#আলো_আঁধার
পর্ব ঃ- ১৫
~আঁখি দেব তৃপ্তি
নিশু আলোকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল। আলো পিছনে বসলো গাড়ির। আলো ভেবেছিল ঈশান হয়তো গাড়িতে ওর সাথে কথা বলতে চাইবে কিন্তু কোনো কথাই বললো না ঈশান। নিশুর বলে দেয়া ঠিকানায় এসে গাড়ি থামালো। ঈশানের এমন নিরবতা কিছুটা বিষ্ময়কর লাগলো আলোর কাছে। গাড়ি থেকে নেমে সৌজন্যতামূলক ধন্যবাদ জানিয়ে গেটের ভেতরে চলে গেল আলো।
রাত ১২ টায় শ্রাবণ ফোন দিল ঈশানকে।
“হ্যালো। ”
“কীরে পার্টি কেমন এনজয় করলি?”
“ভালো।”
“তোর গলাটা এমন শুনাচ্ছে কেন?”
“কিছু না এমনি। ক্লান্ত লাগছে অনেক।”
“তুই তো সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ার ছেলে না।”
“আজ একটু কেমন জানি লাগছে।”
“শরীর খারাপ নাকি?”
“না না।”
“তাহলে কী ওখানে কিছু হয়েছে।”
“না।”
“আচ্ছা তাহলে রেস্ট নে। একটা ফ্রেস ঘুম হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
“তুই কী কিছু বলবি?”
“না একটি থিম নিয়ে কথা বলতে চাইছিলাম।”
“বল।”
“না এখন থাক। তুই ববং রেস্ট নে। কাল দেখা হলে বলবো সমনাসামনি।”
“আচ্ছা তাহলে রাখছি।”
“ওকে।”
রাত ৩ টা,
কিছুতেই ঘুম আসছে না ঈশানের। নিজেকে নিজেই নিজের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হচ্ছে আর তার উত্তরগুলো সব এলোমেলো হয়ে ভাসছে যেন তার সামনে। মাথাটাও প্রচন্ড ধরেছে।
বিছানা থেকে উঠে এক মগ কফি বানালো ঈশান। তারপর কফি নিয়ে বেলকনিতে এসে বসলো। রাতটাও আজ অন্ধাকারময়। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না ঈশান।
পরের দিন বিকালবেলা আবারও একাডেমিতে হাজির হলো শ্রাবণ। আজ আর অপেক্ষা করতে বা কাউকে কিছু আলোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হলো না। আলোকে সেখানে পেয়ে গেল শ্রাবণ।
“এই যে ম্যাডাম।”- শ্রাবণ।
ডাক শুনে আলো ফিরে তাকালো শ্রাবণের দিকে।
” আপনি আজকে আবার?”
“হুম, গল্পটা যে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছিল। আজ কী বাকিটা শোনার ভাগ্য হবে আমার?”
“আচ্ছা শোনাবো আজ হাতে সময় আছে।”
“ধন্যবাদ ম্যাডাম।”
“ম্যাডাম ম্যাডাম কী করছেন? আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হবো।”
“তাও আপনি শিল্পী মানুষ বলে কথা।”
“আচ্ছা এতো ফরমালিটি না হলেও চলবে।”
“আচ্ছা তাহলে কী আমরা কালকের জায়গাটায় বসবো নাকি অন্য কোথাও? ”
“ওইখানেই ভালো। আপনি গিয়ে বসুন আমি আসছি।”
“ওকে ধন্যবাদ। ”
শ্রাবণ গিয়ে বসলো গতকালের জায়গাটায়। ১০ মিনিট পর আলো এলো সেখানে। বসতে বসতে বললো- “বলুন কী জানতে চান?”
“ওই যে আপনার বাবার বিষয়ে এসে থেমেছিলেন।”
“ও, আচ্ছা শুনুন তাহলে আমার জীবন কাহিনি। যদিও আমি এগুলা কাউকে বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি না তবুও আজ আপনাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
তারপর আলো এখন পর্যন্ত তার জীবনের ঘটা ঘটনাগুলো সব বললো শ্রাবণকে। শ্রাবণ ভাবতো তার জীবনটা হয়তো কষ্টের। তাকে প্রতিদিন অন্যের বাসায় পড়াতে যেতে হয়। ইচ্ছে হলেই যেকোনো কিছু করতে পারে না এই সেই অনেক সমস্যা। কিন্তু আলোর কথা শুনে নিজেকে অনেকটাই বেটার অবস্থানে আছে বলে মনে হলো। আলোর নামের রহস্যটাও বুঝতে পারলো শ্রাবণ।
“সত্যি আমি নির্বাক। সমাজ ও মানুষ এতোটা অমানবিক হতে পারে তা আমার ভাবতার বাইরে ছিল। আমি নিজেকে অসুখি ভাবতাম। কিন্তু আপনার কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে আমার অবস্থান খুব বেশী খারাপ না আসলে। ”
“হুম।আর কিছু জানতে চান?”
“না। তবে একটা প্রস্তাব আছে।”
“কী?”
“আমি কী আপনার বন্ধু হতে পারি?”
“এখনি বলতে পারছি না ঠিক তবে ভেবে দেখতে পারি।”
“ধন্যবাদ ম্যাম।”
“আবার?”
“হাহা ওকে।”
সন্ধ্যা বেলা ঈশানের সাথে দেখা করার কথা ছিল শ্রাবণের কিন্তু আলোর সাথে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এরমধ্যে ঈশান দুইবার ফোনও দিয়েছে ধরে নি শ্রাবণ। আবার ফোন দিল ঈশান। এবার কলটা রিসিভ করলো শ্রাবণ।
“হ্যালো। ”
“কী রে কোথায় তুই? আমাদের না এখন দেখা করার কথা? ”
“সরি দুস্ত একটা কাজে আটকে গেছি। কাল দেখা করবো।”
“আচ্ছা।”
কথা বলা শেষ করে আবার আলোর সামনে এসে বসলো শ্রাবণ।
“তারপর আর কী বলেন?”
“আমিই তো এতোক্ষণ থেকে বলছি। আপনার সম্পর্কে তো তেমন কিছুই বললেন না।”
“আমার আর কী। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পড়াশোনা শেষের পথে। তারপর পরিবারের দায়িত্ব নেবার জন্য খুঁজতে হবে চাকরি। শখ ফটোগ্রাফি করা। এটা নিয়ে সামনে এগুনোর ইচ্ছে আছে কিন্তু পারবো কিনা জানিনা।”
“চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবেন।”
“হুম আশাবাদী। আপনার ছবি উঠার হলে বলবেন এই ক্ষুদ্র ফটোগ্রাফারকে। চেষ্টা করে দেখবো ভালো তুলতে পারি কিনা।”
” হাহা। আমার ওসব তেমন ভালো লাগে না। ”
“এটা কী বললেন! কোনো মেয়ের ছবি উঠতে ভালো লাগে না এই প্রথম শুনলাম। আমার বন্ধুরা তো ছবি তোলার জন্য আমাকে পাগল করে ফেলে।”
“ও তাই? তাহলে তো বুঝা যাচ্ছে আপনি ভালো ফটোগ্রাফার। ”
“না না তেমন কিছু না।”
“আচ্ছা অনেকক্ষণ তো হলো এবার উঠতে হবে। আমার একটা টিউশন আছে। ”
“ও কোথায়? ”
“ওইতো সামনের গলিতে। ”
“ও আমিও ওদিক দিয়েই যাব। একসাথে যাওয়া যাবে? ”
“আচ্ছা, চলেন।”
চারিদিকে একটু একটু করে আঁধার ঘনিয়ে আসছে। শ্রাবণ ও আলো চলছে পাশাপাশি। সামনে একজন ঝালমুড়িওয়ালাকে দেখা গেল। শ্রাবণ আলোকে জিজ্ঞেস করলো – ” ঝালমুড়ি খাবেন?”
“হুম খেতে পারি।”
“দাঁড়ান নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা, নাগামরিচ থাকলে দিতে বলবেন?”
“বেশি ঝাল খান?”
“হুম।”
কিছুক্ষণ পর ঝালমুড়ি নিয়ে ফিরে আসলো শ্রাবণ। একটি কাগজের ডোঙা এগিয়ে দিল আলোর দিকে আর বললো “মরিচ দেখে খান”
আলো মরিচ না দেখেই খাওয়া শুরু করলো। অবাক হলো শ্রাবণ। এতো ঝাল কেউ কীভাবে খায়?
“ঝাল লাগছে না? ”
“না। এর চেয়েও বেশি ঝাল আমি খেতে পারি।”
“বলেন কী!”
“হুম। চলুন এগুনো যাক।”
“হুম।”
ঝালমুড়ি খেতে খেতে আবারও পাশাপাশি হাটতে শুরু করলো শ্রাবণ ও আলো। কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন বেজে উঠলো শ্রাবণের। ফোন বের করে দেখলো দিয়া কল করছে। একটু সরে কলটা রিসিভ করলো শ্রাবণ।
“হ্যালো। ”
“কোথায় তুই?”
“পড়াতে যাচ্ছি।”
“আজ বাদ দে।”
“কেন?”
“আমি আজ রান্না করেছি। সবাইকে আসতে বলেছি ওরা আসছে তুইও আয় জমিয়ে আড্ডা হবে।”
“তুই কী রাঁধবি তা আমার জানা আছে। ”
“এসে দেখ।”
“সরি রে আজ আসতে পারবো না।”
“মানে?”
“পরে কল দিচ্ছি রাখি।”- বলে ফোন কেটে দিল শ্রাবণ।
শ্রাবণের না শুনে মন খারাপ হয়ে গেল দিয়ার।
” কী হলো স্পেশাল কেউ ফোন দিচ্ছে নাকি বার বার?”
“না না তেমন কিছু না। ফেন্ড একটা। ”
“ও।”
“তারপর বলুন।”
“আর কী বলবো?”
“যা ইচ্ছে। ”
“খুঁজে পাচ্ছি না তেমন কিছু। ”
“ও। তা আপনার ভাবনা কী শেষ হলো? ”
“কীসের?”
“বন্ধু বানানোর। ”
“না। আরেকটু সময় লাগবে।”
“ও।”
“এইতো আমার স্টুডেন্ট এর বাসা।”
“আজকেও কী কোনো কন্টাক্ট নাম্বার না দিয়েই চলে যাবেন?”
শ্রাবণের কথা শুনে একটু চিন্তায় পড়ে গেল আলো।