আশিকি Part-21

0
1986

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_21

নিজের পাশে হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেল আমাল। পাশে তাকাতেই দেখলো আবিদ‌ও ওর মত পকেটে হাত রেখে এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমাল আবিদকে দেখে খুশি হয় তার সাথে বিব্রত বোধ ও করে।

আমাল চলে যেতে নিলেই আবিদের কথায় থমকে যায়।

আবিদঃ কিছু কথা লুকানোর চেষ্টা করলেও লুকানো যায় না আমাল। এক ভাবে না এক ভাবে তা সামনে আসেই। ( এক‌ই ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে)

আবিদের কথায় আমাল আবার ঘুরে আবিদের দিকে ফিরল।

আবিদঃ আমার বিজনেস ক্রাইসিস এর দিকে যাচ্ছিল। এটা জানতে পেরেও নিজের বিজনেস প্রজেক্ট আমাকে কেন দিলি? এটা কি তোর বন্ধুত্ব নাকি দয়া? ( আমালের দিকে ঘুরে)

আমালঃ বন্ধুত্বে কখনো দয়া জিনিস টা থাকে না আবিদ.. থাকে তো শুধু ভালবাসা। কিন্তু আফসোস এবারো তুই আমাকে ভুল বুঝলি।

অনেক কষ্টে তোর আর সানার এড্রেস খুঁজে বের করি আমি। যখন জানতে পারি যে তোর বিজনেস এ লস হয়েছে আর তুই ক্রাইসিসে আছিস আমি ড্যাড কে বলে অনিলকে দিয়ে তোর সাথে ডিল করাই। আমি জানতাম যদি তুই বুঝতে পারিস এর পেছনে আমি তাহলে কখনোই ডিল সাইন করতি না। তাই অনিলের আড়ালে থেকে তোর হেল্প করেছি।

কিন্তু আমার বন্ধুত্বকে তুই দয়ার নাম দিবি আমি বুঝতে পারি নি।( মলিন হাসি দিয়ে)

আমাল ঘুরে চলে যেতে নিলে আবিদ ওর কাধ ধরে আটকিয়ে বলে।

আবিদঃ দেড় বছরে অনেক ম্যাচিউর হয়ে গিয়েছিস দেখছি। কিন্তু একটা কথা তুই ভুলে গেলি বন্ধুত্বে দূরত্ব আসলেও সেটা ক্ষনিকের জন্য। আমরা তো ছোট বেলার বন্ধু এতো সহজে কি দূরত্বের কাছে নিজেদের হেরে যেতে দিব বল?

এতো বছর পর দেখা হয়েছে একটু কি জড়িয়ে ধরবি না? ( আবেগী কন্ঠে)

আমাল আর কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরলো আবিদকে। এতো বছর পর নিজের বন্ধুকে পাশে পেয়েছে ইমোশনাল তো হবেই।

আমালঃ আই মিস ইউ এয়াররর,, আই মিস ইউ এভরি সেকেন্ড ইন মাই লাইফ।

আবিদঃ আমি যে তোকে কতটা মিস করেছি সেটা আমিই জানি,,, উইদ আউট ফ্রেন্ডশিপ উই আর নাথিং। ( চোখের পানি মুছে)

আমাল আবিদকে ছেড়ে বলতে শুরু করে,,,

আমালঃ আবার চলে যাবি না তো?

আবিদঃ সেই ভুল আর করবি না তো?

আমালঃ মরে গেলেও না,,,

আবিদঃ তাহলে আমিও মরার আগে তোর পিছ ছাড়বো না। ইভেন মরার পরেও না,,, ( দু’জন ই হেসে দেয়।)

আবিদঃ সানাহকে এখনো মানাতে পারিস নি তাইনা,,,

আমালঃ ইউ নো সানাহ কতটা জিদ্দি। বাট নো ওয়ারি এখন তুই আমার সাথে আছিস তাই সানাহ না মেনে যাবে কোথায়,,,

আবিদঃ তাহলে মিশন ” সানাহকে মানাও ” স্টার্ট।

আমালঃ ইয়াহহ,,, ( হাতে হাত রেখে)

দিয়াঃ আমাকে ছেড়েই মিশন শুরু করে দিলে এটা ঠিক না জিজু,,, ( আসতে আসতে)

আমালঃ আরেহ শালিকা থুক্কু ভাবি তোমাকে কিভাবে ভুলি বলো,,, তুমিতো আমার টু ইন ওয়ান ভাবি প্লাস শালী ( ফান করে)

দিয়াঃ এজন্যই আমাকে রেখে একা একা প্লান করছো। ( রাগ দেখিয়ে)

আবিদঃ দিয়া বেবি প্লিজ এবার তুমি রেগে যেও না নাহলে আমরা দুই বন্ধু মিলে সুইসাইড করবো তোমাদের দুই বোনের জন্য।

দিয়াঃ হুহ তুমি কথা বলবা না,,, ( ঝাড়ি দিয়ে)

আবিদঃ ওকে ( মুখে আঙ্গুল দিয়ে)

আমালঃ তো এখন স্টার্ট করি মিশন ” সানাহকে মানাও ”

দিয়াঃ ইয়াহহ মিশন স্টার্ট,,,

আবিদঃ ডান্,,

আমালঃ তাহলে এখন নিচে যাই নাহলে ম্যাডাম উপরে চলে আসবে তারপর মিশনের টায়টায় ফিস,,,

❤❤ In Hall ❤❤

সানাহঃ সবাই একে একে কোথায় গায়েব হয়ে গেল,,,

সানাহ ওদের আশেপাশে খুঁজছে আর নিজে নিজেই বলছে।

আমালঃ আমাকে খুজছো সান বেবি,,, ( সানার কানে ফিসফিসিয়ে)

সানাহ চমকে দূরে সরে দাঁড়ালো।

সানাহঃ তোমাকে কেন খুঁজবো আমি আবিদ আর দিয়া কে খুঁজছি,,,

আমালঃ সত্যি নাকি,,,

সানাহঃ ধুরর,,,

সানাহ আমালকে ক্রস করে চলে গেল ওখান থেকে। সানাহ এক কোনে একা দাঁড়িয়ে আছে। তখন‌ই আবিদ আসে ওর কাছে।

আবিদঃ আরে সানাহ তুমি এখানে একা কি করছো।

সানাহঃ এমনেই ভালো লাগছিল না তাই,, ( মন খারাপ করে)

আবিদঃ এবার তো ক্ষমা করে দাও সানাহ অনেক হয়েছে। এভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে নিজেও কষ্ট পাচ্ছো আর ওকেও কষ্ট দিচ্ছ।

আমি মানছি যে ও ভূল করেছে কিন্তু তার শাস্তি আমরা দুজন‌ই ওকে দিয়েছি। এখন আর শাস্তি দিও না প্লিজ ফরগিভ হিম। সব ভুলে চল নতুন করে আবার জীবনটা শুরু করি। আগের মত যেখানে আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে তোমার আর আমালের ভালোবাসা থাকবে।

সানাহ আবিদের কথা মন দিয়ে শুনে বলল,,,

সানাহঃ তুমি আমালের বন্ধু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড তাই হয়তো ওকে ক্ষমা করতে পেরেছো আবিদ। কিন্তু আমি পারছি না ওর কথায় অনেক হার্ট হয়েছি আমি।

ওকে ক্ষমা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর যেখানে ভালোবাসা আর কষ্টের কথা! আমি এখন আর আমালকে ভালোবাসি না ওর প্রতি কোন ফিলিংস অবশিষ্ট নেই আমার। তাই কষ্ট পাওয়ার কোন প্রশ্ন‌ই উঠে না। ওকে বলে দিও ও আমার থেকেও হাজার গুন বেশী ভালো মেয়ে ডিসার্ভ করে। আমাকে ভুলে যেতে বলো ওকে,,, ( ছলছল চোখে)

সানাহ কথা গুলো বলেই আবিদের সামনে থেকে চলে যায়। আড়াল থেকেই কথা গুলো শুনছিল আমাল। সানার প্রতিটা কথায় ওর হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হচ্ছিল। চোখের পা অটোমেটিকলি গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে। এতো বড় অপরাধ ও করেনি আমাল যার শাস্তি সানাহ ওকে এভাবে দিচ্ছে।

আবিদ আমালকে দেখে ওর কাছে এগিয়ে যায় আর আমাল আবিদকে থামিয়ে চলে যায়।

সানাহ নিজের চোখের পানি আটকাতে পারছে না। ও জানতো আমাল আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তাই ইচ্ছে করে আবিদকে ওসব কথা বলেছে ও। ওর ও যে কষ্ট হয় আমালকে ছাড়া। আমাল ওর এতো কাছে থেকেও দুরে ভাবতেই চোখ ভিজে যায় সানার। কিন্তু সানাহ কি করবে ওতো আমালের বলা কথা গুলো ভূলতে পারছে না। ওর‌ও ইচ্ছে হয় সব ভুলে জীবনটা নতুন করে শুরু করতে কিন্তু কোথাও একটা বাধা পরছে সানাহ।

সানাহ নিজের চোখ মুছে নিজেকে নরমাল করে নেয় কারন আশেপাশে অনেক মেহমান।

❤❤ After Some Time ❤❤

অন্ধকারে চারো পাশে কালার লাইট জ্বলছে আর লো মিউজিক বাজছে।

সানাহ আর দিয়া একদিকে দাঁড়িয়ে আছে আর আমাল আবিদ অপর দিকে। আমালের চেহারা পুরোই চুপসে আছে। চারো জনের মুড অফ। ওদের মেলানোর জন্য আবিদ আর দিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না।

হঠাৎ হলের মাঝ বরাবর লাইট জ্বলে উঠে আর অনয় ( অনিলের ভাই) মাইক নিয়ে বলতে শুরু করে,,,

অনয়ঃ হ্যালো এভরিওয়ান,,, আজকের ফাংশনে বোরিংনেস দূর করার জন্য একটা গেম হয়ে যাক।

সবাই শব্দ করে হ্যাঁ বলে।

অনয়ঃ তাহলে আমি আপনাদের গেম রুলস্ গুলো বলে দেই। আমরা চারো পাশে রাউন্ড করে লাইট দিব আর লাইটের আলো যার উপরে পরবে সে স্টেজে উঠে পারফর্ম করবে। সো ক্যান উই স্টার্ট?

লাইটের আলো রাউন্ড হয়ে ঘুরছে আর সেটা একটা ছেলের উপর থামলো। ছেলেটাকে নাচের টাস্ক দেওয়া হয়েছে তাই ও নাচ পারফর্ম করে।

একে একে অনেকেই পারফর্ম করেছে।এবার লাইটের আলো রাউন্ড হয়ে আবিদের উপর পরলো সাথে সাথে আবিদ সরে যায় আর আলো আমালের উপর পরে।

অনয়ঃ ওয়াও আমাল স্যার প্লিজ কাম টু দ্যা স্টেজ।

আমালঃ আমার ভালো লাগছে অনয় আমি খেলবো না।

অনয়ঃ এটা হয় না স্যার প্লিজ কাম।

আবিদঃ আবে জা এতো ভাও খাস না,,,

আবিদ ধাক্কিয়ে আমালকে স্টেজে উঠালো।

আবিদঃ আমাল গান গাইবে রাইট আমাল?

আমালঃ আবিদ আমি….

আবিদঃ নো মোর ওয়ার্ডস্,,, এটা সানাহকে ইম্প্রেস করার সুযোগ আমাল হাত ছাড়া করিস না। ( ফিসফিসিয়ে)

আমাল সানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সানাহ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

অয়ন একটা চেয়ার আর গিটার এনে আমালকে দিল। আমাল গিটারে ধুন্ দিয়ে চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করে,,,,

Feel the song with Armaan Malik ??

তেরে মেরে দারমিয়া হ্যায় বাতে আন কাহি
তু ওয়াহা হ্যায় ম্যায় ইয়াহা কিউ সাথ্ হাম নেহি

ফেসলে জো কিয়ে
ফাসলে হি মিলে

( আমাল ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানার দিকে,,, সানার চোখের কোনেও পানি)

রাহে জুদা কিউ হো গায়ি
না তু গালাত্ না ম্যায় সাহি

লে জা মুঝে সাথ্ তেরে
মুঝকো না রেহনা সাথ্ মেরে x2

লে জা মুঝে x2

( আমাল সানার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো মনে করছে আর সানাও আমালের কন্ঠে নিজের অতীতে হারিয়ে যাচ্ছে)

থোরি সি দুরিয়া হ্যায়
থোরি মাজবুরিয়া হ্যায়
লেকিন হ্যায় জানতা মেরা দিল্

হোওও ইক দিন তু আয়েগা
জাভ তু লট্ আয়েগা
তাভ ফির্ মুসকুরায়েগা মেরা দিল্

সোচ্ তা হু ইয়াহি
বেঠে বেএএএঠে ইউহি

রাহে জুদা কিউ হো গায়ি
না তু গালাত্ না ম্যায় সাহি

লে জা মুঝে সাথ্ তেরে
মুঝকো না রেহনা সাথ্ মেরে x2

লে জা মুঝে x2

সুন মেরে খোদা
বাস্ ইতনি সি মেরি দুয়া
লটা দে হাম সাফার মেরা
জায়ে গা কুছ নেহি তেরা
তেরে হি দারপে হু খাড়া
জায়ু তো জায়ু ম্যায় কাহা
তাকদির কো বাদাল মেরি
মুঝপে হোগা কারাম তেরা

গান শেষ হতেই সবাই তালি বাজাতে শুরু করে। আমাল গিটার রেখে নেমে আসে। এই গানটার মর্ম এই মুহুর্তে সানাহ আর আমাল ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। কারন এটা শুধু একটা গান না ওদের মনের বর্তমান অবস্হা যেটা আমাল সানাহকে বুঝাতে চেয়েছে। একটা সুযোগ যেটা যদি সানাহ দেয় তাহলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হবে সে আশা।

গানটার প্রতিটা লাইন হৃদয় কারার মত। আমাল আবিদের কাছে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই গেম শেষ হয় আর সবাই হোটেলে ব্যাক করে।

❤❤ In Hotel ❤❤

আমালঃ আর ইউ সিউর আবিদ এই প্লানটা কাজ করবে?

আবিদঃ হান্ড্রেট পার্সেন্ট দোস্ত। তুই ব্যাস একটু কেয়ার ফুল থাকবি। কালকে সবাই মার্কেটে যাবে শপিং করতে তখন‌ই প্লান এক্সিকিউট করবো।

আমালঃ সানাহ কে পাবার আমি সব প্রকার রিস্ক নিতে রাজি আবিদ।

To be continued….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে