আলো আঁধার পর্ব-২৩

0
1133

#আলো_আঁধার

পর্ব ঃ- ২৩
~আঁখি দেব তৃপ্তি

আলোর পেইন্টিং প্রথম স্থান অধিকার করতে পারলো না কিন্তু ২য় স্থান অধিকার করলো। ১ম এক্সিবিশনে এটাই অনেক বেশি কিছু কিন্তু টাকাটা তো প্রয়োজন আলোর। পেইন্টিং এর দাম ২০/৩০ হাজার এরকম করে দামাদামি চলছে। শ্রাবণ বলে উঠলো –

“এতো কম টাকা দিয়ে কীভবে কী হবে ঈশান?”

“আচ্ছা তুই এখানটায় বস আমি গিয়ে কথা বলে আসি। ”

“আচ্ছা।”

ঈশান গিয়ে কতৃপক্ষের সাথে কথা বললো কিন্তু তারা জানালো পেইন্টিং এর দাম এতো বেশি উঠে না। আর যাই উঠবে সেখান থেকে একাডেমিও একটা অংশ রাখে নিজেদের ফান্ডে। তারপর ঈশান নিজেই পেইন্টিংটি কিনার সিদ্ধান্ত নিল। আলোর এই অসামান্য পেইন্টিং নিজের কাছে রেখে দেবার ইচ্ছে ঈশানের আগ থেকেই ছিল। কিন্তু এটা আলো জানুক তা ঈশান চায় না। আর এখন শ্রাবণও সাথে রয়েছে। ঈশান নিজের একটি ছদ্মনাম দিয়ে পেইন্টিংটি ৮০ হাজার টাকায় কিনে ফেললো আর একাডেমি যে অংশ রাখবে সেটাও আলাদা করে দিয়ে দিল। পুরো ১ লাখ টাকায় পেইন্টিং বিক্রি হলে আলোর মনে সন্দেহ জাগতে পারে তাই এই কাজ করা।

৮০ হাজার টাকায় পেইন্টিং বিক্রি হয়েছে শুনে অবাক হলো শ্রাবণ। ঈশানকে জিজ্ঞেস করলো –

“এতো টাকা দিয়ে কে কিনলো রে? তুই কী এমন করলি ওখানে গিয়ে? ”

“আমার এক আঙ্কেল ইউকে থাকেন। উনার পেইন্টিং এর খুব শখ। তাই উনাকে দিয়ে কিনিয়ে নিলাম।”

“ও, খুব ভালো করেছিস। আচ্ছা এবার চল হাসপাতালে। ”

“হুম।”

২য় স্থান অধিকারের কথা আগেই শ্রাবণ আলোকে জানিয়েছিল কিন্তু পেইন্টিং বিক্রির ব্যাপারে কিছুই জানায় নি।

হাসপাতালে পৌঁছে আলোর হাতে টাকার প্যাকেট দিয়ে বললো –
“জানো আলো তোমার পেইন্টিং ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ”

“এতো টাকা দিয়ে কে নিল!”

“সবই আমাদের ঈশান এর ক্রেডিট। ওর এক আঙ্কেল ইউকে থাকেন উনার পেইন্টিং এর খুব শখ তাই উনাকে দিয়ে তোমার পেইন্টিং কিনিয়েছে ঈশান।”

“ও, ধন্যবাদ আপনাকে।”- ঈশানের দিকে তাকিয়ে বললো আলো। ঈশান সৌজন্যমূলক মাথা নাড়িয়ে আলোর কথার উত্তর দিল।

বাকি ২০ হাজার টাকা শ্রাবণ ও তার বন্ধুরা মিলে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আলোর বাবা বললেন উনি দিতে পারবেন এইটুকু টাকা। আলো টাকাগুলো হাসপাতালে জমা দিল। তারপর আলোর মায়ের চিকিৎসা শুরু হলো।

কিছুদিন পর,
আলোর মা আস্তে আস্তে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ডাক্তার বলেছে এবার তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। এই কয়দিন হাসপাতালে থাকা, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ঘুম না হওয়ায় আলো অনেক শুকিয়ে গেছিলো। তার উপর মায়ের সুস্থতা নিয়ে চিন্তা। তবে এ কয়দিন শ্রাবণ ও তার বন্ধুরা আলোকে অনেক সাপোর্ট করেছে। যা আলোর কাছে অনেক বেশি পাওয়া মনে হয়েছে।

হাসপাতাল থেকে মাকে বাড়ি নিয়ে এলো আলো। ডাক্তার বলেছেন আর ভয়ের কিছু নেই। নিয়ম মেনে থাকলেই আর সমস্যা হবে না।

শ্রাবণের মা কয়েকদিন থেকে অনেক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আলো নামের মেয়েটার প্রতি শ্রাবণের আগ্রহ উনাকে অনেক বেশি ভাবাচ্ছে। শ্রাবণ উনাকে আলোর ছবি দেখিয়েছিল যে ছবির জন্য সে ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনে এক এক ধাপ করে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই থেকেই উনার ভাবনার শুরু। মেয়েটা অনেক কালো। যদি শ্রাবণ মেয়েটার সাথে কোনো সম্পর্কে চলে যায় তাহলে কী করবেন উনি। কোনো কালো মেয়েকে কিছুতেই ঘরের বউ হিসেবে মানতে পারবেন না তিনি। তাই ঠিক করলেন শ্রাবণ এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন।

রাতের খাবার শেষ করে টিভি দেখতে বসেছে শ্রাবণ। ওর মা এসে ওর পাশে বসলেন। তারপর কথা শুরু করলেন-

” শ্রাবণ তোর চাকরির কী খবর? সেদিন না বললি কোন একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছিস।”

“চাকরিটা বোধহয় হয়ে যাবে না। কাল পরশুর ভিতর ওরা জানাবে বলেছে।”

“হয়ে গেলে তো ভালো। আমার শরীর আজকাল ভালো থাকে প্রায় সময়। ঘরে একজন সাহায্যের মানুষ থাকলে ভালো হতো।”

“আচ্ছা আমার চাকরিটা হলে বাসায় কাজের লোক রেখে দিব।”

“আমি কী কাজের লোকের কথা বলেছি?”

“তাহলে কী বলছো?”

“তোর বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি আমি।”

“হাহাহা আমার এখনো বিয়ের সময় আসে নি মা।”

“কেন আসবে না? তোর বয়সী ছেলেরা কী বিয়ে করছে না?”

“পাগল হলে নাকি তুমি মা? আমার এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি।”

“সে তো আর কয়েকটি মাস পরে শেষ হয়ে যাবে।”

“তাও এখন আমি বিয়ের কথা ভাবছি না।”

“কী ভাবছিস ওই আলো না কালো মেয়েটার কথা?”

“কী!”

“তুই কী মনে করিস আমি কিছু বুঝি না? মেয়েটার সাথে তোর এতো ভাব কীসের?”

“ও আমার বন্ধু মা।”

“ও তোর ছোট হবে তাহলে বন্ধু কীভাবে হয়? আর বন্ধুদের কার সাথে কেমন তুই তা তো আমি বুঝি। এরকম কী আগে কখনো বলেছি? যাই হোক বন্ধু যখন তাহলে বন্ধু থাক। আমার বান্ধবী শিলার মেয়ে সুইটিকে তো চিনিস?”

“হুম চিনি কিন্তু কেন?”

“ওকে আমার ঘরের বউ করে আনবো ঠিক করেছি।”

“হা হা ও তো অনেক পিচ্চি মা।”

“পিচ্চি কোথায় ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ফেলেছে।”

“বলো কী আমি তো ভাবতাম স্কুলে পড়ে।”

“মজা করিস না। কথাটা মাথায় রাখিস। চাকরিটা হয়ে গেলেই তোর বিয়ে। ”

“আচ্ছা, সময় আসলে দেখা যাবে। এখন যাও তো মুভি দেখছি।”

রাতে শুয়ে শুয়ে আলোর কথা ভাবতে লাগলো শ্রাবণ। মা হঠাৎ এমন করে বললেন কেন? আলোর প্রতি কী সত্যিই তার আগ্রহ বেশি। এটা কি শুধুই আগ্রহ নাকি অন্যকিছু? আচ্ছা আলো এ ব্যাপারে কী ভাবছে? দেখি একটু ওর মনোভাব যাচাই করে। এই ভেবে শ্রাবণ আলোকে ফোন করলো-

“হ্যালো। “-আলো।

“কী করছো?”-শ্রাবণ।

” এইতো শুয়ে আছি।”

“হুম, আচ্ছা আলো তোমাকে একটা প্রশ্ন করার ছিল।”

“হুম বলো।”

“আমরা কী শুধুই বন্ধু নাকি….?”

হঠাৎ শ্রাবণের এমন কথা শুনে ঘাবড়ে গেল আলো। তাহলে কী শ্রাবণ বুঝতে পেরে গেছে ওর অনুভূতি? সেও কী তার মনে অন্য অনুভুতির অনুভব করছে? বুকের ভেতরেটা ধুকপুক করতে শুরু করলো আলোর।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো –

“নাকি কী?”

“নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু?”

“তুমি কী এর চেয়েও বেশি কিছু অনুভব করছো?”

“ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি?”

“জানি না।”

“তোমার গলার স্বর কাঁপা কাঁপা লাগছে কেন?

” কোথায়?”

“লাগছে তো।”

“কী বলছিলে আগে তা বলো।”

“সেটা না হয় কাল সামনাসামনিই আমি তুমি বলবো।”

“আচ্ছা।”

“ঘুমাও তাহলে কাল দেখা হচ্ছে।”

“কোথায়?”

“কফিশপে। ”

“আচ্ছা শুভ রাত্রি। ”

“শুভ রাত্রি।”

কীরকম একটা, অনুভূতি আর উত্তেজনায় রাতে ভালো ঘুম হলো না আলোর। শ্রাবণ কী ফাইনালি তাকে ভালবাসি বলবে কাল? ভাবতেই সারাগায়ে শিহরণ দিয়ে উঠছে আলোর।

পরের দিন বিকেল বেলা,
কফিশপে বসে আছে শ্রাবণ ও আলো। আলো নরমারি তেমন সাজগুজ করে না কিন্তু আজ চোখে গাঢ় কাজল পড়েছে, ঠোঁটে লিপস্টিক আর হাতে কিছু চুড়ি। অনেকক্ষণ যাবত দুজনেই চুপ করে আছে। এক পর্যায়ে শ্রাবণ বললো –

“কী হলো কিছু বলো?”

“তুমি বলো।”

“তুমি কী বন্ধুত্ত্ব ছাড়া অন্যকিছু ফিল করো আমার প্রতি?”

“তুমি কী করো?”- মাথা নিচু করে বললো আলো।

” প্রশ্নটা আগে আমি করেছি।”

“তাতে কী?”

“বলো করো কিনা?”

হ্যা সুচক মাথা নাড়লো আলো। শ্রাবণ মৃদু হেসে বললো-

“এতো লজ্জা পেতে তোমায় প্রথম দেখছি।”

এ কথা শোনার পর আলো আর চোখ তুলে থাকাতেই পারলো না আলোর দিকে। টেবিলের উপর একটি হাত রাখা ছিল আলোর। শ্রাবণ নিজের হাত বাড়িয়ে আলোর হাতের উপর হাত রাখলো। এই মুহুর্তের অনুভুতি টুকু আলো বন্দী করে রাখলো তার মনের মধ্যে আর শুরু হলো তার জীবনের নতুন মোড়।

দুইদিন পর চাকরিও পেয়ে গেল শ্রাবণ। তারপর
কিছুদিন ভালোই চলছিল আলো আর শ্রাবণের সম্পর্ক কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি নেমে এলো। শ্রাবণের মা জানতে পেরে গেলেন আলো আর শ্রাবণের সম্পর্কের ব্যাপারে।
সেই থেকে উনার প্রেসার বেড়ে গেল। শ্রাবণ কী করবে ভেবে পেল না। না পারছে আলোকে কিছু বলতে না ওর মাকে।

২ দিন পর ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনের রেজাল্ট দিল। আলোর ছবিটিই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পড়েছে ছবিটিতে। রেজাল্ট শুনে শ্রাবণ খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। তার উপর কম্পিটিশন আয়োজন কমিটি আরো একটি গ্রেট নিউজ জানালো যে, যারা বিজয়ী হয়েছে তারা তাদের লাইফ পার্টনারকেও ৫০% ডিস্কাউন্টে তাদের সাথে ট্যুরে নিয়ে যেতে পারবে।

শ্রাবণ আলোকে নিয়ে যেতে চাইলো তার সাথে কিন্তু মাকে কীভাবে ম্যানেজ করবে বুঝতে পারলো না। তার মায়ের এক কথা উনি কালো মেয়েকে ঘরের বউ করতে পারবেন না।

প্রথম মাসের বেতন পাওয়ার পর শ্রাবণ সবার জন্য কেনাকাটা করলো। বন্ধুদের সবাইকেও ট্রিট দিবে জানালো। তারপর আলোকে দেখা করতে বলবো তাদের পছন্দের সেই কফিশপে।

আলো ও শ্রাবণ সামনাসামনি বসে আছে। শ্রাবণ বললো “আলো আমি অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি”

“কী?”

“বলছি। আগে তোমার জন্য গিফট এনেছি দেখো।”- বলে একটা প্যাকেট আলোর দিকে এগিয়ে দিল শ্রাবণ।

আলো প্যাকেটটি অনেক খুশি মনে খুললো। কিন্তু গিফট দেখে অবাক হলো সে। আলো ভেবেছিল শ্রাবণ ওকে শাড়ি উপহার দিবে কিন্তু এসব কী? কিছুই বুঝতে পারলো না আলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে