#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
আমার সবচেয়ে প্রিয় তুমি,
তোমার মনে পরে সেই দিনের কথা? মাঘ মাসের সেই হাড়কাঁপানো শীতের মাঝেও সেদিন কুয়াশাকে ফাঁকি দিয়ে সূয্যিমামা উঁকি দিয়েছিলেন! লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখতে গিয়ে ধরা পরে গেলাম সেদিন। ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরতেই তুমি আমার হাতে গুঁজে দিয়েছিলে ছোট্ট একটি চিরকুট আর একটা বাক্স। ধরা পরে যাওয়ায় সেদিন লজ্জায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।
তোমার চিরকুটে ছিলো ছোট্ট একগুচ্ছ আবদার। তুমি চেয়েছিলে তোমার দেওয়া লাল রঙা শাড়ি আর কাচের চুড়িগুলোতে নিজেকে সাজিয়ে যেন তোমার সামনে দাঁড়াই।
মনের কোণ থেকে লুকিয়ে রাখা ভালোবাসাগুলো যেন সেদিন দানব হয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছিলো।
তুমি আমার জীবনে এসেছিলে দমকা হাওয়ার মত। অদ্ভুত ভাবে আমার জীবনে এলে, ঝড়ো হাওয়ার মত আমার আমিকে এলোমেলো করে দিয়ে গেলে।
তুমি এসেছিলে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমার ভালো থাকার নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে। যাতে সাজানো ছিলো আমার বদ্ধ জীবনটাকে খোলা আকাশে মেলে ধরার মত সুখ।
তোমার দেওয়া একগুচ্ছ আবদার রেখে তোমার মনের মত করে তোমার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম কদিন পরেই।
মনে আছে তোমার সেদিনটার কথা? যেদিন তুমি আমার কাছ থেকে আমাকে চেয়ে নিয়েছিলে? আর তোমাকে আমার করে দিয়েছিলে? তুমি আর আমি মিলে সেদিন হয়েছিলাম আমরা!
আমার প্রতিটি মুহূর্তকে খুশিতে মুড়িয়ে রাখার বিশাল দ্বায়িত্বটা যেন তুমি কখনোই ভুলতে না। প্রচন্ড ঘরকুনো আর চুপচাপ সেই আমিটাকেও তুমি হাসতে শিখিয়েছিলে, খোলা আকাশের সেই মুক্ত বাতাসটুকু উপভোগ করতে শিখিয়েছিলে৷ বৃষ্টি নামলে প্রতিটি ফোঁটা থেকে ভালবাসাটুকু নিজের করে নিতে শিখিয়েছিলে। আমার সেই অজানা আমি’টাকে চিনিয়েছিলে।
তোমাকে কখনো গুছিয়ে চিঠি লেখা হয়নি। গুছিয়ে ভালোবাসার কথাগুলো বলা হয়নি। আমার সব না বলা কথাগুলো তুমি আপনাতেই বুঝে যেতে।
তোমার উপর আজ ভীষণ অভিমান হয় জানো? হাজারো অভিযোগের ডালি সাজিয়ে বসে থাকি তোমার শেষ স্মৃতিগুলো আকঁড়ে ধরে৷ আমাকে এপাড়ে ফেলেই শুধুমাত্র রোড এক্সিডেন্টের অজুহাত দিয়ে তুমি ওপাড়ে চলে গেলে। হাসিগুলো আজ হারিয়ে গেছে কোন মেঘের আড়ালে। খোলা আকাশে আজ আর সেই মুক্ত বাতাস নেই। ‘আমাদের’ থেকে তুমি স্বার্থপরের মত তোমাকে নিয়ে একাই চলে গেলে।
তুমি জানো! এখন প্রায়ই তোমার জন্য চিঠি লিখি। খুব গুছিয়ে। তোমাকে না বলা হাজারো ভালোবাসার কথাগুলো! সেগুলোও লিখি চিঠিতে। কিন্তু তোমাকে পাঠানোর মত কোনো ডাকবাক্স যে আমার জানা নেই!
তোমাকে গুছিয়ে লেখা চিঠিগুলোর জন্য হয়ত একদিন আমিই সেই ডাক বাক্স হব। হয়ত সেদিন আবার আমরা এক হবো৷ ওপারেও যে আমার দ্বায়িত্ব শুধু তোমাকেই নিতে হবে। কী! নেবে তো?
ইতি তোমার,
তুমি!
লেখনিতে – মেহেরুন নেছা হিতৈষী