গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার
Writer:-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৫
ঘুমান অনেক রাত হয়েছে বলে, আমি যখন উঠতে যাবো। ইভান আমার হাতটা ধরে তার কাছে নিয়ে বসি দেয় আর বলে
—-হুতুম পেঁচারা রাত জাগে আপনি জানো না? আমি হাসি দিয়ে বললাম
—-এর মানে আপনি শিখার করছেন আপনি হুতুম পেঁচা, কি যে শান্তি লাগছে। ফারিদার কথায় ইভান বোকে বনে গেলো, এই মেয়ের সাথে কথায় পাড়া যাবে না বাপু,বড্ড চালাক। ইভান আমাকে উদ্দশ্যা করে বলে
—-তো আপনি কলেজ জয়েন করবেন কবে থেকে। কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার মাথায় আস্ত একটা বাস এসে ঠুস করে পরলো। পরলো বললে ভুল হবে আমাকে চাপা দিলো চলিত ভাষায় (বিদ্রঃ ফারিদা সাধু ভাষা কম পরে), এখন সাথ-নিভানা-সাথীয়ার মধ্যে যেই ধূমতানা মিইজিকটা বাজতো আমার মনে হচ্ছে ঠিক আমার সাথে ঠিক তেমনই। আমি বিয়েতে রাজী হলাম কেনো? এই কলেজে কে তো ডির্ভোস দিয়ে দিবো ভাবছিলাম, আর এই উনিতো তার শতীনের কাছে আমাকে দিয়ে আসতে চায়। আমার স্বপ্ন ছিল বিয়ে হচে সংসার করবো ১০/১২ টা বাচ্চা কাচ্চা হবে ওদের মানুষ করবো। কিন্তু এই নিরামিষ নামক হুতুম পেঁচার আমার সুখ দেখে সইলো কই। আমি বললাম
—–জানিনা বলেই রুমের লাইট ওফ করে সোফার দিকে পা বাড়াতেই সে এসে আমেকে বলে।
—–সোফায় শুলে উগান্ডায় পাঠাবো, বিছানায় শুবেন চলেন। আমি তার দিকে সুরু চোখে তাকিয়ে বলি
—-আপনিতো চাইতেন,তো সমস্যা কই? আমি এখানেই শুতে পারবো। সে বলে
—-ওকে পারলে শুয়ে দেখান বলেই, ওয়াশরুমের দিকে গেলো। আর এক মগ পানি নিয়ে হাজির আমি এক দৌড়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে বললাম
—-আমিতো মজা করছিলাম, তুমি আমার কিউট হুতুম পেঁচা, নিরামিষ পাতী হাঁস, আমার তারছিড়া হাসবেন্ড, প্লিজ এই ঠান্ডার সময় আর পনি দিয়ে গোসল করতে আমি চাই না। ইভান ফারিদার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে সে ভেবে পাচ্ছে না, এটা আদর করে ডাকা ছিল নাকি ইডিরেক্টলি অপমান করা। ইভান কিছু না বলে চলে গেলো আর পানিটা রেখে চলে আসে। আবার বৃষ্টি শুরু বাইরে ঝড়,, বতাস বইছে তীব্র গতিতে। বাতাসের কারণে বলকনির দরজাটা খুলে যায় আমি যাই ওটা লাগতে কিন্তু দরজা লাগানোর সময় ভুলবসত আমার হাত কেটে যায়। আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে
—–আহহহহ্ আম্মু। আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে ইভান, আমি তাকিয়ে আছি আমারা কাটা হাতটার দিকে, সে কিছু সময় আমার হাতটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
—-গাধাঁ নাকি তুমি? দেখ কাজ করতে পারোনা, পারো তো শুধু নাচতে।৷ তার মুখে তুমি ডাকটা আমার ভালোই লাগছে কিন্তু বকাটা আমার পেটে হজম হলোনা। আমরা আবার সব কিছু হজম হয়না। আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম
—-ইচ্ছে করে করিনি, বোকা দিবেন না বলে দিলাম। সে আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে
—- চুপ পাজি মেয়ে,ফাস্ট এইড বক্স কোথায়? আমি ভাব নিয়ে বললাম
—-দরকার নেই আমি নিজেই করতে পারবো। বলে যেতে নিলে সে আমাকে অবাক করে দিয়ে কোলে তুলে নিল আর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে
—-যেটা Ask করছি সেটা বলো। আমি তাকে বললাম কোথায় তারপর সে সটা নিয়ে এসে আমার কাছে বসলো, তুলোয় সেভলন লাগিয়ে নিয়ে জোরে জোরেই আমার হাতের রক্ত গুলা পরিষ্কার করতে থাকে এর মানে সে বেশ রেগে আছে, তারপর হাতে বেন্ডেজ করে দিয়ে, বক্সটা জায়গা মতো রেখে এসে লাইট ওফ করে শুয়ে পরে। কি রাগরে বাবা, হুতুম পেঁচারা বুঝি রাগও করে? হ্যা আমারটা করে। আজকে জানলাম। যাই হোক দিলাম এক ঘুম। তারপরের দিন সকাল সকাল ওঠে সে কোন রকম খেয়ে আমাকে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। কি অদ্ভুত তাই না, আমাদের জীবন যেমন আল্লাহর ওপর নির্ভর কিছুটা ডক্টর এর ওপরও যেমন, একটা ভুলের কারণে রুগীর জীবনও যেতে পারে আবার তাদের কারণে অনেক রুগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে নিজ আপন মানুষদের কাছে। সারাটাদিন কাটলো আমার এটা ঐটা করে। ইরিনে আর অংশের সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেলো। বাড়ির সবাইতো আমাকে পছন্দ করেই এনেছে। গিয়েছিলাম রান্না ঘরে মা বললো যে বিকেলে কিছু বানাতে আমার রান্না করতে হবে না। ভাবা যায় এগুলা? মানে কেমনে আমিতো ভাবছিলাম আমার শাশুড়ী মা হবেন রিনা খানের মতো, এতো দেখি কত ভালো। আর ইভানের চাচির কথা না বললেই না সেও আমাকে বেশ পছন্দ করেছেন। কিন্তু সারাদিনে আর হুতুম পেঁচার খবর নাই, বললে কি হবে ব্যস্ত মানুষ ডক্টর বলে কথা। ওপর দিকে রাগে ফুলছে ইভান আর ভাবছে
—কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা বর কে একটু ফোন করে বলবেতো আপনি কিছু খেয়েছেন, না খেলে সময় করে খেয়ে নিয়েন আবার আমাকে বলে আমি নাকি নিরামিষ নামক হুতুম পেঁচা ?বাসায় যাই দেখাবো মজা
বিকেলের দিকে রান্না ঘরে যাই, কি রান্না করব ভাবতে ভাবতে আমার দিন পার ইয়ে মানে বিকেল পার। যাই হোক সব কিছু বাদ দিয়ে পায়েশ বানালাম। ইরিনের কাছ থেকে জেনেছি তার পায়েশ নাকি খুব পছন্দের। তার জন্যই আমার এত কষ্ট এবার তার কাছে ভালোলাগে আমি আমার জীবনকে ধন্য মনে করব। কিন্তু তার আসার এখনও কোনো নাম গন্ধ কিছু নেই।
ছাঁদটা সাজানো হচ্ছে রাতে বারবিকিউ পার্টি হবে। আর সন্ধ্যার দিকে ইভানের খালতো ভাই বোন আর ফুপির ছেলে মেয়ারা এসেছে । সবাই একসাথে বসে গল্প করছি আর সামনেই চিকেন রেডি করছে আম্মু আর কাকিমা। সবার সাথে আমার ভাব হলেও মিরা মানে আমার খালা শাশুড়ী মেয়ে আমাকে তেমন একটা পছন্দ করেনি । গাড়ির আওয়াজে আমি দৌড়ে রেলিঙের কাছে গেলাম দেখি আমার উনি এসেছেন। মানে আমার হুতুম পেঁচা, পাতী হাঁস। আমি আম্মুকে বলে নিচে গেলাম আর দরজটা খুলে দিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি ভাবছি কি হলো এটা? আমিও তার পিছন পিছন রুমে গেলাম। সে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো, এমন করছেন কেন উনি? আমিও কিছু না বলে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সে আসার পর তাকে বলি
—চলেন খাবেন। সে আমরা দিকে তাকিয়ে বলে
—-আমার খবর না রাখলেও তোমার হবে। সারাদিনে একটা ফোন পর্যন্ত করোনি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি সে আমার তাকানো দেখে বলে
—–কি হয়েছে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেন?আমার কি নতুন কান আর চোখ গজিয়েছে নাকি? আমি হাসি দিয়ে বললাম
—-না আপনাকে এভাবেই কিউট লাগে, আর আমার ফোনে তো আপনার নম্বর সেভ করা নাই কিভাবে কল দিব বলেন? ইভান বলে
—-ঠিক আছে ঠিক আছে। বাসার আর সবাই কই? তাদের কাছে চাইলেই পারতে। আমি বললাম
— ছাঁদে বার্বিকিউ পার্টি করবে সবাই চলেন। আপনার আন্টি আর ফুপিও এসেছে।সে বলে সে যাবে না, আর আমাকে ওল্ট বকে দিলো। আমি এবার রেগে যাই আর বলি
—একে তো নিজে লেট করে আসছেন, আবার আমাকেই বকছেন? আর আমার কাছে আপনার নম্বর ছিলা না আর আমি নতুন তাই কারো কাছে চাইতেও পারিনি, আপনি কি করছেন বসে বসে কোন ক্ষতের ধান কাটছেন যত্তসব।
বকে তাকে ফেলেই চলে আসি। কালকে থেকে শুরু করছে এমন করা। ছাঁদ গিয়ে বসে পরলাম, কিন্তু কিছু সময় পর সেও চলে এলো সে আমার পাশে বসতে চাইলেি, মিরা বলে
—-ইভান ভাইয়া তুমি আমার পাশে বস। আমিও কিছু বললাম না দেখি কি করে, বসুক যেখানে ইচ্ছা এই মেয়ের কোলে গিয়ে বসুক যত্তসব। আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম, সবাই একসাথে বলে ট্রুথ আর ডেয়ার খেলার কথা, তারপর চমরা সবাই খেলি। আমার পালা যখন আসে আমি বলি আমি ট্রুথ নিব মিরা আমাকে প্রশ্ন করে
—-এই মেয়ে তুমি এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করছো? কথাটা শুনে আমার গা জ্বলে যায়। আমি নিজেকে শান্ত করে উত্তর দেই
—-একটাও না। আর একটা কথা মিরা হয়তো আমি আপনার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু সম্পর্কে বড় তাই ভাবি ডাকলে খুশি হব। আমার কথায় মিরা বেশ লজ্জা পায় আর সবাই মুখ টিপে হাসছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে ইশারায় সরি বলে। বলুক আমার কি আমিতো বেশ রেগে আছি তখনও বকা দিছে আর এখন বসছে এই মিরা প্যারার সাথে। কিছু সময় পরই হুতুম পেঁচার বারি চলে আসলো। সে ডেয়ার পিক করলো, সবাই বললো তাকে গান গাইতে কিন্তু সেও শর্ত দিলো আমাকেও গাইতে হবে তার সাথে। আমি রাজি না হলেও পরে সবার জোরাজুরিতে রাজি হই, অংশ নিচে গিয়ে গিটার নিয়ে আসে আর দিয়ে দেয় ইভানের হাতে। ইভান গিটার নিয়ে গাইতে লাগে
—-লক্ষ্মী সোনা রাগ করে না একটু,হাসো প্লিজ ভাললাগেনা আর হবে না করছি যে প্রমিজ।
ভেংচি দিয়ে ফারিদাও তাল মিলালে
—একটু পরে ভাঙবে প্রমিজ এটাই তোমার স্বভাব তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসার অভাব। ইভান মুচকি হাসি দিয়ে বলে
—সারাটাদিন ছুটাছুটি কার জন্য বলে? তাইতো তোমায় সময় দিতে একটু দেরি হলো? (বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
চলবে….