#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১৯
#Arshi_Ayat
আদ্রির কথা শুনে ইনশিরা কিছুক্ষণ চুপ ছিলো তারপর কিছু একটা ভেবে বলল
“ওকে ডান।আমি আজ ওর কোনো খবর ই নিবো না।”
আদ্রি হেসে বলল
“দেখা যাক।”
এদিকে ইনান রুমে এসেই ধপ করে বিছানায় পড়ে গেলো।আয়াশ এগিয়ে এসে বলল
“কি হইছে তোর?”
“কিছু না হালকা একটু জ্বর আসছে।”
“কই দেখি।”
এটা বলে আয়াশ চিন্তিত মুখে ওর কপালে হাত দিয়ে বলল
“হলকা না অনেক বেশিই আসছে।তোর নাস্তা করে ওষুধ খাওয়াটা প্রয়োজন।”
“দোস্ত প্রচুর ঘুম আসতাছে।”
“রাতে খাইছিস?”
“না ভুলে গেছিলাম।”
“না খাইয়া ঘুমাইতে পারবি না।জাস্ট দশমিনিট ওয়েট কর আমি যাবো আর আসবো।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।আমার মাথাব্যথা করছে।”
“আসছি।”
আয়াশ চলে গেলো।ইনান শুয়ে মুখের উপর এক হাত দিয়ে রাখলো।ইনান একমনে ভাবছে সে কি আদৌ তার ভালোবাসা ইনশিরাকে বোঝাতে পারবে?নাকি কখনোই বুঝবে না।ইনান শরীরে জ্বর ক্রমশ বাড়ছে।আয়াশ নাস্তা নিয়ে খুব দ্রুতই ফিরলো।ইনশিরাদের রুমে গিয়ে ওদের নাস্তার প্যাকেট টা দিয়ে নিজেদের রুমে এসে দেখে ইনান মুখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।আয়াশ ইনান পাশে বসে জিগ্যেস করলো
“কি রে ঘুমিয়ে গেছিস?”
ইনান হাতটা মুখের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে ক্লান্ত চোখে আয়াশের দিকে চেয়ে বলল
“না ঘুমাই নি।”
“আচ্ছা তাহলে উঠে হাত ধুয়ে আয় তারপর নাস্তা করে ওষুধ খা।”
ইনান হাত ধুয়ে এলো তারপর কোনরকমে নাস্তা শেষ করে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।ঘুমে যেনো চোখ ভেঙে আসছে তলিয়ে গেলো ঘুমের দেশে।
এদিকে ইনশিরাও খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেলো।আর আদ্রি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে।আদ্রির পাশে বসে ইনশিরা ভাবছে খবর নিবো না তো বলেছি কিন্তু অস্থির লাগছে খুব।এখন ওই রুমে গেলেই তো আদ্রির বাচ্চা উল্টো পাল্টা বুঝবে।হঠাৎ ইনশিরার মনে হলো আদ্রিতো ঘুমাচ্ছে এই ফাকে একবার দেখে আসি।যেই ভাবা সেই কাজ বিছানা থেকে নেমে যেই দরজা দিয়ে বের হতে নিবে পিছন থেকে আদ্রি বলে উঠলো
“কি রে ইনানের কাছে যাচ্ছিস?”
ইনশিরা তৎক্ষণাৎ জিহ্বায় কামড় দিয়ে ফেললো আর মনে মনে বলল কিছুতেই স্বীকার করা যাবে না তাই কিছুই জানে না এমন ভাব করে পিছনে ঘুরে বলল
“নাহ,ওর কাছে যাবো কেনো?আমিতো এমনই হাটাহাটি করছি।”
“দেখিস হাটতে হাটতে আবার ইনানের কাছে চলে যাস না যেনো।”
“ফালতু বকিস না ঘুমা।”
আদ্রি মুখ টিপে হেসে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।ইনশিরা দাত কিড়মিড়িয়ে আবার বিছানায় এসে বসে পড়লো।কিছুক্ষণ পর আয়াশ ওদের রুমে এসে ইনশিরাকে বলল
“কি রে ঘুমাচ্ছে কেনো এখন?ওর কি শরীর খারাপ?”
ইনশিরা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“আরে নাহ ও তো রাতে ঘুমায় নাই এজন্য।”
“ঘুমায় নাই কেনো?”
“আরে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো।”
“কার সাথে?”
“জানি না তো।”
“কিন্তু ওর তো ফোন বন্ধ।”
“হ্যাঁ কিন্তু কালকে বোধহয় সিম লাগাইছে ফোনে।”
“ও এই ব্যাপার।আমি বলছিলাম আমার সাথে একটু কথা বল নাহ সে বলবে না তার নাকি ঘুম পাচ্ছে।দাড়া এখুনি মজা দেখাচ্ছি।”
আয়াশ এক গ্লাস পানি এনে কয়েকটা ছিটা দিলো আদ্রি মুখে।এই মাত্র আদ্রির চোখে ঘুম লেগে কিন্তু মুখে পানির ছিটা পড়ায় আবার ফুরুৎ করে চলে গেলো।প্রচন্ড রাগে চোখ খুললো কে এই কাজটা করেছে এটা দেখার জন্য।চোখ খুলেই দেখলো আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে হাসছে।আদ্রি রেগে শোয়া দেখে উঠে বসলো তারপর আয়াশের দিকে আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল
“মুখে পানি দিলি কেন?”
“তুই এখন ঘুমাচ্ছিস কেন?”
“আমি ঘুমাইলি তোর বাপের কি?”
“আমার বাপের কিছুই না কিন্তু আমার অনেক কিছু।তুই নাকি কালকে রাতে কার লগে কথা কইছছ।”
আদ্রি আয়াশের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো এমন একটা ভঙ্গি মুখ ফুটিয়ে তুলে বলল
“নাহ,আমি তো ঘুমাইছি।”
“আপনের আর কিছু বলা লাগবো না।আসেন ছাদে আসেন আপনারে শাস্তি দিবো।”
“কিয়ের শাস্তি?”
“এই যে বয়ফ্রেন্ড রাইখা তুই অন্যকার সাথে কথা বলছিস সেইজন্য।”
“সত্যি বিশ্বাস কর আমি কারো সাথে কথা বলি নাই।”
“তাইলে ঘুমাইতেছিস কেন এখন?
” এমনেই একটু চোখ লেগে গেছিলো।”
“থাক আর কইছ না এখন তুই চল।”
এই বলে আয়াশ আদ্রিকে টেনে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়।আর এতক্ষণ ধরে ওদের কাহিনী দেখে ইনশিরা হেব্বি মজা নিচ্ছিলো।আদ্রি যাওয়ার পর ইনশিরা ভাবলো এইতো সুযোগ গিয়ে দেখে আসি।ইনশিরা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বের হয়ে ইনানের রুমের দিকে যেতে নিলেই পিছন থেকে আয়াশ বলে উঠলো
“ইনশু একটু ছাদে আয় তো।”
অগত্যা ইনশিরাকে ইনানের সাথে ছাদে যেতে হলো।ছাঁদে আসতেই আদ্রি বলল
“কি মনে করছো আমি চলে আসলেই তুমি দেখা করতে যাবা!!এইটা হবে না।যেতে হলে আমাদের সামনে দিয়ে যাবা চুরি বাটপারি করতে পারবা না।”
ইনশিরার সেই রাগ উঠছে আদ্রি উপর।ইনশিরার মনে হলো এই মেয়েটাকে বাংলা সিনেমায় ভিলেনের বউয়ের ক্যারেক্টার দিলে জোস হবে।ইনশিরার কোন উত্তর না পেয়ে আয়াশ হাসতে হাসতে বলল
“আমি যদি এখন না যাইতাম তাহলে চলেই যেতো ও তারপর আমাদের সামনে সাধু সাজতো।”
“তুই যে আয়াশকে আমার নামে মিথ্যা বলেছিস যাতে ও আমাকে এখানে নিয়ে আসে আর তুই গিয়ে দেখে আসতে পারিস তাই না?আরে মাইয়া প্রেম করবি ভালো কথা চুরি কইরা কেন?”
এবার ইনশিরা মুখ খুললো।ওদের কথার উত্তরের বলল
“আরেহ একটা মানুষ সারা রাত জেগে আমার সেবা করলো তাকে আমি একটু দেখতে যাবো না?এতে ভালোবাসার কি আছে?আশ্চর্য!!এটাতো মানবিক ব্যাপার।”
“মোটেও না।তোর দেখতে যেতে হবে কেনো আমরাতো আছিই ওর খেয়াল আমরাই রাখতে পারবো।আসল কথা এটা না আসল কথা হলো তুই ওকে ভালোবাসিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না।” (আয়াশ)
“তুই যদি ভালোই না বাসতি তাহলে এতো ছটফট করছিস কেনো ওকে দেখার জন্য।ভেবে দেখ একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য এমন কখন করে যখন সে মেয়েটাকে ভিষণ ভালোবাসে।তোর মনে আছে তুই আর আমি যেদিন ফার্স ইয়ারের প্রথম ক্লাসে যাচ্ছিলাম সেদিন কথা বলতে বলতে তুই অসাবধানতায় পড়ে যেতে নিয়েছিলি পরে আমার ব্যাগটা টেনে ধরেছিলি আর তোর সাথে সাথে আমিও পড়ে যাই।ইনান তখন সিড়ি দিয়ে নামছিলো ও তখন তোর দিকে আগে হাত বাড়াইছিলো আমার দিকে না।আমি সেই দিনিই ওর চোখে তোর জন্য মুগ্ধতা দেখছিলাম এরপরেও আরো অনেক সময় তোকে হেল্প করছিলো কিন্তু তুই কখনো এই বিষয়টা উপলব্ধি করিস নাই বন্ধুত্বের চোখে দেখছিলি কিন্তু সেটা আসলে বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু ছিলো।”
“হুম রে ওকে কষ্ট দিস না।আমি দেখেছি যেদিন ওকে তোর বিয়ের কথা বলেছিলি সেদিন ও যে কি করছিলো আমি জানি।পাগলের মতো করছিলো।তুই নিজের চোখে দেখলে বিশ্বাস করতি।যে ছেলে কখনো মদ ধরেও দেখে না সে মদ খাইছিলো।এবার বোঝ তুই ও তোকে কতো ভালোবাসে।”
ইনশিরা কিছুই বলছে না শুধু ওদের কথা শুনে যাচ্ছে।হঠাৎ সেখানে জুইয়ের আগমন ঘটলো যা ওদের মধ্যে কারোরই কাম্য ছিলো না।আদ্রি পারছে না কষে একটা থাপ্পড় দিতে।জুই এসেই হেসে হেসে বলল
“কেমন আছো তোমরা?”
আয়াশ হাসিমুখেই উত্তর দিলো
“হ্যাঁ আমরা সবাই ভালোই আছি।তুমি?”
“আমিও ভালো আছি।তোমাদের কি ডিস্টার্ব করলাম?”
“নাহ!!ডিস্টার্ব করো নি।”(আদ্রি)
কিন্তু মনে মনে বলল ফাইজলামি করার জায়গা পায় না একটা সিরিয়াস বিষয়ের মধ্যে বাম হাত ঢুকায় দিছে।তারপর জুই বলল
” তোমাদের আরেকজন ফ্রেন্ড কই?”
“ও তো অসুস্থ।”(আয়াশ)
“ও আচ্ছা চলো একটু দেখে আসি।”
“আচ্ছা চলো।(আদ্রি)
আদ্রি ইনশিরার দিকে তাকিয়ে বলল
” তুই কি যাবি?”
“নাহ!!তোরা যা আমি একটু এখানে দাড়াই। তোরা যা।”
আয়াশ, আদ্রি আর জুই চলে গেলো ইনানকে দেখতে আর ইনশিরা আগেট জায়গাটাতেই দাড়িয়ে রইলো।ইনশিরা মনে মনে ভাবছে আসলেই তো ইনান আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি?আমি কি বাসি?আচ্ছা ওকে দেখার জন্য আমার এমন লাগছে কেনো?কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে!!তাহলে কি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি?আমি বুঝতে পারছি না!!
ইনশিরা চলে কিছুক্ষণ থেকে নিজের রুমে চলে গেলো।একটুপর আদ্রি চলে এলো এই রুমে তারপর ইনশিরার সাথে গল্প করা শুরু করলো ইনশিরা ওর সাথে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু মনটা এখানে নেই।
চলবে….?
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)