#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat
প্রথমে আয়াশ তারপর ইনান তারপর আদ্রি আর ইনশিরা ওদের থেকে একটু দূরে দৌড়াচ্ছে পাগল দুইটা।আয়াশ দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে গেছে পিছনে তাকিয়ে দেখে ইনান ও ওর কাছাকাছি চলে এসেছে। দৌড়াতে কষ্ট হয় বলে ইনশিরা হিল খুলে হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে।কিন্তু আদ্রি এখনো পিছনে পড়ে আছে।আয়াশ,ইনান,ইনশিরা একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেটের সামনে দাড়িয়ে আদ্রিকে জোরে জোরে দৌড়াতে বলছে।আদ্রির একটু পিছনেই পাগল গুলো।বেচারির দৌড়াতে দৌড়াতে অবস্থা খারাপ।অনেক কষ্টে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো আদ্রি আসার সাথে সাথেই আয়াশ বাড়ির গেট বন্ধ করে দিলো।গেট আর পাঁচ সেকেন্ড খোলা রাখলেই পাগল দুইটাও ঢুকে যেতো।যাইহোক চারজনই ভিষণ হাঁপাচ্ছে। আয়াশ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
“চল বাড়ির ভেতরে যাই।”
“ভেতরে যাই মানে?তুই চিনিস নাকি বাড়ির কাউকে?”(ইনান)
“হুম আমার ফুপি হয়।আব্বুর চাচাতো বোনের বাসা।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি চল।পানি খেতে হবে।” (ইনশিরা)
আদ্রিরতো হাপানোর চোটে কথাই বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।চারজনই ভিতরে গেলো।আয়াশের ফুপু ওকে দেখেই বলল
“আয়াশ না?”
“হ্যা ফুপি।”
“কত বড় হয়ে গেছিস।কেমন আছিস বাবা?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি?”
“আমিও ভালো।”
“ফুপি আগে একটু পানি দাও তারপর কথা বলি।”
আয়াশের ফুপি পানি আনতে গেলো।আদ্রি মোটামুটি একটু স্বাভাবিক হয়েই আয়াশকে মারতে লাগলো।আয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল
“মারছিস কেনো?”
“বালের এডভেঞ্চার করাইছোছ শালা।দৌড়াইতে দৌড়াইতে জান বাইর হইয়া যাইতে নিছিলো।”
“কিন্তু আমারতে জোস লাগছে এডভেঞ্চারটা।”(ইনান)
” তোর তো লাগবোই শয়তানের গোষ্ঠী।”(ইনশিরা)
ওরা কথা বলতে বলতেই আয়াশের ফুপি ওদের জন্য নাস্তা পানি নিয়ে আসছে।তারপর আয়াশ খেতে খেতে বলল
“ফুপি ওরা আমার বন্ধু।এখানে বেড়াতে এসেছে।”
আয়াশের ফুপি ওদের দিকে সৌজন্য মূলক হেসে বলল
“কেমন আছো তোমরা?”
সবাই সমস্বরে বলল
“ভালো আছি আন্টি।আপনি?”
“এইতো আল্লাহ রাখছে ভালোই।”
মোটামুটি সবার নাস্তা কম্পলিট করা শেষ।আয়াশ উঠতে উঠতে বলল
“ফুপি আজকে আসি।”
“সে কি দুপুরে খেয়ে যা।”
“না না একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে আজকেই করতে হবে।কাজটা না থাকলে অবশ্যই দুপুরে খেতাম।”
“আচ্ছা। আবার আসিস।”
“আচ্ছা ফুপি আল্লাহ হাফেজ।”
তারপর ওরা চারজন গেট থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো পাগল দুইটা নেই।সবাই হাফ ছেড়ে বাচল।তারপর হাটতে হাটতে ইনশিরা আয়াশ কে বলল
“দোস্ত তোর কি ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে রে?”(ইনান)
“না কোনো কাজ নেই।”
“তাহলে তখন ফুপিকে মিথ্যা বললি কেন?” (আদ্রি)
“আরে ওনার বাসায় যদি দুপুরের খাবার খেতাম নিশ্চিত হসপিটাল ভর্তি হওয়া লাগতো।এতো বাজে রান্না করে।আমার মনে হয় কেকা আপা ওনার রান্না দেখলে হার্ট এট্যাক করবে।” (আয়াশ)
ইনশিরা হাসতে হাসতে বলল
“সত্যি দোস্ত বাচাইলি।”
“এখন প্লেন কি?”(আদ্রি)
আয়াশ ইয়ার্কি করে বলল
“আবার পাগলের দৌড়ানি খাওয়ানো।”
ইনান না দিলেও ইনশিরা আর আদ্রি আয়াশের পিঠে দুম করে দুইটা ঘুষি মারলো।বেচারা ঘুষি খেয়ে বলল
“একটু আস্তেও তো মারতে পারিস।যেভাবে ঘুষি দুইটা মারছিস মনে হচ্ছে পিঠের হাড় ভেঙে গেছে।”
“ঢং না করে বল এখন কি করবি?”(আদ্রি)
” কি আর করবো হাটতে থাকি।তারপর নতুন কোনো আইডিয়া পেলে ওইটা করবো।”
তারপর ওরা আবার হাটতে লাগলো।
মোটামুটি পাচপুকুরিয়া আর বান্দুয়াইন পুরোটা হেটে আবার বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছে চারজন। বাড়িতে পৌঁছে দেখলো ঘড়িতে ১২.০০ টা বাজে।আয়াশ বলল
“ইনশু আর আদ্রি গিয়ে কলে অথবা পকুরে গোসল করে নে।আমি আর আয়াশ বিলে গোসল করবো।”
আয়াশের কথা শুনে তিনজনই ছোট খাটো একটা হার্ট এট্যাক করেছে।ইনান আয়াশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল
“আমি জীবনেও বিলে নামি নাই গোসল তো দূরের কথা।”
“দোস্ত কলে কেমনে গোসল করে?(আদ্রি)
” আমি পুকুরেও না কলেও না কোনো জায়গায় গোসল করতে পারমু না।নো ইম্পসিবল।”(ইনশিরা)
ওদের তিনজনের কথা শুনে আয়াশ এক ধমক দিয়ে বলল
“তোদের জন্য এখন কি এখন আমি পুকুরে বাথটাব বসাবো?এভাবেই করতে হবে গোসল।তোরা করলে কর না করলে নাই।আমি গোসল করে আসছি।”
তিনজনই মুখ কালো করে বলল আচ্ছা এভাবেই করবো।তারপর আয়াশ ইনানের হাতে একটা লুঙ্গি দিয়ে বলল
“চল বিলে যাই।”
“কিহ!!!এখন আবার লুঙ্গি পড়তে হবে?না দোস্ত রাতে কোনোভাবে ম্যানেজ করা গেছে কিন্তু দিনে পারবো না।”
“আমি কিছু জানি না নানা বলছে আমাদের লুঙ্গি পড়ে ওনার সাথে মসজিদে যেতে হবে।এখন বল তুই ওনার কথা ফেলবি?”
ইনান আবারও মুখ কালো করে বলল
“আচ্ছা পরবো চল।”
আদ্রি আর ইনশিরা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর ইনশিরা আদ্রিকে ধাক্কা দিয়ে বলল
“দোস্ত তুই কি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলি?”
“হুম রে দোস্ত এমন জানলে আমি জীবনেও আসতাম না।আমারে কোটি টাকা দিলেও না।”
“থাক বইন কান্দিস না চল কলে গোসলটা সেরে ফেলি।”
“আমি পারমু না।চারপাশে বেড়া দেওয়া আর উপরে টিন।সামনে বেড়ার দরজা।কোনোমতে দরজাটা খুলে গেলেইতো মান সম্মান শেষ।”
“একটা বুদ্ধি পাইছি শোন আমি যখন গোসল করবো তখন তুই পাহারা দিবি আর তুই যখন গোসল করবি তখন আমি পাহারা দিমু।”
আদ্রি উদাস ভঙ্গিতে বলল
“হুম সেটাই করতে হবে।”
তারপর দুজন পালা করে পাহারা দিয়ে গোসল শেষ করলো এদিকে ইনান বিলে একবার নামতে নেয়তো দশবার পিছায়।আয়াশ বিরক্ত হয়ে ইনানকে টেনে নামায়।অনেক কষ্টে ইনান গোসল শেষ করে কিন্তু আয়াশের কষ্ট হচ্ছে না কারণ সে এগুলো আগেও করেছে।তারপর দুজনে লুঙ্গি আর পান্জাবী পড়ে মসজিদ গিয়ে নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই দেখে আদ্রি আর ইনশিরা ছাদে বসে চুল শুকাচ্ছে।ওরাও উঠলো ছাদে।ওদের এই অবস্থায় দেখে আদ্রি আর ইনশিরা হাসতে হাসতে শেষ।আদ্রি কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল
“দোস্ত তোদের জোস লাগছে।”
ইনান রেগে বলে
“সব হইছে আয়াশ শালাটার জন্য ওর জন্য শেষ পর্যন্ত আমার লুঙ্গি পড়তে হইছে।শালা ছাগল নিজেও পড়ছে আমারেও পড়াইছে।”
আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
“গ্রামে আসবি আর গ্রামের ট্রেন্ড ফলো করবি না তা কি হয়?আচ্ছা যাইহোক শোন তোদের একটা খুশীর খবর আছে।”
তিনজনই উৎসুক জনতার মতো তাকিয়ে বলল
“কি খুশীর খবর?”
“এখন খাওয়া শেষ করে চারজনে মিলে মুভি দেখবো।”
আয়াশের কথা শুনে তিনজনই অবাক হলো।ইনান সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
“এখানে নেটওয়ার্কই তো ঠিক মতো পাওয়া যায় না মুভি কেমনে দেখমু?”
আয়াশ ভাব নিয়ে বলল
“সেই চিন্তা তোদের করতে হবে না।আমার উপর ছেড়ে দে।আর এখন খেতে চল।”
চারজনই ছাদ থেকে নেমে খেতে গেলো।খাওয়া শেষ করে আয়াশ ওদের তিনজনকে বাড়ির কোণার ঘরটাতে নিয়ে গেলো।তারপর বিটিভি ছেড়ে দিলো সেখানে ডিপজলের মুভি হচ্ছে।ডিপজলের মুভি দেখে আদ্রি আয়াশের পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল
“তুই কি মুভি দেখাবি এটা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।”(আদ্রি)
“আমি মনে করছিলাম তুই মুভি ডাউনলোড দিয়ে আনছিস। এখন কি এটাই দেখতে হবে?” (ইনশিরা)
“ধূর তোরা দেখলে দেখ না দেখলে নাই আমি আর আয়াশ দেখমু।”(ইনান)
” তুই তো দেখবিই তোদের দুইটারে ডিপজলের মতো দেখা যায়।এইজন্যই দেখবি।”(আদ্রি)
আদ্রি কথা শুনে আয়াশ চিল্লিয়ে বলল
“জ্বি না,আমাকে একদম শাহিদ কাপুরের মতো দেখতো।”
“আর আমি তো আদিত্য কাপুরের জমজ ভাই।”(ইনান)
” হ, তোরা গরিবের আদিত্য কাপুর আর শাহিদ কাপুর।”(ইনশিরা)
এটা বলেই ইনশিরা, আদ্রি বাইরে চলে গেলো।ইনান আর আয়াশ বসে বসে ডিপজলের মুভি দেখতে লাগলো।মুভি দেখা শেষ করে ওরা বাইরে বের হতেই দেখে ইনশিরা আর আদ্রি কুতকুত খেলেছে বাচ্চাদের সাথে।হঠাৎ ইনশিরা পড়ে যেতে নিলেই…….
চলবে….?