#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
২০.
বাথরুমে ঢুকেও রাণী নিজের শরীর থেকে তূর্যয়ের কোট খুললো না।বাথরুমে থাকা হালকা ভাঙা আয়নায় রাণী নিজেকে দেখতে লাগলো।ধীরে ধীরে হাত উঁচু করে রাণী নিজের গালে হাত রাখলো।কেমন যেনো গরম হয়ে আছে তার গাল জোড়া।রাণীর মুখে ঝুলে আছে এক লজ্জামাখা হাসি।যদিও ভেজা কাপড়ে রাণীর হাল্কা শীত করছে,তবে তূর্যয়ের কোট আকড়ে ধরতেই রাণীর সেই শীত ভাব যেনো কোথায় পালিয়ে যাচ্ছে।রাণীর বেশ আরাম লাগছে তূর্যয়ের এই কোটে।বৃষ্টির মধ্যে দুইজনের কাছাকাছি আসা,রাণীর কপালে তূর্যয়ের ঠোঁটের ছোঁয়া সবটাই যেনো রাণীর ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।রাণী দুই হাতে আকড়ে ধরলো তূর্যয়ের কোট।এরপর ডান হাতে কোটের এক অংশ তুলে নাকে ঘ্রাণ নিতে লাগলো সে।একটা তীব্র মিষ্টি সুগন্ধে রাণীর মনে তূর্যয়ের জানান দিচ্ছে।কোটের সুবাসে রাণীর মনে হচ্ছে,তূর্যয় তার সাথে এইখানেই আছে।পরপর দুইটা হাঁচি দিলে রাণী নিজে নিজেই হেসে উঠলো।এরপর নিজের শরীর থেকে কোট খুলে সেটি বালতিতে রাখলো।কোটের দিকে আঙুল দেখিয়ে রাণী নিজে নিজে বলতে লাগলো,
–“এই কোটের মালিক আমাকে দেওয়ানা বানিয়েছে।ইস,কখন যে এই সন্ত্রাসীর প্রেমে এতো মগ্ন হয়ে গেলাম আমি; টেরই পেলাম না।আজ উনাকে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় দেখে আমার তো হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।আমার এই ভালোবাসা,ভালোলাগার কথা উনাকে আমি কখনো কি বলতে পারবো? নাকি শুধু এক পাক্ষিক ভালোবেসে যাবো?উফ!রাণী, যা হবে দেখা যাবে।তোর সন্ত্রাসী তূর্যয় তোর ভালবাসা ঠিকই বুঝবে।তোর শুধু কষ্ট করে নিজের ভালোবাসা তাকে বোঝাতে হবে।এখন এই ভেজা কাপড় ছাড়িয়ে নিই,নাহলে তূর্যয়ের চক্করে পড়ে আজ আমার শরীরের অবস্থা খারাপ হবে।এরপর আমি কাজে যেতে পারবো না,সাথে তূর্যয়ের দেখাও পাবো না।উহু রাণী,দ্রুত এই পানির কাজ শেষ কর।”
রাণী নিজের ভেজা কাপড় আর তূর্যয়ের কোট ধুয়ে নিলো।ভেজা চুল ভালো করে মুছে নিয়ে রাণী চুলের তাওয়াল,তার ভেজা কাপড় আর তূর্যয়ের কোট বারান্দায় মেলে দিলো।ঘড়িতে এখন রাত দশটা পঁচিশ বাজে।রাণী ভেবেছিল মাটির কাজ যা বাকি ছিলো সেগুলো করবে।কিন্তু তা আর করা হলো না রাণীর।কারণ,আজ তার ফিরতে অনেক দেরী হয়েছিল।রুমে কেউ না থাকায় রাণী নিজের টাকা রাখার বাক্স বের করলো গোপন জায়গা থেকে।গত পরশু হ্যারি তাকে পনেরো হাজার টাকা দিয়েছিল অর্ধেক বেতন হিসেবে।সেই টাকা মিলিয়ে এখন রাণীর টাকার পরিমাণ হলো চল্লিশ হাজার টাকা।খুশিতে রাণীর মনটা নেচে উঠলো।টাকাগুলো ঠিক স্থানে রেখে রাণী দাঁড়িয়ে পড়লো।আর খুশিমনে বলতে লাগলো,
–“আলহামদুলিল্লাহ্,বেশ টাকা জমিয়ে ফেলছি।এগুলা আমার কষ্টের টাকা।কতো মাস খেটেছি এই টাকার জন্যে!নিজের সকল কিছুর দাম মিটমাট করে আমি এই টাকাগুলো জমিয়েছিলাম।এখন দেখা যাক একটা দোকান ভাড়া পায় কিনা। কিন্তু,দোকান ভাড়া নিতে তো এডভ্যান্স টাকা দিতে হবে।তার মানে আরো টাকা জমাতে হবে আমার।ইন শাহ্ আল্লাহ্ আমি আমার মাটির জিনিসের দোকান দিয়েই ছাড়বো।শুধু আরো কিছু মাস টাকা জমাতে হবে।”
রাণী মনে মনে কথাগুলো ভেবে রুম থেকে বের হতে নিলে রাণীর দেখা হয় সিমির সাথে।সিমিকে দেখে রাণী মুচকি হেসে তার সামনে বসে পড়লো।সিমি রাণীর বিপরীতে মুচকি হেসে তার মুখে হাত রেখে বললো,
–“কি ব্যাপার আজ আমাদের রাণীকে বেশ হাসিখুশি লাগছে!”
রাণী নিজের মুখে সামান্য লজ্জা এনে বলে উঠলো,
–“আমার কথা বাদ দে।তোর কথা বল।আমার হ্যারি ভাইয়ার সাথে তোর প্রেম কতটুক গড়িয়েছে?”
সিমি হালকা মাথা নিচু করলো।এরপর ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে লাগলো,
–“উনি এখনো কিছু পরিষ্কার করে বলেননি।”
রাণী সিমির কাধে হাত রেখে বলল,
–“বলবে বলবে।সব কিছুতে একটু সময় তো লাগেই।”
সিমি মাথা নাড়ালো রাণীর কথায়।ঘড়ির দিকে তাকালে রাণী দেখলো এখন প্রায় এগারোটা বাজে।তাই সে তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগলো,
–“একটু পরে ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাবে।আমি খেয়ে আসি।তুই খেয়েছিস?”
–“হ্যাঁ,খেয়েছি।”
সিমি জবাব দিলো।
রাণী ক্যান্টিনে এসে রিয়া,ফারিয়া,কলি সবাইকে দেখতে পেলো।সবাই সবকিছু গোছাতে সাহায্য করছে।রাণী সবার দিকে হাত নাড়িয়ে প্লেট নিয়ে খাবার নিতে গেলো। গপগপ করে পাঁচ ছয় লোকমা ভাত খেয়ে উঠে পড়ল রাণী।এরপর নিজের প্লেট ধুয়ে বাকি সবার সাথে কাজে হাত লাগাতে শুরু করলো।সব কাজ শেষে রাণী তার বান্ধুবিদের সাথে বেরিয়ে পড়লো ক্যান্টিন থেকে।তাদের ঘরে যাওয়ার পূর্বেই রাণী থমকে গেলো।দ্রুত সে কলির হাত চেপে ধরলো।
রাহেলা শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে রাণীর দিকে।মুখের মধ্যে পান পুরে দিয়ে রাহেলা কোমর নাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাণীর সামনে এসে দাঁড়ালো।এরপর রাণীর মুখের সামনের দিকের খোলা চুল তার কানের পেছনে ঢুকিয়ে দিয়ে রাহেলা তাকে বললো,
–“কেমন আছো বাছা?প্রমাণ জোগাড় করছো নি? তা, তূর্যয় বড় সাহেব কই আইসা তোর লাইগা প্রমাণ দিবো?আমি অপেক্ষা করতাছি প্রমাণের লাইগা।”
রাণী নিজের সামনে থেকে রাহেলার হাত সরিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো,
–“কোনো প্রমাণ দিবো না আমি।আমি পবিত্র এটা আমি বেশ জানি।আর এতো রাতে কেনো এসেছেন আপনি?ওহ আচ্ছা,এখন তো ম্যাডাম নেই।তাই আপনি ইচ্ছা করেই আমাকে ফাঁসানোর জন্যে এসেছেন এখন?অসহ্যকর এক মহিলা আপনি।যারা আপনার মতো ফালতু,সাথে এইসব নোংরা কাজ করে, তাদের নিয়ে যান আপনি।”
রাণীর চিৎকার শুনে মোটামুটি সবাই এখন জড়ো হলো এইখানে।রাহেলা রাণীর হাত চেপে ধরে তাকে খেঁকিয়ে উঠলো,
–“এই মাইয়্যা।তুই চিনোস তুই কার লগে কথা কইতেছস!প্রমাণ দিবি তুই দশ মিনিটের মধ্যে। এরপরই আমি এইহান থেকে যামু আমার অন্য মাইয়্যা লইয়া।”
এরমধ্যে বেশ টাইট ফিটিং কাপড় পড়া চেরি রাহেলাকে বললো,
–“এই মেয়ের তো প্রমাণ দেওয়ার সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল।এখনো প্রমাণ দিতে পারেনি সে?আমাদের নিতে এসে তুমি আবার এই মেয়ের সাথে লাগলে কেনো?আমাদের ক্লায়েন্ট বসে আছি খালা, সেটা কি ভুলে যাচ্ছো তুমি?এই মেয়েকে ছাড়ো আমাদের নিয়ে যাও।”
চেরিকে রাহেলা ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
–“আমি মালকিনরে কথা দিসি এই মাইয়্যা যদি প্রমাণ দিতে না পারে নিজের লাইগা,তাহলে আহমেদ ছোট সাহেব এর লাইগা আজ রাইতে সাপ্লাই দিমু আমি তারে।”
এই কথা শোনার সাথে সাথে রাণীর সব বান্ধবী চিল্লিয়ে উঠলো।সিমি জোর গলায় সালেহাকে বলতে লাগলো,
–“আমি জানি আমার বান্ধবী একদম পবিত্র।তবুও যদি আপনার প্রমাণের দরকার হয়,রাণী প্রমাণ দিবে।রাণী তুই তূর্যয় সাহেবকে ফোন কর।উনার অফিসেরই তো কর্মচারী তুই।”
রাণী উপরে সাহস দেখালেও এই রাহেলার কাজ কর্ম রাণীর ভেতরে প্রচন্ড ভয় সৃষ্টি করেছে।রাণী সিমির কথা মতো রিয়াকে বললো তার মোবাইল এনে দিতে।রিয়া দৌড়ে গিয়ে রাণীকে নিজের মোবাইল এনে দিলো।এরপর সে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন লাগালো তূর্যয়কে।
;
বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তূর্যয়ের ব্যাপক সর্দি লাগলো।তাও সে কোনো রকম তার সকল মিটিং শর্টকাটে শেষ করে শান্তি মহলে চলে এসেছে।সর্দিতে প্রচুর মাথা ব্যাথায় ভুগছে তূর্যয়।রুমে গিয়ে তূর্যয় নিজের কোট খোলার জন্যে কাঁধ নাড়াতেই খেয়াল করলো তার গায়ে কোট নেই।তূর্যয় আনমনে ঠোঁট বাঁকা করে হাসার চেষ্টা করলো।তূর্যয়ের মাথায় একে একে রাণীর সব কান্ড মনে আসতে লাগলো।তূর্যয় নিজের শার্টের বোতামে হাত চালিয়ে বলতে লাগলো,
–“যদিও তোকে নিজের করে নিতে অনেকটাই সময় বাকি আছে।তবে যতবারই তোর কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবো,ততোবারই তোর কাছাকছি এসে তোর ভেতরটা আমি আমার জন্যে নাড়িয়ে তুলবো।সরাসরি মুখে বলতে না পারলেও,আমি তোকে আমার কাজ কর্ম দিয়েই বুঝিয়ে দিবো, তোকে আমি কতটা চাই।শুধু চাই না, তোকে আমারই হতে হবে।ভয়ংকর এক অতীতের পর কখনো ভাবিনি,আমার জীবনে এমনও একটা দিন আসবে সেখানে সুখের আলো থাকবে।তোর মধ্যেই আমি আমার জীবনের সুখটা দেখতে পায়।আমার এই অন্ধকার জীবনে আলোর প্রতিক হয়ে আসার জন্য স্বাগতম জানায় তোকে,তূর্যয়ের রাণী!”
কথাগুলো বলে তূর্যয় নিজের মোবাইল বন্ধ করে দিলো।কারণ,তূর্যয়ের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।মোবাইল চালু রাখলে নানান ফোন আসতেই থাকবে তার মোবাইলে।এই রাতটা তূর্যয় রাণীর সাথে কাটানো মুহূর্ত ভেবেই কাটাতে চাই।তাই,তূর্যয়কে যেনো তার রাণীর কথা ভাবার মধ্যে কেউ বিরক্ত না করে তাই সে মোবাইল বন্ধ করে দিলো।বাথরুম থেকে বের হয়ে তূর্যয় বিছানায় উবুত হয়ে শুয়ে পড়লো।মাথা ব্যাথা কমানোর জন্যে তূর্যয় নিজের মাথার উপর একটা শক্ত বালিশ দিলো।রাণীর কথা কল্পনা করতে করতেই,ধীরে ধীরে তূর্যয়ের চোখ বুজে আসছে।গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে তূর্যয়ের চোখে ভেসে এলো রাণীর হাসিমাখা মুখের ছবি। যা দেখে ঘুমের ঘোরে তূর্যয় নিজেও হেসে উঠলো।
;
অনেক্ষণ যাবত রাণী তূর্যয়ের মোবাইলে ফোন দিয়েও কোনো লাভ হলো না।কারণ তূর্যয়ের মোবাইল বারবার বন্ধ বলছে।রাণীর সাথে সামনে কি হতে যাবে,এটা ভাবতেই রাণীর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।রাহেলা রাণীর দিকে ঘৃণার নজরে তাকিয়ে বললো,
–“হয়েছে তারে ফোন দেওয়া?ফোন তো হে ধরে নাই।এখন কি কইবি তুই?”
রাণী কিছু বলার আগে সেখানে উপস্থিত একজন মেয়ে বলে উঠলো,
–“এটা কেমন কথা রাণী?তোর প্রমাণ দেওয়ার কথা ছিল দিতে পারিসনি।তাই তোকে এখন রাহেলা খালা যা বলবে তাই করতে হবে।তোর জায়গায় অন্য মেয়ে হলে তুই নিজেও তাকে সাপোর্ট করতি না।যেহুতু তুই কোনো প্রমাণ দিতে পারিসনি,তাই তুই রাহেলা খালা আর বাকি মেয়েদের সাথে যাবি।”
রাণী কেঁদে উঠলো সেই মেয়ের কথা শুনে।রাণী কান্না মাখা কণ্ঠে রাহেলাকে বললো,
–“হ্যারি ভাই জানে আমার সব ঘটনা।আমি উনাকে একটা ফোন দিচ্ছি।উনি আপনাকে সব সত্যি বলবে।”
রাহেলা জোরপূর্বক রাণীর ফোন নিয়ে নিলো তার থেকে।আর সে ফোন ধরিয়ে দিলো রিয়ার হাতে।
–“আর কোনো কথায় শুনুম না তোর। তোরে সাবিনা মালকিনের বাসায় নিয়া যামু।সাবিনা মালকিন আগেই কইছিল তার পোলার লাইগা সুযোগ পাইলেই তোরে নিয়া যাওয়ার কথা।সেদিন হেরে কি এমন মজা দিসিলি তুই? যার লাইগা হে তোরে আবারও পাওয়ার লাইগা উইঠা পইড়া লাগছে?”
রাহেলার শয়তানি জবাব।
–“ছি!বাজে মহিলা।আমি নির্দোষ।আমি যাবো না কোথাও।”
রাণী কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেও রাহেলা রাণীর চুল ধরে ফেলে।রাণীর সব বান্ধবী তাকে রাহেলা থেকে ছুটানোর জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।কিন্তু রাহেলার পক্ষের কিছু লোক এসে ধরে ফেলে তাদের।সালেহা না থাকায়,কেউ রাহেলাকে কিছুই বলতে পারছে না।এতো রাতে একা বাসায় সালেহা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে,তাই তাকে এখন হাজার ফোন দিলেও কাজ হবে না।তাছাড়া বরাবরের মতো সালেহার বাড়ি এতিম খানা থেকে অনেকটা দূরে।এইসব কিছু বিবেচনা করে রাহেলা রাতের বেলায় রাণীকে নিজের শিকার বানাতে এসেছে।রিয়া চুপিচুপি হ্যারির নাম্বার বের করে ফোন দিচ্ছে তাকে।কিন্তু,আজ কাজে জলদি ছুটি পেয়ে মোবাইল বন্ধ রেখে হ্যারি বারে নিজের সময় কাটাচ্ছে।সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলো সালেহার রাণীকে নিয়ে যাওয়া।রাণীর বান্ধবীরা চেষ্টা করছে তাকে সেই লোকগুলোর কাছে ছুটিয়ে নিতে।কিন্তু, কেউ সেই কাজে সফল হয়নি।অগত্য অন্যসব মেয়ের সাথে রাহেলা রাণীকে তার গাড়িতে উঠিয়ে নিল।
গাড়িতে উঠেও রাণী থেমে নেই।সে নিজের হাত পা চালিয়ে যাচ্ছে।এমন দেখে রাহেলা রাণীর চুল টেনে ধরে তার কানে কানে বললো,
–“আমি জানি,সেদিন তুই নষ্ট হসনাই।কিন্তু আইজ হবি। আমারে দেখলেই তুই কেমন নাক সিটকাইতি না?ঠিক তোরে দেখলেও এহন সবাই নাক সিটকাইবো।”
রাহেলার কথা শুনে রাণী চিল্লিয়ে উঠলো,
–“বেশ্যা মহিলা তুই।আমি না।আর আমার জীবন থাকতে আমি কখনোই নিজের চরিত্রে দাগ লাগতে দিবো না।”
রাণী আর কিছু বলতে পারলো না।এর আগে তার মুখে পট্টি লাগিয়ে দিল রাহেলা।
কিছু মেয়েকে তাদের কাজের স্থানে নামিয়ে রাহেলা রাণীকে নিয়ে ঢুকলো শান্তি মহলে।গাড়ি থেকে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত রাণীকে আনতে রাহেলার কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি।শান্তি মহলের বসার ঘরের বড় রাজকীয় ধরনের সোফায় পা তুলে বসে আছে সাবিনা।রাহেলা এতক্ষণ ধরে রাণীর হাত ধরে রেখেছিল শক্ত করে।রাণীর হাত ধরে খুব জোরেই সাবিনার সামনে ছুড়ে মারলো রাণীকে।রাণী গিয়ে পড়লো সাবিনার সামনে।রাণী নিজের হাত ছাড়া পেয়ে নিজের মুখ থেকে পট্টি খুলে নিলো।রাণী কিছু বলার আগেই সাবিনা সোফা থেকে পা নামিয়ে রাণীর দিকে ঝুঁকে রাণীর মুখ চেপে ধরে বললো,
–“আজ আমার ছেলে তোর এমন অবস্থা করবে না,একদম চুপ হয়ে যাবি তুই।বড্ড বকবক করেছিলি তুই আমার সাথে।মনে পড়ে কিছু?সেই থেকে তুই আমার টার্গেট ছিলি। ও রাহেলা,এটা মেয়েকে এইখানে নিয়ে আসার জন্যে তোকে দশ হাজার টাকা আরো বাড়িয়ে দিবো।”
রাহেলা হেসে উঠলো সাবিনার কথা শুনে।
সাবিনা এতো জোরেই রাণীর মুখ চেপে ধরেছে,যার কারণে রাণীর দাঁতের সাথে তার ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে।সাবিনা রাণীর মুখ চেপে রাখায় সে কিছুই বলতে পারছে না।কিন্তু রাণী নিজের নখ দিয়ে জোরেই খামচি দিলো। তা দেখে চিল্লিয়ে উঠলো সাবিনা,
–“ঐ রাহেলা ধর এই মেয়েকে।দেখ এই মেয়ে আমাকেই খোঁচা মারছে।”
সাবিনার চিল্লানোতে রাহেলা সাবিনাকে বললো,
–“মালকিন, মনি ম্যাডাম হুনলে হে নিচে চইলা আসবো।আর তূর্যয় বড় সাহেব কি ঘরে আছে?হেই থাকলে তো আমাগোরে এক্কেবারে সাইজ কইরা ফেলবো।হেই লাইগা,একটু চুপচাপ থাকি আমরা।”
–“মনির রুম সামনে থেকে বন্ধ করে রেখেছি আমি, আমার শিকার আসার আগেই।আর তূর্যয়!মনি থেকে শুনলাম তার নাকি শরীর খারাপ।তাই ওষুধ নিয়ে মরার ঘুম দিয়েছে হয়তো সে।আমাদের আজ কোনো বাঁধা নেই।”
সাবিনার কথায় রাহেলার চোখ চিকচিক করে উঠলো। রাহেলা এসে জোরে একটা চড় দিলো রাণীকে।সেই চড়ের তাল সামলিয়ে না উঠতেই রাণীকে মেঝেতে শুয়ে তার বুকের উপর পা তুলে দিলো রাহেলা।
–“এই মাইয়্যার লগে অনেক হিসাব বাকি আছিলো আমার।”
ব্যাথায় রাণী জোরে চিল্লিয়ে যাচ্ছে।তার এতো ব্যাথার মাঝেও রাণী তূর্যয়ের চিন্তা করছে।তবে তূর্যয় এইখানে আছে শুনে রাণীর মনে একটু সাহস বাড়লো।সে নিজের বুকের উপর থেকে রাহেলার পা সরিয়ে নিজের বুক চেপে বসে গেলো।রাহেলা এসে আবারও জোরে দুইটা থাপ্পড় দিলো রাণীকে।রাণীর মনে হচ্ছে তার বুক,আর গাল আর নেই তার শরীরে।ব্যাথায় রাণীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তাও নিজের মনোবল না হারিয়ে সে রাহেলার অনেক মার থেকে নিজেকে রক্ষা করছে।এক পর্যায়ে সাবিনা রাহেলাকে বললো,
–“উপরে নিয়ে যায় তাকে।চল।”
অতঃপর রাণীকে তারা দুইজন ধরে নিয়ে যেতে লাগলো উপরে।রাণী চিৎকার দিয়ে কান্না করে বলতে লাগলো,
–“আমাকে তো মেরেছেন ইচ্ছে মতো।দয়া করে আমার সর্বনাশ করবেন না।আমি পায়ে পড়ছি আপনাদের।তূর্যয়?তূর্যয়?বাঁচান আমাকে।আমাকে মেরে ফেলবে আজ তারা।”
–“আরে চিল্লিয়ে লাভ নেই।তূর্যয়ের রুম অনেক দূরে।তোর গলার স্বর সেখানে যাবেই না।তূর্যয় শয়তান হলেও,তোদের মতো গরিবদের অনেক সাহায্য করে তাই না? ঐ তূর্যয় পোড়ামুখো এতো শক্তিশালী হয়েছে,তাকে শেষ করার আমি কোনো উপায় পাচ্ছি না।”
রাণী নিজের পা শক্ত করে আকড়ে রেখে চিল্লাতেই লাগলো তূর্যয়ের নাম ধরে।এরমধ্যেই একটা দরজা খুলে হাসান বেরিয়ে এসে খেঁকিয়ে উঠলো,
–“এইখানে এতো চেঁচামেচি কিসের?আর তূর্যয় ঘর এইদিকে পশ্চিম পাশে।ঐখানে গিয়ে চিল্লা।আমার কান নষ্ট করিস না। কিরে সাবিনা,এই মেয়ে আরেকবার চিল্লালে তাকে আমি আমার রুমে ঢুকিয়ে নিবো এখন।”
–“বুড়োর সখ কতো!কচি মেয়ে দেখলেই তর সয় না তোর?”
সাবিনা চেঁচিয়ে উঠলো হাসানকে।
আর রাণী এই সুযোগ পেয়ে তাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দিলো পশ্চিম দিকে।সেদিকে রাণী একটা দরজাই দেখতে পেলো।সাবিনা আর রাহেলা আসার আগেই রাণী জোরে চিৎকার করে হাত পা দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো,
–“তূর্যয়!তূর্যয়!আমাকে বাঁচান।প্লিজ,দরজা খুলুন।তারা আমাকে শেষ করে ফেলবে আজ। তূর্যয়?”
রাণীর এমন চিৎকারে তূর্যয়ের হালকা ঘুম ভেঙে গেলো।তীব্র মাথা ব্যাথা আর রাণীর কল্পনায় নিজের ঘুম হারিয়েছে তূর্যয়।যেই একটু গভীর ঘুমের জন্য চোখ লেগে এসেছিল তার অমনি সে রাণীর গলার স্বর শুনে নিজের চোখ খুলে ফেললো।প্রথমে সে স্বপ্ন ভাবলেও পরে জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে সে দ্রুত উঠে বিছানা থেকে নামলো।আচমকা এমন দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে তূর্যয়ের মাথা ঘুরিয়ে উঠলো।তূর্যয় বুঝতে পারছে তার শরীর আরো বেশি খারাপ হতে যাচ্ছে।তাও নিজেকে সামলিয়ে দরজা খুলতেই তূর্যয় দেখলো, রাণীকে অনবরত চড় দিচ্ছে রাহেলা। সাথে সে রাণীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে।এমনটা দেখে তূর্যয়ের কপালের রগ ফুলে উঠলো। সে দ্রুত রাহেলা থেকে রাণীকে ছুটিয়ে নিয়ে গলা চেপে ধরলো রাহেলার।রাণী তূর্যয়কে দেখে যেনো নিজের জান ফিরে পেলো।সে তূর্যয়কে খুব জোরেই নিজের সাথে আকড়ে ধরলো।আর বিড়বিড় করলে তূর্যয়কে বলতে লাগলো,
–“এ..এই ম..মহিলা,এই মহিলা আমাকে অনেক মেরেছে।মারুন তাকে।”
রাণীর কথায় তূর্যয় তার হাত দিয়ে রাণীর মাথা চেপে ধরলো নিজের বুকের সাথে।আর আরো জোরে রাহেলার গলা চেপে বলতে লাগলো,
–“এতো সাহস তোর?তুই কিভাবে এই মেয়ের গায়ে হাত তুলেছিস?তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।”
সাবিনা ভয় পেয়ে তূর্যয়ের হাত ধরে তাকে বলে উঠলো,
–“তূর্যয় বাবা!তোর জন্যেই তো এই মেয়েকে এনেছিল রাহেলা।এই মেয়ে আসতে চাইনি, তাই রাহেলা জোর করে মেরে তাকে তোর ঘরে দিতে চাইলো।আর কিছুই না।ছেড়ে দে।”
রাহেলা আগেও অনেক মেয়েকে এনেছে তূর্যয়ের জন্যে।কিন্তু, তূর্যয় কখনো এমন রিয়েক্ট করেনি।তূর্যয়ের ইচ্ছে করছে সাবিনা আর রাহেলা দুইজনকে মেরে মাটিতে পুঁতে দিতে।কিন্তু, তূর্যয়ের শরীর বড্ড খারাপ লাগছে।নিজের উপর যেনো নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সে।এছাড়া সাবিনা কিছু বুঝে যেতে পারে রাণীর ব্যাপারে তাই তূর্যয় রাণীকে হালকা নিজের থেকে ছাড়িয়ে তাদের বলে উঠলো,
–“এই মেয়েকে দিয়েছিস, পেয়েছি।রাহেলা এই মেয়ের অনুমতি ছাড়া যদি তাকে তুই এনে থাকিস তাহলে এর শাস্তি তুই পাবি।কারণ,তূর্যয় কখনো নিরপরাধ মানুষের সাথে অন্যায় করে না।”
কথাটা বলে তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
–“এই মাইয়্যা বাইচ্চা গেলো আইজ।বড় সাহেব কিছুই করবো না এই মাইয়্যারে।কতো মাইয়্যা দিসি তারে। কাউরে ছুঁইয়ে দেখে নাই উনি।এই মাইয়্যার কিছু হইলো না,শেষে আমার গলা গেলো।”
রাহেলা কাঁশতে কাঁশতে বললো।
–“তুই হুদাই এই মেয়েরে এতো মারছিস কেন?এই মেয়ে তূর্যয়কে কিছু বললে তোর জেলে যাওয়া একেবারে নিশ্চিত।এখন চল,আমার পোলার জন্যে অন্য মাইয়্যা দেখ।এই মেয়েকে নষ্ট করতে হলে অন্য প্ল্যান করতে হবে।”
অতঃপর রাহেলা আর সাবিনা দুইজনই চলে গেল।
;
রুমে ঢুকেই রাণীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তূর্যয়।রাণীর সাথে কি হয়েছে না হয়েছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না।রাণীকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় তূর্যয় বিছানায় বসে পড়লো।নিজের বুক থেকে রাণীর মুখ তুলে রাণীর মুখের উপর থেকে সব চুল সরাতেই আঁতকে উঠলো তূর্যয়।রাণীর এলোমেলো চুল মুখে এসে থাকার কারণে,
বাহিরে সে রাণীর ঠোঁটের পাশের ক্ষত দেখেইনি।রাণীর এমন অবস্থা দেখে তূর্যয় রাণীর দুই গাল ধরে বেশ আহত কণ্ঠে বললো,
–“কে করেছে এমন?কি করেছে তারা তোমার সাথে?রাণী?কথা বলো, রোদ্র!”
রাণী এইবার নিজের চোখ খুললো।তূর্যয়ের ফোন না তোলার রাগে সে তূর্যয়ের গলায় খামচি লাগিয়ে দিলো জোরে।তূর্যয়ের বুকে এলোমেলো কিল ঘুষি দিতে দিতেই রাণী তূর্যয়কে বলতে লাগলো,
–“আপনি অনেক খারাপ লোক।আসলেই আপনি দানব।ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন কেনো?কয় হাজার বার ফোন দিয়েছি আমি আপনাকে?যেই করুক আমার এই অবস্থা এর জন্যে আপনি দায়ী।বারবার বলেছিলাম তো,আমার কিছু বলার আছে আপনাকে।কিন্তু না,
আপনি আমার কোনো কথা শুনেননি।এখন আমাকে ছেড়ে দিন আমি চলে যাবো।”
রাণীর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা রক্ত তূর্যয় নিজের আঙ্গুল দিয়ে মুছে রাণীকে বলে উঠলো,
–“সরি।আর কখনোই এমন করবো না।রাহেলা মেরেছে নাকি সাবিনা?কে বেশি মেরেছে?”
রাণী চমকে উঠলো তূর্যয়ের মুখের “সরি” বলা শুনে।রাণী কান্নারত অবস্থায় হেঁচকি তুলে বললো,
–“দুইজনই।তবে রাহেলা বেশি মেরেছে।তারা আমাকে আপনার কাছে না বরং সাবিনার ছেলে ঐ শয়তান আহমেদের কাছে দিতে যাচ্ছিলো।ভাবতে পারছেন আপনি আমার কি হতো আজ?আমি জীবিত অবস্থায় মৃ…”
তূর্যয় মুখ চেপে ধরলো রাণীর।তূর্যয়ের হাতের তালুর স্পর্শে রাণী বুঝতে পারলো তূর্যয়ের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে।রাণী চোখ পাকিয়ে তাকালো তূর্যয়ের দিকে।
–“আমি বেঁচে থাকতে তোমার কিছুই হতে দিবো না আমি, রোদ্র।রাহেলা আর সাবিনা তাদের যোগ্য শাস্তি পাবেই।বিশেষ করে রাহেলা।”
রাণী নিজের চোখের পানি মুছে তূর্যয়ের কোল থেকে নেমে গেলো।সে তূর্যয়কে বলতে লাগলো,
–“লাগবে না শাস্তি দেওয়া।আমার সাথে দয়া করে কাল এতিম খানায় গিয়ে,সেদিনের আপনার ছোট ভাই আমার সাথে কিছুই করেনি,এই কথাটা বলবেন।এতেই আমার উপকৃত হবে।আমার মতো এতিমের কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আপনি সেই কথাটা বললে সবাই বিশ্বাস করবে।আমি যায় এখন।নাহলে সেদিনের মতো আমাকে কালও নানা বাজে কথা শুনে হবে।আর হ্যাঁ,আপনার জ্বর উঠেছে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।”
রাণী দুর্বলভাবে হাঁটতে গেলে তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে নিজের দিকে নিয়ে নিলো। ঘোর মাখা কন্ঠে তূর্যয় রাণীকে বললো,
–“কোথাও যাবি না তুই।আমি যাচ্ছি কাল তোর সাথে সেখানে।তাছাড়া তূর্যয় বাকি সবাইকে তার পাপের শাস্তি দিলে, তোমার সাথে হওয়া খারাপের শাস্তি দিবে না কেনো?তোমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি হবে আরো ভয়ানক।”
রাণী কিছু বলার আগেই তূর্যয় রাণীকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে রাণীর পাশে তার এক হাতে ভর দিয়ে রাণীর কানে নরম কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“আমার শরীর দূর্বল লাগছে একটু, তাই আজ চেপে গেলাম তাদের শাস্তি।এখন এইখানে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।তূর্যয়ের কথার অমান্য করার শাস্তি কি, তুই ভালো করেই জানিস।আর এখন এইখান থেকে বের হলে সাবিনা আবারও তোকে ধরবে।তাই,ঘুমিয়ে পড়। আর যদি বেশি জোর করে তোকে এইখানে আটকিয়ে রাখতে হয়,
তাহলে আমি নিজেই তোর পাশে শুয়ে তোকে শক্ত করে নিজের সাথে বেঁধে এরপর ঘুমাবো।এখন বল কি চাস তুই?”
কথাটা বলে তূর্যয় রাণীর উপর থেকে উঠে তার গায়ে চাদর টেনে দিলো।শেষের কথা শুনে রাণী শক্ত করে চাদর খামচে ধরে রাখলো।নিজের রুমের ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজে,রাণীর ঠোঁটের কোণায় তূর্যয় মলম লাগিয়ে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো রাণীর কপালে।তূর্যয়ের স্পর্শে রাণী চোখ খিচে বন্ধ করে রইলো।তূর্যয়ের স্পর্শে রাণীর বুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে মুহূর্তেই।নিজের মুখ সে চাদর দিয়ে ঢেকে ফেললো।অতিরিক্ত কান্নার কারণে রাণীর চোখজোড়া নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেলো।তূর্যয়ের সুখময় স্পর্শের আরামটা উপভোগ করতে করতে রাণী ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো একেবারে নিশ্চিন্তে।
তূর্যয় হেলেদুলে হেঁটে নিজের রুমের সোফায় শুয়ে পড়লো।তূর্যয়ের শরীর দূর্বল।কিন্তু, তার মনে এখনো হিংস্রতায় কিলবিল করছে। সে আপনমনে ভাবতে লাগলো,
–“রাহেলা,তোর সময় শেষ এখন।আমার রাণীর উপর হাত তুলে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস তুই।শুধু মাত্র শত্রু পক্ষ যেনো আমার রাণীর ব্যাপারে কিছু আন্দাজ করতে না পারে তাই আজ রক্ষা পেয়েছিস তোরা।সাবিনা,তোর সাথে অনেক হিসাব আমার বাকি।হাসান আর তোর জন্যে তো এই তূর্যয় দুনিয়াতেই নরকের স্বাদ নেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবে। শুধু অপেক্ষা করছি কিছু সময়ের।আহ,সালেহার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে আমায় কাল।আমাকে কি সেই মহিলা চিনতে পারবে? আমিই বা নিজেকে কিভাবে ঠিক রাখবো তাকে দেখলে?অবশ্যই ঠিক রাখবো আমি নিজেকে।সেদিন এতো বছর পর তাকে দেখে অতীতের যন্ত্রণা আমাকে নাড়িয়ে তুলেছিল।কিন্তু,আর কেউ অতীত দিয়ে আমাকে চিন্তিত করতে পারবে না।কারণ,তূর্যয় এখন সবটাই হিসেব বুঝে গিয়েছে।আমার রোদ্র কন্যার জন্যে শুধু আমার অতীত কেনো!সব কিছুর সাথে যুদ্ধ করতে আমি এক পায়ে রাজি। কাল দেখা হবে আমাদের স্বার্থপর মহিলা,সালেহা। ”
কথাগুলো ভেবে তূর্যয় বিছানায় শুয়ে থাকা রাণীর দিকে ফিরে তাকালো।রাণী সম্পূর্ণ শরীর চাদরে ঢেকে শুধু মুখ বের করে ঘুমিয়ে আছে।রাণীর ঘুমন্ত মুখটা তূর্যয়ের শান্ত মন অশান্ত করে তুলেছে।তূর্যয় নিজের বুকে হাত দিয়ে দ্রুত অন্যদিকে ফিরে গেলো।
–“এখন আর তাকানো যাবে না তার দিকে।তার নেশায় আগে থেকেই বুদ হয়ে আছি।এখন নিয়ন্ত্রণ হারালে পাপ হয়ে যাবে।আর এই মেয়ের জন্যেই আমি সব করতে পারবো।সেখানে এই সালেহা তো আমার অতীতের একটা ময়লা মাত্র।”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই তূর্যয়ের দূর্বল চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।
চলবে…..