আশিকি Part-01

0
4605

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_1

In Studio… Radio Star….

আসসালামু আলায়কুম and hello dear listener’s আপনারা শুনছেন রেডিও স্টার চলছে আপনাদের প্রিয় শো ” ভালোবাসার রংধনু ” আর আমি RJ সানাহ আছি আপনাদের সাথে To enjoy the beautiful rainy morning…

আজকের সকালটা শুরু হয়েছে বৃষ্টি দিয়ে। বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি, ভেজা রাস্তা, ঠান্ডা পরিবেশ হাতে এক কাপ ধোঁয়া উঠানো কফি আর রেডিওতে নিজের প্রিয় এফ এম।

তাই আজকের এই সকালটাকে আরো রোমাঞ্চকর বানানোর জন্য চলেন শুনে আসি…….
এই বৃষ্টি ভেজা সকালে একটা বৃষ্টি ভেজা গান,,,
Let’s feel the song,,,

কথাটা বলেই সানাহ গান প্লে করে দিলো,,,,

” বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন দে রোদেলা কিছু গল্প দে….”
” বাসবো ভালো কাছে আয়…ও জানে জা…..”

” বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন দে রোদেলা কিছু গল্প দে….”
” বাসবো ভালো কাছে আয়…ও জানে জা…..”

“থাকবো পাশে রাত দিন তোকে ছাড়া খুব কঠিন”
“থাকবো পাশে রাত দিন তোকে ছাড়া খুব কঠিন”
“আজ ইস্কে তোর কাটে না যে ঘোর.. কেন বল

চেয়ার থেকে উঠে কফির মগটা হাতে নিয়ে জানালার পাশে চলে আসে সানাহ। বাইরে থেকে বৃষ্টির ফোঁটা এসে ওর চেহারায় লাগছে। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোর স্পর্শ অনুভব করছে ও। বাইরের ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই কুকরিয়ে যাচ্ছে সানাহ। কফির মগটা রেলিং এ রেখে দু হাত দিয়ে নিজের বাহু জড়িয়ে ধরলো ও। ঠান্ডার কারনে গোলাপী ঠোঁট দুটো হালকা কাঁপছে,,, চোখের ঘন পাপড়ি গুলোকে বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে। বাতাসে গায়ের সাদা ওরনা ও অবাদ্ধ খোলা চুল গুলো এলো মেলো ভাবে উড়ছে। কানের ঝুমকা গুলো দোলছে। চেহারায় একটা মায়াবী ভাব ফুটে উঠছে ওর,,, এই মায়াবী চেহারাটাকে আরো মায়াবী করে তুলছে নাকের সাদা পাথরের নোস পিনটি। হাত বাড়িয়ে পানির ফোঁটা গুলো ছুইয়ে দিচ্ছে ও। মনের জানালায় বারবার অতীতের কেউ উকি মারছে। কিন্তু নাহ সানাহ নিজের মনের সব জানালা বন্ধ করে ফেলেছে।

চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও।

সানাহঃ নো সানাহ তুই উইক হতে পারিস না। ভূলে যা সব। ভুলে যা কখনো কেউ তোর হৃদয়ে বাস করতো। জাস্ট ফরগেট হিম।

এইদিকে,,,,

গাড়ী চলছে আপন গতিতে,,, বৃষ্টির পানি গাড়ির রুফটপ বেয়ে নিচে পরছে। ঠোঁটে বেবী স্মাইল নিয়ে রেডিও টা বন্ধ করে দিল আমাল খান।

আমালঃ একটু ওয়েইট করো মাই লাভ আমি আসছি তোমার কাছে। এতো দিনের অপেক্ষার প্রহর ফাইনালি শেষ হতে চলেছে। তোমাকে নিজের #আশিকি তে রাঙাতে তোমার আশিক আসছে। তুমি চাইলেও আমাকে ভুলতে পারবে না কারন এই আমাল তোমাকে তার #আশিকি ভূলতে দিবে না। তৈরী হয়ে নাও লাভ তোমার এই আশিকের লাভ টর্চার গুলো সহ্য করার জন্য। আ’ম কামিং ( বাকা হেসে গাড়ি ড্রাইভ করতে মন দিল আমাল।)

গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে গানের বাকি লাইন গুলো গাইতে শুরু করলো ও।

“রাখবো তোকে… যত্ন করে আর আদরে…”
“আর দেব দু চোখে ভরে…স্বপ্ন রঙ্গীন…”
“হো ওও ইচ্ছে হলে… কাউকে কিছু টি না বলে…”
“যাবো যে নিয়ে মেঘের কোলে…তোকে কোন দিন”
“থাকবো পাশে রাত দিন তোকে ছাড়া খুব কঠিন”
“থাকবো পাশে রাত দিন তোকে ছাড়া খুব কঠিন”
“আজ ইস্কে তোর কাটে না যে ঘোর.. কেন বল”
বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন দে রোদেলা কিছু গল্প দে….”
” বাসবো ভালো কাছে আয়…ও জানে জা…..”

এইদিকে,,,

ম্যাম আপনাকে ম্যানেজার স্যার ডাকছেন,,,( পিয়ন)

সানাহঃ আপনি যান আমি আসছি,,,

সব কিছু গুছিয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেল সানাহ।

সানাহঃ মে আই কাম ইন স্যার?? ?

ম্যানেজারঃ হ্যাঁ সানাহ কাম,,

সানাহঃ আপনি ডেকেছিলেন?? ( কেবিনে ঢুকে)

ম্যানেজারঃ সানাহ তুমি জানো আজকে আমাদের রেডিও স্টেশনের ওউনার আসছেন। তাই আমি চাই তুমি ওনাকে ওয়েলকাম করো।

সানাহঃ কিন্তু স্যার আমি কেন??

ম্যানেজার কিছু বলল না শুধু হালকা হাসলো।

ম্যানেজারঃ এখন যাও গিয়ে দেখ সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা। আমি আগেও বলেছিলাম স্যার ভূল একদম পছন্দ করে না। উনি সব কিছু পারফেক্ট চান। এখন সব দায়িত্ব তোমার ভালো করে চেক করো যেন কোন খামি না থাকে। আর হ্যাঁ,, ফাস্ট স্যার যে কোন সময় পৌছে যেতে পারেন।

সানাহঃ জী,,,,

গাড়ি স্টুডিওর সামনে আসতেই দারোয়ান গেইট খুলে দিল। গাড়ি থামলো রেডিও স্টার স্টুডিওর সামনে। বৃষ্টি থেমে গেলেও বৃষ্টির পানি জমে আছে বিভিন্ন যায়গায়।

গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে আসলো আমাল খান। হোয়াইট শার্ট ব্লাক প্যান্ট চুলগুলো স্পাইক করা। হাতে ব্লাক ওয়াচ চোখে সানগ্লাস ব্লাক সুজ। সব মিলিয়ে ড্যাশিং লুক। সাইন বোর্ডটির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো আমাল। চোখের সানগ্লাস টা খুলে শার্টে গুজে নিল।

আমালঃ আমি এসে পরেছি লাভ,,, এখন আর তোমাকে দূরে থাকতে দিব না। তোমার সব অভিমান ভাঙিয়ে নিজের #আশিকি তে রাঙিয়ে দিব। যে ভুল করেছিলাম সেটা সুধরানোর সময় এসে গেছে। আ’ম ব্যাক টু ইউ লাভ। ভূল গুলো সুধরে আমাদের অসম্পূর্ণ ভালোবাসাটাকে সম্পুর্ন করতে এসে গিয়েছি আমি। কারন আমাল খান কখনো কোন কাজ অসম্পূর্ণ রাখে না।?

আমাল স্টুডিও এর দিকে পা বাড়ালো।

ওউনার আসছে শুনে সব স্টাফরা হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অধীর আগ্রহে। সানাহ তার হাতে স্টারগেজার এর বুকি নিয়েছে। হঠাৎ করে যেন হার্টবিট টা বেড়ে গেছে সানাহর। নিঃশ্বাস ঘন ঘন উঠা নামা করছে। সানাহ এক হাত বুকে রেখে ভয়ে ভয়ে লিফ্টের দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আমাললল,,, ( স্থির কন্ঠে )

লিফ্ট এর দরজা খুলে যায়। ভেতরের মানুষটিকে দেখে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সানাহ,,

লিফ্ট থেকে নামতেই সবাই ঘিরে ধরে আমালকে। কিন্তু আমালের চোখ আটকে আছে সাদা কুর্তি খোলা চুলের পরীর দিকে। তার দিকেই ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার পরী। আমাল অপরাধীর মতো ফেস করে সানার দিকে তাকালো।

ম্যানেজারের ডাকে সানার ধ্যান ভাঙে।

ম্যানেজারঃ হোয়াট হ্যাপেন্ড সানাহ,, যাও গিয়ে স্যারকে বুকিটা দাও।

সানাহ ধীর পায়ে এগোচ্ছে আমালের দিকে আর আমাল‌ও ধীর পায়ে এগোচ্ছে তার পরীর দিকে।

সানাহ নিজেকে স্ট্রং করে আমালের সামনে ফুলের তোড়াটা এগিয়ে ধরলো।

সানাহঃ ওয়েলকাম স্যার ( দাঁত খিঁচে)

আমাল সানার চোখের দিকে তাকিয়েই ফুলটা নিল। বুকিটা নেওয়ার সময় আমাল ইচ্ছে করে সানার হাত স্পর্শ করে সানাহ এক ঝটকায় দূরে সরে দাঁড়ায়। আমাল ফুল গুলোর ঘ্রান নিয়ে বাকা হেসে বলে,,,

আমালঃ থ্যাঙ্ক ইউ মিস??

ম্যানেজারঃ সানাহ,,, স্যার ওর নাম সানাহ,,,

আমানঃ সানাহ নাইস নেম,,,

সানার শরীর কাঁপছে রাগে। ও বুঝতে পারছে যে আমাল ইচ্ছে করে এমন করছে।

আমালঃ ম্যানেজার আমার কেবিন কোনটা??

ম্যানেজারঃ স্যার আপনি আসেন আমার সাথে।

আমাল যাওয়ার সময় ইচ্ছে করে সানার গা ঘেঁষে যায়। আর সবার আড়ালে নিজের হাত দিয়ে সানার হাত স্পর্শ করে।

সানাহ রাগী দৃষ্টিতে আমালের দিকে তাকালে আমাল ওকে চোখ মারে। আমাল চলে যেতেই সব লেডি স্টাফরা আমালকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। ওর লুক, ওর স্টাইল কথা গুলো শুনতে সানার অনেক বিরক্ত লাগছে।

মেয়ে গুলোর কথা শুনে সানাহ আরো রেগে যায়। সহ্য করতে না পেরে সানাহ নাক ফুলিয়ে নিজের কেবিনে চলে আসে।

এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করছে সানাহ।

সানাহঃ কেন এসেছেন আমার জীবনে আবার। আর কি বাকি আছে বরবাদ করার। পুরোনো ঘা গুলো আবার তাজা করতে কেন এসেছে ও। আমি চাইনা তোমাকে আর আমার জীবনে আমাল খান। আই ডোন্ট নিড ইউ।

কথা গুলো বলতে সানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

আমি এখানে জব করবো না। এখানে জব করলে ও সব সময় আমার আশেপাশে থাকবে। ওকে দেখলে পুরোনো ঘা গুলো আবার তাজা হয়ে উঠবে আমার। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছি এখন আর পেছন ফিরে দেখবো না।

সানাহ ডেস্কে বসে ল্যাপটপে রেজিগ্নেশন লেটার রেডি করছে।

আমাল নিজের কেবিনে বসে সিসি ফুটেজে সানাকে দেখছে।

আমাল নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে।

আমালঃ তুমি যত‌ই আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে আমি তত‌ই তোমাকে নিজের কাছে আসতে বাধ্য করবো মাই লাভ। এই আমালের কাছ থেকে তুমি কখনো দূরে যেতে পারবে না। কারন আমাল তার সানাহকে নিজের থেকে দূরে যেতে দিবে না। শুধু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত‌ না আমার মৃত্যুর পরেও তুমি আমার‌ই থাকবে।

কথা ভেবেই বাঁকা হাসলো আমাল।

সানাহ আমালের কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

সানাহঃ আমি এখানে জব করবো ন… কথা গুলো বলতে বলতে সাহস নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই আমালের ধমকে থমকে যায় ও।

আমালঃ বিনা নক করে বসের কেবিনে ঢুকছেন হাও ডেয়ার ইউ মিস সানাহ। (দাঁড়িয়ে ধমকের স্বরে) কেবিনে ঢোকার আগে নক করতে হয় এইটুকু ম্যানার্জ নেই আপনার।যান গিয়ে আবার নক করে ভিতরে আসবেন।

সানাহ হা হয়ে গেছে। আমাল এরকম বিহেভ করছে যেন ও সানাহকে চিনেই না। সানাহ আবার ব্যাক করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। যেতে যেতে বিরবির করে বলছে ও,

সানাহঃ পাগল ছাগল হয়ে গেছে নাকি। এরকম বিহেভ করছে যেন আমাকে চিনেই না। ব্রেইন শর্ট হয়ে গেছে আমাল খানের।

সানাহ যেতেই আমাল মুচকি হেসে চেয়ারে বসে পরে।

বাইরে দাঁড়িয়ে সানাহ রাগে গজগজ করতে করতে বলল,,,

সানাহঃ মে আই কাম ইননন বসসসস( দাঁত খিঁচে)

সানাহঃ সিউর মিস সানাহ,,,

সানাহ ঢুকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আগেই আমাল বলতে শুরু করে,,,

আমালঃ আই নো আপনি কি বলবেন। আপনি এখানে আমার সাথে কাজ করবেন না। আমাকে দেখলে আপনার নিজের ফিলিংস এর উপর কন্ট্রোল থাকবে না। ইট্স ওকে একচুয়ালি আমাল খান মানুষটাই এমন যাকে ভুলা ইম্পসিবল। আই কেন আন্ডারস্টেন্ড। ( নরমালি বলল)

সানাহ হা হয়ে শুধু শুনছে। আমাল বুঝলো কিভাবে ভেবে পাচ্ছে না ও। আমাদের কথা গুলো শুনে রাগটা আরো বেড়ে গেল ওর।

আমাল সানার হাতে লিফাফা টা দেখিয়ে বলল।

আমালঃ এটা নিশ্চই রেজিগ্নেশন লেটার রাইট?? দিন আমাকে কাল থেকে আর আপনার রেডিও স্টেশনে আসার প্রয়োজন নেই।

সানাহ লিফাফা টা নিজের মুঠোয় নিয়ে দাঁত খিঁচে বলল,,

সানাহঃ জি না আপনি যা ভাবছেন সানাহ এরকম কিছুই করবে না। আমি আপনার সাথেই কাজ করবো বসসস। আর হ্যাঁ আপনি কোন বিশিষ্ট কেউ না যাকে ভূলে যাওয়া ইম্পসিবল হবে। আমি সেই কবেই আপনাকে ভুলে গেছি আর এই মুহূর্তে যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে আমার বসস,, এর বেশি কিছুই না।

সানাহ কথা বলেই আমালের মুখের উপর দরজা ধরাম করে লাগিয়ে বেড়িয়ে গেল।

সানার কথা গুলো আমালের বুকে ছুরির আঘাতের মতো লাগছে তাও আমাল সানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল।

আমালঃ এটাতো জাস্ট শুরু মাই লাভ পিকচার তো আভি বাকি হ্যায়। ?

সানাহ কেবিনে যেতেই ওর ফোন বেজে উঠলো।

সানাহঃ হ্যালো আম্মিজানন( দুষ্টুমি করে)

সানাহ কথা বলার মাঝেই খেয়াল করলো আমাল অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সানাহ ব্যাপার টা গ্রাহ্য করলো না ও ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।

অফিসের সব কাজ শেষ করে আটটায় সানাহ বেরিয়ে পরলো অফিস থেকে। বাম চোখটা বারবার লাফাচ্ছে নিশ্চই কিছু আন‌এক্সপেক্টেড ওয়েইট করছে ওর জন্য।

To be continued….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে