#আলো_আঁধার
পর্ব ঃ- ১৪
~আঁখি দেব তৃপ্তি
“এক্সকিউজ মি, আমি কী এখানে একটু বসতে পারি?”- ঈশান।
” কেন?”- আলো।
“না এমনি। যদি আপনার অসুবিধা না থাকে তাহলে আর কী একটু কথা বলতাম।”
“আমি আগ্রহী নই।”
“ও আচ্ছা, তাহলে যাই। অন্যকে বিরক্ত করা আমার ভালো লাগে না।”
“হুম, ধন্যবাদ। ”
এরকমটা আশা করে নি ঈশান। কিন্তু গায়ে পড়ে কারো সাথে কথা বলার অভ্যাসও তার নেই। তাই মুখ ভার করে নেমে গেল ছাদ থেকে।
আস্তে আস্তে জমজমাট হয়ে উঠলো নিশুদের ছাদ। একাপাশে উচ্চ শব্দে মিউজিক বাজছে অন্য পাশে রয়েছে খাবার দাবারের ব্যবস্থা। ছোট ছোট বাচ্চাটা মিউজিক এর সাথে নাচচে ও। আস্তে আস্তে বাচ্চাদের দলে বড়রাও যোগ দিল। সবাই খুব এনজয় করছে প্রোগ্রামটা। কিন্তু আলো সেই এক কোণেই বসে আছে। ওর নিজেকে বেমানান লাগছে এই পরিবেশে।
বেশীক্ষণ আলো একা বসে থাকতে পারলো না। নিশু এসে তাকে টেনে সামনে নিয়ে গেল সবার। তারপর সবাই ঘিরে ফেললো আলোকে। এক্সিবিশনে ওর আঁকা পেইন্টিং এর জন্য অভিনন্দন জানালো সবাই আলোকে। ভালোলাগার মধ্যেও অস্বস্তি খুঁজে পেল আলো। কেউ কেউ অভিনন্দনের সাথে সাথে এমন সব কথা বলছে যা তাকে উপহাস করা বুঝায়। তিথি নামের একটি মেয়ে বলে উঠলো – ” তুই তো বেশ এগিয়ে যাচ্ছিস রে আলো এবার দেখ ভালো কোনো ছেলেকে পটাতে পারিস কিনা। তাহলে একটা গতি হবে তোর।”
কথাগুলো খুব ইগোতে লাগছিলা আলোর কিন্তু কাউকেই কিছু প্রতিউত্তরে বললো না সে। নিশু অবশ্য ওকে অনেক প্রায়োরিটি দিচ্ছিলো।
নিশুর সাথে আলোর বন্ধুত্বও বেশী দিন আগের না। প্রথম দিকে নিশু ভুলেও আলোর সাথে কথা বলতো না এড়িয়ে চলতো। নিশুর চলাফিরা ছিল বেশি এডভান্স টাইপ ছেলেমেয়েদের সাথে। ওদেরকেই সে বন্ধু, বিশ্বাসী মনে করতো। কিন্তু একদিন দেখা গেল ওদের আসল রুপ। খুব বড় একটা বিপদে পড়লো নিশু। বিপদটা ছেলেঘটিত। একটি গুন্ডা ছেলে নিশুর পিছু নিয়েছিল। নিশু তাকে অপমান করায় একদিন ছেলেটা তার দলবল নিয়ে নিশুকে রাস্তায় আটকে ফেলে। তখন নিশুর সেই বন্ধুরা নিশুকে সাহায্য না করে নিজেদের বাঁচাতে পালিয়ে যায় পিছন থেকে। সেদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল নিশু। আলো তখন সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল আর নিশুকে ওমন অবস্থায় দেখতে পায়। সাথে সাথে আলো পুলিশে ইনফর্ম করে বিষয়টি তারপর নিশুর কাছে গিয়ে ছেলেদের কাছ থেকে নিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। রাস্তাটা তখন ফাঁকা ছিল। মানুষজনও ছিল না আশেপাশে যে সাহায্যের জন্য ডাকবে। আর ১/২ জন আসলেও তারা নিজেদের এসবে জড়াতে আসেনি। সেদিন সময়মতো পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌছাতে পারায় কোনো ক্ষতি হয়নি আলো ও নিশুর। সেই থেকে আগের বন্ধুদের ছেড়ে আলোর সাথে মিশতে শুরু করেছিল নিশু। আস্তে আস্তে তারা দুজনে ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে।
বাসায় ফিরে নিলয় ওর ঘরের দরজা আটকে বসে আছে। খুব কষ্ট পেয়েছে সে আজ। দিয়া আর প্রমি ওর সাথে এমন করতে পারে তা সে ভাবে নি। নিলয়ের মা দুইতিন বার এসে ডাকলেন ওকে কিন্তু তাও দরজা খুললো না নিলয়। চুপচাপ বসে রইলো বিছানার এক পাশে।
কিছুক্ষণ পর পাশে রাখা মোবাইল ফোন বেজে উঠলো নিলয়ের। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো দিয়া কল করছে। রিসিভ করলো না নিলয়। নিশ্চয়ই আবার ওরা উল্টো পাল্টা কথা শুনিয়ে মজা নিবে।
একটানা বেজেই চলছে ফোন। এই নিয়ে ৫ বার হলো। নিলয় না পারছে কলটা কেটে দিতে না ইচ্ছে হচ্ছে ধরার। তাও অবশেষে কলটা রিসিভ করলো সে।
“হ্যালো। ”
“ফোন এতোক্ষণ রিসিভ করছিলি না কেন?”
“দেখতে পাই নি।”
“মিথ্যা কথা বলিস না। তোর গলাটা এরকম ভার ভার লাগছে কেন?”
“কিছু না এমনি।”
“বেশি রাগ হচ্ছে? ”
“জানিনা।”
“সরি ইয়ার। তোর এতোটা ঝাল লাগবে আমি বুঝতে পারি নি। সবকিছু এই প্রমির শয়তানি।”
“সমস্যা নেই।”
“কেন সমস্যা থাকবে না? আমি ওকে খুব বকে দিয়েছি। এখন তোকে ও সরি বলবে।”
“তার কোনো প্রয়োজন নেই। ”
“এতো ভাব ধরিস না ওকে? নে প্রমির সাথে কথা বল।”- বলে প্রমির কাছে ফোনটা দিল দিয়া।
” হ্যালো। “- প্রমি।
” বল”
“রাগ করছিস দুস্ত?”
“না।”
“সিউর তো?”
“হুম।”
“কান্নাকাটি করছিস না তো?”
“প্রমি বাড়াবাড়ি করছিস কিন্তু আবার।”
“হাহা যাক বাবা বাঁচা গেল। দিয়া তো আমাকে বলছিল তুই কান্না করবি।”
“ভালো। ”
“সরি দুস্ত রাগ করিস না। তোকে আমি কালকে গফ গিফট করে দিব যা।”
“গফ মানে?”
“মানে বুঝলি ওই যে সেই মেয়েটি তোর স্বপ্নপরী।”
“আমার কোনো স্বপ্নপরী নেই।”
“আরে গাধা আমি তোর গফ বই এর কথা বলছি।”
“হা হা হা। এখন বুঝেছি। ”
প্রমির কথায় রাগ সব হাওয়া হয়ে উড়ে চলে গেল নিলয়ের। এই মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলে যাই হোক বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায় না ওর সাথে।
অনেক সুন্দর একটি কেক কাটলো নিশু। তারপর শুরু হলো সবার ফটোসুট করা। আলোর আবার এসব বেশী ভালো লাগে না তাই সে কিছুটা সরে দাঁড়িয়ে রইলো। একটু পরই খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে যাবে।
হঠাৎ নিশু লক্ষ্য করলো ঈশান আসেপাশে কোথাও নেই। মিউজিকের পাশ থেকে সরে ঈশানকে কল করলো নিশু।
“হ্যালো, কোথায় তুমি ভাইয়া?”
“এইতো আছি নিচে।”
“আমার কেক কাটা বাদ দিয়ে তুমি নিচে গিয়ে বসে আছো?”
“ভালো লাগছে নারে তুই মজা কর আমি একটু পর আসছি।”
“কিছু কী হয়েছে ভাইয়া?”
“না না কী আবার হবে।”
“আচ্ছা তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আসো।”
“আচ্ছা আসছি।”
সবকিছু শেষ হতে হতে রাত ১১ টা বেজে গেল। আস্তে আস্তে যার যার মতো করে সবাই চলে যাচ্ছে। আলো কখনো এতো রাতে একা একা চলাচল করে নি। তাই কীভাবে যাবে একটু চিন্তা হচ্ছে ওর। তখন নিশু এসে বললো –
“আলো তোকে বলেছিলাম গাড়ি দিয়ে পাঠাবো কিন্তু গিয়ে দেখি ড্রাইভার ঘুম এ একাকার। এ অবস্থায় গাড়ি চালানো তো রিস্ক হয়ে যাবে। এখন কী করা।”
“আচ্ছা দেখি আমি বাইরে কোনো আটো-রিক্সা পাওয়া যায় কিনা।”
“না না এতো রাতে তোকে একা কীভাবে ছাড়বো। তুই বরং আজ থেকে যা।”
“নারে মা বাসায় একা আছেন।”
হঠাৎ ঈশানকে সামনে দিয়ে যেতে দেখলো নিশু। ডাক দিয়ে বললো- “আলোকে একটু ওর বাসায় পৌঁছে দিবে ভাইয়া।”
“উনি বোধহয় আমার সাথে যাবেন না।”
“কী রে আলো যাবি না?”
“না। আমি একাই পারবো।”
“বেশী বুঝদারগিরি করিস না আলো। ভাইয়া ড্রাইভ জানে। তোকে পৌঁছে দিবে।”
আলো কী বলবে ভেবে পেল না। বাসায় তো ওকে ফিরতেই হবে। এ ছেলেটা কী বিশ্বাস এর যোগ্য। যেহেতু নিশু পাঠাচ্ছে কিছু বাড়াবাড়ি করার সাহস করবে না। একটুখানিই তো পথ। এই ভেবে “আচ্ছা যাব”- বলে দিল আলো।