#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
৪.
টেম্পু থেকে নেমে সাবধানে রাস্তা পার হলো রাণী।পাহাড়ের রাস্তাটা তার চেনা নয়।তাই বারবার সে একটু চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে।চারপাশে নজর বুলিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো সে।একটু পরেই দেখতে পেলো “মায়া এতিম খানা” এর বিশাল বড় গেইটটি।রাণী একটু থেমে দাঁড়ালো সেই গেইটের সামনে।কোনো এতিম খানাও এতো সুন্দর আর আকর্ষণীয় হতে পারে এটা রাণীর কোনো কালেই জানা ছিল না।রাণী এতিম খানার চারদিকে ভালো করে নজর দিয়ে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।তৎক্ষণাৎ তার মনে এলো,মাটি নিয়ে তাকে দ্রুত তাদের এতিম খানায় ফিরতে হবে।তাই রাণী আর দেরী না করে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।রাণীর মনে নাজিম এর কথা ঘুরছে।তার স্পষ্ট মনে আছে;নাজিম বলেছিল,পাহাড়টা মায়া এতিম খানার পাশেই অবস্থিত।রাণী সেই কথার সূত্র ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আরেকটু হাঁটতেই রাণী পাহাড়ের রাস্তা আর সেদিকে লাগানো একটা সাইন বোর্ড দেখতে পেলো।রাণী তার বুকে হাত রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সেই সাইন বোর্ড দেখে।রাণী পাহাড়ের রাস্তার পথ অনুসরণ করে জঙ্গলের দিকে ঢুকে পড়লো।জঙ্গলের দিকটায় একটু আঁধার ধরনের।যদিও রাণীর এখন অল্প ভয় লাগছে, কিন্তু সে তার মাথায় হালকা চড় দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো,”উফ রাণী!এইখানে মাটির ব্যবসা করে।কোনো একজন মানুষকে পেয়ে যাবি তুই।ভয় পাস না।”রাণী নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে বলতে সামনের দিকে আগাচ্ছে।কিছুদূর যেতেই কোনো এক মহিলার “কই যাও, বাছা?” এমন শব্দে থেমে গেলো রাণী।পেছন ফিরতেই সে একজন বুড়ো মহিলাকে দেখতে পেলো।বুড়ো মহিলাকে দেখে রাণীর মনের এতক্ষণের ভয় যেনো কেটে গেলো।এই বুড়ো মহিলা রাণীর সাহায্য করতে পারবে নিশ্চয়,এমনটা ভেবে রানী সেই বুড়ো মহিলাকে বলে উঠলো,”কিছু মাটির জিনিস বানাবো, দাদী।তাই মাটির প্রয়োজন।শুনেছি এইখানে ভালো মাটি পাওয়া যায়।আপনি যদি আমাকে সেই জায়গায় একটু নিয়ে যান,তাহলে বেশ ভালো হতো।”
বুড়ো মহিলাটি রাণীকে আশ্বাস দিয়ে বললো,”আরে এই ব্যাপার?আমার পোলারই তো এই মাটির ব্যবসা।তবে বাছা,মাটি কিনতে হইলে কিন্তু টাকা দেওয়া লাগবে।” বুড়ো মহিলার কথায় রাণী বলে উঠলো,” অবশ্যই।টাকার কোনো সমস্যা নেই।আমি শুধু মাটি নিয়ে দ্রুত আমার নীড়ে ফিরতে চাই।” রাণীর এমন কথায় বুড়ো মহিলাটি হাসলো আর বললো,”আমার পিছু পিছু আসো।” অগত্য রাণী ঐ বুড়ো মহিলার পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো।কিন্তু, রাণী সেই বুড়ো মহিলার হাসির আড়ালে হিংস্র চোখগুলো দেখতে পেলো না।
—
আকাশে ভারী কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে।জঙ্গলের ভেতর যেনো এই আঁধার আরো বেশি ঘন দেখাচ্ছে।তূর্যয় আর হ্যারি জঙ্গলে আসার কিছু সময় পর পুলিশ বাহিনীর কিছু লোক তাদের সাথে যুক্ত হলো। তূর্যয় এর সাহায্যে তূর্যয় এবং বাকি সবাই অপরাধীর ঠিকানা পেয়ে গেল।এখন তূর্যয় দাঁড়িয়ে আছে একটা কুঁড়ে ঘরের সামনে।আর বাকি সবাই মূলত এখন তূর্যয়ের ইশারার অপেক্ষায় কান পেতে আছে।আজ তারা যাদের সন্ধানে এইখানে এসেছে,তারা শহরের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী সাথে ছিনতাইকারী এবং মানুষ হত্যাকারী।তাছাড়া এই গ্যাং এর বিরুদ্ধে কিছুদিন যাবত নারী এবং শিশুদের অপহরণ এর অভিযোগও উঠে এসেছে।আজ পর্যন্ত অনেক পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়েছে এইখানে,তবে কেউ এদের সন্ধান পেতে সক্ষম হয়নি। আবার অনেকেই এখানে এসে আর কখনোই ফিরে যায়নি। এই গ্যাং এর অপরাধের সূত্র অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায়, কমিশনার নিজ দায়িত্বেই তূর্যয়কে এই কাজটি করতে দিলেন।কমিশনারের ধারণা,এই কাজ তূর্যয় আর তার লোক ছাড়া কেউ করতে পারবে না।ঠিক হলোই তা।তূর্যয়ের সাথে শহরের অনেক বড় গ্যাং এবং ছোট গ্যাং এর যোগাযোগ থাকায় তূর্যয় খুব সহজেই এই দলটির সন্ধান পেয়ে গেলো।তূর্যয় ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সেই কুঁড়ে ঘরের দিকে।তার বাম হাতের ইশারায় বাকি সবাই তূর্যয়ের পেছন পেছন যেতে লাগলো।তূর্যয়ের নির্দেশে হ্যারি আসছে সবার শেষে।কুঁড়ে ঘরের সামনে গিয়ে এক লাথি দিয়ে ধুম করে দরজায় আঘাত করলো তূর্যয়।সাথে সাথেই নড়বড়ে দরজাটি ভেঙে গেলো।দুইজন লোক এগিয়ে আসতে নিলেই তূর্যয় এর বুলেট তাদের আর এগিয়ে আসার সুযোগ দিল না।মাটিতে লুটিয়ে পড়লো লোক দুইটি।ঘরের ভেতরটাতে চোখ যেতেই তূর্যয়ের চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো।এই ছোট কুঁড়ে ঘরে অনেক ছোট বাচ্চা আর যুবতী মেয়েদের দেখা যাচ্ছে।যাদের মধ্যে কেউ সজাগ নেই, তো অনেকের মধ্যে প্রাণ নেই। খাটে শোয়া কিছু বাচ্চার শরীরের অংশ দেখা যাচ্ছে,যেখানে থেকে তিনজন মহিলা তাদের হাতে ছুরি নিয়ে কিছু করছিল।তূর্যয়কে দেখে মহিলাগুলো দাঁড়িয়ে পড়লো। হ্যারি এই ঘরে ঢুকলো সবার শেষে। হ্যারি ঘরের ভেতরকার এই দৃশ্য দেখে সে তূর্যয়ের কাঁধে মাথা রেখে বললো,”ওহ গড!কি ডেঞ্জারাস এই মানুষগুলো।” তূর্যয় গা ঝাড়া দিতেই হ্যারি সোজা হয়ে দাঁড়ালো।এরপর হ্যারি নিজেই শক্ত মুখে সেই মহিলাদের দিকে গুলি ধরলো।তূর্যয়ের কথা মতো,কিছু পুলিশ সেই মহিলাদের ধরে বাহিরে নিয়ে এলো।আর বাকি পুলিশ ঐ ঘরের বাচ্চা আর মেয়েগুলোকে জাগানোর চেষ্টা করছে।বাহিরে গিয়ে মহিলা তিনজনকে দাঁড় করানো হলো।তূর্যয়ের চোখ লাল। হ্যারি বারবার এই মহিলাদের প্রশ্ন করে যাচ্ছে।কিন্তু, এরা কেউ মুখ খুলছে না।অগত্য এইবার তূর্যয় নিজের ধৈর্য হারিয়ে চিল্লিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”আরেকবার কিন্তু সুযোগ দেওয়া হবে না।প্রশ্নের সাথে উত্তর চাই।নাহলে তিনজনের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়া হবে বিনা নোটিশে।” তূর্যয়ের এমন কথা শুনে মহিলাদের একটু ভয় লাগতে শুরু করলো।এর মধ্যে একজন মহিলা বলে উঠলো,”সব বলবো।” তূর্যয় হ্যারির দিকে তাকাতেই হ্যারি মহিলাদের উদ্দেশ্যে বললো,”মেইন লিডার কই?তোমাদের যতজন লোক আছে,সবার লিস্ট চাই।ইচ অ্যান্ড এভরিথিং।সব সত্যি হওয়া চাই কথা,আদারওয়াইজ; মাই ব্রো উইল কিল ইউ।” হ্যারির এমন কথায় মহিলাগুলো মুখ বাঁকালো।হয়তো হ্যারির শেষের কথাগুলো তাদের মাথায় আসেনি।তবে এদের মধ্যে একজন মহিলা বলতে লাগলো,”বসের নাম সৈয়দ।এই জঙ্গলেই আছে উনি।আমরা সব বলবো আপনাদের শুধু আপনারা আমাদের জানে মারবেন না!” এমন কথা শুনে তূর্যয় কিছু বললো না।তবে কেমন এক সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের আবার বললো,”আমার মনে হচ্ছে তোরা মিথ্যে বলছিস।দেখ, মিথ্যে বললে কোনো লাভ হবে না।এই তূর্যয়কে এখনো চিনতে পারিসনি তোরা। ভালোই ভালোই সত্য বলে দে।” তূর্যয়ের এমন কথার পর পর খুব জোরে মেঘের শব্দ হলো আর সাথে সাথে আকাশ থেমে নামতে লাগলো বৃষ্টি।তূর্যয় আকাশের দিকে তাকাতেই এক উদ্ভট শব্দ আর সবার চিল্লানোর শব্দ শুনতে পেলো।চোখের দৃষ্টি সামনের দিকে দিতেই সে দেখতে পেল মহিলাদের পেছনে দাঁড়ানো পুলিশের লোকগুলো মাটিতে শুয়ে আর্তনাদ করছে আর তাদের গলা থেকে অনেক রক্ত ঝরছে। ঐ তিনজন মহিলার হাতে ছুরি,সাথে তাদের মধ্যে যেনো এক হিংস্র পশু ভর করেছে।তারা এলোপাথাড়ি সবাইকে আঘাত করার জন্যে এগিয়ে আসছে।কিন্তু হ্যারি আর বাকি পুলিশ তাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করছে না।কারণ,আগেই তূর্যয় তাদের ইশারা দিয়ে মহিলাগুলোকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে বলেছে।এই মহিলাগুলো মারা গেলে তারা মেইন লিডারকে ধরতে অনেক কষ্ট করতে হবে।কিন্তু তূর্যয় এতো ভালো নয় যে সেই মহিলাদের ছেড়ে দিবে। মহিলাগুলোকে একটু মারার সুযোগ দিয়ে তূর্যয় নিজেই সেই মহিলাদের পায়ে গুলি করলো।আর মহিলাগুলো আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পড়লো।বৃষ্টিতে সব কিছু ভিজে যাচ্ছে।সাথে রক্তগুলো পানিতে ধুয়ে চলে যাচ্ছে অজানা ঠিকানায়।বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় তূর্যয় সেই মহিলাদের সামনে বসে বাঁকা হেসে বলে উঠলো,”আমার হুমকিকে কখনোই হালকাতে নিতে নেই।তূর্যয় এর কথা যে অমান্য করে তাকে তূর্যয় ছেড়ে দেয় না।একে তো পুলিশদের মেরেছিস আবার আমাদের উপর হামলাও করেছিস। তার চেয়ে বড় কথা তোরা আমাকে মিথ্যে বলেছিস।এখন তো শাস্তি পেতেই হবে।”তূর্যয়ের কথায় তৎক্ষণাৎ এক মহিলা তার ব্লাউজের ভেতর থেকে কিছু একটা বের করে মুখে ঢুকিয়ে দিতে গেলে হ্যারি এসে মহিলাটির হাত ধরে ফেললো।তূর্যয় মহিলার হাত থেকে সেই জিনিসটি নিয়ে ফেলে দিলো মাটিতে। “আহারে,
বসের সাথে গাদ্দারি করে চাই না এই মহিলা।বড্ড সৎ তুই, তাই না?তাই তো এতগুলো বাচ্চাকে কাটতে তোর হাত কাঁপেনি।আর অমনি এখন বসের খোঁজ দেওয়ার আগে,নিজের সততার পরিচয় দিতে সুইসাইড করবি এইসব খেয়ে?কিন্তু আমি তো একজন মানুষ।এইভাবে একজন সুইসাইড করবে আর আমি বসে বসে দেখবো? তূর্যয় এত খারাপ না যে, একটা মানুষ আত্মহত্যা করবে। আর সে বসে বসে দেখবে।একদম ই না।আত্মহত্যা মহাপাপ।এর চেয়ে ভালো, আমিই মেরে দিই তোকে।” কথাটা বলার সাথে সাথেই তূর্যয়ের গুলির বুলেট ভেদ করলো মহিলাটির কপালে।আর মহিলাটি শুয়ে গেলো মাটিতে।এরপর তূর্যয় ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকালো বাকি দুই মহিলার দিকে।এইবার বাকি দুই মহিলা একে একে সব সত্যি বলতে শুরু করলো।
‘
গুলির শব্দ শুনে রাণীর পা থমকে গেলো।এতক্ষণ যাবত হেঁটে রাণী এই জঙ্গলের গভীর থেকে গভীরে ঢুকে গেলো।কিন্তু এই বুড়ো মহিলা তাকে মাটির খোঁজ দিলো না।বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এখন রাণীর অনেক শীত করছে।তাছাড়া একটু আগে তাকে একটা পোকা কামড় দিয়েছিল হাতে।সেই কামড়ের স্থানে ঐ বুড়ো মহিলা কিছু পাতা লাগিয়ে দিয়েছিল।সেই তখন থেকে রাণীর কেমন যেনো লাগছে।আর তার মনে বুড়ো মহিলাকে নিয়ে সন্দেহ বাড়তে লাগলো। এখন গুলির শব্দ শুনতে শুনতে রাণী সেই শব্দ অনুসরণ করে সেদিকে দৌড়াতে লাগলো।রাণীর পেছন পেছন ঐ বুড়িটাও ছুটতে লাগলো।অনেকগুলো লোককে দেখে রাণী থেমে গেলো।এইখানে কিছু মহিলাকে সে দেখতে পাচ্ছে যাদের থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে।আর এর মধ্যে সেই মহিলাদের হেনস্তা করে যাচ্ছে অনেক লোক। এদের মধ্যে কিছু পুলিশও রাণী দেখতে পাচ্ছে।রাণী ঐ মহিলাদের জন্যে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,”আরে কি হচ্ছে এইখানে?” রাণীর এমন কথায় সবাই রাণীর দিকে তাকালো।তূর্যয়ের চোখ মুহূর্তেই বড় হয়ে গেলো রাণীকে এইখানে দেখে।সেদিন তার বাড়িতে রাণীর দেখা চেহারা আজও তূর্যয় ভুলেনি।তাই রাণীকে দেখা মাত্রই তূর্যয়ের রাণীকে চিনতে ভুল হলো না।রাণীকে এইখানে দেখে তূর্যয়ের মেজাজ যেনো আরো বেশি খারাপ হলো।তার উপর বৃষ্টিতে রাণীর অবস্থা দেখতে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।এই জঙ্গলে রাণী কিভাবে এলো,এটাই তূর্যয়ের মাথায় আসছে না।এইদিকে রাণী;তূর্যয়কে দেখে জোরে চিল্লিয়ে উঠলো,”ছি,আপনি কতো নিচ! এই মহিলাদের এইভাবে অত্যাচার করতে আপনাদের কি কোনো রকম লাগছে না?আর এইযে সন্ত্রাসী,আপনাকে তো আমার কোনো কালে মানুষই মনে হয়নি।অমানুষ কোথাকার।”
“জাস্ট শাট আপ!আর ইউ স্টুপিড?এই জঙ্গলে তোর কি কাজ?এইখানে কি তুই? বাবা- মা নেই তোর?তারা তোকে এই গভীর জঙ্গলে ছাড়লো কিভাবে?”তূর্যয় বেশ চিল্লিয়ে কথাগুলো বলে রাণীর সামনে আসলো। রাণী তেজি কণ্ঠে বলল,”নাহ নেই আমার মা,বাবা।আপনার তো আছে মা,বাবা। তাও আপনি এমন হৃদয়হীন কেনো?সেদিন আমরা যে এতিম খানা থেকে এসেছি, আপনার মা বলেনি আপনাকে?”রাণীর কথায় তূর্যয়ের অদ্ভুত লেগে উঠলো।সে সেদিনের কথা তেমন মনে করতে না পারলেও রাণীর রৌদ্র মাখা মুখটা ভাল করে মনে করতে পারছে।তার উপর এই মেয়ে কেনো এই জঙ্গলে এসেছে এইটার উত্তর না দিয়ে আরো বড় বড় কথা শোনাচ্ছে তাকে।তূর্যয় রাণীকে কিছু বলতে নিলে সেই বুড়ো মহিলাটি গুলি তাক করলো সবার দিকে। সাথে সাথেই বাকি দুই মহিলা চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,”বুড়ি আজ আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।এই লোকটি আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।সৈয়দ সাহেবকে সেই প্রথমেই মেরে দিয়েছে। মিথ্যা বলেও বাঁচতে পারলাম না বুড়ি।আজ আমরা সবাই মরবো।” এমন কথা শুনে বুড়ি মহিলাটি চিল্লিয়ে উঠলো,”আমার পোলা!আমার পোলারে কে মারছে?তার ভালো হইবো না রে। আমার পোলা!কই আমার পোলা?আমার পোলার লাইগা আমি এই মাইয়্যারে তোকাইয়া আনলাম, পাতা মাইখা কতো কষ্ট কইরা।কিন্তু এই মাইয়্যা তো এখনো বেহুঁশ হয় নাই।আর আমার পোলাডা নাকি মইরা গেছে?আমি বিশ্বাস করি না।আমার পোলা কই?”
“তোমার ছেলে আকাশে বুড়ি।সারেন্ডার করে দাও।এমনিও, ইউ পিপল উইল ডাই।” হ্যারি হেসে বললো। রাণী অবাক হয়ে সব দৃশ্য দেখছে।তার মাথায় যেন কিছুই আসছে না।তূর্যয়ের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো তূর্যয় তার গুলি ধরা হাতটা একটু একটু নাড়াচ্ছে।এখন হয়তো আরো বেশি কিছু হতে যাবে।কিন্তু রাণীর মাথায় আর সায় দিচ্ছে না।এই বৃষ্টির ঠান্ডা আর মাথায় অদ্ভুত এক অনুভূতি হওয়ার কারণে রাণীর সব ঘোলাটে লাগছে।আর এইদিকে তূর্যয়ের ধারণা মতে ঠিকই বুড়ি মহিলাটি গুলি চালানোর জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল।কিন্তু ততক্ষণে তূর্যয়ের গুলি বুড়ি মহিলার বুক ভেদ করলো।রাণীর দিকে তাকাতেই তূর্যয় দেখলো রাণী কেমন যেনো মিইয়ে যাচ্ছে।রাণী মাটিতে পড়ার আগেই তূর্যয় রাণীর হাত ধরে নিলো।রাণীর শরীরের তেজি তাপ যেনো তূর্যয়ের হৃদস্পন্দন বাড়াতে লাগলো।তূর্যয়ের এক হাত দিয়ে রাণীকে নিজের সাথে আগলিয়ে নিলো।সে হ্যারির উদ্দেশ্যে বললো,”লিডার তো প্রথমেই শেষ হয়ে গেলো।এখন বাকিদের খোঁজ নাও।এই জঙ্গলেই পেয়ে যাবে।আমি এখন কমিশনারের কাছে যাবে।সব ডিটেইলস তাকে বুঝিয়ে দিব।যাদের উদ্ধার করেছি তারা সবাই এখন সজ্ঞানে এসেছে।তাদের বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।আর এই মেয়ের হুঁশ ফিরলে তাকেও তার ঠিকানায় পৌঁছে দিও।”কথাটা বলে তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে হ্যারির কাছে দিতে নিলো।কিন্তু সে দেখলো,
রাণী তার বুকের দিকের কাপড়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। রাণীর এই জিনিসটা তূর্যয়ের অনেক অদ্ভুত লাগলো।এক অন্য রকম এক ভাবনা জাগলো তূর্যয়ের মনে।রাণীর এমন কান্ড দেখে হ্যারি হেসে উঠে তূর্যয়েকে বললো,”দিস গার্ল ইজ ইন্টারেস্টিং, ব্রো। সে কিন্তু একদম রাগী টাইপ,জাস্ট লাইক ইউ।মনে হয় না,মেয়েটি আমার কাছে আসতে চাই। সো,মেয়েটিকে তুমি রেখে দাও।”।কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তূর্যয় জোর করে রাণীকে হ্যারির দিকে এগিয়ে দিল। হ্যারি মাত্রই রাণীর হাত ধরলো আর অমনি আবারও গুলির শব্দ ভেসে এলো।এমন শব্দ শুনে হ্যারি এক টানে তূর্যয়কে অন্যদিকে নিয়ে গেলো।তূর্যয়ের বুকে রাণী লেপ্টে থাকায় তূর্যয় হ্যারিকে বাঁধা দিতে পারলো না।হ্যারি তূর্যয়কে বললো,”অনেক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভিজেছো তুমি, ব্রো।যেকোনো সময় তুমি নিজেই সিক হয়ে যেতে পারো।তুমি তো জানো,বৃষ্টি তোমাকে সুট করে না।তার উপর এই মেয়ের অবস্থা ভালো হবে না।এখনের এগুলো ছোটখাটো গুন্ডা। আই ক্যান ইজিলি কিল দেম।অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাও তুমি,ব্রো।বিলিভ মি,আমি ঠিক থাকবো। ডোন্ট ওরি এবাউট মি।”কথাটা বলে হ্যারি চলে যেতে লাগলো।তূর্যয় নিজে হ্যারির পেছনে যেতে নিয়েও থেমে গেলো।রাণীকে সে তার বুক থেকে ছুটিয়ে নিয়ে হ্যারির পেছনে যাওয়ার চিন্তা করলো।রাণী পড়ে যেতে নিলে এইবারও তূর্যয় রাণীকে ধরে নিলো।রাণীর জায়গায় অন্য মেয়ে হলে তূর্যয় কি করতো সে জানেনা।তবে এইভাবে রানীকে বৃষ্টির মাঝে ছেড়ে যাওয়াটাও তূর্যয়ের মনে সায় দিচ্ছে না।একটু আগে সে রাণীকে পুলিশের কাছে দিয়ে দিতে পারলে,হ্যারিকে তূর্যয়ের একা ছাড়তে হতো না।হ্যারিকে একা ছাড়তে একদম ইচ্ছে করছে না তূর্যয়ের।রাণীর দিকে এক নজর তাকাতে তূর্যয়ের বুক ধুক করে উঠলো।
“তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো?গো ব্রো।আমি ঠিক থাকবো।রাতে বারে দেখা হবে আমাদের।এই পথে যাওয়া রিস্ক।অন্যদিকে যাও।রেস্ট নিবে তুমি। আই উইল বি ফাইন।টেক ইউর মেডিসিন। অ্যান্ড ইয়াহ, আই লাভ ইউ। আই ওলসো নো,ইউ লাভ মি।”কথাগুলো বলে আবারও এক দৌড়ে হ্যারি চলে গেলো।তূর্যয় মুখে কিছু না বললেও,হ্যারির জন্যে তূর্যয় তার বুকে ঠিক কতটা ভালোবাসা জমা রেখেছে এটা একমাত্র তূর্যয়ের মন জানে।তূর্যয় হ্যারির জন্যে মনে মনে দুআ করে নিজের হাতে থাকা গুলি কোমরের পেছনে রেখে দিল।আর এক ঝটকায় সে রাণীকে কোলে নিয়ে নিল। তূর্যয় নিজেও জানে আর বেশি বৃষ্টিতে ভিজলে, সে নিজেই তার জ্ঞান হারাবে।রাণীর মুখ তার বুকের সাথে লাগাতে তূর্যয়ের অন্যরকম লাগা শুরু করলো।এই ঝুম বৃষ্টিতে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এলোমেলো পথে তূর্যয় রাণীকে নিয়ে চলতে লাগলো অজানা ঠিকানায়।
চলবে….