আমি শুধুই তোমার পর্বঃ০৯

0
1791

#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

নীল ওদের ইনশিরা আর আদ্রির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিচে নেমে গেলো।এই সুযোগে আয়াশ আর ইনান ছাদে উঠলো।ওদের দেখে আদ্রি বলল

“কি রে সকাল বেলা কই গেছিলি?”

“একটা কাজ ছিলো।(আয়াশ)

” শোন তোদের একটা জিনিস শোনাবো।”

ইনশিরা কৌতূহলী কন্ঠে বলল

“কি?”

আয়াশ আদ্রি আর ইনশিরার সামনে রেকর্ডিংটা অন করে দিলো।পুরো কনভার্সেশন শোনার পর আদ্রি রেগে বলল

“দাড়া হারামিকে এখনি গিয়ে শায়েস্তা করে আসি।”

“ওরে আজকে থাপ্পড় দিয়ে বয়রা বানমু শালা শয়তান।” (ইনশিরা)

আয়াশ ওদের দুইজনকে থামিয়ে বলল

“আরে এখন কিছু করিস না।একটু পর সবাই যখন চলে যাবে ফেনুয়া তখন ওকে টাইট দিবি।ইনশু এখন তুই ওকে ফোন দিয়ে বাড়িতে থাকতে বলবি।তারপর আদ্রি আর তুই মিলে যা করার করিস আমরা কিচ্ছু বলবো না।(আয়াশ)

” হুম এখনই ফোন দিয়ে বল ওকে বাসায় থাকতে।”

“ওকে।”

ইনশিরা নীলকে ফোন দিলো ওদের সামনে ফোন স্পিকারে দিয়ে।নীল রিসিভ করতেই ইনশিরা বলল

“হ্যালো,নীল।”

“হ্যা,ইনশিরা বলুন।”

“আপনি এখন কোথায়?”

“আমিতো হাটতে বের হয়েছি।কেনো কোন সমস্যা?”

“না সমস্যা না কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলবো।খুব ইম্পর্টেন্ট।একটুপর সবাইতো ফেনুয়া চলে যাবে তখন বাসায় একটু থাকবেন প্লিজ।”

নীল যেনো এটাই চাইছিলো তাই ও তাড়াতাড়ি বলল

“আচ্ছা আমি থাকবো।”

তারপর ইনশিরা ফোন কেটে দিলো আর ওদের সাথে হাই ফাইভ করলো।আদ্রি আয়াশকে বলল

“দোস্ত দুইটা হকি স্টিক জোগাড় কর।”

“নো টেনশন হকি স্টিক জোগাড় করতে পারি নাই কিন্তু দুইটা ক্রিকেট ব্যাট আনছি তোদের জন্য।”(ইনান)

” ব্যাট দিয়ে চলবে তো?”(আয়াশ)

“চলবে মানে!!দৌড়াবে।” (ইনশিরা)

“ওকে এখন চল নীল যেনো কোনো ভাবেই এটা না জানতে পারে।”(আয়াশ)

সবাই নিচে নামলো।আধঘন্টা পর সবাই বেরিয়ে গেলো।আদ্রি, ইনান,আয়াশ ওরা তিনজন বাড়ির পিছনে লুকিয়ে রইলো।আর ইনশিরা বাড়ির সামনে নীলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।একটুপর নীল এসেই বলল

” অনেক দেরি করে ফেলেছি তাই না?সরি। ”

“আরে না না সমস্যা নাই।”

“আচ্ছা বলো কি বলবে।”

“হুম বলছি।”

এটা বলেই ইনশিরা আদ্রি বলে একটা ডাক দিলো।নীল কিছু বুঝে উঠার আগেই আদ্রি নীলের পিছনে এসে হাজির।আর এদিকে আয়াশ আর ইনান ছাদে দুইটা চেয়ার পেতে বসেছে।আয়াশ ইনানের দিকে মুরি এগিয়ে দিয়ে বলল

“নে খা।”

ইনান ভ্রু কচকে বলল

“মুরি কেনো দিচ্ছিস?”

“আরে বেটা লাইভ শো দেখতে বসছিস সাথে পপকর্ন নিয়ে বসতে হবে তো নাকি?কিন্তু পপকর্ন না থাকায় মুরি দিয়ে কাজ চালাতে হবে আর কি।”

ইনান হাসতে হাসতে মুরি মুখে দিলো।আর এদিকে ইনশিরা নীলের হাটুতে একটা বাড়ি মেরে বলল

“আমাদের দুইজনকেই তোর চাই তাই না?” (ইনশিরা)

“এগুলা কি বলছো?” (নীল)

“আহারা ময়নাটা কিচ্ছু বোঝে না।দাড়া বুঝাচ্ছি।(আদ্রি)

এটা বলেই নীলের পায়ে ব্যাট দিয়ে জোরে দুইটা দিলো।তারপর ইনশিরা বলল

” কি গো ময়না এখন বুঝছো?নাকি আরেকটু বুঝানো লাগবে?”(ইনশিরা)

“আহারে,ময়নাটার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?তোর কি দয়া মায়া নাই?”(আদ্রি)

” না রে দোস্ত আমার না দয়ামায়া নাই।তুই একটু আদর করে বল না ওকে।”(ইনশিরা)

“আচ্ছা যা তুই একটু রেস্ট নে ময়নাকে আমি একটু আদর দিয়ে বোঝাই।”(আদ্রি)

এই বলে আদ্রি ইচ্ছা মতো মারা শুরু করলো নীলকে বেচারা আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না ধপাস করে পড়ে গেলো।তারপর ইনশিরা এসে ওর কলার টেনে বলল

” কি গো ময়না বুঝছো?নাকি আমি বুঝাবো।”

আর এদিকে ইনান আয়াশকে হাসতে হাসতে বলল

“দোস্ত এতো সুন্দর লাইভ শো আমি জীবনেও দেখি নাই।”

আয়াশও হাসতে হাসতে বলল

“তু মেরা মু কে বাত ছিনলি ইয়ার।”

দুজনেই সেই লেভেলের মজা পাচ্ছে ছাদে বসে।

তারপর ইনশিরা গুণেগুণে দুইটা থাপ্পড় মেরে বলল

“আর জীবনেও যদি মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছিস তো এর থেকেও ডাবল ডোজ পড়বে।আর হ্যাঁ এগুলো যাতে কোনোভাবেই কারো কানে না পৌছায়।বুঝলা ময়না?”

তারপর আদ্রি আর ইনশিরা ছাদে চলে এলো।ওরা আসতেই আয়াশ বলল

“বাহ!!কি মাইর দিলি।আমি ফিদা।”

“হুম দারুণ।এবার চল বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।(ইনান)

আদ্রি আর ইনশিরা সম্মতি জানালো তারপর একটু পানি খেয়ে বাড়ির সামনে আসলো।এসেই দেখলো আয়াশ নীল কে বলছে

” শোন ওরা মারছে তাই এই অবস্থা।আর যদি আমরা মারতাম তাহলে কোনো অবস্থাতেই থাকতি সো সময় থাকতে এখান থেকে চলে যা। আর একবারে বিয়ের দিন আসবি এর আগে যাতে তোকে এখানে না দেখি।(আয়াশ)

আদ্রি পিছন থেকে এসে আয়াশের মাথা টোকা দিয়ে বলল

“ডায়লগ মারা হইলে চল যাই।”

ইনান দাত কেলিয়ে বলল

“হুম আমাদের শহিদ কাপুরের ডায়লগ দেওয়া হইছে।”

“আচ্ছা চলেন এবার।(ইনশিরা)

ওরা চারজন বেরিয়ে পড়লো।কিছুদূর হাটার পর দুইটা হিজড়া ওদের সামনে এসে বলল

“আমাগো একশ টাকা দে।”

“কুমিল্লায় মনে হয় তোরা নতুন তাই না?”

“হ,,বসের লগে দেখা করতে আইছি।”

“হুম তো আমাদের কাছে টাকা চাইছিস কেনো?” (ইনান)

“ওই বেশি কথা কবি না তোরা। একশো টাকা দে নাইলে জামা খুলমু।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আচ্ছা খোল।”

ইনান আয়াশের হাতে চিমটি দিয়ে বলল

“জামা খুলতে বলছিস কেনো?একশো টাকা দিয়ে দে।”

আয়াশ অভয় দিয়ে বলল

“আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো?ওদের কিছু আছে নাকি?যে জামা খুললে লজ্জা পাবো।ওরা ভয় দেখানোর জন্য এটা বলছে।”

হিজড়া দুইটা আবার বলল

“দে বলতাছি,নাইলে…”

“নাইলে কি?” (আয়াশ)

আয়াশ কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো মসজিদের ইমাম আসছে।এই সুযোগ ওদের ভাগানোর।আয়াশ তাড়াতাড়ি ইমামটার কাছে গিয়ে বলল

“হুজুর দেখেন এই হিজড়া গুলো আমাদের যেতে দিচ্ছে না।”

ব্যাস হয়ে গেলো আয়াশের আর কিছুই বলা লাগলো না ইমাম এসে হিজড়া দুইটাকে বয়ান দেওয়া শুরু করলো।এই ফাকে ওরা চারজন কেটে পড়লো।একটু দূর এগুতেই ইনশিরা বলল

“দোস্ত তোএবার চল বাসায় গিয়ে দেখি নীল গেছে কি না!”

“হুম চল যাওয়া যাক।” (আয়াশ)

ওরা চারজনই বাসায় চলে গেলো।গিয়ে দেখলো আয়াশের নানুরা চলে এসেছে কিন্তু নীলকে খুজেই পাওয়া যাচ্ছে না তারমানে চলে গেছে নীল।চারজনই হাফ ছেড়ে বাচলো।

এভাবেই একসপ্তাহ পার হয়ে গেলো।অনেক মজা হাসি আনন্দ দিয়ে।গত দুদিন আগে ওরা আবার ঢাকা ফিরেছে। দুদিন কেউ ভার্সিটিতে যায় নি।সবাই নাক ডেকে ঘুমিয়েছে।

আজ সোমবার…

সবাই ভার্সিটিতে আসবে।আগেরদিন রাতে এমন কথাই হয়েছিলো ওদের চারজনের মাঝে।

ক্যান্টিনে বসে আয়াশ আর ইনান তাদের প্রিয়তমার জন্য অপেক্ষা করছে।দুজনেই খুব খুশি কারণ আজই বলে দিবে ওদের মনের কথা।একটুপর আদ্রি এসে বসতে বসতে বলল

“কি রে আজ দেখি আমাদের শহিদ কাপুর আর আদিত্য কাপুরকে খুব খুশি খুশি লাগছে।কাহিনি কি?”

“পরে বলবো।এখন চুপ থাক।(ইনান)

” তুই চুপ থাক।আচ্ছা ইনশু আসে নি?”(আদ্রি)

“আসলেতো দেখতে পেতি।”

আদ্রি আয়াশকে ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।কিছুক্ষণ পর ইনশিরাও আসলো।এসেই বলল

“গাইস তোদের জন্য একটা গুড নিউজ আছে।”

তিনজনই উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইনশিরা দিকে।এর মাঝেই ইনান বলল

“কি খুশির খবর?”

“আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ফাইনালি তোরা আমার বিয়ে খেতে পারবি।”

চলবে…..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে