#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৫
লিখা- Sidratul Muntaz
উষ্ণতা রান্নাঘরে সিংকের উপর সবজি রেখে ছুড়ি দিয়ে কাঁটছে। চুলার মৃদু আঁচে তার মুখটা গোলাপি হয়ে উঠেছে। শাড়ি পরে কাজ করতে বরাবরই অসুবিধা হয় তার। শরীরে ঘাম দিয়েছে। এমন সময় পেছন থেকে কেউ এসে শক্ত করে কোমড়টা জড়িয়ে ধরল। উষ্ণতা ধাক্কায় খানিকটা সামনে ঝুঁকে পড়ল।
” কে?”
তৃষাণ উষ্ণতার ঘাঁড়ে নাক ডুবিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল। উষ্ণতা জড়োসড়ো হয়ে বলল,” রান্নাঘরে এসব কি? প্লিজ যাও। কেউ চলে আসলে?”
” আসুক। আমি কি কাউকে ভয় পাই?”
” ইশশ! এলেন আমার সাহসী বীরপুরুষ। সরো এখান থেকে। কেউ দেখবে। ”
তৃষাণ সরলো না। আরও ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়ালো। উষ্ণতা রাগান্বিত গলায় বলল,” ধ্যাত, কত কাজ বাকি পড়ে আছে। আর তুমি কি ঢং শুরু করেছো। ছাড়ো নাহলে…”
” নাহলে কি করবে?”
” এই গাজরের মতো তোমাকেও কুচি কুচি করে কাটবো।”
তৃষাণ কাতর গলায় বলল,” কাটো না প্লিজ, কুচি কুচি করে কাটো। কিন্তু ছুড়ি দিয়ে না। আমাকে কুচি কুচি করার জন্য এটাই যথেষ্ট।”
তৃষাণ উষ্ণতার ঠোঁট স্পর্শ করল।
” এহেম, এহেম।” উষসী শব্দ করল ক্ষীণ গলায়। তৃষাণ প্রায় ছিটকে সরে গেল। উষ্ণতার চেহারা অস্বস্তিতে কাঁচুমাচু হয়ে গেল।
” কিরে তুই?”
” আপু… তুমিই না বলেছিলে আজ ছুটির দিন আছে? আমরা আজ শপিং-এ যাবো? ”
” ও হ্যাঁ, অনু ঘুম থেকে উঠুক তারপর ওকে রান্নাঘরের কাজ বুঝিয়ে তুই আর আমি বের হবো।”
” ঠিকাছে।”
উষসী লজ্জায় দ্রুত সরে এলো। তৃষাণ রান্নাঘরে আছে জানলে তো সে আসতোই না। ছি, কি বিশ্রী একটা ব্যাপার হয়ে গেল। কিন্তু উষ্ণতা আপু হঠাৎ এই সকাল সকাল উঠে এতো রান্নাবান্না করছে কেন? বেডরুমে এসে বসতেই তৃষ্ণা তার গাঁয়ের উপর এক বোতল জল ঢেলে দিল। ঠান্ডায় কেঁপে উঠল উষসী। ধমকে বলল,” কিরে বান্দর?এটা কি করলি তুই?”
তৃষ্ণা আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে বলল,”গোসল করিয়ে দিলাম৷ তোমাকে আজকে দেখতে আসবে না? সেইজন্য।”
” দেখতে আসবে মানে? কে দেখতে আসবে?”
তৃষ্ণা পানির বোতলটা নিজের মাথায় উঠিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে নাচতে নাচতে বলল,” মানুষ! ”
উষসী তৃষ্ণার পশ্চাৎদেশে থাপ্পড় দিয়ে বলল,” ওই বান্দর, আমি কি তোর মতো চিড়িয়াখানার বান্দর যে আমাকে মানুষ দেখতে আসবে?”
তৃষ্ণা জবাব না দিয়ে জিভ টেনে ভেংচি কাটল। তারপর দৌড়ে চলে গেল। দিন দিন ছেলেটা এতো অসভ্য হচ্ছে! উষসী ঠিক করেছে একে কোনোদিন বাঘে পেলে আচ্ছামতো পিটুনি দিবে। ঠিক এমন সময় উষ্ণতা ঘরে প্রবেশ করল,” রেডি হয়েছিস? চল যাই। ”
উষসী দেখল উষ্ণতা খুব সুন্দর করে শাড়ি পরেছে। গোসলও করেছে সকাল-সকাল। সাজ-গোজের কোনো কমতি নেই। উষসী প্রশ্ন করল,” আজকে কি কেউ আসবে আপু?”
” না তো, কে আসবে? তোর সাথে শপিং-এ যাবো না? সেজন্য সেজেছি৷ শোন, আজকে গাড়ি নিবো না৷ একটু রিকশায় চড়তে ইচ্ছে করছে। কতদিন রিকশায় ঘোরা হয় না।”
” ঠিক বলেছো৷ দাঁড়াও আমি রেডি হয়ে আসছি।”
দুইবোন একসাথে বের হলো। রিকশায় করে তারা চলে গেল বসুন্ধরা। আজ অনেক শপিং হবে। উষসী জানে না কি উপলক্ষ্যে এই শপিং! তবে তার শপিং করতে ভীষণ ভালো লাগে। সে জীবনে বেশিকিছু চায় না। শুধু চায় সপ্তাহে অন্তত একবার শপিং করতে। যে মাসে শপিং হয় না সেই মাসে উষসীর মন খুব খারাপ থাকে। আর উষ্ণতা হয়েছে একদম উষসীর বিপরীত। সে যত পারে তত কম শপিং করে। মেয়েদের অনেক শখ-আহ্লাদ থাকে। কিন্তু উষ্ণতার এসব কিছু নেই। সাজগোজের ব্যাপারে বিলাসী হলো উষসী। তার আলাদা একটা সাজঘর আছে। সেখানে মেকাপ থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্র মার্জিতভাবে সাজানো থাকে সবসময়। এমন কোনো সাজের জিনিস নেই যা উষসীর কাছে পাওয়া যাবে না। উষ্ণতা মাঝে মাঝে বলে, তাকে নাকি বিয়ে দিতে হবে রাজার ছেলের সাথে। নয়তো তার এতো এতো শখ-আহ্লাদ তার স্বামী মেটাতে পারবে না।
আজকে শপিং করতে গিয়ে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল। উষসী আর উষ্ণতা শাড়ির দোকানে ঢুকেছে। কোথা থেকে একজন ভদ্রমহিলা এসে উষ্ণতার কাঁধে হাত রেখে পরম স্নেহের সাথে বললেন,” আরে উষ্ণতা না তুমি? কেমন আছো মা? আমাকে চিনতে পেরেছো? হায় আল্লাহ, কতবছর পর দেখা!”
উষ্ণতা আর উষসী দু’জনেই ভদ্রমহিলার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। ভদ্রমহিলা বেশ আন্তরিকভাবে হাসলেন। দেখতে খুব বড়লোক মনে হচ্ছে। ভীষণ স্টাইলিশ। এই বয়সেও চুলে কালার করেছেন। হাতাকা’টা ব্লাউজ পরেছেন। দূর থেকে দেখলে সাজ-পোশাকের কারণে যে কেউ তাকে অহংকারী ভাবতো। কিন্তু কথা বলার পর মনে হচ্ছে তিনি খুবই অমায়িক মানুষ।
উষ্ণতা ইতস্তত করে বলল,” স্যরি… আমি মনে হয় আপনাকে চিনলাম না।”
মিসেস শিমলা চোখ বড় তাকালেন,” আরে কি বলো? আমি তোমাকে দেখেই চিনে ফেললাম আর তুমি চিনতে পারছো না? আমি ইয়ামিনের মা। তোমার স্টুডেন্ট ছিল যে ইয়ামিন! নয়া পল্টনে তুমি ওকে পড়াতে আসতে। তখন কত ছোট ছিলে। আর এখন কতবড় হয়ে গেছো মাশআল্লাহ!”
উষ্ণতা কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে উষসীর চোখমুখ ঝলমলিয়ে উঠেছে। সে আনন্দিত কণ্ঠে বলল,” শিমলা আন্টি, আপনি?”
সে উদ্ভট একটা কান্ড করে ফেলল। শিমলাকে কদমভুসি করল। উষ্ণতা এই অবস্থা দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেল। সে এখনও ভদ্রমহিলাকে চিনেনি। তাহলে উষসী কিভাবে চিনল? শিমলা প্রীত কণ্ঠে বলল,” আরে.. এটা তোমার পিচ্চি বোনটা না? সেই এইটুকু দেখেছিলাম ওকে। এখন কত বড় হয়ে গেছে। তোমার চেয়েও সুন্দরী হয়েছে। কেমন আছো মা?”
উষসী হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলল,” ভালো আন্টি। আপনি কেমন আছেন?”
” খুব ভালো আছি। তোমাদের সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগছে। আমার বাসায় চলো না।”
উষ্ণতা বলল,” আরেকদিন যাবো। আজকে আমাদের একটু তাড়া আছে।”
শিমলা মুখ মলিন করে বললেন,” তুমি মনে হয় আমাকে এখনও চিনতে পারোনি।”
উষ্ণতার দারুণ অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। সে কি বলবে খুঁজে পেল না। উষসী মিসেস শিমলার হাত ধরে একটু দূরে গিয়ে বলল,” আসলে আন্টি, আপু আপনাকে চিনবে না। ছোটবেলায় আপুর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। তারপর থেকে অনেক কিছুই সে ভুলে যায়।”
মিসেস শিমলা দুঃখিত কণ্ঠে বললেন,” হ্যাঁ মনে আছে। আমি এই বিষয়টাই ভাবছিলাম। ইয়ামিন বলেছিল আমাকে এক্সিডেন্টের ব্যাপারটা। আহারে… এখনও সুস্থ হয়নি তাই না?”
” না আন্টি। আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ৷ আমার আপনাকে খুব মনে আছে। আপনাদের ম্যারেজ এনিভার্সেরীতে যে গিয়েছিলাম আমরা। আমি তখন এতো ছোট যে একা হাতে খেতেই পারছিলাম না৷ আপনি আমাকে খাইয়ে দিয়েছিলেন। মনে আছে?”
মিসেস শিমলা মিষ্টি করে হেসে উষসীর মাথায় হাত রেখে বললেন,” কেন মনে থাকবে না? খুব কিউট ছিলে তুমি। বাসায় এসো মা, প্লিজ?”
” নিশ্চয়ই আসবো আন্টি। আপনারা কি সেই আগের ঠিকানাতেই আছেন?”
” হ্যাঁ অবশ্যই। কিন্তু এখন ওখানের অনেককিছু বদলে গেছে। তুমি চিনবে না৷ তাই এড্রেস রেখে দাও।”
শিমলা তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে উষসীর হাতে দিলেন। উষসী খুশি হয়ে কার্ডটা নিল৷ প্রচন্ড উত্তেজনায় তার হাত কাঁপছে। ইচ্ছে করছে এখনি মিসেস শিমলার সঙ্গে তার বাড়িতে চলে যেতে। কিন্তু ইয়ামিন বাংলাদেশে নেই৷ গেলেও দেখা হবে না। উষসী ভদ্রতা করে বলল,” আপনার হাতে দেখি অনেক ব্যাগ আন্টি। এতোকিছু নিয়ে হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে না? দিন আমি হেল্প করি।”
” আরে থাক, থাক, কোনো অসুবিধা নেই।”
” প্লিজ আন্টি। নিষেধ করবেন না।”
উষসী বিশাল বড় বড় দু’টি ব্যাগ হাতে নিল। যদিও ব্যাগের ওজন তার নিজের ওজনের থেকেও বেশি বলে বোধ হলো। মনে হচ্ছিল সে পড়েই যাবে। কিন্তু ক্রাশের মা বলে কথা! একটু কষ্ট তো করাই যায়। মিসেস শিমলা প্রশ্ন করলেন,” তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো? একটা বরং আমাকে দাও।”
” লাগবে না আন্টি। চলুন যাই। গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।”
” হাউ সুইট!”
উষসী মিসেস শিমলার সাথে একদম সড়কের মোড়ে গাড়ি পর্যন্ত গেল। তার সাহায্য করার মনোভাব দেখে মিসেস শিমলা খুবই মুগ্ধ হলেন। কণ্ঠে সন্তুষ্টি ঢেলে বললেন,” তুমি কিন্তু অবশ্যই একদিন আমার বাড়িতে আসবে। মনে থাকবে?”
উষসী মনে মনে বলল,” সারাজীবনের জন্যই তো আপনার বাড়ি চলে আসতে চাই আন্টি। দোয়া করবেন।”
মুখে বলল,” জ্বী নিশ্চয়ই আসব।”
উষসী ফিরে আসার পর উষ্ণতা বিচলিত গলায় বলল,” কই ছিলি এতোক্ষণ?”
উষসীর মুখে তখন লাজুক হাসি। সে মিসেস শিমলার দেওয়া কার্ডের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ক্রাশের বাড়ির ঠিকানা এখন তার হাতের মুঠোয়। ইশ, ক্রাশটা যে কবে বাংলাদেশে আসবে! উষ্ণতা উষসীর মুখের কাছে চুটকি বাজিয়ে বলল,” কিরে, সমস্যা কি?”
” কিছু না আপু। চলো বাড়ি যাই?”
উষ্ণতা চোখ বড় করে বলল,” মানে? তুই শপিং রেখে বাড়ি যেতে চাইছিস? সিরিয়াসলি? ওই ভদ্রমহিলা তোকে কি এমন জাদু করল?”
” ভদ্রমহিলা জাদু করেনি। করেছে তার ছেলে।” উষসী কথাটা ফিসফিস করে বলল। উষ্ণতা শুনতে পেল না। ভ্রু কুচকালো, ” মানে?”
” মানে কিছু না। এখন আর শপিং করতে ইচ্ছে করছে না। চলো বাড়ি যাই।”
তারা বাড়ি ফেরার একটু পরেই অনুপমা হাতে শাড়ির প্যাকেট নিয়ে এসে উষসীকে বলল,” জলদি এই শাড়িটা পরে নাও তো উষু।”
” হঠাৎ শাড়ি কেন পরব? এটা তো উষ্ণতা আপু নিজের জন্য কিনেছে।”
অনুপমা হেসে বলল,” না, তোমার জন্যই কিনেছে। শাড়ির কালারটা অনেক সুন্দর। তোমাকে খুব ভালো মানাবে। অবশ্য সুন্দরীদের সব রঙেই মানায়। এসো পরিয়ে দেই।”
” আমি তো শাড়ি পরি না। উষ্ণতা আপু আমার জন্য হঠাৎ শাড়ি কেন কিনবে?আমার কি বিয়ে?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলল,” অনেকটা সেরকমই।”
উষসী রাগী দৃষ্টিতে তাকাল,” ধূর, ঢং করো না তো!”
” আমি সত্যি বলছি,আজকে যে তোমাকে দেখতে আসবে এটা জানতে না তুমি?”
উষসীর চেহারাটা কেমন রঙহীন আর চুপসানো হয়ে গেল৷ ভারী কণ্ঠে বলল,” মানে?”
অনুপমার মুখের হাসিটাও মিলিয়ে গেল। তার মানে উষসী কিছুই জানে না। উষ্ণতা ভাবী কি তাহলে উষসীকে কিছু বলেনি? কি সর্বনাশ!
উষসী থমথমে কণ্ঠে বলল,” এগুলো মায়ের কাজ তাই না?”
” না, যুঁথি আন্টি এই ব্যাপারে কিছুই জানে না৷ তোমার বিয়ের সম্বন্ধ এনেছে তৃষাণ ভাই।”
উষসীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে চিৎকার করে বলল,” তৃষাণ ভাইয়া আমাকে না জিজ্ঞেস করে এই কাজ কিভাবে করল?”
ধাক্কা মেরে শাড়ির প্যাকেট ছুঁড়ে ফেলল উষসী। অনুপমা ভয়ে কি করবে বুঝতে পারল না। কাঁপা কণ্ঠে শুধু বলল,” উষুমনি প্লিজ আমার কথা শোনো। লক্ষী না তুমি?”
” সরো আমার সামনে থেকে! আমি কোত্থাও যাবো না। কারো সামনে না।”
উষসী হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করেছে। উষ্ণতা ছুটে এলো। অনুপমা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলল,” ভাবী, এখন কি করবো?”
” ও কাঁদছে কেন? এটা কি কাঁদার মতো কোনো ব্যাপার?”
উষ্ণতা এসে উষসীর মাথায় হাত রাখল,” এই পাগলী, উঠ। দেখতে আসলেই কারো বিয়ে হয়ে যায় না। তোর পছন্দ-অপছন্দ না শুনেই কি আমরা বিয়ে দিয়ে দিব? তুই শুধু সামনে গিয়ে একটু বসবি। ছেলের সাথে দেখা করবি। যদি ভালো না লাগে তাহলেই রিজেক্ট। ওকে?”
উষসী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,” যার সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই তার সামনে আমি শাড়ি পরে কেন বসবো? কিছুতেই যাবো না আমি। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আরেকজনের সামনে সেজেগুজে বসে থাকতে পারবো না। আমি মানুষ। পুতুল না কোনো।”
” আচ্ছা বুঝেছি, তুই পুতুল না,মানুষ। কিন্তু এখন তো ওরা বাড়ি চলে এসেছে উষু। এখন তুই না গেলে ব্যাপারটা কেমন দেখায় বল? তোর তৃষাণ ভাইয়ার মান-সম্মানের প্রশ্ন।”
” তার মান-সম্মান ধূলোয় মিশে যাক। সে আমাকে জিজ্ঞেস না করে ওদের এনেছে কেন?”
এর মাঝেই তৃষাণ প্রবেশ করল। তার চোখমুখ শক্ত। শাড়ির প্যাকেটটা তুলতে তুলতে নির্লিপ্ত গলায় বলল,” দেরি হয়ে যাচ্ছে উষুমনি৷ যা বলা হচ্ছে দ্রুত করো।”
উষসী কড়া দৃষ্টিতে তাকালো। যার অর্থ সে কিছুতেই শাড়ি পরবে না। তৃষাণ ঠান্ডা গলায় বলল,” তোমরা যাও। আমি ওর সাথে কথা বলছি।”
উষ্ণতা আর অনুপমা নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল। তৃষাণ দরজাটা বন্ধ করে উষসীর পাশে বসল। উষসী সাথে সাথে দুই কদম সরে গেল।
তৃষাণ মৃদু হাসল,” মনে আছে ট্যুরে যাওয়ার ব্যাপারে কি শর্ত রেখেছিলাম? আমি যা বলব তাই শুনতে হবে। তাহলে এখন শোনো আমার কথা। লক্ষীমেয়ের মতো শাড়িটা পরে তৈরী হয়ে যাও। আমাকে যেন আর বলতে না হয়।”
তৃষাণ কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়াল। উষসী জেদী গলায় বলল,” মরে গেলেও শাড়ি পরবো না আমি। আমাকে কেউ ওদের সামনে নিয়ে যেতে পারবে না।”
তৃষাণ ফিরে তাকালো উষসীর দিকে। তারপর হঠাৎ এমন জোরে একটা ধমক দিল যে উষসী প্রাণটা হাত নিয়ে দ্রুত শাড়ির প্যাকেট বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,” আমি আসছি।”
তৃষাণ বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই উষসী শাড়ি পরে বের হয়ে এলো। তার মুখে কোনো প্রসাধন নেই। শুধু ফেইস ক্লিনার দিয়ে মুখ ধুঁয়েছে। তাতেই তাকে এতো সুন্দর লাগছে! উষ্ণতা আর অনুপমা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কেউ ভাবতেও পারেনি উষসীকে এতো সহজে রাজি করানো যাবে৷ তৃষাণ দরজা বন্ধ করে কি এমন বলল যে উষসী একদম ভদ্র মেয়ের মতো শাড়ি পরে তৈরী হয়ে গেল!
চলবে