আলো আঁধার পর্ব-১৭

0
1101

#আলো_আঁধার

পর্ব ঃ- ১৭
~আঁখি দেব তৃপ্তি

শ্রাবণ চেষ্টা করেও ধরতে পারলো না আলোকে। পানিতে পড়ে ভিজে গেল আলো। তারপর নিজেই উঠে এলো আবার নৌকাতে।তারপর শ্রাবণও নৌকায় উঠে মাঝিকে নৌকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইশারা করলো। শ্রাবণের সামনে ভিজা কাপড়ে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল আলো। শ্রাবণ বুঝতে পেরে আলোকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো –

“ভিজা কাপড়ে ফটোসুট ভালোই হবে মনে হচ্ছে।”

আলো কিছু বললো না অন্যদিকে মুখ ভার করে তাকিয়ে রইলো নৌকার এক মাথায় বসে।

ভিজা শাড়ি, ভিজা কাশফুল আর শিউলি বিছানো নৌকায় আলোর অভিমানি লুকটা বেশ অন্যরকম লাগছে। আর কোনো কথা না বলে ছবি তুলতে শুরু করলো শ্রাবণ।

“কী করছো? এ অবস্থায় ছবি তুলছো কেন””- আলো।

” থিম টা সুন্দর দেখাচ্ছে। যেভাবে ছিলে সেভাবে বসে থাকো কোনো কথা না বলে।”

আলো বাধ্য মেয়ের মতো শ্রাবণ যা যা বললো করতে শুরু করলো। একবার একদিকে বসা, আরেকবার ওদিকে আলোর অনেকটা অস্বস্তি লাগছিল। তাও শ্রাবণের ওর ছবি তোলায় বেশ আগ্রহ দেখে ভালো লাগলো ওর।

নৌকা চলতে চলতে মাঝ নদীতে চলে গেল। চারপাশে অনেক বাতাস বইছে। আস্তে আস্তে শুকাতে শুরু করলো আলোর কাপড়। শ্রাবণ এখনো ছবি তোলায় ব্যস্ত।

“অনেক তো ছবি তুলতে এখন একটু বসে প্রকৃতিটা দেখো কতো সুন্দর লাগছে চারিপাশ। “- আলো।

আলোর কথায় ক্যামেরা নামিয়ে আলোর পাশে এসে বসলো শ্রাবণ। তারপর ছবিগুলো দেখাতে লাগলো আলোকে। অসাধারণ হয়েছে প্রতিটা ছবিই। নিজের এমন ছবি দেখে অবাক হয়ে গেল আলো।

১ঃ৩০ ঘন্টা নৌকা ভ্রমণের পর তীরে ফিরে এলো আলো ও শ্রাবণ। এতোক্ষণে মনে হয় শ্রাবণ আলোর হাজার খানেক ছবি তুলে ফেলেছে এমনি মনে হচ্ছে আলোর। আলো চেয়েছিল শ্রাবণ কিছুক্ষণ ওর পাশে বসে নৌকা ভ্রমণটা উপভোগ করুক কিন্তু তা হলো না। ছবি নিয়ে এতোটাই উৎসাহী সে যে আর কিছুর খেয়ালই ছিল না।

তীরের কাশবনে এসে আরও কিছু ছবি তোললো শ্রাবণ। তারপর তারা যাত্রা শুরু করলো শহরের উদ্দেশ্যে।

গাড়িতে শ্রাবণ ও আলো পাশাপাশি বসেছিল। শ্রাবণ ক্যামেরার ছবিগুলোই বার বার দেখছে। এক পর্যায়ে শ্রাবণ আলোর হাত ধরে বললো –

” অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমায় আলো।”

আচমকা এমন হাত ধরায় চমকে উঠলো আলো। কী বলবে কিছু খুঁজে পেল না। শ্রাবণ দেখলো আলো কাঁপতে শুরু করেছে। সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নিল শ্রাবণ আর বললো-

“সরি সরি। আমি আসলে অভাবে কিছু..”

“আচ্ছা ঠিকাছে বুঝতে পেরেছি।”- আলো।

সন্ধ্যার পর শ্রাবণকে ফোন দিল ঈশান।

” হ্যালো।”-ঈশান।

“হুম বল।”

“কোথায় তুই?”

“এইতো আছি বাইরেই।”

“জরুরি দরকার আছে ক্যামেরা নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।”

“কি দরকার।”

“এলেই বুঝবি আয় আগে।”

“আচ্ছা আসছি তুই কোথায়?”

“আমাদের আড্ডার জায়গায়ই আছি আয়।”

“আচ্ছা। ”

২০ মিনিট পর শ্রাবণ এসে উপস্থিত হলো ইশানের কাছে।

“কীরে কী এতো জরুরি দরকার?”- শ্রাবণ।

” বাইকে উঠে পর একটা জায়গায় যেতে হবে।”

“এখন কোথায় যাবি?”

“একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে। ”

“এখন আবার কার বিয়ে।”

“আমার এক আন্টি।”

“তুই যা রে আমি যেতে পারবো না।”

“আরে তোকেই তো দরকার।”

“কেন?””

“ওরা যে ফটোগ্রাফারকে আসতে বলেছিলেন সে হঠাৎ না করে দিয়েছে। এখন আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ”

“আমি সারাদিন বাইরে ছিলাম অনেক ক্লান্ত রে তার উপর স্টুডেন্ট দুইটারি পরীক্ষা আজ কিছুতেই বাদ দেওয়া যাবে না। ”

“মাত্র দুই ঘন্টাই লাগবে চলে আয় না?”

“না রে। তুই বরং ক্যামেরা নিয়ে যা। তুইও তো ভালো ছবি তুলতে পারিস। পরে আমায় ক্যামেরা দিয়ে দিস।”

“আচ্ছা তাহলে আর কী করা দে ক্যামেরা। ”

শ্রাবণ ক্যামেরাটা ঈশানের কাছে দিয়ে দিল আর ঈশান তারপর চলে গেল বিয়ের বাড়িতে।

টিউশনে আসার পর হঠাৎ শ্রাবণের খেয়াল হলো আলোর সব ছবি ক্যামেরায় আছে। সে কেন মেমরিটা খুলে ঈশানকে ক্যামেরা দিল না। উফ তাড়াহুড়ায় খেয়ালই ছিল না। যাই হোক এখন আর কী করা। ঈশান তো বলেছিল ২ ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে তারপর গিয়ে ক্যামেরাটা নিয়ে আসতে হবে।

২ ঘন্টা পর ঈশানকে ফোন করলো শ্রাবণ। কিন্তু কল রিসিভ করলো না ঈশান। পরপর ৫ বার ঈশানের নাম্বার ডায়েল করার পরও কোনো আন্সার পাওয়া গেলো না ওপর পাশ থেকে। চিন্তায় পড়ে গেল শ্রাবণ।

প্রায় ১ ঘন্টা পর কল ব্যাক করলো ঈশান।

“হ্যালো।”- ঈশান।

” কোথায় ছিলি তুই এতোবার কল দিলাম।”

“সরি রে মোবাইল আমার পাশে ছিল না। এখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে রে।”

“কী সমস্যা?”

“পাত্রপক্ষরা যৌতুক নিয়ে ভেজাল শুরু করেছিল।”

“ও, এখন কী মিটে গেছে?”

“হুম এখন আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।”

“তুই কখন আসবি তাহলে?”

“আমার বোধহয় আজ আর আসা হবে নারে।”

“কেন?”

“শহর থেকে ১০ কি.মি. দূরে আছি। আর বিয়ের অনুষ্ঠান এখনো বাকি। কীভাবে আসবো বল।”

“ক্যামেরাটা আমার দরকার ছিল আজ খুব।”

“কাল সকালে দিয়ে দিব।”

“কোনোভাবেই কী আসতে পারবি না?”

” মনে হচ্ছে নারে পারবো বলে। ”

“আচ্ছা তাও একটু আসার চেষ্টা করিস।”

“তোর কী এমন প্রয়োজন? ”

“আছে। ”

“আচ্ছা জানাবো পরে আসতে পারবো কিনা।”

“আচ্ছা রাখি।”

“হুম।”

১ ঘন্টা পর শ্রাবণ আবার ফোন দিয়ে ঈশানকে জিজ্ঞেস করলো ফিরতে পারবে কিনা। কিন্তু ঈশান জানালো পারবে না। ঈশান অবাক হলো এটা ভেবে যে ক্যামেরা দিয়ে এক রাতে কী করে ফেলবে শ্রাবণ যে এতো উতলা হচ্ছে।

সবকিছু শেষ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে এলো ঈশান। যাই হোক তার জন্য আলাদা একটা রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটু আরামে ঘুমানো যাবে। হঠাৎ পাশে রাখা ক্যামেরাটির দিকে চোখ পড়লো ঈশানের। তারপর ছবিগুলো দেখতে লাগলো এক এক করে। তার তোলা সবগুলো ছবির পড়ে একটি মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো ক্যামেরাতে। ছবিটা একপাশ থেকে তোলা তাই চেহারা বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু খুব চেনা কেউ লাগছে ঈশানের কাছে। তারপর এর পরের ছবিতে গিয়েই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল ঈশানের। এ কাকে দেখছে সে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে