আমি শুধুই তোমার পর্ব-১১

0
1879

#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

এদিকে ইনশিরা রায়ানের সাথে ওদের দেখা করাবে বলে তিনজনকেই আসতে বলেছিলো।আয়াশ আর আদ্রি আসলেও ইনান আসে নি।তাই ইনশিরা ফোনের উপরে ফোন দিচ্ছে ইনানকে।অনেকবার ফোন দেওয়ায় ইনান অতিষ্ঠ হয়ে ফোন রিসিভ করলো।ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই ইনশিরা বলল

“কি রে কই তুই?এতোবার করে ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেনো?”

“বাসায় ই তো আর ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারি নি।”

“ওহ!!তাড়াতাড়ি আয় রায়ান চলে আসছে।”

ইনশিরার মুখে অন্য ছেলের নাম শুনে ইনানের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।খুব কষ্টে বলল

“আচ্ছা আসছি।”

বলেই ফোন রেখে দিলো আর বাম হাত দিয়ে চোখ মুছলো।কাল থেকে আজ পর্যন্তু কিচ্ছু খায় নি। আয়াশ,আদ্রি ওর বাবা, মা কেউ কিচ্ছু খাওয়াতে পারে নি শুধু কাল রাতে মদ খেয়েছে। খাওয়ার মধ্যে এতটুকুই।যাইহোক কোনোমতে একটা শার্ট গায়ে দিয়েই বেরিয়ে পড়লো।চুলটাও ঠিক করার নাম নেই।যে ছেলে ঘর থেকে বের হলে মেয়েরা একবার হলেও তাকাবে সে ছেলে আজ এভাবে বের হলো।যাওয়ার সময় গাড়িও নিলো না হেটে গেলো।সেখানে পৌছুতেই দেখলো ইনশিরার পাশে রায়ান বসে আছে আর অপর পাশে আয়াশ আর আদ্রি বসে আছে।ইনশিরার পাশে রায়ানকে দেখে ইনান রাগে হাত মুট করে ফেললো কিন্তু কিছু বলল না চুপচাপ ইনশিরার অপর পাশের চেয়ারে বসলো।ওকে দেখেই ইনশিরা বলল

“এতক্ষণে আসছেন নবাব।আর তোর এই অবস্থা কেন?চুল আওলা ঝাওলা হয়ে আছে কেন?”

“ওইতো ঘুম থেকে উঠে আসছিতো তাই।”

“হায় রে।আচ্ছা যাইহোক রায়ানের সাথে পরিচিত হ।”

ইনশিরা রায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল

“এ হচ্ছে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডদের মধ্যে আরেকজন।”

রায়ান ইনানের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল

“হাই,আমি রায়ান শেখ।”

ইনান বহু কষ্টে মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল

“আমি ইনান চৌধুরী।”

“ওহ!!ইরফান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে তাই না?”

“জ্বি।”

“আমি আপনার বাবাকে পার্সোনালি না চিনলেও টিভিতে দেখেছি উনি প্রতিবারই সেরা বিজনেসম্যান হন।”

ইনান কিছু বলল না শুধু হালকা হাসলো।আয়াশ ইনানের কানে কানে বলল

“এফ বি লগ ইন কর।”

“কেনো?” (ইনান)

“লগ ইন করে আমাকে নক দে।”(আয়াশ)

ইনান রায়ানের সাথে কথা বলতে বলতে এফ বি লগ ইন করে আয়াশকে নক দিলো

” কি হইছে? “(ইনান)

“রায়ানের সামনে কানে কানে কথা বললে কেমন একটা দেখা যায় তাই এফ বি তে কথ বলমু।”(আয়াশ)

“ধূর শালা কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।বেশিক্ষণ থাকবো না।নোটিফিকেশন আসছে।”(ইনান)

“সকালে উঠে ব্রাশ করছিলি?তুই তো রাতে ওগুলা খাইছিস তাই বললাম।”(আয়াশ)

” না পাঁচটা চুইংগাম চাবাইতে চাবাইতে আসছি।আর আমি লগ আউট করলাম ভাল্লাগতাছে না।”(ইনান)

এতক্ষণ মোটামুটি অনেক কথাই হলো রায়ানের সাথে তিনজনের।তারপর ইনশিরা আর রায়ান চলে যাওয়ার জন্য উঠতে উঠতে বলল

“আপনারা কিন্তু কাল হলুদে আসবেন।” (রায়ান)

“জ্বি অবশ্যই। (আয়াশ)

“গাইস তোরা থাক আমি একটু রায়ানের সাথে শপিং এ যাবো।”

এই কথা শুনে ইনানের ইচ্ছা করছে এখানেই ওকে জ্যান্ত পুতে ফেলতে।আয়াশ অনেক কষ্টে ওর হাত ধরে রেখেছে।আদ্রি ইনশিরার কথা জবাবে বলল

“আচ্ছা যা।”

“হুম তোরা কিন্তু কাল সময় মতো চলে আসিস।” (ইনশিরা)

তারপর রায়ান আর ইনশিরা চলে গেলো।ওরা যেতেই ইনান টেবিলের উপর হাত দিয়ে জোরে একটা বাড়ি মারে।আয়াশ ওর পিঠে হাত রেখে বলল

“ভাই প্লিজ শান্ত হ।”

ইনান মুখের উপর দুইহাত রেখে বলল

“আমার সাথেই কেনো এমন হলো বলতো?আমিই কেনো?এই রায়ান কতো সুন্দর ইনশুকে না ভালোবেসেই পেয়ে যাচ্ছে আর আমি এতো ভালোবাসার পরও পাবো না।এমন কেনো বলতো?আমার ভাল্লাগছে না।”

আদ্রি ইনানের চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল

“এটাই নিয়তি আমরা সবসময় যা চাই তা পাই না।কারণ ওটা আমাদের জন্য না।তুই শান্ত হ।”

ইনান কিছু না বলেই উঠে গেলো।পিছন থেকে আয়াশ বলল

“কই যাচ্ছিস?”

” চৌরাস্তার মোড়ে দেবদাস হইয়া ঘুরতে।যাবি তুই?” (ইনান)

“হুম আসতাছি কিন্তু আমি দেবদাস হইতে পারমু না।”(আয়াশ)

আদ্রি কল আসায় আদ্রি চলে গেলো।আর আয়াশ আর ইনান ইনানদের বাসায় চলে এলো।ইনান আয়াশকে বলল

” তুই কিছু খাবি?”

“আমি খাইছি কিন্তু তুই কাল থেকে কিচ্ছু খাস নাই।তুই কিছু খেয়ে নে।”

“না ইচ্ছা নাই।”

“ইনান তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছিস।এটা ঠিক না শরীরের ক্ষতি হবে তো।”

“হলে হবে কার কি?কেউ এটা দেখার জন্য নাই সবাইতো বিয়েতে ব্যাস্ত।”(ইনান)

“দোস্ত প্লিজ পাগলামি করিস না।”

“তুই যা তো জ্ঞান দিবি না।অসহ্য লাগে।”

“আচ্ছা তাহলে আজ ওইভাবে গেলি কেনো রায়ানের সাথে দেখা করতে?”

“কিভাবে?”

“দেবদাস স্টাইল মেরে।”

“তো কি রোমিও স্টাইলে যামু?রোমিও তো ওই রায়ান সাজবো।”

“তুই রাগিস না প্লিজ।”

“হুম বকবক না করে এখান থেকে যা।”

এটা বলেই আয়াশকে আবার রুম থেকে বের করে দিলো আয়াশ জানে এখন খুলতে বললেও খুলবে না তাই কি আর করার ও চলে গেলো।ইনান গায়ে থাকা শার্ট টা খুলে ছুড়ে মারলো।তারপর দরজা জানাল বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে রইলো।দুইদিন ধরে ভার্সিটিতে যাওয়ার নাম নাই।এখন ইনানের মনে হচ্ছে পৃথিবীতে ওর একমাত্র শত্রু হচ্ছে রায়ান।ওকে চাকু দিয়ে পিস পিস করতে পারলে মনের জ্বালা মিটতো ইনানের।শুয়ে শুয়ে রায়ানকে কিভাবে মারলে ওর রাগ কমবে সেটাই ভাবছে ইনান।এভাবেই একটা দিন কেটে গেলো।কারো মনে আনন্দ আবার কেউ হারানোর ব্যাথায় ছটফট করছে।সবই নিয়তি!!!

পরেরদিন….

“ইনান বাবা দরজা খোল।” (মা)

ইনান টলতে টলতে এসে দরজা খুলে বলল

“হ্যাঁ মা বলো।”

“আমরা একমাসের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি তুই একা থাকতে পারবি তো?”

“হ্যাঁ মা পারবো।”

“না পারলে তোর খালার কাছে চলে যাস।দুইদিনেই তো মুখ শুকিয়ে গেছে।কি হয়েছে রে তোর?কিচ্ছু বলছিস না।”

“মা তেমন কিছু না। বাবা কোথায়?”

“ওইতো তোর জন্য নিচে অপেক্ষা করছে।”

“আচ্ছা যাও আমি আসছি।”

ইনান বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।উনাদের বিদায় দিয়ে ইনান আবার চলে আসলো নিজের রুমে।সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটালো ইনান।আর এদিকে ইনশিরার বাসায় সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে।

দুপুর ২.০০ টা

ইনান লম্বা একটা শাওয়ার নিলো।ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট আর শার্ট পড়লো তারপর ব্য্লাক শু পরলো।চুলগুলো সেট করে মেচিং কালারের ঘড়ি পড়লো তারপর পারফিউম দিয়ে একবারে পারফেক্ট ভাবে রেডি হলো।যেনো আগের ইনান ফিরে এসেছে।এসময় কে যেনো আসলো ইনান দরজা খুলে দেখলো আয়াশ।আয়াশ ইনানকে দেখে বিষ্মিত হয়ে বলল

“কি রে এতো সুন্দর করে রেডি হলি যে।”

ইনান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল

“তো কি বান্ধবীর হলুদে গাজাখোরের মতো যাবো।একটু সেজেগুজে গেলেতো কয়েকটা মেয়ে পটে যাবে।”

“আমার মনে হচ্ছে এখানে অন্যকিছু রয়েছে।”

“আরে এতো কমপ্লিকেটেড করছিস কেনো?সহজ ভাবে নে।আর চলতো ওর জন্য একটা গিফট কিনবো।”

“আচ্ছা চল।”

ইনান একবার আয়ানায় নিজেকে দেখে নিয়ে বলল

“পারফেক্ট লাগছে তো?”

“একদম পারফেক্ট।”

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে