আমি শুধুই তোমার পর্বঃ০৫

0
2050

#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

কি হবে এবার? রাফিদ কি সব বলে দেবে?

এমন প্রশ্নই ওদের তিনজনের মাথায় ঘুরছে।এদিকে রাফিদ বলল

“সরি ইনশিরা আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারবো না।”

“কেনো?”

“বলতে পারবো না।রাখি।”

তারপর রাফিদ কল কেটে দিলো।ইনশিরা ফোন রাখতেই ইনান বলে উঠলো

“কি রে ইনশু কি বলল রাফিদ?”

“বলছে ও নাকি আমার সাথে দেখা করতে পারবে না।নিজেই বলল দেখা করবে এখন আবার নিজেই মানা করছে। কি জানি কি হইছে।”

ইনশিরার কথা শুনে ইনান যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।তারপর বলল

“আচ্ছা যাক বাদ দে ওর কথা।কুমিল্লা যাচ্ছি আমিতো সেই এক্সাইটেড ”

ওর কথায় তাল মিলিয়ে আদ্রি বলল

“আমিও।এর আগে কখনো কুমিল্লা যাওয়া হয় নি।”

ইনশিরা আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলল

“কতক্ষণ লাগবে রে যেতে?”

আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল

“এইতো মোটামুটি ৩ ঘন্টাতো লাগবেই।”

আদ্রি আয়াশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“এই তিন ঘন্টা কি করমু? ”

আয়াশ রেগে বলল

“আদ্রি তুই আমার মাথাটা রে কি পাইছিস?খালি গাট্টা মারিস।”

“সত্যি বলতে আমার তোর মাথাটারে ফুটবল মনে হয়।”

আয়াশ রেগে আদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল

“গাড়ি ড্রাইভ করছি তাই বেচে গেছিস নাহলে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম।”

ইনশিরা হেসে বলল

“আহারে আয়াশ তোর জন্য কষ্ট হচ্ছে। ”

আয়াশ ঠোঁট বাকা করে বলল

“হাসিস না বেশি দাত পড়ে যাবে।”

ইনান আদ্রিকে বলল

“আদ্রি একটা গান শুরু কর।”

“ধূর আমি গান টান পারি না।”

আয়াশ ভেংচি দিয়ে বলল

“তা পারবি কেনো?খালি ঝগড়া করতে আর খাইতে পারিস।”

ইনশিরা আদ্রিকে বলল

“দোস্ত ওর কথা কানে নিস না।তুই শুরু কর। ওদের দেখিয়ে দে তুই গান পারিস।”

আদ্রি ভাব নিয়ে বলল

“ওকে শুরু করছি।”

এই বলে আদ্রি গান গাওয়া শুরু করলো

“ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না।
যার তার লগে টাংকি মারে আমায় চেনে না।”

এতটুকু গাওয়ার পর আয়াশ বলল

“থাক থাক মাফ করে দে তোর আর গাওয়া লাগবো না।তোর গান শুনে আমি হার্ট এটাক করমু।”

ইনান ভ্রু কুচকে বলল

“এটা কিন্তু ঠিক না আদ্রি তোকে আমি গান গাইতে বলছি আর তুই কি গাইলি?”

“কেনো গান ই তো গাইলাম।বিশ্বাস না হলে ইউটিউবে টুনির মা গান সার্চ দিয়ে দেখ গান টা আছে।”

ইনশিরা হাসতে হসতে আদ্রির মাথায় টোকা দিয়ে বলল

“জানু তুই ফাটাইয়া দিছোস।”

আদ্রি চুল ঠিক করতে করতে ভাব নিয়ে বলল

“দেখতে হবে না আমি কে!”

আয়াশ মুখ বাকা করে বলল

“দেখছিতো ঝগড়াটে শাকচুন্নি।”

আদ্রি আয়াশের চুল টেনে বলল

“তোর বউ শাকচুন্নি আর তুই শাকচুন্না। ”

ইনান আয়াশের কানে কানে বলল

“দোস্ত তোর বউতো ও ই।কিন্তু তুই শাকচুন্না।দোস্ত ফাটাফাটি জোড়ি শাকচুন্না+শাকচুন্নি।”

আয়াশ ইনানের দিকে চেয়ে চোখ রাঙালো।আর ইনান বত্রিশ দাত বের করে হাসছে।ওদের কানাকানি করতে দেখে ইনশিরা বলল

“কি রে তোরা কানে কানে কি বলিস?”

আয়াশ ভাব নিয়ে বলল

“এটা ছেলেদের পার্সোনাল ব্যাপার। মেয়েরা নট এলাও।”

আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“বুঝলি ইনশু কানে কানে কথা কয় কাইন্নার বউ।”

ইনান বলল

“হয় নাই আমরা কাইন্নার জামাই।”

ইনশিরা হাসতে হাসতে বলল

“লাস্ট পর্যন্ত তোরা কাইন্নার জামাই হলি।”

ইনশিরার কথা শুনে আয়াশ আর ইনান দুজনই জোরে জোরে হাসা শুরু করলো কিন্তু কিছু বলল না। আদ্রি আর ইনশিরা ওদের হাসার কারণটা বুঝতে পারছে না।”

এভাবে ওরা সবাই তিনঘন্টা ধরে আড্ডা দিতে দিতে কুমিল্লা চলে এলো।অর্ধেক পথ আয়াশ আর অর্ধেক পথ ইনান ড্রাইভ করেছে।যখন ওরা পৌছালো তখন রাত ১০.০০ টা বাজে।বাড়ির সামনে এসে আদ্রি বলল

“আয়াশ এটা কই আনছিস?অন্ধকার কেনো এতো?”

“আরে গ্রাম তো তাই সবাই ঘুমায় গেছে।”

“এখন যাবো কিভাবে?কিছুইতো দেখা যাচ্ছে না।” (ইনান)

“গাড়িতে দুইটা টর্চ আছে।একটা তুই নে আরেকটা আমাকে দে।আর ইনশিরা তুই ইনানের হাত ধর আর আদ্রি তুই আমার হাত ধর। কারণ পড়ে যেতে পারিস।রাস্তাটা অনেক চিকন আর রাস্তার দুপাশে পুকুর।এই রাতের বেলা পুকুরে পড়লে কিন্তু সর্বনাশ।”(আয়াশ)

“আচ্ছা বাট আঙ্কেল আন্টি কি এখনো আসে নাই?” (ইনশিরা)

“সেটা বাসায় গেলেই বোঝা যাবে।আমার মনে হয় এতক্ষণ চলে আসছে।উনারা তো আমাদের আগে রওনা দিছে।”(আয়াশ)

“হুম। এবার চল যাওয়া যাক।(আদ্রি)

তারপর আস্তে আস্তে ওরা রাস্তা পার করে বাড়ির সামনে আসলো।আসতেই আয়াশ চিল্লিয়ে বলে উঠলো

” নানু বাইরে আসো।দেখো আমি আসছি।”

পাঁচ মিনিট পর ওর বুড়ো একটা মহিলা হারিকেন নিয়ে এসে আয়াশকে জড়িয়ে ধরে বলল

“এতোদিন হরে নি তোর নানি রে মনে হইড়ছে।”

আয়াশ নানির গালে চুমু খেয়ে বলল

“না আমার ডার্লিং কে তো আমার সবসময় মনে পড়ে কিন্তু তোমার মেয়েই তো আসতে দেয় না।”

নানি কপট রাগ দেখিয়ে বলল

“আইজ্জা হিতির খবর আছে। হিতির একদিন কি আর একদিন।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আচ্ছা তোমার মেয়ের বিচার পরে কইরো আগে ওদের দেখো। ওরা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।তাই ওদের ও নিয়া আসছি।ইনান, আদ্রি আর ইনশিরাকে দেখিয়ে বলল।”

নানি ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল

“তোমগো নাম কিতা?”

প্রথমে ইনশিরা বলল

“আমার নাম ইনাহা সিকদার ইনশিরা।”

তারপর ইনান বলল

“আমি ইনান চৌধুরী।”

এরপর আদ্রি বলল

“আনি কাশফা ইবনাত আদ্রহা।”

নানি হাসি মুখে বলল

“আইয়ো ঘরে আইয়ো মামণিরা আর বাজান তুমিও আইয়ো।”

তারপর ওদের ভিতরে নিয়ে গেলো নানি।আদ্রি আয়াশকে চিমটি দিয়ে বলল

“কি রে এখানে কারেন্ট নাই?”

“আছে কিন্তু অনেক লোডশেডিং হয়।”

“আমার অনেক গরম লাগছে রে।”

“কিছু করার নাই।”

ওদের চারজনকে চারটা রুম দিলো।তারপর খেতে ডাকলো।কিন্তু ওরা মানা করে দিলো কারণ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নেমে ওরা খেয়ে নিয়েছিলো।আয়াশের বাবা মা আগেই চলে আসছে।যে যার যার রুমে শুয়ে আছে।কারো চোখেই ঘুম আসছে না।গরমে সিদ্ধ হওয়ার অবস্থা। আদ্রি আয়াশকে মনে মনে গালি দেওয়া শুরু করছে।আয়াশের নানা বাড়ি প্রাইমারী স্কুলের মতো।অনেকগুলো রুম আর প্রত্যেক রুমের সামনে ইয়া লম্বা বারান্দা আছে।আদ্রি ঘুমাতে না পেরে দরজা খুলে বারান্দায় আসতেই দেখলো ইনান দাড়িয়ে আছে।আদ্রি এগিয়ে গিয়ে বলল

“দোস্ত ঘুম আসছে না।প্রচুর গরম লাগছে।”

“আমারও। এইজন্যই এখানে দাড়াইয়া আছি।”

“আয়াশরে মন চাচ্ছে ইচ্ছামতো কিলাইতে।ইনশু কি ঘুমায় গেছে?”

“মনে হয়।”

পিছন থেকে ইনশিরা এসে বলল

“এই নরকের মধ্যে কার ঘুম আসবো।”

আদ্রি বলল

“দাড়া আয়াশ রে ডাকি।”

আয়াশ কে এক ডাক দেওয়ার পরই আয়াশ দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দেরি আদ্রি পরপর পিঠে দুইটা কিল বসায় দিয়ে বলল

“হারামি কই আনছিস?গরমে মরে যাচ্ছিতো।”

“আমার কি দোষ কারেন্ট লোডশেডিং দিলে।আমারও তো ঘুম আসছে না।”

“বাতাসও তো নাই বাইরে।এই বিল্ডিংএর ছাদে ওঠা যাইবো?”(ইনান)

“হুম একটা মই আছে কিন্তু ভাঙ্গা চোরা।ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।”

আদ্রি আতঙ্কে বলল

“কিহ!!না না তাইলে ছাদে ওঠার দরকার নাই।”

ইনশিরা বলল

“আরে কিছু হবে না।একবার চেষ্টা করা যায়।”

“আয়াশ তুই মই টা নিয়ে আয়।”(ইনান)

আয়াশ মই আনতে চলে গেলো।তারপর ওরা মই দিয়ে কষ্ট করে ছাদে উঠলো।সবচেয়ে কষ্ট হইছে আদ্রির উঠতে।ও মইয়ে চড়েই কাপাকাপি শুরু করে দিছে।অনেক কষ্টে ইনান ওরে টেনে তুলছে।তারপর চারজনই ছাঁদে বসে গল্প করছে।এক পর্যায়ে আদ্রি বলল

” আর কতক্ষণ বসে থাকবো।কিছু একটা করতে পারলে ভালো হতো।”

“আচ্ছা চল আম আনতে যাই।খালের ওই পাড়ে একটা আম গাছ আছে।অনেক আম ধরে।এখন গেলে অনেক পাওয়া যাবে।” (আয়াশ)

“আচ্ছা চল।” (ইনান)

“কিন্তু ইনান তোকে আর আমাকে লুঙ্গি পড়তে হবে।লুঙ্গি না পড়লে হবে না।নৌকা বাইতে পারবো না।”

ইনান চিল্লিয়ে বলল

“কিহ!!!আমি জীবনেও লুঙ্গি পরি নাই।”

ইনশিরা হাসতে হাসতে বলল

“সিরিয়াসলী তোরা লুঙ্গি পরবি?আমি ভাবতেই পারছি না।”

আয়াশ ভেংচি দিয়ে বলল

“হুম পরবো। দেখিস ভালোই লাগবে।”

আদ্রি শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“ওকে দেখি কেমন লাগে।”

ওরা চারজন আবার নিচে নামলো।আয়াশ আর ইনান আয়াশের রুমে লুঙ্গি পড়তে গেলো…..

চলবে…..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে