#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat
ইনশিরার কথা শুনে তিনজনই বিষ্মিত।ইনান তো কথাই বলতে পারছে না।আয়াশও কি বলবে বুঝতে পারছে না।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আদ্রি ইনশিরাকে বলল
“ওয়াও দোস্ত!!কংগ্রাচুলেশনস”
“থ্যাংকু। ”
ইনশিরা আয়াশ আর ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল
“কি রে তোরা খুশী হস নি?”
আয়াশ স্বাভাবিক হয়ে বলল
“ওইতো হজম করছিলাম।তা তোর বর এর নাম কি?”
“রায়ান শেখ।”
“ওহ!!কি করে সে?”(আদ্রি)
“ডাক্তারি।”
“ওহ!!তুই রাজি বিয়েতে?”(আয়াশ)
” হুম। রাজি না হওয়ার কি আছে ছেলে ভালো আর এবছরই তো আমাদের অনার্স শেষ সেই জন্য বিয়েটা করে নিচ্ছি বাকি পড়া বিয়ের পর পড়বো।”
“ওহ!!বিয়ে কবে?” (আদ্রি)
“পরশুদিন হলুদ তারপর বিয়ে এবং এরপরের দিন বউ ভাত।”
“এতো তাড়াতাড়ি?”(আয়াশ)
“হুম রায়ানের পরিবারে চাচ্ছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক রায়ানের পোস্টিং হবে কিছুদিনের মধ্যে তাই।”
“ও আচ্ছা, কংগ্রাচুলেশনস। ভালো থাকিস।আমাদের কিন্তু ভুলে যাস না।”
ইনশিরা হালকা হেসে বলল
“বিয়ে হচ্ছে বলে কি তোদের ভুলে যাবো?কখনও না। মরার আগে পর্যন্ত মনে রাখবো।তোরা তিনজন সত্যি অনেক ভালো।ভালোবাসি তোদের।”
ইনান কোনমতে ওদের কথা গুলো হজম করছে।বারবা চোখে পানি আসছে কিন্তু ইনান সমলে নিচ্ছে।আয়াশ আর আদ্রি বুঝতে পারছে ইনানের মনের অবস্থা।খুব কষ্টে মুখে হাসি রেখে ইনশিরার সাথে হাত মিলিয়ে বলল
“কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত বিবাহিত জীবনে সুখী থাকিস।”
“ধন্যবাদ দোস্ত।”
“আমার একটু কাজ আছে আমি যাচ্ছি তোরা থাক।” (ইনান)
এটা বলেই ইনান উঠে গেলো।ইনান যাওয়ার পর ইনশিরা ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো আজ ও ক্লাস করবে না।ইনশিরা যাওয়ার সাথে সাথেই আয়াশ আর আদ্রি দ্রুত ইনানে বাসায় চলে গেলো।বাসায় যেতেই দেখলো ইনানের মা রান্নাঘর থেকে আসছে।ওর মা কে দেখে আদ্রি বলল
“আন্টি কেমন আছেন?”
“এইতো মা ভালো আছি।তোমরা?”
“আন্টি আমরাও ভালো আছি।ইনান কোথায়?(আয়াশ)
” ও তো সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে।কি হয়েছে আল্লাহ জানে আসার পর থেকে কোনো কথা বলছে না।তোমার কিছু জানো?
“না আন্টি।এইজন্যইতো দেখতে এলাম।” (আদ্রি)
“আচ্ছা যাও।”
আয়াশ আর আদ্রি৷ সুইমিং পুলের সামনে এসে দেখে ইনান আসলেই দুই পা হাটু পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে আছে।আয়াশ আর আদ্রি দুজন দুইপাশে বসে পড়লো।তারপর আয়াশ বলল
“আমি তোকে আগেই বলেছিলাম ওকে বলে দে।”
“না তুই বললি না। নে এখন অপরাধী গান শোন।”
“আয়শা থাম তো।সব জায়গায় ইয়ার্কি।”(আদ্রি)
” আমি কই ইয়ার্কি করালাম।”
“চুপ,একদম চুপ।”
আয়াশ আদ্রির কথা শুনে হাতে আঙ্গুল দিয়ে বসে আছে।আদ্রি ইনানকে উদ্দেশ্য করে বলল
“দোস্ত এখন কি করবি?”
“কি আর করার আছে বল?দাড়িয়ে দেখা ছাড়া?”
“এখনো সময় আছে দোস্ত ইনশিরাকে বলে দে।”
“বললেও কিছু হবে না।এখন বললেও আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা ভেঙে ফেলবে।”
“তো তুই কি করতে চাস?”(আয়াশ)
” কিছু না তোরা যা এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ।”
আয়াশ বলল
“আমি থাকি তোর সাথে? ”
ইনান চিল্লিয়ে বলল
“না বলছি তো।”
তারপর আদ্রি আর আয়াশ উঠে গেলো।আদ্রি হাটতে হাটতে বলল
“দোস্ত ইনানের সাথে এটা ঠিক হলো না।”
“হুম রে খুব ভালোবাসে ওকে।”
“হুম কি আর করার নিয়তি মেনে নিতেই হবে।আচ্ছা আজকেতো আর ক্লাস হলো না আমি বরং বাসায় যাই।”
আদ্রি বাসায় চলে গেলো।আয়াশও বাসায় চলে এলো।আয়াশ বাসায় এসে ভাবছে ‘ধূর কি হলো এটা কই ভাবছিলাম আদ্রিকে আজকে বলে দেবো।কিচ্ছু হলো না,এই ইনশিরার বিয়েটা কেনো ঠিক হতে গেলো।ইশ!!এটা চক্করে আর বলাই হলো না।আর এই সময়ে বলাও যাবে না।”
রাত ১০.০০ টা…
আয়াশ ইনানের বাসায় গিয়ে দেখে ঘর অন্ধকার করে মদ খাচ্ছে। অলরেডী এক বতল শেষ।আয়াশ দৌড়ে এসে বলল
“দোস্ত এগুলা কি খাচ্ছিস?”
“ধূর সর তো।”
“প্লিজ ইয়ার এগুলো বাদ দে।”
আয়াশ সামনে তাকিয়ে দেখলো ল্যাপটপে দেবদাস মুভি চলছে।ও মাথায় হাত দিয়ে বলল
“হায় রে দেবদাস হওয়ার পুরো ট্রেনিং নিচ্ছিস দেখি।”
“তুই আমার কষ্ট বুঝবি না।তুই তো আর আদ্রিকে হারাস নাই।”
“কি আর করবি বল?এটা নিয়তি রে ভাই এখন কিচ্ছু করা যাবে না।তুই ইনশিরাকে ভুলে যা।”
ইনান আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল
“তুই ভুলতে পারবি আদ্রি কে?”
“কখনও না।”
“তাহলে আমাকে বলছিস কেনো?”
আয়াশ আর কোনো কথা বলতে পারলো না কিই বা বলবে।চার বছর ধরে ইনান ইনশিরাকে ভালোবাসে সব বিপদ থেকে রক্ষাও করেছে কিন্তু ইনশিরা বুঝলো না।ইনান হঠাৎ বলল
“গার্লস আর স্টুপিড।কিচ্ছু বোঝে না এরা।অসহ্য।”
আয়াশ ইনানকে ধরে শান্ত হতে বলল।ইনান একটু পর শান্ত হয়ে বলল
“থাক ও শুখে শান্তিতে থাক।আমি দূরে কোথাও চলে যাবো।এখানে থাকতে ভাল্লাগছে না।”
“কি বলছিস কোথায় যাবি?”
“যে দিকে দুচোখ যায়।”
আয়াশ বুঝতে পারলো যে ইনান নেশার ঘোরে উল্টা পাল্টা বকছে।আয়াশ মদের বোতল বাইরে ফেলে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল
“ভাই প্লিজ শান্ত হো।আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে।তোর কষ্ট দেখে আমারও কষ্ট হচ্ছে।এমন করিস না।এমন করলে আন্টি আঙ্কেল সবাই কষ্ট পাবে।ধৈর্য ধর প্লিজ।”
ইনান কিচ্ছু বলল না।আয়াশ ওকে ধরে শুয়ে পড়লো।আজকে এখান থেকে যাওয়া যাবে না কারণ গেলেই কোন একটা অঘটন ঘটাতে পারে।তাই আজকে ইনানের সাথে ঘুমাবে বলে ঠিক করলো।ইনান ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আয়াশ ঘুমাতে পারছে না ইনানের বিড়বিড় করার কারণে।ইনান বিড়বিড় করে বলছে
“ভালোবাসাই উচিত না খালি কষ্ট আর কষ্ট।”
এমন আরো অনেক কথা বলছে ঘুমের মধ্যে।”
পরেরদিন সকাল আয়াশ ঘুম থেকে উঠে দেখে ইনান এখনো ঘুমাচ্ছে।আয়াশ ইনানকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
“ইনান উঠ, সকাল হইছে।”
ইনান চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বলল
“কি হইছে ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেনো?আর তুই আমার বিছানায় কেন?রাতে আবার কখন আসলি?”
আয়াশ বুঝতে পারলো ইনান রাতের কথা সব ভুলে গেছে।তারপর আয়াশ বলল
“এইতো তুই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আসছিলাম।”
“ওহ!!চল তোর বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আয় ইনশু…”
এতটুকু বলার পর ইনানের কালকের সব মনে পড়ে গেলো আর আস্তে আস্তে চেহারায় কালো মেঘ জমতে শুরু করলো।ইনান তৎক্ষনাৎ আয়াশকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রুম থেকে বের করে দিলো আর দরজা বন্ধ করে দিলো।আয়াশ দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে
“দোস্ত পাগলামি করিস না প্লিজ দরজা খোল।”
ইনান রুম থেকে জোরে জোরে বলল
“তুই যা প্লিজ। আমার ভাল্লাগছে না।”
“ইনান প্লিজ ইয়ার।”
“যা এখান থেকে। ”
আয়াশ হতাশ হয়ে চলে গেলো।ইনান দরজা জানালা বন্ধ করে রুম অন্ধকার করে বসে আছে।ইনান ভাবতেই পারছে না কাল ইনশিরার গায়ে হলুদ।মন চাচ্ছে সব আছড়ে ভেঙে ফেলতে।শেষ পর্যন্ত কি ইনান ইনশিরাকে হারিয়ে ফেলবে!!!…..
চলবে….?