#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ২৫
#Arshi_Ayat
হঠাৎ মনে হলো কারো ছায়া পড়েছে জানালায় কিন্তু আদ্রি উকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না।আদ্রি মনের ভুল ভেবে শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো।আদ্রি কাউকে না দেখতে পেলেও আয়াশ ঠিকই এসেছিলো আদ্রিকে এক পলক দেখার জন্য।
এদিকে ঘর অন্ধকার করে জানালা খুলে খাটের ওপরে ইনশিরা আর ইনান দুজনেই মুভি দেখতে বসেছে।মভি যতো ভয়ানক হচ্ছে ততো ইনশিরা ইনানের সাথে ঘেষে বসছে।হঠাৎ ভুতটা স্ক্রিনের সামনে আসায় ইনশিরা ভয়ে ইনানের কোলে উঠে গেলো।ইনানও পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর কানে কানে বলল
“ভয় পাচ্ছিস?”
“হুম।প্লিজ মুভিটা বন্ধ করে দে না।অনেক ভয় করছে।”
“আরেকটু দেখ না।”
“না বন্ধ কর।”
“আচ্ছা। ”
ইনান ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো।তারপর ইনশিরাকে জিগ্যেস করলো
“এখন কি করবি?”
“ছাদে চল।চাদ দেখবো।”
ইনান দুষ্টামি করে বলল
“আমার চোখের সামনেইতো একটা চাদ বসে আছে।”
ইনশিরা লজ্জা পেয়ে বলল
“ধূর,চলতো।”
“আচ্ছা চল।”
ইনান আর ইনশিরা ছাদে গেলো।ইনান দোলনায় বসে ইনশিরাকে এক ঝটকায় কোলের উপরে বসালো।তারপর ওর পিঠে একটা চুমু খেয়ে বলল
“আচ্ছা হানিমুনে কই যাবি?”
“তুই বল তুই কই যেতে চাস?”
“তুমি যেখানে আমি সেখানে
সেকি জানো না?
এক ই বাধনে বাধা দুজনে
ছেড়ে যাবো না।”
ইনশিরা হেসে বলল
“সমুদ্রবিলাসে যাবো।”
“ওকে তো কক্সবাজার চল।”
“হুম।ওকে পরীক্ষার পর।”
“আচ্ছা চল গিয়ে শুয়ে পড়ি।”
“আমার কিন্তু ঘুম আসছে না।”
“আসবে।তুই চল আগে।”
ইনান ইনশিরাকে নিয়ে নিচে চলে গেলো।তারপর দুজনেই শুয়ে পড়লো।মোটামুটি অর্ধেক রাত দুজনে বকবক করে কাটিয়েছে।তারপর শেষ রাতের দিকে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
সকাল ৭.০০ টা
ইনান আর ইনশিরা দুজনেই ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।ইনশিরার সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙতেই দেখলো ইনান ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।এমনভাবে ধরেছে যে উঠার কোনো শক্তি নেই।ইনশিরা এবার ইনানের কপালের দিকে ঝুকে একটা চুমু দিলো।আর ইনান চট করে চোখ খুলে ফেললো।ইনানকে চোখ মেলতে দেখে ইনশিরা লজ্জায় ইনানের বুকে মুখ গুজলো।ইনান মুচকি হেসে বলল
“একি!! বউ দেখি লজ্জা পাচ্ছে।”
ইনশিরা এবার বলল
“সর।উঠতে দে গোসলে যাবো।”
এবার ইনান বলল
“আমিও তো যাবো।”
“আগে আমি তারপর তুই।”
“না না হবে না।আগে আমি।”
“বলছি তো আমি।”
“আচ্ছা যা।”
তারপর ইনান ইনশিরাকে ছেড়ে দিলো।ইনশিরা নীল রঙের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে নিলেই ইনান ওকে টেনে নিয়ে ঢুকে পড়লো।ইনশিরা গরম চোখে ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল
“কি হলো।বের হ তুই।”
“দুজন একসাথে গোসল করবো।”
“না না।একসাথে করবো না।আমি বের হয়ে যাচ্ছি।”
ইনশিরা বের হতে নিলেই ইনান ওকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়।এবার ইনশিরা রেগে ইনানকে ভিজাতে নিলেই ইনানের সাথে পা পিছলে
দুজনে একসাথে বাথটাবে পড়ে গেলো।
এদিকে আদ্রি রেডি হচ্ছে।ওকে ওর আপুর সাথে হবু দুলাভাই অর্ণবের বাসায় যেতে হবে।অর্ণের মা বাবা কক্সবাজার থাকেন তাই আজ ওরা ওখানে যাবে।আসতে দুদিন দেরি হবে।আদ্রি রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।তারপর ইনশিরাকে কল দিলো কিন্তু ইনশিরা রিসিভ করলো না।ইনানও রিসিভ করে নি।তাই বাধ্য হয়ে আয়াশকে কল দিলো।আদ্রির ফোন পেয়ে আয়াশ রিসিভ করে কানে দিতেই আদ্রি বলল
“কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ।তুই?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।শোন আমি দুদিনের জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি আপুর শ্বশুরবাড়ি।”
“মানে কি!!আমার বিয়েতে থাকবি না?”
