#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat
পাঁচ জনই মালনীছড়া বাগানটা ঘুরলো তারপর পাচভাই হোটেলে গেলো নাস্তা করতে।ইনান আর ইনশিরা একপাশে বসলো আয়াশের সাথে আদ্রি বসতে নিলেই জুই আগে এসে বসে পড়ে।তাই আদ্রি জুইয়ের পাশের চেয়ারে বসেছে।এই জুই মেয়েটাকে আদ্রির কিছুতেই সুবিধার মনে হচ্ছে না।কেনো যেনো মনে হচ্ছে মেয়েটা আয়াশকে লাইন মারার চেষ্টা করছে।
খাওয়া শেষ করে ওরা আবার বেরিয়ে পড়লো বাকি চা বাগান গুলো দেখতে।মালনীছড়ার পাশেই লাক্কাতুরা চা বাগান। শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ। এই বাগানটা সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে।২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩২০০ একর জুড়ে এর অবস্থান।এখানে চা চাষের পাশাপাশি কমলা,কাঠাল, সুপারিবাগান,ট্যাং ফল,আগর,রাবার,চন্দনও চাষ করা হয়।
লাক্কাতুরায় হাটতে হাটতেই আদ্রি খেয়াল করলো জুই আয়াশের গা ঘেষে হাটছে।কি অসহ্যকর ব্যাপার!!পরক্ষনেই আদ্রি ভাবলো’আরে আমি কেনো জ্বলছি!!আয়াশকে তো আমি ভালোবাসি না তবে আমি জ্বলছি কেনো?এটার উত্তর পরে বের করবো আগে এই মেয়েকে শায়েস্তা করতে হবে।
ইনান আর ইনশিরা একসাথে হাটছিলো যদিও ইনশিরার মুখে কোনো কথা নেই।ইনান ই কথা বলছে ইনশিরা শুধু হাটছে।একটু দূরে আয়াশ আর জুই আর জুইয়ের পাশে আদ্রি।আদ্রি সেই তখন থেকে আঙুল কামড়াচ্ছে কি করবে এটা ভেবে।চট করে আয়াশকে ডেকে বলল
“আয়াশ শোন তোর সাথে কথা আছে।”
“হ্যাঁ বল।”
“একটু এই সাইডে আয়।”
আয়াশ বুঝতে পারলো না আদ্রি কেনো ওকে সাইডে ডাকলো তবুও গেলো।আয়াশের সাথে সাথে জুই কে ও আসতে দেখে আদ্রি চিবিয়ে চিবিয়ে বলল
“আপু আপনাকে আসতে বলি নি।শুধু আয়াশ আসবে।”
আদ্রির কথা শুনে মেয়েটা অপমান বোধ করলো তাই আর আসলো না একাই হাটতে লাগলো।আয়াশ সাইডে এসে জিগ্যেস করলো
“বল কি বলবি?”
“প্রপোজ কর।”
আয়াশ কথাটা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো।তারপর বিস্মিত চোখে আবার বলল
“কি বললি?”
“বয়রা হয়ে গেছিস কবে থেকে?”
“আদ্রি আবার বল না প্লিজ।”
“বললাম প্রপোজ করতে।”
এক মুহুর্তের জন্য আয়াশের হার্ট চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো।দুই মিনিটপর আদ্রি হাত ধরে বলল
“কয়েস ইবনাতের মেয়ে মিস কাশফা ইবনাত আদ্রাহাকে আশরাফ আহমেদের ছেলে আয়াশ আহমেদ ভালোবাসে।”
আদ্রি ভ্রু কুচকে বলল
“আমি বিয়া পড়াইতে কই নাই।প্রপোজ করতে কইছি।”
“ওইটাই তো করালাম।”
“বাল করছো তুমি।এইটা কোন ধরনের প্রপোজ।ঠিক কইরা কর।”
আয়াশ হাসতে হাসতে বলল
“চেতিস না,শোন এখনতো গোলাপ নাই সাথে তাই গোলাপ দিয়া করতে পারমু না চা পাতা দিয়ে করলে হইবো।”
“আকাইম্যা বয়ফ্রেন্ড হইবা তুমি!!চা পাতা লাগবো না এমনেই কর।”
“আচ্ছা দাড়া করতেছি।”
“আমি তোকে কখনোই আই লাভ ইউ বলবো না।তুই বুঝে নিবি আমি কতোটা ভালোবাসি।আমি তোকে মিস করলে কখনোই মিস ইউ বলবো না তুই আমার চোখ দেখে বুঝে নিবি আমি তোকে কতোটা মিস করেছি।আমি তোকে সন্দেহ করবো আগেই বলে রাখলাম কারণ যে সম্পর্কে সন্দেহ নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই।আর আমাকে যাদি ছেড়ে যাস চেষ্টা করিস কিচ্ছু বলবো না কারণ আমি জানি তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি না।আসতেই হবে তোকে আমার কাছে।তবে তুই যেহেতু প্রপোজ করতে বলেছিস যাহ একবার আই লাভ ইউ বলেই দিলাম।”
আদ্রি হাসতে হাসতে বলল
“আই লাভ ইউ টু।”
আয়াশও হাসছিলো তারপর আদ্রি হাত আরো শক্ত করে ধরে বলল
“আমি বুঝতেছি না তোরে জ্বীনে ধরলো নাকি হঠাৎ তুই আমার প্রেমে পাগলিনী হইলে কেমনে?”
“ভালোবাসলেও দোষ না বাসলেও দোষ।তুই যে আমার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য এজন্য নিজেরে ভাগ্যবান মনে করে।”
“আর আমার ভাগ্য একটা আনরোমান্টিক গার্লফ্রেন্ড পাইছি।”
“দুইজনে মিষ্টি হইলে হয় না একজন কাচা মরিচও থাকতে হয়।”
“হ,,এটাতো জানিই মাইয়ারা জন্মগতই কাঁচা মরিচ।”
“বকবক করিস না এখন একটা দৌড় দে।ওরা অনেকদূর চলে গেছে।”
“হুম হাত ধর।”
আয়াশ আর আদ্রি কিছুক্ষণ দৌওড়িয়ে তারপর ওদের পাশাপাশি চলে এলো।আয়শাকে দেখে জুই বলল
“আপনার আসতে এতো সময় লাগলো কেনো?”
“এমনিই কথা বলছিলাম তো।”
“ওহ!!আচ্ছা।”
জুইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে আয়াশের চোখ আদ্রি দিকে যাওয়া মাত্রই আয়াশ ভয় পেলো।আদ্রি ওর দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আয়াশ আদ্রি আর জুইয়ের মাঝে হাটছে।হুট করে আদ্রি আয়াশ আর জুইয়ের মাঝে ঢুকে গেলো।এতে জুঁই ভিষণ বিরক্ত।জুই এবার ওদের মাঝে ঢুকতে গেলেই আদ্রি চট করে আয়াশের হাত ধরে নিলো।তারপর জুই কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল
“অন্যের জিনিসের উপর চোখ না দেওয়াটাই ভালো।”
জুই কথাটার অর্থ বুঝেও না বোঝার ভান করে আয়াশের আরেক পাশে চলে এলো।আদ্রি প্রচুর রেগে গেলো।আদ্রি রাগ দেখে আয়াশ কানে কানে বলল
“কুল, এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো?আমাকে তো আর নিয়ে যাচ্ছে না।”
“কিন্তু ও তোর পাশে হাটবে কেনো?”
“বাহ!!এতো জেলাস?”
কথাটা শুনে আদ্রি কিছু বলল না।সত্যিই তো আদ্রিতো আয়াশকে ভালোবাসে না তাহলে জেলাস কেনো!!সে তো শুধু জুই কে শায়েস্তা করার জন্যই এটা করলো।তবে আয়াশ আজ খুব খুশি এটা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আদ্রি ভাবছে বাসায় গিয়ে সব বলে দেবে কেনো সে আয়াশকে প্রপোজ করতে বলেছিলো।কিন্তু আয়াশের খুশী দেখে দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে গেলো।
মোটামুটি সবগুলো চা বাগান ঘোরা শেষ।ওরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো হযরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার দেখতে।এটা সিলেট শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে।মাজার শরীফ দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো।সবাই ক্লান্তি নিয়ে হোটেলে ফিরলো।
রাত ৮.০০ টা…
আদ্রি আয়াশকে পুরো ঘটনাটা বলার জন্য খুজছিলো।কিন্তু রুমে পেলো না।ইনানকে জিগ্যেস করতেই ও বলল যে আয়াশ ছাদে গেছে।তাই আদ্রিও ছাদে উঠতে লাগলো।কাছাকাছি আসতেই আয়াশের গলার স্বর ছাড়াও আরে একটা স্বর শুনতে পেলো।আদ্রি আর দেরি না করে ওদের কথায় আড়ি পাতলো।আয়াশ বলছিলো
“জুই তুমি ভালো মেয়ে।আমার পিছনে ঘোরা বন্ধ করো প্লিজ।আমি আদ্রিকে ভালোবাসা আর ও আমাকে ভালোবাসে।আমি এই রিলেশনে অনেক হ্যাপি।সো প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো!”
“আয়াশ ওই মেয়েটাতো তোমায় ভালোবাসে না।”
“বাসে ও আমাকেই ভালোবাসে।তুমি এখান থেকে যাও প্লিজ।আমার ভাল্লাগছে না।ও দেখে ফেললে অন্যকিছু ভাববে।”
“আয়াশ দেখো এই মেয়েটার জন্য তুমি এক সময় অনেক কাদবে।এই মেয়েটা তোমাকে কাদাবে।মিলিয়ে নিও আমার কথা।”
আয়াশ কিছুই বলল না।জুই রাগে নিচে আসতে লাগলো।জুইকে আসতে দেখে আদ্রি দৌড়ে নেমে গেলো।তারপর রুমে গিয়ে একটা থ্রিপিছ নিয়ে বাথারুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।আদ্রি ঝর্ণার নিচে দাড়িয়ে ভাবছে’নাহ!!আয়াশ এই সম্পর্কে অনেক খুশী আমি বন্ধু হয়ে ওকে কষ্ট দিতে পারবো না কিন্তু আমিতো এই সম্পর্কে খুশী না।আচ্ছা আয়াশকে কি কোনো ভাবে ভালোবাসা যায়?একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি হয়তো ভালোবেসে ফেলেতেও পারি।কিন্তু জুই তখন কি বলল আমার জন্য আয়াশ কাঁদবে!!কিন্তু কেনো?
এদিকে বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে।আয়াশ দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেছে।আর বৃষ্টি দেখে ইনশিরা লাফাতে লাফাতে ছাদে চলে গেছে।ইনশিরা বৃষ্টি দেখলে পাগল হয়ে যায় ভেজার জন্য।ইনানও জানালা দিয়ে দেখলো বৃষ্টি হচ্ছে।তৎক্ষনাৎ ছাদে চলে গেলো কারণ ইনান জানে ইনশিরাকে ঘরে পাওয়া যাবে না।সত্যি সত্যি ইনান গিয়ে দেখলো ইনশিরা অন্ধকারে দুহাত মেলে দিয়ে ভিজছে।অন্ধকার তবুও ইনানের খুব ভালো লাগছে।ইনান ইনশিরার পিছনে গিয়ে দাড়িয়েছে।ইনশিরা ভিজতে ভিজতে পিছনে ফিরে তাকাতেই ইনানকে দেখলো।নিজের দুইহাতে ইনানের গলা ধরে লাফাতে লাগলো।ইনশিরা যখন খুব খুশী হয় তখন আর কিছুই মনে থাকে না খুশীর ঠেলায় এমন লাফায়।ইনশিরা লাফাতে লাফাতে ইনানের পায়ে পাড়া দিয়ে ফেললো।ইনান আ.. আ..আ..করে চিৎকার দিয়ে উঠলো।ইনানের চিৎকারে ইনশিরার হুশ আসলো।তারপর ভ্রু কুচকে বলল
“তুই এখানে কেনো?”
“এমনেই ভিজতে আসছি।”
“যা এখান থেকে।”
“যাবো তবে তোকে নিয়ে।আর বেশি ভিজলে ঠান্ডা জ্বর আসবে।”
“আসলে আসুক আমি ভিজবো।”
“ও তুই তো এমনে শুনবি না।তোর জন্য অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।”
ইনশিরা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল
“আসছি।”
তারপর দুজনেই নেমে গেলো ছাদ থেকে।একটুপর আদ্রি ইনানাদের রুমে এসে বলল
“দোস্ত ইনশু অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
ইনান সবে মাত্র কাপড় পাল্টে বসেছে।এই কথা শুনে আর বসতে পারলো না।আয়াশ ইনান আদ্রি তিনজনই ইনশিরার কাছে চলে গেলো।
চলবে….?