#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat
ওরা রুমে এসে দেখলো ইনশিরা মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে।ইনান দ্রুত ইনশিরাকে কোলে নিয়ে খাটে তুললো তারপর মাথায় হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
“শর্বনাশ, যেটা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই হলো।প্রচুর জ্বর ওরে কে বলছিলো বৃষ্টিতে ভিজতে।আর আমারেও পাগলে পাইছিলো সাথে সাথেই যদি নিয়ে আসতাম তাইলে এমন হইতো না।”
“এখন কি করবি?” (আয়াশ)
“কি আর করমু বউয়ের সেবা করমু।আয়াশ তুই কাছের কোনো ফার্মেসীতে গিয়ে ডাক্তার ডাক।আর আদ্রি তুই একটু জলপট্টির ব্যাবস্থা কর।”
আয়াশ চলে গেলো ডাক্তার ডাকতে আর আদ্রি একমগ পানি আর রুমাল নিয়ে এলো।ইনান আদ্রির হাত থেকে মগ আর রুমাল নিয়ে ওর মাথায় জলপট্টি দেওয়া শুরু করলো।কিছুক্ষণ পর আয়াশ ডাক্তার নিয়ে এলো।ডাক্তার চেক আপ করে বলল
“সমস্যা নেই।বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর এসেছে।জ্বরের ওষুধ খেলেই ইনশাল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।”
“ধন্যবাদ ডাক্তার আঙ্কেল।”
ডাক্তার চলে গেলো।ইনশিরা কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো।কিন্তু জ্বর বেশী হওয়ার কারণে দুর্বল লাগছিলো তাই উঠতে পারলো না।কিন্তু খুব আস্তে বলল
“পানি খাবো।”
ইনান পাশে থাকা গ্লাসটা এগিয়ে দিলো ইনশিরাকে।ইনশিরা আস্তে আস্তে উঠে পানি খেলো তারপর আবার শুয়ে পড়তে নিলেই ইনান বলল
“ইনশু একটুপর ঘুমা প্লিজ। তোর শরীর ভালো নেই।তাই খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।”
“আমি খাবো না।”
“জেদ করিস না।তুই না খেতে চাইলে আমি জোর করবো এটা তুই জানিস তবুও জেদ কেনো ধরছিস?”
ইনশিরা কিছু বলল না।উল্টোদিকে ঘুরে বসে রইলো।ইনান আয়াশকে বলে আগেই খাবার এনে রেখেছিলো।ইনান হাত ধুয়ে এসে খাওয়াতে নিলেই দেখলো আয়াশ আর আদ্রি মুখ টিপে হাসছে।ইনান ওদের চিবিয়ে চিবিয়ে বলল
“দয়া করে আপনারা এখান থেকে প্রসস্থান করুন।”
“কেন মামা?” (আয়াশ)
“রোমান্স করমু।এখন তোরা কি দাড়ায় দাড়ায় দেখবি?”
“হ,,,দেখমু।”(আদ্রি)
“ছিঃ ছিঃ দুনিয়া শেষ হয়ে গেলো।লজ্জা শরমের বালাইও নাই।”
আয়াশ হাসতে হাসতে আদ্রিকে চোখ মেরে বলল
“আচ্ছা জানু আসো তারা রোমান্স করুক।আমরা ডিস্টার্ব না করি।”
ইনান ভ্রু কুচকে বলল
“ও তোর জানু হইলো কবে?”
আয়াশ লজ্জা পাওয়া গলায় বলল
“আজকেই।”
ইনান খোচা মেরে বলল
“ওরে আমার সুন্দরী লজ্জা পাইয়ো না।তুমি লজ্জা পাইলে তো তোমার বউ লজ্জায় মরেই যাবে।পরে আর বাপ হইতে পারবা না।”
ইনানের কথা শুনে আদ্রি এসে ইনানের পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে চলে গেলো।আয়াশ ও ওর পিছু নিলো।ওরা যাওয়ার পর ইনান ইনশিরাকে খাওয়াতে নিলেই ইনশিরা বাধা দিয়ে বলে
“আমার হাত আছে তো।”
“হুম তো কি হইছে?”
“আমাকে দে আমি খেতে পারবো।”
“পাকনামি না করে চুপচাপ বস।বেশী বকবক করলে কিন্তু উল্টো ঝুলিয়ে রাখবো।”
“হুম পারেন তো এটাই।”
“না জানু আরো অনেক কিছুই পারি কিন্তু এখন দেখানো মানা।বিয়ের পর বুঝাবো কি কি পারি।সেই পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে।তবে তুই যদি বলিস তাহলে ওয়েট করতে হবে না।আমার কালকেই বিয়ে করে ফেলতে পারি।”
“আহা!শখ কতো।”
“ধূর এটাতো কিছুই না আরো কত শখ আছে।ওগুলো পরে বলবো এখন হা কর।”
ইনশিরা হা করতেই ইনান ধমক দিয়ে বলল
“এতো ছোট হা করিস কেনো?বোয়াল মাছের মতো হা কর।”
“আমি বোয়াল নাকি!”
“বেশী বুঝিস আমি তোরে বোয়াল বলছি নাকি?বলছি বোয়াল মাছের মতো জোরে হা করতে।”
“আচ্ছা তাইলে তিমির মতো হা করি।”
“হুম কর তাইলে পুরো প্লেট টাই ঢেলে দেওয়া যাবে।”
“ফালতু।”
তারপর ইনান ওকে খাওয়াতে লাগলো।অর্ধেক খাওয়ার পর ইনশিরা বলল
“আর না প্লিজ।”
“এতটুক তো তোর পেটের কোণায়ও যায় নাই।”
“তুই বেশী জানিস?”
“হ,,,বেশী জানি।শেষ করতে হবে না শেষ করলে এমনেই বসে থাকবি।”
“প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর আমার তিতা লাগছে খুব কষ্ট করে এতটুক খাইছি।”
ইনান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল
“হুম একটা উপায় আছে।”
“কি?”
ইনান বাকা হেসে ওর ঠোঁট দেখিয়ে চোখ মারলো।ইনশিরা ইনানের ইশারা বুঝে গেলো।তাই মুখ শক্ত করে বলল
“হুম আমি সবটাই শেষ করবো।”
“যেটা আপনার ইচ্ছা।”
তারপর ইনশিরা সবটুকু খেয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।ইনান জলপট্টি দিতে আরম্ভ করলো।
এদিকে আয়াশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে আদ্রির কথা শুনে।আদ্রি জুই কে নিয়ে ভিষণ ভাবে রেগে আছে।আয়াশ হাসতে হাসতেই বলল
“আহ!!রাগ করছিস কেনো?আমরা তো চলেই যাবো।আর পিছন পিছন ঘুরলেই তো আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না।
” হ,,,তুমি গাছের ও খাবা তলারও কুড়াবা।”
“ওহ!!শুধু শুধুই রাগ করছিস।আমি যে এতো হ্যান্ডসাম এটা কি আমার দোষ বল?”
“আইছে হ্যান্ডসাম।কচুর হ্যান্ডসাম তুই।”
“দুনিয়া আসলেই শেষ হয়ে গেছে হ্যান্ডসামদের কদর ই করতে জানে না কেউ সব গান্জাখোর গো কদর করে।ওই যে গান আছে না একটা”
“কোন গান?”
“ওই যে আমার মা বলেছিলো খোকা তুই প্রেম করিস না ভালো ছেলেদের কপালে ভালো মেয়ে জোটে না।গানটার কথা কিন্তু একবারে সত্যি।”
“আচ্ছা যদি সত্যিই হয় তাইলে ভালো মেয়ে গুলি যায় কই?তারমানে ভালো মেয়ে গুলি খারাপ ছেলেদের কপালে জোটে।তাইলে তো এটাও সত্যি ভালো মেয়েদের কপালে ভালো ছেলে জোটে না।”
“কই জোটে না এই যে আমি এত্তো ভালো একটা ছেলে তোর কপালে জুটে গেছি।”
“তোর কথা ভালোরা শুনলে হার্ট এট্যাক কইরা মইরা যাইবো।”
“তাই না!!”
আদ্রি বকবক করছে আর আয়াশ চুপ করে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে।হঠাৎ আদ্রির চোখ আয়াশের দিকে পড়তেই আয়াশ চোখ সরিয়ে ফেললো।আদ্রি ভ্রু কুচকে বলল
“কি দেখছিলি ওমন করে?”
“কিছু না।”
“বল কি দেখছিলি?”
“কইলাম তো কিছু না।”
আদ্রি ছুটে এসে আয়াশের কান ধরে বলল
“বল, না বললে ছাড়বো না।”
আয়াশ কিছু না বলে আদ্রির হাতটা ধরে ঘুরিয়ে এনে ওর কোলের উপর বসিয়ে ডান হাত দিয়ে ওর ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলল
“তোর ঠোঁট টা…”
আদ্রি দ্রুত ওর কোল থেকে উঠে ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল
“অসভ্য।”
“অসভ্যের কি করলাম?”
“কত্তো বড় অসভ্য।এখন বলে কিছুই করে নাই।”
আয়াশ আদ্রির কাছে আসতে আসতে বলল
“শুধু শুধুই অসভ্য নাম দিলি।কিন্তু আমি তো মিথ্যা অপবাদ নিতে রাজি না।তাই অসভ্যের মতো কিছু একটা করি তারপর অসভ্য বলিস।”
আদ্রি আর ওখানে থাকলো ছুটে বেরিয়ে ওদের রুমে চলে এলো।আয়াশ একটুর জন্য আদ্রিকে ধরতে পারে নি।তাই আফসোস করতে করতে সেও ওই রুমে গেলো।ইনান এখনো জলপট্টি দিচ্ছে।আয়াশ ইনানের কাঁধে হাত দিয়ে বলল
“চল খেয়ে আসি।”
“তোরা খেয়ে আয়।ওকে একা রেখে যেতে পারবো না।”
“তোর জন্য কি নিয়ে আসবো?”(আদ্রি)
“না লাগবে না খেতে ইচ্ছা করছে না।”
“কেনো খাবি না কেনো?”
“ভালো লাগছে না।তোরা খেয়ে আয়।”
শত পিড়াপীড়ি করেও ইনান কে রাজী করাতে পারলো না।অগত্যা ওরা গিয়ে খেয়ে আসলো আর ওর জন্য নিয়ে আসলো।
আয়াশ আর আদ্রি রুমে এসে দেখে ওইভাবেই ইনান বসে বসে পকে জলপট্টি দিচ্ছে।আয়াশ পাশে বসে বলল
“দোস্ত তোর জন্য নিয়ে আসছি।খেয়ে নিস।আর তুই কি সারা রাত এভাবেই জলপট্টি দিবি?”(আয়াশ)
“জ্বর তো কমছে না।কি করবো!!জলপট্টি দিতে হবে।”
“ও তো আমিও থাকি।”(আয়াশ)
“না তোরা জাগবি কেনো?তুই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়।আর আদ্রি তুই ইনশুর পাশে শুয়ে পড়।”
তারপর ইনানের জোরাজুরিতে ওরা দুজনেই ঘুমাতে গেলো।সারারাত এভাবে জলপট্টি দেওয়ার পর ভোরে যখন আদ্রি ঘুম থেকে সজাগ হলো তখন ইনান বলল
“দেখতো কপালে হাত দিয়ে ওর জ্বর কমেছে কি না?”
“তুই ই তো দেখতে পারিস।”
“না তুই একটু দেখ না।”
আদ্রি হাত দিয়ে দেখলো তারপর বলল
“হুম এখন জ্বর নেই।”
“ও আচ্ছা।ও উঠলে ওকে নাস্তা করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিস।”
“আচ্ছা কিন্তু তোর কি হলো?চোখ ওমন লাল দেখাচ্ছে কেনো?”
“ওই তো ঘুমাই নি তাই।”
আদ্রি সন্দেহের চোখে ওর কপালে হাত দিয়ে আৎকে উঠে বলল
“তোরও তো অনেক জ্বর।”
“হুম মাঝরাতেই আসছিলো।”
“তো এখনো বসে আছিস কেনো গিয়ে কিছু খেয়ে ওষুধ খা।”
“হুম যাচ্ছি কিন্তু ইনশুকে এগুলো বলিস না।”
“আচ্ছা বলবো না।”
ইনান টলতে টলতে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর ইনশিরা ঘুম থেকে উঠে আদ্রিকে বলল
“ওই ইনান কখন গেছিলো রে?”
“একটু আগে।”
“মানে?”
“মানে সারা রাত তোর সেবা করছে।”
“হায় রে পাগল একটা।তো এখন কই?”
“ওই রুমে গেছে।ওর ও জ্বর আসছে।”
“কি বলিস!!কখন?”
“মাঝরাতে।”
“তো সকাল পর্যন্ত বসে থাকতে কে বলছিলো।হায় রে এই ছেলেটা যে কি করে!!”
পাশে খাবারের প্যাকেট দেখে চিল্লিয়ে বলল
“ওহ নো!! রাতেও তো খায় নাই।”
“হুম।”
“চল তো গিয়ে দেখি।”
আদ্রি ইনশিরাকে বাধা দিয়ে বলল
“তোর এতো টেনশন হচ্ছে কেনো?তুই তো ওকে ভালোই বাসিস না।”
“হ্যাঁ সত্যিই তো বাসি না।”
“আচ্ছা তাহলে প্রমাণ কর।”
“কিভাবে?”
“তুই আজ সারাদিন ইনানের কোনো খবর নিবি না।ওর কথা আমাদেরও জিজ্ঞেস করবি না।ওই রুমেও যাবি না।দেখি তুই পারিস কি না?যদি পারিস তাগলে বুঝবো আসলেই ভালোবাসিস না।আর যদি না পারিস তাহলে মামা আমারে বিয়ার দাওয়াত দিয়া দিও।”
চলবে….?
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)