আশিকি Part-22+23

0
2050

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_22_23

সকাল আটটা থেকেই সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে শপিং মলে যাওয়ার জন্য। মোটামুটি সব ব্যবস্থা শেষ এখন শুধু বিয়ের কিছু শপিং বাকি। তাই সবাই পাশের মলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এখানে আমাল আর আবিদের মাথায় চলছে অন্য কিছু। নিজেদের প্লান এক্সিকিউট করবে ওরা মলে।

সবাইকে মলে যাওয়ার জন্য আমাল ওদের পার্সোনাল গাড়ি গুলো আরেন্জ করে দিয়েছে যেন যাতায়াতের কোন অসুবিধা না হয় স্পেশালি সানার।

সবাই গাড়ি করে মলে বেড়িয়ে গিয়েছে এখন শুধু সানাহ আর দিয়া বাকি।

সানাহ আর দিয়া হোটেলের বাইরে এসে দেখে আমাল গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখছে আর আবিদ গাড়ির রুফ টপে বসে গেম খেলছে ফোনে।

সানাহকে আসতে দেখে আমাল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,

আমালঃ সবাই আগেই বেরিয়ে গিয়েছে তাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ( অসহায় ভাবে)

আমালের কথা শুনে আবিদ তাকিয়ে দেখলো সানাহ আর দিয়া চলে এসেছে। তাই ও রুফ টপ থেকে নেমে বলে,,,

আবিদঃ চলো সানাহ দিয়া আমরা তোমাদের‌ই অপেক্ষা করছিলাম।

সানাহঃ নো থ্যাংকস আমরা একা যেতে পারবো হেল্প লাগবে না।

আবিদঃ সে কি তুমি না আসলে তো সব ভেস্তে যাবে। এতো কষ্ট করে প্লানিং করলাম সেটার কি হবে, ( মনে মনে )

আবিদ দিয়াকে ইশারা করে বলল সানাহকে রাজি করাতে।

দিয়াঃ উফফ দি তুই কি এখানে কিছু চিনিস নাকি আন্দাজে কোন মলে যাবো আমরা। তাছাড়া একা গেলে সবাই কি ভাববে। আর আমি আবিদকে ছাড়া যাবো না সো নো ড্রামা চল।

দিয়া গিয়ে গাড়িতে বসে পরলো পেছনের সিটে।সানাহ আর কোন উপায় না পেয়ে দিয়ার সাথে বসে পরলো।

আবিদ আমাল কে চোখ মারলো আর অল দ্যা বেস্ট বলল,, আমাল আর আর আবিদ দু’জনেই গাড়ির সামনের সিটে বসে পরলো। আমাল ড্রাইভ করছে আর আবিদ ওর পাশে বসে সানাহ আর দিয়ার সাথে কথা বলছে।

দিয়াঃ তোমরা তিন জন এক সাথে এক ক্লাসে পড়তে তাইনা,,,

আবিদঃ ইয়েস দিয়া বেবি,,, আমাল আর আমি ছোট থেকেই এক সাথে আর সানাহ কলেজে জয়েন করেছে আমাদের তাইনা সানাহ?

সানাহঃ হুম।

দিয়াঃ কিন্তু আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না,,

আবিদঃ কি কথা দিয়া বেবি,,?

দিয়াঃ এটাই যে সানাহ দি আর আমি সেম এজের আর তোমরা দুজন আমাদের বড় তাহলে তোমরা আমাদের সাথে সেম ক্লাসে কিভাবে??( কনফিউজড হয়ে)

দিয়ার কথায় আবিদ আর আমালের চেহারার রং উড়ে যায়। আর সানাহ তো পারছেই না নিজের হাসি আটকাতে।

আমাল আর আবিদ একে অপরের দিকে অসহায় ভাবে তাকালো আর দিয়া কনফিউজড হয়ে ওদের তিন জনের দিকে তাকালো।

সানাহ এবার না পেরে জোরেই হেসে দিল তারপর বলল,,,

সানাহঃ আমি তোকে বলছি ( হাসতে হাসতে) আসলে ওরা দুই বছর এক‌ই ক্লাসে থেকেছে তাই আমাদের সেম ক্লাস ( হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে)

সানার কথায় আবিদের মুখ চুপসে গেল। বেচারার গার্লফ্রেন্ড এর সামনে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেছে। আমাল ও হেসে দিল আবিদের ফেস দেখে। আর দিয়া এখনো হা হয়ে আছে।

দিয়াঃ ছিহহহ আবিদ তুমি ডাব্বা মেরেছো তাও দুই দুই বার।

আবিদঃ বেবি আসলে আমার দোষ নেই সব আমালের দোষ,,, ( আমালকে দেখিয়ে)

আমালঃ হোয়াটটট আমার দোষ কিভাবে,,, আবিদের বাচ্চা মিথ্যা বলে আমাকে ফাসাবি না।

আবিদঃ তুই মিথ্যা বলবি না। আসলে ক্লাস এইটে একটা ভাব সম্প্রসারণ পরেছিলাম দিয়া বেবি। ” সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে ” আমারো সেম অবস্থা হয়েছে আমালের চক্করে পরে লেখা পড়া সব লাটে উঠে গিয়েছিল। ( ইমোশনাল হওয়ার এক্টিং করে)

আমালঃ হ্যাঁ এখন সব আমালের দোষ। তোকে আমি প্রত্যেক বার বলতাম আবিদ বাসা থেকে পড়ে আসিস কিন্তু তুই জীবনে ব‌ই খুলেও দেখতি না।

আবিদঃ হ্যাঁ আর নিজে কত ব‌ইয়ের সাগরে ডুবকি দিয়ে থাকতি। এক দিন‌ও ক্লাসে পড়া পারতি না।

আমালঃ আর তুই এক দিন‌ও ক্লাসে হোম‌ওয়ার্ক নিয়ে যেতি না আমি তোর হোম‌ওয়ার্ক করে দিতাম ক্লাসে বসে।

আবিদঃ তাও তো একদিন হোম‌ওয়ার্ক দেখাতে পারি নি মিসকে তোর জন্য। কারন মিস এসেই আমাদের ক্লাস থেকে বের করে দিত তোর দুষ্টুমির জন্য।

আমালঃ আর তুই….

দুই বন্ধু ড্রাইভ করছে আর ঝগড়া করছে। ওদের ঝগড়া দেখে দিয়া আর সানাহ কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে। দোষ দুজনের‌ই তাও নিজেদের দোষ স্বীকার করছে না বরং একে অপরের ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছে।

সানাহ এবার রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে জোরে চেঁচিয়ে উঠে,,,

সানাহঃ জাস্টটটট স্টপপপপ ইউ বোথ্,,,,,

সাথে সাথে আমাল আর আবিদ চুপ করে যায়। দিয়া দু হাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরে।

সানাহঃ আর একটা কথা কেউ বলবে না চুপচাপ ড্রাইভিংয়ে কনসন্ট্রেট করো। ( রেগে)

আর একটা কথা বলার সাহস ও কেউ করে নি। আমাল আর আবিদ দু’জনেই চোখে চোখে ঝগড়া করছে।

মলের সামনেই পার্কিংয়ে গাড়ি থামালো আমাল। চারো জন নেমে আসে গাড়ি থেকে। কিছু টা দূরেই তিনজন বখাটে টাইপ ছেলে বসে আছে।
দিয়া আর সানাহর দিকে বাজে ভাবে তাকাচ্ছে তারা।

আমাল ব্যাপার টা নোটিস করে আবিদের দিকে রাগী ফেস করে তাকালো। আবিদ আমালকে ইশারায় বলল ” টেক ইট ইজি ”

আমাল আর আবিদ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলছে। দিয়া আর সানাহ ওদের অপেক্ষা না করেই মলের দিকে চলে যায়।

ছেলে গুলোর মধ্যে একজন ওদের দেখে শীষ বাজাচ্ছে। সানার রাগ লাগছে তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে দিয়ার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায়।

ছেলে গুলোর মধ্যে একজন এসে সানার সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকিয়ে বলে,,,

১ম ছেলেঃ এতো ভাব কিসের ম্যাডাম আমাদের ও একটু সময় দেন। ( চোখ মেরে)

সানাহঃ রিডিউকিলাস,,,

সানাহ অন্য দিক দিয়ে যেতে নিলে ছেলেটি সানার হাত ধরে ফেলে এতে সানাহ রেগে ছেলেটির গালে চর মেরে বসে।

সানাহঃ হাও ডেয়র ইউউ স্টুপিড।

ছেলেটিকে থাপ্পড় দিতেই বাকি গুলো এগিয়ে আসে ওদের দিকে। ছেলেটি রেগে সানার দিকে হাত বাড়াতেই পেছন থেকে আমাল ছেলেটির হাত ধরে ফেলে।

আমাল রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে।

১ম ছেলেঃ দেখ এটা আমাদের পার্সোনাল ইশু নাক গলাস না।

আমালঃ আমার জিনিসের দিকে চোখ দিলে আমি নাক গলাবো না বরং পা উঠাবো।

কথাটা বলেই আমাল ছেলেটিকে কিক করে দেয় সাথে সাথে ছেলেটি দূরে ছিটকে পরে।

ছেলেটি নিজের বাকি বন্ধুদের ডেকে বলল,,,

>> ওই দাঁড়িয়ে আছিস কেন হিট হিম,,,

সব গুলো ছেলে আমালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমাল একেকটাকে টাইট দিচ্ছে। সানাহ আর দিয়া ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সানাহ আমালকে থামাতে বলছে তাও আমাল থামছে না।

আবিদ গাড়ির রুফ টপে বসে শুধু দেখছে যেন সামনে মুভি চলছে।

দিয়াঃ আবিদ তুমি ওখানে বসে আছো কেন আমালের হেল্প করো,,,

আবিদঃ টেক ইট ইজি দিয়া বেবি। আমি ওখানে গিয়ে কি করবো আমাল একাই একশ তুমি শুধু ইন্জয় করো।

দিয়াঃ সিরিয়াসলি কেমন বন্ধু তুমি নিজের বন্ধুকে বিপদে দেখেও বলছো টেক ইট ইজি ইন্জয় করো,,,।

আবিদঃ তুমি বুঝবানা তাই চুপ থাকো।

দিয়াঃ তোমাকে আমি পরে দেখছি। চুপচাপ জিজুর হেল্প করো।

আবিদ দিয়ার কোন কথাই কানে নিচ্ছে না। ও নিজের মত করে বসে ফাইটিং দেখছে।

তিন জন ছেলের সাথে পেরে উঠছে না আমাল তাও নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে। ইচ্ছা মত ফিটিং দিচ্ছে তিনটাকে ও।

হঠাৎ দুই জন ছেলে আবিদের সামনে আসে,,,

১ম ছেলেঃ স্যরি বস লেট হয়ে গেছে,,,

আবিদঃ তোমরা কারা?

২য় ছেলেঃ আপনি ফোন করে বলেছিলেন ফাইটিং এর এক্টিং করতে আপনার বন্ধুর সাথে।

ছেলেটির কথা শুনে আবিদ যেন আকাশ থেকে পরল। সাথে সাথে নেমে দাঁড়ায় ও গাড়ির রুফ টপ থেকে।

আবিদঃ তাহলে ওরা কারা যারা ফাইট করছে আমালের সাথে,, ( শকড্ হয়ে ছেলে গুলো কে ইশারা করে)

১ম ছেলেঃ ওদের চিনি না আমরা বস,,,

আবিদঃ তার মানে ওরা আসল গুন্ডা।( শক্ড হয়ে,) আমাল আসল গুন্ডাদের সাথে ফাইট করছে ওহ নোও,,, এতো বড় ব্লান্ডার কি করে হলো ড্যাম ইটট।

আবিদ দৌঁড়ে আমালের কাছে যায়। আমালের সাথে মিলে ছেলে গুলো কে পিটাচ্ছে ওরা।

তিনটা ছেলের মধ্যে একজন একটা লোহার রড নিয়ে এগিয়ে আসে। আমাল কিছু বুঝে ওঠার আগেই রড দিয়ে ছেলেটি আমালের মাথায় মারে।

সব কিছু যেন পস্‌ড হয়ে গেছে। আমালের মাথায় আঘাত লাগতেই ও লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।
সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। আবিদ ও থমকে গেছে শরীর চলছে না ওর।

সানাহঃ আআআ আমালল ( চিৎকার করে)।

দিয়াঃ জিজুউউ

সানাহ আর দিয়া দৌঁড়ে আমালের কাছে আসে। আবিদ রাগে রড টা তুলে সেটা দিয়ে ছেলে গুলো কে মারতে শুরু করে।

পুলিশ এসে আবিদকে থামায় ( অ্যাজ ইউজিয়াল পুলিশের এট্রি লেট ?)।

আবিদ রডটা ফেলে আমালের কাছে যায়। সানাহ আমালের মাথা নিজের কোলে রেখে ওকে ডাকছে তাও আমাল রেসপন্স করছে না। সানার জামা ভিজে যাচ্ছে আমালের রক্তে।

আমালকে এভাবে দেখে সানাহর মনে হচ্ছে ওর হৃদয় কে কেউ ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে। কাঁদছে সানাহ আজ প্রচুর কাঁদছে কিন্তু ওর চিৎকার হয়তো আমালের কানে যাচ্ছে না।

#Part_23

❤❤ In Hospital ❤❤

আই সি ইউ এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সানাহ আবিদ আর দিয়া। এক কোনে চুপটি করে বসে আছে সানাহ। সব কিছু যেন থমকে গেছে ওর কাছে। একদম নির্জীব পুতুলের মত বসে আছে ও। চোখের পানি শুধু চোখ থেকে গাল বেয়ে নামছে। সানার জামায় আমালের রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।

অপর সাইডে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবিদ। কি থেকে কি হয়ে গেলো ভেবে উঠতে পারছে না ও। ও ভাবে নি এমনটা হবে ওতো আমাল আর সানাহকে এক করতে এরমটা করেছিল। আবিদ ভেবেছিল হয়তো নিজের জন্য আমালকে লড়তে দেখে সানার মন গলবে ওর প্রতি। কিন্তু সব কিছু এমন বিপরীতে চলে যাবে বুঝতে পারে নি ও।

আবিদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে দিয়া। কিছু বলার নেই ওর। কাকে রেখে কাকে সামলাবে বুঝতে পারছে ও। এক দিকে আমাল মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে তো অন্য দিকে সানাহ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে আর এই দিকে আবিদ ভেঙে পরছে।

আই সি ইউ এর লাইট অফ হতেই ওরা গেটের সামনে চলে আসে। ডক্টর বেরিয়ে আসে রুম থেকে।

সানাহঃ ড ডক্টর আ মার আমাল ঠিক আছে তো। আমি ওর সাথে দেখা করতে পারবো এখন। ( অস্থির হয়ে)

ডক্টর নিশ্চুপ।

আবিদঃ ড ডক্টর আপনি কিছু বলছেন না কেন আমাল ঠিক আছে তো? ( ঘাবড়ে গিয়ে) আমরা ওর সাথে দেখা করতে পারবো তো?

দিয়াঃ আপনি কিছু বলছেন না কেন কিছু তো বলেন আমাদের টেনশন হচ্ছে।

ডক্টরঃ আপনাদের মধ্যে সানাহ কে?

সানাহঃ আ আমি কেন?

ডক্টরঃ পেশেন্ট অজ্ঞান অবস্থায় বারবার আপনার নাম নিচ্ছিল আপনি পেশেন্ট এর কাছে যান। আর হ্যাঁ আওয়াজ করবেন না উনাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে।

সানাহঃ জি আমি ওকে ডিস্টার্ব করবো না।

সানাহ দৌঁড়ে কেবিনে ঢুকে পরলো। সানাহ যেতেই আবিদ ডক্টরকে জিজ্ঞেস করল।

আবিদঃ ডক্টর আমাল এখন বিপদ মুক্ত তো?

ডক্টরঃ জ্বী,, আঘাতটা তত বেশি জোরে লাগে নি যদি আরেকটু জোরে আঘাতটা লাগতো তাহলে হয়তো উনি কোমায় চলে যেতেন অথবা মৃত্যু। ইউ শুড্ থ্যাংকস টু আল্লাহ উনি বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

আবিদঃ হুম বাট অলসো থ্যাংকস টু ইউ ডক্টর।

ডক্টরঃ এটা আমার কর্তব্য ছিল। আর মি. আমালকে যত পারেন ট্রমা থেকে দূরে রাখবেন। উনাকে যথা সম্ভব খুশি রাখার চেষ্টা করবেন।

আবিদঃ ইয়েস ডক্টর আ’ল ট্রাই মাই বেস্ট।

ডক্টর চলে গেলেন। আবিদ রুমের গ্লাস দিয়ে আমালকে দেখে একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো।

দিয়াঃ সব ঠিক আছে আবিদ দেখ,,

আবিদঃ হুম দিয়া এখন সব ঠিক হয়ে যাবে আই হোপ।

দিয়াঃ আই অলসো হোপ সো।

আবিদ দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। ওর চোখ এখনো গ্লাসের ভিতর দিয়ে আমালের দিকেই আছে।

সানাহ ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমালের দিকে। আমালের মাথায় ব্যান্ডেজ করা আর মুখে মাস্ক লাগানো হাতে ক্যানোলা। নির্জীব হয়ে পরে আছে আমাল বেডে। আমালকে এভাবে দেখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে সানার। ইচ্ছে করছে আমালকে জড়িয়ে ধরতে ওর বুকে মাথা রেখে বলতে “ ভালোবাসি ” । কিন্তু সেটা সম্ভব না কারন এই মুহুর্তে ওর দূরে থাকাতেই আমালের সেফটি।

সানাহ গিয়ে আমালের বেডের পাশের সিটে বসে পরে। চোখ বন্ধ করে আছে আমাল। একদম নিষ্পাপ লাগছে এই মুহুর্তে আমালকে। কেউ বলতে পারবে না এই ছেলেটা এতো ফাজিল সানার পেছনে লেগে থাকে অল‌ওয়েজ।

সারাক্ষণ এর মাথায় আজগুবি প্লান ঘুরপাক খায়। কেউ বলবে না যে ছেলেটা এতো পাগল সানার জন্য। ওর #আশিকি সানার জন্য #Madness_Love।

সানাহ আমালের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভাবছে অতীতের কিছু ভেজা পাতার স্মৃতি। আমালের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সানাহ আজ দীর্ঘ দেড় বছর পর।

সানাহঃ আ’ম স্যরি আমাল আর এরকম করবো না প্রমিস। অভিমান করলেও রাগ করবো না কখনো, ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আই নো আমি বেশি বারাবারি করে ফেলেছি, কিন্তু এখন সব ভুল সুধরে নেব দেখো।

তোমার হয়ে থাকবো সারাজীবন শুধু তোমার। তুমি সব সময় বলতে “ সানাহ আমালের আর আমাল সানার ” আজ আমি বলছি “ সানাহ শুধু আমালের আর আমাল শুধু সানার ”।( কান্না জড়িত কন্ঠে)

প্লিজ চোখ খুলো দেখো তোমার সানাহ তোমাকে ডাকছে। তোমার এই চুপ্পি আমার সহ্য হচ্ছে না।

সানাহ আলতো করে আমালের বুকে মাথা রাখলো। ওর চোখের পানি আমালের বুকে গড়িয়ে পড়ছে। হয়তো এই পানি আমালের হৃদয় অবদিও যাচ্ছে যা শুধু আমাল অনুভব করতে পারছে চোখ বন্ধ অবস্থায় ও।

চোখ মিটমিট করে খুলছে আমাল। মাথায় ব্যাথা হচ্ছে প্রচন্ড চোখ ও ভারী ভারী লাগছে।

নিজের বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করলো আমাল। কারো চিরচেনা চুলের ঘ্রান পাচ্ছে ও ( ঘ্রান চুলের না শ্যাম্পুর হয় ?) আমাল চোখ বন্ধ অবস্থায় ই মুচকি হাসলো। ও ভালো করেই বুঝতে পারছে মানুষটি কে।

তাও নিজের উপর বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। আমাল ভালো করে তাকাতেই দেখলো সত্যিই এটা সানাহ। ওর বুকে মাথা রেখে আছে।

আমাল নিজের হাত উঠাতে নিলেই হাতে টান অনুভব করে সাথে সাথে “ আহ ” করে উঠে ও।

আমালের শব্দ পেয়ে সানাহ চমকে নিজের মাথা তুলল,,,

আমাল নিজের ব্যাথা ভুলে সানার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সানার চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে বেশি কান্না করায়।

আমালঃ সানাহ আর ইউ অল রাইট। তুমি কান্না করছো কেন কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? ওই ওই ছেলে গুলো কিছু করেছে? টেল মি সানাহ? ( চিন্তিত হয়ে)

সানাহ মুগ্ধ হয়ে আমালের কথা শুনছে। নিজের অবস্থা ভালো না অথচ ও সানার জন্য চিন্তা করছে। ভালোবাসার মানুষ হয়তো এমনি হয়।

সানাহকে চুপ থাকতে দেখে আমাল আবার বলতে শুরু করল,,

আমালঃ সানাহ তুমি কিছু বলছো না কেন?

সানাহ আমালের বুকে আলতো করে মাথা রেখে সেখানে চুমু খেয়ে বলল,,

সানাহঃ আই লাভ ইউ আমাল, আই লাভ ইউ আ্য লট,,,

আমাল কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ও সানার বিহেভিয়ারে টাস্কি খেয়ে গেছে। আদৌ এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন ও বুঝতে পারছে না।

আমালঃ আমাকে একটা চিমটি কাটবে সানাহ,,,( ঘোরের মধ্যে)

সানাহ আমালের কথায় মাথা তুলে ওর দিকে তাকালো।

সানাহঃ কি?

আমালঃ চিমটি,,

সানাহ বুঝতে পারছে যে আমালের এসব বিশ্বাস হচ্ছে না তাই ও দুষ্টুমি করে আমালের বুকে জোরে চিমটি কেটে দেয়,,

আমালঃ আউউউ এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে। ( ডলতে ডলতে)

সানাহঃ আজব! তুমি ই তো বললে,, ( চোখ ছোট ছোট করে)

আমালঃ তাই বলে এতো জোরে,,,

আবিদ আর দিয়া কেবিনে আসে। আবিদ আমালের বেডের অন্য সাইডে গিয়ে বসে।

আবিদঃ এখন কেমন লাগছে তোর।

আমালঃ মরতে মরতে বেঁচেছি কেমন লাগার কথা,,, ( মজা করে)

আবিদঃ তুই জীবনেও সুধরাবি না,,, তোকে সানাই লাইনে আনতে পারবে।

আমালঃ আর তোকে আমার শালিকা দিয়া,,, রাইট দিয়া?

দিয়াঃ এয়াহ রাইট জিজু

আমালঃ আমার জন্য আবার মাহি আর অনিলের বিয়ে থেমে গেল নাকি।

আবিদঃ ডোন্ট ওয়ারি আমি তাদের বলে দিয়েছি তুই এখন ঠিক আছিস তারা যেন ফাংশন কন্টিনিউ করে।

আমালঃ তাহলে তোদের যাওয়া দরকার স্পেশালি তোমাদের ( সানাহ আর দিয়া কে বলল)

সানাহঃ আমি কোথাও যাচ্ছি না তোমাকে রেখে,,,

দিয়াঃ আমিও ( সানার পাশে বসে)

আবিদঃ মি অলসো ( হেসে দিয়ে)

আমালঃ কিন্তু সানাহ মাহি তোমার ফ্রেন্ড আমার জন্য নিজের ফ্রেন্ড এর বিয়ে মিস করবে তুমি,,, ইউ শুড্ গো,,,

সানাহঃ তোমার মনে হয় তোমার থেকে বেশী ইম্পর্টেন্ট আমার কাছে বিয়ে আটেন্ট করা। এখন বেশি কথা না বলে রেস্ট নাও নাহলে আমি আবার ব্রেক‌আপ করে নিব বলে দিলাম,, ( রাগ দেখিয়ে)

আমালঃ এ না না প্লিজ একবার রাগ ভাঙাতে আমার দের বছরে কত কাঠ খোরা পোড়াতে হয়েছে আবার রাগ করলে হয়তো তোমাকে মানাতে মানাতে বিয়ের বয়স পাড় হয়ে যাবে।

আমালের কথায় দিয়া আর আবিদ হেসে দেয়। সানাহ চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে আমালের দিকে।

❤❤ After Two Day’s ❤❤

এখন আমাল মোটামুটি সুস্থ আছে। এই দুই দিনে আবিদ সানাহ আর দিয়া মিলে আমিলের অনেক খেয়াল রেখেছে। আজকে আমালকে হসপিটাল থেকে ডিস্টার্জ দেওয়া হবে।

সানাহ আর দিয়া কেবিনের বাইরে ডক্টরের সাথে কথা বলছে। আবিদ আমালকে রেডি হতে সাহায্য করছে।

আবিদঃ দেখলি আমার প্লান কিভাবে কাজ করেছে ( প্রাউড ফিল করে) সানাহ আর তোর মাঝের দুরত্ব এক দিনে শেষ।

আমালঃ হুম সেটা তো ঠিক বললি সব আমার সঙ্গতির ফল। আমার সাথে থেকে আমার মত মাস্টার মাইন্ড হয়ে গিয়েছিস। ( হেসে)

আবিদঃ হুম সেটা সত্য। কিন্তু এক জায়গায় একটা ঘাপলা করে ফেলেছি রে ( ভয়ে ভয়ে)

আমালঃ মানে?

আবিদঃ সেদিনের গুন্ডা গুলো আসল গুন্ডা ছিল ?। যাদের আমি ঠিক করেছিলাম তারা লেট হয়ে গিয়েছিল আসতে।

আবিদের কথায় আমাল রেগে ওর উপর বেড কুশন ছুরে মারে। আবিদ সেটা ক্যাচ করে সরে দাঁড়ায়।

আমালঃ আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল তোর প্লান তোর মত‌ই ফুটা হবে। ঘাপলা তো তোর রক্তের সাথে মিশে আছে।

আবিদঃ সেটা যাই হোক তোদের মিলাতে তো পেরেছি।

আমালঃ যদি মরে যেতাম তাহলে কি আমার ভূতের সাথে মিলাতি গাধা।

আবিদঃ তোর আমাকে থ্যাংকস বলার কথা তা না করে তুই আমাকে গাধা বলছিস,,

আমালঃ বেশ করেছি। তুই শুধু গাধা না আস্ত একটা স্টুপিড,,

হঠাৎ দরজার আওয়াজে সেখানে তাকালো ওরা দুজন। সানাহ দাঁড়িয়ে আছে হয়তো ওদের সব কথা শুনে ফেলেছে ও।

আবিদঃ লে হালুয়া,,, গেল প্লান ভেস্তে।

আবিদ আর আমাল নিজেদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আবার সানার দিকে তাকালো।

সানাহ কতটা রেগে আছে সেটা ওর চোখ দেখে বুঝতে পারছে ওরা।

আবিদঃ একচুয়ালি আমাকে হয়তো দিয়া ডাকছে তোমরা কন্টিনিউ করো আমি যাই,,,

আবিদ কেটে পরলো কেবিন থেকে।

আমালঃ আব্বে ওইই ক‌ই যাচ্ছিস আমাকে বিপদে রেখে,,,

আবিদঃ বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে ভাই,,,

আমালঃ আবিদদদদ,,,,

আবিদকে আর পায় কে ওতো ফুরর হয়ে গেছে।

আমাল সানার দিকে অসহায় ভাবে তাকালো আর সানাহ আমালের দিকে রাগি ফেস নিয়ে এগিয়ে আসছে।

আমালঃ স সান ব বেবি আমার কথাটা,,,

সানাহ আমালকে থাপ্পড় দেয়ার জন্য নিজের হাত উঠাতেই আমাল নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলল,,

কিন্তু নিজের গালে সানার হাতের থাপ্পড় চর বদলে নরম ঠোঁটের ছোঁয়া অনুভব করলো ও।

আমাল শকড্ হয়ে চোখ খুলে সানার দিকে তাকানো। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না সানাহ নিজ থেকে ওকে কিস করেছে তাও সব সত্য যেতেও।

সানাহ আমালের টাস্কি খাওয়া ফেস দেখে মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

সানাহঃ কান ধরেছি আর কখনো রাগ অভিমান কে জায়গা দিব না আমাদের মাঝে। তোমাকে হারিয়ে বেঁচে থাকার মত ক্ষমতা আমার নেই আমাল।

আমাল সানাহর কথায় মুচকি হেসে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

আমালঃ আর কখনো সে রকম ভুল করবো না সানাহ যাতে আমার উপর তোমার রাগ অভিমান হোক। আই প্রমিস তোমাকে কখনো হার্ট করবো না নেভার।

To be continued….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে