আলো-আঁধার পর্ব-২৮

0
1059

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা:সালসাবিল সারা

২৮.
তূর্যয়ের সাহায্যে বেশ দ্রুত রাণী নিজের দোকান পেয়ে গেলো।যদিও এটা ভাড়া দোকান,তাও সেই দোকানকে রাণী নিজের বলে চালিয়ে যায়।দোকানের সব খরচ তূর্যয় নিজেই মিটমাট করেছে।দোকানের টাকা না দেওয়ার জন্যে, রাণীর এতো মানা করার পরও তূর্যয় রাণীর কোনো কথা শুনেনি।আজ রাণীর দোকানের ওপেনিং হবে।রাণী, তার বান্ধবীরা সবাই দোকান সাজানোর কাজে লেগে পড়লো।রাণী তূর্যয়ের জন্যে নাস্তা বানিয়ে আবারও দোকানে চলে এলো।অনেক সকালে নাস্তা বানানোর কারণে রাণীর সাথে তূর্যয়ের দেখা হলো না।রাণীর মুখে আজ হাসির আসর বসেছে।রাণীর সাথে হ্যারি,সিমি,কলি,রিয়া সবাই কাজে বেশ মগ্ন হয়েছে।একপাশে মাটির জিনিসপত্র বানানোর সেটআপ করে,অন্য পাশে মাটির বানানো অন্যান্য জিনিস সাজিয়ে রাখতে বেশ কিছু শেলফ বানানো হয়েছে।সাথে নানান রঙিন লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে দোকানে।রাণী কাজের ফাঁকে ফাঁকে হ্যারি আর সিমির খুনসুটি,
ভালোবাসা বেশ উপভোগ করছে।দোকানের ওপেনিং হবে বিকালে।তখন সালেহা,সাথে এতিম খানার কিছু মানুষ আসবে।রাণী তূর্যয়কেও আসতে বলেছে গতকাল।কিন্তু, তূর্যয় এইসব উদ্ভোধনে একেবারেই যায় না।এখন রাণীর দোকানের উদ্ভোধনে গেলে,ব্যাপারটা শত্রু পক্ষের জন্যে একটা পয়েন্ট হিসেবে দাঁড়াবে। এতে রাণীরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।অগত্য, তূর্যয় রাণীকে “যাবে না” বলে দিলো।তাছাড়া আজ সকালের নাস্তা সেরে তূর্যয় বেরিয়ে গেলো তার জরুরী মিশনে।এরপর সে কমিশনারের কাছেও যাবে।কমিশনার বেশ খাতির করে ডাকিয়েছে তূর্যয়কে।তবে মিশনে যাওয়ার আগে রাস্তার অপর পাশে,গাড়ির ভেতর থেকেই তূর্যয় রাণীর হাসিমুখটা দেখতে ভুললো না।রাণীর এই হাসিমুখ যেনো তূর্যয়ের জীবনে এক আশীর্বাদ স্বরূপ।রাণীর হাসি দেখে তূর্যয়ের ঠোঁট জোড়া হালকা প্রশস্থ হলো।তূর্যয়ের ফোন আসতেই তূর্যয় আরেকবার রাণীর দিকে তাকিয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিলো।

রাণী নিজের কাজে বড্ড ব্যস্ত।তারপরেও তার কাজের মাঝে তূর্যয়ের কথাটা তাকে বড্ড পোড়াচ্ছে।রাণী সব কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে তূর্যয়ের কথা কল্পনা করছে।রাণী তার হাতে থাকা মাটির কারুকার্য খচিত কিছু জিনিস সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছে।নানা রঙের এই জিনিসপত্র রঙিন আলোতে যেনো আরো বেশি চিকচিক করছে।মাটির এই জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখতে রাখতে রাণী মনে মনে ভাবছে,
–“একটু আসলে কিই বা হতো?কে বলেছিল আপনাকে দানব সন্ত্রাসী হতে?আপনি একজন সাধারণ মানুষ হলে,এখন আমার সাথে কাজে হাত বাড়াতে পারতেন।তার চেয়েও বড় কথা,আমি আপনাকে দেখতে পেতাম।আমার এতো সুখের দিনে আপনি আমার পাশেই নেই।ব্যাপার না।আপনি আপনার কাজে যতোই ব্যস্ত থাকুন না কেনো,আপনি আমার জন্যে অনেক ভাবেন এটা আমি বেশ জানি।নাহলে আজ ভিনদেশী ভাই আমার সাথে কাজে হাত বাড়াতো না।আমি জানি,আপনি আসতে না পারলেও আমার সুরক্ষার জন্য আপনি ভিনদেশী ভাইকে এইখানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এতোই যখন আমার জন্যে যত্ন করেন,তাহলে সেটা মুখ ফুটে বলেন না কেনো?ওহহ,বলবেনই বা কিভাবে?আপনি তো আমার দানব সন্ত্রাসী।যে এইসব ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ করতে পারে না,কিন্তু তার কাজ দিয়ে সবটাই বুঝিয়ে দেয়।সমস্যা নেই,এই রাণী নিজেই সুযোগ বুঝে দুইজনকে এক করেই ছাড়বে।অনেক বেশি মিস করছি আপনাকে আমি,দানব সন্ত্রাসী।”
রাণী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। এইদিকের কাজ শেষ করে হ্যারির সাহায্যে সে মাটির জিনিস তৈরী করার যন্ত্র বসিয়ে সেটআপ ঠিক করছে।সিমি,রিয়া,কলি সবাই অন্য কাজে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।বাহিরের দিকে কিছু লাইট লাগানো বাকি।সিমি সেই দিকে আছে রিয়ার সাথে।সিমি হুইল চেয়ারে বসে এক একটা লাইটের বাল্ব মুছে মুছে রিয়াকে দিচ্ছে। আর রিয়া সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সেই লাইট গুলো লাগিয়ে নিচ্ছে। দোকানের বাহিরের দিকে অনেক রঙিন লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সেখানের কিছু লাইট লাগিয়ে সিমি আর রিয়া ভেতরে চলে এলো।দুপুরের খাবার হ্যারি এনে দিয়েছিল সবাইকে।খাবার শেষে সবাই আবারও কাজে লেগে পড়লো।এইবার বাহিরের লাইটের ডিজাইন দেখাতে সিমি,রিয়া,রাণীকে বাহিরের দিকে নিয়ে গেলো।রাণী বেশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে সব কিছু। হ্যারি এসে রাণীর কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“ডেকোরেশন জাস্ট ওয়াও হয়েছে।আমরা এতো সুন্দর ডেকরেশন করতে পারি,এটা আমার বিলিভ হচ্ছেই না।”
রাণী হাসলো হ্যারির কথায়।হ্যারির কথায় সিমি বলে উঠলো,
–“আমরা ভালো ডেকোরেশন করি,এটা আমরা বেশ জানি।কিন্তু,তুমিও যে এই কাজ করতে পারো,এটা আমি জানতাম না।কারণ,তুমি তো একটা মাস্তান।”
হ্যারি চোখ ছোট করে সিমির দিকে তাকিয়ে তাকে জবাব দিলো,
–“হেই সিমি,ডোন্ট সে দিস।আমি একটা জেন্টেল পার্সন।তাই না,সিস?”
রাণী মাথা নাড়ালো হ্যারির কথায়।রাণী সিমিকে বললো,
–“আমার ভিনদেশী ভাই সবচেয়ে সেরা।তার কোনো তুলনা হয় না।”
রাণীর এমন কথা শুনে সিমি মুখ ভেংচি দিয়ে বলে উঠলো,
–“তোমরা দুইজন পাতানো ভাইবোন কি আর আমার পক্ষে কথা বলবে?”
রাণী আর হ্যারি মাথা দুইদিকে দুলিয়ে উত্তর দিলো,
–“নাহ,নেভার।”
তাদের কান্ড দেখে হাহা করে হেসে উঠলো রিয়া আর কলি।আর সিমি পেঁচার মতো মুখ বানালো।একটু পরেই দোকানের জন্যে ঠিক করা নামের বড় অক্ষরগুলো চলে এলো।সেগুলো রাণীর নির্দেশে ঠিক করে লাগিয়ে দিলো লাইট কোম্পানির লোকেরা।প্রায় বিকেল হয়ে গেলো সব কাজ শেষ করতে। একটু পরে সালেহা সাথে অন্যরা চলে আসবে।তাই রাণী তাড়াহুড়ো করে হ্যারিকে বললো,
–“ভিনদেশী ভাই,নামের অক্ষরগুলো জ্বালিয়ে দেখুন না। পরে যদি না জ্বলে?তাহলে তো সবার সামনে বেজ্জতি হয়ে যাবে।”
হ্যারি রাণীকে আশ্বাস দিয়ে উত্তর দিলো,
–“ডোন্ট ওয়ারি।আমি চেক করছি,সিস।”
রাণী চোখের পলক ফেলে হ্যারিকে “আচ্ছা” বললো।
হ্যারি সবকিছু ঠিক করে লাইটের সুইচ দিতেই সম্পূর্ণ নামের অক্ষরগুলো জ্বলে উঠলো।আলাদা আলাদা অক্ষরগুলো একসাথে মিশে লেখা আছে,”রৌদ্রের মাটির ভুবন”।লাইটের আলোতে রাণীর মুখ,চোখটাও জ্বলজ্বল করছে।রাণীর চোখে খুশির পানি জমলো।যদিও আগে রাণী দোকানের অন্য নাম ঠিক করেছিল,কিন্তু তূর্যয়ের এতো এতো সাহায্যর অনুদান হিসেবে সে তূর্যয়ের দেওয়া, তার নামটা ঠিক করলো দোকানের নাম হিসেবে।রাণী দুইহাত মুখের সামনে রেখে হেসে উঠলো।তার এতদিনের স্বপ্নটা এইভাবে পূরণ হবে তার কখনোই জানা ছিলো না।এই সবটার জন্যে সে তূর্যয়কে বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছে।রাণী দোকানের নামের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,
–“অনেক বেশি ধন্যবাদ,দানব সন্ত্রাসী।আপনার জন্যেই আজ আমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।কাছাকাছি না এসেও,যত্ন করা যায়,অন্যর সব আশা পূরণ করা যায়,এটা আপনাকে না দেখলে আমি জানতামই না।ধন্যবাদ সবসময় আমাকে রক্ষা করে আসার জন্যে।অনেক বেশি ভালোবাসি আমি আপনাকে।আমি যেমন আপনার জীবনের এক রাশ আলো,তেমন আপনিও আমার জীবনের সকল স্বপ্ন পূরণ করার চাবিকাঠি।তার চেয়েও বড় কথা,আপনি আমার প্রেমিক পুরুষ।আপনার আগমনে আমার জীবনে এমন একটা সুখময় অনুভূতির জানান পেয়েছি আমি,যেটা আমার কাছে সর্বসুখ বলে মনে হয়।ধন্যবাদ দানব সন্ত্রাসী,আমার জীবনে আসার জন্যে।”
রাণী মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিজের ওড়নার কোণা দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো।হ্যারি এসে রাণীর হাত ধরে তাকে বলে উঠলো,
–“ডোন্ট ক্রাই,সিস।তার রৌদ্র ক্রাই করছে,এটা জানলে ব্রো আমাকে কিল করবে।”
রাণী নিজের আঙ্গুল দিয়ে চোখ কচলিয়ে বললো,
–“উঁহু,কান্না করছি না।শুধু আপনার ব্রোকে মিস করছি।উনি আসেননি কেনো?এতো কাজ উনাকে কে করতে বলে?আমার কি মন খারাপ হয় না,আমার এই সুখের দিনে উনাকে আমার পাশে না পেয়ে?”
–“হেই সিস।তুমি বুঝবে না।ব্রো এখানে আসা মিনস রিস্ক।তুমি আরো বড় হও,এরপর বুঝবে।হাহা।অ্যান্ড এখন, ডোন্ট ফিল ব্যাড। আই নো,ব্রো অনেক চেয়েছে এইখানে আসতে।কিন্তু রিস্ক,তাই আসেনি।তাছাড়া,
আমি তো আছি তোমাকে রক্ষা করতে।ব্রো সেই সকালেই আমাকে অর্ডার দিয়েছিল,’ আমার রৌদ্রকে দেখে রাখবে, হ্যারি।ওর পাশে পাশেই থাকবে সারাক্ষণ।’ তাই তো আমি,আমার সিসের সাথেই আছি।আর আমার ব্রো না বললেও,আমি কিন্তু আমার সিসের শুভ দিনেই থাকতাম।নাও লেটস গো।এভরিওয়ান ইজ কামিং।”

রাণীর মনে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো হ্যারির কথায়।রাণী আগে থেকেই তো জানতো,তূর্যয় নিজেই হ্যারিকে তার সাথে থাকার জন্যে এইখানে পাঠিয়েছে।এখন হ্যারির মুখে সেই কথা শুনে রাণীর মনের কষ্ট হালকা দূর হলো।তূর্যয়ের মতো একজন ভালোবাসার মানুষ আর হ্যারির মতো একজন ভাই পেয়ে রাণীর পরিবার নামক জিনিসটা উপলব্ধি করতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না।সমুদ্রের পাশে দোকান হওয়াতে অনেকেই এই দোকানের ওপেনিং এ ভিড় করছে।ধীরে ধীরে দোকান উদ্ভাবনের পাশাপাশি রাণীর উঠানো মাটির জিনিসগুলোও কেনা কাটার ধুম বাড়তে লাগলো।রাণীর মুখে আজ রাজ্য জয়ের হাসি ঝুলে আছে।
;
রাত দশটা।তূর্যয় মাত্রই নিজের মিশন শেষ করলো।গাড়িতে উঠার পূর্বে তূর্যয় নিজের রক্ত মাখা হাত ধুয়ে নিলো। কোটে রক্ত লেগে থাকায় তূর্যয় দ্রুত খুলে নিলো তার কোট। হাতে পানি নিয়ে মুখে পানির ছিটা দিয়ে মাথাটাও ভেজালো সে।চুলের ভেতর আঙ্গুল চালিয়ে তূর্যয় ইকরামকে বলে উঠলো,
–“হ্যারি ফোন করেছিল?ভুয়া গোল্ড ডিলার এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে?”
–“জ্বী বস।একটু আগেই লোকেশন পাঠিয়েছে, হ্যারি স্যার।”
ইকরাম জবাব দিলো।
–“আচ্ছা,তাকে আটক করে আমার আস্তানায় নিয়ে আসবে।রাতভর বরফ চাপা দিয়ে রেখো।তার এই ভুয়া গোল্ড বিক্রির কারণে শত ব্যবসায়ী পথে বসেছে।আর হ্যাঁ,কোনো মতেই যেনো সে মারা না যায়।”
কথাটা বলে তূর্যয় পকেট থেকে সিগারেট বের করে সেটি ঠোঁটে দিলো।ইকরাম মাথা নাড়ালো তূর্যয়ের কথায়।

গাড়িতে উঠে তূর্যয় আরো দুইটি শার্টের বোতাম খুলে নিলো।মাথা বেয়ে পড়া পানি সে হালকা করে মুছতে লাগলো টিস্যুর সাহায্যে।গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিলো সে।পরক্ষণে তার মাথায় এলো সে এখন কমিশনারের বাসায় যাচ্ছে।সেখানে নিশ্চয় তার শত্রুর অভাব হবে না।সেইসব ভেবে তূর্যয় নিজের ফাঁকা পিস্তলে বুলেট পুরে নেওয়া শুরু করলো গাড়িতে রাখা বক্স থেকে।সবকিছুর মাঝেও তূর্যয়ের মাথায় রাণীর কথা কিলবিল করছে।তূর্যয় পিস্তলে বুলেট লোড করে নিতে নিতে ভাবছে,
–“আহহ,আমার রৌদ্র!তোমার বিশেষ দিনেও আমি সাথে নেই তোমার।কিন্তু,সমস্যা নেই।আমি আমার অনুপস্থিতি ঠিকই তোমাকে পূরণ করে দিবো।”
কথাগুলো ভেবে বাঁকা হাসলো তূর্যয়।কমিশনারের বাড়ির গেইটে তার গাড়ি ঢুকতেই তূর্যয় একটু অবাক হলো।কারণ,তূর্যয় ভেবেছে এইখানে পার্টি হচ্ছে।তাই তূর্যয়কে দাওয়াত করেছে কমিশনার।কিন্তু,পার্টি হলে এইখানে গাড়ির বন্যা বয়ে যেতো।তূর্যয় এইখানে এমনটা কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।তূর্যয়ের গাড়ি থামলো বাড়ির প্রধান দরজার সামনে।একজন লোক এসে তূর্যয়ের গাড়ির দরজা খুলে দিলো।তূর্যয়ের গাড়ির পিছে তার গার্ডদের গাড়ি এসেও পৌঁছালো।তূর্যয় গাড়ি থেকে নেমে মোবাইল হাতে নিতেই কমিশনারের গলার স্বর শুনতে পেলো,
–“আরে তূর্যয়!আসো আসো ভেতরে আসো।”

তূর্যয় কমিশনারের সাথে হাত মেলালো।ভেতরে গিয়ে তূর্যয় বুঝতে পারলো,এই দাওয়াত শুধু তাকেই দেওয়া হয়েছে।সোফায় বসতেই কমিশনার নানা আলোচনা জুড়ে দিলো তার সাথে। যখন দরকার হচ্ছে তূর্যয় তার উত্তর দিচ্ছে।
দুই তলার পিলারের পাশ থেকে গভীর নজর দিয়ে তূর্যয়কে দেখছে কমিশনারের মেয়ে, রিহানা।মূলত রিহানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই তূর্যয়কে দাওয়াত করেছে কমিশনার।রিহানা আগেই তূর্যয়কে পছন্দ করে রেখেছে।কিন্তু,কখনোই সামনাসামনি দেখা হয়নি তার।বর্তমানে সরাসরি তূর্যয়কে দেখে মুখ হাঁ হয়ে আছে রিহানার।ছবির চেয়েও যেনো তূর্যয়ের গঠন আরো বেশি সুদর্শন আর আকর্ষণীয়।রিহানার ইচ্ছে করছে,এই মুহূর্তে তূর্যয়ের বিশাল দেহকে ঝাপটে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে।তূর্যয়ের সাথে তার মেলামেশার কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে রিহানার।বেশ কিছুক্ষণ পরে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে,কমিশনার তার মেয়ে রিহানাকে ডেকে পাঠালো।রিহানা এসেই মুচকি একটা হাসি দিলো।তবে তূর্যয় সেই হাসি দেখলো না। সে বর্তমানে ব্যস্ত হ্যারি থেকে রাণীর খবর নিতে।কমিশনারের সাথে আছে তাই সে মেসেজের মাধ্যমেই রাণীর খবর নিচ্ছে হ্যারি থেকে।রিহানা তূর্যয়ের এমন ব্যবহারে তার বাবার দিকে তাকালে,কমিশনার তূর্যয়কে বললো,
–“তূর্যয়!এই আমার মেয়ে রিহানা।আর রিহানা, এই হলো তূর্যয়।”
তূর্যয় কমিশনারের কথায় কমিশনারের দিকে তাকালো।কিন্তু,রিহানার দিকে নয়।এই দেখে রিহানা যেনো ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠলো।তূর্যয় অস্ফুট কন্ঠে কমিশনারকে জবাব দিলো,
–“আচ্ছা।”
কমিশনার দ্বিধায় পড়লো,সে এখন কি করবে।তূর্যয় কেমন ছেলে এটা কমিশনারের জানা আছে।কিন্তু,
রিহানা তার বিয়ের জন্য তূর্যয় ছাড়া আর কোনো পাত্রকে নির্বাচন করছে না।একমাত্র মেয়ের জন্যে কমিশনার না পারতে তূর্যয়কে তার মেয়ের সাথে দেখা করার একটা সুযোগ করে দিলো।তবে,এখন কমিশনার বুঝতে পারছে, তূর্যয় তার মেয়ের সাথে কোনো রকম সম্পর্ক তৈরি করতে ইচ্ছুক কি, তাকাতেও ইচ্ছুক না।কমিশনার গলা খাকারি দিয়ে রিহানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“আরে মা,বস।”
রিহানা বসতেই তূর্যয় কমিশনারকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“কাজ আছে আমার।উঠতে হবে আমাকে এখনই।”
তূর্যয়ের কথায় রিহানা তূর্যয়কে সরাসরি বলে ফেললো,
–“আমার আপনাকে ভালোলাগে।অনেক আগে থেকেই ভালো লাগে আমার আপনাকে।বাবা চাই আমাকে বিয়ে দিতে।তাই, পাত্র হিসেবে আমার আপনাকে চাই।”
তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে কমিশনারের দিকে তাকালো।কমিশনারের কপালের পাশে ঘামের দেখা মিলছে।তূর্যয় চোয়াল শক্ত করে কমিশনারকে জবাব দিলো,
–“এইসব কি কমিশনার?আপনি আমাকে চিনেন না?ভালো পাত্র দেখে নিজের মেয়ের বিয়ে দিন।আর যেনো এইসব ঝামেলা আমার এর সহ্য করতে না হয়।আপনার আর আমার মধ্যে শুধু কাজের ব্যাপারেই কথা হবে।আর কিছু না।”
কমিশনার কিছু বলতে চেয়েছে।তবে এর আগেই রিহানা তূর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে তাকে বলে উঠলো,
–“কি সমস্যা তোমার?আমার দিকে কেনো তাকিয়ে কথা বলছো না?আগে পরে তুমি কি বিয়ে করবে না?আমার তোমাকেই লাগবে।আমি জানি তুমি অনেক ডেঞ্জারাস একটা ছেলে।আর আমার তোমাকেই পছন্দ।”
তূর্যয়ের মেজাজ এইবার সাত আসমানে উঠে গেলো।রাণী ছাড়া কোনো মেয়ের ক্যাঁচ ক্যাঁচ তূর্যয়ের আজ পর্যন্ত শোনা হয়নি।আর এখন রিহানার এমন কথায় তূর্যয়ের ইচ্ছে করছে রিহানাকে একটা চড় দিতে।তূর্যয় সোফায় জোরে একটা ঘুষি দিয়ে উঠে পড়লো।এই দেখে রিহানা একটু পিছপা হলো।তূর্যয় এইবার রিহানার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমাকে চিনে থাকলে আমার ব্যবহার সম্পর্কেও জানা উচিত ছিলো তোমার,রিহানা নাকি কি!আমার ব্যাপারে বা আমার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কেউ কথা বলুক,এইসব আমি একদম পছন্দ করি না।আমার ব্যাপারে তোমার বাপ থেকে ভালো করে জেনে নিও।আর কমিশনার এইসব ঝামেলা যেনো আর আমার সামনে না আসে।আমাকে আপনি ভালো চিনেন।”
তূর্যয়ের হুমকিতে কমিশনার বিনীত সুরে বলল,
–“সরি,তূর্যয়।”
তূর্যয় কিছু না বলে ধপধপ পায়ে বেরিয়ে গেলো।তূর্যয়ের মাথায় রাগের বাসা বেঁধেছে।রিহানা আর কমিশনারকে মনে মনে শত গালি দিচ্ছে তূর্যয়।গাড়িতে বসে সে রাণীর কিছু ছবি বের করলো নিজের মোবাইলে।রাণীর ছবিতে ঠোঁট ছুঁয়ে তূর্যয় আপন মনে ভাবতে লাগলো,
–“যাকে আমার চাই,তাকে আমার করতে এখনো কিছুটা সময় বাকি আছে।এরমধ্যেই কিসব ঝামেলা এসে দাঁড়িয়েছে,আল্লাহ্ জানে।ব্যাপার না।আমার আর রৌদ্রের মাঝে যে আসার চেষ্টা করবে,তাদের একেকটার প্রাণ আমি নিজ হাতেই নিবো।কারণ,এই তূর্যয়ের মন শুধু তার রাণীর জন্যেই ধুকধুক করে।এই দানবের মনে শুধু তার রৌদ্রের জন্যেই জায়গা আছে।ভালোবাসি তোকে।”
কথাগুলো ভেবে তূর্যয় হ্যারিকে ফোন দিয়ে নির্দেশ দিলো,হ্যারি যেনো নিজ দায়িত্বে রাণীকে তার এতিম খানায় দিয়ে আসে।
হ্যারির সাথে কথা বলে তূর্যয় রাণীর কথা ভাবছে।সাথে সে তাদের ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করছে।ধীরে ধীরে তূর্যয় রাণীকে নিয়ে সকল কিছু কল্পনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
;
সালেহা এবং বাকি সবার সাথে কলি আর রিয়া চলে গেলো।সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সিমি,রাণী আর হ্যারি প্রস্তুতি নিচ্ছে বেরিয়ে যাওয়ার।সিমি আগেই বেরিয়ে পড়েছে হুইল চেয়ার নিয়ে।হ্যারি দোকানের দরজা বন্ধ করে তাতে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে।আজ প্রথম দিন হিসেবে তাদের কেনা বেচা ভালই হলো।এই নিয়ে রাণীর খুশির অন্ত নেই।রাণী খুশি মনে নিজের ব্যাগ দেখছিল।এর মধ্যেই কিভাবে যেনো সিমি তার হুইল চেয়ারের ব্যালেন্স হারিয়ে মেইন রোডের দিকে চলে যাচ্ছিলো।রাণী সেটা টের পেয়ে সিমির হুইল চেয়ার ধরে ফেললো।সিমির হুইল চেয়ার অন্যদিকে ঠেলে দিতেই সিমি হুইল চেয়ারের চাকা শক্ত করে ধরে নিয়েছে,আর তার হুইল চেয়ার থেমে গেলো।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো রাণীর।সিমিকে ধরে ফেললেও,নিজের পা ফসকে রাণী রাস্তায় পড়ে গেলো।হ্যারি তাদের চিৎকার শুনে দেরী না করে,নিজের জানের পরোয়া না করেই মেইন রোডে দাঁড়িয়ে পড়লো দুই হাত মেলে।সাথে সে অনেক জোরেই দ্রুত গতিতে আসা বড় ট্রাককে হাত দিয়ে থামতে বলছে।রাণী তার চেয়ে আরেকটু দূরে আছে।রাণীকে সেখানে গিয়ে উদ্ধার করার চেয়ে,হ্যারি নিজেই ট্রাক থামিয়ে রাণীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলো।রাণী তার হাতে, পায়ে অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছে।রাণী উঠে সিমির দিকে আসতেই অটো রিক্সার সাথে ধাক্কা খেয়ে আবারো রাস্তায় পড়লো সে।পেটে ডান দিকে বেশ চোট পেয়েছে রাণী।সাথে হাতে ব্যাথা পাওয়া জায়গায় অনেকটা আঘাত পেয়েছে সে।ব্যথায় রাণীর চোখে পানি চলে এলো।হ্যারি অটো রিক্সা চালককে ধরে দুই চারটা চড় দিলো।রাণী নিজেকে সামলিয়ে হ্যারির কাছে গিয়ে তাকে বলে উঠলো,
–“আমার দোষ।আমি খেয়াল করিনি অটো রিক্সা, ট্রাকের জন্যে।”
হ্যারি ছেড়ে দিলো অটো রিক্সা চালককে।হ্যারি চোখ পাকিয়ে তাকালো সিমির দিকে।রাণী আর হ্যারি সিমির কাছে পৌঁছাতেই হ্যারি সিমিকে চিল্লিয়ে বললো,
–” ইউ আর সো কেয়ারলেস!অ্যান্ড অলসো সেলফিশ।তুমি দেখেছিলে রাণী তোমাকে সেভ করতে গিয়েই অলমোস্ট ডেড হয়ে যাচ্ছিলো।সেখানে তুমি রাণীকে এটা বলতে পারলে না,রিক্সা আসছে!তোমার এইদিক থেকে তো রিক্সা ভালোই দেখা যাচ্ছিলো।”
হ্যারির কথায় সিমি মন খারাপ করলো। কারো কোনো কথা না শুনে হ্যারি সেই দুইজনকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।তবে হ্যারি রাণীকে জিজ্ঞেস করেছিল,রাণী কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা।রাণী মিথ্যা বলে ব্যাপারটা সেখানেই থামিয়ে দিয়েছে।এতিম খানার সামনে গাড়ি থামতেই রিয়া এসে সিমিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলো।হ্যারি সিমির সাথে এখনো রেগে আছে।রাণী গাড়ি থেকে নেমে হ্যারিকে করুণ কণ্ঠে বললো,
–“আপনি আমার বান্ধবীর সাথে রাগ দেখাবেন না।বাসায় গিয়ে তাকে ফোন করে,তার রাগ ভাঙাবেন।আর হ্যাঁ,আপনার ব্রো যেনো আজকের এই ঘটনা না জানে।যদি জানে,তাহলে আমাদের দুইজনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।”
রাণীর কথায় হ্যারি জবাব দিলো,
–“সাবধানে থেকো তুমি।বি কেয়ারফুল।”
হ্যারি গাড়ি স্টার্ট দিলো।তার মনে যেনো চলছে অন্য এক কথা।


রাণীর দোকানের নাম দেখে তূর্যয় বেশ খুশি হলো।রাণী এইভাবে তূর্যয়কে চমকে দিবে এটা সে কখনোই ভাবেনি।শুধুমাত্র রাণীকে এক নজর দেখার জন্যেই সে গাড়ি আবারও উল্টোদিকে ঘুরিয়ে এইখানে এসেছে।তবে,
দোকান বন্ধ দেখে তূর্যয়ের মন খারাপ হলো।রাতটাও তো বেশ গভীর হয়েছে এখন।তূর্যয় ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো,গাড়ি শান্তি মহলের দিকে এগিয়ে নিতে।

সকালের দিকে তূর্যয় ঘুম থেকে উঠেই তার বাড়িতে চলে এলো।তূর্যয়ের কাছে শান্তি মহলকে অশান্তির মহল বলে মনে হয়।সে এখন হাসানের মৃত্যুর অপেক্ষায় আছে।একবার হাসান মরুক,এরপর সে আর কখনোই সেই শান্তি মহলে ফিরবে না,আর না রাখবে তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক;এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।এরপর তার মায়ের অংশটুকু সেখান থেকে নিয়ে সেই অংশ অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিবে,সে এমনটাই ভেবে রেখেছে।শুধুমাত্র তার মায়ের মারা যাওয়ার আগের কিছু কথার কারণে তূর্যয় হাসান,সাবিনা আর আহমেদকে মারতে পারে না।যখনই তূর্যয়ের মনে খেয়াল আসে সে তাদের মেরে ফেলবে,তখনই তার মায়ের মৃত্যুর আগের দিনের কথা তার কানে ভেসে আসে,
–“দেখ তূর্যয়,যতোই কিছু হোক না কেনো;হাসান সাহেব যাদের ভালোবাসবে,যাদের জন্য ভাববে তুই কখনো তাদের সাথে খারাপ আচরন করবি না।হাসান সাহেব এখন তোর বাবা।তাকে তার মর্যাদা দিবি।”
হাসান,সাবিনা আর আহমেদকে অনেক ভালোবাসে,এটা জানে তূর্যয়।আর ঠিক এই কারণেই সে তাদের ক্ষতি করতে পারেনা।বারবার সে তার মায়ের ওয়াদায় সীমাবদ্ধ থাকে।কিন্তু তূর্যয় মনে মনে ভেবে রেখেছে,
–“আমার রৌদ্রের দিকে যখন আহমেদ তার খারাপ হাত দিয়েছিল,তখন আমার রৌদ্রের জন্যে আমার কোনো অনুভূতি ছিল না। যার কারণে সে বেঁচে গিয়েছিল সেদিন।আর রাহেলার সাথে মিলে সাবিনা যা করেছিল,
সেদিন আমার রাণীর কিছু হলে তাকে আমি সেদিনই মেরে দিতাম।রৌদ্রের প্রতি জাস্ট আর একটা ভুল করুক, আমার হাতেই সেদিন মরবে তারা। এতে আমার মায়ের ওয়াদার খেলাফ হবে না।কারণ,মা তার ওয়াদা পালনের পাশাপাশি আমাকে সর্বদা বলতো,
–“অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবি সবসময়।একটা কথা মনে রাখবি,অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে;
দুইজনই সমান অপরাধী।”
এইসব নানান কথা ভাবতেই তূর্যয়ের মনটা হিংস্রতায় ছেয়ে যাচ্ছে।

জগিং শেষে ডার্ক হাউজে গিয়ে তূর্যয় হ্যারিকে ফোন করেছে।হ্যারি ফোন ধরে তূর্যয়কে বললো,
–“ব্রো,আমি ঘুমাবো।অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট আজকে নিজেই বানিয়ে খেয়ে নাও কিছু।কুইন আসবে না হয়তো আজ। ইয়েস্টারডে ব্যাথা পেয়েছে কুইন।”
হ্যারির কথায় তূর্যয় বেশ জোরে চিল্লিয়ে বললো,
–“কি?আমাকে আগে বলোনি কেনো?”
তূর্যয়ের চিৎকারে হ্যারির হুঁশ এলো।সে বিছানায় উঠে বসে, বুকে হাত রেখে জবাব দিলো,
–“কুইন, নিষেধ করেছে।”
–“কথা লুকানোর শাস্তি দুইজনকেই পেতে হবে।”
কথাটা বলে তূর্যয় ফোন কেটে দিলো।অন্যদিকে ঘুমের ঘোরে সত্যি বলে দিয়ে হ্যারি নিজের কপাল চাপড়াতে থাকলো।

তূর্যয় ব্যালকনিতে গিয়ে রাণীকে ফোন করতেই দেখলো রাণী তার বাড়ির বিশাল দরজার ছোটো গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে।তূর্যয় মোবাইল হাতে নিয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নামার জন্যে পা বাড়ালো।

রাণী হেলে দুলে হাটছে। কাল রাতের ব্যাথায় জায়গায় এখনো ব্যাথা অনুভব করছে সে।কিন্তু ব্যাথা পাওয়া স্থানে ওষুধ লাগালে আরো বেশি জ্বলবে, তাই রাণী কিছুই লাগালো না। কাউকে এই ব্যাপারে সে জানালোও না কিছু।তার পেটের ডান দিকে ছিলে গিয়েছে,এটা সে আজ কাপড় পড়তে গিয়ে দেখলো। কাল রাতে তো দোকান থেকে ফিরেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছিল সে। বসার ঘরে আসতেই রাণীর পা থমকে গেলো তূর্যয়ের গর্জনে,
–“আমার থেকে কথা লুকানোর সাহস পাস কিভাবে?”
রাণী নিজের বুকে হাত রেখে থু দেওয়ার মতো ভঙ্গি করলো।এরপর সে তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
–” আমি কি করেছি?”
তূর্যয় রাণীর কথায় ধপধপ পা ফেলে রাণীর কাছে এসে রাণীর ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠলো,
–“কাহিনী করছিস আমার সাথে?”
–“কি?”
রাণীর প্রশ্নে তূর্যয় তার ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে রাণীর পড়নে লম্বা হাতার কামিজের হাতা উঠাতেই রাণী নিজের হাত টেনে নিলো,
–“আরে কি করছেন?”
তূর্যয় বেশ রাগী চোখে রাণীর দিকে তাকিয়ে রাণীর হাত টেনে ধরলো।জামার হাতা উঠিয়ে রাণীর হাত পর্যবেক্ষণ করতেই তূর্যয় দেখলো, রাণীর হাতের বাহুর দিকে রক্ত জমে কালচে হয়ে আছে।তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে রাণীকে প্রশ্ন করলো,
–“এগুলো কি?”
রাণী এইবার ভয় পেলো।সে বিড়বিড় করে বলছে,
–“এই দানব জানলো কিভাবে এইসব?”
তূর্যয় রাণীর দিকে ঝুঁকে বললো,
–“এই দানব তার রৌদ্রের সব কথা জানে।”
রাণী কিছু বলতে নিলে,তূর্যয় রাণীর হাত চেপে তার রুমে নিয়ে এলো।রাণীকে বিছানায় বসিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স থেকে অয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাণীর ব্যাথা পাওয়া স্থানে লাগিয়ে দিলো।অল্প ব্যাথায় রাণী মুখ কুঁচকে রেখেছে।তূর্যয় সেইদিকে লক্ষ্য করে রাণীকে ধমক দিয়ে বললো,
–“আবারও নাচানাচি করতে হয়েছে তোমার,তাই না?একটা মেয়ে এতো চঞ্চল কিভাবে হয়?ব্যথা পেতে ভালো লাগে বেশি?আমি বুঝি না রৌদ্র,সবার কেয়ার করো তুমি।নিজের কেয়ার করো না কেনো?”
রাণীর চোখ ভরে এলো তার প্রতি তূর্যয়ের এমন যত্ন দেখে।তূর্যয় তার জীবনে না এলে,সে আপন মানুষ কেমন হয়, এমন অনুভূতি কখনোই পেতো না।রাণীকে চুপ করে ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তূর্যয় রাণীকে মুখে হাত রেখে বলে উঠলো,
–“সরি,বকা দেওয়ার জন্যে।”
রাণী কিছু না বলে উঠে যেতে নিলে,তূর্যয় রাণীর হাত চেপে বললো,
–“আর কোথায় কোথায় ব্যথা লাগছে?”
রাণী নরম কণ্ঠে উত্তর দিলো,
–“কোথাও না।”
–“রৌদ্র?”
তূর্যয় রাণীকে চিল্লিয়ে তার কোমর চেপে ধরতেই রাণীর পেটের ডান পাশে চাপ লাগলো তূর্যয়ের হাতের।সাথে সাথে রাণী জোরে চিল্লিয়ে উঠলো,
–“মাগো!”
তূর্যয় রাণীকে ছেড়ে দিলো।তূর্যয়ের চোখে রাণীর ব্যাথার কষ্টটা দেখা যাচ্ছে।তূর্যয় রাণীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,
রাণীকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কোথায় ব্যথা লাগছে?”
রাণী নিজের পেটের ডান দিকের জামা খামচে ধরলো।নিজের ঠোঁট চেপে ধরে রাণী মাথা নাড়ালো।যার অর্থ,কোথাও না।
তূর্যয় বুঝতে পেরে,রাণীর পেটের ডান দিক থেকে কামিজ সরাতে নিলেই রাণী একটু পিছিয়ে বললো,
–“ক..কি করছেন?আমি ঠিক আছি।”
–“চুপ একেবারে।ব্যাথায় মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।আমাকে না দেখালে,ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো,এরপর উনারা অপারেশন করিয়ে ছাড়বে।এটা বেশি ভালো হবে?আমাকে দেখাও কি হয়েছে।তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো।তারপরও আমাকে দেখাও,প্লিজ।”
রাণীর মাথায় তূর্যয়ের কথায় তার মনের অনেকদিনের জমানো প্রশ্ন নাড়া দিলো।এই সুযোগে রাণী তার উত্তর পেয়ে যাবে,এটা ভাবতেই রাণী মাথা নাড়ালো।সে তূর্যয়ের দিকে হাত এগিয়ে বললো,
–“যা বলবো,তাই কিন্তু শুনতে হবে।যেই প্রশ্ন করবো,তার উত্তর দিতে হবে কিন্তু।ওয়াদা?”
তূর্যয় দাঁড়িয়ে পড়লো।রাণীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে রাণীর হাতের উপর হাত রেখে তূর্যয় জবাব দিলো,
–“ওয়াদা।”

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে