#অালো_থেকে_অন্ধকার
Part:-01
writer:-Esrat jahan Esha
আজ যখন শহরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন ৫ বছরের একটি শিশু কলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে আমার দেবর। সরি দেবর বল্লে ভুল হবে। সে আমার প্রাক্তন দেবর।
জিবনে তখনি ভুল করেছি যখন আমি ২ বছরের বাচ্চা সহ আমার স্বামীকে ছেড়ে আমার বয়ফ্রেন্ড এর হাত ধরে রাতের আঁধারে পালিয়ে আসি। আর সেই রাতের অন্ধকার মৃত্যুর আগে পরে আমার জন্য অন্ধকার হয়ে থাকবে।
আমার মত ভুল আর কেউ যেন না করে। আমি সব সময় দোয়া রাখি আমার সকল মা বোনের জন্য।
আমি লিমা, ১৮ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয় একজন ব্যবসাহীক এর সাথে। এই বিয়েতে আমি মোটেও রাজি ছিলাম না।
তবুও পরিবারের চাপে পড়ে বিয়েটা করে নিতে বাধ্য হই।
আমার ইচ্ছে ছিল আমি যাকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করার। তাকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখতাম। ভবিস্যৎ জিবন নিয়ে অনেক প্ল্যান করেছিলাম। কিন্তু এমন কারো সাথে আমার বিয়ে হল তাকে স্বামী হিসাবে মানতে আমার প্রথম প্রথম কষ্ট হত।
আস্তে আস্তে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করি। সে আমাকে অনেক ভালোবাসত। আমি যতই তাকে অবহেলা কটু কথা বলতাম সব সে সহ্য করত। সে খুব সরল মনের ছিল।
আমি মোটেও নামাজ পড়তে চাইতাম না। কিন্তু সে আমাকে জোর করে পড়াত। আমাকে তিনি নতুন ভাবে আরবি শিখাতে শুরু করে। ছোট বেলাই কুরআন খতম দিয়েছি কিন্তু না পড়তে পড়তে ভুলে গিয়েছি।
সে আমাকে এতটাই ভালোবাসত যে সব কিছু মেনে নিত। কিন্তু আমি তাও কখনো তাকে বুঝিনি।
তবে নামাজের দিকে আমাকে মাফ করতেন না
বিবাহের প্রথম রাতে জাবেদ সাহেব বলেছিলেন। আজকে থেকে তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী। আর আমি আমার দ্বায়িত্ব,, পালন করব।
আর আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি। তুমি যাই যা করো না কেন আমি কিছু বলব না। কিন্তু ধর্মীয় নীতির বাইরে তুমি যাওয়ার চেষ্টা করবে না সব মেনে নিব কিন্তু নামাজ রোজা না করলে তুমি আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে।
সেদিন তার উপর অনেক রাগ ছিল আমার কিন্তু আমি তাকে বুঝতে দেই নি। মাথা নাড়িয়ে শুধু বল্লাম আচ্ছা।
তাকে বলার ইচ্ছে ছিল যে দেখুন আমি একজন কে ভালোবাসি। আমাকে তার কাছে যেতে দেন। কিন্তু বলিনি কারন তুহিনের সাথে আমার একটু মনোমালিন্য হয়। কিন্তু ওরে মন থেকে ভুলতে পারিনি।
মনে মনে ভাবলাম থাক যা হইছে মেনে নেই। বিয়ে তো হয়ে গেছে। এখন ভেবে আর লাভ কি।
আস্তে আস্তে সব মেনে নেই। সূখেই দিন কাটতে থাকে। তবে আমার মনে একটা অশান্তির বন্যা বয়ে যেত। বার বার তুহিনের কথা মনে হত। আর মন খারাপ হয়ে যেত। তাও বুকে পাথর চেপে নিজেকে স্বান্তনা দিতে থাকি। কই একটা বার তো খোজ নিল না। হয়ত সে ভুলে গেছে এমনিতে তো একটু তারকাটা টাইপ ছিল।
জাবেদঃ- লিমা লিমা আমার বিবি কোথায় তুমি।
লিমাঃ- উফফ এই লোকটা সারাদিন শুধু ডাকা ডাকি করে। কি বলবে এখন আবার।
গিয়ে দেখে জাবের লিমার জন্য একটি বোরকা নিয়ে এসেছে।
জাবেদঃ-এই নাও তোমার জন্য বোরকা এনেছি।
লিমাঃ- আমার এগুলা পড়লে গরম লাগে।
জাবেদঃ- ঠিক হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে।
লিমাঃ- নাহ পড়ব না।
জাবেদের চেয়েহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
শোনো লিমা আমি তোমাকে আগেই বলেছি ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আমার সাথে তুমি কোনোরকম কথা বাড়াবে না।
আর শোনো তুমি আমার কাছে অমুল্য সম্পদ। আর আমি আমার সম্পদকে সব সময় হেফাজতে রাখতে চাই।
আর আল্লাহ কুরআনে পর্দার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَبَنٰتِکَ وَنِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
শানে নুজুলঃ
তৎকালীন আরব সমাজে বাড়ির ভেতরে মল-মূত্র ত্যাগের বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় সম্ভান্ত পরিবারের নারীদেরকেও ভোর অন্ধকারে মল-মূত্র ত্যাগের জন্য পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে যেতে হত । একদা হযরত ছওদাহ (রাঃ) ও এরূপ মলমূত্র ত্যাগের উদ্দেশ্যে জনপদের বাইরে গমনকালে হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে তাঁর দৈহিক গঠনের পরিচয় জানতে পেরে তাঁকে ওই সময়ে ঘরের বাইরে বের হওয়ায় তিরস্কার করলেন । হযরত ছওদাহ (রাঃ) ফিরে গেলেন এবং হুযূর (ছঃ)-এর নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত খুলে বললেন, তখন এ আয়াত কয়টি নাযিল হয় ।
—আল আহ্যাব – ৫৯
লিমাঃ- আচ্ছা ঠিক আছে পড়ব। কিন্তু সব সময় কি পর্দা করতে হবে?
জাবদঃ- হুমম তবে কয়েক জন বাদে।
লিমাঃ- তারা কারা?
জাবেদঃ- আল্লাহ তায়ালা বলেন___________
وَقُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَیَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَلۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ۪ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اٰبَآئِہِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِہِنَّ اَوۡ نِسَآئِہِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡہَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَلَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ ؕ وَتُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ جَمِیۡعًا اَیُّہَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
—আন নূর – ৩১
লিমাঃ- তবে আমি তো এত দিন সবার সাথে চলাফেরা করছি। তো তার কি হবে?
জাবেদঃ- আল্লাহ ক্ষমাশীল। আল্লাহ পূর্ববের জন্য তাওবা করতে বলছেন।
লিমাঃ- ওহ্হ আচ্ছা
জাবেদঃ- এইতো আমার প্রিয় বিবি। (জাবেদ খুশি হয় অনেক)
লিমাঃ- এহহ আমাকে এরকম বোরকা পড়িয়ে একদম খুশি। ডং যত্তসব ( মনে মনে)
আচ্ছা খাবার দিচ্ছি খেয়ে যান।
জাবেদঃ- হুমম চলো।
ধর্মীয় দিকের কোনো কিছু অমান্য করলে কেমন যেন রাগি হয়ে যেত। তাই আমি সব কিছু মেনে নেই। আর বাবা মা ওনাকে অনেক ভালোবাসে তারা তাদের জামাইয়ের কথা না শুনলে উল্টো আমাকে বকে।
একবার বাবা কে বলছিলাম,,,, বাবা তোমার জামাই এমন কেন?
বাবাঃ- কেমন আমি জানি। তুমি কেমন তাও জানি। এত দিন যা করছ করছ কিছুই বলিনি। আমাকে বেশি বলতে বাধ্য কর না।
লিমাঃ- কি করছি?
বাবাঃ- ভালোই যদি হতে তাহলে তুহিন এর মত একটা তারকাটা ৪২০ ছেলের সাথে হারাম সম্পর্কে জারাতে না। যে ছেলেটা মদ গাজা,,,, চুল সাদা বান্দরের মত কালার করা। ওমন ছেলে তুমি কিভাবে পছন্দ করলে। দেখলেও তো ইচ্ছে করে যত ক্ষন শ্বাস নেয় ততক্ষণ পিটাই। কোনো আদব কায়দা আছে? বিয়ে করে ২ দিন পর ফেলে যেতে বিবেকে বাধত না। বিবেক বলতে কিছু আছে।
লিমাঃ- হইছে বাবা তুমি ওরে নিয়ে আর একটা কথাও বলবে না।
বাবাঃ- কি বলব না। ভালো হলে কি এখন জেলে থাকত?
লিমাঃ- তুহিন জেলে?
বাবাঃ- হুমম। তোমার যেদিন বিয়ে ঐদিন রাতে গাজা নিয়ে ওদের দলের সাথেই ঝগরা হয়। তারপর একজন কে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
এখন ৬ মাসের জেল হয়ে গেছে।
লিমাঃ- এই জন্যই ওর কোনো খোজ নাই (মনেমনে)।
লিমা ভাবে তাহলে তো সত্যি খারাপ। ও কিছু না বলে বাবার কাছ থেকে চলে যায়।
তারপর চিন্তা করে থাক যেমন আছি তেমন থাকি কিছুই বলব না। উনিও তো আমাকে ভালোবাসে সহজ সরল ও আছে দেখি আস্তে আস্তে কজ্বা করতে পারি কিনা।
সব কিছু মানত যদি কোনো বিষয় নিয়া ভুল ভাল বুঝ দিতাম তাও মেনে নিত।
এভাবে কাটতে থাকে লিমা আর জাবেদের জিবীন
সব কিছুই ঠিক ছিল। ৬ মাস পর আমি কন্সিভ করি। কিন্তু বাচ্চা নেওয়ার মত ইচ্ছে আমার ছিল না। তাও আমার স্বামি আমাকে অনেক বুঝায়,,,
সে আমাকে অনুরোধ করে। দেখ তুমি এই ছোট ভ্রুন টাকে নষ্ট করো না। ওরে পৃথিবীর আলো দেখতে দাও। আচ্ছা আজকে থেকে তোমার কোনো কাজ করা লাগবে না। সব কাজ আমি করব তাও তুমি এই বাচ্চা নষ্ট করবে না। বাচ্চা ভুমিষ্ট হওয়ার পর আমি ওরে লালন পালন করব।
আর এ অনেক বড় পাপ তুমি এই পাপ করো না।
আর আমি চাই আমার সন্তান কে।
লিমাঃ- তো খুশি ভাবল সারাদিন শুয়ে বসে খাওয়া যাবে৷ এমনিতেও কোনো কাজ করি না।
লিমাঃ- আচ্ছা। ঠিক আছে।
জাবেদ লিমার পুরু যত্ন নেয়।
জাবেদের বোন সুমি সারাক্ষণ আমার পাশে ঘুর ঘুর করে। আর পেটের উপর দোয়া দুরুদ পড়ে ফু দেয়৷
সুমিঃ- ভাবি ভাবি তুমি জানো না আমার কি খুশি লাগছে। ভাবি তোমার টেনশন নাই বাচ্চা আমি বড় করে দিব। ভাবি ওহ্হ আমি ফুপু হতে যাচ্ছি আমার ভেবেই ভালো লাগছে কয়েক মাস পরই আমাকে ফুপু ফুপু বলে ডাকবে।
লিমাঃ- হ রে ননদি এই বাচ্চা তো তোমাদেরেই।
সুমিঃ- জান ভাবি মা তোমার বাচ্চার জন্য টাকা জমাচ্ছে। নাতিকে উপহার দিবে। আর বাবা তো বলতে গেলে প্রতিদিন দিন গুনে কবে ঘরটা আলো হবে।
লিমা শুনে খুব খুশি হয়। আচ্ছা সুমি আমার জন্য একটু আচার আনতে পার?
সুমিঃ- পারব না কেন? এখুনি আনছি তুমি বস।
এই পরিবারের প্রত্যকটা লোক আমাকে ভালোবাসত। কিন্তু আমি উপরে উপরে ভালো বাসলেও হয়ত মনের দিক দিয়ে মানতে পারতাম না।
ভালোবাসলে হয়ত ছেড়ে যেতাম না।
দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এল। আল্লাহর রহমতে নরমাল ভাবে সন্তান ভমিষ্ট হল। আমার ছেলে হয়েছে। নাম রাখা হলো রামিম।
★★★
পিছনে একটা গাড়ি হর্ন বাজাচ্ছে এই আপা একটু সরেন তো। রাস্তায় এভাবে কেউ দাড়ায়?
লিমা কারেন্ট সর্ট এর মত লাফিয়ে উঠে। আচ্ছা আমি একটু গিয়ে আমার বাচ্চা কে দেখে আসব? আমার কোলে কি আমার বাবা টা একটু আসবে? ঐ টাই কি আমার ছেলে। আমার মন বলছে এটাই রামিম। আচ্ছা রামিম এর বাবা কেমন আছে? নাকি আরেকটা বিয়ে করছে?
লিমা আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে। ওর প্রাক্তন দেবর সাকিল কে ছোট করে ডাক দিল।
লিমাঃ- সাকিল।
সাকিলঃ- পিছনে তাকিয়ে আচমকা লাফিয়ে উঠে আপনি???????
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,