#আলো_আঁধার
পর্ব ঃ- ১৬
~আঁখি দেব তৃপ্তি
কিছুক্ষণ ভেবে শ্রাবণের সামনাসামনি এসে আলো বললো “মোবাইলটা দিন।”
শ্রাবণ নিজের মোবাইল ফোন প্যাকেট থেকে বের করে এগিয়ে দিল আলোর দিকে। তারপর আলো নিজের নাম্বার ডায়েল করলো শ্রাবণের ফোন থেকে।
“ধন্যবাদ।”- শ্রাবণ।
” আচ্ছা, আসি।”- বলে চলে গেল আলো।
ঈশান, নিলয়, প্রমি সবাই উপস্থিত হয়েছে দিয়ার বাসায়। দিয়া আজকে একটি ইতালিয়ান আইটেম রান্না করেছে। সবাই সেটা খাবার জন্য উৎসুক হয়ে আছে কিন্তু শ্রাবণ এখনো এলো না বলে তার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।
“কীরে ঈশান শ্রাবণ কোথায়?”- প্রমি।
” জানিনা।”- ঈশান।
“তোর সাথে না প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেখা হয়?”
“আজ ও বললো কী কাজে আছে।”
“দিয়া তোকে কী বলেছে?”
“ব্যস্ত বললো তারপর আবার বললো পরে ফোন দিবে আর ফোন দিল না।”- দিয়া।
” হঠাৎ কী এতো ওর বিশেষ বিশেষ কাজ শুরু হলো!”
“হয়তো ওই পেইন্টার এর পেছনে পড়ে আছে হাহাহা।”- নিলয়।
” পেইন্টার আবার কে?”- দিয়া।
“ওই যে সেদিন এক্সিবিশনে একটা পেইন্টিং এর দিকে চেয়ে ছিল।”
“ও।”
“আমাকে বলেছিল একটা ফটোগ্রাফি কম্পিটিশন আছে সেটা নিয়ে অনেকটাই সিরিয়াস দেখেছিলাম তাই নিয়েই হয়তো আছে।”- ঈশান।
” হুম বুঝলাম কিন্তু তোকেও আজকে একটু অন্যরকম লাগছে! কী ব্যাপার রে ঈশান?”- প্রমি।
“আমাকে আবার কেমন লাগবে। আই এম ওকে।”
“তোদের কী ব্যাপার সেপার বাপু ঠিকঠাক বুঝিও না।”
“শ্রাবণকে আবার ফোন কর তো দিয়া।”- নিলয়।
” হুম তাই কর আর বেশিক্ষণ দেরী করলে আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না। আমি খাবার খেয়ে ফেলবো।”
দিয়া আবার ফোন দিল শ্রাবণকে।
“হ্যালো। ”
“কীরে তুই কী আসবি না?”
“আমি টিউশনে আছি রে।”
“কতোক্ষণ লাগবে শেষ হতে?”
“আরো ৩০ মিনিট। ”
“ভালো। এখানে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে আর তুই…।”
“সরি দুস্ত তোর খাওয়া দাওয়া কর আড্ডা দে আমি শেষ করে আসছি।”
“তোর যেমন ইচ্ছে। “- বলে রাগে ফোন কেটে দিল দিয়া।
” কী বললো শ্রাবণ? “- প্রমি।
” ওর আসতে দেরী হবে।”
“আমি আর আপেক্ষা করতে পারবো না যা খাবার নিয়ে আয়।”
দিয়া মুখ ভার করে খাবার আনতে রান্নাঘরের দিকে গেল।
দিয়ার তৈরি করা আইটেম দেখতে খুব সুস্বাদু মনে হচ্ছে কিন্তু এর স্বাদ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে প্রমি আর ঈশানের।
“দেখতে তো সুন্দরই লাগছে খাওয়া যাবে নাকি রে দিয়া?”
“খেয়েই দেখ।”
“ঈশান তুই আগে খা। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”
“আমিও চাই না। তুই আগে খা।”- ঈশান।
” কী শুরু করলি তোরা দে আমাকে আমি আগে খাচ্ছি।”- নিলয়।
“গতকালের কথা কী ভুলে গেলি নিলয়।”- প্রমি।
প্রমির কথা শুনে আগ্রহ কমে গেল নিলয়ের।তবুও খাবারটা টেস্ট করার জন্য নিজের একটি প্লেট হাতে নিল।
” বাহ ভালোই তো হয়েছে?”- নিলয়।
“তার মানে নিশ্চয়ই ঝাল নেই।”- প্রমি।
” তোর এতো ঝালের প্রয়োজন হলে বাসায় নাগা মরিচ আছে এনে খা।”- দিয়া।
ঈশান এবার মুখে দিল খাবারটা।
“ভালোই বানিয়েছিস দিয়া।”
“ভালো লাগলেই ভালো আগে যা যা শুনালি!”- দীর্ঘশ্বাস টেনে বললো দিয়া।
দিয়ার কথায় একসাথে হেসে উঠলো সবাই।
প্রায় ১ ঘন্টা পর শ্রাবণ এসে উপস্থিত হলো দিয়াদের বাসায়।
” এখন আর আসার কী প্রয়োজন ছিল?”-দিয়া।
“সরি ইয়ার লেইট হয়ে গেল। দেখি কী বানিয়েছিস দে। মুখে দেয়া যায় কিনা দেখি।”
“সব আমরা খেয়ে ফেলেছি।”-প্রমি।
” তুই যা পেটুক। খাবিই তো।”
দিয়া উঠে গিয়ে শ্রাবণের জন্য রাখা প্লেটটা এনে দিল।
খাবার মুখে দিয়ে শ্রাবণ বললো- “এসব কবে শিখলি?”
“শিখেছি। ”
“হুম, ভালো হয়েছে।”
“ধন্যবাদ। ”
“বাহ, ভালোই ফরমালিটি শিখেছিস দেখছি।”
“হুম।”
“কীরে শ্রাবণ সন্ধ্যা বেলা কোথায় ছিলি?”
“একটু ব্যস্ত ছিলাম।”
“ও।”
পড়ানো থেকে বেড়িয়ে আলোকে একটি মেসেজ দিয়ে রেখেছিল শ্রাবণ। কিছুক্ষণ পর সেটার উত্তর এলো।
সবার মাঝখানে থেকেই মেসেজিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়লো শ্রাবণ। প্রমি বিষয়টা লক্ষ্য করার পর জিজ্ঞেস করলো –
“কীরে শ্রাবণ কী এমন ঘাটছিস ফোনে? একটু আগেই তো এলি আবার ফোন নিয়ে শুরু হয়ে গেলি।”
“একটা জরুরি বিষয় রে। আমাকে এখনি চলে যেতে হবে। সরি ইয়ার তোরা আড্ডা দে কাল কথা হবে।”- বলেই উঠে চলে গেল শ্রাবণ। দিয়া তখন রান্নাঘরে ছিল। দিয়াকেও বলে যায়নি সে। শ্রাবণের এমন ব্যবহারে ভাটা পড়লো সবার আনন্দ আড্ডায়।
দিয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়েই আলোকে কল দিল শ্রাবণ। কথা বলতে বলতে এগিয়ে চললো বাসার উদ্দেশ্যে। আলো শহরে আসার পর কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করে নি। কীরকম একটা ভয়, সংকোচ কাজ করতো তার মনে গ্রামের সেই ঘটনার পর থেকে। কিন্তু শ্রাবণের সাথে কথা বলায় বেশ উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছিলো আলো। ভালোই লাগছিল মুহুর্তগুলো।
কিছুদিন পর,
আলো ও শ্রাবণের মধ্যে বেশ ভালোই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দেখাও হয়েছে বেশ কয়েকবার সেই একাডেমিতেই। কিন্তু এখনো আলো সম্পর্কে নিজের ফেন্ডদের কিছু বলে নি শ্রাবণ। আলোর ব্যক্তিত্ব, গুণ, কথা সবকিছুই ভালো লাগতো শ্রাবণের কিন্তু তাও যেন তার মনের মধ্যে কোথাও একটা সংকোচ কাজ করতো।
আলোদের বাসার রাস্তা দিয়েই ঈশাদের বাসা। তাই পর পর দুইদিন রাস্তায় ঈশানের সাথে দেখা হয়ে যায় আলোর। আলো ভাবছে ছেলেটা কী তাকে ফলো করছে? কিন্তু দেখা হলেও আলোর সাথে কোনো কথা বলার চেষ্টা করে নি ঈশান।
একদিন রাতে শ্রাবণ আলোকে ফটোগ্রাফির প্রস্তাব দিয়েই ফেললো। আলো প্রথমে না করলেও শ্রাবণের কম্পিটিশনটার প্রতি এতো উৎসাহ, ভাবনা দেখে এক পর্যায়ে রাজি হয়ে গেল আলো। তখন শরতকাল চলছিল তাই শ্রাবণ সিদ্ধান্ত নিল কাশবনে ফটোসুট করবে।
পরের দিন শ্রাবনের কথামতো হালকা নীল রঙের মধ্যে লাল সুতার কাজ করা জামদানী শাড়ি পড়ে আসলো আলো। শ্রাবণ তাকে নিয়ে গেল শহরের বাইরে একটি নদীর তীরে। সারা তীর জুড়ে শুভ্র কাশফুলের মেলা। লম্বা হতে হতে তারা যেন আকাশ ছুতে চাইছে। আলোর কখনো বাইরে ঘুরাঘুরি হয় নি। এই প্রথম সে শহরের বাইরে এলো তাও শ্রাবণের সাথে। শ্রাবণের প্রতি ওর এতো দিনে কিছু বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই মুহুর্তটুকু অনেক বিশেষ ছিল আলোর কাছে।
একটি নৌকা ভাড়া করলো শ্রাবণ। তারপর সমস্ত নৌকায় ছিটিয়ে দিল শিউলি ফুল। এতো সুন্দর লাগছিল পানিতে ভাসমান নৌকাটিকে! অবাক হয়ে শুধু দেখছিল আলো।
“শিউলি কোথায় পেলে শ্রাবণ? “- আলো।
” আসার সময় নিয়ে এসেছি। পছন্দ তোমার?”- শ্রাবণ।
“হুম। খুব পছন্দ। ”
“এখন যাও এক গুচ্ছ কাশফুল হাতে নিয়ে নৌকায় উঠে পড়ো।”
“তুমি যাবে না?”
“যাব তো। তুমি আগে উঠো।”
শ্রাবণ একগুচ্ছ শুভ্র কাশফুল আলোর হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর আলো নৌকায় উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু এক পা দিতেই সামনে এগিয়ে গেল নৌকা আর ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো আলো।