আমি শুধুই তোমার পর্ব-১২

0
1910

#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

ইনান আর আয়াশ শপিং মলে গেলো ইনশিরার জন্য গিফট কিনতে।আয়াশেরটা আদ্রি কিনবে কারণ ওর এসব বিষয়ে কোনো আইডিয়া নেই।আর ইনান একটা লাল বেনারসী কিনলো।ইনানকে বেনারসী কিনতে দেখে আয়াশ বলল

“বেনারসী দিবি ভালো কথা কিন্তু লালটাই কেনো?”

“বউতো লাল বেনারসী ই পরে।”

“হুম কিন্তু ও তো তোরটা পরতে পারবে না।রায়ানের টা পরবে।”

“পরবে অবশ্যই পরবে।”

“হুম তবে বিয়ের দিন না।”

“বিয়ের দিনই পরবে।”

“কিভাবে?”

“সেটা নাহয় বিয়ের দিনই দেখিস।এখন চল ইনশুর বাসায় যাই।”

“হুম কিন্তু এখনতো বিকেল হলুদতো সন্ধ্যায়।ওর বাসায় যাওয়ার চেয়ে বরং চল আদ্রির বাসায় যাই।”

“আচ্ছা চল।”

আয়াশ ইনান দুজনই আদ্রির বাসায় এলো।আদ্রি দরজা খুলতেই দুজনকে একসাথে দেখে লাফিয়ে উঠলো তারপর বলল

“ওহ!!মাশাল্লাহ তোদের দুজনকে তো হেব্বি লাগছে।কারো নজর যাতে না পড়ে।”

আয়াশ হতাশার ভঙ্গি নিয়ে বলল

“কারো নজর না পড়লে তো সারাজীবন কুমার থাকতে হবে।দোয়া কর যাতে সুন্দরী কারো নজর পড়ে যায়।”

ইনান আয়াশের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল

“সুন্দরী না বল তুই যাকে চাস তার নজর পড়ুক।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“দিল কি বাত কে দিয়া ইয়ার।”

ওদের কথা শুনে আদ্রি ভ্রু উচিয়ে বলল

“কি রে আয়াশ তলে তলে টেম্পো চালাও আর আমরা করলেই হরতাল।”

আয়াশ হতাশার দৃষ্টিতে একবার ইনানের দিকে তাকিয়ে পরে আদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল

“টেম্পো আর চালাইলাম কই?যারে নিয়ে চালামু সেই তো টেম্পোতে উঠে না।”

আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“যারে ভালোবাসিস সময় থাকতে বলে দে নাহলে ইনানের মতো অবস্থা হবে।”

ইনান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“হ্যাঁ আয়াশ বলে দে।”

আয়াশ ইনানের দিকে চোখ রাঙিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলল।তারপর আদ্রিকে বলল

“কি রে তুই কি শাড়ি পরবি নাকি লেহেঙ্গা?”

“ভাবছি হলুদ লেহেঙ্গা পরবো কারণ শাড়ী সামলাতে পারি না।অবশ্য ইনশু বলেছিলো শাড়ি পরতে ও শাড়ী পরবে।”

ইনশিরা শাড়ী পরবে এটা শুনে ইনান কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল

“হুম লেহেঙ্গা পরতে পারিস।”

“হ্যাঁ লেহেঙ্গাই পর।” (আয়াশ)

আয়াশ লেহেঙ্গা পরতে বলছিলো কারণ শাড়ী পরার অভ্যাস আদ্রির নেই সামলাতে না পারলে সমস্যা হতে পারে তাই।আদ্রি ওদের দুজনে অরেঞ্জ জুস দিয়ে বলল

“তোরা বস আমি রেডি হয়ে আসছি।”

“তোর আপু কোথায়?” (ইনান)

আদ্রি নিজের রুমে যেতে যেতে বলল

“আপুতো হসপিটালে আছে ডিউটিতে।আজকে ইমার্জেন্সি আছে।”(আদ্রি)

তারপর আদ্রি নিজের ঘরে চলে যায়।এবাড়িতে আদ্রি আর ওর বোন ছাড়া কেউ থাকে না।ওর বোন পেশায় ডাক্তার।ইন্টার্ণ করছে।আর ওর বাবা মা লন্ডন থাকে।এবছর শেষের দিকে আসবে ওর বোন আরাধ্যার বিয়ে দিতে।ওর বাবা মা দুইবোনকে নিজেদের সাথে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু এরাই ইচ্ছা করে যায় নি।আরাধ্যা যায় নি তার হবু বর অর্ণবের জন্য আর আদ্রি ওর ফ্রেন্ড সার্কেল ছেড়ে যায় নি।যাইহোক আদ্রি রেডি হয়ে নিচে নামতেই আয়াশ হা করে চেয়ে রইলো।ইনান পাশ থেকে গুতা মেরে বলল

” হা করে তাকাইস না মাছি ঢুকবে।”

আয়াশ স্বাভাবিক হয়ে আদ্রিকে বলল

“মোটামুটি কম খারাপ লাগছে না।”

“তোর থেকে কোনোদিনই ভাল্লাগে না এ আর নতুন কি!!”(আদ্রি)

ইনান ওদের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে।আদ্রি ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল

” তুই বল কেমন লাগছে?”

“মোটামুটি বেশি খারাপ না।”

ইনানের কথা শুনে আয়াশ হাসতে হাসতে শেষ। আদ্রি মুখ গোমড়া করে বলল

“থাক আমি যাবো না।”

ইনান দ্রুত হাসি থামিয়ে বলল

“না রে মজা করছিলাম আসলেই তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

আদ্রিও হাসলো তারপর বলল

“চল যাওয়া যাক।”

সন্ধ্যার সময় আদ্রি,আয়াশ,ইনান ওরা ইনশিরার বাড়ি পৌছালো।বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে।ওরা ইনশিরার বাবা মার সাথে কথা বলে ইনশিরার রুমে গেলো।রুমে গিয়েই আদ্রি ইনশিরাকে জড়িয়ে ধরলো ইনশিরাও ধরলো।তারপর ইনান বলল

“কি রে কেমন আছিস?”

“এইতো ভালো।তোরা?”

“হুম আমরা সবাই ভালো।তোর সাজগোজ হইছে নাকি আরো সময় লাগবে?না মেয়েরা সাজতে যা সময় নেয়।”

আদ্রি আয়াশের কান মলে বলল

“চুপ মেয়েদের সাজগোজ নিয়ে একটা কথাও বলবি না।নাহলে তোর কপালে পেত্নী জুটবে।”

ইনান খোচা মেরে বলল

“সেটা হওয়ার সম্ভবনা নেই।”

ইনানের কথা শুনে সবাই হাসা শুরু করলো কিন্তু আদ্রির মাথার উপর দিয়ে গেলো।তারপর ইনশিরা বলল

“এইতো হয়ে গেছে আর একটুপর বোধহয় স্টেজে নিবে।”

তারপর চারজন মিলে গল্প করা শুরু করলো।কিন্তু আয়াশ গল্পের ফাকেও অন্য কথা ভাবছে ইনান কিভাবে এতো স্বাভাবিক?ওর ভিতর কি চলছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না।আদ্রিও একই জিনিস চিন্তা করছে।একটুপর ইনশিরাকে নিতে এলো স্টেজে বসানোর জন্য।ইনশিরা যেতে নিলেই কারো পায়ের সাথে বেধে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু তৎক্ষনাৎ ইনান ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে আর ইনানে হাতের হলুদ ইনশিরার কোমরে লেগে যায়। মূলত ইনান ইচ্ছা করে ইনশিরার পায়ে ওর পা বাধিয়েছে যাতে এমন একটা সুযোগ পেয়ে যায়।আর ইনান ইনশিরার রুমে আসার আগেই ডান হাতে হলুদ লাগিয়ে নেয়।যাতে হলুদের প্রথম ছোয়াটা ওই দিতে পারে।যাইহোক ইনশিরাকে উঠালো তারপর কিছু না জানার ভান করে বলল

“ইনশু ঠিক আছিস?”

ইনশিরা ইনানের কানে ফিসফিসিয়ে বলল

“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি তবে কোমরে তোর হাত থেকে হলুদ লেগে গেছে।তুই হাতে হলুদ নিয়ে ঘুরছিস কেনো?”

“ওইতো আয়াশকে জোর করে লাগাবো বলে।”

“ওহ!!আচ্ছা এখন আর কি করার চল যাই।”

তারপর ইনশিরাসহ সবাই স্টেজের দিকে গেলো।আর ইনান মুখে একটা শয়তানি হাসি ফুটিয়ে ডান হাতটা একবার গলায় তারপর গালে লাগালো।এতসব কেউ না দেখলেও আয়াশ ঠিকই দেখেছে।হলুদ ছোয়ানো শুরু হয়ে গেছে। একে একে সবাই হলুদ ছোয়ালো।এবার ইনানের পালা।ইনান হাসি মুখে হলুদ ছোয়াতে গেলো।ইনান অবশ্য ওর ফ্রেন্ডদের আগেই বলেছিলো ইনশিরা আগে ওকে হলুদ ছোয়াবে তারপর অন্যকেউ তাই সবার মুখে হলুদ লাগলেও ইনানের মুখে ইনশিরা লাগানোর পরেই সবাই লাগিয়েছে।ইনান দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে এই প্রথম ও এমন করছে।একটুপর ফারা এসে বলল

“হাই ইনান।আজকেতো অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে তোমাকে।”

ইনান ভাব নিয়ে বলল

“সেটা প্রতিদিনই লাগে।”

ফারা হেসে বলল

“হ্যাঁ তা ঠিক।আমার প্রথম ক্রাশ তুমি।”

ইনান হাসলো।এপাশে সাইডে দাড়িয়ে আয়াশ আর আদ্রি সব দেখছে।আদ্রি আয়াশকে চিমটি দিয়ে বলল

“দোস্ত ইনান কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?ও এতো কুল কিভাবে?”

আয়াশ চিন্তিত মুখে বলল

“আমিও কিছু বুঝাতেছি না।মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে।”

“চলতো ইনানকে একটু জিগ্যেস করি।”

“হুম চল।”

আয়াশ আর আদ্রি ইনানকে সাইডে এনে জিগ্যেস করলো

“দোস্ত তুই এতো কুল কেমনে রে?”

“তো কি হট হয়ে বসে থাকবো?জাস্ট চিল ইয়ার!!বান্ধবীর হলুদ ইনজয় করছি।তোরাও কর।”

এটা বলে চলে গেলো আর আবার ফারার সাথে কথা বলা শুরু করলো।এদিকে আয়াশ আর আদ্রির মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।

রাত ১০.০০ টা…

ইনান আয়াশ আর আদ্রিকে বাগানের সাইডে এনে জিগ্যেস করলো

“আমরা চারজন পনেরোদিনের জন্য সিলেট যাচ্ছি।”

আদ্রি ভ্রু কুচকে বলল

“চারজন মানে?”

“আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড আর তোরা দুইজন।”

আয়াশ আর আদ্রি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো তারপর আয়াশ বলল

“কিহ!!!তুই গার্লফ্রেন্ডও জুটাইছিস?কেমনে কি?”কে ওই মেয়ে?”

“ফারা নয় তো?” (আদ্রি)

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে