#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৬এবং শেষ
#Arshi_Ayat
সেহরীশ কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না।ওই কথাগুলো বলে একবারে বিপাকেই পড়ে গেলো সে।এখন ওদের বুঝাবে কি করে সেটা নিয়েই সেহরীশ টেনশনে আছে।
কিন্তু তার আগে ব্যাপারটা এখনই রুদ্ধকে জানাতে হবে।তাই সেহরীশ তৎক্ষনাৎ রুদ্ধকে ফোন দিলো।রুদ্ধ রিসিভ করতেই আতংকিত কন্ঠে বলল,’জানো কি হয়েছে?’
‘কি হয়েছে?’রুদ্ধ কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করলো।
‘তোমার বাবাকে আমার চাচা মানা করে দিয়েছে।’
‘কেনো?’কিছুটা বিচলিত শোনালো রুদ্ধ’র কন্ঠ।
সেহরীশ নিজের আহাম্মকির কথা বলল।সবশুনে রুদ্ধ হতাশ কন্ঠে বলল,’এবার কিভাবে মানাবে মানও।আমি কিছু জানি না।’
‘এভাবে বলছো কেনো?’
‘হ্যাঁ তো কি করবো এখন!ওনারা তো আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে বসে আছে।’
‘একটু ভাবো না রুদ্ধ।দেখো না কোনো আইডিয়া আসে কি না।’
‘আচ্ছা দেখছি।’
তারপর দু’জনে আমি ভাবলো সেহরীশ ওর চাচা চাচির কাছে ওদের সম্পর্কের কথা বলবে আর রুদ্ধ’র সম্পর্কে বুঝিয়ে বুলবে।তাহলে হয়তো বুঝতে পারেন ওনারা।প্ল্যান মতো তাই করা হলো।রাতের খাবারের পর সেহরীশ আমতা আমতা করে চাচাকে বলল,’পাপা আমি তোমাকে কিছু বলবো।’
‘হ্যাঁ বল।’
‘আসলে মানে….’
‘কি বলবি বলে ফেল।’
‘ইয়ে মানে..আমি…’
‘সেহরীশ ভয় পাচ্ছিস কেনো মা?বলে ফেল।প্রমিস বকবো না।’
এবার একটু সাহস নিয়ে সেহরীশ বলল,’পাপা আমি আর রুদ্ধ দুজন দুজনকে ভালোবাসি।আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।’
কথাটা একটানে বলে ফেললো সেহরীশ।সেহরীশে কথা শুনে রেজাউল হক কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন আর সেহরীশ ওনার সামনে দাড়িয়ে কাচুমাচু করছিলো।কিছুক্ষণ পর উনি মুখ খুলে বললেন,’কিন্তু ও তোর উপযুক্ত না।তুই ই তো বলেছিস ওর চরিত্র ভালো না।অনেকগুলো প্রেম করে।ভার্সিটিতে র্যাগ দেয়।’
‘পাপা এগুলো ও আগে করতো কিন্তু এখন করে না।একটা ভালো চাকরীও হয়েছে ওর।’
‘আচ্ছা তুই ওকে কাল আসতে বল।আমি ওর সাথে কথা বলবো।কথা বলে যদি মনে হয় ও তোর যোগ্য তাহলে ভেবে দেখা যাবে।’
‘আচ্ছা পাপা।’
তারপর সেহরীশ নিজের রুমে গিয়ে রুদ্ধকে ফোন দিয়ে সব বলল।রুদ্ধ হাসতে হাসতে বলল,’সমস্যা নেই।উনি আমাকে পছন্দ করবেন।এতো চাপ নিও না।’
‘আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে খুব।’
‘টেনশন করলে শরীর খারাপ করবে সেহের।টেনশন করিও না।ভালো কিছুই হবে।ইনশাআল্লাহ!’
‘হ্যাঁ।ইনশাআল্লাহ!’
————–
পরেরদিন সন্ধ্যায় রুদ্ধ সেহরীশদের বাসায় এলো।সেহরীশ ওকে বসার ঘরে নিয়ে গেলো সেখানে চাচা,চাচি আছে।রুদ্ধ ওনাদের মুখোমুখি একটা সোফায় বসলো।সেহরীশও চেয়েছিলো ইন্টারভিউতে থাকতে কিন্তু রেজাউল হক বললেন,’সেহরীশ যা তো নাস্তা নিয়ে আয়।’
চাচার আদেশ মেনে রুদ্ধকে ইশারায় কিছু একটা বলে সেহরীশ চলে গেলো।
রেজাউল হক নিজেই প্রথমে বললেন,’কেমন আছো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনারা?’
‘আমারও ভালো আছি।তোমার সম্পর্কে কিছু বলো।’
রুদ্ধ একটু সৌজন্যমূলক হেসে বলল,’নাম রুদ্ধ শেখ।মা নেই।বাবা রিটায়ার্ড।আমি একমাত্র ছেলে ওনাদের।মাস্টার্স শেষ করে এখন চাকরীতে আছি।’
‘বুঝলাম।কিন্তু তোমার নামে কয়েকটা ব্যাড রেকর্ড আছে।’
‘হ্যাঁ জানি।আগে এমন ছিলাম না।আমার রিলেশন ব্রেকাপ হওয়ায় ওমন হয়ে গিয়েছিলাম।তারপর সেহেরের সহযোগীতায় এখন ওসব থেকে দূরে আছি।ইনশাআল্লাহ আর কখনো জড়াবো না।আপনাদের অনুমতি থাকলে আমি আপনাদের মেয়ের সাথে বাকিটা জীবন স্বাভাবিকভাবে কাটাতে চাই।’
রুদ্ধ’র এমন সরল স্বীকারোক্তি পেয়ে সেহরীশের চাচা চাচির মনে হলো না ছেলেটা খারাপ।তবুও আরো কিছু খোঁজ খবর নিয়ে তারপর আগাবে।
সেদিনের মতো আলোচনা সেখানেই শেষ হয়েছিলো।তারপর রুদ্ধ আর ওনার একাসাথে নাস্তা করেছে।রেজাউল হক রুদ্ধ’র কাছ থেকে ওর বাবার নাম্বারটা নিলো।
———–
এরপর তিনদিন কেটে যায় রেজাউল হক এখনো কিছু বলেন নি।এদিকে রুদ্ধ,সেহরীশ দুজনেই টেনশনে আছে।
হঠাৎ আজকে সন্ধ্যায় সেহরীশের চাচি রুমে এসে বলল,’সেহের তোকে দেখতে আসবে আজকে।একটু রেডি হয়ে নে তো!’
সেহরীশ বিষ্ময় নিয়ে বলল,’কি বলছো?তুমি জানো না রুদ্ধ’র কথা।’
‘হ্যাঁ কিন্তু ওরা শুধু তোকে দেখতে এসেছে।দেখতে এলেই তো বিয়ে হয় না।’
‘বিয়ে না হলে দেখতে আসবে কেনো?আমি যাবো না।’
‘শোন মনা জিদ করিস না।ওরা আমাদের আত্মীয়!’
সেহরীশ মুখ ভার করে রেডি হলো আর রুদ্ধকে টেক্সট করলো।তারপর পাত্র পক্ষের সামনে যেতেই ওর মুখ হা হয়ে গেলো।রুদ্ধ ওর বন্ধুরা আর ওর বাবা বসে আছে।রুদ্ধ’র মুখে হাসি।ও সেহরীশকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।এবার পুরো কাহিনিটা সেহরীশ ধরতে পারলো।এসব প্ল্যান ছিলো।সবাই এর সাথে জড়িত।অথচা কাল রাতে রুদ্ধ এমন করছিলো যেনো সে চিন্তায় মরে যাচ্ছে!এর ওর সাথে নিজের চাচা চাচিও যুক্ত আছে।এই দুঃখ এখন কাকে বলবে সেহরীশ!
সেদিন ওদের বাগদান হয়ে গিয়েছিলো।সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো সেহরীশের ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষার পর বিয়ে হবে।
————-
সকাল থেকেই বাড়িতে হইচই।বিয়ে বাড়ি বলে কথা!কাল গায়ে হলুদ ছিলো।আর আজ বিয়ে।সেহরীশকে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিচ্ছে।একটু পরই বরযাত্রী আসবে।আফসানা হক বারবার এসে সেহরীশকে দেখে যাচ্ছেন।ওনার খুব খারাপ লাগছে।খুব আদেরর ছিলো সেহরীশ।কিন্তু বিয়ে তো হবেই।
বরযাত্রী চলে এসেছে।সেহরীশ আর রুদ্ধ কে একসাথে বসানো হলো।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।বিয়ে পড়ানো শেষে এবার খাবার পালা।বরযাত্রীরা খেতে বসলো।আর এদিকে রুদ্ধ আর সেহরীশ একসাথে বসে ফিসফিস করে কথা বলছে।কি বলছে এটা ওরাই জানে!
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যেই চোখ পড়লো একটা মেয়ের দিকে।রুদ্ধ একটু বিষ্মিত হলো!এটা তো মিথি।সেহরীশ রুদ্ধ’র দৃষ্টি বরাবর তাকাতেই মিথিকে দেখলো।সেহরীশ মিথিকে চেনে।রুদ্ধ’ই দেখিয়েছিলো।ওর বিষয়ে সবকিছুই জানে কিন্তু আজকে ও এখনে কেনো?সেহরীশ রুদ্ধ’র হাতে হাত রেখে বলল,’রুদ্ধ,মিথিকে ডাকবো?কথা বলবে?’
রুদ্ধ চোয়াল শক্ত করে বলল,’নাহ!আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই না।ওর সাথে আমার সব কথা শেষ।এখন তুমিই আমার ভালোবাসা আর জীবনসঙ্গী।ও কেউ না আমার।সম্পূর্ণ অপরিচিত!’
এগুলে বলে সামনে তাকাতেই দেখলো মিথি ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।রুদ্ধ’র সামনে দাড়িয়ে বলল,’কেমন আছো রুদ্ধ?’
‘এক্সকিউজ মি?কে আপনি?আর তুমি করে বলছেন কেনো?অপরিচিত ব্যাক্তিকে তুমি করে বলাটা কোন ম্যানার্স?’
রুদ্ধ হঠাৎ এমন আক্রমণাত্মক কথা শুনে মিথি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’সরি।আমি দাওয়াতে এসেছি এখানে।নতুন বর বউ দেখতে এসেছি।কেমন আছেন আপনারা?’
রুদ্ধ কিছু বলল না।তবে সেহরীশ বলল,’আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?’
‘এইতো আছি কোনোরকম।আপনাদের জন্য শুভকামনা।নতুন জীবনের পথচলা শুভ হোক।’এটা বলেই সৌজন্য হেসে মিথি চলে গেলো।কিন্তু মিথি যাওয়ার পর রুদ্ধ’র মনে একটু খচখচানি হলো।মিথি কি ভালো নেই?হয়তো নেই!হয়তো আছে!তবে রুদ্ধ’র সেসব জানার আগ্রহ নেই।
যেতে যেতে শেষবারের মতো একবার রুদ্ধকে দেখে মিথি চলে গেলো।নিজেকে খুব অভাগী মনে হচ্ছে।মিথির বর কিছুদিন আগেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে কারণ মিথি কখনো মা হতে পারবে না।মিথির অনেক কান্নার পরও দ্বিতীয় বিয়ে আটকাতে পারে নি।মিথির বাবা মা চেয়েছিলো মিথি কে নিয়ে আসবে কিন্তু মিথিই আসতে চায় নি সে সতীনের সাথেই ঘর করবে এবং সে তার পরিণতি মেনে নিয়েছে।
‘যার যার কর্মফল সে ভোগ করবেই।’
সমাপ্ত..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)
Mithi r moto meyeder sathe amon howai uchit. Jara real love bojhe na. Writer, khub sundor likhecho. Thank you so much for the story.