যাব
রায়েদঃ আজি তো আসলাম আইরা
আইরাঃ তুমি থাকো আমি তোমাকে যেতে বলছিনা
রায়েদঃ আইরা
আইরাঃ আমি পারবনা আমার পরিবারের খুনিকে চোখের সামনে দেখতে
রায়েদঃ ওরা চলে যাবে তো
আইরাঃ যাবে আবার আসবে আমার মেয়েকেও কেড়ে নিবে না না আমি এটা হতে দিবনা
আমি চলে যাব
রায়েদঃ শান্ত হও আইরা ওরা আর কিছু করবেনা
আইরা কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পড়ল
রায়েদ ও পাশে গিয়ে শুয়ে আইরাকে বুকের উপর শোয়াল
আইরা রায়েদ এর বুকে শুয়ে অতিত এ ডুব দিল
চলবে।।