#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat
বাস ইতিমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে।ইনান বাসের সাথে সাথেই দৌড়াচ্ছে কিন্তু বাসটা ধরতে পারছে না।এদিকে ইনশিরা বাসে উঠে ক্লান্ত শরীরটা সিটে এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো।ইনানকে এভাবে দৌড়াতে দেখে একটা মহিলা বাস থামাতে বলল।বাস থামতেই ইনান এক লাফে বাসে উঠে গেলো।তারপর পিছনের দিকে চোখ দিতেই দেখলো তার পরাণ টা ঘুমিয়ে আছে।মুহুর্তেই রাগও উঠে গেলো কিন্তু ইনান রাগটা প্রকাশ না করেই ইনশিরাকে কোলে তুলে নিলো।ইনশিরা গভীর ঘুমে সে কিচ্ছু টের পাচ্ছে না।ইনান ইনশিরাকে কোলে নিতেই তিন চারটা লোক এসে বলল
“কি ভাই!!মেয়েটাকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো?”
“আরে ভাই বউ রাগ করে চলে যাচ্ছে আমাকে না বলেই সেই জন্য নিতে আসছি।”
লোকগুলো সন্দিহান চোখে জিগ্যেস করলো
“সত্যি তো?”
“হ্যাঁ ভাই সত্যি।”
“তাইলে এই মেয়েরে ডাকেন সে যদি বলে তাহলে নিয়া যাবেন।”
“কি মুসিবত আরে মিয়ে ওরে ডাকলেতো ঘুম ভেঙে যাবে।”
“গেলে যাক কিন্তু ডাকতে হবে।”
ইনান মহা ঝামেলায় পড়লো।ইনশিরাকে এখন জাগালে তুলকালাম বাধিয়ে ফেলবে।তবুও ভয়ে ভয়ে ডাকলো
“বউ ও বউ ওঠো।”
“……”
“সোনা একটু বলে দাও তুমি আমার বউ তাহলেই হবে।”
ইনশিরার গভীর ঘুমে আছে।ঘুমের ঘোরেই বলে উঠলো
“শালা সর সামনে থেকে।যাইতে দে।”
ইনশিরার কথা শুনে ইনান বিস্মিত।তবে বিষ্ময়টা কাটিয়ে সামনের লোক গুলোকে বলল
“শুনেছেন এবার বিশ্বাস হলো তো।”
এই বলেই ইনান ইনশিরাকে বাস থেকে কোলে করে নেমে গেলো।ওদের এ অবস্থা দেখে রাস্তায় থাকা কম বেশি সব মানুষই ওদের দিকে তাকাচ্ছে।ইনান ইনশিরাকে নিয়ে হাটতে হাটতে গাড়ির সামনে এসে দেখল আয়াশ আর আদ্রি চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে।ওদের দেখে দুজনই দৌড়ে গেলো।তারপর আয়াশ উদ্বিগ্ন গলায় বলল
“কি হইছে ওর?কই পাইছিস?”
“গাড়িতে বস বলছি।”
আয়াশ আর ইনান বসেছে সামনে আর আরি ইনশিরা পিছনে।ইনান ড্রাইভ করতে করতে সব খুলে বলল ওদের।ইনান আতঙ্কিত হয়ে বলল
“দোস্ত আরেকটু লেট করলেই যাইতো।”
“কিন্তু ও টাকা পাইলো কই?(আদ্রি)
” জানি না ঘুম থেকে উঠলেই জানা যাবে।”
হোটেলে পৌঁছাতে ৮.০০ টা বাজলো ওদের।ইনশিরার ঘুম সাড়ে ৮.০০ টায় ভাঙলো।ঘুম ভাঙতেই দেখলো ও একটা ঘরে আছে কিন্তু এটা ওর ঘর নয় কোথাও যেনো ঘরটাও দেখেছে।ও হ্যাঁ এটাতো সিলেটের ওই হোটেলটা যেটাতে ওরা চারজন উঠে ছিলো কিন্তু ও এখানে কেনো?ও তো রওনা দিয়েছিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।সামনে তাকাতেই দেখলো ইনান মুখে রাগী ভাব নিয়ে বসে আছে ওর সামনে।
এদিকে হোটেলে ফেরার পর আদ্রি ছাদে চলে গেলো।পিছনে আয়াশও গেলো।প্রায় আধঘণ্টা হতে চলল কেউ মুখ দিয়ে কথা বের করছে না।শুধুই নিরবতা।অধৈর্য হয়ে আয়াশ ই প্রথমে বলল
“কি রে আদ্রি কথা বলবি না?”
“তুই ই তো বলছিস না।”
“আমি ভাবছি তুই বলবি তাই আমি বলি নাই।”
“আমিও এটাই ভাবছি।”
“আচ্ছা শোন একটা কথা বলি আমি জানি তখন ইনশুর বলা কথাগুলোর কারণে তুই অস্থির হয়ে আছিস।অবশ্য ওর কথাগুলো সত্যি তবে তুই না চাইলে আমি জীবনেও জোর করবো না।কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা সবসময় যেনো এমনই থাকে কোনো কিছুর জন্যই যেনো আঁচড় না আসে।”
আদ্রি একটা প্রশান্তির হাসি হেসে বলল
“বন্ধুত্ব অটুট থাকবে বুঝলি!আচ্ছা বাদ দে শোন কাল সকালে মালনীছড়া চা বাগানে যাবো তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবো।”
“হুম ঠিক বলছিস।কিন্তু সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তাহলে বেশী মানুষ থাকবে না মজা পাওয়া যাবে।”
আয়াশ আদ্রির সাথে ঠিকই হাসিমুখে কথা বলছে কিন্তু ভেতরটা জ্বলছে।
এদিকে ইনান ইনশিরা কড়া গলায় বলল
“পালিয়েছিলি কেনো?”
ইনশির কিছুটা ভয় পেলেও তা প্রকাশ না করেই বলল
“বুঝতেই পারছিস আমি তোর সাথে থাকবো না এখানে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
ইনান বিদ্যৎবেগে উঠে এসে ইনশিরার ঠোঁট দখল করে নিলো।ইনশিরা ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝলো না।যখন বুঝলো তখন ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু লাভ হচ্ছে না।ইনান ওর কাজটা করেই যাচ্ছে।টানা পাচমিনিট পর ছেড়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল
“আর একবার যদি পালানোর চেষ্টা করিস তাহলে ডাবল ডোজ পড়বে।আর কি বললি যেনো আমার সাথে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে?ওয়েট জানু সব সহ্য হবে।আমি কিন্তু এটা করতে চাই নি তুই ই বাদ্ধ করলি।”
ইনান এটা বলেই শক্ত করে ধরে থাকা হাত দুটো মুক্ত করে দিলো।ইনশিরা হাত ছাড়া পেয়েই ইনানের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো।ইনান গালে হাত দিয়ে ঢলতে ঢলতে বলল
“ইশ!!জামাইরে কি এমনে মারে বল?আচ্ছা সমস্যা নাই দুইটা মারছিসতো এটার শোধ সুদে আসলে তুলবো।”
“জামাই মাই ফুট!তোরে আমি জীবনেও জামাই মানবো না।”
“সেটা পনেরোদিন পরই দেখা যাবে।”
এটা বলেই ইনান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর ইনশিরার নিজের উপরেই রাগ লাগছে ইশশ!আরেকটু হলেইতো ইনান আর খোঁজ পেতো না।কিন্তু কি হলো এটা!!
আদ্রি আর আয়াশ ছাদে দাড়িয়ে কথা বলছিলো।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে দাড়ালো ওদের সামনে।তারপর হেসে বলল
“হাই আমি জুই।সিলেট ঘুরতে এসেছি।আপনারও বোধহয় সিলেট ঘুরতে এসেছেন?”
“হ্যালো,হ্যাঁ আমরাও ঘুরতে এসেছি।আমি আয়াশ আর ও আমার বন্ধু আদ্রি।”(আয়াশ)
“ও কালকে বোধহয় আপনারা ঘুরতে বের হবেন।যদি কিছু মনে না করেন তবে আমাকেও একটু আপনাদের সঙ্গে নিবেন?”
“হ্যাঁ অবশ্যই, কাল সকালে বের হবো তবে আমরা দুজনে নই আমাদের আরো দুটো ফ্রেন্ড আছে।”
“ও আচ্ছা ওদের সাথে কালকেই পরিচিত হওয়া যাবে।তো চলুন নিচে যাওয়া যাক।”
“হ্যাঁ চলুন।” (আয়াশ)
তিনজনই নিচে নেমে এলো।তারপর যে যার যার রুমে ঢুকে গেলো।রাত নয়টার সময় চারজনই বের হলো শপিংয়ে কারণ কালকে সারাদিন ঘোরাঘুরিতে সময় শেষ হয়ে যাবে।তাই এখনই করতে হচ্ছে।মোটামুটি সবারই কেনাকাটা শেষ।ইনশিরা কিচ্ছু কিনছিলো না কিন্তু ইনানের চাপাচাপির ফলে কিনতে হলো। তারপর হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে যে যার যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
সকাল ৬.০০ টা…
আদ্রি ঘুম থেকে উঠে ইনশিরাকেও ডেকে তুললো।তারপর দুজনেই ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।আদ্রি অফ হোয়াইট কালারের টপস আর ব্য্লাক জিন্স পরলো আর ইনশিরা নেভি ব্লু কালারের টি শার্ট আর সেম কালারের জিন্স পরলো।দুজনেই পনিটেইল করে চুলগুলো বাধলো।মোটামুটি ওরা তৈরী।
এদিকে আয়াশ চিল্লিয়ে বলল
“শালার পুত আমার আন্ডারওয়্যার কই?”
“আমি মনে হয় আন্ডাওয়্যার বেচি।”
” বল না কই রাখছিস?”
“আমি খাইয়া ফালাইছি।” (ইনান)
“ফাইজলামি না সত্যি কইরা বল কই রাখছিস।”
“ধূর শালা তোর আন্ডারওয়্যার দিয়ে আমি কি করমু ওইটা আমার হয় না।লুজ হয়।”
আয়াশ রেগে বলল
“কি বললি আমি তোর চেয়ে মোটা?”
“আমি এইটা কবে বলছি?”
“তোর কথায় এটাই বোঝাচ্ছে।”,
দুজনে মিলে ঝগড়া করতে করতে রেডি হলো।আয়াশ অ্যাশ কালারের জিন্স আর সাথে হোয়াইট কালারের শার্ট পরলো আর ইনান ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট আর স্কাই ব্লু কালালের শার্ট পরলো।দুজনেই রেডি হয়ে।ওদের রুমের সামনে আসতেই ওরা দুজনেই বেরিয়ে পড়লো।চারজন সামনে এগুতেই একটা মেয়ে এসে বলল
” আরে হাই আয়াশ আর আদ্রি আমাকে ফেলেই চলে যাচ্ছেন?”
আয়াশ হেসে বলল
“আপনার কথা ভুলেই গেছিলাম”
তারপর ইনান আর ইনশিরাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল
“ওরা আমার আরো দুইটা ফ্রেন্ড।”
ইনান আর ইনশিরা দুজনই জুই এর সাথে কথা বলল এবং পাচজন মিলেই বের হলো।প্রথমে ওরা মালনীছড়া চা বাগানে যাবে।ওরা আম্বখানা পয়েন্ট থেকে সি এন জি নিলো।আজ আর গাড়ি নিলো না।যাইহোক সি এনজিতে চড়ে দশ মিনিটের মধ্যেই পৌছালো মালনীছড়া চা বাগানে।
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম চা বাগান মালনীছড়া।সিলেট শহর থেকে খুব কাছেই অনিন্দ্যসুন্দর।প্রায় আড়াই হাজার একর ভুমি স্বত্ব সীমানায় উচু নিচু টিলার পর টিলায় ঘেরা চা বাগানটি।যেনো একটা সবুজ গালিচা।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই বাগানের পাশেই বিশ্বের অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়াম অবস্থিত যেখানে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
বাগানা প্রবেশ করতেই অদ্ভুত মুগ্ধতা পাঁচজনের গা বেয়ে উপচে পড়লে।চারদিকে সবুজ আর সবুজ।উপরে বড়বড় গাছ আর নিচে আধো আলো আধো ছায়ার সবুজ চাদর।ইনশিরা আর আদ্রি জুতো খুলে ফেললো।মেঠো পথ দিয়ে খালি পায়ে হাঁটতেই একটা ঠান্ডা অনুভুতি বয়ে গেলো শীড়দাড়া বেয়ে।হাটতে হাঁটতে ওরা পাচজনই পূর্বদিকে চলে গেলো।তারপর হাটতে হাটতে একটা গুহার কাছাকাছি চলে এলো।এই গুহাটার নাম হারুং হুরুং।অনেক আগেরগুহা এটা।
হাটতে হাটতেই আদ্রি বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছে জুই মেয়েটাকে।মেয়েটা আয়াশের পাশাপাশি হাটছে।আয়াশ এড়াতে চাইলেও পারছে না।
চলবে….?