#আলো_আঁধার
পর্ব ঃ- ১৮
~আঁখি দেব তৃপ্তি
প্রায় ২ ঘন্টা আলোর ছবিগুলো একটার পর একটা দেখলো ঈশান। শ্রাবণের সাথে আলোর পরিচয় কীভাবে হলো? আর শুধুমাত্র পরিচিত হয়েই কী কেউ এরকম ছবি তোলায় কাউকে দিয়ে? শ্রাবণ তো আলোর কথা কখনো বললো না কাউকে। কেন বললো না? কী সম্পর্ক ওর সাথে আলোর? এইসব প্রশ্নগুলো রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে দিল না ঈশানকে। অনেকবার ভেবেছিল শ্রাবণকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু আবার মনে হলো এতোদিন যেহেতু শ্রাবণ বলে নি এখনো পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যাবে না। এর চেয়ে সরাসরি কথা বলাটাই উত্তম হবে।
আলোর ছবিগুলো থেকে চোখ সরাতে পারছিল না ঈশান। ইচ্ছে হচ্ছে সবগুলো ছবি নিজের কাছে রেখে দিতে। কিন্তু তা করা কি ঠিক হবে? অন্যের ছবি পারমিশন ছাড়া নেওয়া ঠিক না। তাও মন মানলো না ঈশানের। ক্যামেরা থেকে মেমোরি কার্ড খুলে নিজের ফোনে কপি পেষ্ট করে রাখলো সব।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস আলোর। কিন্তু আজ কিছুতেই ঘুম আসছে না ওর। বারবার বিকেলবেলার সেই মুহুর্তগুলোর কথা মনে হচ্ছে। শ্রাবণের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আজ আর শ্রাবণ তেমন ফোনও দিল না। আসার পর শুধু একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল বাসায় ঠিকমতো ফিরেছে কিনা আলো। তারপর আর কোনো খবর নেই। আলো ভাব্লো নিশ্চয়ই ছবিগুলো দেখছে শ্রাবণ আর কাজ করছে সেগুলোতে কিন্তু ছবিগুলো কী আলো নিজে দেখবে না? শ্রাবণ তো ছবিগুলো স্যোশাল এ্যাপে দিতে পারতো আলোকে। একবার কী ওকে ফোন দিয়ে বলবে দেওয়ার কথা? এসব ভাবতে ভাবতে ফোন দিয়েই দিল আলো।
“হ্যালো।”- শ্রাবণ।
“কী করছো?”- আলো।
” এইতো ঘুমাতে আসলাম। তুমি এখনো ঘুমাও নি?”
“না ঘুম আসছে না।”
“কেন?”
“জানিনা।”
“ও।”
“আমাকে ছবিগুলো দিলে না?”
“কাল বিকালে দেখা হলে দিব।”
“আচ্ছা।”
“ঘুমানোর চেষ্টা করো। আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। ”
“আচ্ছা। শুভ রাত্রি।”
“শুভ রাত্রি আর সবকিছুর জন্য আবারও থ্যাংকস আলো।”
“ইটস ওকে।”
সকাল ৮ টায় ফোন দিয়ে ঈশানকে ঘুম থেকে উঠালো শ্রাবণ।
“হ্যালো”- ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো ঈশান।
” এখনো উঠিস নি? তাড়াতাড়ি শহরে আয় আমার ক্যামেরাটা দরকার আছে।”
“আচ্ছা আসছি ১০ টার মধ্যেই। ”
“ওকে।”
শ্রাবণের ক্যামেরা নিয়ে এতো ইমারজেন্সি অবাক করলো ঈশানকে। এর আগেও অনেকবার শ্রাবণের ক্যামেরা নিয়েছে সে কখনো শ্রাবণ এমন করে নি। ক্যামেরাটা শ্রাবণকে গিফট করেছিল ওর জন্মদিনে ঈশান, দিয়া, নিলয় আর প্রমি মিলে। খুব খুশী হয়েছিল সেদিন শ্রাবণ। নিজের কোনো কথাই কখনো ঈশানের থেকে লুকিয়েছে বলে মনে হয় না ঈশানের। সেই শ্রাবণই যেন হঠাৎ কেমন হয়ে গেল!
সকাল ১০ টায় একটি কফিশপে ঈশানের জন্য অপেক্ষা করছিল শ্রায়।ঈশান সেখানে পৌঁছালো ১০ টা ১০ মিনিটে। তারপর ক্যামেরা শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো –
“কীরে হঠাৎ কী এতো তোর ক্যামেরায় ইমারজেন্সি কাজ পড়ে গেল।”
“বললাম না কম্পিটিশন ওইটার জন্য। ”
“ও। একটা মেয়ের ছবি দেখলাম কে মেয়েটা।”
“সবগুলো দেখেছিস?”
“হুম, কেন দেখা উচিত হয় নি?”
“না তা বলি নি। ও আলো আমার বন্ধু।”
“তোর কবেকার বন্ধু কই আগে কখনো বলিস নি তো?”
“কয়েকদিন হলো পরিচয়। তোকে বলবো বলবো করে বলা হয় নি।”
“ও। তা তোকে দিয়ে ফটোসুট করিয়েছে নাকি?”
“না না আমিই অনুরোধ করছি ছবি তোলার জন্য। ”
“কেন?”
“বলেছিলাম না একটা ভিন্ন থিম চিন্তা করেছি। একটা ছবি দেখাই তোকে দেখ তো এটা কেমন।”
“হুম।”
শ্রাবণ ক্যামেরা থেকে আলোর ভেজা শাড়ির একটা ছবি দেখালো ঈশানকে। লাল নীলের ভেজা জামদানী
শাড়িতে নৌকার এক মাথায় অভিমানি চোখে এক তরুণী তাকিয়ে আছে নদীর স্বচ্ছ জলের দিকে। খোলা নীল আকাশের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি নদীর জলে ফুটে উঠেছে অনেক সুন্দর ভাবে। দূরে নদীর তীরে দেখা যাচ্ছে সারি সারি সবুজ গাছপালা। তরুণীর হাতে এক গুচ্ছ শুভ্র কাশফুল আর চারপাশে ছড়ানো অসংখ্য শিউলি ছবির সৌর্ন্দয্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সবমিলিয়ে অসাধারণ হয়েছে ছবিটি কিন্তু এটা কম্পিটিশনে যাবে এটা ঠিক ভালো লাগছে না ঈশানের কাছে কারণ ভেজা শাড়ির কারণে আলোর পেটের এক পাশ দেখা যাচ্ছে খানিকটা। যদিও এসব এখনকার যুগের জন্য খুবই স্বাভাবিক বিষয় তবুও পাবলিক প্লেসে সবাই দেখবে এটা ভাবতে ভালো লাগছে না ঈশানের। কিন্তু এসব বিষয়ে কথা বলারওতো কোনো অধিকার নেই তার।
“কীরে কেমন ছবিটি? কিছু বলছিস না যে?”
“ভালোই কিন্তু… ”
“কিন্তু আবার কী?”