গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার ❤️🍂
Writer:- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৭
নিচে ইভান কে সবাই অনেক বকে, আর ঐদিক ফারিদা। নিজের সব জামা কাপড় গুছিয়ে লেদারে ভরছে, আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে আর ইভানকে বকছে
—–হারামি বদ পুলা। বিয়ে হয়েগেছে তাও তার অন্য মেয়ের জন্য খারাপ লাগে,থাক তুই তোর মিরাকে নিয়ে। কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়া। সালা হুতুম পেঁচা, খচ্চর তোকে আমি ডিভোর্স দিবো, কান্না করতে করতে। তখনই ইভান রুমে আসে দেখে ফারিদা কান্না করছে আর নিজের জামা কাপড় দিয়ে লেদার ভরতি করেছে। ইভান গিয়ে ফারিদার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে।
—-কি করছো? এইসবের মানে কি? ফারিদা রেগে চিৎকার করে বলে
—-অন্ধ আপনি চোখে দেখেন না? আমি থাকবো না আপনার সাথে,আর আপনিও তো এই সম্পর্কে খুশি না। তাই বাবাকে বলে আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। ডির্ভোসের কথা শুনে বলে
—–কানের নিচে আরেকটা দিব,কে দিবে ডিভোর্স তোকে, তুই আমার সাথেই থাকবি। বলেই লেদার থেকে ফারিদার জামা কাপড় বের করে দেয়। ফারিদা বলে
—-সমস্যা কি আপনার কি চাই? ইভান বলে
—-আমার কোনো সমস্যা নেই বুঝতে পারছো?আর তুমি কোথাও যাবে না। আমি রেগে বলি
—-আমি যাবো। সব নতুন করে শুরু করবো। ইভান বলে
—-হ্যা আমার সাথে। আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
—-বিয়ের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই গায়ে হাত তুলেছেন, আর কিছু দিন পর তো আমাকে মেরেই ফেলবেন। ইভান হুংকার শুনিয়ে বলে
—-ফারিদা….আমি বলি
—-আওয়াজ নিচে। ইভান আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে যাই তার দেওয়া চেন আর দুল গুলো খুলে তার হাত দিয়ে দিলাম আর বললাম
—-আপনার মন মতো কাউকে পেলে তাকে দিয়েন। ইভান সেগুলো হাতে মুটকরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে বলে
—-এগুলো তোমার, পরলে পরো না পরলে ফেলে দাও। আমিও রেগে গিয়ে তার হাত থেকে সেগুলো নিয়ে নিলাম আর সাথে আমার লেদারটাও সেটা নিয়ে নিচে নামতে যাবো তখনই ইভান দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।আমি বললাম
—-সরুন।সে কিছু বলতে যাবে তখনই অংশ এসে হাজির আমার হাতের লেদাররা দেখে অংশ বলে
—-কোথাও যাবে ভাবি? আমি বললাম
—-অংশ আমাকে একটু আমাদের বাড়ি দিয়ে আসবে? অংশ বলে
—কেনো? আমি বললাম
—-পারবে কি না বল? অংশ আমার হাত থেকে লেদারটা নিয়ে নিলো। আমিও বের হয়ে গেলাম ইভানও এলো আমার পিছু পিছু। ইভানের মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম
—-বাবা-মা, আমি আমাদের বাসায় যাবো। আমার শাশুড়ী মা বলেন
—-মারে ইভান রাগের মাথায় হাত তুলেছে মাফ করে দে। আমি রেগে গিয়ে বলি
—-কিসের এতো রাগ উনার, জানা নাই শুনা নাই তার রাগ। ইভান কিছু বলতে যাবে তখনই ইভানের বাবা বলে
—-মা তুই যা। যতদিন থাকতে ইচ্ছে করবে থাকবি। আমিও কথা বারালাম না চলে আসলাম বাবার বাড়ি আমাকে দেখে,মা-বাবা সবাই অবাক। তারপর মাকে সব খুলে বললাম মাও বললো ইভান রাগের মাথায় এসব করেছে, আমিও রেগেমেগে লেদারটা নিয়ে নিজ রুমে চলে আসলাম। রুমের দরজা জানলা লাগিয়ে একটা ঘুমের পিল নিলাম, এখন আমার ঘুমানোটা বেশ দরকার, তাই দিলাম এক ঘুম। ওপর দিকে ইভানের সম্পূর্ণ বাসা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এই কয়দিন রুমটাতে ফারিদার আভাস ছিল হাসিতে মেতে থাকতো আর এখন পিন পিন নিরবতা বিরাজমান। ইভানের মা ইভানের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে
—-তুমি মেয়েটাকে কেনো যেতে দিলে? ইভানের বাবা রাগী চোখে তাকিয়ে বলে
—-যাওয়াটা কি স্বভাবিক না, আর তোমার ছেলেই বা কেমন, আমরা মানি মিরা নরমাল না ওর মেন্টালেটি সমস্যা আছে কিন্তু সেটা তার ফারিদাকে জানানোর ই দরকার ছিল। আর মাঝ রাতে যদি তোমার রুমে কেউ নক করে তাহলে তোমার কেমন লাগবে? ইভানের চাচি বলে
—-হ্যা, ইভানের গায়ে হাত তুলা উচিত হয়নি। ইরিন ওরা সবাই চুপ। রাতের দিকে ফারিদার ঘুম ভাঙলো দেখে রাত ১০টা বাজে। সে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো দেখে তার বাবা মা আর ফারিন বসে আছে। সে গিয়ে তার বাবাকে বলে
—-আমি এখানে থাকলে কি তোমার সমস্যা হবে? মেয়ের এমন কথা শুনে আতঁকে ওঠে ফারিদার বাবা, সে বলে
—-কেনো তুই তো ভুল করিসনি। আমি বললাম
—-আমি কাল থেকে কলেজ জয়েন করবো। মা কিছু বলবে তার আগেই বাবা বলে
—-ওকে। আমি আর দাড়ালাম না চলে এলাম নিজের রুমে। এসে অনলাইনে ঢুকি আর আদিলা,নাহীদা কে কল করে জানিয়ে দেই আমি কলেজ জয়েন করছি। ওরা খুশি। আমিও দেখাবো তাকে ছাড়া আমি ভালোই থাকতে পারবো। রাতে ইভানের ঘুম আসছেনা। নিচে তাকে খেতে ডেকে যায় ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তার বাবার ভয়ে যায়।আর দেখে ইরিন সোফায় বসে বসে, ফারিদার সাথে কথা বলছে। ফারিদা বলে
—-কাল থেকে কলেজ জয়েন করব দোয়া কর। আর বাবা মা কে বলো আমি ভালো আছি। ইরিন বলে
—-ভাইয়াকে কিছু বলবো না? আমি বললাম
—-না, ভালো থেকো পরে কথা হবে। ইভান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে খেতে বসে কোনো রকম খেয়ে নিজ রুমে চলে আসে, কিন্তু এখানে এক একটা কোনায় রয়েছে ফারিদার ছোয়াঁ। ইভান ঠিক করে নিল কাল সে ফারিদার সাথে দেখা করে কথা বলবে আর সরিও বলবে। কিন্তু কালতো তার হসপিটালে যেতে হবে।তাই কালকে আর যাওয়া হবে না।
সময় কারো জন্য থেমে থাকেনি থাকবেও না, সময় চলে নিজের গতিতে,আর এই সময়ের সাথে বদলে যায় আপন পর সব,মানুষগুলোই। ফারিদার খুব মনে পরে তার হুতুম পেঁচার কথা কিন্তু রাগে সে প্রকাশ করে না। ইভানের সব ছবি সোশাল মিডিয়া থেকে কেটে দিয়েছে। আর এই একসপ্তাহে ইভান কম হলেও হাজার বারের উপরে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে কিন্তু ফারিদা রাগের বাসে তা একসেপ্ট করেনি। কেনেই বা করবে, আর মেসেজেও ইগনোর করে রেখেছে পড়ে ঠিকই কিন্তু রিপ্লাই দেয়নি। মুটামুটি পরীক্ষাার পিপারেশন নিচ্ছে ফারিদা সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা তারপর অনার্স। অনেক স্নপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছে।ইভান এবার তার সাপোর্ট করলেই হয়।
১ সপ্তাহ হয়েগেলো, ফারিদা ইভানের কোনো খুঁজ নেয়নি, সে ফারিদাদের বাসায়ও গিয়ে ছিল কিন্তু ফারিদা ছিল তার ফ্রেন্ডর বাসায়,তাই ফিরে আসে। আজ ইভানের ছুটি, সেই কখন থেকে কলেজের গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছে। তার প্রয়শীকে এক নজর দেখবে বলে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক পর্যায়ে ফারিদা চলে এলো। সাথে তার ২ বান্ধবী তারও সবটা জানে কারণ তারা অনেক ক্লোজ। ফারিদাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে, রেড এন্ঞ্জেল ড্রেসে বেশ মানিয়েছে তাকে।আর চুলগুলো মেডামে হাইলাইট করেছে। ফারিদা ইভানকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইভানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলেজে ঢুকে যায় সে। ইভান চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে ফারিদার যাওয়ার পানে। এই একসপ্তাহে প্রায় হাজার বারের ওপরে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছে ফারিদাকে। অনেক নক দিয়েছে কিন্তু নো রিপ্লাই…। ১টার দিকে কলেজ ছুটি হয়েগেলো, ফারিদা গেটের বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথে….
চলবে…..