আলো-আঁধার পর্ব-২৬

0
1050

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা:সালসাবিল সারা

২৬.
চোখে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে রাণী।মনে হচ্ছে তার চোখের অস্তিত্ব নেই।রাণী বারবার সাবিনার ঠিক করা লোকদের বলতে চাইছে,তার চোখে প্রচন্ড ব্যাথা লাগছে।কিন্তু,সে বলতে পারছে না;তার মুখ বাঁধা থাকার কারণে।চোখের বাঁধনটা রাণীর চোখের ব্যাথার সাথে মাথা ব্যাথাটাও বাড়িয়ে দিচ্ছে।রাণী একপ্রকার অস্বস্তিতে পড়লো।রাণী নিজে নিজেই হাতের বাঁধন খোলার চেষ্টা করছে।রাণী গাড়িতে থাকা লোকদের কথায় বুঝতে পারছে,তারা রাস্তার গুন্ডা।রাণীর মাথায় এটাই আসছে না,তারা কেনো তাকে অপহরন করছে।রাণী মনে মনে আল্লাহ্ আর তূর্যয়কে স্মরণ করছে।রাণীর মনে হচ্ছে আজই তার শেষ দিন।রাণী মনে মনে ভাবে লাগলো,
–“আল্লাহ্,আমি এতো জলদি মরতে চাই না।আমি তূর্যয়ের সাথে থাকতে চাই,উনার জীবনের আলো হয়ে।জানিনা আমি আজ কোথায় যাবো,আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে?আল্লাহ্,আপনার কাছে একটাই দোয়া রইলো;তূর্যয়কে আপনি আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।অন্তত শেষবারের মতো হলেও নিজের মনের কথাটা উনাকে জানাতে চাই।যদি আজ বেঁচে থাকি, তাহলে উনার অতীতের কষ্ট দূর করে এরপরই নিজের মনের কথা বলবো।আমার সাথে খারাপ কিছু যেনো না হয়, আল্লাহ্।আমি শুধু একবার তূর্যয়কে দেখতে চায়,আল্লাহ্ প্লিজ!”
রাণী মনে মনে আল্লাহ্ এর কাছে দোয়া করছে।

কালো রঙের একই মডেলের গাড়ি আর পেছনে ফরহাদকে দেখে তূর্যয় অপহরণকারীর গাড়ি চিনতে পেরেছে।গাড়ি তূর্যয়কে ক্রস করতেই,তূর্যয় সেই গাড়ির পেছনের চাকায় শুট করলো।বিকট শব্দে টায়ার পাংচার হয়ে গেলো আর গাড়ি এলোমেলো হয়ে থামলো আরো একটু দূরে।

এইভাবে এলোমেলো হয়ে জোরে গাড়ি থেমে যাওয়ার কারণে রাণী সামনের সিটের সাথে মাথায় জোরে আঘাত পেলো।রাণীর সম্পূর্ন দুনিয়া যেনো ঘুরে উঠলো।রাণীকে সেই অবস্থায় গাড়িতে রেখে অপহরণকারীর মধ্যে দুইজন গাড়ি থেকে নামলো,গাড়ির চাকা দেখার জন্যে।ফরহাদ নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে।আর তূর্যয় হিংস্র চোখে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তূর্যয়কে দেখতে পেয়ে ফরহাদ ধীর গতিতে বাইক নিয়ে তূর্যয়ের পেছন পেছন আসছে।টায়ার ঠিক করার সময় একজন অপহরণকারী দেখতে পেলো তূর্যয়ের গায়ের অবয়ব।কিন্তু তূর্যয়ের চেহারা ভালো করে না দেখেই লোকটা তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“কি মামা?কি কাম এইহানে?”
তূর্যয় কিছু বললো না।ল্যাম্পপোস্টের নিচে আসতেই লোকটার হাত থেকে টায়ার ঠিক করার যন্ত্রটা পড়ে গেলো।লোকটা কাঁপতে কাঁপতে বসা থেকে উঠে মুখ হাঁ করে তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে আতংকিত কণ্ঠে বললো,
–“তূর্যয় বস? আপ..আপনি?”
লোকটার এমন কথা শুনে অপহরণকারীর মধ্যে আরেকজন লোক উঁকি দিয়ে তূর্যয়কে দেখে,সেই লোকটা মুহূর্তেই যেনো বরফ হয়ে গেলো।তূর্যয় দেরী না করেই গলা চেপে ধরলো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার। তা দেখে অপর লোক বলতে শুরু করলো,
–“বস বস!বাইরে আসেন।তূর্যয় বস আইছে।”
অপহরণকারীর প্রধান এই কথা শুনে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।রাণী তূর্যয়ের নাম শুনে আল্লাহ্ এর কাছে শোকরিয়া আদায় করছে।কিন্তু, রাণী এটা বুঝছে না;
রাণী এই গাড়িতে আছে,এই কথাটা তূর্যয় জানে কিনা!রাণী এখনো নিজের হাত খোলার চেষ্টা করছে।তূর্যয় ফরহাদকে ইশারা করতেই ফরহাদ হেঁটে সেই কালো রঙের গাড়ির সামনে গিয়ে দেখলো রাণীকে বেঁধে রাখা হয়েছে।ফরহাদ দ্রুত তূর্যয়ের কাছে এসে বলতে লাগলো,
–“বস,রাণী ম্যাডাম গাড়িতেই আছে।”
তূর্যয় রাণীর খোঁজ করছে, এটা ভাবতেই
অপহরণকারীদের জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। ফরহাদের কথা শুনে তূর্যয় খট করে লোকটার গলা ছেড়ে দিয়েছে।রাগে তূর্যয়ের শরীর রীতিমত গজগজ করছে।তূর্যয়ের কাছে এসে অপহরণকারীদের প্রধান তার পা ধরে বলে উঠলো,
–“এই মাইয়্যা,আপনার কিছু লাগে এটা জানলে আমরা মোটেও এই কাম করতাম না, স্যার।মাফ কইরা দেন।”

তূর্যয় পা ঝাড়া দিতেই লোকটা দূরে গিয়ে পড়লো।বাকি দুইজন লোক পালানোর চেষ্টা করতেই তাদের শুট করলো ফরহাদ।লোকগুলো সেই জায়গাতেই মারা যায়।তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় ফরহাদের দিকে।ফরহাদ হাত উচুঁ করে বলে উঠলো,
–“আমি ম্যাডামকে নিয়ে আসি।”
তূর্যয় ঘাড় কাত করলো।এই দেখে ফরহাদ গেলো রাণীর কাছে। সে রাণীর হাতের বাঁধন খুলে দিতেই, রাণী নিজের চোখের,মুখের বাঁধন আর হাতের বাঁধন খুলে নিলো।মাথায় আর চোখে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে সে।রাণীর চোখের বাঁধন খোলার পর থেকেই রাণী চোখে ঝাপসা দেখছে।গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে রাণী নিজের অবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
তূর্যয় অপহরণকারীর প্রধানকে টেনে তুললো মাটিতে বসা অবস্থা থেকে। হিংস্র চোখে অপহরণকারীর প্রধানের দিকে তাকিয়ে তূর্যয় জোরে চিল্লিয়ে বললো,
–“যাকে তুলে নিয়েছিস,সে আমার জান।আর এই ভুলের কোন ক্ষমা হবে না।কে করিয়েছে এই কাজ?বস কে তোদের?”
লোকটা মুখ খুলছে না।এমনিও জানে লোকটা,আজ সে মরবে।সাবিনার নাম বললেও সে মরবে।আর না বললেও সে মরবে।লোকটা তার কাজকে নিজের শক্তি মনে করে।আর এখন যদি সে সাবিনার নাম বলে দেয় তাহলে নিজের চোখেই সে কাপুরুষ হয়ে যাবে।তাই লোকটা ভয় মাখা কন্ঠে বললো,
–“বলতে পারুম না।মাফ করবেন আমায়।”
তূর্যয় তার ব্যান্ডেজ বাঁধানো হাত মুঠ করে, নাক বরাবর ঘুষি দিলো লোকটার। ঘুষি এতো জোরেই মেরেছে তূর্যয়,
যার কারণে তূর্যয়ের ব্যান্ডেজের উপর রক্তের দেখা মিললো আর ভাঙলো সেই লোকের নাক।ব্যাথায় লোকটার জান যায় যায় অবস্থা।লোকটা “মাগো” বলেই চিল্লিয়ে উঠলো।কিন্তু তূর্যয়ের মনে দয়া হয়নি।সে লোকটার গলা চেপে ধরে বলে উঠলো,
–“নাম বল।”
লোকটা দুই হাত উচুঁ করে বলতে লাগলো,
–“বলছি,বলছি।”
তূর্যয় লোকটার গলা ছেড়ে দিলো।গলায় নিজের হাত দিয়ে লোকটা মাটিতে বসে কাশতে লাগলো।তূর্যয় বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।লোকটা মাটিতে বসে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো।তূর্যয় লোকটাকে জোরে চিল্লিয়ে বললো,
–“ঐ শালা?”
লোকটা কেঁপে উঠলো।ধীরে ধীরে পকেট থেকে লোকটা বের করলো তার পিস্তল।এই দেখে তূর্যয়ও লোকটার দিকে নিজের পিস্তল তাক করলো।লোকটাকে গালি দিয়ে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“পিস্তল রাখ!”
রাণী কেঁপে উঠলো তূর্যয়ের কথায়।রাণী নিজেকে সামলিয়ে গাড়ির পেছনে তাকানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু, কিছুই দেখতে পেলো না সে।সবটাই ঝাপসা লাগছে তার।রাণী নিজের মাথা চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামতে গেলে,ফরহাদ তাকে ধরার চেষ্টা করতেই,রাণী হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো ফরহাদকে।আর দূর্বল কণ্ঠে ফরহাদকে সে বললো,
–“আমাকে ধরতে দেখলে,আপনার বস আপনাকে মেরে দিবে।আমি যেতে পারবো।”
রাণী ধীরে ধীরে পা ফেলে হাঁটছে।
অন্যদিকে,সেই লোকটা তূর্যয়কে বলছে,
–“আমি কাপুরুষ না।আমি না নিজেরে আপনার কাছে সোপর্দ করমু,না নিজের বসের নাম কমু।আপনি আমার মাইরা ফেলানোর আগে আমি নিজেরই মাইরা ফালামু।”
লোকটা নিজের দিকে গুলি তাক করে,গুলি চালিয়ে দিলো কপাল বরাবর।অতঃপর লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।তূর্যয় হাত মুঠ করে রাগী কণ্ঠে বললো,
–“ধেত!”
আর গুলির শব্দে রাণী চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
–“তূর্যয়!”
রাণীর দিকে তূর্যয় তাকালো দ্রুত।রাণীকে দেখে তূর্যয়ের শরীর শীতল হয়ে এলো।রাণী ঝাপসা চোখে তূর্যয়ের অবয়ব দেখছে।এইটা মূলত জঙ্গলের রাস্তা।তাই এখানে তেমন গাড়ি,আর লাইট নেই। ভাঙা ল্যাম্পপোস্টের হালকা ঝাপসা আলোয় তূর্যয়ের দেহের সেই অবয়ব রাণীকে তূর্যয়ের জানান দিচ্ছে।রাণীর মাথায় নিজের অপহরণের কথার চেয়ে তূর্যয়ের অতীতের কথা বেশি মনে পড়ছে।রাণীর সেইসব কথা মনে আসতেই চোখে পানি জমলো তার।রাণী দেরী না করেই দৌড় দিলো তূর্যয়ের দিকে।তূর্যয়ের কাছে গিয়ে এক লাফেই রাণী তূর্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো।আর তূর্যয় একহাতে রাণীর কোমর চেপে ধরে তাকে আলগিয়ে নিলো।তূর্যয়ের গায়ে আঘাত পাওয়া স্থানে সে হালকা ব্যাথা অনুভব করছে।কিন্তু,রাণীকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে তূর্যয় সব ব্যাথা ভুলে, সুখটাই অনুভব করছে বেশি।রাণী শক্ত করে তূর্যয়ের গলায় হাত পেঁচিয়ে রেখেছে।
ফরহাদ তাদের দেখে ড্রাইভারের কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
–“তোর দলের সবাই মরেছে।তাহলে তুই বেঁচে আছিস কেনো?তাছাড়া এতক্ষণে পালিয়ে যাসনি কেনো?”
ড্রাইভার ভীত হয়ে ফরহাদকে বললো,
–“আমি তাদের কেউ না।ওরা আমার গাড়ি ভাড়া নিছিলো।তাই আমি পালাইলাম না।আমি হইলাম সহজ সরল মানুষ।”
ফরহাদ লোকটার সত্যতা জানতে,তার সাথে নানা আলোচনা করছে।

তূর্যয় নিজের সাথে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রাণীকে।রাণীর পা মাটি থেকে অনেক উপরে আছে।রাণীর কান্নার শব্দে তূর্যয় এক হাতে রাণীর কোমর চেপে, অন্য হাতে রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কণ্ঠে বলতে লাগলো,
–“তুমি ঠিক আছো,রৌদ্র?”
রাণী মাথা নাড়ালো।যার অর্থ সে ঠিক আছে।রাণী ঠিকই আছে,কিন্তু সে তূর্যয়ের অতীতের কথা ভেবে কান্না করছে।
রাণীর মাথা নাড়ানো দেখে তূর্যয় তাকে প্রশ্ন করলো,
–“ঠিক থাকলে কেউ কান্না করে?কে ছিলো লোকগুলো? আগে চিনতে তুমি তাদের?”
এইবারও রাণী মাথা নাড়ালো।যার অর্থ,সে চিনে না।তূর্যয় রাণীর এমন কান্ড দেখে নিজের ঠোঁট বাঁকা করলো।সে রাণীকে আবারও প্রশ্ন করলো,
–“ভয় পাচ্ছিস? ভয়ের কিছু নেই।তূর্যয় বেঁচে থাকতে তোর গায়ে কেউ হাত লাগানো তো দূরের কথা, তোর দিকে চোখ তুলে তাকানোও অসম্ভব।তূর্যয় কাউকেই ছাড়বে না।মেরে দিবে সবাইকে।”
রাণী তূর্যয়ের কথা শুনে নিচে নামতে চাইলো।কিন্তু তূর্যয় তাকে নামতে দিলো না।তূর্যয় রাণীর কোমর চেপে ধরে আছে এখনো।রাণী এইবার নিজের মুখ খুললো।সে তূর্যয়ের গলা ছেড়ে তাকে বলে উঠলো,
–“ছাড়ুন।নিচে নামবো।”
তূর্যয় রাণীর দিকে তাকালো।রাণী মাথা নিচু করে এখনো কান্না করছে দেখে,তূর্যয় রাণীর গালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।রাণী তূর্যয়ের দিকে তাকাতেই,রাণীর নাকে কামড় দিলো তূর্যয়।রাণী তূর্যয়ের শার্টের কলার চেপে ধরলো।আর ধীর কণ্ঠে বললো,
–“রাক্ষস একটা!”
তূর্যয় রাণীর কানের পাশে নিজের ঠোঁট নিয়ে রাণীকে ফিসফিস করে জবাব দিলো,
–“তোর জন্যে।”

–“বস,এই ড্রাইভার এদের সাথে যুক্ত না।”

ফরহাদের কথায় রাণী হালকা করে চড় দিলো তূর্যয়ের বুকে।তূর্যয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রাণীকে নামিয়ে দিলো নিচে।কিন্তু,রাণী তূর্যয় থেকে দূরে সরে যায়নি। সে তূর্যয়ের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্যয় রাণীর কাঁধে হাত রেখে, জড়িয়ে ধরলো তাকে।রাণীর মন বারবার সেই ছোট্ট তূর্যয়ের জন্যে আনচান করছে।তূর্যয় ফরহাদের কথায় উত্তর দিলো,
–“এরা কাদের লোক বের কর জলদি।রাতের মধ্যেই খবর চায়।”
ফরহাদ মাথা নাড়ালো।

তূর্যয় রাণীকে নিয়ে গাড়ির দিকে যেতেই, রাণী থেমে গেলো।তূর্যয় ভ্রু উঁচিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি সমস্যা, রৌদ্র?কোথাও কষ্ট হচ্ছে?”
রাণী অস্ফুট স্বরে বলল,
–“নাহ।”
–“তাহলে?চলো?”
তূর্যয়ের কথায় রাণী ফরহাদের বাইকের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
–“এটাতে যাবো।”
তূর্যয় হালকা হাসলো রাণীর এমন কান্ড দেখে।রাণী তূর্যয়ের চাপা হাসি দেখে বলে উঠলো,
–“হাসবেন না।”
তূর্যয় মাথা দুলিয়ে রাণীর হাত চেপে ধরলো।ফরহাদকে উদ্দেশ্য করে তূর্যয় তাকে বললো,
–“বাইক ধার দে।”
ফরহাদ হেসে বাইকের চাবি তূর্যয়ের হাতে দিয়ে জবাব দিলো,
–“আপনার টাকায় তো বাইক কেনা, বস।”
চাবি নিয়ে তূর্যয় ফরহাদকে বলে উঠলো,
–“আমার গাড়ি নিয়ে যা।আর এই চক্রের পেছনে কে আছে, সেটা জানতে কাজে লেগে পড়।ওসিকে ফোন করে এই কেসে ইনভলভ কর।”
ফরহাদ “ঠিক আছে,বস” বলে চলে গেলো তূর্যয়ের গাড়ি চালিয়ে।

রাণী এখনো ঘোরের মধ্যে আছে তূর্যয়ের অতীত নিয়ে।তূর্যয় রাণীকে বাইকের সামনে এনে দাঁড় করালো।বাইক স্টার্ট দিয়ে তূর্যয় রাণীকে নির্দেশ দিলো,
–“উঠো।”
রাণী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তাই তূর্যয় রাণীর গালে হাত রেখে বলে উঠলো,
–“কি হয়েছে?এখন তুই একদম নিরাপদ।এতো ভয় কিসের?”
রাণী কিছু বললো না।তূর্যয়ের অতীত জানে রাণী,এই কথাটা আপাতত রাণী তূর্যয়কে জানাতে চাচ্ছে না।কিছু না বলেই রাণী তূর্যয়ের পিছে বসলো।নিজের ওড়না গলায় ঝুলিয়ে পেছন থেকেই রাণী শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তূর্যয়ের পেট।ধীর গতিতে রাণী নিজের মাথা রাখলো তূর্যয়ের পিঠে।তূর্যয়ের পেটে রাখা রাণীর হাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলো তূর্যয়।তূর্যয় ভেবে পাচ্ছে না আজ রাণীর কি হলো।সে মনে মনে ভাবছে,
–“আজ আমার রৌদ্রের কি হয়েছে?নিজ থেকেই আজ আমার এতো কাছাকাছি আসছে সে।আমি কিভাবে আমাকে সামলিয়ে রেখেছি সেটা একমাত্র আমি জানি।কেনো,সবকিছুতে এতো বাধা!হয়তো আজ,রাণী অনেক ভয় পেয়ে আছে অপহরণের কাহিনীতে।চিন্তা নেই রৌদ্র,
যারা এই কাজ করেছে তাদের আমি শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।”
কথাগুলো ভেবে তূর্যয় বাইক চালানো শুরু করলো।হেলমেট থাকা সত্বেও তূর্যয় হেলমেট পড়লো না।একে তো এই ঘন জঙ্গলের রাস্তায় কেউ তাদের দেখছে না,তার উপর এতো ঠান্ডা পরিবেশের ঠান্ডা বাতাস সাথে তার রৌদ্র তাকে আকড়ে ধরে বসে আছে, তূর্যয় এইসব কিছু উপভোগ করার লোভ সামলাতে পারছে না।হেলমেট পড়লে তূর্যয়ের মুখে ঠান্ডা বাতাস লাগবে না,আর সে এই রোমাঞ্চকর বাতাস থেকে বঞ্চিত হবে।তাই সে আর হেলমেট পড়লো না।হঠাৎ করেই রাণী তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“সরি।”
তূর্যয় একটু বিষম খেলো।রাণীর হাতের উপর হাত ঘষে তূর্যয় রাণীকে প্রশ্ন করলো,
–“কেনো?”
রাণীর চোখে আবারও জল এলো।তূর্যয়কে সে অনেকবার অনেক কথা শুনিয়েছে।আজ সব সত্যি জানার পর তূর্যয়ের প্রতি অনেক করুণা হচ্ছে তার।রাণী নিজের চোখের পানি সামলিয়ে ভারী গলায় বলে উঠলো,
–“এ..এমনি।”
–“এমনি কেউ সরি বলে?আগে তো জানতাম না।এখন সত্যিটা বল,নাহলে এই জঙ্গলে তোকে রেখে একা চলে যাবো আমি।”
রাণী মুচকি হাসলো তূর্যয়ের কথায়।রাণী আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তূর্যয়ের পেট। সে তূর্যয়কে জ্বালানোর জন্যে তাকে জবাব দিল,
–“ঠিক আছে।আমাকে নামিয়ে দিন।আর আপনি চলে যান।”
–“বলবি না?”
তূর্যয়ের রাগী কণ্ঠ।
রাণী অবাক হলো এই ছেলের কান্ড দেখে।রাণী তূর্যয়কে বললো,
–“এইতো শুরু করলেন তো?একটুও কি শান্ত থাকতে পারেন না আপনি?”
তূর্যয় মাথা নাড়ালো,
–“নাহ।আমি এমনই,অশান্ত।কি হয়েছে বল?হঠাৎ সরি কেন বলেছিস?”
–“উফ,ছাড়বেন এই কথা?”
–“আমি কিন্তু আবার হিংস্র হয়ে যাচ্ছি,রৌদ্র।”
তূর্যয়ের সোজা জবাব।
তূর্যয়ের কথায় রাণী তূর্যয়ের পিঠ থেকে মাথা তুলে তূর্যয়ের কানে কানে বলে উঠলো,
–“আস্ত সন্ত্রাসী একটা, আপনি।নাছোড়বান্দা সন্ত্রাসী।”
তূর্যয়ের শরীর শিরশির করে উঠলো রাণীর এমন ফিসফিস কণ্ঠে।বাইকের আয়নায় তাকাতেই তূর্যয় দেখলো রাণীর মুখে চুলে এলোমেলো হয়ে আছে।রাণী সেই চুল সামলানোর তালে তূর্যয়ের দিকে ঘোর মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তূর্যয়ের চোখ জ্বালা করছে রাণীর এমন রূপ দেখে।মিটমিট আলোতে রাণী হালকা ঝাপসা চোখে তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,আর তূর্যয় বাইক চালানোর পাশাপাশি রাণীকে দেখছে।বাতাসের তীব্রতায় তূর্যয়ের চুল জেল থেকে মুক্তি পেলো।শার্টের কলারের সাথে সাথে তূর্যয়ের চুল হালকা নড়ে উঠছে।রাণী তূর্যয়ের পেট থেকে এক হাত তুলে তূর্যয়ের চুল ঠিক করে দিলো।তূর্যয় চোখ বন্ধ করলো।তূর্যয়ের মাথা থেকে রাণী হাত নামানোর আগে তূর্যয় রাণীর হাত ধরে শক্ত করে চুমু দিলো তার হাতে।রাণী আবেশে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
দুইজন মানব মানবী,একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসে।এই রোমাঞ্চকর পরিবেশে দুইজনের সংস্পর্শে, দুইজনের হৃদপিণ্ডের শব্দ বাড়তে লাগলো।কিন্তু,তারা দুইজনই নিশ্চুপ।দুইজনই অপেক্ষা করছে,সবকিছুর ঝামেলা মিটিয়ে এরপরই তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা আনতে।

তূর্যয় বাইক থামালো একটা কাঠের ঘরের সামনে। এখানেও বাহিরে লাইটের পরিমাণ একদম কম।বাইক থামতেই রাণী তূর্যয়ের পিঠ থেকে মুখ তুললো।রাণী ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো তূর্যয়কে,
–“কোথায় এসেছি?”
তূর্যয় বাইক থেকে নেমে বললো,
–“আমার অন্য এক আস্তানায়।”
রাণী নিজের কপাল চাপড়িয়ে তূর্যয়কে জবাব দিল,
–“সন্ত্রাসী মানুষের সাথে ঘুরতে গেলে যা হয়!”
তূর্যয় রাণীর নাক টেনে দিলো।রাণী ব্যাথায় চোখ রাঙালো তূর্যয়কে।সে রাণীকে নামতে ইশারা করে রাণীকে বললো,
–“কিছুই করার নেই।চারপাশের মানুষ বড্ড হিংস্র।সবাই আমার ক্ষতি করতে চায়।আর আমার ক্ষতি করা সম্ভব না।তাই আমার আপন মানুষদের খোঁজ পেলে তারা কাউকে ছাড়বে না।আমার অগোচরে অঘটন করে ফেলবে। যেটার কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারবো না।”
রাণী বুঝতে পারছে তূর্যয় কি বলতে চেয়েছে।রাণী নেমে তূর্যয়ের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো।রাণী মনে মনে ভাবছে,
–“সন্ত্রাসীর সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তোর, রাণী।এইসব কিছুর অভ্যাস করে নে তুই।”
রাণী ঘোলা চোখে সবকিছু দেখছে এখনো।এই কুঠির ঘর সামনে দিয়ে দেখতে সাধারণ হলেও,ভেতরে বেশ অন্যরকম।তূর্যয় ভেতরে ঢুকে কোথায় চলে গেলো।এখন পর্যন্ত রাণী স্পষ্ট চোখে তূর্যয়ের চেহারা দেখতে পায়নি।রাণীর ইচ্ছা করছে তার চোখ দুটিতে একটু পানির ছিটা দিতে।সামনেই সে একটা বেসিনে নলের মতো কিছু দেখতে পেলো।রাণী দ্রুত চোখ ধুয়ে নিলো নিজের।এখন রাণীর বেশ ভালো লাগছে চোখে।সবকিছু ভালই দেখতে পারছে সে।রাণী নিজের ওড়নায় মুখ মুছে নিলো।এইবার সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে।এই ঘরটা অন্যরকম।এইখানেও তূর্যয়ের ছবি লাগানো।ছবির সামনেই একটা বড় চেয়ার,টেবিল রাখা আছে।টেবিলের সামনে আরো দুইটা চেয়ার।এর পাশেই একটা লম্বা গলি। তবে,এইখানে আরো রুমের দেখা পাচ্ছে রাণী। তূর্যয়কে দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হচ্ছে সে।রাণী বেশ চিন্তিত হয়ে তূর্যয়কে ডাকতে লাগলো,
–“তূর্যয়?তূর্যয়?”
রাণীর শব্দের বিপরীতে সে তূর্যয়ের শব্দ শুনতে পেলো,
–“বলো।”
রাণী চোখ ঘুরিয়ে তূর্যয়কে খুঁজছে।একটু পরেই রাণী তূর্যয়কে দেখতে পেলো।সাথে একজন গার্ডের কাপড় পড়া এক লোককে দেখলো সে।
লোকটার হাতে নাস্তার ট্রে দেখা যাচ্ছে।রাণী চোখ বড় করে তূর্যয়কে প্রশ্ন করলো,
–“আপনি কই ছিলেন?আর উনি কোথা থেকে এলো?”
–“আরে ম্যাডাম,আমি দূর থেকে স্যারকে দেখতে পেয়ে ভেতরে এসে লাইট জ্বালালাম সব।এরপর স্যার ভেতরে এসেই আমাকে কিছু ফল কেটে দিতে বললো।”
গার্ড জবাব দিলো রাণীকে।

–“যাও এখন।”
তূর্যয়ের কথায় লোকটা চলে গেলো।রাণীকে চেয়ারে বসিয়ে তূর্যয়ের নিজে রাণীর সামনে বসে পড়লো।তূর্যয় এক টুকরো আপেল মুখে দিয়ে সামনে তাকাতেই,রাণী তূর্যয়ের চোখের পাশে রক্ত জমাট,হাতের ব্যান্ডেজে রক্ত উঠে থাকা,সবটা দেখে রাণীর বুকে বেশ কষ্ট লাগলো।রাণী চেয়ার টেনে তূর্যয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে তূর্যয়ের চোখের পাশে রক্ত জমাটে হাত রাখলো।তূর্যয় রাণীর দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কিছু খাও।এইখানে এইসব ছাড়া কিছু নেই।গার্ড বাড়ি থেকে খাবার এনেছিল,আর এই ফলগুলোও তার।”
–“খাবো না।”
তূর্যয় রাণীর চিন্তিত মুখ দেখে সুখ লাভ করছে।তূর্যয়ের প্রতি রাণীর চিন্তিত চোখে তাকানোটা তূর্যয়ের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।তূর্যয় রাণীর গাল চেপে,এক টুকরো আপেল মুখে তুলে দিলো।রাণী কিছু না বলে চুপ করে আপেল চিবুচ্ছে।তূর্যয়ের ব্যান্ডেজ দেওয়া হাত রাণী উঠিয়ে নিয়ে তাকে বলে উঠলো,
–“ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে দিই?”
–“ফার্স্ট এইড বক্স নেই এইখানে।তাছাড়া আমি ঠিক আছি।তেমন একটা আসা হয়না এইখানে।যখন মিশনে কেউ তথ্য দিতে চায় না বা কাউকে অপহরন করতে হয়,তখন তাদের এইখানে রেখে নির্যাতন করা হয়।আমার ছেলেরাই করে এইসব কাজ।আমি আসি হঠাৎ।”
তূর্যয় আরেক টুকরো আপেল মুখে নিয়ে বললো।
–“উফফ,সারাক্ষণ এই মারপিট,খুন খারাবি।”
তূর্যয় কিছু বলার আগেই হ্যারি ফোন করলো তূর্যয়কে।তূর্যয় ঠোঁট বাঁকিয়ে মোবাইল রাণীর দিকে ফিরিয়ে বলে উঠলো,
–“এইযে তোর ভাই ফোন করেছে।”
রাণী হাসলো তূর্যয়ের মুখভঙ্গি দেখে।তূর্যয় ফোন ধরে হ্যারিকে বললো,
–“তোমার বোন সেইফ আছে।আমি রাণীকে বাঁচিয়েছি এটা যেনো কেউ না জানে।তোমার প্রেমিকাও না।রাণীর ব্যাপারে কারো সাথে কোনো কথা শেয়ার করবে না। গট ইট?”
হ্যারি অপর পাশ থেকে বললো,
–“আই নো ব্রো।তুমি থাকতে আমার সিসের কিছুই হতে দিবে না।অ্যান্ড আমি নিজেও আমার সিসের ব্যাপারে সিরিয়াস।আগে আমার সিস এরপরই আমার গার্লফ্রেন্ড।বাই দা ওয়ে,ইকরাম খবর দিয়েছে আকবরের ভাইপো আমাদের ফলস ইনফরমেশন দিয়েছে।আকবরকে এখনো পায়নি আমরা।অ্যান্ড কমিশনার মেসেজ দিয়েছে,উনি তোমার আর আমার সাথে মিট করতে চায়।”
–“আকবরের ভাইপো,হাহ! মানুষ কেনো আমার সাথে মিথ্যা বলতে আসে?মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কেনো মিথ্যা বলে ওরা; জানো তুমি,হ্যারি?’
তূর্যয়ের প্রশ্নে হ্যারি মাথা চুলকিয়ে তূর্যয়কে প্রশ্ন করলো,
–“হুয়াই?”
–“নিজের পরিবারের মানুষকে রক্ষা করতে।কিন্তু, তূর্যয়ও তার তিনজন ফ্যামিলির জন্যে তাদের মারবে।আকবরের ভাইপোর আজ শেষ দিন।সেদিন যে অত্যাচার করা হয়নি,আজ তা করবে তূর্যয়।ইকরামকে বলো,আকবরের ভাইপো এর পা ফুটন্ত পানিতে চুবিয়ে রাখতে।আর হ্যাঁ,জঙ্গলের হাইওয়েতে গাড়ি পাঠাও।কাজ সেরে আমার বাসায় আসো। বাসায় আমার সাথে দেখা করে,তোমার বোনকে নামিয়ে দিও এতিম খানায়।এরপর তুমি কমিশনার এর কাছে যাবে,আর আমি আমার বাড়ি থেকেই ডাইরেক্ট সেখানে চলে যাবো।”
তূর্যয় বললো হ্যারিকে।
–“ঠিক আছে,ব্রো।”
হ্যারির জবাব পেয়ে তূর্যয় ফোন কেটে দিলো।রাণীকে হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তূর্যয় তাকে বললো,
–“কি?”
–“এতো হিংস্র কেনো আপনি?”
রাণীর প্রশ্ন।
–“আমি তোর দানব সন্ত্রাসী,তাই!”
তূর্যয়ের জবাবে রাণীর মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।তূর্যয়ের মুচকি হাসি দেখে রাণীর ইচ্ছে করছে তূর্যয়ের ঠোঁট একটু ছুঁয়ে দেখতে।তূর্যয়ের ফোন আসাতে তূর্যয় উঠে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে লাগলো।

রাণী তূর্যয়ের দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
–“যতোই হিংস্র হোন না কেনো?আপনি এই রাণীর। বুঝতে পেরেছেন, দানব?এই রাণীর দানব সন্ত্রাসী আপনি।”
আর তূর্যয়! সে ফোনে কথা বলার মাঝে তার সেই চঞ্চল,
ভালোবাসাময় রৌদ্রকে দেখছে।

ইতিমধ্যে তিনজন মানুষের লাশ ঘন জঙ্গলের রাস্তায় পাওয়ার কারণে,খবরের হেড নিউজে পরিণত হয়েছে সেটা।লাশগুলোর মধ্যে একজনকে দেখে সাবিনার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।মুহূর্তেই সে তার লুকানো মোবাইলের সিম,মোবাইল সব ভেঙে ফেললো।তার অন্য মোবাইল বের করে সাবিনা মমতা এতিম খানার মানুষটিকে ফোন করে বললো,
–“রাণী কই?ওর অপহরণকারীরা তো মরেছে।রাণী বেঁচে আছে নাকি সেও মরেছে?”
–“জানিনা।আসেনি এখনো। মরলে তো ভালো।আর না মরলে এইবার আমরাই নামবো মাঠে স্বশরীরে।একেবারেই মেরে ফেলবো, ঐ বালের মাইয়্যারে।বালের মেয়ে মরেই না।”
–“আমি কিছুদিন বাইরে যাচ্ছি,এই কেস বন্ধ হলে এরপর আসবো।ততদিন গা ঢাকা দিতে হবে আমার।যদিও ক্ষমতা দিয়ে সব সামলাতে পারবো।কিন্তু তাও,
সাবধানের মার নেই।”
সাবিনার শয়তানি জবাব।
–“হুম, তবে আমি থামবো না।রাণীকে সুযোগ পেলেই জানে মেরে দিবো।”
–“এই না।জানে মারিস না।একটু জান আমার জন্যেও রাখিস।অনেক ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছি তার প্রতি।”
দুইজনই নানা আলোচনা করে ফোন রেখে দিলো।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর রাণী আর তূর্যয় বেরিয়ে পড়লো।বাইকে উঠার পূর্বে তূর্যয় রাণীকে মানা করেছে,
আজকের ঘটনায় সে রাণীকে বাঁচিয়েছে;এটা কাউকে না জানাতে।এমনকি তার বান্ধবীদের পর্যন্ত জানাতে নিষেধ করেছে তূর্যয়।রাণী মাথা নাড়িয়ে “আচ্ছা” বলেছিল তূর্যয়ের কথায়।।বাইকে উঠে রাণী পূর্বের ন্যায় তূর্যয়কে জড়িয়ে ধরতেই,তূর্যয় আবারও রাণীর সেই নরম হাতের উপর নিজের হাত রাখলো।
দুইজনের অশান্ত মন বরাবরই নীরবে,একে অপরকে ভালোবাসে বলছে।কিন্তু, তাদের নীরব মনের কথা তারা নিজ কানে না শুনলেও,তারা একে অপরের প্রতি তাদের ভালোবাসা বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারে। তাদের এখন অপেক্ষা এক বিশেষ দিনের,যেদিন তাদের একে অপরকে ভালোবাসার কথা বলতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

চলবে…❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে