গল্পের নামঃ- #আমি_শুধুই_তোমার🍂
লেখিকাঃ- #আইদা_ইসলাম_কনিকা
পর্বঃ-০১
ফুলসোজ্জা ঘরে বসে আছি, রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু অস্বস্থি লাগছে এই ভাড়ি লেহেঙ্গা আর মুখের সাজ গয়না নিয়ে। পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে হয় ছেলের মা আমাকে দেখতে আসেন আর পছন্দ করে যান। তারপর আমার বর, ননদ আর অনে আত্মীয় -স্বজন গিয়ে আমাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আসেন। শুনেছি উনি নাকি একজন ডক্টর প্রাইভেট হসপিটালের। আর বাবা মার বেশ পছন্দ হয়েছে। আমার পরিবারটা খুব ছোট মানে আমি বাবা, মা, ছোট বোন এখানে থাকি। আর আমার দিদুন,চাচা-চাচি, তাদের মেয়ে ছেলে মানে আমার চাচাতো ভাই বোন থাকে গ্রামে।আমার বাবা একজন ভার্সিটির principal। আর আমি হলাম ফরিদা ইবনে মাহিরা। ইন্টার ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার বিয়েটা বেশ ধুমধাম করেই হয় সব বান্ধবী রা ইচ্ছে মতো মজা করেছি।
কি যে গরম লাগছে, আহহহ কি আর বলবো। আর পারছিনা ধূর এতো লেট কেউ করে। আমি বাপু আর পারবো না এই ভারি লেহেঙ্গা গয়না পরে থাকতে। তাই আলমারি থেকে একটা সুতির শাড়ি নিলাম , যেটা আমার ননদ আর কিছু আত্মীস্বজন মিলে কিছু সময় আগে গুছিয়ে রেখে গেছে। কিন্তু তার আগেই আমার নজর যায় সোফার সামনে টি-টেবিলে আমর ফোনটা রাখা। আমাকে আর পায়কে, বউ সাজার শক ছিলো সেই ছোট থেকে আজকে সেজেছি ছবিতো তুলবই। আমি ও ছবি তুলতে লাগলাম কখনো ঘোমটা দিয়ে কখনো খুলে,কখনো আবার পাউট করে। একটা টিকটকও করে নেই। গিয়ে দাড়ালাম ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে, গরমের মাথা খেয়ে টিকটক করতে লাগলাম, তখনই দ্বার খুলে কেউ রুমে আসে। পিছনে ফিরে দেখি আমার বরটা। তাকে দেখার সাথে সাথে আমার হার্ট বিট বেরে গেলো। আর ছোট একটা এট্যাকও খেলাম। কি সুন্দর লাগছে তাকে গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানিতে। এতো সুন্দর কেনো উনি??উনার নামটাও বেশ সুন্দর ইভান রহমান , উনাকে আমি একবারই দেখেছি, যেদিন সে আমাকে দেখতে এসেছিল। আমি ফোনটা রেখে ধীরে পায়ে তার সামনে দাড়ালাম আর আম্মু বলে ছিল তাকে সালাম করতে, তাই আমি সালাম করতে গেলে সে আমাকে ধরে ফেলে বলে।
—-দেখুন, আমার এই সব ভালো লাগে সো নেক্সট টাইম এমনটা না করলেই খুশি হবো। যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
আমি তো হা হয়ে তাকিয়ে আছি বলে কি সে?? যাই হোক নিজের হা করা মুখটা বন্ধ করে শাড়িটা নিয়ে পা বারালাম ওয়াশরুমের দিকে। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি সে বিছানার ফুলগুলো পরিষ্কার করে শুয়ে পরেছে। আমার কি?! আমিও যখন শুতে যাবো সে হুট করে উঠে বসে বলে
—-দেখুন বিয়েটা আমার অমতে হয়েছে,মানে পরিবারের চাপে । তাই আমার সময় লাগবে। তো আপনি দয়া করে সোফায় ঘুমান.। এবার আমার রাগে গা জ্বলছে। আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে একটু জোড়েই বলি
—-দেখুন সেটা আমার দেখার বিষয় না। আর আপনি ছেলে হয়ে মেয়েদের মতোন কথা বলছেন কেনো?আর আমি বিছানায় ঘুমাবো। আপনার সমস্যা হলে ঐখানে গিয়ে ঘুমান যত্তসব ফাউল কথা বার্তা। ধূর এই ছিলো কপালে। বকতে বকতে গায়ে চাদর টেনে লেম্প টা ওফ কিরে দিলাম। কি দিনকাল আসলো আল্লাহ।
ধূর রাত ঘুমও আসছেনা, তাই পাশে থাকা টেবিল লাইটা ওন করে দিলাম। আর উনাকে দেখ মরার মতো ঘুমাচ্ছে। ঘুমাও বাছা এইদিন দিন না আমারও দিন আসবে উফফ ভালোলাগছে না, কি যে করি,,আমার ফোনটাই এখন আমার সঙ্গী। তখন তার সাথে কথা বলে ফোনটা সেই টি-টেবিলেই রেখে দিয়েছি, সেটাই নিয়ে এসে বসি। কি আর করব তখন কার ছবি দেখছি। ওয়াও আমাকে আজ সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে। যাই হোক এটাতো কথার কথা। যার জন্য এত কিছু তারই খবর নাই। তার দিকে তাকিয়ে দেখি কত কিউট বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে আছে, ভাবা যায় সেই আর ২ দিন পর আমার বাচ্চার বাবা হবে। ইশশশশশ ভাবতেই লজ্জা লাগছে। যাই হোক ফোনের ফ্লাসটা ওফ করে তার কেয়েকটা পিক তুলে নিলাম চুল গুলো হাত দিয়ে হালকা ছুয়ে দিলাম।হুহ সে না মানুক আমিতো মানি আমরা একটা পবিত্র বন্ধনে অবদ্ধ কিন্তু সে এটাও তো বলেনি সে বলেছে তার টাইম চাই, চাদর মুড়ি দিয়ে দিলাম এক ঘুম।
সকালের সূর্য মামা নিজের সূর্যের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে চারদিকে, আর সেই আলো কাচের জানলা ভেদ করে এসে পরছে ইভানের মুখে,ধীরে ধীরে সে চোখ খুলে আর তার বুকে ভারি কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে, সে দেখে তার বউ মানে ফারিদা তার বুকে ঘুমাচ্ছে, কাল রাতে ইভান এমন ব্যবহার করেছিল যেনে শুনে কারণ তার ইচ্ছে বিয়ের পর বউয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবে ।তারপর আবার দু’জনে একসাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে {বিদ্রঃ দুনটাই তারছিড়া) ইভান ফারিদার মাথায় একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলে
—–ফরিদা, ফরিদা এই ফরিদা,,উঠেন। ফারিদার ঘুম ভাঙলো ইভানের ডাকে কিন্তু তার ইভানের মুখে তার নাম ফরিদা শুনে সে রেগে যায় আর ইভানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
—–এই মিয়া আপনার বিয়েতে যদি সম্মতি নাই ছিল আমাকে বলতেন আমি না করে দিতাম, এমন উটকো ঝামেলা করার কি দরকার ছিল। আর ফরিদা ফরিদা কি করছেন? আমার নাম ফারিদা ইবনে মাহিরা বুঝলেন ফরিদা না!!! ফরিদা হলো আমাদের বাসার কাজের মেয়ে। ইভান দুষ্টামি করে বলে
—-তাইতো ভাবি ঐদিন দেখলাম একজনকে আর কাল বিয়ে করলাম আরেকজন কে, ফারিদার এবার চোখে জল চলে এলো। সে কিছু না বলে। চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ইভান তো হেসে কুটিকুটি, একটা উচিত শিক্ষা ও দিয়েছে কাজের মেয়ে বলে কি সে মানুষ না নাকি। ইভান যদিও জানে ফারিদা সেভাবে বলে নাই তাও,,, তখনই দরজায় নক করে ইভানের বোন,চাচাতো ভাই আর অন্য কিছু অত্মীয়। ইভান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইভানের ছোট বোন ইরিন বলে
—-ভাইয়া ভাবি কোথায়,তাড়াতাড়ি তাকে তৈরি হতে হবে নিচে কিছু মেহমান এসেছে তাকে দেখতে। ইভান বলে
—তোরা যা ফারিদা ফ্রেশ হচ্ছে তারপর, আমি ফ্রেশ হয়ে তোদের পাঠিয়ে দিবো ওকে? সবাই চলে গেলেও ইভানের চাচাতো ভাই অংশ যায়নি। সে ইভানের দিকে তাকিয়ে তার ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে
—-আমাকে একটু ভিতরে যেতেদে আমিও দেখি আমার এতো কষ্ট করে সাজানো ফুলগুলোর তোরা কি অবস্থা করেছিস? বলেই ভিতরে ঢুকতে আসলে ইভান বলে
—-থাপ্পড়ামু তোরে ফাজিল পুলা যা ভাগ বলতাছি। অংশ যেতে যেতে বলে
—-বুঝিনা সব তোমার দরজা লাগানোর ধানদা,আর কালকে রুমে ঢুকার আগে টাকা নিয়ে কিপ্টামি করছ, আমারও দিন আসবো মনে রাইখো। এটা বলে সে চলে৷ যায় আর তখনই ফারিদা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে, ইভান তা দেখে বলে
—-ফরিদা তুমি তৈরি হয়ে নিন আপনাকে অনেকে দেখতে এসেছে নিচে। ফারিদা রেগে গিয়ে বলে
—-দেখুন আমার নাম ওরিদা ফরিদা না আমার নাম ফারিদা বুঝলেন,নয়তো মাহিরা ডাকবেন। ইভান বলে
—-ওকে ফরিদা। ফারিদার হাতের তোয়ালেটা ইভানের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বকবক করতে করতে সে চলে গেলো বলকনির দিকে। আর ইভান একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে
—-বউ জ্বালাতে এতো মজা লাগে জানলে,আরো ৫ বছর আগে বিয়ে করতাম,যাই হোক কি যে শান্তি লাগছে…Modd ahiqakana hain sobha gali jana hain tune kesa jado hain kiya. গান গাইতে গাইতে ইভান ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে…. আর ঐ দিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মন খারাপ করে ফারিদা তখনই। দরজায় নক করে ইভানের বোন ইরিন। ফারিদা মাথায় ঘুমটা দিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয় তখনই ইরিন এসে জড়িয়ে ধরে বলে।
—-ভাবি তাড়াতাড়ি চলো, তোমাকে তৈরি করিয়ে দেই। তারপর আবার তোমার খাওয়া দাওয়া অনেক কিছু বাকি। বলেই সবাই একসাথে সাজাতে লাগলো ফারিদাকে। তখনই ইভান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে সবাই ফারিদাকে সাজতে আসছে।ইভান চুলগুলো মুছতে মুছতে বললো।
—-দেখ কালকের মতো মাহিরাকে সাদা ভূত বানাবি না আমিতো বাবা রাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বুঝলি।আর যদি আজকেও এমন করিস এক একটার পিঠে এমন তাল ফালাবো কিডনি ব্লক হয়ে যাবে। এই বলে সে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো
আমি তো শুনে অবাক কি কালকে আমাকে সাদা ভূতের মতো লেগেছে? আমাকে দেখে সে ভয় পেয়েছে? আল্লাহ তুমি আর আমার মতো মাসুম ১৯ বছরের বড় বাচ্চার উপর ঝুলুম করো না। তুমি দরি ফালাও আমি উপরে ওঠে যাই নয়তো মাটি ফাঁক করো আমি ভিতরে ঢুকে যাই। নয়তো এই হতুম পেঁচার পিঠে তাল ফালাও, ওরা সবাই হুহুহু করে কিছু সময় হাসলো তারপর ইরিন আমাকে বললো
—–ভাবি গো কিছু মনে করো না, ভাইয়ার বরবরই সাজ পছন্দ না। আসো তোমাকে হালকা সাজিয়ে দেই, তারপর আমার মুখে হালকা পাউডার আর ঠোঁটে গোলাপি কালারের হালকা লিপস্টিক, আকাশি কলারের শাড়িতে সাজটা ভালোই মানিয়েছে, সাজ শেষে বের হতে যাবো ঠিক তখনই ইভান ঘরে এসে বলে
—-যাহ তোদের কাজ শেষ। আমার যেতে চাইলে বলে
—-তোরা যা ওকে রেখে যা, কাজ আছে আমি ওকে পরে নিয়ে আসছি। সবাই মিটমিট করে হাসি দিয়ে চলে যায়। আমি কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম সে আলামারি থেকে ২ টা বক্স নিয়ে আসলো সেখান থেকে একাটা চেন কিন্তু খুব সুন্দর পাথার গুলো চিকচিক করছে সে সেটা নিয়ে আমাকে পরিয়ে দিলো। আরেকটা থেকে ছোট দুইটা কানের দুল কিন্তু বেশ সুন্দর সেগুলো পরিয়ে দেয়। সে আমার কানে কানে বললো
—–কালকে রাতে দিতে ভুলে গিয়ে ছিলাম আজ দিয়ে দিলাম৷ রাগ করো না ফরিদা। শেষের কথাটা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম
—লাগবেনা আমর এগুলো,যে দিন আমার নাম সুন্দর করে উচ্চারণ করতে পারবেন ঐদিন দিয়েন। সে আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আমার হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে পরলেন বমিতো অবাক এখন কিছু বলতে ও পারবো না, যত যাই হোক এই হতুম পেঁচাই আমার হাসবেন্ড, অসহ্যের গোডাউন একটা.. তারপর নিচে গিয়ে বসলাম সবাই আমাকে দেখে মনে হয় পছন্দই করেছে, কিন্তু তখনই একজন মহিলা বলে ওঠে,
—-মেয়ের গায়ের রং কালো, এমন ফর্সা ছেলের সাথে কালো মেয়ে যায় নাকি? তার কথাটা শুনে আমার মন খাররপ হয়ে যায়।কারণ উনি যেভাবে বলছেন মনে হয় আমি একদম কালো কুচকুচে কিন্তু আমাকে সবাই বলে আমার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। ইভান আমার পাশেই বসে ছিলেন সে সেই মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন
—–এটা আমার বউ,আমি নিয়ে খাবো,তাতে আপনার সমস্যা টা কোথায় আন্টি? আর আমার মাতে ও কালো না ওর গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, আর আমার বেশি ফরসা রঙের মেয়ে ভালো লাগেনা আমার । না ওদের সাজলে সুন্দর লাগে না অন্য কিছু করলে,কিন্তু যারা শ্যামবর্ণ ওদের চোখে কাজল দিলেই সুন্দর লাগে,যেমন – আমার বউ,বোন ইরিন। আর আপনিও কি খুব বেশি ফর্সা? ইভানের কথা শুনে সবাই অবাক আমিও বেশ অবাক কিন্তু আমার শাশুড়ী মা আর শশুড় মুচকি হাসছে, এর মানে তারা তাদের ছেলের কথায় একমত।ইভান আবার বলে
—–যারা যার এমন কথাই বলতে চান তার, সুন্দর ভাবে সামনে থাকা দরজটা দিয়ে বেড়িয়ে যান। ইভানের চাচি এসে বলে
—–বাদ দে ইভান, অনেকর স্বভাবই এমন। ইভান আর কিছু বলেনা কিন্তু আমি অনেক খুশি যে না আমার হুতুম পেঁচা রুমে যাই করুক বাহিরে নিজের স্বামী হওয়ার দায়িত্ব ঠিকই পালন করছে……
চলবে