#আমার_সংসার
#লেখিকা_ DI YA
#পর্ব_০৬
দ্বিতীয় বাচ্চা পেটে থাকার চতুর্থ মাসেই হঠাৎ করে বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যায়। ঘটনায় আয়েশা অনেকটা ভেঙে পরে। কিন্তু একদিন আয়েশা দুজন মানুষের কথোকপথন শুনতে পায়। যা শুনে তাতে আয়েশার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। আয়েশা বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলে,
আসিফ বাবা হয়ে কি ভাবে পারলো নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতে – আয়েশা
আয়েশা আসিফ আর ফোনের অপাশের একটা মেয়ের কথোপকথন শুনতে পায়।কথাগুলো ছিল এমন,,
জান হ্যা আমি তোমার কথা মতই সব করেছি।ওইদিন ওয়াশরুমে শ্যাম্পু ফেলে রাখি আর আমাদের পরিকল্পনা মতই আয়েশা শ্যাম্পুর উপর পা দিতেই পরে যায় আর বাচ্চা টা ও নষ্ট হয়ে যায়।আর আয়েশা বুঝতে ও পারে না এটা আমার করা।ও ভাবে এটা একটা এক্সিডেন্ট । কিন্তু এখন কি করে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসব তুমিই বলো – আসিফ
ওপাশ থেকে কি বললো আয়েশা জানে না। আসিফ আবারো বললো,,
আচ্ছা আমি দেখি খালামনির সাথে কথা বলে। কতটুকু কি করা যায়। আমি তোমাকে পরে আবার কল করে বলবো। লাভ ইউ। বাই জান – বলে আসিফ কল কেটে দিলো।
কল কেটে হাসি মুখে পিছনে ঘুরতেই আসিফ ভয় পেয়ে গেলো। কারন দরজার পাশেই আয়েশা দাঁড়িয়ে আছে। আয়েশা বললো,
তুমি আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেললে। বাবা হয়ে সন্তানকে খুন করতে তোমার একবারো বুক কাঁপলো না। কেমন বাবা তুমি । যে মানুষ নিজের সন্তানকে খুন করতে পারে। সে আর যাই হোক বাবা হতে পারেনা। বাবার হবার যোগ্যতাই তো তোমার নেই – আয়েশা
আয়েশা এবার কিন্তু তুমি অনেক বেশি বলছো।পাগলের মত কথা বলা বন্ধ কর। – আসিফ
পাগল হ্যা পাগল আমি এতদিন ছিলাম।তাই তো এত বড় বিশ্বাসঘাতকতার পর ও তোমার মত বেইমানকে বিশ্বাস করেছিলাম।অন্ধের মত চোখ বন্ধ করে আমি তোমাকে বিশ্বাস করতাম। আর সেই তুমিই দুই দুবার আমাকে এত বড় আঘাত করলা। কেনো আসিফ কেনো এমন করলে ? – আয়েশা
আরে শোন তোর প্যাড়প্যাড়ানি আমার আর ভাল লাগছে না।জানিস তোকে বিয়ে কেন করছিলাম। শুধু টাকার জন্য ৫ লাখ টাকা পাওয়ার জন্য তোকে বিয়ে করেছিলাম ? – আসিফ
মানে কিসের টাকা ? কে তোমাকে টাকা দিতো ? – আয়েশা
তোর ওই নাম মাএ মা আর আমার খালামনি – আসিফ
মানে মা এমন কেন করলো ? – আয়েশা
তুই খালামনি আর খালুর আপন মেয়ে না। খালুর যে সম্পত্তি আছে বিজনেস আছে ওইসব আসলে তোর বাবার। তোর বাবা মা এক রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।মরার আগে তোর বাবা খালুকে বলে তোকে দেখে রাখতে। আর তোর নামে করা কিছু সম্পত্তির কাগজও দেয়। তোর বাবা নাকি আগে থেকেই জানতো এমন কিছু হবে। তাই তিনি আগেই সব ব্যবস্থা করে রাখেন। খালামনি আমাকে বলে তোকে ভালোবাসার ফাদে ফেলে যেভাবে পারি ওই সম্পত্তির কাগজপত্র তোর থেকে নিতে হবে। ওই কাগজ একবার পেয়ে গেলেই সে উকিলের সাহায্যে সে সব কিছু নিজের আর তার ছেলের নামে করতে পারে। তারা পাবে সম্পত্তি আমি পাব টাকা। বুঝলি – বলে আসিফ রুমে থেকে চলে গেলো
আয়েশা পুরো পাথর হয়ে গেছে। এত ধাক্কা একেবারে সামলিয়ে উঠতে পারছেনা আয়েশা। আয়েশা চুপচাপ জান্নাতের রুমে চলে গেলো। রাত ১২ টা বেজে গেছে জান্নাত ও ঘুমিয়ে গিয়েছে। আয়েশা অনেক কিছু ভেবে চলেছে। আয়েশা ফোনটা হাতে নিয়ে নীলয় রহমানকে ফোন করলো।ফোন রিসিভ করে নীলয় রহমান বললো,
হুম আয়েশা মা বলো কি হয়েছে – নীলয় রহমান
বাবা, আসিফ সত্যিই আমাকে ধোঁকা দিলো। আসিফ বাবা সব মিথ্যা ছিল। আসিফ শুধু টাকার জন্য আমার সাথে এতগুলা বছর এত অভিনয় করলো। বাবা আমার সব শেষ হয়ে গেলো। আমার কথা ছারো জান্নাতের কথা ভাবো। বাবা জানো আসিফ আমার অনাগত সন্তানের খুনি। বাবা ও আমার বাচ্চাটাকে দুনিয়ার আলোও দেখতে দিলো না।তার আগেই ও আমার বাবুটাকে মেরে ফেললো। বাবা ও আর মা মিলে শুধু টাকা আর সম্পত্তির জন্য এমন করলো। বাবা আমার মাথা কাজ করছেনা। বাবা আমি কি করব তুমিই বলো – আয়েশা কান্না করতে করতে বললো
আয়েশা মা আমার শান্ত হও।শান্ত হয়ে আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলো। হয়েছে কি? আসিফ আর নীলিমা কোন সম্পত্তি আর টাকার জন্য কি করছে। পুরোটা বল – নীলয় রহমান
পরে আয়েশা নীলয় রহমানকে যা যা হয়েছে সব খুলে বললো। সব শুনে নীলয় রহমানের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বের হয়ে আসলো। তার এই বিয়ের কথা শোনার পর থেকেই মনে হয়েছিল ঘটনা এমনই কিছু একটা হবে। তিনি নিজেকে সামলিয়ে আয়েশাকে বললো,
আয়েশা – নীলয় রহমান
তুই আমাকে বিশ্বাস করিস। মানিস যে আমি যা করব তাতে তোর কোনো খারাপ হবে না বরং ভাল হবে – নীলয় রহমান
হুম বাবা – আয়েশা
তোর মনে আছে। তোকে আমি কিছু কাগজ মানে একটা ফাইলে কিছু পেপার দিয়েছিলাম তোর ১৮ তম জন্মদিনের দিন খুলে দেখতে বলছিলাম – নীলয় রহমান
হুম কিন্তু পরে তো তুমিই বলেছিলা ওটা এখন দেখা লাগবে না।সময় হলে তুমি নিজেই আমাকে দেখতে বলবা – আয়েশা
হুম ওই ফাইল খুলে পেপার গুলো সব দেখে নে। আর তোর আর জান্নাতের সবকিছু গুছিয়ে নে কালকে সকালেই আমি আসবো তোদের নিতে ঠিক আছে – নীলয় রহমান
আচ্ছা। কিন্তু বাবা – আয়েশা
কিন্তু কি – নীলয় রহমান
বাবা ওই ফাইলে কিসের কাগজ আছে। মানে কাগজগুলো কি সম্পত্তির – আয়েশা
হুম এইগুলো ওই সম্পত্তিরই পেপার যেগুলোর জন্য নীলিমা এমন জঘন্য কাজ করেছে। – নীলয় রহমান
থাক বাবা বাদ দাও- আয়েশা
হুম রাখি কালকে দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ- নীলয় রহমান
হুম আল্লাহ হাফেজ – আয়েশা
তারপর আয়েশা কল রেখে নিজের বেডরুমে আসলো। আসিফ বাসায় নেই। ওইসময় রুম থেকে বেরিয়েই৷ সে বাসার বাইরে চলে গেছে। আয়েশা রুমে এসে প্রথমে ওই ফাইলটা বের করলো। ফাইলটা খুললো ফাইলের ভিতরে সব সম্পত্তির কাগজ। আর এখানে এটাও লিখা আছে ১৮ বছর হবার পর থেকে সকল সম্পত্তির মালিক আয়েশা। আয়েশা ভেবে নিয়েছে সে কি করবে। তার কাছে করার মত এখন একটা রাস্তাই খোলা রয়েছে। আর আয়পশা সেটাই করবে। তারপর আয়েশা লাগেজ বের করে তার আর জান্নাতের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো লাগেজে ভরে নিলো। তারপর আয়েশা পুরো বাসাটা ঘুরে দেখতে লাগলো। আজ রাতটাই তো এ বাড়িতে আছে সে। আয়েশা একা একাই বলতে লাগলো,
#আমার_সংসার। হ্যা আমার সংসার নিজের হাতে এই সংসারের ছোট বড় সবকিছু সাজিয়েছি। এতগুলো বছর নিজের হাতে গুছিয়ে রেখিছি আমার এই সংসারটাকে। কিন্তু আজকে রাতটাই। তারপর সব শেষ । এই সংসারটা আর আমার থাকবেনা। – আয়েশা
~~~~~
সকাল ৮ টায় বাসার কলিংবেল বাজায়। আয়েশা ভাবে তার বাবা এসেছে। আয়েশা সকাল থেকেই তৈরি হয়ে বসে আছে। আর জান্নাতকেও আয়েশা রেডি করে নিয়েছে। তাই গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই বাইরের দৃশ্য দেখে আয়েশা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
হাহ #আমার_সংসার। তা আর আমার নেই। আজ থেকে তা অন্য একজনের সংসার
চলবে,,🥰🥰🥰