#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৩
Sidratul Muntaz
(বর্তমান)
আয়েশা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেকক্ষণ ধরে। উষসী পুরনো ম্যাগাজিন ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ বলল,” আয়েশা, এখনও যাওনি তুমি? আমি একবার বলেছি খাবো না৷ এর মানে কেউ খাওয়াতে পারবে না। হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। নিজের কাজে যাও।”
অকপটে কথা শেষ করে উষসী ম্যাগাজিনে মনোযোগ দিল। তার অস্থির লাগছে। অস্থিরতা কমাতে সে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে চায়। আগে প্রচুর রূপচর্চা করার অভ্যাস ছিল। ইদানীং কিছুই হয় না। তার নিখুঁত ফরসা চেহারায় দুইটা ব্রণ উঠে গেছে। উষসী একবার পুরনো ম্যাগাজিনে ব্রণ অপসারণ করার পদ্ধতি দেখেছিল। এখন সেই ম্যাগাজিনটিই খুঁজছে সে। আবার রূপচর্চা শুরু করবে। নিজেকে ভালোবাসবে। সারাক্ষণ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। অন্যকারো করুণার অপেক্ষায় থেকে জীবন নষ্ট করবে না।
আয়েশা করুণ স্বরে বলল,” খেয়ে নিন, ম্যাডাম। আপনি না খেলে স্যার রাগ করবেন।”
” তোমার স্যার কিভাবে জানবেন আমি খেয়েছি কি খাইনি? যদি তুমি না বলো? তাছাড়া এই মুহূর্তে আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। যখন ইচ্ছে করবে তখন নিশ্চয়ই খাবো।”
” কিন্তু স্যার যদি ফোন করেন? আমি স্যারকে মিথ্যা বলতে পারবো না।”
” সেটা তোমার সমস্যা!”
আয়েশা হার মানল। তার ম্যাডাম ভীষণ জেদী। একবার যেটা বলবেন সেটা করেই ছাড়বেন। কিন্তু ম্যাডামের চেয়েও দ্বিগুণ জেদী হলেন স্যার। তিনিও যা বলবেন তাই করবেন। এই দুই জেদী মানুষের মাঝখানে পিষ্ট হয়ে আয়েশার অবস্থা নাজেহাল। সে মনে মনে বলল,” আল্লাহ, আমাকে ধৈর্য্য দাও।”
উষসী গাজর, মধু আর টকদই দিয়ে মুখের জন্য একটা ফেইস প্যাক বানালো। দুই টুকরো শসা চোখে লাগিয়ে মুখে প্যাক মেখে বসে রইল। তাকে খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে। কিন্তু উষসী এই সব করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য। সে ইয়ামিনকে বোঝাতে চায় যে সে ভালো আছে। ইয়ামিনের বিরহে ম’রে যাচ্ছে না। এটা যখন ইয়ামিন বুঝবে তখন এমনিই উষসীর গুরুত্ব বাড়বে। উষসী তার মনের ক্ষ’ত আড়াল করে ইয়ামিনের হৃদয়ের ক্ষ’ত গাঢ় করতে চায়।
প্রায় একঘণ্টা পর আয়েশা পুনরায় এলো। দরজায় নক করল। উষসী ভেতর থেকে বলল,”এসো।”
আয়েশা ভেতরে ঢুকে উষসীকে দেখেই বিকট এক চিৎকার দিল। উষসী না হেসে পারল না। চোখ থেকে শসা সরিয়ে প্রশ্ন করল,” ভয় পেয়েছো?”
আয়েশা মৃদু তালে মাথা নেড়ে বলল,” হুম।”
” হাতে করে কি এনেছো?”
” বিরিয়ানি। স্যার বললেন আপনার নাকি পছন্দ!”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল উষসী। আসলেই তার বিরিয়ানি ভীষণ পছন্দ ছিল। কিন্তু এখন বিরিয়ানিও বিরক্ত অসহ্য লাগছে। যেখানে তার জীবনটাই এলাচির মতো সেখানে বিরিয়ানি খাওয়া বিলাসিতা। উষসী শসার টুকরো চোখে গুঁজে বলল,” না, খাবো না। আমি ডায়েটিং এ আছি। বিরিয়ানি আমার জন্য নিষিদ্ধ।”
” তাহলে কি খাবেন ম্যাডাম?”
” আমার খাবার আমি নিজেই তৈরী করবো। তুমি শুধু আমাকে একটা ধারালো ছু-রি এনে দাও। তাহলেই হবে।”
আয়েশা কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল। উষসী ঠিক করেছে সে নিজের জন্য ফ্রুট সালাদ বানাবে। তার বেডরুমেই ফ্রীজ আছে। সেই ফ্রীজে ফল, টকদই, জুস সবকিছুই আছে। এজন্যই শুধু ছু-রি চেয়েছে। কিন্তু আয়েশা ব্যাপারটা বুঝল না। সে নিচে গিয়ে দ্রুত ল্যান্ড লাইন থেকে ইয়ামিনকে ফোন করে জানালো,” স্যার, ম্যাডাম আমার কাছে ধারালো ছু-রি চাইছেন।”
ইয়ামিন অফিসের মিটিং-এ ব্যস্ত। আয়েশার কথা শুনে সে মিটিং থেকে বের হয়ে এলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,” ভুল করেও দিও না। আমি এখনি বাসায় আসছি। ত্রিশ মিনিট লাগবে। তুমি সব ছু’রি লুকিয়ে ফেল। আর তোমার ম্যাডামকে পাহারায় রাখো।”
” ওকে স্যার।”
ইয়ামিন গাড়িতে উঠে দ্রুত ড্রাইভিং শুরু করল। তার হাতের আঙুল মৃদু কাঁপছে। চোখেমুখে যেন সে অন্ধকার দেখছে। সকালে উষসী বলেছিল, তাকে ঘর থেকে বের হতে না দিলে সে আত্মহ’ত্যা করবে। ইয়ামিন মনে মনে বলল,” আল্লাহ রক্ষা করো।”
অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আয়েশা ছু’রি নিয়ে এলো না। উষসী মুখ ধুঁয়ে গোসল সেরে নিয়েছে। তার এখন ভীষণ ক্ষিদে পাচ্ছে। প্লেটে ফল, সবজি, সাজিয়ে রেখেছে। সাথে টকদই আর লবণ। সিদ্ধ মাংসও আছে। সব কে’টে একসাথে মিশিয়ে নিলেই সালাদ তৈরী। কিন্তু ছু’রি লাগবে। উষসী ঘর থেকে বের হতে নিলেই ধাক্কা খেল দরজার সাথে। পেছনে কেউ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। উষসী বাইরে তাকাতেই দেখল আয়েশাকে। অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,” আয়েশা, তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে না ছু’রি আনতে বললাম?”
আয়েশা কোনো জবাব দিল না। তার ঠোঁট কাঁপছে। দৃষ্টিতে ভয়। উষসী তাকে উপেক্ষা করে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগল। আয়েশা তড়িঘড়ি করে উষসীর কাছে এসে বলল,”আপনি ঘরে যান ম্যাডাম। আর মাত্র দশমিনিট প্লিজ। স্যার আসছে।”
” স্যার আসছে মানে? তোমার স্যার এই সময় কেন আসবে?”
আয়েশা কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না। উষসী রান্নাঘরে ঢুকে ছু’রি খুঁজতে লাগল। আয়েশা একমনে দোয়া পড়ছে। এই বুঝি কোনো অঘটন ঘটল। উষসী ছু’রি নিয়ে বের হতেই সে খুব জোরে একটা চিৎকার দিল। উষসী অবাক হয়ে তাকাল। মেয়েটার কি হয়েছে? ইয়ামিন ঠিক তখনি বাড়িতে ঢুকল। আয়েশার চিৎকার শুনে সে বায়ুর গতিতে উপরে উঠল। উষসীর হাতে ছু’রি। আয়েশার চেহারা আতঙ্কে নীল। এই দৃশ্য দেখে ইয়ামিন দ্রুত উষসীর হাত থেকে ছু’রি কেড়ে নিল। চোয়াল শক্ত করে ধমকের সুরে বলল,
” ছেলেমানুষীর একটা সীমা থাকা উচিৎ। মৃ’ত্যুই কি সব সমস্যার সমাধান? তুমি এসব করে কি বোঝাতে চাইছো?”
উষসী থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টাও করল। যখনি বুঝতে পারল তখনি তার খুব হাসি পেল। ইয়ামিনের হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে ছুটে আসার ব্যাপারটা আরও মজার। কিন্তু মজা পেলেও সে হাসল না। কঠিন মুখে বলল,” আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা কেন আপনার যে একদম অফিস থেকে ছুটে এসেছেন?”
” তো আসবো না? এখনি তো একটা কেলেংকারী ঘটাতে যাচ্ছিলে।”
উষসী মাথা নেড়ে বলল,” হুম বুঝলাম। আমি সুইসাইড করলে তো আপনার প্রবলেম। পুলিশ এসে আপনাকে ধরবে! এই ভয়েই আমাকে বাঁচাতে এসেছেন তাই না?”
ইয়ামিন তার রাগ দমন করে নিল। ধাতস্থ হয়ে বলল,” আমাকে কি এতো স্বার্থপর মনে হয় তোমার?”
উষসী চোখ ছোট করে হাসল। রহস্যময় উত্তর দিল,” কি জানি!”
ইয়ামিনকে আরও একটু ঘাবড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। সাথে সাথে ইয়ামিনের চেহারা চুপসে গেল ফাটা বেলুনের মতো। এখন ভেতরে গিয়ে মেয়েটা কি করবে কে জানে? যদি ফ্যানের সাথে ওরনা বেঁধে ঝুলে পড়ে? ইয়ামিন জোরে দরজায় করাঘাত শুরু করল।
” উষসী, দরজা খোলো। দেখো এইভাবে টেনশন দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। বেরিয়ে আসো। আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলি,প্লিজ। তুমি যা চাও তাই হবে। হোটেলে থাকতে চাও? আমি নিজে তোমাকে হোটেলে রেখে আসবো। তবুও তুমি দরজা খোলো প্লিজ। উষসী!”
ইয়ামিনের আকুতি-মিনতি চলছেই। উষসী বিছানায় বসে আপেলে কা’মড় দিল। একটি পৈশাচিক আনন্দে তার মনে প্রশান্তি বিরাজ করতে লাগল। ইয়ামিন তাকে নিয়ে ভাবছে, চিন্তা করছে, অস্থির হচ্ছে, এই ব্যাপারগুলোই উষসীর মনকে শান্ত করতে যথেষ্ট।
এক সপ্তাহের জন্য অফিসে যাওয়া বন্ধ করল ইয়ামিন। এখন সে সারাক্ষণ বাড়িতে থাকে। অফিসের প্রায় সব কাজ ল্যাপটপ অথবা মোবাইলে করে। তার প্রধান কাজ উষসীর দিকে নজর রাখা। উষসী বাথরুমে গেলেও সে অস্থির থাকে। এই বুঝি কোনো অঘটন ঘটল। একটু দেরি হলেই চেঁচানো শুরু করে। উষসী ব্যাপারগুলো খুব উপভোগ করছে। ইয়ামিন তার মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন কৌশল বের করে। যেমন আজ সকালেই বলছিল,” চলো কোথাও ঘুরতে যাই।”
উষসী তেরছা দৃষ্টিতে চাইল। ত্যাড়া গলায় বলল,” হঠাৎ ঘুরতে যাবো কেন?”
” এমনিই। কতদিন হলো একসাথে ঘুরতে বের হই না। তাই মনে হলো, কোথাও যাওয়া উচিৎ। ”
” আগে তো আমাকে নিয়ে বের হওয়ার সময়ই ছিল না আপনার। অফিসে নাকি অনেক কাজ? এখন তো অফিসেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। হঠাৎ এতো পরিবর্তন কেন?”
ইয়ামিন কোমল স্বরে বলল,” তুমি আমার স্ত্রী। তোমাকে সময় দেওয়া আমার দায়িত্ব।”
” ও… তো বিয়ের দুইবছর পর আপনার দায়িত্বের কথা মনে পড়ল? ভেরি নাইস অফ ইউ।” উষসী কটাক্ষ করল।
ইয়ামিন মনখারাপ করা গলায় বলল,” প্লিজ উষসী, সব ভুলে আমরা আবার নতুন করে শুরু করি? অন্তত একবার ট্রাই করি?”
” আপনার কি মনে হয়? এতো সহজ সব ভুলে যাওয়া? আচ্ছা আপনি কি এতো বছরেও ভুলতে পেরেছেন উষ্ণতা আপুকে?”
ইয়ামিন নিশ্চুপ হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর বলল,” যাই হোক, এখন আমি শুধু তোমার। এটা মেনে নাও। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
উষসী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। মেনে নেওয়া বুঝি এতোই সহজ! উষ্ণতার প্রসঙ্গ তুললেই ইয়ামিন নিশ্চুপ হয়ে যায় অথবা এড়িয়ে যেতে চায়। চোখেমুখে বিষাদের ছাপ স্পষ্ট হয়। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে সে উষ্ণতাকে এখনও ভোলেনি।যেদিন উষ্ণতার নাম শুনে ইয়ামিন স্বাভাবিক থাকবে এবং তার চেহারার উজ্জ্বলতায় ভাটা পড়বে না সেদিনই উষসী মেনে নিবে যে ইয়ামিন উষ্ণতাকে ভুলতে পেরেছে।
আর যেদিন সে মন থেকে উষসীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাবে, যেভাবে উষ্ণতার দিকে তাকায় সেদিন উষসীও এটা মেনে নিবে যে ইয়ামিন শুধু তার। এর আগে ইয়ামিন হাজার বার, লক্ষ্য বার কিংবা কোটি বার বললেও উষসী মানবে না। কখনোই না।
ছিমছাম একটি রেস্টুরেন্ট। ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত সব খাবার এখানে পাওয়া যায়। কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যায় অপূর্ব দর্শন। লাইট মিউজিক চলছে। কাস্টমারদের অবস্থান খুব দূরে দূরে। বেশ প্রাইভেসী সম্পন্ন আলিশান জায়গা। এতো মনোরম পরিবেশও উষসীর মন গলাতে পারছে না৷ সে মুখ ভার করে নিশ্চুপ বসে আছে। ইয়ামিন মেন্যুবুক তার সামনে দিয়ে বলল,” যা মন চায় অর্ডার করো।”
উষসী অন্যদিকে চেয়ে বলল,” আমার ক্ষিদে নেই। আপনি অর্ডার করুন।”
” কি আশ্চর্য! আমি একা খাবো আর তুমি সামনে বসে দেখবে নাকি?”
উষসী রূঢ় কণ্ঠে বলল,” ঠিকাছে তাহলে আমি উঠে অন্য জায়গায় গিয়ে বসছি। আপনি আরামে খান৷ এমনিতেও আপনার সাথে এভাবে বসে থাকতে আমার অসহ্য লাগছে।”
” আরে….” ইয়ামিন কিছু বলার আগেই উষসী উঠে দূরের একটা টেবিলে চলে গেল। অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে ইয়ামিন আশেপাশে তাকাল। তারপর হতাশ হয়ে মেন্যুকার্ড রেখে দিল। তার আশা ছিল উষসী ফিরে আসবে। কিন্তু সে এলো না। বেশ কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মেয়ে এলো। তারা ইয়ামিনের সাথে সেলফি তুলতে চায়। ইয়ামিন প্রথমে একটু চমকে গেল। বাংলাদেশ অথবা ইন্ডিয়াতে সে পরিচিত মুখ হলেও আমেরিকার মানুষ তাকে তেমন একটা চেনে না। আর চিনলেও খুব বেশি গোণায় ধরে না। তাই হঠাৎ এখানে এমন ফ্যান-ফলোয়ার পেয়ে সে হকচকিয়ে গেছে। মেয়েগুলো ইয়ামিনের সাথে দেখা করতে পেরে খুব এক্সাইটেড। তারা জায়গা খালি পেয়ে ইয়ামিনের সাথে তার টেবিলেই বসে পড়ল। মুহূর্তেই তার চারিপাশে ফ্যানদের একটা বলয় তৈরী হয়ে গেল। দূর থেকে উষসী গালে হাত রেখে এসব দেখছিল।
ইয়ামিন তার ফ্যানদের সাথে অস্বস্তি নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। একবারও পেছনে তাকাচ্ছে না। সে হয়তো ভুলেই গেছে যে উষসী নামের কেউ তার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে এসেছিল। ওয়েটার উষসীর সামনে এসে ইংরেজিতে প্রশ্ন করল,” ম্যাম, আপনি কিছু নিতে চান?”
উষসী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,” এক বোতল রেড ওয়াইন নিয়ে আসুন।”
টি-শার্টের সাথে হাফপ্যান্ট পরা এক বিদেশী ছেলে উষসীর পাশে এসে বসল। খোশমেজাজে বলল,” হাই সুইটহার্ট। ”
উষসী ড্রিংক করছে৷ তার চারিপাশ দুলছে। লোকটি তাকে ‘সুইটহার্ট’ বলে সম্বোধন করতেই সে নড়ে উঠল,” কে আপনি? হু আর ইউ?”
লোকটি স্মিত হেসে বলল,” আমরা সেইম ড্রিংক পান করছি। লেটস চিয়ার্স। ”
উষসী ভাবল ইয়ামিনকে শিক্ষা দেওয়ার এটাই সুযোগ। সে লোকটির সাথে চিয়ার আপ করল। লোকটি আরও ঘনিষ্ট হয়ে বসতে চাইল। অস্বস্তি অনুভব হলেও উষসী কিছু বলল না। হঠাৎ ইয়ামিন পেছনে তাকাল। উষসী তখন লোকটির দিকে চেয়ে বলল,” সো সুইট অফ ইউ৷”
লোকটি এমন কথা শুনে খুশিতে ডগমগ হয়ে তার নিজস্ব ভাষায় বলল,” আপনি আমার সাথে ডান্স করবেন? প্লিজ।”
উষসী কিছু না বুঝেই মাথা নাড়ল,” ইয়েস।”
ছেলেটি উঠে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দিল উষসীর দিকে। ইয়ামিনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উষসী ইচ্ছে করেই ছেলেটির হাত ধরল। ছেলেটি তাকে টেনে নিয়ে গেল স্টেজে। এই অবস্থা দেখে ইয়ামিন টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। সবাইকে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে সে উষসীর কাছে গিয়ে বলল,” হোয়াটস গোয়িং অন? হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই ওয়াইফ?”
ছেলেটি অবাক হয়ে তাকাল,” ইজ শী ইউর ওয়াইফ?”
উষসী সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করল,” একদম না। আমি তো এই লোককে চিনিই না।”
ইয়ামিন চোখ গরম করে তাকাল। উষসী সেসবের তোয়াক্কা না করে ছেলেটির হাত ধরে মিষ্টি হেসে বলল,” লেটস গো হানি।”
ইয়ামিন কঠিন গলায় বলল,” উষসী, তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।”
” আপনি তো আপনার ফ্যানদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন৷ আমার এখানে কি কাজ? প্লিজ, আমাকে আমার মতো ইঞ্জয় করতে দিন।”
” উষসী!” ইয়ামিন ধমক দেওয়ার চেষ্টা করল।
উষসী শুনল না। ছেলেটির সাথে স্টেজে গিয়ে ডান্স শুরু করল। ছেলেটি সুযোগ পেয়ে উষসীর কোমর স্পর্শ করছে, পিঠে হাত রাখছে, হাত ধরছে। এসব দেখে ইয়ামিনের মাথায় র-ক্ত চড়ে গেল। সে সবার সামনে স্টেজে উঠে উষসীর হাত ধরে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামাল। ছেলেটি রাগান্বিত গলায় বলল,” হোয়াটস রং উইদ ইউ ম্যান? লিভ হার!”
” শাট আপ।”
ইয়ামিন ধাক্কা মেরে ছেলেটিকে নিচে ফেলে দিল।পুরো রেস্টুরেন্টে হৈচৈ বেঁধে গেল। ইয়ামিন এই অবস্থায় উষসীকে নিয়ে বের হয়ে এলো। বাইরে আসতেই উষসী চিৎকার করে বলল,” এভানে সিন ক্রিয়েট করলেন কেন?”
” তুমি কি করছিলে? গতকাল এতোবড় একটা বিপদ হতে যাচ্ছিল তাও কি শিক্ষা হয়নি? এখন থেকে তোমার বাড়ির বাইরে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ”
” আমার বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করার আপনি কে?”
” বার-বার মনে করাতে হবে কেন? আই এম ইউর হাজব্যান্ড।”
ইয়ামিন খুব অধিকার নিয়ে কথাটা উচ্চারণ করল। এর আগে এভাবে সে কখনও বলেনি। উষসী চুপ করে গেল। পুরো রাস্তা সে আর একটাও কথা বলল না। বাড়িতে ফেরার পরেও তাদের মধ্যে কথা হলো না। তবে রাতে খুব আশ্চর্য একটি ব্যাপার ঘটল। ইয়ামিন তার বালিশ নিয়ে উষসীর ঘরে চলে এলো। উষসী তখন বাথরুমে ছিল। বের হতেই নিজের বিছানায় ইয়ামিনকে শুয়ে থাকতে দেখে সে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। কিছুটা উচ্চ স্বরেই বলে ফেলল,” আপনি এখানে কি করছেন?”
” ঘুমাবো।” অকপটে উত্তর দিল ইয়ামিন। উষসী একটু কাছে এসে বলল,” এর মানে কি?”
” এতো অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। আমি এখানে ঘুমাতেই পারি।”
” কিন্তু আপনি বলেছিলেন আমাকে ডিভোর্স দেবেন। যে সম্পর্ক দুই বছরেও স্বাভাবিক হয়নি, দুইদিনের জন্য জোর করে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এসব নাটক করার কোনো দরকার নেই।”
” তোমার মনে হচ্ছে আমি নাটক করছি?”
” অবশ্যই করছেন। আপনি এখানে থাকতে পারবেন না।”
” কিন্তু আমি এখানে থাকতে চাই।”
” আমি চাই না।”
ইয়ামিন নীরব দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল। তারপর জেদী কণ্ঠে বলল,” হয় আজরাতে আমি এখানে থাকবো নাহলে স্ট্রিট বেঞ্চে। একেবারে রাস্তায়। এবার তুমিই সিদ্ধান্ত নাও। কি করবো আমি?”
উষসী বেপরোয়া কণ্ঠে জানাল,” আপনি রাস্তায় যান কি জাহান্নামে। আই ডোন্ট কেয়ার।”
তার এহেন উত্তর শুনে ইয়ামিনের মাথা গরম হয়ে গেল। রাগ আর অভিমান নিয়ে সত্যি সত্যি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল সে।
চলবে