#আমার_সংসার
#লেখিকা_ DI YA
#পর্ব_০৫
আয়েশা আসিফের কথা মতই কাজ করলো। আয়েশাকে ওখানকার বেশ নাম করা একটা কলেজে ভর্তি করে দিলো। এভাবে আরো ৫ মাস পার হয়ে গেলো। আসিফ আর আয়েশার সংসার বেশ ভালই যাচ্ছে। দুজনই পুরোপুরি ভাবে নিজেদের মধ্যে মানিয়ে নিয়েছে। আজ আয়েশা আসিফকে বলেছে যে সে বাসায় আসতে লেট হবে। কারণ আয়েশা আজ তার ফ্রেন্ডের সাথে একটু ঘুরতে আর শপিং এ যাবে। পরে আসিফ জানায় আজ তার অফিস ছুটি। তখন আয়েশা যেতে না চাইলেও আসিফ বলে যাও ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরলে মন ভাল হবে। পরে আসিফের কথায়ই আয়েশা রাজি হয়।কিন্তু এক ফ্রেন্ড সেদিন কলেজে না আসায় তাদের প্ল্যান ক্যান্সেল হয়ে যায়।তারা ঠিক করে পরের দিন যাবে। তাই আয়েশা কলেজ ছুটির পর বাসায় এসে পরে। বাসার সামনে এসে দেখে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। তাই আয়েশা ভিতরে ঢুকে গেলো। ভিতরে ঢোকার পর যা দেখলো তাতে আয়েশার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে শুরু করলো।এটা কি করে হতে পারে। আসিফ আর একটি মেয়ে দুজনে ড্রইংরুমের সোফায় একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। তাদের পুরো শরীর নগ্ন।দুজনের শরীরই শুধু একটি চাদর দিয়ে আবৃত। বজ সকালে আয়েশা একটা কথা জানতে পেরেছে। আয়েশা ভেবেছিল বাসায় আসার সাথে সাথে আসিফকে এটা সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু বাসায় এসে যে আয়েশা নিজেই এতবড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে এটা ও কখনো ভাবেনি। আচ্ছা এটা হওয়া কি খুব প্রয়োজন ছিল। আয়েশা চুপচাপ রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে বিছানায় বসে ব্যাগে থেকে প্রেগ্ন্যাসি রির্পোট টা বের করলো। আজ সকালে আয়েশা জানতে পারে আয়েশা মা হবে। আয়েশার প্রেগন্যান্সির এটা তৃতীয় মাস।এটা আয়েশার জীবনে সেরা একটা সারপ্রাইজ ছিল।কিছুদিন আগে আয়েশা ডাক্তারের কাছে যায় আর ডাক্তার তাকে কিছু টেস্ট করায়। তার মধ্যে এটাও ছিল। আজকে এটার রির্পোট আসছে। আর সেটা পজেটিভও এসেছে। কিন্তু এখনকার পাওয়া সারপ্রাইজটা আয়েশার ভাবনার বাইরে ছিল। আচ্ছা ভালোবাসলেই কি ঠকতে হয়।আচ্ছা এখন তার বাবুটার কি হবে ? বাবুর ভবিষ্যত কি হবে ? আয়েশা নিজের পেটে হাত রেখে একা একাই বলতে লাগলো,
তুই চিন্তা করিস না বাবু। তোর মা তোর জন্য যা করতে হবে তাই করবে। কখনো তোকে কষ্ট পেতে দিবেনা। কিন্তু বাবু এখন যে আমি বুঝতে পারছিনা আমি কি করবো ? বাবু তুই বল না তোর বাবা কেন আমাকে ধোঁকা দিল। আমি তো তাকে কম ভালোবাসিনি। সবসময় তার পছন্দ মতো সব করতাম।কখনো এমন কোনো কাজ করিনি যে তোর বাবা অপছন্দ করবে। তাহলে, তাহলে কেন আমাকে আজকে নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামিকে অন্য মেয়ের সাথে এই অবস্থায় দেখতে হচ্ছে। কেন বাবু – বলে আয়েশা কান্না করতে লাগলো।
কান্নার শব্দে আসিফ আর মেয়েটির ঘুম ভেঙে গেলো।কান্নার শব্দে আসিফ ভয় পেয়ে গেলো। রুমের ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে মানে আসিফ সেই মেয়েটির দিকে মেয়েটার জামাকাপড় ছুরে দিয়ে বললো,
দুই মিনিটের মধ্যে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবি। আমার কথাটা মনে থাকে যেন। আর কখনো তোর মুখ দেখতে চাইনা – বলে আসিফ রুমের দিকে চলে গেলো।
মেয়েটা আসিফের কথায় অপমানিত হয়ে নিজের জামাকাপড় পরে রেডি হয়ে বাসা থেকে চলে যায়। আর যাবার সময় আসিফকে বকতে বকতে যায়।
অন্য দিকে আসিফ রুমের দরজার সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে আর বলে,,
আয়েশা আয়েশা দরজাটা খুলো বউ।প্লিজ বউ আমার কথাটা শুনো। বউ প্লিজ দরজাটা খুলো। বউ আমি সরি। বউ তুমি আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ। আমি আর কখনো এমন হব না। প্লিজ দরজাটা খুলো তুমি আমার কথাটা শুনো প্লিজ। – আসিফ
আয়েশা গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়।আর আসিফের মুখের উপর প্রেগ্ন্যাসির রির্পোট টা ছুরে দিয়ে বলে,
পড় এটা। একটা কথা না বলে চুপচাপ এটা পড় – আয়েশা
কিন্তু এটা কি ? – আসিফ
চুপচাপ এটা পড় – আয়েশা
তারপর আসিফ রির্পোট টা পড়তে লাগলো। হঠাৎই আসিফের হাত থেকে কাগজটা পরে গেলো। আর আসিফ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
আয়েশা এটা তুমি প্রেগন্যান্ট আয়েশা – আসিফ
হুম আমি প্রেগন্যান্ট। জানো এই কথা টা আমি আজকে জানতে পেরেছি। কত বড় একটা সারপ্রাইজ ছিল আমার জন্য এটা। ভাবছি বাসায় এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিব। কিন্তু বাসায় এসে দেখি – আয়েশা
আসিফ নিশ্চুপ
আমি বাসায় এসে দেখি আমার বর আমার সামনে অন্য একটা মেয়ের সাথে এক চাদরের নিচে নগ্ন অবস্থায় রয়েছে। আমার স্বামির কাছে থেকে পাওয়া আমার জীবনের একেবারে সেরা সারপ্রাইজ। আমি তো ভাবিই নাই আমার বর আমাকে আজকে এত বড় একটা সারপ্রাইজ দিবে। আচ্ছা আমার বাবুর বাবা একটা চরিত্রহীন । অন্য মেয়েদের নিয়ে বিছানায় যায়। এটা বাবু জানলে তার কেমন লাগবে যে তার বাবা এমন । বলো আসিফ বলো – আয়েশা
আসিফ এবারো নিশ্চুপ
আচ্ছা সব বাদ আসিফ। এসব কবে থেকে চলছে ? আসিফ তারাতাড়ি বলো এসব কবে থেকে চলছে ? – আয়েশা
তিন বছর – আসিফ
আসিফ আজকে এই মূহুর্তে সবকিছু ভেবে তুমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানাবে। এই সিদ্ধান্তের উপর আমাদের সবার ভবিষ্যত নির্ভর করে – আয়েশা
কিসের সিদ্ধান্ত? – আসিফ
হয়তো তুমি এসব খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে আমাকে আর বাবুকে নিয়ে থাকবা ভালো ভাবে। আর নয়তো থাকো তুমি তোমার এসব নিয়ে। আমি শুধু তোমার সিদ্ধান্ত টা শুনবো। তুমি কি করবে আসিফ বলো তারাতাড়ি – আয়েশা
আয়েশা আমি যা করেছি সরি। আর কখনো আমি এমন কিছুই করব না। আমি তোমাকে আর আমাদের বাবুকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই – আসিফ
আয়েশা কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে আসিফের বুকের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে নিলো। আজকে সে চাইলেই পারতো আসিফের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে চলে যেতে। কিন্তু বাবুর ভবিষ্যত কি হতো। তার যে বাবা বলতে কিছু থাকতো না। এই সমাজ বড্ড খারাপ। এরা নাতো আয়েশাকে ঠিক মতো বাঁচতে দিতো আর নাতো বাবুকে।
সেই ঘটনার পর আরো ১ বছর চলে গেলো। সেই ঘটনার পর আসিফ পুরো বদলে গেছে। আয়েশার প্রতি সে আগের থেকে অনেক বেশি কেয়ারিং হয়ে উঠেছে। আগের আসিফ আর এখনকার আসিফের মধ্যে অনেক তফাৎ।আয়েশাও অনেক খুশি। এরকম আসিফকেই সে চেয়েছিলো। আসিফ আর আয়েশার ঘরে একটা ছোট পরী এসেছে। তার নাম আসিফ নিজেই রেখেছে। মেয়েটার নাম জান্নাত। আসিফের কলিজা হচ্ছে জান্নাত। জান্নাতকে নিয়ে আসিফ আর আয়েশার সংসার বেশ ভালোই যাচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা আবার শুরু হলো ৫ বছর পর। তখন জান্নাতের বয়স ৫ বছর। আয়েশা আবারো প্রেগন্যান্ট হয়। আর সেই সময়ই হঠাৎ করে আবারো আসিফ বদলে যেতে শুরু করে। বদলানোটা প্রথমে আয়েশা খুব একটা গায়ে মাখতো না। কিন্তু দ্বিতীয় বাচ্চা পেটে থাকার চতুর্থ মাসেই হঠাৎ করে বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যায়। ঘটনায় আয়েশা অনেকটা ভেঙে পরে। কিন্তু একদিন আয়েশা দুজন মানুষের কথোকপথন শুনতে পায়। যা শুনে তাতে আয়েশার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। আয়েশা বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলে,
আসিফ বাবা হয়ে কি ভাবে পারলো নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতে – আয়েশা
চলবে🥰🥰