“থাকা হবে না রে।”
“আচ্ছা যা সাবধানে যাস।আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই আয়াশ ফোন রেখে দিলো।আদ্রিও ফোন রেখে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইলো।কেনো যেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলছে সে।কয়েকদিন ধরে আচমকা মন খারাপ হয়ে যায়। আদ্রি ভাবছে আগেই ভালো ছিলো যখন চারজন একসাথে আড্ডা দিতাম।এই ব্যাপার গুলো না থাকলেই ভালো হতো।
কক্সবাজার পৌঁছে আদ্রি সবার সাথে কথা বলে রুমে চলে গেলো।ওর আপু আর দুলাভাই এখনো কথা বলছে।রুমে এসে জানালার পাশে দাড়িয়ে রইলো।আয়াশের কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে।হঠাৎ পিছন থেকে পিঠে কারো হাতের ছোয়া পেলো।পিছন ফিরতেই ওর আপু বলল
“কি রে কই হারাইছিস?অনেক্ষণধরে ডাকছিলাম তোরে।”
“ওহ!!না এমনই।কি জন্য ডাকছো বলো?”
“অর্ণব ডাকছে নিচে।আমরা একটুপর বের হবো।”
“ও আচ্ছা। আমি আসছি তুমি যাও।”
আরাধ্যা চলে গেলো।আদ্রি গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ওরা তিনজনই সমুদ্রের পাড়ে গেলো।অর্ণব হঠাৎ বলল
“সবাই চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের গর্জন অনুভব করো।অনেক ভালো লাগে এই গর্জনের ধ্বনিটা।”
অর্ণবের কথা অনুযায়ী আরাধ্যা আর আদ্রি দুজনেই চোখ বন্ধ করলো।কিন্তু আদ্রি চোখ বন্ধ করতেই আয়াশের মুখটা ভেসে উঠলো।আর সমুদ্রের গর্জনের শোনার বদলে আয়াশের ওই কথাটা বারবার কানে বাজছে’এভাবে কষ্ট না দিলেও পারতি।’এই কথাটা সকাল বিকাল কষ্ট দিচ্ছে আদ্রিকে।আদ্রি আর চোখ বন্ধ রাখতে পারলো না চোখ খুলে ফেললো।চোখ খুলতেই অর্ণব জিগ্যেস করলো
“কেমন লাগলো?”
আদ্রি কৃত্রিম হেসে বলল
“অনেক ভালো।”
অর্ণবও হাসলো তারপর বলল
“আমি শুধু এই জন্যই এখানে আসি।”
তারপর আরাধ্যা বলল
“আসলেই ভাল্লাগছে আমার।এবার চলো হাটি।”
তারপর আরাধ্যা আর অর্ণব হাত ধরে হাটতে লাগলো।তাদের পিছনে পিছনে আদ্রিও হাটছে।ওরও ইচ্ছে করছে এভাবে কারো হাত ধরে হাটতে।এটা মনে হতেই আয়াশের কথা মনে হলো।সিলেটের চা বাগানে ও আয়াশের হাত ধরে হেটেছিলো।সেটাই এখন খুব মনে পড়ছে।
দুপুরে খাওয়া শেষ করে আদ্রি রুমে চলে গেলো।হঠাৎ করেই আদ্রির মাথা ব্যাথা হতে লাগলো।আরাধ্যার কাছ থেকে ওষুধ আনতে ওর ঘরের সামনে আসতেই দেখলো আরাধ্যাকে অর্ণব খাইয়ে দিচ্ছে।এটা দেখে আদ্রির জন্মদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।আয়াশও সেদিন এভাবেই আদ্রিকে কেক খাইয়েছিলো।আদ্রি আর আরাধ্যার ঘরে গেলো না নিজের ঘরে চলে এলো।তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছেই না।শুধু আয়াশের কথাই মনে পড়ছে।বহুকষ্টে ঘুম এলো।
এদিকে ভার্সিটি শেষ করে ইনান আর ইনশিরা বাসায় চলে এলো।তারপর দুজনে খাওয়া শেষ করে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।কালকেই এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন।এতোদিন করবো করবো বলে দুজনের একজনও করে নি।তাই দুজনেই এসাইনমেন্ট করতে বসলো।
আয়াশ আর মুন গহনা নিয়ে বাসায় ফিরলো।মুন আয়াশের হাত ধরে বলল
“গহনা গুলো অনেক সুন্দর তাই না?”
“হুম।এগুলো শুধু তোমার জন্যই।”
“থ্যাংকিউ।”
বলেই মুন আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।আয়াশ মনে মনে বলল মুনের জয়াগায় তোর থাকার কথা ছিলো কিন্তু তুই অবহেলা করলি।
সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙলো আদ্রির।ঘুম ভাঙতেই দেখলো আরাধ্য ওর পাশে বসে আছে।আরাধ্যাকে দেখে আদ্রি বলল
“কি হয়েছে আপু?”
“শুয়ে থাক তুই একদম উঠিস না।তোর শরীর ভালো না।জ্বর চলে এসেছে।”
এবার আদ্রি অনুভব করলো আসলেই ওর জ্বর এসেছে।আরাধ্য আবার বলল
“এক জায়গার থেকে অন্য জায়গায় এসেছিস তাই এমন অবস্থা।তুই শুয়ে থাক আমি খাবার নিয়ে আসছি।খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।”
এই বলে আরাধ্যা চলে গেলো খাবার আনতে।তারপর আদ্রিকে খাবার খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো।আদ্রি নিজের ফোনটা নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকলো।আয়াশের সাথে নিজের ছবিগুলো দেখছে।প্রত্যেকটা ছবিতেই আয়াশ আদ্রি দিকে চেয়েছিলো।তারপর আদ্রি ফেসবুকে গেলো ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস এ চোখ আটকে গেলো।আয়াশ এই স্ট্যাটাস টা দিয়েছে। মুন আর আয়াশ একসাথে ঘেষে দাড়িয়ে আছে।ক্যাপশনে লেখা ছিলো মাই লাভ।ক্যাপশনটা দেখেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।হঠাৎ করে মাথাব্যথাটাও বাড়তে লাগলো।ফোনটা হাত থেকে রেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।বারবার ওই ছবিটা আর ক্যাপশনের কথা মনে পড়ছে।
এভাবে একদিন কাটলো।আজ আয়াশ আর মুনের গায়ে হলুদ।এদিকে আদ্রি খেতে গেলে ঘুমাতে গেলে উঠতে বসতে খালি আয়াশের কথা মনে পড়ে।
আদ্রি আর থাকতে পারলো না।কাউকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকার বাসে উঠলো।অনেক জ্যাম হওয়ায় বাসও আস্তে আস্তে চলছে।এদিকে রাতও শেষ হয়ে যাচ্ছে।কাল আয়াশের বিয়ে।না এই বিয়ে আটকাতে হবে।কিন্তু জ্যাম থাকলে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে।আস্তে আস্তে জ্যাম ছুটে গেলো।আর আদ্রি আয়াশের বাসায় পৌঁছুলো বিকেলে।দৌড়ে বাসায় ঢুকতেই দেখলো অনেক মানুষ।আদ্রি একটা মেয়েকে জিগ্যেস করলো
“আচ্ছা বিয়ে কি হয়ে গেছে?”
“হ্যাঁ, একটু আগেই বিয়েটা হয়ে গেছে।”
চলবে…..