আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে পর্ব-২৭+২৮

0
687

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(27)

ভরা পূর্ণিমার রাতে নিটোল চাঁদ তার ঝলমলে আলোর পশলা নিয়ে দূর আকাশে পাখা মেলেছে। চাদনি রাত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনে বিচিত্র ভাব ও উদ্দাম আনন্দের সঞ্চার করে। পূর্ণিমা নিশিতে নির্জন অরণ্যের আলো-ছায়া জড়ানাে পথে ঘুরে বেড়ানাে, আহ! ভাবতেই মনটা কেমন অনির্বচনীয় আনন্দে রােমাঞ্চিত হয় । কবির ভাষায়—

“শান্ত করাে, শান্ত করাে এ ক্ষুব্ধ হৃদয়
হে নিস্তব্ধ পূর্ণিমা যামিনী । অতিশয়
উদ্ভ্রান্ত বাসনা বক্ষে করিছে আঘাত
বারংবার তুমি এসাে সিন্ধু অশ্রুপাত
দগ্ধ বেদনার পরে।”

পূর্ণিমা নিশীথের সৌন্দর্যে অনেকে ব্যস্ত চন্দ্রবিলাশে, আবার কোনো কপোত কপোতী মেতে উঠেছে ভালোবাসার আদিম খেলায়। আবার কেউ হয়তো শিকার হচ্ছে কোনো হিংস্র মানুষরূপী হয়নার দলের। আদাভানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষন আগের কথা ভেবে হেঁসে উঠলো অরুনিকা। মনে মনে পাগল উপাধী দিয়ে ঘুমন্ত আদাভানের লোমশ বুকে অধরের স্পর্শ এঁকে দিলো।

কিছুক্ষন আগে,

“অরু তোমার পা টা কোথায় এদিকে দেখাও তো। দারাও আমি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসি।”

“আরে শুনুন, তেমন কিছু হয়নি আমার। এতো ব্যস্ত হতে হবেনা”

আদাভানের রাগী চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলে ওঠার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারলোনা অরুনিকা। আদাভানও বিনা বাক্য ব্যয়ে এদিক ওদিক খুঁজে কাঙ্খিত জিনিসটা নিয়ে এসে অরুনিকার পায়ের কাছে মেঝেতে বসলো।

“এই এই, কি করছেন আপনি। উঠুন দেখি।”

“নো মোর টক প্রাণপাখি। এমনিতে এতক্ষন পরে ব্যাথার কথা বলার জন্য তোমার শাস্তি বাকি আছে।”

অরুনিকা কিছু বলতে গিয়েও না বলে চুপচাপ পা গুটিয়ে বসে পড়ে।

“এটা কি ধরনের বাচ্ছামি। আমাকে ওষুধ লাগাতে দাও। অনেকটা কেটে গেছে। ইশ কতোটা রক্ত বেরিয়েছে।”

“আমার যা ইচ্ছে হোক, আপনার কিছু করতে হবেনা।”

বেডের একপাশে শুয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে অরুনিকা। আদাভানের দিকে পিছন করে থাকলেও আদাভান বেশ বুঝতে পেরেছে অরুনিকা কান্না করছে। আর কান্না করাটাও স্বাভাবিক। মনে মনে মুচকি হাসলেও মুখে গাম্ভীর্যটা বজায় রেখে অরুনিকাকে কোলে তুলে সোফায় এনে বসিয়ে দেয়।

“একদম নড়াচড়া করবেনা। আমার কাজে যদি একটুও বাঁধা পেয়েছি তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। নিজে তো দারুন ফুর্তিতে ছিলে, তবে আমার উপর রাগ দেখানোর কারণ কি?”

আদাভানের বলা শেষ কথা, “ফুর্তিতে ছিলে” এর মানে কিছুতেই বোধগম্য হলোনা অরুনিকার। ভাবনার মাঝে পায়ে জ্বালা অনুভব হতেই “আহ” করে ওঠে। আদাভানও পরম যত্নে ফু দিয়ে আস্তে আস্তে ক্ষতগুলো পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই উঠে অরুনিকার পাশে বসে আদাভান। এতক্ষন যদি অরুনিকা আদাভানের দিকে তাকিয়ে থাকতো তবে বুঝতে পারতো প্রেমীক হৃদয়ের ব্যাকুলতা। যেভাবে আস্তে আস্তে অয়েন্টমেন্ট লাগাচ্ছিল, মনে হয় নিজেরই ব্যাথা।

আদাভান যতো অরুনিকার কাছে সরে আসছে অরুনিকা ততোই সরে যাচ্ছে। সরতে সরতে সোফার একদম কিনারায় পৌঁছে গেলে অরুনিকাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নেয় আদাভান। একপলক অরুনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ গুঁজে নেয় অরুনিকার ঘাড়ে।

“প্রাণপাখি”

এই কোমল মোহনীয় ডাক কোনকালেই উপেক্ষা করতে পারেনি অরুনিকা। কিন্তু আজ মনের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে সেই ডাক উপেক্ষা করে গেলো।

“আমি বাধ্য ছিলাম প্রাণপাখি।”

“মানে?”

আদাভান এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,

“যেদিন তোমাকে এবাড়িতে রেখে বাড়ী ফিরেছিলাম, বোঝাতে পারবোনা কি অবস্থা হয়েছিলো আমার। আম্মুর কোলে মাথা রেখেও একটুও শান্তি পাইনি আমি। তুমি চলে আসার পর আমি আর কখনও বেডে ঘুমায়নি। প্রথম প্রথম রুমেই থাকতাম না, পুরো রুমটা যেনো আমাকে গিলতে আসতো। তোমাকে ছাড়া সবকিছু প্রাণহীন হয়ে গেছে। আম্মু একদিন দেখে নেয় তাই বাধ্য হয়ে সোফাতে ঘুমাই এখন।”

“তোমাকে ছাড়া এমনিতেও কিছু ভালো লাগছিলোনা, আবার আংকেলের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে নিজের কাছে রাখতেও পারছিলাম না। রাতে তোমাকে কল করার জন্য ফোনটা নিতেই একটা মেসেজের উপর আমার চোখ আঁটকে যায়। সেখানে লেখা ছিল, “অরুনিকাকে সুস্থ দেখতে চাইলে ওর থেকে দূরে সরে যাও। কোনোরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে এর পরিণাম অনেক খারাপ হবে। কারোর প্রাণও যেতে পারে।” এটা দেখার পর অনেক ভয় পেয়ে যাই আমি। আমি কোনোকিছুর মূল্যেই তোমাকে হারাতে পারবোনা। তাই জোর করেই কিছুদিন যোগাযোগ করিনি। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ফোন করবে। তারপর যেদিন তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসো তার আগের দিন রাতে অনেকবার ট্রাই করি আমি তোমার ফোনে, কিন্তু বারবার সুইচ অফ বলে। আমার ফোনের জন্য তোমাকে সত্যি সত্যি কষ্ট দেবে আমি ভাবতেও পারিনি। সেদিন তোমার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে আমি আরও বেশী ভয় পেয়ে গেছিলাম। আর নিশ্চিত হয়েছিলাম যে কেউ এই কাজটা করছে সে আমাদের দুজনকে খুব ভালো করে চেনে।”

সবটা শুনে এক চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আদাভানের বুকে মাথা এলিয়ে দেয় অরুনিকা। আদাভানের শার্টের বোতাম নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে,

“তবে আমি ফুর্তিতে ছিলাম বললেন কেনো?”

“ছিলেই তো।”

অরুনিকা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আদাভান সেদিন বৃষ্টির মাঝের সব কথা খুলে বলে।

“আমার যন্ত্রণায় ভরা হৃদয় যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম, তবে বুঝতে এ হৃদয়ে কতশত ক্ষতর বাস”

আদাভানের চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে দুই নেত্রে অধরের স্পর্শ এঁকে দেয় অরুনিকা। এটাই প্রথম অরুনিকার নিজে থেকে কাছে আসা। আদাভান চমকালেও গভীর ভালোবাসার স্পর্শে দুই হাতে অরুনিকার কোমর আঁকড়ে ধরে। আদাভানের আবদার বুঝতে পেরে অরুনিকা মুচকি হেঁসে এক হাতে আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরে। অপর হাত মাথার পিছনে দিয়ে দুটি অধরের মাঝের দূরত্ব শূন্যে পরিনত করে। আদাভানও ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রেয়সীর প্রেমসুধা পান করতে।

লজ্জায় লাল হয়ে আদাভানের কোল থেকে উঠে দৌড়ে চলে যেতে নিলে, ধরে ফেলে আদাভান। সোফা থেকে উঠে অরুনিকার চুলের মাঝে নাক ঘষে বলে,

“নেশাও হার মেনে যাবে তোমার নেশার কাছে,
মদও নতস্বীকার করবে তোমার মাদকতার কাছে।
বাতাসে এ কি নেশা ছড়ালে প্রেয়সী,
শুধু তোমার নেশায় আমি মাতাল রূপসী।”

অরুনিকাকে সামনে ঘুরিয়ে থুতনি ধরে উঁচু করে দেয় আদাভান। অতিলজ্জায় চোখ তুলে তাকাতেও পারছেনা অরুনিকা।

“এই কাশ্মীরি আপেল, কামড়ে দেবো কিন্তু।” বলেই লাজে রাঙা গালে আলতো করে কামড় বসিয়ে দেয় আদাভান। তারপর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“এতদিনের ভালোবাসা সুদে আসলে আদায় করে নেবো কিন্তু। প্রাণপাখি সহ্য করতে পারবে তো!”

______________

অন্ধকার রুমে হাতে একটা কিউব নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে কিছু একটা চিন্তা করতে ব্যাস্ত এক লোক। তখনই হন্তদন্ত পায়ে কেউ প্রবেশ করতেই রূমের গার্ডগুলো বেরিয়ে যায়।

“আমি বলেছিলাম তোমাকে অন্য কোনো জায়গায় রাখতে, শুনলেনা তো আমার কথা। কেমন আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো দেখলে তো?”

“শান্ত হও তুমি। আমি ইচ্ছে করেই পাহারা কম রেখেছিলাম। আমি জানতাম ওই মেয়ে এত সহজে হার মানবেনা। তাহসানের মেয়ে তো, ছোটো থেকেই অনেক শক্ত। শক্তি দিয়ে ওকে ভাঙা যাবেনা, ওকে ভাঙতে হলে মানষিক ভাবে ভাঙতে হবে। মানসিক ভাবে একবার ভাঙলে আর উঠে দাড়াতে পারবেনা, আর সেটাই হবে আমাদের সুযোগ।”

“কিন্তু আর কতদিন অপেক্ষা করবো আমাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য”

“ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে। জোর করে আদায় করতে গিয়ে একজন মরেছে, একে কোনোভাবে হাতছাড়া করা যাবেনা। নজর রাখ।”

“কেউ কখনও জানবেনা এসবের পেছনে আসল মাষ্টার মাইন্ড কে। আড়ালে থেকে সবাইকে শেষ করে দেবো আমি। আর তোমাকেও ছাড়বোনা আমি। নিজের ছেলে কাব্যর হাতেই মারবো তোমাকে।”

বলেই বিকট ভাবে হেঁসে উঠলেন ভদ্রলোক। ফাঁকা ঘরের মাঝে সেই হাঁসির ঝঙ্কার ভয়ংকর কিছুর আলাপন দিয়ে গেলো।

চলবে?
#Fiza_Siddique

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(28)

শীতের কুয়াশার অবগুন্ঠন সরিয়ে প্রকৃতি হেসে উঠেছে ধীরে , অতি ধীরে । নির্ঝরের স্বপ্ন ভেঙে গাছে গাছে , পত্র-পল্লবে ছড়িয়ে গেছে সে হাসি রঙের রোশনাই মেলে । গাছেদের শীতকাতুরে ঘুমচোখে আলতো চুমুর পরশ দিয়ে দখিনা বাতাস বলে যাবে,
“খোলো খোলো দ্বার, রাখিওনা আর বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে ।”

সকালের কুসুমরঙা আদর গায়ে মেখে আড়মোড়া ভাঙলো অরুনিকা। পরনের আদাভানের শার্টের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে কলারের অংশে নাক ছুঁইয়ে দিলো। লম্বা এক শ্বাস টেনে তৃপ্তিতে দুচোখের পাতা বন্ধ করতেই কেঁপে ওঠে। কোমরের খালি অংশে কারোর আঙ্গুলের বিচরণের ছোঁয়ায় অবাক নয়নে তাকায় পাশে শুয়ে থাকা আদাভানের দিকে। একদম শান্ত বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে থাকা আদাভানকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার দুষ্টুমির কথা।

লাজুক হেঁসে বেলকনিতে দাড়িয়ে সকালের স্নিগ্ধ বাতাস অনুভব করতে ব্যাস্ত অরুনিকা কোমরে কারোর হাতের বন্ধন পেয়ে মাথা এলিয়ে দেয় পিছনে থাকা পুরুষালী বুকে। আদাভানও আরও গভীরভাবে জড়িয়ে নেয় প্রিয়তমাকে নিজের মাঝে।

“সকাল সকাল আমাকে পাগল করে দিচ্ছ তো জান। দূরেই যেতে দিচ্ছনা, ব্যাপার কি?”

আদাভানের প্রশ্নের জবাবে অরুনিকা মুচকি হেঁসে বললো,
“বহুবছর পর আপনাকে পেয়েছি। একটুও দূরে থাকতে ইচ্ছে করছেনা যে জান। কাম টু মী বেবী, কাম ক্লোজার”

অরুনিকার কথায় আর কাজে বেসম খেয়ে যায় আদাভান। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় অরুনিকার দিকে। মাথা চুলকে ভুল কিছু শুনেছে কিনা ভাবতে ভাবতে অরুনিকার হাসির শব্দে ধ্যানভঙ্গ হয় তার। এতক্ষন অরুনিকা তার সাথে মজা করছিলো বুঝতে পেরে ধাওয়া করে অরুনিকাকে। অরুনিকাও কম যায়না, সেও সারারুমে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে ব্যস্ত। হাসতে হাসতে সারারুমের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে দুজনে। অবশেষে আদাভান অরুনিকাকে পিছন থেকে কোলে তুলে বেডে ফেলে দেয়।

“এবার কোথায় পালাবে প্রাণপাখি।”

সারামুখে স্লাইড করতে করতে বলা কথা শুনে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় অরুনিকার।

“শুধু আমার শার্টে তোমাকে সেই লাগছে জান। লুকিং সো হ…”

লজ্জায় যাচ্ছেতাই অবস্থা অরুনিকার। ডানহাতে আদাভানের মুখ চেপে ধরে বামহাতে চাদর টেনে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। আদাভানের পরনের শার্ট অরুনিকার হাঁটুর কিছুটা উপর পর্যন্ত ঢেকেছে ভাবতেই আরও একদফা লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।

___________

সকালের নাস্তা করেই এই বাড়ী থেকে বিদায় নিয়েছে দুজনে। রুবিনা বেগম সকাল থেকেই উঠে নতুন জামাইয়ের আপ্যায়নে লেগে পড়েছিলেন। আদাভানকে অনেক আগেই মেনে নিয়েছিলেন তিনি। একমাত্র মেয়েকে এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখে কোনো বাবা মাই সহ্য করতে পারবেন না। শুধুমাত্র নিজের দম্ভের কাছে হেরে যাওয়ায় ভয়ে এতদিন মেয়ের সুখটা চোখে পড়েনি তাহসান সাহেবের। আজও তিনি সাদরে আদাভানকে গ্রহণ না করলেও, প্রতিবাদও জানাননি। আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বেশ কান্নাকটির পর্ব শেষ করে বেরিয়েছে অরুনিকা।

রুমে ঢুকেই এক বিদঘুটে গন্ধ নাকে আসতেই চোখ পাকিয়ে তাকায় অরুনিকা। ভয়ে ভয়ে আদাভান বেলকনিতে চলে যায় নিজের কুকর্মগুলো চাপা দেওয়ার জন্য। বেলকনিতে পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেটগুলোই বলে দিচ্ছে বিগত দিনগুলো এগুলো দিয়েই পেট ভরিয়েছে আদাভান।

দ্রুতবেগে বেলকনি থেকে অরুনিকাকে রুমে আসতে দেখে আদাভানের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। অরুনিকার পিছনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে দাড়ায়।

“সরি। আসলে তখন এগুলোই শান্তি দিচ্ছিল আমা…..”

“আই অ্যাম সরি। সো সরি। অনেক অনেক অন্যায় করে ফেলেছি আপনার সাথে। প্লীজ আমাকে মাফ করে দিন। আমি ভাবতাম কষ্ট আমি বেশি পেয়েছি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার থেকেও বেশি কষ্টের দিন আপনি পার করেছেন। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। বিশ্বাস করুন যা দেখেছিলেন সব আপনার মনের ভুল ছিলো। দৃষ্টিভঙ্গির ভুলের জন্য দুজনের মাঝের অভিমানের পাহাড় ভেঙ্গে আসা হয়নি একে অপরের কাছে।”

আদাভানের কথার মাঝে পিছন ঘুরে গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বলা কথাগুলো শুনে মুচকি হাসে আদাভান। অবশেষে যে অরুনিকাও তাকে ভালোবাসে ভেবেই প্রশান্তি ছেয়ে যায় সারা অঙ্গে।

“ তুমি আমাকে পূর্ন কর, তুমি ছাড়া আমি শূন্য।
সত্যি বলছি প্রিয়, তুমি ছাড়া আমি সত্যিই নগন্য।“

“ভালোবাসি”

“কাকে?”

“আপনাকে”

“বুঝিনি, ভালো করে বলো।”

“ভালোবাসি আপনাকে।”

“আমিও ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে প্রাণপাখি।”

________________

সময়ের গতির উপর কারোর হাত নেই। পৃথিবী থমকে গেলেও সময় তার আপন গতিতে চলতেই থাকবে। নদী আর সময়ের মাঝে এই বিষয়ে বেশ সাদৃশ্য, এদেরকে থামানো যায়না কোনোভাবেই। সেই স্রোতের মাঝে কেটে গেছে দুইটা বছর। আজকে আদাভান আর অরুনিকার দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী। বর্তমানে আদাভান একজন লেকচারার। অরুনিকার ফাইনাল ইয়ার চলছে।

রাত বারোটা বাজতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। আদাভানকে গভীর ঘুমে থাকতে দেখে আস্তে আস্তে উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে কাউকে ফোন করে অরুনিকা।

“ওদিকের কি খবর? সব কমপ্লিট তো? আমি আসছি ওয়েট।”

ওপাশের মানুষটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ধিমি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আস্তে করে দরজা আঁটকে দেয় অরুনিকা। এদিকে ঘুম থেকে উঠে অরুনিকাকে কারোর সাথে ফোনে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় আদাভানের। বেশ ভালো করে অরুনিকার বলা কথাগুলো শুনে ভয় ছেয়ে যায় মনের মাঝে। অরুনিকা রুম থেকে বেরোতেই নিজেও বেরিয়ে পরে অরুনিকার পিছু নিয়ে। আলতো পায়ে ছাদের গেটের কাছে গিয়ে আশেপাশে অন্ধকার দেখে আরও একদফা অবাক হয়। এদিকেই এসেছিলো অরুনিকা, তবে অন্ধকারের মাঝে কোথায় গেলো? এসব ভাবতে ভাবতেই ছাদের মাঝে পৌঁছে যায় আদাভান।

চারিদিকের সবার আওয়াজে আরও একদফা অবাক নয়নে তাকায় চারিদিকে। প্রাপ্তি, আনিকা আহসান, রুবিনা বেগম, তাহসান সাহেব, কাব্য, সবার উপস্থিতি আর পুরো ছাদের সাজসজ্জা দেখে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় তার কাছে। পুরো ছাদের চারিদিকে লাল, সাদা আর কালো বেলুন দিয়ে সাজানো সাথে ফিয়ারি লাইট দিয়ে সুন্দর ডেকরেট, ছাদের মাঝবরাবর একটা টেবিলে হার্ট শেপের রেড ভেলভেট কেক, টেবিলের চারিদিকে ক্যান্ডেল আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো। মুগ্ধ হয়ে চারিদিকে দেখে অরুনিকাকে কোথাও না দেখে খোঁজাখুঁজি করলে কানের কাছে ভেসে আসে কোমল এক কণ্ঠস্বর,

“হ্যাপি সেকেন্ড ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি আদাভান।”

“হ্যাপি সেকেন্ড ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি টু ইউ অলসো প্রাণপাখি।”

দুজনে মিলে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলে এক এক করে বড়রা কিছু বাহানা দিয়ে নীচে চলে যান। সবাই চলে গেলে আদাভান প্রাপ্তির দিকে তাকায়।

“কি হয়েছে? ওভাবে তাকাস কেনো?”

“ঘুম পাচ্ছেনা? যা নীচে গিয়ে ঘুমা।”

“হু চলো ভাবি নীচে যাই।”

প্রাপ্তি অরুনিকার হাত ধরে নীচে নিয়ে যেতে গেলে অরুনীকাকে নিজের দিকে টেনে ধরে আদাভান।

“তুই যা, ও পরে যাবে।”

“কেনো রে, পরে কেনো। কি কাজ তোদের এখন এখানে?”

“কাজ আছে। যা তুই”

“ভাবি সাবধানে থেকো, যখন তখন অ্যাটাক করতে পারে এই হনুমানটা তোমার উপর। হা হা হা।”

“যাবি তুই?”

“যাচ্ছি যাচ্ছি, হুহ ঢং।”

প্রাপ্তি আর কাব্য নীচে নেমে গেলে অরুনিকার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নেয় আদাভান।

“ইচ্ছে করে করেছো তাইনা?”

“হুম। আমি জানি তো আপনার বুকের উপর থেকে সরে বেডে ঘুমালেও আপনি টের পেয়ে যান। ঠিক আবারো টেনে নেন নিজের বুকে। তাই ইচ্ছে করেই রুমের মধ্যেই জোরে জোরে প্রাপ্তিকে কল করে বললাম ওগুলো। আমি জানতাম আপনি জেগে গেছেন। আর আমার ধারণা ঠিক প্রমাণ করে ঠিকই চলে এলেন আমাকে ফলো করতে করতে। হা হা হা”

“খুব মজা লাগছে তাইনা? জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম! এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো তুমি হয়তো আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছো আস্তে আস্তে।”

“পাগল”

“শুধু তোমার প্রেমে”

কাল তোমার জন্য দুটো সারপ্রাইজ ওয়েট করছে প্রাণপাখি। তৈরি থেকো। মনের মাঝে ভাবনা গুলো রেখে দুইহাতে প্রিয়তমার কোমর জড়িয়ে ধরে একজোড়া অধরের সাথে আরেক জোড়ার মেলবন্ধন ঘটিয়ে ফেলে। চাঁদনী রাতকে সাক্ষী রেখে দুজনে ডুব দিলো দুজনের ভালোবাসার গভীরে।

চলবে?
#Fiza_Siddique

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে