আলো আঁধার পর্ব-২১

0
1110

#আলো_আঁধার

পর্ব ঃ- ২১
~ আঁখি দেব তৃপ্তি

প্রমিই ফোনটা রিসিভ করলো।

“হ্যালো আন্টি, কেমন আছেন?”

“ভালো মা, তোমার কন্ঠটা অন্যরকম লাগছে যেমন? ”

“আমি প্রমি আন্টি।”

“ও, কেমন আছো?”

“ভালো।”

“আচ্ছা মা, শ্রাবণ কী তোমাদের সাথে? ওকে ফোনে পাচ্ছি না।”

“আমাদের সাথেই ছিল। এখন বোধহয় আলোকে বাসায় পৌঁছে দিতে গেছে।”

“আলো আবার কে?”

“শ্রাবণের নতুন বন্ধু আন্টি। হয়তো বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু।”- ২য় কথাটি আস্তে বললো প্রমি কিন্তু শ্রাবণের মা সেটা শুনে ফেললেন।

“বেশি কিছু মানে?”

“না না আন্টি কিছু না।”

“ও। আচ্ছা ওর সাথে যোগাযোগ হলে বলে দিও যেন বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরতে। ”

“আচ্ছা আন্টি।”

“আন্টিকে এরকম ভাবে কেন বললি?”- দিয়া।

” আমি তো আস্তে বলেছিলাম উনি শুনে ফেলবেন বুঝি নি।”

“তোর সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি প্রমি।”

“আচ্ছা চল তো। এসবে কিছু হবে না।”

আলোর মাকে ডাক্তার অনেকগুলো টেস্ট করতে বললো। আলো সবগুলো টেস্ট করিয়ে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। খুব বেশি চিন্তা হচ্ছে ওর।নিজের কেউও পাশে নেই এ সময়। বাবাকে কী জানাবে? না থাক রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে উনি কিছুটা অসুস্থ না আসতে বলাই ভালো ভেবে আর জানালো না আলো। তারপর আরও কিছুক্ষণ ভেবে শ্রাবণকে ফোন দিল। কিন্তু ফোন রিসিভ করলো না শ্রাবণ। টানা ৩ বার ডায়েল করার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হলো ফোনটি।

“হ্যালো”

“শ্রাবণ তুমি কোথায়? একটু হাসপাতালে আসতে পারবে? মা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। খুব চিন্তা হচ্ছে শ্রাবণ। “- কাঁপা কাঁপা কান্না ভেজা কন্ঠে একটানে কথাগুলো বলে গেল আলো।

” শ্রাবণ একটু কাজে আছে। আমি ওকে ডেকে বলছি।”

“কে আপনি?”

“আমি ঈশান।”

“ও।”

“কোন হাসপাতালে আছেন আপনারা?”

“এন. কে প্রাইভেট হাসপাতালে। ”

“আচ্ছা চিন্তা করবেন না আমি শ্রাবণকে নিয়ে এখনি আসছি।”

“ওকে।”

শ্রাবণ একটি ফটোগ্রাফিতে ব্যস্থ ছিল। ২ ঘন্টার একটা ইভেন্ট এর দায়িত্ব নিয়েছে সে। ঈশান শ্রাবণকে ডেকে আলোর ব্যাপারটা বললো কিন্তু শ্রাবণ বললো এখনো তার ১ ঘন্টা কাজ বাকি। কীভাবে যাবে সে?

” কাজটা অন্যকাউকে দিয়ে করিয়ে দে শ্রাবণ। আলোর কথা শুনে মনে হচ্ছিল আন্টির অবস্থা খারাপ।”

“এখন রাত হয়ে গেছে কাকে পাবো। এক কাজ কর তুই চলে যা হাসপাতালে কী লাগে না লাগে একটু দেখ প্লিজ আমি আরও ৩০ মিনিট ওদের দিয়ে আসছি।”

“আচ্ছা।”- বলে ঈশান দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।

হাসপাতালে পৌঁছে ঈশান দেখলো আলো কিছু রিপোর্ট হাতে নিয়ে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে।

” আলো কী অবস্থা এখন আন্টির? “- ঈশান।

” ভালো না।”- বলে আলো ঈশানের আশেপাশে তাকালো কিন্তু আর কাউকে দেখতে পেল না। ঈশান বুঝতে পেরে বললো-

“শ্রাবণ একটা কাজে আটকে আছে। শেষ করেই চলে আসবে।”

“ও।”

“রিপোর্ট দেখানো হয়ে গেছে? ”

“না, বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।”

“আচ্ছা আমি দেখছি।”- বলে ঈশান সামনে গেল। তারপর রিপোর্ট দেখানোর ব্যবস্থা করলো।

ডাক্তারের সামনে বসে আছে ঈশান ও আলো। ডাক্তার কিছুক্ষণ রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে তারপর বললেন।

” আপনারা পেশেন্ট এর কী হন?”

“আমি উনার মেয়ে। কী হয়েছে আমার মার?”- আলো।

“আরও আগে আসা উচিত ছিল আপনার। উনার আলসার হয়েছে। ইনফেকশন অনেকটা বেড়ে গেছে। দ্রুত ভালো চিকিৎসা না হলে ক্যান্সারে রুপ নিবে।”

ডাক্তারের কথা শুনে খুব বড় রকমের ধাক্কা খেল আলো। আর মানে এ সমস্যা ওর মায়ের আগ থেকেই ছিল তিনি ওকে কিছু বলেন নি। কিন্তু এখন কী হবে ভাবতেই ভেতর কেঁপে উঠলো আলোর।

“যা যা করতে হয় আপনারা করুন ডাক্তার সাহেব । আমার মাকে সুস্থ করে দিন।”

“চিকিৎসা কিন্তু অনেকটা ব্যয়বহুল।”

“কতো টাকা লাগবে।”

“প্রথম ধাপে ২ লাখ লাগবে তারপর অবস্থা বুঝে অন্য ধাপে যেতে হবে। ”

“এতো টাকা! সব মিলিয়ে কতো লাগতে পারে ডাক্তার সাহেব আনুমানিক? ”

“৬/৭ লাখ এর মতো।”

“এতো টাকা। সারা শরীর কাঁপছে আলোর এতো টাকা সে কোথায় পাবে? তবুও বললো আপনারা চিকিৎসা শুরু করুন আমি যেভাবে হোক টাকার ব্যবস্থা করবো।”

“আচ্ছা, আপনি এই কাগজটা নিয়ে রিসিভশনে যান ওরা বাকিটা বলে দিবে।”- বলে একটি কাগজ ডাক্তার এগিয়ে দিলেন আলোর দিকে। আলো বসা থেকে উঠে বাইরের দিকে হাটতে লাগলো। পা যেন খুব ভারি হয়ে গেছে তার এগুতেই চাইছে না। ঈশান কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। এতোক্ষণ শুরু চুপচাপ ডাক্তার আর আলোর কথা শুনছিলো।

ডাক্তারের কাছ থেকে খানিকটা এগুতেই হঠাৎ আলোর মাথা ঘুরে গেল। হঠাৎ আলো পড়ে যাচ্ছে দেখে ওকে ধরে ফেললো ঈশান। তারপর একটু ফাঁকা জায়গায় নিয়ে বসালো আলোকে আর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিল। আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরে এলো আলোর। তারপর উঠে পড়তে চাইলো সে। কিন্তু ঈশান তাকে উঠতে দিল না।

” আপনি এখন উঠবেন না প্লিজ। একটু রেস্ট নিন এখানে বসে আমি ওদিকটার বিষয় বুঝে আসছি।”

“আচ্ছা।”

তারপর ঈশান আলোর মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করতে শুরু করলো।

প্রায় ১ ঘন্টা পর শ্রাবণ হাসপাতালে এসে পৌঁছালো। দেখলো আলোর মাকে কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। আর আলো ও ঈশান দুইজন ঘরের দুই প্রান্তে বসে আছে।

“কী অবস্থা এখন আন্টির আলো?”- শ্রাবণ।

” ভালো না।”

“কী হয়েছে?”

শ্রাবণকে সবটা খুলে বললো আলো।

“সরি আলো আমি একটা কাজে আটকে গেছিলাম তাই আগে আসতে পারি নি।”

“হুম বুঝতে পেরেছি।”

“তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে আমরা সবাই আছি তো।”

“হুম।”

কিছুক্ষণ পর শ্রাবণের ফোন বেজে উঠলো ওর মা ফোন দিয়েছেন।

“হ্যালো মা।”

“কোথায় তুই শ্রাবণ। আমি বলেছিলাম আজকেতাড়াতাড়ি বাসায় আসতে আর তুই এখনো এলি না?”

“মা আজ বোধহয় আমি ফিরতে পারবো না।”

“কী বলছিস! কিন্তু কেন?”

“আলোর মা হাসপাতালে। আমার এখানে থাকতে হবে। ”

“আলো আবার কে?”

“আমার বন্ধু।”

“কিন্তু বাসায় তোকে আসতেই হবে শ্রাবণ খুব জরুরি দরকার। ”

“কী সেটা?”

“এলেই বুঝতে পারবি। তাড়াতাড়ি আয়। জরুরি না হলে নিশ্চয়ই আমি তোকে এতো করে বলতাম না।”

“আচ্ছা আসছি।”

ফোন রেখে শ্রাবণ আলোকে বললো।

“আলো মা ফোন করেছিল। বাসায় নাকি খুব জরুরি দরকার আমাকে যেতে হবে। ”

” ও যাও।”

“তুমি চিন্তা করো না আমি কাজ শেষ করে আবার চলে আসবে ততোক্ষণ ঈশান থাকবে। যা প্র‍য়োজন হয় ওকে বলো।”

“আচ্ছা।”

তারপর শ্রাবণ ঈশানের কাছে গিয়ে বললো –

“দুস্ত প্লিজ একটু দেখিস। আমি আসছি।”

“না গেলে হয় না?”

“না রে জরুরি দরকার না হলে মা এতোকরে বলে না।”

“আচ্ছা যা তাহলে। ”

রাত দুইটা ১২ টা বাজতে চলেছে শ্রাবণ এখনো এলো না। কিছু খাওয়া দাওয়াও হয় নি আলো ও ঈশানের। আলোর যে মামা এসেছিলেন সাথে উনার বাসায় স্ত্রী একা আছে বলে উনিও চলে গেলেন। ঈশান একবার আলোকে খাবারের কথা বলেছিল কিন্তু আলো খাবে না বলে না করে দিয়েছিল। তাই আর এখন আলোকে জিজ্ঞেস না করেই ঈশান খাবার আনতে বাইরে বেড়িয়ে গেল।

আলোর মাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আলো উনার পাশে বসে আছে আর ওর দু-চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। নিজেকে খুব একা অসহায় লাগছে ওর আজ। আশা করেছিল শ্রাবণ পাশে থাকবে কিন্তু সেই অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর যে ছেলেটাকে ও পছন্দ করে না সেই আজ ক্রমাগত সাহায্য করে যাচ্ছে। কিন্তু তার সাথে মন খুলে কোনো কথাও বলতে পারছে না আলো। ঈশান নিজেই নিজেকে সবসময় দূরে সরিয়ে রাখে। কিন্তু কেন এমন করে তা বুঝতে পারছে না আলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে